আঁধারের আলো,পর্ব_২_3
লেখাঃInsia Ahmed Hayat
পর্ব-২
শাওনদের বাড়ির পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে সবাই। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আলোর দিকে। আলোও করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে। আলোর শাশুড়ী সবাইকে বলছে
শাশুড়ী ঃ দেখছো শাওনের বাপ আমার পোলার কষ্টের টাকা কেমনে নষ্ট করে। আলো এতো গুলো ভাত বাড়ির পিছে কেন ফালাইলা।(চিল্লিয়ে)
আশেপাশের মানুষ এসে তামাশা দেখছে।
আলোঃআমি ফালাইনি মা।
রুপাঃতুমি ফালাওনি তোহ কি উড়ে এসেছে ভাত গুলো।
আলোঃ মা সত্যি আমি ফালাইনি। আমি কেনো ফালাবো।
শাওনের বাবাঃ আচ্ছা এতো গুলো ভাত এখানে। অন্য কারোরও তোহ হতে পারে।
শাওনের মাঃ অন্য কারো হইবো না। পাতিলে গিয়ে দেখেন। পুরো পাতিল খালি। তুই এতো গুলো ভাত এনে ফালাইলি কেন। প্রতিদিন বেশি বেশি করে ভাত রান্না করস তারপরও ভাত পাই না।
আলোঃ হ্যা মা আমিও বুঝতে পারছি না। প্রতিদিন ভাত সর্ট পড়ে। রাতে ওনি(শাওন) খাওয়ার পর আর ভাত থাকে না।হয়তো অল্প করে খেয়ে নেই নয়তো না খেয়ে থাকি। তাই তোহ প্রতিদিন একটু বেশি করে রান্না করি তারপরও কম পড়ে আজ বুঝলাম কেনো কম পড়ে। কিন্ত সত্যি আমি ফেলে দেইনি বিশ্বাস করেন আমি ফেলে দেইনি। কেন আমি ফেলে দিবো। ( মনে মনে বলছে। কারন তার কথা শোনার যে কেউ নেই। নিজের দুঃক্ষ গুলো মা, ভাই এর কাছে বলার স্বাধীনতা নেই)
শাওন এতোক্ষন চুপ করে ছিলো। কিছু না বলে চলে যায়। শাশুড়ী আর রুপা মিলে আলোকে আরো অনেক কথা শুনিয়ে এক সময় তারাও চলে যায়। শ্বশুর আলোর দিকে চেয়ে চলে গেলো।
আলো সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। পাশের বাসার চাচাতো ভাবি আলো কাছে এলো।
ভাবিঃ আলো আর কতো অপমান সহ্য করবা। তুমি কিছু বলোনা কেনো।
আলো মুচকি হেসে বলল
আলোঃ প্রতিবাদ করা যে কেউ শিখায়নি। মানুষের কথা হজম করাটা ঠিকই শিখিয়েছে।
বলেই চলে গেলো। এভাবে কিছুদিন কেটে গেলো। একদিন আলো সকালে রান্না করছে উঠানে বসে আছে শাশুড়ী। হঠাৎ পাশের বাসার চাচী এসে বসলো। দুজনে মিলে গল্প করছে। আলো রান্না ঘর থেকে স্পষ্ট সব শুনতে পাচ্ছে। কথার মাঝে চাচী তার পুত্র বধুর কথা বলল, আসলে ইনিয়ে বিনিয়ে শাশুড়ীকে খোচা দিচ্ছে,
চাচীঃ ভাবি জানেনি ৮০ হাজার টাকা দিয়া বউ এর বাপে খাট বানায় পাঠায়ছে যাতে তাগো মাইয়া ভালো ভাবে থাকতে পারে।
শাশুড়ীঃকউ কি এতো দাম দিয়া।
চাচীঃ হও বুঝেন না এইগুলো হলো সামাজিকতা। সাথে ফ্রিজও দিছে। আপনে কই পোলাডারে বিয়া করাইলেন। ভালো জাগায় করাইতে পারলেন না। আমগো বউ এর কিন্তু বাচ্চা হইবো।
শাশুড়ীঃভালা তোহ
চাচীঃ হো আর আপনে না কি বিয়া করাইলেন।এতদিনে নাতীর মুখও দেখতে পারলেন না। কবিরাজ দেখান ভালা দেইখা।
শাশুড়ীঃ অনেক দেখাইছি কোনো কাম হয় না
চাচীঃ আইচ্ছা বাদ দে মাইয়ারই কোনো দোষ আছে। আইচ্ছা এইবার ঈদে আমগো বউ এর বাড়ি
থেকে বাজার পাঠাইছে। আপনের বউ এর বাড়ি থেকে কি কি পাঠাইছে।
শাশুড়ী চুপচাপ কথা গুলো শুনছিলো। কোনো মতে কথা কাটিয়ে ঘরে চলে গেলো। এইদিকে আলো হালকা হাসলো। একটা মেয়েকে তার শশুরবাড়িতে নিচু করার জন্য পাশের বাড়ি চাচী আর সমাজই দায়ি। আমার শাশুড়ীর এইসবে লোভ নেই কিন্তু যখন শুনে ওমুকের বউয়ের বাড়ি থেকে এটা দিছে সেটা দিছে। সেখানে যে কেউর মাথা নষ্ট হবে। রাগ উঠবে লোভ জাগবে। তারা যৌতুক নিবেও ঢোল পিটিয়ে মানুষকে জানাবে আবার যারা নিবে না তাদের কানে বিষও ঢেলে দিবে। জানি না চাচীর এইসবের কথার ফল কি হবে। কি আর হবে আস্তে আস্তে এইসবের প্রভাব আমার উপর পড়ছে। আমার ভাই এতো দামের খাট দেওয়ার সামর্থ্য নেই। ছোট মানুষ পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করছে সাথে সংসারের হাল ধরেছে। আমি কিভাবে স্বার্থপরের মতো বাবার বাড়ি থেকে কিছু চাইবো। তার উপর আমি যে বেচে আছি নাকি মরে গেছি সেই খোজই তোহ কেউ নেয় না। আবার তাদের কাছ থেকে কি আশা করবো। আমার ভাই এর সাথে আমার কখনো মিল ছিলো না। ও আমার সাথে কথা কম বলতো এখনো বলে না।আমি নিজে থেকেই ওকে কল দিয়ে থাকি। শুনলাম ওর বউ এর নাকি বাচ্চা হবে। শুনে খুবই খুশি হলাম আবার দুঃক্ষ লাগছে যদি মেয়ে হয় তাহলে কি সেই মেয়ের সাথেও আমার মতো আচরণ করবে। ভয় হয় খুবই ভয় হয়।আল্লাহ যেনো তাকে পুত্র সন্তানই দান করে।
যাইহোক আমার শাশুড়ী পরিবর্তন এর জন্য এইসব চাচীরাই দায়ি। শুরুতে কিছুই বলতো শাশুড়ী কিন্তু এইসব শুনতে শুনতে উনি আমার সাথে এমন ব্যবহার করে।
—————————————-
একদিন বিকালে শাওন বাসায় এসে আলো তখন কাজ করছিলো।
শাওনঃ আলো আলো
আলোঃ জিই আসছি।
আলো রুমে আসার পর আলোর হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলে
“তোমার জন্য উপহার”
আলো খুশি হলো। এই দেড় বছরে প্রথম শাওন তাকে কিছু কিনে দিলো। প্যাকেট খুলে দেখলো একটা ছোট ডায়মন্ড এর নাক ফুল। আলো এতোদিন পাথরের নাক ফুল পড়তো। শাওন বলল পড়তে আলো বলল পড়ে পড়বে। এরপর শাওন দোকানে চলে গেলো। আলোর অনেক খুশি লাগছে। প্রায় ৫ মিনিট ধরে নাক ফুলের দিকে চেয়ে আছে।
অন্যদিকে
আঁধার এলাকায় একটা দোকান দিলো ঔষধ এর দোকান। সে খেয়াল করলো সব আছে কিন্তু ঔষধ এর জন্য অনেক দূরে যেতে হয় তাই সে এই দোকান দিলো। আজ থেকে দোকানে মালামাল এনে সব ঠিক ঠাক করবে।
আঁধার নিজের রুমে বসে হিসাব করছে। এমন সময় তার দরজায় কড়া পড়লো।
আঁধার দরজায় তাকিয়ে দেখলো তার বউ ভাবি দাঁড়িয়ে আছে।
আঁধারঃ ভাবি আপনি?
ভাবিঃআসতে পাড়ি।
আঁধারঃ হ্যা হ্যা আসুন। কোনো দরকার।
ভাবি এসে বসল।
ভাবিঃ আঁধার ভাইয়া আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।
আঁধারঃ হ্যা বলুন কি হয়েছে। ভাইয়ার সাথে কি ঝগড়া হয়েছে নাকি?
ভাবিঃ না তেমন কিছুই না। আসলে আমার বিয়ের ৫ বছর হলো। আপনাকে দেখছি আপনি খুব চুপচাপ থাকেন। হঠাৎ করে একদিন বললেন বিদেশ যাবেন।পড়াশোনা করবেন না। তোহ আপনার ভাই আপনাকে তার কাছে নিয়ে গেল। সেখানে ৪ বছর থাকলেন। অনেক ছুটি থাকার পর দেশে আসেননি। একটাই কথা টাকা কামাতে হবে। এরপর ১ বছর আগে আসলেন। আর হুট করে সিদ্ধান্ত নিলেন বিয়ে করবেন না। ঠিক বুঝতে পারছি না। কি হয়েছে খুলে বলুন। আমাকে ভাবি নয়। বড় বোন বা বন্ধু মনে করুন।
আঁধার চুপচাপ তার ভাবির কথা শুনছিলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলা শুরু করলো। এতোদিনের মনের চাপা কষ্ট গুলো আজ বলতে যাচ্ছে কাউকে।
আঁধারঃ আমি একজনকে ভালোবাসি। এখন থেকে নয়। যখন আমার বয়স ৭ বছর তখন থেকে। আমরা একই ক্লাসে পড়তাম। সমবয়সী আমরা সে আমার ২ মাসের বড় হাহাহা। ছোট বেলায় এই কথা বার বার মনে করিয়ে দিতো।হালকা চাপা স্বভাবের ছিলো কিন্তু আমার সাথে কথা ঝুড়ি ফুটতো। আমাকে সব সময় বকা দিতো কারন সে আমার বড় ছিলো তাও দুই মাসে এই কথা দিনে ১৫ বার আমাকে শোনাতো। হাহাহা
বলেই আঁধার হাসছে। ভাবি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম আঁধারকে হাসতে দেখলো। শাশুড়ীর কথায় আজ দেবরের সাথে খোলাখুলি কথা বলতে এসে অবাক হচ্ছে।
ভাবিঃ ওম বেশ তোহ সে কোথায়, নাম কি, কোথায় থাকে?
ভাবির এমন প্রশ্ন আঁধারের চেহারায় হতাশ ছেয়ে গেলো।নিজের মনের চাপা কষ্ট গুলো বের হয়ে চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠছে।
আঁধারঃ আলো তার নাম আলো। বর্তমানে সে শ্বশুরবাড়িতে। ১৪ বছর হয়ে গেছে তার সাথে দেখা হয় না কথা হয় না।
আচ্ছা ভাবি আমি আসি আমার কাজ আছে।
কোনো মতে কথা কাটিয়ে চলে গেলো আঁধার। ভাবি যাওয়ার পথে চেয়ে আছে। আঁধারের মা এসে বসল।
আঁধারের মাঃ বউমা কি বলেছে আঁধার আর এইভবে তারাহুরো করে যে চলে গেলো।
আঁধারের ভাবিঃ আলো নামের এক মেয়েকে ভালোবাসে। আলো নামে কাউকে চিনেন কি মা?
আঁধারের মা চিন্তায় পড়ে গেলো। নামটা বেশ শোনা শোনা লাগছে।
আঁধারের মাঃ নাম শুনেছি কিন্তু মনে পড়ছে না।
আঁধারের ভাবিঃ ওরা একই ক্লাসে একই স্কুলে পড়তো। একটু মনে করার চেষ্টা করুন।
আঁধারের মা ঃআচ্ছা আমি ভেবে দেখছি
পরেরদিন বিকালে সব কাজ শেষ করে। নিজের ভাই এর ফোনে কল দিলো।
অনেক কষ্টে করে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কিনেছি এটাই ব্যবহার করি। তাও বাবার বাড়ি থাকতে স্টুডেন্ট এর বেতনের টাকা জমিয়ে কেনা ফোন। খুব যত্ন করেই রাখছি। আমি সব কিছুই যত্ন করে রাখার চেষ্টা করি তারপরও আমার যত্নে গড়া জিনিস হারিয়ে যায়।
পরপর ২ বার কল দিলাম ব্যস্ত বলছে।জানিনা যতবার কল দেই ততবারই ব্যস্ত বলে থাকে। তাই ভাই এর বউ ফাতেমাকে কল দিলাম। মেয়েটা গর্ভবতী কেমন আছে খোজ খবর নেই।
২ বার রিং হওয়ার পর রিসিভ করলো।
আলোঃ আসসালামু আলাইকুম ফাতেমা।
ওইপাশেঃ আমি ফাতেমার মা বলছি। কেন কল দিয়েছো আর কি চাই। ভাই এর কাছ থেকে খালি নেওয়ার মধ্যে আছো দেওয়ার মধ্যে নাই। জামাই কতো কষ্ট করে কাজ করে। টাকা জমাচ্ছে ফাতেমার ডেলিভারির জন্য আর তুমি লোভী মেয়ে আমার মেয়ের সুখ দেখতে পারোনি তাই না।
আন্টির কথার আগামাথা বুঝতে না পেড়ে ওনাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
আলোঃআন্টি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাকে বুঝিয়ে বলুন।
ফাতেমার মাঃ কি বলবো। তোমার জামাইক্র যে পাঠিয়েছো টাকার জন্য। তোমার জামাই এসে বলেছে তোমার নাকি কিছু টাকা লাগবে চিকিৎসার জন্য। নিজে তোহ বাচ্চা জন্ম দিতে পারোনি আবার আমার মেয়ের বাচ্চা হবে তাই হিংসা হচ্ছে তাই না। লোভী মেয়ে হিংসুটে,অলক্ষি কোথাকার।
আরো অনেক কথা শুনিয়ে ফোন কেটে দিলো।আলোর চোখের কোনে নোনা জল জমে গেলো। তা গড়িয়ে পড়ার আগে মুছে ফেললো। বাবার মৃত্যুর জন্য আমাকে যখন দায়ি করেছিলো প্রচুর কেদেছিলাম। এরপর যখন স্কুলের যেতে পারবো না তখনও কেদেও কারো মন গলাতে পারিনি। মানুষ আমাকে সব অলক্ষি বলতো। এইসব আস্তে আস্তে সহে গিয়েছিলো। পৃথিবীতে দুইজন আমায় সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে এক আমার বাবা আরেকজন সে। যে আমার থেকে ১৪ বছর আগেই অনেক দূরে চলে গেছে। তার দেখা আর মেলেনি। বাবার মারা যাওয়ার পর নিজেকে এতোটাই গুটিয়ে নিয়েছিলাম যে প্রয়োজন ছাড়া কোথাও যেতাম না। মানুষ তোহ বাদই দিলাম আমার মা ও দাদী কথা শুনতে শুনতে তিক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আসলে বাবা থাকলে হয়তো আজ আমি অনেক সুখি থাকতাম। বাবাকে আমার অবস্থার কথা বললে দৌড়ে আমায় নিতে চলে আসতো। কিন্তু নেই কেও নেই আমার। একটা ভাই যার সাথে আমার কথাই হয়না। মানুষ ঈদে বাবার বাড়ি যায়। বিয়ে হওয়ার ২ বছর হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ৫ বারও বাবার বাড়ি যেতে পারিনি। এক তোহ শশুরবাড়ি থেকে আমি চলে গেলে কাজ করবে কে আরেক হলো বাবার বাড়িতে আমি গেলে আমাকে খাওয়াতে তাদের খরচ হবে। মা আমায় কিছু বলতো না কিন্তু দাদী আর তার সাথে যোগ দেওয়া নতুন মানুষ আমার ভাই এর শাশুড়ী। আমি জানি আমার মা কখনোই সুখ পায়নি। পাবে কিভাবে প্রথমেই যে আমার জন্ম হলো কন্যা সন্তানের। সুখের আবেশ পেয়েছে আমার ভাই হওয়ার পর আমার মাকে মাথায় তুলে দিলো। এখনো হয়তো আমার জন্য মা কষ্ট পায়।
রুপা আপু আমার বরকে পছন্দ করতো তা আমি আগেই বুঝে গিয়েছি তারপরও কিছু বলিনি কারন আমার বরের মেয়ের নেশার চেয়ে টাকা ও জুয়ার নেশা আছে। জুয়া খুবই ভয়ংকর নেশা মানুষকে তচনচ করে দেয়। রুপাকে আমার বর পছন্দ করে না কারন তার বোনেদের সাথে কখনোই ভালো ব্যবহার করেনি।তাই উনি আমায় বিয়ে করে যাতে তার বোনেরা ভালোভাবে থাকতে পারে বাবার বাড়ি আসার পর। উনি নিজের বোনদের অনেক ভালোবাসে। আমায় কখনো অসম্মান করেনি কিন্তু ওইযে জুয়ার নেশা যার ফলে আজ উনি আমায় না বলে ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিয়ে আসছে। নিশ্চয়ই জুয়ায় হেড়েছে।
রাতে
শাওন বাসায় আসে। তাকে পানি দিয়ে তার কাছে বসেছি।
আলোঃ আমার ভাই এর কাছ থেকে কত টাকা নিয়ে এসেছেন আপনি?(শান্ত গলায়)
শাওনঃ ওহ তাহলে তোমার ভাই বলেই দিয়েছে। হ্যা নিয়েছি টাকা আর তোমার জন্যই তোহ নিয়েছি। ওইযে তোমাকে উপহার দিলাম নাক ফুলটা। মনে করো তোমার ভাই এর দেওয়া উপহার। যাও গিয়ে খাবার নিয়ে আসো প্রচুর ক্ষিদে পেয়েছে।
বলেই বাথরুমে চলে গেলো শাওন। আলো চুপ হয়ে আছে। কেমন মানুষ ইনি ছি।
পরেরদিন
শাওনের মাঃ বউ আমার ব্লাউজটা সেলায় হয়েছে।
আলো কিছু না বলে ব্লাউজ তার হাতে দিয়ে দিলো। বাবার বাড়ি থেকে নিজের সেলাই মেশিনটা নিয়ে এসেছিলো। কারন ওখানে দুটো সেলাই মেশিন একটা মায়ের জন্য আরেকটা নিজের জন্য।
কয়েকঘন্টা পর
শাওন বাসায় এসে তার মায়ের রুমে গেলো।
শাওনঃ মা কি হয়েছে। ফোন করে আসতে বললা কেনো?
শাওনের মাঃ তোর বউ কি করছে জানোস।
শাওনঃ আবার কি করেছে
রুপাঃ রহমান চাচার বউ এর কাছে তোমার বউ তার সেলাই মেশিন বিক্রি করে। বাবার বাড়ি গেছে।
শাওনঃ মানে কি কেনো। আর বিক্রি করার সময় তোরা কোথায় ছিলি।
শাওনের মাঃ আমার ব্লাউজটা দিয়াই নিজেই বেচে গেছে গা একবারও বলে যায় নাই। এখন তোর বউওরে তুই কিছু বলবে।আমার তোহ দাম নাই।
রুপাঃ হ্যা অনেক হয়েছে শাওন ভাই এবার কিছু করো। বিক্রি করছে যাতে আমাদের জামা কাপর বানায় দেওয়া না লাগে।
শাওন প্রচুর রেগে আলোকে কল দিচ্ছে। কিন্ত ফোন বন্ধ।
১ ঘন্টা পর আলো এসে হাজির। এখান থেকে বাবার বাড়ি যেতে ৪০ মিনিট লাগে।
আলো কিছু না বলে নিজের রূমে পা বাড়ায়।
চলবে
আঁধারের আলো
পর্ব_৩
লেখাঃInsia Ahmed Hayat
আলো বাসা এসে নিজের রুমে চলে গেলো। গিয়ে সে অবাক রুমে শাওন বসে আছে। হয়তো তার অপেক্ষা করছে। আলো রুমের দিকে খেয়াল করে দেখলো মেঝেতে পড়ে আছে তার সব জামা কাপর।সব এলোমেলো হয়ে আছে। শাওনের দিকে একবার চেয়ে দেখলাম সে তার দিকেই চেয়ে আছে। আলো সেদিকে না তাকিয়ে জামা গুলো উঠও। জামার দিকে নজর গেলো। একি সব গুলো জামা দেখলাম। শাওনের দিকে তাকালাম। সে একটা হাসি দিয়ে বলল
শাওনঃ তুমি তোহ সেলাই ভালো পারো তাই ভাবলাম। জামা গুলো কেটে দেই তুমি না হয় সেলায় করে নতুন ডিজাইন করে নিবা। ওম তোমার সেলায় মেশিন টা যে দেখছি না।
মানুষ কতোটা খারাপ হলে এমন করতে পারে। আলোর সব জামা বের করে মাঝ দিয়ে এলোমেলো ভাবে কেটে দিয়েছে। এমনভাবেই কেটেছে যে কিভাবে জোড়া লাগাবে তাই ভাবছে।
আলোঃ আমার ভাই কাছ থেকে কতো টাকা নিয়ে এসেছেন।
শাওনঃ কেন টাকা তো দিয়েই আসলা। আর কি দরকার। কেমন ভাই তোমার বোনকে সামান্য টাকা দিতে পারে না। যাইহোক আমার কাজ আছে আমি দোকানে গেলাম।
বলে শাওন চলে গেলো। আলো জামা গুলোর দিকে চেয়ে আছে।এই জামাগুলো তার নিজের বানানো। নিজের টাকা দিয়ে বানিয়েছে৷ আর সাথে ননদ ও ননাসের দেওয়া উপহার ছিলো। বিয়ে পর এক সুতাও কিনে দেয়নি অথচ আমার সব গুলো জামা এইভাবে নষ্ট করে দিলো। আসলে জুয়াখোরদের কাছে কিছু আশা করাই বোকামি।
সুই সুতা নিয়ে কাচি দিয়ে হালকা ঠিক করার চেষ্টা করছি।
রাতে শাওন বাসায় আসলো। শীতের সময় বছরের শেষ। এই শীতে তাকে অপেক্ষা করতে হয় ১,২ টা পর্যন্ত। সারারাত জুয়া খেলে এরপর দোকান বন্ধ করে বাসায় আসে। কেউ কিছু বলেও না।
শাওনের হাতে বাজারের ব্যাগ দেখে মনে মনে বলল
“আজও নতুন শাস্তির ব্যবস্থা করেছে হয়তো”
শাওনঃ শোনো চালে গুড়া গুলো দিয়ে পিঠা বানাতে বসো কালকে আমার বোন আর ভাগিনাদের জন্য পিঠা নিয়ে যাবো।
আলো চুপচাপ শাওনের দিকে চেয়ে আছে। এরপর খাবার দিলো। খেয়ে শুয়ে পড়েছিল। আজকে ভাত নেই। রোজ রোজ ভাতের ঝামেলা ভালো লাগে না। দেখে গিয়েছিলাম ভাত আছে কিছুক্ষন আগেই রুপা এক প্লেট ভাত নিজের জন্য নিয়ে গেলো। এই মেয়ে রাত ৮ টায় একবার খেয়েছে আর ১২ টায় একবার খেয়েছে জানি না কেন এমন করলো। অন্য কেউ খাবে কি না সেদিকে খেয়াল নেই।এরপর চালে গুড়ো দিয়ে দুটি রুটি বানিয়ে খেয়ে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমিও মানুষ কাজের লোকের মতো এতো কাজ করতে পারবো না। রাতে মাছ নিয়ে আসবে, চালে গুড়ো নিয়ে আসবে। আমার দিকে কোনো খেয়াল নেই কারো শুধু হুকুমের উপর চলে।
কালকে রাতে একটা গার্লস গ্রুপে নিজের মনের না বলা দুঃক্ষের কথা গুলো শেয়ার করেছিলাম ফেক আইডি দিয়ে সেখানে দেখলাম আমার মতো অনেক বোন এমন অবস্থায় মুখ বুঝে সহ্য করছে। অনেকে আমায় অনেক সাহস দিয়েছে যা বাবা মারা যাওয়ার পর কেউ দেয়নি। এইভাবে এতো কাজ করতে করতে একদিন মরেই যাবো। তাই আজ সাহস করে নিজের জন্য কিছু করতে হবে। বাচ্চা হচ্ছে না এতে আমার কেন দোষ হবে কতো মানুষের দশ, বারো বছর ধরে বাচ্চা হয় না কই তারাও তোহ সংসার করছে। অনেকে বলল তাদের কারো ৬ বছর, ৮ বছর ধরে বাচ্চা হচ্ছে না কিন্তু বর সাপোর্ট দিচ্ছে। আল্লাহ না দিলে কি করার। দোয়া ছাড়া তোহ আর কোনো পথ নেই।
এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। আজ মেঝেতে ঘুমাচ্ছি।শাওনের পাশে ঘুমাতেও কেমন যেন গা ঘিন ঘিন করছে।
সকালে শাওনের আগেই ঘুম থেকে উঠে কাজে লেগে গেলাম।
ঘুম থেকে উঠে শাওন চিল্লাচিল্লি করছে। আলো সেইদিকে কান না দিয়ে তার নিজের কাজ করছে। কাজ শেষ করে পিঠা বানাবে।
শাওনঃ তোমাকে না বলেছি রাতে পিঠা বানাতে। বানাওনি কেন।
আলোঃ কাজ সেরে বানাতো বসবো।( আর আমি মানুষ রোবট নই।আমারও ঘুমের প্রয়োজন আছে। নির্ঘুমে থেকে থেকে আমি এতো কাজ কেন করবো){ মনে মনে বলল}
শাওন আর কিছু বলল না চলে গেলো। এই সময় সে মুখ খারাপ করতে চাচ্ছে না। আর আজ আলোকে কেমন যে অন্যরকম লাগছে।
কাজ শেষ করে আলো রুপাকে ডাকছে।
আলোঃ রুপা ও রুপা এদিকে আসো।
রুপাঃ কি হয়েছে এতো ডাকাডাকি করছেন কেন?
আলোঃ বড় আপু আর ছোট আপুর বাড়িতে পিঠা পাঠাবো তাই আমার সাথে পিঠা বানাতে বসো।
রুপাঃ আমি পিঠা বানাবো কেন। আপনার ননাস, ননদ আপনি বানান। আমি পিঠা বানাতে পারিনা।
” তোহ কি পারেন বসে বসে অন্যের ঘরে খেতে পারেন। আর মানুষকে অর্ডার দিতে পারেন আর কূটনামি করতে পারেন তাই না।” (কেউ একজন বলল।)
আলোঃ সূচি আপু আপনি। এমা বললেন না যে আসবেন। ওনি(শাওন) গিয়ে নিয়ে আসতো। আসতে কি কোনো অসুবিধা হয়নি তো।
সূচিঃ না ভাবি। বড় আপাও আসছে ভাবি। ওইদিন তোহ চলে গিয়েছিলাম তাই আজ আসলাম শীতে বাচ্চারা নানীবাড়িতে আসবে বায়না ধরলো।
আলোঃ মা দেখে যান ছোট আপু এসেছে।(জোড়ে)
আলো খুশি হয়ে সূচির মালামাল ঘরে নিয়ে গেলো। রুপে মুখ বাকা করে ঘরে চলে গেল। এই সূচি আর সাথীর সাথে সে কথায় পারবে না তাই কথা বাড়ায় না।
শাওনের মাঃ কিগো মা আইসো তুমি। আসো। দেও আমার নাতীটারে দেও।
সূচি আপুর ১ বছরের ছেলেকে কোলে নিলো আর ৫ বছরের মেয়েকে সাথে নিয়ে ভেতরে গেলো।
শাওনের মাঃ আলো সূচিরে সরবত দেও। কতো দূর থেকে আইসে।
কিরে মা জামাই বাবু আসলো না। আর না কইয়া যে আইসো। আমারে ফোন দিলা না। কত কষ্ট কইরা আইসো শাওনের বাপেরে পাঠাইতাম হেয় নিয়া আইতো। তো বিয়ান সাব আর বিহাই সাব ভালো আছেনি।
সূচিঃ উনি(বর) ব্যস্ত মা তাই আসে নাই। আর সবাই ভালো। আচ্ছা বড় ভাই কোথায়।
আলো সরবত দিতে দিতে বলল
আলোঃ উনি আসতেছে দোকান বন্ধ করে। আর আপনি একা আসছে কিভাবে। কখন রওনা দিয়েছেন।
সূচিঃ আমার ভাসুর আর শ্বশুর মিলে আমাকে আর ভাবিকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছে। আমার জাও তার বাবার বাড়ি গিয়েছে আমিও আসলাম। যাক আমার বড় ব্যাগ টা দেও তোহ ভাবি।
সূচি তার ব্যাগ থেকে অনেক কিছু বের করলো। এরমাঝে শাওন এসে হাজির।
রুপাও কান পেতে ওদের সবার কথা শুনছে।
শাওনঃ তুই আসবি বললি না কেন। আমি গিয়ে নিয়ে আসতাম হলে।
সূচিঃ তোমাদের সারপ্রাইজ দিতে চলে আসছি।আচ্ছা সবার জন্য শীতে পিঠা নিয়ে এসেছি। সব ধরনের পিঠা বানিয়েছি কালকে।
শাওনের মাঃ সব গুলা তুই একলা বানাইছোত। এতো কষ্ট করলি কেন। তোর ভাই কালকে চালের গুড়া নিয়ে আসছে। বউরে কইছে রাতে বানাইতে বানায় নাই।(চোখ রাঙিয়ে আলোর দিকে তাকাল)
আলো চুপ করে আছে। সুচি সেই দিকে কান না দিয়ে। আলোকে বলল
সূচিঃ আলো ভাবি আমার জা আপনার জন্য পাটিসাপটা পিঠা বানিয়েছে।আপনার খুব পছন্দ তাই। গতবার আপনি তার পছন্দের আর আমার ননদের পছন্দের চিতই পিঠা ও দুধ চিতই পিঠা বানিয়ে পাঠিয়েছেন না৷ তারা যে কি খুশি তাই এইবার ননদ আর আমরা দুই জা মিলে পিঠা বানালাম। শাশুড়ী তোহ আমাদের জোড় দিয়ে বলল আপনার জন্য এইবার নিয়ে যেতেই হবে। খেয়ে দেখুন তোহ। এই সব পাটিসাপটা পিঠা আপনার।
বলেই হাতে পিঠা বক্সটা এগিয়ে দিলো। সবাই যেনো হালকা রাগী ভাব নিয়েই আছে। আলো হাসি মুখে বক্স নিয়ে নিলো। খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সবাই চেহারা দেখে খেলো না।
আলোঃ পরে খাবো আপু। আপনি এখন রেস্ট নিন।
আলো সব কিছু গুছিয়ে রান্না ঘরে গেলো কিছুক্ষন পর বড় আপু চলে আসবে। আজ তাদের জন্য গরুর মাংস রান্না করবে আলো। গতবার তোহ খেতে পারলো না এভার ভালো করে রান্না করবে।
রান্না বান্না শেষ করলো। বড় আপাও চলে আসছে। গরুর মাংস রান্না করে শাশুড়ী আর শাওনকে হালকা টেস্ট করে লবন চেক করালো। সে এবার বলল যদি লবন / মরিচ বেশি হয়ে যায় তাহলে বুঝে নিতে যে অন্য কেউ করেছে।
সাথী আপু ও তার দুই মেয়েও চলে এসেছে।
সবাই খাবার টেবিলে বসেছে। সাথী আপু রান্না করে নিয়ে এসেছে। উনি কাবাব আর পায়েশ বানিয়ে বাসা থেকে নিয়ে এসেছে। সবাই খাবার খাবে আলোকে তার শ্বশুর আর ননাস আর ননদ জোর করে বসিয়েছে। এতোদিন সবার শেষ এ খেতো কিন্তু আপুরা আসলে এক সাথে খায়। আলোকে নিজের বোনের মতো মনে করেন। ভাগ্য একটু হলেও ভালো তাই এমন বোনের মতো ননদ ননাস পেয়েছে। তারা সব সময় আলোর সাথে ভালো ব্যবহার করে। শুরুতে শাশুড়ীও ভালো ব্যবহার করতো কিন্তু বাচ্চা না হওয়ায় আর পাশের বাড়ির চাচীরা তাদের বউদের কথা বলে বলে এক সময় আমাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের পাত্রী বানিয়ে দিলো।সাথে রুপা তোহ আছে। বিয়ে পর থেকে এখানেই পড়ে আছে। ঈদের সময় ২ দিন নিজের বাড়ি থেকে দৌড়ে চলে আসে। আমার বর তাকে পাত্তা দেয় না তারপরও আমাদের পেছনে পড়ে আছে।
আপুরা ১০ দিন থেকে চলে গেলো।
অন্যদিকে
আঁধার এর রুমে ওর বড় বোন, মা,ভাবি বসে আছে। আঁধার চুপ করে আছে।
আঁধারের বোনঃ আমি সবাইকে সবটা বলে দিয়েছি আঁধার। আমি তোমকে আর এভাবে দেখতে পারছি না। ওই মেয়ে তোমাকে ছেড়ে অন্য কারো হয়ে গিয়েছে তুমি কেনো তার জন্য অপেক্ষা করছো।
সে তোহ ফিরবে না। সে তার স্বামী সংসার নিয়ে ব্যস্ত।
আঁধারঃ আপু ভালোবাসলে যে মিল হবে এমন তো নয়। আমাদের না হয় অমিলই থাক। আমরা ওর সাথে আমার শেষ দেখে ১৪ বছর আগে। যেদিন আমরা ওই এলাকা ছেড়ে এইখানে এসেছিলাম। এই ১৪ বছরে তার কথা আমি মূহুর্তে মূহুর্তে মনে করি তার হাসি৷ তার কথা সব। সে আমায় বদলে দিয়েছিলো আমার পাশে ছিলো। কিভাবে আমি তাকে ভুলতে পারি। আমাকে ভুলে যাওয়ার কথা বলো না প্লিজ। ১৪ বছরে অনেক চেষ্টা করেও তার দেখা পাইনি। তারপরও আমি তার জন্য অপেক্ষা করবো। কারন সে বলেছিলো। সে শুধু আঁধারের_আলো।
বলে ছাদে চলে গেলো।
আঁধারের মাঃ আয়েশা(আধারের বোন) একবার আমাকে সব বলতা।
আয়েশাঃ কি বলতাম। আমি নিজেও জানতাম না তোমরা তো জানো আঁধার সহজে কাউকে কিছু বলতে চায় না। আর আমি আলোকে চিনি তাই আমাকে নিয়ে ওদের বাসায় গিয়েছিলো ৭ বছর আগে। অনেক চেষ্টা করেছে আলোর সাথে দেখা করার কথা বলার।কিন্তু আলো প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতো না। তার উপর ওর দাদী দেখা করতে দিতো না। আমি আর আধার বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ায় বলেছে আঁধারের চাকরি নাই বয়স কম। দিবে না বিয়ে। আঁধার ৩,৪ বছরের সময় চেয়েছিলো সে কিছু না কিছু করবে কিন্ত কে জানতো ওর বিয়ে হয়ে যাবে। আমি অনেক খোজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। এখান থেকে অনেক দূরে হওয়ায় যেতেও সময় লাগে মা।আর আঁধার বলেছে ও তোমাদেরকে বলবে তাই আমি এতো বছর চুপ ছিলাম ভুলেই গিয়েছিলাম সেদিন আলোর কথা জিজ্ঞেস করায় বুঝতে পারলাম।
আঁধারের ভাবিঃ মা আপনারা কি আলো কে চেনেন কেমন দেখতে।
আঁধারের মাঃ হ্যা বউ মা চিনি ২০ বছর আগে আমি আর তোমার বাবা আমার তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে ওখানে আলোদের বাড়ি পাশের বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। তোমার বাবা কাজ করতো সেখানে। আর সেখানে আধারের সাথে পড় এক মেয়ে নাম তার আলো। একই স্কুলে একই ক্লাসে। আলোর সাথে দেখা হওয়ার পর আঁধার সারাদিন আমার সাথে আলোর কথাই বলতো।একটা কাহিনি এখনো আমার মনে আছে আলো ওকে বাচিয়েছে। ও নাকি রাস্তায় সবার সামনে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলো আশেপাশের বাচ্চারা হাসাহাসিতে আঁধার এর সেকি কান্না পাচ্ছিলো হঠাৎ নাকি একটা মেয়ে তার পাশে মাটিতে বসে পড়ে নিজের ড্রেসে হালকা কাদা মেখে তার দেখে আশেপাশের বাচ্চারা হাসি বন্ধ করে চলে যায়। এরপর আঁধারকে বাসায় দিয়ে নিজের বাসায় চলে যায়। আঁধার তখন থেকেই যখনই আলোকে দেখতো দৌড়ে ওর কাছে চলে যেতো। এই কাহিনি আধার আমাকে অনেক বার বলতো।
এইসব বলছে আর আধারের মায়ের চোখ ছলছল করছে। নিজের ছেলের মনের কথা বুঝতে পারেনি। ৫ বছর ওখানে থেকে এরপর ওর বাবার চাকরি চলে যাওয়ায় এলাকা ছেড়ে এখানে আসে ১৪ বছর হয়ে গেলো। আর এই ১৪ বছর আঁধার কতো শত বাহানা করে ওই এলাকায় গিয়েছে। আজ বুঝতে পারলো কেন গিয়েছে।
এভাবে অনেকদিন কেটে যায়। আলোর ভাই এর বউরে বাচ্চা হওয়ার সময় চলে এলো।
একদিন সকালে শাওন আলোকে বলছে
শাওনঃ আলো দোকানের মাল উঠাবো তোমার ভাই এর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাও তোহ।
আলোঃ কি বলেন আমার ভাই কোথা থেকে টাকা দিবে। আর কয়দিন পর ওর বউ এর ডেলিভারি আপনি জানেন না।
শাওনঃ হ্যা আমি কিছু চাইলেই এই সমস্যা সেই সমস্যা। আর বিয়ের সময়ও তোহ কিছু দেয় নাই। আমি আহামরি কি চেয়েছি যে দিতে পারবে না। আমাকে ধার দিতে বলো আমি ফেরত দিয়ে দিবো।
আলোঃ দেখুন এটা সম্ভব না এর আগেও আপনি আমায় না বলে ওর কাছ থেকে টাকা নিয়ে এসেছেন। আমি পারবো না।
শাওন হালকা রেগে গেলো।
শাওনঃ শোনো নিজের কাপর চোপড় রেডি করো আমি তোমায় গাড়িতে উঠিয়ে দিবো। টাকা নিয়ে আসতে পারলে আসবা না পারলে আসার দরকার নেই। এমনিতেও তুমি কোনো কাজেরই না আমি আমাদের বিয়ের এতো দিন হয়ে গেছে বাবা হতে পারলাম না। আমি দোকানে যাচ্ছি এসে যেনো তোমার মুখ না দেখা লাগে। বলেই চলে গেলো।
আলো সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
দুপুরে শাওন খাবার খেতে এসে দেখে আলো নেই। সারাবাড়ি খুজেও আলোকে পেলো না। ওর মাও বলল আলো নাকি চলে গেছে। এর মানে সত্যি চলে গেছে। যখন গিয়েছে টাকা নিয়েই আসবে। তাই সে মাথা ঘামালোনা।
বাবার বাড়ির দরজার দাড়িয়ে আছে আলো। আলোকে এভাবে এতো বড় ব্যাগের সাথে দেখে সবাই অবাক হয়ে চেয়ে আছে। আলোর দাদী বিরক্ত নিয়ে বসে আছে। হুট করে আলোর আসায় সবাই অবাক।
চলবে…