অস্পষ্ট_সে(৫ম পর্ব)

0
688

গল্পঃ #অস্পষ্ট_সে(৫ম পর্ব)
লেখায়ঃ #তাজরীন_খন্দকার

চিত্রার হঠাৎ এমন রূপ দেখে প্রথমে দ্বীপ লাফিয়ে উঠে বুকের উপর থুঁ থুঁ দিয়ে লা হাওলা পড়তে শুরু করে দিলো।

চিত্রা দ্বীপকে সাইড করে সেখান থেকে সরে গেলো।
তখনি দ্বীপ বলে উঠলো..
___ভয় পাইছি, বাবারে এভাবে কেউ বলে?
এএ খোদা আমার এই বউ নাকি আমার মাথা দুভাগ করে ফেলবে, শুনছো তুমি?

এটা শুনে চিত্রা চোখ ঘুরিয়ে দ্বীপের দিকে ফিরে তাকালো। চিত্রা তাকানোর সাথে সাথে দ্বীপ তার চোখ নামিয়ে ফেললো। চিত্রা একটু এগিয়ে এসে রাগী স্বরে আঙুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলতে লাগলো..
___ এইযে, আপনি আমাকে সহজ সরল ভোলাভালা মনে করে থাকলে ভুল ভেবেছেন। আপনি কি ভেবেছেন এই যুগে এমন স্ত্রীও হতে পারে যে কিনা স্বামীর প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধায় তার স্বামীর সব দোষ অনায়াসে ভুল যাবে?!
আচ্ছা আর অন্য কারো বাদ দিলাম আমার কথাই বলি, আমি এতো বেশি ভালো না ওকে?

দ্বীপ হাত বাড়িয়ে চিত্রার আঙুলে খপ করে ধরে বললো..
___জ্বী মিসেস দ্বীপ, আপনাকে নিয়ে একটু আগের ভাবনাও এই কিছুক্ষণ আগে বদলে গেছে। আপনি মারাত্মক লেভেলের মানুষ।

রাগে চিত্রার নাক কাঁপছে, চোখ লাল হয়ে গেছে হাতের দিকে একবার তাকাচ্ছে আর দ্বীপের দিকে একবার তাকাচ্ছে। দ্বীপ মুচকি মুচকি হাসছে। চিত্রা বালিশের দিকে খেয়াল করে দেখলো যেটা দিয়ে ভয় দেখিয়েছিলো ওইটা সেখানেই রেখে আসছে৷ এদিকে অনেক চেষ্টায়ও একটা আঙুল দ্বীপের থেকে ছাড়াতে পারছেনা৷

চিত্রা রাগে ফোসফাস করতে করতে বললো.
___ আঙুল ছাড়েন। আপনার অধিকার নেই আমাকে স্পর্শ করার! একজনকে স্বপ্ন দেখিয়ে আরেকজনের সাথে এমন ব্যবহারের মানে হয়না।

___ ওমা আজকেই না চুক্তিবদ্ধ হয়ে আমাদের বিয়ে হলো। অধিকার তো সর্বোচ্চ আমাদেরই। ওই মেয়েকে তো বিয়ে করিনি, সে পরনারী!

চিত্রা কথা না বাড়িয়ে সোজা কামড় বসিয়ে দিলো দ্বীপের হাতে৷ দ্বীপ মাগো বলতে বলতে চিত্রার হাত ছেড়ে নিজের হাত ঝাড়তে লাগলো৷
চিত্রা টেবিল থেকে ছুড়ি বালিশের উপর থেকে টর্চটা,আর ব্যাগ থেকে পিন বের করে দ্বীপের সামনে ধরে বললো..
___কাছাকাছি আসার চেষ্টা করলে একদম মেরে ফেলবো, লুচ্চা কোথাকার।

বলেই চিত্রা কাঁথা মুড়ি দিয়ে মুখসুদ্ধ ঢেকে শুয়ে পড়লো। আর তার হাতের কাছে এইসব অস্ত্র। কাঁথা উঠানোর চেষ্টা করলেই দ্বীপ আজকে শেষ! তবে তার নিজের এসব কান্ডে নিজেরই ভীষণ হাসি পাচ্ছে। দ্বীপকে সে এখনো বুঝতে না পারলেও নিজের এমন অদ্ভুত কাজকর্ম আজীবনেও হয়তো ভুলবেনা। বাসরঘরে জামাইয়ের জন্য নাকি কোনো মেয়ে এসব নিয়ে ঘুমায়!
ভাবতে ভাবতে আর হাসতে হাসতে কখনো ঘুমালো এবং এর মধ্যে সকাল হয়ে গেছে চিত্রা বুঝতেই পারেনি।
ঘুম থেকে উঠেই দেখে দ্বীপ তার পাশেই শুয়ে আছে, তবে অনেকটাই দূরে আছে সে। মাঝে একটা কোলবালিশ। শীতকাল শুরু হওয়ার মূহুর্ত, পাখা অন থাকলে অনেকটাই শীত করে, অথচ দ্বীপ খালি গায়ে শুয়ে আছে।

দ্বীপের চুলগুলো এসে চোখেমুখে পড়ে আছে।
চোখগুলো দেখা যাচ্ছেনা, চিত্রা আস্তে আস্তে চুলগুলো সরিয়ে দিলো।
চিত্রা দ্বীপের দিকে তাকিয়ে আছে, কে বলবে এই ছেলেটা এতো ছলচাতুরী জানে! চিত্রার মনে হচ্ছে বিয়ের আগে এমন একটা সকালের জন্য সে কতো কিই না ভেবে রেখেছিলো!
দ্বীপের এসব কথা জানার আগে দ্বীপকে নিয়েও তো কতো স্বপ্ন দেখে ফেলেছিল!
কে জানে তাকে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হবে!
চিত্রা কাঁথাটা টেনে দ্বীপের শরীরে দিয়ে নামার জন্য ফিরতে যাবে তখনি তার চুলের উপর টান পড়লো,সে ফিরে তাকিয়ে দেখলো দ্বীপ তার চুল ধরে মিটমিট করে তাকিয়ে আছে।

চিত্রা টেনে ছাড়িয়ে চলে যাওয়ার উদ্যত হয়েছে, তখনি দ্বীপ বললো..
___ তোমার অস্ত্রগুলো কোথায় চিত্রা?

চিত্রা চমকে উঠে তাকিয়ে দেখলো তাইতো, সে যে এগুলোকে বালিশের কাছে রেখেছিল সেখানে তো এগুলো নেই! তার মানে দ্বীপ সরিয়ে ফেলেছে!
কিন্তু কিভাবে নিলো, ঘুম থেকে উঠেও দেখলো সে যেভাবে মুখ ঢেকে ঘুমিয়েছিল সেভাবেই আছে। এই কাজ দ্বীপ কখন করলো?
চিত্রা অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললো..
___কখন নিলেন? তাহলে আমি জাগিনি কেন?

___তুমি ঘুমে এতো ভারী হয়ে আমার জন্য কিনা এই আয়োজন করেছিলে! আরো কতো কিছু করা যেতো! ওহহ মিস হয়ে গেছে!

বলেই দ্বীপ কাঁথা দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো!চিত্রা মাথায় হাত দিয়ে রুমের মধ্যে ঘুরতে লাগলো।
কেন একটা মানুষ দুটো জীবন নিয়ে খেলতে চাচ্ছে?
হয় সে যেকোনো একজনকে বেছে নিতো৷ চিত্রা না হয় ভাগ্যকে দোষ দিয়ে সংসার করার স্বপ্নকে চাপা দিয়ে বিদায় জানাতো। কিন্তু সে দুদিকে চাচ্ছে মানে কি?
চিত্রার রাতের কথা মনে হচ্ছে, দ্বীপ বলেছিল সে চাপে পড়ে ওই মেয়ের সাথে সব সম্পর্ক বাদ দিতে পারছেনা। তাহলে কি তার কথা সত্যি ছিল?
আবার মিথ্যাও তো হতে পারে।
এতদিন সম্পর্কের মধ্যে যদি তার প্রেমিকাকে মিথ্যে বলতে পারে,,সে একদিনের পরিচয়ে তার সাথে কিসের সত্যি বলবে?

নাহহ এত ভাবলে চিত্রা পাগল হয়ে যাবে।
সে ফ্রেশ হয়ে তার শাশুড়ীর কাছে গেলো। একটু টুকটাক কাজ করতে চাইলো,কিন্তু তার শাশুড়ী তার হাতে এককাপ চা ধরিয়ে বললো দ্বীপকে জাগিয়ে দিতে। তাকে বাজারে যেতে হবে।

চিত্রা আর কি করবে, কাপ হাতে রুমে এসে দেখে দ্বীপ ফোনে কথা বলছে। সে শুনতে পেলো দ্বীপ বলছে..
___ সারারাত বারান্দায় ছিলাম বুঝছো, কখন জানি সেখানেই ঘুমিয়ে গেলাম, আমার ঘাড়ে, পিঠে ব্যথা করছে। শুধু তোমার জন্য এতো কষ্ট করেছি বাবু৷
লাভ ইউ! আচ্ছা পরে কথা বলি হ্যাঁ?

ফোন কেটেই দ্বীপ চিত্রাকে দেখে একটু আৎকে উঠলো। চিত্রা এগিয়ে এসে ধিড়িম করে কাপটা টেবিলে রেখে বললো…
___সারারাত বারান্দায় ছিলেন তাইনা? বাবুর জন্য এতো কষ্ট করেছেন?! ওই মিথ্যাবাদী, মিথ্যুক সারারাত যে আমার সাথে ভাব করতে চেয়েছেন বললেন না কেন? আমি তো উনাকে পাইলে সব বলে দিবো!

___তুমি কি তাকে চিনবে নাকি?

চিত্রা একটা সফলতার হাসি হাসলো, কারণ দ্বীপ তো জানেনা বিয়ের আগেই সে ওই মেয়েকে রেস্টুরেন্টে দেখেছে। কিন্তু এইটা এই মূহুর্তে বললো না,চায়ের দিকে চোখ রেখে বললো..
___ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে,

___ ওহহ এক মিনিট, এক মিনিট।

বলেই দ্বীপ তারাতাড়ি করে বাথরুমে চলে গেলো।
তখনি টুং করে দ্বীপের মোবাইলে একটা ম্যসেজ আসলো। চিত্রা সেটাকে দেখতে একটু উঁকি দিয়ে দুইটা ব্যপারে পুরো বোকা হয়ে গেলো, প্রথমটা হলো দ্বীপের ফোনের ওয়ালপেপার চিত্রার৷ আর এই মূহুর্তে দ্বীপের স্ক্রিনে যে ম্যসেজটা ভেসে বেড়াচ্ছে সেটা হলো..
___এভাবে কেটে দিলে কেন? আর আমার সাথে দেখা করার চেয়ে তোমার কাছে শশুড় বাড়ির মেহমান বড় হয়ে গেলো তাইনা?

বাকিটা দেখা যাচ্ছেনা।

তখনি দ্বীপ আসলো এবং টেবিল থেকে কাপটা হাতে নিয়ে চিত্রার দিকে তাকালো!
চিত্রা ভ্রু ভাজ করে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে দ্বীপের দিকে তাকালো!
দ্বীপ চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞাসা করলো
___কি হয়েছে?

চিত্রা বললো
___আপনার ভবিষ্যতে দুইটা বিয়ে করার প্ল্যান আছে তাইনা?

___ তুমি চাইলে করবো সমস্যা কি?

তখন চিত্রা একটানে কাপটা হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বললো..
___আমি তো চাই ১০০ টা বিয়ে করেন, এবং সবার চিপায় পড়ে একদম চেপ্টা হয়ে যান, যত্তসব!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here