আঁধারের_আলো পর্ব_৭(শেষ পর্ব)

0
3003

আঁধারের_আলো
পর্ব_৭(শেষ পর্ব)
#লেখাঃInsia_Ahmed_Hayat

আলো দরজা খুলে হতভম্ব হয়ে গেলো।চোখ পেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। দরজার সামনে আর কেউ নয় তারই আপনজন। তার আদরের ছোট ভাই আকরাম। দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আলোর ভাই, ভাইয়ের বউ ও তাদের মেয়ে।

আকরাম নিজের বোনকে দেখে ঝাপটে ধরলো। দুই ভাই বোন কাদছে৷ ফাতেমাও কেদে দিয়েছে।

আকরামঃ আপারে আমাকে রেখে তুই কেন চলে এসেছিস। একবার আমাকে বলতে পারতি৷ আমাকে জানাতে পারতি। এভাবে আমাকে একা করে কেন চলে এলি। (কাদছে আকরাম।)

আশেপাশের মানুষ কান্নাকাটির আওয়াজ শুনে ভিড় জমিয়ে ফেলেছে। আলো নিজেকে স্বাভাবিক করে ওদের ঘরে ডুকালো। আলো ফাতেমার কোলের বাচ্চাটির দিকে চেয়ে আছে।

আকরাম নিজের মেয়েকে কোলে নিলো।
আকরামঃ তোর কথা কিন্তু সত্যি হলো আমাদের মেয়ে হয়েছে আপা। এই নে আমাদের আফরা। তোর বানানো জামা পড়িয়ে এনেছি। একদম পরির মতো লাগছে তাই না।

আলো নিজের কাপাকাপা হাতে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে নিলো। বাচ্চাটা আলো দিকে চেয়ে আছে হাত নাড়াচাড়া করছে। নিজের হাত আলো গালে ছোয়াচ্ছে। আলোর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। একদম নিজের মতো হয়েছে। হবেই না কেন আলো ও আকরামের চেহারাই অনেকটাই মিল।
আলো আফরাকে বুকে জড়িয়ে রাখছে। অন্যরকম শান্তি লাগছে।

আলোঃ আম্মু আমি তোমার ফুপ্পি হই বুঝেছো। তুমি যলদি বড় হয়ে যাও। স্কুলে যাবা খেলা করবা।নিজের মতো করে বাচবা।

আফরা ও মুখ দিয়ে হালকা আওয়াজ করছে হেসে দিচ্ছে। আলোকে এখন বেশ পরিবর্তন লাগছে৷ লাগবেই না কেন মানুষের খাওয়া আর ঘুম বেশ প্রয়োজন। কিন্তু শাওনদের বাড়িতে এই দুটির একটিও হতো না।

আলো ওদের শরবত বানিয়ে দিয়ে রান্না শুরু করবে। আপাতত ঘরে তেমন কিছু নেই। ভাত আর ডিম ভুনা করে দিবে ভাবছে।

ফাতেমা আলোকে উঠিয়ে নিজে বসে গেলো। আর আলোকে তার ভাইয়ের কাছে গিয়ে কথা বলতে বলল। প্রথমে মানা করলেও ফাতেমার জোড়াজুড়িতে উঠলো।

আলো আকরামে সাথে কথা বলছে। খাট কেনা হয়নি তাই মেঝেতেই ঘুমায় কিন্তু তোশক বানিয়েছে তাতে শুয়ে থাকে। একা মানুষ এতো কিছু দিয়ে কি করবে আর সব না হয় আস্তে আস্তে কিনে নিবে।

বাচ্চাটা কোনো মতে বসতে পারে। বসিয়ে দিয়েছে সে তার মতো খেলা করছে। এরপর আলো ওর ভাইকে সব বলল এখানে কিভাবে এসেছে কি কি হয়েছে। শাওন কি কি করেছে সব। শাওনকে ডিভোর্স এর পেপার তোহ পাঠিয়ে দিয়েছে কিন্তু বাকি অনেক কাজ বাকি। আকরাম বলল বাকিটা সে দেখে নিবে।সে একটা কোম্পানিতে ছোট খাটো কাজ নিয়েছে তাই করছে।

ওদের কথার মাঝে মনিরা এসে হাজির। মনিরা রোজ আলোকে দেখতে আসো। দুইজন গল্প করে। আজকে মানুষ দেখে একটু অবাক।আলো মনিরাকে ওর ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সাথে ফাতেমা ও আফরামনির সাথেও।

মনিরা ফাতেমাকে রান্না করতে মানা করলো। বলল আজকে তার বাসায় খেতে অনেক মানা করেও কাজ হলো না। সাথে ফাতেমারা মনিরার বাসায়ই থাকবে। বাচ্চা নিয়ে এমন ছোট একটা ঘরে কিভাবে থাকবে।

মনিরা চলে গেল। রান্না করতে হবে তাই।

কথার মাঝে আকরাম বলল জরুরি কথা আছে। আলো জানে এখানে আকরাম কিভাবে এসেছে তাই আর জিজ্ঞেস করেনি। আকরাম আলোকে বলল

আকরামঃ আপা আমি তোকে আজ নিতে এসেছি।

আলোঃ এটা সম্ভব নারে। আমি সব ছেড়ে এসেছি। পেছনে ফিরে তাকাতে চাই না।

আকরামঃ আপা দেখো আমি তোমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে বলছি না। আমি চাচ্ছি তুমি সামনে ফিরো। কিন্তু তা আমার বাড়িতে। তোমার সাথে আমি আছি ফাতেমা আছে। সাথে আফরা মনিও আছ। তোমার যা সিদ্ধান্ত হবে তাই।

আলোঃ আকরাম দেখো আমি এখানে নতুন করে শুরু করেছি। তার (আলোকে থামিয়ে দিয়ে আকরাম বলল)

আকরামঃ আপা একবার আমার মেয়েটাকেও দেখো । সে তার ফুফু আদর থেকে বঞ্চিত হবে। আর যদি তার দাদীও আমাদের দাদীর মতো আচরন করে। আমাদের তোহ ফুফু ছিলো না কিন্তু আফরার তো ফুফু আছে সেকি আফরাকে আগলে রাখতে পারবে না।

আকরাম আলোকে নানান ভাবে রাজি করানোর চেষ্টা করছে। অত:পর অনেক ভেবে আলো যাওয়ার জন্য রাজি হয়।

পরেরদিন সকাল সকাল আকরাম ফাতেমাকে নিয়ে যায়।ওরা পরেরদিন আসবে বলল।আলো বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে সব ঠিক ঠাক করলো। মনিরা এসে সব কিছু গুছাতে সাহায্য করছে। মনিরাও খুশি আলো তার পরিবারের কাছে ফিরে যাবে।

অত:পর আলো আজ নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মনিরাকে ধরে হালকা কান্না করেছিলো। তার দুঃক্ষের সময় মনিরাই তাকে সাহায্য করেছে যা সহজে মানুষ করে না।

আলো নিজের বাড়িতে ডুকতে কেমন যেনো লাগছে। কিছুক্ষন পর আলোর মা এসে তার মেয়েকে ঝাপটে ধরে কান্নায় ভেঙে পরে৷ আলোর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই৷ আলোর মা আলোকে নিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। কোথাও তার দাদীকে দেখা যাচ্ছে না হয়তো নিজেকে গুটিয়ে রুমে বন্ধি করে রেখেছে। আলো আকরামকে জিজ্ঞেস করলো দাদী কোথায় আকরাম বলল তার রুমে। আলো আর কিছু বলল না। আলো তার দাদীর সাথে মুখোমুখি হতে চায় না। তাই খাবার দাবার খেয়ে নিজের রুমেই আছে।

নতুন সেলায় মেশিন তার রুমে রাখা। যা যা নিজের টাকা দিয়ে কিনেছিলো সব নিজের রুমে সাজিয়েছে।আর ওই এলাকাটা ছেড়ে আসার কারন আঁধার। সে আঁধারের জীবনে এখন জড়াতে চায় না। তাই চলে এসেছে।

শাওনের কাছে খবর যায় আলো এসেছে। কিন্তু সে আসেনি।
আকরাম তার বন্ধুর মামার সাথে কথা বলে যিনি উকিল। উকিল কাগজ পত্র দেখে বাকি কাজটা করে ফেলবে। নতুন করে নোটিশ পাঠানো হয়।
শাওন ও আলো আদালতে এসেছে। শাওন আলোর সাথে ৫ মিনিট কথা বলতে চায়।

শাওন আর আলো একটা সাইডে এসে বসল।
শাওন কিছুক্ষন চুপ থেকে বলা শুরু করলো।

শাওনঃ আলো দেখো আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে। আমি তোমাকে শাস্তি দিয়েছি অনেক। কষ্ট দিয়েছি। আজ আমি অনুতপ্ত আমি চাই তুমি ফিরে এসো। আচ্ছা নতুন করে কি আমরা আবার শুরু করতে পারিনা৷ আমরা এক সাথে ছিলাম৷ এবার আমি তোমার সব কথা শুনবো। ডিভোর্স দিয়ে কি হবে বলো।

আলো কিছুক্ষন চুপ থেকে জবাব দিলো।

আলো ঃ আপনি নতুন করে কেনো শুরু করতে চান। কারন আপনি অনুতপ্ত। আচ্ছা একটা কথা বলুন তোহ আমি আপনার কাছে কেন ফিরবো। ফিরে যাওয়ার তোহ কোনো কারন পাচ্ছি না। আপনি তোহ আমায় ভালোবাসেন না। আপনি অনুতপ্ত তাই নতুন করে শুরু করতে চান। আপনি আমার জন্য কি করেছেন। না আপনি ভালোবাসেন আর না আপনি আমার কোনো দায়িত্ব পালন করেছেন। বিয়ে করে টিস্যুর মতো ব্যবহার করা ছাড়া আর কিছু কি করেছেন। আপনি যদি আমায় ভালোবাসতেন তাহলে আমি নাহয় আপনার কাছে আসতাম। আপনি আমায় ভালোবাসেন না,সম্মান করেননা, আমার দায়িত্ব নেননা। আমার খোজ নেননা। তাহলে কেনো আমি আপনার কাছেই যাবো।

আলো এবার দম নিলো।
শাওনঃ দেখো আলো একটা সম্পর্ক এভাবে হুট করেই শেষ করা যায় না। তুমি আমাদের বাড়িতে ছিলা। থাকা খাওয়া সংসার করা।সবই তোহ করেছো।

আলোঃ একটা কাজের লোককেও ফ্রিতে থাকতে দেওয়া হয় খেতে দেওয়া হয়। আর আমাকে তোহ না শান্তিতে খেতে দিয়েছেন না ঘুমাতে।

শাওনঃ আচ্ছা আমাকে কি মাফ করে দিয়ে নতুন করে শুরু করা যায় না।

আলোঃ কোন কোন কাজের জন্য আপনাকে মাফ করবো৷ আমাকে অসম্মান এর জন্য,অবহেলার জন্য,নিষ্ঠুর আচরনের জন্য, নাকি ভালো না বাসা আর দায়িত্বহীনের জন্য। আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন আমার সাথে আপনি কি কি করেছেন দাড়ান মনে করিয়ে দিচ্ছি। আপনি সেই লোক যে খাবারে লবন বেশি হওয়ায় রাত ১ টায় ৮ কেজি মাছ এনে আমাকে সারারাত নির্ঘুম রেখেছেন। আপনি সেই লোক যে আমার জামা কাপর কুচি কুচি করে কেটে ফেলেছেন। আপনি সেই লোক যে বাচ্চা না হওয়া জন্য আমাকে দোষারোপ করেছেন। আপনি সেই লোক যে আমাকে না বলে আমার ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা এনে জুয়া খেলায় শেষ করেছেন। আপনি সেই লোক যে আমার বাবার বাড়ি থেকে দেওয়া একটা আংটি বিক্রি করে জুয়াতে সব টাকা শেষ করেছেন। আপনি সেই লোক যে আমাকে নিজে থেকে একটা শ্যাম্পুও কিনে দেননি। আপনি সেই লোক যে কথায় কথায় আমাকে বাবার বাড়ির খোটা দিয়েছেন। আপনারাই সেই লোক যারা আমাকে বাচ্চা না হওয়ায় কবিরাজের কাছে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করেছেন। আপনিই সেই লোক যে কখনো আমায় জিজ্ঞেস করেনি আলো তুমি কি খেয়েছো। আপনি সেই লোক যার জন্য রাত ১ টা পর্যন্ত না খেয়ে নির্ঘুম থাকতাম৷ আপনি সেই লোক যার বাড়িতে কতো রাত কতো দিন না খেয়ে থেকেছি। আপনি সেই লোক যে কখনো আমায় কিছু কিনে দেননি বা জিজ্ঞেস করেননি যে আলো তোমার কি কিছু লাগবে। আপনিই সেই লোক যে কখনো আমায় বলেননি যে আমায় ভালোবাসেন। বিয়ে করেছেন তাই আমার সাথে থেকেছেন। আর আপনিই সেই লোক যে আমায় বলেছেন আপনি আমায় বিয়ে না করলেও কেউই এমন মেয়েকে বিয়ে করতো না। আমার বয়স বেশি, রুপ নেই,গুন নেই কিছু নেই৷ আচ্ছা কখনো কি আমার কাজে প্রশংসা করেছেন। আমার রান্না করা খাবারের কোনো প্রশংসা করেছেন৷ আমাকে কখনো কোথাও ঘুরতে নিয়ে গিয়েছেন, আমাকে কখনো কোনো উপহার দিয়েছন। আরে উপহার বাদ ঈদেও তোহ কিছু দেননি।

(আলো এবার একটু দম নিলো শাওন চুপচাপ আলোর কথা শুনছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।

আলোঃআচ্ছা বললেন না যে মাফ করে নতুন করে শুরু করতে। আপনি কি কখনো আমায় মাফ করে ছাড় দিয়েছেন। খাবারে লবন বেশি হওয়ায় কি আমায় মাফ করা যেতো না৷ আপনি তা করেছেন কি৷ আমি সেলায় মেশিন বিক্রি করে আমার ভাইয়ের টাকা ফেরত দেওয়ায় আমার জামা কাপর কেটে ফেলেছেন যেখানে আপনার দোষ ছিলো কই তখনও তোহ মাফ করেননি। রাতের বেলা চালের গুড়ো এনে পিঠা বানাতে বলেন কই তখনও তোহ মাফ করেননি। যেখানে নিজে ছোট ছোট কাজের জন্য আমায় মাফ করেননি সেখানে এতো বড় বড় অন্যায়ের মাফ আমি কেন করবো। আমি কেনো মানিয়ে নিবো আপনি কি মানিয়ে নিতে পারতেন না। কিন্তু না আপনি তেমন কিছুই করেন নি। যখন যেটা নিজে পারবেন না সেটা অন্যের কাছে আশা করবেন না। আর আপনাকে মাফ করে দিলাম কিন্তু নতুন করে ঘর বাধার সপ্ন আপনার সাথে দেখার কোনো ইচ্ছা নেই।

আলো উঠে চলে যাচ্ছিলো৷ যাওয়ার আগে শেষ একটা কথা বলে গিয়েছে।

আলোঃ আর শুরুতেই তোহ আপনি বুঝিয়ে দিলেন আমি আপনার সাথে থাকলে সুখী হবো কি না। আপনি এসেই আমায় নতুন করে ঘর বাধার কথা বলছেন কই একবারও তোহ জিজ্ঞেস করলেন না আমি কেমন আছি। অনুতপ্ত হয়েছেন কিন্তু বদলাননি। যাক শেষ কথা বলি আপনি বলেছিলেন টাকা না নিয়ে এলে মুখ দেখাতে না৷ আমি কিন্তু আপনার কথাটা রেখেছি। আর একটা কথা থুথু ফেলে দিলে সে থুথু আর মুখে নেওয়া যায় না।

আলো সোজা হেটে যাচ্ছে আত্নসম্মান থাকতে হয়। সব সময় মানিয়ে নেওয়া যায় না। মানুষ এর সাথে সংসার করা যায় কিন্তু এইসব জানোয়ারদের সাথে সংসার না করাই ভালো৷ সব সময় সবাইকে নতুন করে সুযোগ দেওয়া যায় না। তাদের যদি সুযোগ দেই তাহলে নিজের কাছেই হেরে যাবো।নিজের কাছে নিজে নিচু হবো।
অত:পর আলো ও শাওনের তালাক হয়ে গেলো । আলো পিছু ফিরে আর তাকাতে চায় না।

এভাবে কিছুদিন কেটে গেল। আলো একদিন ঘরে বসে সেলায় করছে। এমন সময় আকরাম আসলো এসে আলোকে ঘর থেকে বাহিরে নিয়ে গেলো। বাহিরে গিয়ে আলো দেখলো কয়েকজন মানুষ বসে আছে। তিনজন মহিলা আর একজন পুরুষ। আলো ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে গেলো। বুঝার চেষ্টা করছে কারা। লোকটাকে দেখে একটু অবাক হলো ঔষধ এর দোকানি আর পিঠা নিতে এই লোকটাকে দেখেছে অনেকবার৷ তার পাশে একজন বয়স্ক মহিলাকে দেখতে পাচ্ছে তার চেহারাটা চেনা চেনা লাগছে। অনেকক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে ভাবছে কারা এরা। লোকটা আলোর দিকে তাকিয়ে আছে।

বয়স্ক মহিলাটি আলোকে চুপ দেখে বলল
” কেমন আছো আলোমনি”

আলোমনি নামটা শুনে অবাক হয়ে গেলো। মূহুর্তেই মনে পড়ে গেলো।এই নাম তোহ দুইজন ডাকতো এক আলোর বাবার আরেকজন আঁধারের মা।আদর করে আলোমনি ডাকতো। তাহলে কি ইনি

আলো লোকটার দিকে তাকালো চোখ ছলছল করছে। লোকটারও লোক ছলছল করছে। আলোর কিছু বলার আগেই গলা বসে যাচ্ছে। একটা ঢোক গিলে বলল
আলোঃ আ..আঁধার

আঁধারঃ আঁধারের_আলো।

আলো নিজের দাতে দাত চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে গিয়ে বসলো। এতে কেউ অবাক হয়নি আকরাম, আলোর মা আর আধারের মা বলল আধারকে আলোর কাছে যেতে।
আলো বিছানায় বসে কাদছে আধার দরজাটা হালকা চাপিয়ে মেঝেতে এসে বসলো। আলোর বিছানায় ঘুমাচ্ছে আফরা।

আলোকে কাদতে দেখে সে নিজেও কাদছে। আলোর দিকে নিজের রুমাল এগিয়ে দিয়ে বলল
আঁধারঃ কেমন আছো তুমি?

আলো অনেক কষ্টে নিজে সামলাচ্ছে। আঁধারের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বাথরুমে চলে গেলো আধার উঠে দাড়িয়ে রুম টা দেখছে। আলো মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখছে৷ তিন মিনিট নিজের দিকে চেয়ে বেড়িয়ে এলো। গিয়ে খাটে বসে আঁধারকে বসতে বলল।

আলোঃ অনেক বছর পর আমাদের দেখা। তুমি কেমন আছো আঁধার। বিয়ে করেছো কি বাচ্চা আছে, ছেলে হয়েছে নাকি মেয়ে?

আলোর এইসব প্রশ্নের উত্তর জানে তারপরও প্রশ্ন করছে
আধার চুপ করে থেকে এরপর উত্তর দিলো।
আধারঃ তোমার কথা রেখেছি আলো। তোমারই অপেক্ষা করছি। তোমার বলা শেষ কথা গুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। তুমি কিন্তু তোমার বলা কথা গুলো রাখোনি।

আলোঃ কোন কথা বলছো। আমার তোহ মনে পড়ছে না।

আঁধার একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
আধারঃ দেখো আলো আমি তোমার জন্য শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত অপেক্ষা করবো আমি তোমার সব সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করি। কখনো তোমায় জোর করবো না। আচ্ছা আসল কথা বলি আমার পরিবার আর তোমার পরিবার আমাদের বিয়ে কথা বলতে এসেছে। আমি জানি তুমি ভালো নেই। আমি শুধু তোমার মতামত চাই, তোমার চাওয়া, তোমার ইচ্ছার কথা শুনতে চাচ্ছি।

আলো কিছুক্ষন চুপ থেকে বলা শুরু করলো কথা গুলো বলার মতো কাউকে পাচ্ছে না আঁধারকে নিজের আপন অনেক কাছের মনে হয়। যার কাছে সব কিছু বলা যায়।

আলোঃ আঁধার আমি চাইলেই তোমাকে বিয়ে করে নিতে পারি। এতে কি হবে সবাই আমাকে নানান কথাও বলবে। নানান অপবাদ দিবে। তোমার বাড়ির লোকজনও বলতে পারে অনেক কিছু। আধার আমি ডিভোর্সি। আমার বাচ্চা হয়নি। সব সময় মেয়েদের দোষ দেওয়া হয়। মানুষ ভাবে বাচ্চা না হওয়ায় আমার তালাক হয়েছে। এমনও হতে পারে তোমাকে বিয়ে করে তোমার জীবনটা নষ্ট হবে। আর সব চেয়ে বড় কথা আমি এমন কিছু করতে চাই যাতে কেউ আমায় অসম্মান না করে। কেউ বলতে না পারে যে আমি নিজের বোঝাটা তোমার ঘাড়ে ফেলেছি। তোমাকে ফাসিয়েছি। আমি তোমার যোগ্য নই আধার। আমার কাছে কিছুই নেই তোমার জন্য। আমার কাছে তোহ নিজের সম্মান টুকু নেই। আমি তোমাকে বিয়ে করে বোঝা হয়ে থাকতে চাচ্ছি না। কিছু করতে চাই। পড়াশোনা তোহ করতে পারিনি কিই বা করবো।

আঁধার কিছুক্ষন বসে চলে যায়। যাওয়ার আগে বলে।
আধারঃ আমি তোমায় সসম্মানে নিয়ে যাবো। কেউ বলতে পারবে না আমি কোনো অযোগ্য মেয়ে বিয়ে করেছি। তোমার কি যোগ্যতা তা সবার সামনে খুব যলদি আসবে। আর আমি তোমার জন্য সব সময়ই অপেক্ষা করবো।

এই বলে ওইদিন আধাররা চলে যায়। কেউ আলোকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। আলো জানালা দিয়ে আধারের যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে। ইচ্ছে করছে আটকাতে কিন্ত সে তা চায় না।

দুইদিন পর আকরাম আলোর কাছে এসে বলল। একটা দোকান দিবে তাতে যেনো আলো তাকে সাহায্য করে।

আলোঃ দোকান দেওয়ার জন্য টাকা প্রয়োজন তা এতো টাকা কোথায় পাবে।

আকরামঃ এতো চিন্তা করো না যা হবে ভালোই হবে।

এইদিকে আকরাম ও ফাতেমা মিলে তাদের বাড়ির সামনেই দোকান বসাচ্ছে। ইটের দেয়াল আর উপরে টিন।
কাজ শুরু করে দিয়েছে। ফাতেমা ও ওর শাশুড়ী মিলে এদিকের কাজ দেখছে। আকরাম আলোকে নিয়ে একটা রেস্তোরাঁতে গেলো। সেখানে আঁধারের সাথে বসা একটি মেয়েকে দেখলো। আলো সেখানে যাওয়ায়
আধার মেয়েটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।

আধারঃ আলো ইনি জিনিয়া আমার বন্ধু স্ত্রী। ইনি একটি এনজিওতে কাজ করে। ইনি অসহায় নারীদের নিয়ে কাজ করছে। তাদের হাতের কাজ সেলাই কাজের প্রশিক্ষন দিয়ে থাকে৷

আলোঃ ওহ আচ্ছা।

জিনিয়াঃ শুনলাম আপনি নাকি হাতের কাজ ও সেলাই ভালো পারেন।

আলোঃ জিইই আমি আমার মায়ের কাছ থেকে শিখেছি। মোটামুটি অনেক কাজই পারি।

জিনিয়াঃ (একটা কাগজ এগিয়ে দিলো।)
আলো আমাদের কাজের জন্য একজনকে দরকার যিনি ভালো করে সেলাই কাজ, হাতের কাজের প্রশিক্ষন দিতে পারবে। আপনি কি রাজি আছেন।আমি আপনাকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই।

আলো আঁধারের দিকে তাকালো। আধার কি সত্যি তার বলা কথা গুলো পূরণ করতে যাচ্ছে। আকরামের ডাকে হুস এলো।

আকরামঃ আপা সাইন করে দে। এমন সুযোগ সব সময় আসে না।

এরপর আলো রাজি হয়ে যায়। আরো কিছুক্ষন কথা বলে তারা চলে যায়।

আলো বাসায় এসে আকরামকে নিজের ঘরে ডাকে। আকরাম আসে।
আলোঃ আকরাম এতো টাকা তুই কোথায় পেয়েছিস যার জন্য দোকান দিচ্ছিস।

আকরামঃ দিয়েছে একজন।

আলোঃআকরাম কে দিয়েছে।

আকরামঃ আপা থাক না এতো কিছু দিয়ে কি করবি।

আলোঃ আকরাম যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দে। তুই কি আধারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিস।(হালকা রাগী ভাবে)

আকরামঃ টাকা গুলো দাদী দিয়েছে।

আলো অবাক হলো। দাদী টাকা দিয়েছে মানে।

আকরামঃ দোকানটা তোর জন্য দিচ্ছি এখানে তুই থ্রিপিস এর দোকান দিতে পারবি সাথে এলাকার কিছু অসহায় নারীদের সেলায় শিখিয়ে তাদের দিয়ে নতুন উদ্যোগ নিতে পারবি। তোর জন্য দাদী টাকা দিয়েছে।

আলো ঃদাদী আমার জন্য টাকা দিয়েছে। আর এই আইডিয়া তুই কোথায় পেলি।

আকরামঃ আইডিয়া আধার ভাইয়ের।
আর দাদী টাকা কোথায় পেয়েছে তা দাদীকে গিয়ে জিগ্যেস কর আমার কাজ আছে আমি গেলাম।

আকরাম চলে গেল। আলো আস্তে আস্তে তার দাদীর ঘরে পা বাড়াচ্ছে। এতোদিনে তার দাদী তার সামনে আসেনি। আলোও তার দাদীর কাছে যায়নি।

দাদীর ঘরে গিয়ে ডুকে পড়লো৷ জানালার পাশে বসে আছে।আলো আস্তে আস্তে দাদী কাছে গিয়ে দাড়ালো। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলো আলো দাঁড়িয়ে আছে। দাদী আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালো।

আলোঃ দাদী কেমন আছেন।

আলোর মুখে দাদী শুনে কান্না করে আলোকে জড়িয়ে ধরলো। আলোও কান্না করে দিলো
আলোর দাদীঃ মাগো আমাকে মাফ করে দেও । আমার ভুল হয়ে গেছে।

আলো কিছু বলছে না কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। দাদীকে শান্ত করলো। বয়স হয়েছে অনেক। আলো দাদীকে শান্ত ভাবে টাকার কথা জিজ্ঞেস করলে বলে তার ভাইয়ের ছেলেরা দিয়েছে। বাবার বাড়ি থেকে কোনো কিছুই নেয়নি কিন্তু জায়গায় তার নাম আছে সেটা ভাইয়ের ছেলেদের দিয়ে টাকা নিয়ে নিয়েছে। তার বাবার বাড়ির অনেক জমি জমা আছে। সেখানে তার নামও আছে।এতো বছরে আলোর জন্য কিছু করেনি বা করতে পারেনি। আকরাম ও ফাতেমার কথা শুনে আলোর দাদী টাকা দেয়।

আলো কিছুক্ষন কথা বলে জানতে পারে আকরাম ওর মেয়েকে দাদী ধারে কাছেও আনেনি।
এরপর আলো চলে যায়।

আলো দোকান চালু করে দিয়েছে। জিনিয়ার সাথেও কাজ শুরু করে দিয়েছে।
প্রতিদিন জিনিয়ার সাথে গিয়ে তিন ঘন্টা করে বিভিন্ন নারীদের সেলায় কাজ, হাতের কাজ শেখায়।নিজেদের দোকান চালু করেছে। এক পাশে থ্রিপিস বিক্রি করবে। আরেক পাশে সেলাই কাজ ও হাতের কাজ শুরু করবে।। এলাকার কয়েকজন নারীদের খুজে বের করেছে। তাদের কাজ শিখিয়ে শুরু করে দিয়েছে। তাদের কাজের জন্য প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে বেতন দেয় যাতে করে তারা চলতে পারে।আলো ওইসব নারীদের নিয়ে কাজ করে যেখানে কেউ কেউ ডিভোর্সি, বিধবা, কেউ স্বামীকে সাহায্য করার জন্য। কারো বাবা নেই সংসারের হাল ধরার জন্য।
আলোকে একটা ল্যাপটপ কিনে দিয়েছে আকরাম। ১৫ দিন ল্যাপটপ চালানো শিখে নেয় আলো। সব কিছু তারাতারি করে কাজ শুরু করে। সেখানে নতুন ফেসবুক একাউন্ট খুলে একটা পেজ খুলেছে। পেজে নকশি পিঠা,কেক নিয়ে কাজ করছে। অনলাইনে কেক, নকশি পিঠা বিক্রি করে ডেলিভারি দেওয়ার জন্য লোক রেখেছে।
আধার আলোকে বিভিন্ন গ্রুপে এড করিয়ে দেয়। আরো অনেক কিছু শিখিয়ে দেয় কিভাবে কাজ করবে। বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দেওয়ার জন্য তা নিজে লিখে সাজিয়ে দেয়। এভাবে আস্তে আস্তে আলোর উন্নতি হচ্ছে আলো নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের পরিচয় বানাচ্ছে। মোটামুটি অনেকটা পরিচিত পেয়ে গেছে আলো। আঁধারের আরেকটা কথায় সে হাতের কাজের, নিজের বানানো থ্রিপিস,ফ্রোক, আরও অনেক কিছু অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করছে। সব কাজে আধার দূরে থেকেও সাহায্য করেছে। আলো এখন অনেক জায়গায় যায়। নিজের হাতে বানানো অনেক কিছুই এখন নিজের এলাকার পাশাপাশি দেশের আনাচে কানাচে পৌঁছে দিচ্ছে। নিজের এলাকা ছাড়াও আশেপাশের এলাকার মানুষজনও আলোকে চিনে। আলোদের দোকন থেকে থ্রিপিস গুলো কিনে। বানানো থ্রিপিস দামও কম সাথে বিভিন্ন কাজ করাও আছে। আলোর দোকান থেকে বানানো থ্রিপিস গুলো বিভিন্ন শপিং মলের দোকানেও দিয়ে থাকে।

আলোকে এখন সবাই চিনে। এভাবে কেটে গেল দেড় বছর। আলোর দিনকাল ভালোই যাচ্ছে।

একদিন আলোর দাদী তার ঘরে আসে। তখন সে অনলাইনে কাজ করছিলো।

আলোঃকিছু বলবেন আপনি।

দাদীঃ আমার মতে আঁধারকে বিয়ে কইরা ফালানো উচিত তোমার।

দাদীর কথা অবাক হয়ে চেয়ে আছে।
দাদীঃ হো আজ তুমি যে নাম কামাইছ যে সম্মান পাইছো সব আধারের কারনে হইছে। আধার কতো জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করছে। আকরামকে বলে দোকান দেওয়াইছে। এই টিভিটার(ল্যাপটপ) মধ্যে কাম করার কথা বলছে। তোমার জন্য পোলাটায় অনেক কষ্ট করছে। ওরে আমি কইছিলাম কিছু করলে তোমারে ওর হাতে তুইল্লা দিমু ওয় সেই কথা রাইখা বিদেশ গেছে গা। কিন্তু আমি দেইনি আমার কথা রাখি নাই। আজ সুযোগ আছে কথা রাখনের।আমি চাই তুমি ওর সাথে নতুন কইরা সব শুরু করো। ওয় তোমার জন্য ভালো। ওর মতো পোলা তুমি পাইবা না। ওয় তোমারে যতডা বুঝে তা কেউ বুঝবো না।

দাদী কথা গুলো বলে চলে গেলো। ঠিকই তোহ আঁধার কতো কিছু করলো। আধার যে তার বলা কথা গুলো রেখেছে আর রাখে তাহলে আমি কেন আমার বলা কথা গুলো থেকে পালিয়ে যাচ্ছি।

আলো আকরাম ও ফাতেমাকে ঢেকে ওদের সাথে কথা বলে। আকরাম বলে আঁধার অনেক কাজ করেছে বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে আলোর কাজের প্রচার করেছে। তার বন্ধু বান্ধুবদের জানিয়ে দিয়েছে।এভাবে অনেক অনেক কষ্ট করেছে। জিনিয়াকে অনেক রিকুয়েষ্ট করে আলোকে কাজে নিতে বলেছে। কাজের জন্য জায়গা না থাকা সত্বেও আলোকে নিয়েছে। আধার বলেছে আলো তাদের নিরাশ করবে না। আলো কাজের সফলতার পেছনে আঁধারের অবদান অনেক।

আলো অনেক চিন্তা ভাবনা করে আঁধারকে ডাকে। আকরামকে সাথে নিয়ে একটা রেস্তোরাঁতে যায়। আকরাম একটু দূরে থেকে দুইজনকে কথা বলার সুযোগ দেয়।

৫ মিনিট দুজন নিরবতা পালন করে আলো বলে

আলোঃ আমি আঁধারের_আলো হয়ে থাকতে চাই। আমাকে কি নিজের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নতুন সম্পর্কের নাম দিতে পারবে কি?

আধার মুচকি হাসলো। সে এই কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছিলো। অবশেষে পেয়ে গেলো সে তার আঁধারের_আলোকে।

অত:পর আধার আলোর বিয়েটা হয়ে গেলো সামান্য ঘরয়া ভাবে বিয়েটা হলেও। তাদের বিয়েতে অনেক মানুষ আসে। মনিরাও আসে যে আলোকে সাহায্য করেছিলো এমনকি গার্লস গ্রুপে মনিরা আঁধার ও আলোর কথা গুলো শেয়ার করে। আলো অনেক মেয়ের অনুপ্রেরণা।

বাসর ঘরে বসে আছে আলো। অবশেষে সে আঁধারের_আলো হয়েই গেলো। আধার তাকে সসম্মানের সাথে তার যোগ্যতা সবাইকে দেখিয়ে দিয়েই আপন করে নিয়েছে। সে প্রমান করে দিয়েছে আলো কখনো অযোগ্য ছিলো না।

আলো আঁধারের রুমটালে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। এরপর সে রুমে আসে দুজন নামাজ আদায় করে এক সাথে বসে গল্প করতেতে। এত বছরে কত কথা জমে আছে। আলো পেপারে মুড়ানো একটি প্যাকেট আঁধারের দিকে এগিয়ে দেয়। আধার হালকা হেসে তা নিয়ে নেয়।

পেপার খুলে দেখে বিস্কুটের প্যাকেট তাও নতুন। প্যাকেটটা ছিড়ে দুজনে বিস্কুট খাচ্ছে। আঁধার আলোকে একটা নাকফুল উপহার দেয়।

আঁধারঃ তোহ নিজের দেওয়া বিস্কুট এর প্যাকেট এক দেখায় চিনে ফেলেছো।আর এটা কি আগের বিস্কুট আমাকে খাওয়ানো হচ্ছে নাকি নতুন।

আলোঃ ভ্রু কুচকে বলল কালকে রাতে কিনে মুড়িয়ে রেখেছি। আর আমার দেওয়া বিস্কুট আমার স্টাইলে ফেরত দিলে চিনবো না কেন আর ওই বিস্কুট আমি একমাত্র তোমায় দিয়েছি আর কাউকে না।তোমাকে দেওয়ার পর না কখনো ওই বিস্কুট কিনেছে। আর ওই সময়ের বিস্কুট আমার স্টাইলে তুমি ছাড়া কে ফেরত দিবে তার উপর আবার চিরকুটও লিখে দিয়েছো। আর একটা কথা এতোদি সামনে থেকেও পরিচয় দেওনি কেন।
বলেই একটা কিল বসিয়ে দিলো আধারের পিঠে।
লেখনীতেঃ ইনসিয়া আহমেদ হায়াত

আধার হেসে দিতে বলল
আধারঃ এই আমার পিঠে কিল দেওয়ার অভ্যাস গেলো না তোমার।

আলোঃ সম্মান দিয়ে কথা বলো আমি তোমার দুই মাসের বড়।

আঁধার হেসে দিলো কতো বছর পর এই কথাটা তার প্রিয়তমার মুখ থেকে শুনছে।
আধারঃ তা তোহ দিতেই হবে৷ আমার বাচ্চার মা আর আঁধারের_আলো বলে কথা।

বাচ্চার কথা শুনে আলোর মুখটা মলিন হয়ে গেলো। আধার বুঝতে পারলো।

তাই কথা গুড়িয়ে বলল
আঁধারঃ তোমাদের এলাকার ঐ মোটু টা কেমন আছে।

আলোঃ কোন মোটু ওই মোটু যার হাতে ছোট বেলায় পিটুনি খেয়েছো আর আমাকে গিয়ে বাচাতে হয়েছে৷

আঁধারঃ এটাও মনে আছে।

আলোঃ থাকবে না কেন। আমার সব মনে থাকে। আর মোটু বিয়ে করে বাচ্চা কাচ্চা স্কুলে পড়ে।

এভাবে কত শত কথা বলছে।কয়দিন পর আলো ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকাপ করিয়ে আসে৷ ডাক্তার সব নরমাল বলে৷

আলোর ভাসুর বিদেশ থেকে আসে। এইবাড়ির সবাই ভালো আলো শ্বশুর নেই। ভাসুর ও জায়ের একটা মেয়ে আছে তারা দুজন আমাকে বোনের মতো দেখে অনেক ভালোবাসে। আগের শাশুড়ীর চেয়ে এই শাশুড়ী অনেক ভালো একদম নিজের মেয়ের আদর করে। ননাসও ভালো। আলোর বাড়ির দোকান ফাতেমা দেখাশোনা করে। আধার বলেছে যা টাকা আসবে সব আফরার। ওই দোকান থেকে ভালো ইনকাম হয়। আকরামের চাকরিও ভালো চলছে৷ ঘরে সাথে হওয়ায় আকরামের মাও দোকানে থাকে মাঝে মাঝে দাদীও থাকে। যেহেতু আলো তার মায়ের কাছ থেকে কাজ শিখেছে তাই ঝামেলা হলে তার মা দেখিয়ে দেয়। সাথে ইউটিউব তোহ আছেই।নতুন কিছু জানার ও শিখার জন্য ইউটিউব ব্যবহার করে থাকে। আকরামের শাশুড়ী আলোর কাছে মাফ চেয়েছে। আলো মাফ করে দিয়েছে। সাথী ও সূচি আলোর কাজের জন্য খুশি। তারাও দেখা করে গিয়েছে। মাঝে মাঝে কিছু ধাক্কা থেকে উপরে উঠা যায় যদি উপরে উঠার জন্য কেউ সঙ্গ দেয়। আলো শশুর বাড়ির এখানে দোকান দিয়েছে কয়েকজন মেয়েদের নিয়ে কাজ করছে। সাথে তার কেক ও পিঠার ব্যবসাও চলছে।
আঁধারের ঔষধ এর দোকান ভালোই চলছে। দোকান থেকে ফিরতে দেরি হলে আলোকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। এখন আর রাত ১,২ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগে না। এখন আলো আঁধারের জন্য অপেক্ষা করে। কারন আঁধার যত দেরি করেই আসুক। এসেই আলোকে জিজ্ঞেস করবে খেয়েছে কিনা। যখন শোনে খায়নি তখন বকাঝকাও করে। আলো শাওনকে ধন্যবাদ দিয়েছে। সে দুঃক্ষগুলো না দিলে এতো সুখ পেতো না। আর সুখ কি জিনিস তাও বুঝতে পারতো না। আজ আলো আর আঁধার বাকি সব সুখি স্বামী স্ত্রীদের মতো জীবন যাপন করছে।

১ বছর পর আলো প্রেগন্যান্ট। অনেক কষ্টে গর্ভবতী হয়েছে অবশেষে। অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়েছিলো কিন্তু আলোর শ্বশুরবাড়ির লোকজন অনেক সাপোর্ট দিয়েছে।

একদিন আলো গোসল করে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আধার কল দিয়েছিলো। আর একটা মেসেজ।
” হোয়াটসঅ্যাপ এ যাও একটা জিনিস দেখাবো”

আলো হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে দেখল আধার তরমুজের ছবি পাঠিয়েছে। তরমুজ আলোর পছন্দ ছিলো যেদিন বাবা মারা যায় ওইদিন পছন্দের জিনিস অপছন্দে পরিনত হয়। কারন ওইদিন আলো ওর বাবাকে তরমুজ কিনে আনার জন্য বায়না ধরে ছিলো আর তরমুজ তোহ আসেনি এসেছে তার বাবার লাশ। রোড এক্সিডেন্ট এ মারা গিয়েছিলো ওর বাবার সবাই আলোকে তখন দোষারোপ করেছিলো। আজ আলোর ভয় করছে বাবার মতো যদি আঁধারের কিছু হয়ে যায়। দেশে সড়ক দূর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে।

আলো তারাতারি কল ব্যাক করে। দুইবার রিং হওয়ার পর একজন রিসিভ করে।

আলোঃ হ্যালো আধার কোথায় তুমি।

অপর পাশ থেকে কেউ বলল
” জিই আসলে এই ফোনের মালিক বাস চাপায় নিহত হয়েছে তার পকেটে দুইটা ফোন এইটাতে আপনার কল আসায় জানালাম। আপনি তার পরিবারকে জানিয়ে দিয়েন আর তারাতারি এসে পড়েন।আর ”

ফোনটা কেটে গেলো। আলো যা ভেবছে তাই সত্যি হলো। ভয়ে সারা শরির কাপছে। বাসায় কাজ করা কাজের মহিলা আলোর রুমে এসে খাবার নিয়ে। আলো ঢলে পড়ে

কাজের মহিলা রতনা খাবার রেখে আলোকে ধরে আর চিৎকার করে সবাইকে ডাকছে

রতনাঃ খালাম্মা গো যলদি আয়েন পোয়াতি বউ ফিট খাইছে। খালাম্মা ওই খালাম্মা

রতনার ডাকে সবাই এসে আলোকে নিচে দেখে ওকে ধরে বিছানায় উঠালো। হাত পা ঢলছ। চোখে পানি দিচ্ছে।

১৫ মিনিট পর আলোর জ্ঞান ফিরে। আলো চোখ মেলে দেখে সে বিছানায় শুয়ে আছে আর তার পাশে আধার বসে আছে। আঁধারকে পাশে দেখে উঠে দুটি কিল বসিয়ে দেয়।

আলোঃ তোর ফোন কোথায়। আর তুই কাকে দিয়ে ফোন করিয়ে বলেছিস তোর এক্সিডেন্ট হয়েছে।
।বলেই কিল ঘুশি দিতে লাগলো।

আধার আলোকে থামিয়ে বলল
আঁধারঃ আরে আমি তোমার জন্য তরমুজ কিনে নিয়ে আসছি। বাসায় এসে দেখি রতনা আপা চিল্লাচ্ছে। এসে দেখি তুমি ফিট খেয়ে বসে আছো। পড়ে শুনলাম ফোন হাতে নিয়ে ফিট খেয়েছো। তোমার ফোন নিয়ে দেখি আমার নাম্বারে কথা বলেছো রেকর্ড শুনে বুঝলাম পকেট মার এক্সিডেন্ট হয়েছে আমি কি জানি নাকি যে আমার ফোন কখন পকেট মারলো।
এসে দেখি ফোন নাই।

আলো আঁধারকে জড়িয়ে ধরলো। আলো অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। আঁধারকে হারানোর ভয়টা ঘিরে ধরেছিলো তাকে। আঁধার অনেক কষ্টে আলোকে শান্ত করে। পুরো প্রেগ্ন্যাসির সময় সাথে ছিলো।

অবশেষে আধার ও আলোর দুইটি জমজ সন্তান হয় এক মেয়ে এক ছেলে। আধার ও আলো ভালোভাবেই জীবনযাপন করছে।

শাওন নাকি বিদেশ চলে গিয়েছে। রুপার বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু তার বর তাকে অনেক অত্যাচার করে। মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া কিছু করার নেই। রুপা কোনোদিন মা হতে পারবে না। পর পর দুটো বাচ্চা নষ্ট হয়েছে। এরপর আর বাচ্চা নিতে পারেনি। রুপার বর আরেকটা বিয়ে করে তার সেই স্ত্রীর ঘরে সন্তান হয়ে গিয়েছে। সে এখন কোনো রকম দিন পার করছে। রুপা আজ টের পাচ্ছে নিসন্তান থাকা কষ্ট আর অন্যকে কাজের অর্ডার দিলে কেমন লাগে। যারা অন্যের সংসার নষ্ট করতে চায় তাদের কোনো না কোন এক সময় তা নিজের কাছেই ফিরে আসে। আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না।

আলোর কাজ ভালোই চলছে। সম্মানের সাথে আজ সে সংসার করছে। যেই বাচ্চার জন্য এক সময় কথা শুনতে হতো আজ সে দুই সন্তানের মা। যেখানে স্বামী ভালোবাসা পায় নি সেখানে আজ আলো আঁধারের কাছ থেকে ভালোবাসার অভাব নেই। ভালোবাসা, সম্মান, অধিকার কোনো কিছুর অভাব নেই আলো কাছে। যেখানে বাবার বাড়ির অবস্থা ভালো না বলে কথা শুনতে হতো আজ সেই বাবার বাড়ির অবস্থা আরো ভালো। সব মিলে শেষটা ভালোই হয়েছে। অবশেষে একটাই কথা আঁধারের_আলো হয়ে বাচতে চাই শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।

. . . সমাপ্ত

( গল্পটা টেনে বড় করতে চাইনি। আমি যতটুকু ভেবে রেখেছি ততটুকু লিখেছি। আমি ওত ব্যাখ্যা দিতে পারিনি তাই অল্প কথাই শেষ করি। আমার লেখার ভুল ত্রুটির ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। যারা আমার ভুল গুলো ধরিয়ে দিয়েছেন আর আমার এই গল্পে পাশে ছিলেন তাদের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আর গল্পটা ওইসব আলোর জন্য যারা অবহেলিত। গল্পে আলোর শেষ ভালো হয়েছে কিন্তু বাস্তবে এমন অনেক আলো আছে যাদে শেষ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here