আঁধারের মাঝে আলো,পর্বঃ ০২
লেখকঃ আবির খান
ক্লাসে আসলে আবিদ চুপচাপ বসে থাকে। কিন্তু ওকে নিয়ে ময়ূরী আর ওর সাথে যে ছেলে-মেয়েগুলো ছিল তারা ওকে নিয়ে অনেক হাসিঠাট্টা মজা করতে থাকে। আবিদ ভাবতেও পারে নি ময়ূরীও ওর সাথে এমন করবে। সত্যিই এ পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন যদি কোন কাজ থেকে থাকে, তাহলে সেটা হলো মানুষকে চেনা। আবিদ মনে মনে খুব কষ্ট পায় ময়ূরীর এরকমটা করায়। তাই ও ওর ডাইরিটা বের করে লিখতে শুরু করে। আবিদের পাশের সিটটায় যেখানে ময়ূরী বসে ছিল সেটা কিন্তু এখন খালি। মানে ময়ূরী চলে গিয়েছে। আবিদ সেই একাই। টিফিন পিরিয়ডের পর স্যার চলে আসেন। পর পর টানা দুটো ক্লাস হয়। আজ সবগুলো ক্লাস জুড়েই পরিচয় পর্ব চলছিল। সবাই সবার সাথে যখন বন্ধুত্ব আর ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টায় ছিল সেখানে আবিদ একা ডাইরি লেখায় ব্যস্ত ছিল। ভালোই হয়েছে সময়তো কেটেছে ওর। নাহলে আশেপাশে মানুষ রূপী শয়তানগুলো ওকে জ্বালাতো। ক্লাস শেষ হওয়া মাত্রই আবিদ কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। এসব আধুনিক সোনার চামচে খেয়ে পরে বড়ো হওয়া ছেলে মেয়েদের মাঝে ওর একদমই থাকতে ইচ্ছা করে৷ এদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ নেই। নেই কোন সুন্দর একটা মন৷ আছে শুধু রূপের বাহ! বাহ! আর টাকার গরম। কিন্তু এরা জানে না এসব ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু আবিদ সেটা জানে৷ ও দ্রুত ভার্সিটির বাইরে চলে আসে। এসেই একটা বাসে উঠে পড়ে৷ পিছনে ঠিক কোণার একটা খালি সিটে ও গিয়ে বসে পড়ে। বসে বসে ভাবে,
– এ ব্যস্ত শহরটায় কি ওকে পছন্দ করার মতো কেউ নেই? কেন মানুষ কালোকে এত অপছন্দ করে? এই যে রাত সেটাও তো কালো। এই যে চোখ সেটা বন্ধ করলেই তো সব কালো। তাহলে মানুষটা কালো হলেই সবার এত অপছন্দ কেন?
আবিদ কোন উত্তর খুঁজে পায় না। এই বৈষম্য ওর আর ভালো লাগে না। কিন্তু হার মানা যাবে না৷ এই সমাজে একবার যদি কেউ হার মানে সে অচিরেই হারিয়ে যায়। আবিদকে ভুলেও হার মানা যাবে না। নাহলে ওর বাবা-মা অনেক কষ্ট পাবে। তারা এত কষ্ট করে যে ওকে বড়ো করেছে সেটাই অসার্থক হবে৷ আর আবিদও সেটা চায় না৷ বাবা-মার কথা ভাবলেই ওর মধ্যে অন্যরকম একটা শক্তি চলে আসে। বাবা-মা ছাড়া প্রতিটি সন্তান অসহায়। আবিদ আর কিছু পাক না পাক মনের মতো বাবা-মা পেয়েছে। যারা সবসময় সব পরিস্থিতিতে ওর পাশে থেকে ওকে সাপোর্ট করে। এসব ভাবতে ভাবতে আধা ঘণ্টার মধ্যে আবিদ ওর বাসায় চলে আসে। এসে বেল দিতেই ওর মা দরজা খুলে। ওকে দেখে খুব খুশি হয়ে বলেন,
~ এসেছিস বাবা? খুব চিন্তা হচ্ছিল তোর জন্য। কেমন গেল আজ প্রথম দিন ভার্সিটিতে?
আবিদ বাসার ভিতরে ঢুকে মায়ের মুখের উজ্জ্বল হাসিটা দেখে সব কষ্ট ভুলে যায়। আর মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– খুব ভালো গিয়েছে মা।
~ মাকে মিথ্যা বলিস কেন? জানিস না মা তার সন্তানের মুখ দেখতেই সব বুঝতে পারে।
– ও কিছু না। ওই যে বলেছিলে না, প্রতিকূলতা তো জীবনেরই অংশ। হার মানলে কি হবে৷ একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করো না৷
~ আমার ছোট আবিদটা আজ কত্তো বড়ো হয়ে গিয়েছে। নিজে নিজেই সব বুঝে। মাশাল্লাহ। যা বাবা ফ্রেশ হয়ে আয় আমি তোর জন্য খাবার বাড়ছি।
– আচ্ছা একসাথে খাবো।
~ আচ্ছা আচ্ছা।
এরপর আবিদ ওর নিজের রুমে চলে আসে। ব্যাগ থেকে ডাইরিটা বের করে ডয়ারে রেখে দিয়ে লক করে জামা কাপড় নিয়ে ও সাওয়ার নিতে চলে যায়। ও ওয়াশরুমে ঢুকে আয়নায় নিজেকে দেখে বলে,
– আল্লাহ চাইলে আমাকে একটা চোখ কিংবা একটা হাত কিংবা একটা পা নাও দিতে পারতেন। তখন তো আমার অনেক কষ্ট হতো। কিন্তু তিঁনি তা করেন নি। এখন তো আমি শুধু কালো। যেটা ওসবের থেকে কিছুই না। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে কত ভালো রেখেছেন। কত সুন্দর করে বানিয়েছেন। তাঁর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া। মানুষ যদি বুঝতো আল্লাহ তায়ালার প্রতিটি সৃষ্টিই অনেক সুন্দর। তাহলে আর এত ভেদাভেদ থাকতো না। কিন্তু আমরা তা বুঝিনা৷ বুঝার চেষ্টাও করি না।
আবিদ আরও ভাবে, একটা ছেলে কালো হয়েই যদি এত কিছু মোকাবেলা করতে হয় তাহলে সমাজের কালো মেয়েগুলোর কি অবস্থা কে জানে৷ হয়তো আরও করুণ অবস্থা তাদের। আবিদ ভাবে ও যদি কখনো অনেক বড়ো হতে পারে ও এই সমাজের কালো সাদার ভেদাভেদটা শেষ করার জন্য কিছু একটা করবে। ও এই আশা নিয়েই নড়াই করে যেতে চায়। সেদিনের মতো দিনটা অনেক কিছু ভেবেই ওর কেটে যায়। বিশেষ করে ময়ূরী মেয়েটার কথা ভেবে৷
পরদিন আবিদ আবার ভার্সিটিতে যায়। তবে আজ আর পিছনে বসে না। কারণ গতকাল স্যার ওকে সামনে বসতে বলেছে। তাই আবিদ সামনের একটা বেঞ্চে বসে পড়ে। কিন্তু এতে বিপত্তি হয় বাকিদের। তারা কেউই আবিদের সাথে বসবে না। আবিদ বাধ্য হয়ে অপমানিত হয়ে আবার সেই লাস্ট বেঞ্চে গিয়ে বসে। এর মধ্যে ময়ূরীও এসে পড়ে। আবিদের সামনে বসার কাহানী শুনে আস্তে আস্তে ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আবিদ ময়ূরী দেখেও না দেখার ভান করে চুপচাপ বসে আছে। ময়ূরী এবার বলে,
~ তুমি কিভাবে ভাবলে সামনের সিটে তুমি বসতে পারবে হ্যাঁ? তোমার মতো কালো ফকিন্নি মার্কা ছেলের জন্য এই ব্যাকবেঞ্চই পার্ফেক্ট। আর কখনো সামনে বসার চেষ্টা করো না। নাহলে তোমার খবর আছে। আমি বুঝিনা ভার্সিটির অথরিটি কি দেখে এই ছেলেকে স্কলারশিপ দিল! এক কাজ করো তোমাকে আমি টাকা দি। লাইক যত লাগে তত দিব৷ তুমি এই ভার্সিটি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাও। আমি না একদম তোমাকে সহ্য করতে পারছি না৷ একটা মানুষ এরকম কালো হয়ে বেঁচে থাকে কিভাবে? ছিঃ আমি হলে তো মরেই যেতাম।
– আল্লাহ তোমাকে কখনো যেন আমার জায়গায় না আনুক সেই দোয়া করি। (হাসি দিয়ে)
ময়ূরীর দিকে তাকিয়ে কথাটা হঠাৎই বলল আবিদ৷ ময়ূরী ভীষণ বিরক্ত হয়ে বলে,
~ হাউ ডিজগাস্টিং!
বলেই ও চলে যায়। আবিদ মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে থাকে। এরপর স্যার আসলে ক্লাস শুরু হয়। আবিদ আবার পড়াশোনায় মন দেয়। এভাবে টানা একমাস চলে যায়। ময়ূরী প্রতিদিন সময় করে আবিদকে যাতা বলে ওকে খুব কষ্ট দেয়৷ মাঝে মাঝে ওকে আড়ালে কাঁদতেও হয়৷ দেখতে দেখতে আবিদদের মিডটার্ম চলে আসে। জীবনের প্রথম সবাই ভার্সিটিতে উঠে পড়াশোনা সবার গোল্লায় গিয়েছে। কিন্তু আবিদ তো প্রতিটি ক্লাস খুব মন দিয়ে করেছে, নোট করেছে। মোট কথা ও সব পারে। সামনের মাসের ১৫ তারিখ ওদের পরীক্ষা। স্যাররা অনেক গুলো এসাইনমেন্ট দিয়েছেন। যারা মন দিয়ে ক্লাস করেছে তারাই একমাত্র সব পারবে এমন ভাবে। আবিদ সব পারে। কিন্তু এদিকে ময়ূরী পড়েছে ঝামেলায়। ও নতুন বন্ধুবান্ধবীদের পেয়ে চিল করে কোন পড়াশোনাই করে নি। এখন কি করবে ও ভেবেই পাচ্ছে না৷ এমনিই ওর রেজাল্ট অনেক ভালো। এখন যদি ভার্সিটিতে এসে রেজাল্ট খারাপ হয় ওর কোন মান ইজ্জত সম্মানই থাকবে না৷ ময়ূরী অনেকক্ষণ ভেবে একটা সিদ্ধান্তে যায়।
আবিদ টিফিন পিরিয়ডে ক্লাস থেকে বাইরে বের হতে নিলে ময়ূরী ওকে ডাক দিয়ে থামায়৷ আবিদ না চাওয়া স্বত্ত্বেও দাঁড়ায়। ময়ূরী ওর কাছে এসে বলে,
~ চলো একসাথে ক্যান্টিনে যাই। আর তোমার সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথাও আছে।
আবিদ ময়ূরীর দিকে না তাকিয়েই বলে,
– আচ্ছা।
আবিদ চুপচাপ হেঁটে ক্যানটিনের দিকে যাচ্ছে। সাথে ময়ূরীও। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে৷ যে এই কালো ছেলেটার সাথে এত সুন্দর মেয়েটা কি করে। এরপর ওরা টিফিন কিনে ক্যানটিনে না বসে ক্যাম্পাসের একটা নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে বসে। আবিদ চুপচাপ টিফিন খাচ্ছে। ময়ূরী আবিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আচ্ছা আমি সরি। অনেক অনেক সরি। জানি তোমার সাথে অনেক খারাপ বিহেভ করেছি। তার জন্য অনেক সরিইই। আর করবো না এমন তোমার সাথে। আমাকে মাফ করে দেও প্লিজ।
আবিদ কিছু বলে না চুপচাপ খেতে থাকে। ময়ূরী আবার জোর দিয়ে বলে উঠে,
~ কি হলো চুপ করে আছো যে?
– তোমার বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করছি। ওরা আসে নি এখনো?
~ আজব ওরা কেন আসবে?
– কেন আমাকে বকাঝকা করতে। তুমি তো তাই ই করতে এখানে নিয়ে আসলে তাই না? দাঁড়াও টিফিনটা দ্রুত খেয়ে নি৷ নাহলে আগের বারের মতো খাবারটা ফেলে দিলে আমাকে না খেয়েই থাকতে হবে৷
এই বলে আবিদ দ্রুত টিফিন খেয়ে ফেলে। ময়ূরী বিরক্তি নিয়ে বলে,
~ উফফ! বললাম তো সরি। আর হবে না এমন। আর তোমাকে কেউ কিছু বলবে না। আমি একাই এসেছি এখানে।
– ওহ! আচ্ছা বলো কি বলবে।
~ আমার একটা হেল্প লাগবে৷
– আমার মতো ফকিন্নি কালো ছেলে তোমার আবার কি হেল্প করবে বলো।
~ এই মাসে তো পরীক্ষা। আর মাত্র ১৩/১৪ দিন আছে। প্লিজ আমাকে একটু হেল্প করো নাহলে আমার রেজাল্ট অনেক খারাপ হবে। প্লিজ। আমি প্রমিজ করছি আমি তোমার সাথে আর কখনো কোন খারাপ বিহেভ করবো। আমাকে এবার একটু হেল্প করো।
আবিদ ময়ূরীর দিকে তাকায়। মেয়েটা বেশ অনুনয় দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আবিদ আর না করতে পারে না। ও বলে,
– আচ্ছা ঠিক আছে৷ আমি তোমাকে সব পড়া বুঝিয়ে দিব৷ কিন্তু তোমার কি সমস্যা হবে না আমার সাথে কথা বলতে মিশতে? আমাকে তো সবাই অপছন্দ করে। যদি আমার সাথে রোজ রোজ তোমাকে কেউ দেখে তাহলে তো সবাই তোমাকেও খারাপ ভাববে৷
ময়ূরী একটু ভেবে বলে,
~ উমমম, কথাটা ভুল বলো নি। তাহলে এক কাজ করো রাতে জুমে আমাকে পড়িও৷
– আচ্ছা।
~ তোমার ফোনটা দেও।
– কেন? ভেঙে ফেলবে? প্লিজ ভেঙো না। আমার এত টাকা নাই যে আরেকটা কিনবো।
~ আরে বাবা তোমার নাম্বারটা নিব৷ নাহলে তোমার কাছ থেকে পড়া বুঝবো কিভাবে৷
– ওহ! আচ্ছা এই নেও।
ময়ূরী আবিদের ফোনে ওর নাম্বার টাইপ করে একটা কল করে দেয়। দুজন দুজনের নাম্বার পেয়ে যায়৷ ময়ূরী আবিদের ফোন ব্যাক করে দিয়ে বলে,
~ ঠিক আছে তাহলে রাতে কথা হবে৷
– হুম।
ময়ূরী হনহন করে চলে যায়। আবিদ বুঝতে পারে ময়ূরী ওর সাথে এতক্ষণ জোর করেই ছিল। আবিদ মুচকি একটা হাসি দিয়ে মনে মনে বলে,
– আমি কত বোকা। সব বুঝেও আবার বুঝিনা।
আবিদ জানে ময়ূরী ওর সাথে ভালো হওয়ার অভিনয় করছে। যাতে ওর পরীক্ষাটা ভালো হয়। আবিদ সব জেনে শুনেও কেন জানি ময়ূরীকে সাহায্য করতে চাচ্ছে। কারণ ময়ূরীকে ওর ভালো লেগেছে। ও হাজারটা কষ্ট দিলেও আবিদ চুপচাপ সব মেনে নেয়৷ সেদিন রাতে সত্যিই ময়ূরী আবিদের কাছে পড়া শুরু করে। আবিদ ওর সবটা দিয়ে ময়ূরীকে পড়াতে থাকে। রাত ১২/১ বেজে যায় তাও আবিদ ময়ূরীকে পড়ায় যতক্ষণ ময়ূরী চলে যেতে না যায়। এভাবে টানা ১৩ দিন আবিদ ময়ূরীকে সব পড়িয়ে শিখিয়ে দেয়। কাল থেকে টানা চারদিন ওদের পরীক্ষা। ময়ূরী এখন সব পারে। আবিদের দেওয়া নোটস, আর পড়া শিখানো ওকে অনেক হেল্প করেছে। পরদিন পরীক্ষার হলে বসতেই ময়ূরী প্রশ্ন দেখে অনেক খুশি। কারণ ওর সব কমন পড়েছে। ও সব পারে। এদিকে আবিদ রাত জেগে ময়ূরীকে পড়ানোতে ওর শরীরটা খারাপ বাজে৷ তাও অনেক কষ্টে চারটা পরীক্ষা দেয়৷ ময়ূরী জানে আবিদ ওর জন্য অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই ময়ূরী আর আবিদের ধারে কাছে আসে না। ওকে একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দেয় না৷ আবিদ এতই অসুস্থ হয়ে পড়ে যে ভার্সিটিতেও কয়েকদিন আসে না৷ ময়ূরী চাইলে একটা কল দিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারতো ও কেমন আছে। কিন্তু ও তাও করে নি৷ আবিদ সুস্থ হতে হতে রেজাল্টের দিন চলে আসে। ও যেদিন ভার্সিটিতে যায় সেদিনই রেজাল্ট দেয়। আবিদ রেজাল্ট দেখতে গিয়ে দেখে ও দ্বিতীয় হয়েছে। আর ময়ূরী প্রথম। আবিদের সামনে দিয়েই ময়ূরী ওর রেজাল্ট দেখে চলে যায়। শুধু একবার আবিদের দিকে তাকায় ময়ূরী। একটা কথাও বলে না এতদিন পর ওকে দেখে কিংবা ওর জন্য এত ভালো রেজাল্ট করলো তাও কোন কথা বলল না। আবিদ এবার একটু কষ্টই পেলো। ময়ূরীর জন্য ও প্রথম হতে পারে নি। তাও ওর কোন কষ্ট নেই। মেয়েটার মান ইজ্জত তো আর যায় নি। আবিদ চুপচাপ ক্লাসে ফিরে ওর সিটে বসতেই একটা সুন্দরী মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
~ আবিদ একটা প্রশ্ন করি?
– হুম।
~ ময়ূরী তো আমাদের সাথে অনেক আড্ডা দিত চিল করতো তেমন একটা ক্লাসে মন দিত না। তাহলে ও তোমার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করলো কিভাবে?
– ও আমার কাছে থেকে হেল্প নিয়েছিল।
~ হেল্প! কিরকম হেল্প?
– ওকে আমি এতদিন রাতে পড়াতাম। তার জন্যই ওর রেজাল্ট এত ভালো হয়েছে।
~ ওও। আর ও কি বলছে জানো? ও নাকি নিজে নিজেই সব পড়ে পরীক্ষা দিয়েছে।
– ওহ! তাহলে সেটাই সত্যি ভেবে নেও। আমার কোন সমস্যা নেই।
~ আচ্ছা আসি।
বলেই মেয়েটা দ্রুত চলে যায়৷ আবিদ খুব সহজ সরল একটা ছেলে। ওর মধ্যে কোন প্যাচগোজ কিছুই নেই৷ ও জানে না ও একটু আগে কি ভুলটাই না করেছে৷ যে মেয়েটাকে আবিদ এসব বলেছে সে আসলে ময়ূরীকে নিয়ে হিংসা করে৷ ওর সাথে চলে না৷ এই মেয়েদের আবার নিজেদের মধ্যে একটা গ্যাং আছে যারা ময়ূরীর বিরোধী দলে। ব্যাস আবিদের কাছ থেকে এসব শুনে একমুহূর্তও অপেক্ষা না করে ময়ূরীকে ছোট করতে লেগে যায় তারা। ক্লাসে সবার কাছে ছড়িয়ে দেয় আবিদের কাছে পড়ে ময়ূরী ভালো রেজাল্ট করেছে। ক্লাসের সেই গ্যাং এর সুন্দরী মেয়েরা ময়ূরীকে অনেক অপমান করে। ময়ূরী এসব সহ্য করতে না পেরে আবিদের কাছে কাঁদতে কাঁদতে চলে আসে। আবিদ তখন ওর কালো ডাইরিতে লিখালিখি করছিল। ময়ূরী এসে সবার সামনে আবিদকে দাঁড় করিয়ে ওর গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় দেয়। আর খুব রাগী ভাবে বলে,
~ তোমার সাহস হয় কিভাবে আমার নামে মিথ্যা ছড়াতে? ক্লাসের সবাই বলছে আমি নাকি শুধুমাত্র তোমার জন্য এত ভালো রেজাল্ট করেছি। আমি নাকি এমনিই খারাপ ছাত্রী। তুমি নাকি আমাকে পড়িয়েছো? এসব কি সত্য? বলো সবাইকে?
ময়ূরী কান্না করতে ছিল। আবিদ কিছুটা হলেও বুঝতে পারে ও খুব কষ্ট পাচ্ছে। আবিদ মাথা নিচু করে বলে,
– না এগুলো সব মিথ্যা। আমি বানিয়ে বলেছি। তুমি নিজ যোগ্যতায় ভালো রেজাল্ট করেছো।
~ দেখেছো সবাই? ও কত খারাপ। ও একটা মিথ্যুক।
এবার ক্লাসের সবাই আবিদকে যাতা বলতে শুরু করে। কয়েকটা ছেলে আবিদকে মারতে আসে। কয়েকটা মার দিয়ে ওকে ক্লাস থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। আর ময়ূরীর কাছে সবাই ক্ষমা চাইতে থাকে। আবিদ ওর ডাইরিটা নিয়ে ব্যাগ কাঁধে দিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে। পুরোটা রাস্তা জুড়ে ওর চোখ দিয়ে শুধু অশ্রু ঝরছিল। অবিরাম অশ্রু পড়ছিল শুধু। আবিদ সিদ্ধান্ত নেয় ও আর ওই ভার্সিটিতে যাবে না৷ কখনো না৷
চলবে…?