আঁধারে_মাতৃ_দুহিতা
#পর্ব_২_ও_৩
লেখা_আল_আমিন
এলিনা ঘুমিয়ে আছে।
ওর মা মাথার পাশে বসে ওর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।
এমন সময় স্টিফেন রুমে ঢুকলো।
চুপচাপ গিয়ে এলিনার পাশে বসলো।
ন্যান্সি বললো
-কোথায় গিয়েছিলে?
-সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞাসা করতে
-কি বললো সে?
-কাউকেই নাকি ভেতরে ঢুকতে বা বের হতে দেখেনি
-সিসিটিভি ফুটেজটা দেখলে হয়তো জানা যাবে
-সেটাও দেখেছি
-কিছু জানা গেলো সেটা থেকে?
-না,কাউকেই দেখা যায়নি বাড়িতে ঢুকতে বা বের হতে
-তাহলে কে ঢুকেছিলো এলিনার ঘরে?
আর আমার এইটুকুন বাচ্চা মেয়েটার সাথে এমন নোংরা বিহেভ করেছে?
-সেটাইতো আমিও বুঝতে পারছি না।
-বাড়িতেতো আমরা ৩জন ছাড়া আর কেউ নেই যাকে সন্দেহ করা যায়।
স্টিফেন আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকলো।কিছুক্ষণ পরেই এলিনার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
ন্যান্সি এখনো ওর মাথার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
এলিনাকে চোখ খুলতে দেখেই স্টিফেন বললো
-আজকে আমার আম্মুটাকে নিয়ে বেড়াতে যাবো কতোদিন হলো বেড়াতে যাওয়া হয় না
কিন্তুু এলিনার কোনো ভাবান্তর হলো না ও একদম চুপচাপ সেভাবেই শুয়ে আছে।
ন্যান্সি বললো
-আজকে আর তোমাকে অফিস যেতে হবে না এলিনাকে নিয়ে ঘুরে এসো তাহলেই দেখবে ওর মন ভালো হয়ে যাবে।
আর যে ওর সাথে এমন করেছে তাকে ধরে খুব মার দিবো।
এইকথাটা শুনেই এলিনা ওর মায়ের আরো কাছে মাথা নিয়ে এলো।
ন্যান্সি বললো
-কোনো ভয় নেই আমরা আছি তো।
আচ্ছা চল তোকে রেডি করে দেই তারপরে বেড়াতে যাবি আব্বুর সাথে।
ন্যান্সি এলিনাকে নিয়ে চলে গেলো রেডি করতে।
আর স্টিফেন বসে রইলো।অল্পক্ষণের ভেতরেই এলিনাকে তৈরি করে নিয়ে এলো।
তারপরে স্টিফেন ওকে নিয়ে বাহিরে চলে গেলো বেড়াতে।
সারাদিন এলিনাকে নিয়ে বাহিরে ঘুরলো।
মনে হলো ওর মনটা যেনো এখন একটু ভালো হয়েছে।সন্ধ্যোয় বাড়ি ফিরে এলো স্টিফেন এলিনাকে নিয়ে।
ডিনার সেরে ওকে ওর রুমে ঘুম পারিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে ন্যান্সি চলে এলো।
আজ দরজাটা হালকা করে ভিরিয়ে দিয়েছে শুধু।
রাত বেশ গভীর হয়েছে হঠাৎ এলিনার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
আবারও ওর সেই অদ্ভুদ অনুভূতিটা হতে লাগলো কেউ একজন ওর শরীর স্পর্শ করছে।
ওর শরীরে থাকা কাঁথাটাকে টেনে গা থেকে নামিয়ে দিলো।
আস্তে আস্তে সেটা ওর স্পর্শকারত জায়গাগুলোতে যেতে লাগলো।
এলিনার সত্যই খুব খারাপ লাগছে।
ও নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করছে কিন্তুু পারছে না কিছুতেই।
ওর হাত-পা যেনো অসাড় হয়ে গিয়েছে।
ও চিৎকার করে ডাকতে চাচ্ছে ওর আম্মুকে বলতে চাচ্ছে এইতো সেই বাজে লোকটা
কিন্তুু ওর মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হচ্ছে না।
ধিরে ধিরে এলিনার
শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হতে শুরু করলো।
ওর নিঃশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে।
এদিকে ওর শরীরে সেই স্পর্শ ত্রমেই বেড়ে চলেছে।
এলিনার খুব কাঁন্না আসছে কিন্তুু ও কাঁদতেও পারছে না।
এলিনার ধিরে ধিরে দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।
#৩য়_পর্ব
এলিনার শরীরে স্পর্শটা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।ও চিৎকার করে বলছে-আম্মু আম্মু কোথায় তুমি আমাকে বাঁচাও এই খারাপ লোকটার কাছ থেকে
কিন্তুু ওর সেই চিৎকারের শব্দ একদমই মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।
খুবই কষ্টে ছটফট করছে এলিনা।
ধিরে ধিরে ওর শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হতে শুরু করলো।নিঃশ্বাস যেনো ওর আটকে আসতে চাইছে।
ত্রুমেই যেনো ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে।
এমন সময় হঠাৎ রুমের লাইট জ্বলে উঠলো।
ন্যান্সি এলিনাকে দেখতে এসেছে ওর রুমে।
কিন্তুু বিছানার দিকে তাকিয়ে ন্যান্সি সম্পূর্ণ অবাক হয়ে গেলো।
পুরো বিছানা এলোমেলো হয়ে আছে মনে হচ্ছে যেনো এখানে কিছু হয়েছে।
এলিনার কাছে যেতেই দেখে ওর শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
চোখ বন্ধ করে আস্তে আস্তে শুধু বলছে
-আম্মু আম্মু
ন্যান্সি ওকে বুঁকের সাথে জড়িয়ে ধরে কান্নাজরিত কন্ঠে বললো
-এলিনা মা চোখ খোল এই দেখ তোর আম্মু এসেছে চোখ খোল মা কি হয়েছে তোর?
কিন্তুু এলিনার কোনো ভাবান্তর হলো না।
ও ঠিক সেভাবেই চোখ বন্ধ করে আছে।
মুখ কেমন যেনো রক্তশূন্য মনে হচ্ছে ওর।
এঘরে ন্যান্সির চিৎকারে স্টিফেনের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।স্টিফেন বুঝতে পারলো না কি হয়েছে তাই ও দ্রুত এলিনার ঘরে চলে এলো।
এসেই দেখে ন্যান্সি এলিনাকে জড়িয়ে ধরে রেখে কাঁদছে।
স্টিফেন বললো
-কি হয়েছে এলিনার?
ন্যান্সি কান্নাজরিত কন্ঠে বললো
-জানি না আমি ওকে দেখতে এসে দেখি ওর প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এখনো চোখ বন্ধ করে আছে তুমি তারাতারি কিছু একটা করো।
মেয়েটার আমার খুব কষ্ট হচ্ছে প্লিজ তুমি কিছু করো
স্টিফেন দ্রুত হসপিটালে ফোন দিলো একটা এম্বুল্যান্স পাঠানোর জন্য।
কিছুক্ষণের ভেতরে এম্বুল্যান্স চলে এলো আর এলিনাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো।
এদিকে ন্যান্সি মেয়ের এমন অবস্থা দেখে কেঁদেই চলেছে।কিছুতেই বুঝতে পারছে না কে করছে তার এই ছোট মেয়েটার সাথে এসব।
কি চায় সে?
ন্যান্সি আর স্টিফেন বাহিরে বসে আছে ডাঃ ভেতরে এলিনাকে দেখছে।
ভেতর থেকে একজন নার্স হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে এলো হাতে একটা প্রেসকিপশন নিয়ে।
সেটা স্টিফেনকে দিয়ে বললো
-এই ঔষুধগুলো তারাতারি নিয়ে আসুন।
-আমার মেয়েটা ঠিক আছে তো?
-এখন কথা বলে সময় নষ্ট করবেননা যতো তারাতারি সম্ভব এই ঔষুধগুলো নিয়ে আসুন
ন্যান্সি বললো
-আমি আমার মেয়েকে দেখবো
-প্লিজ মেডাম বুঝার চেষ্টা করুন ডাঃ ওকে দেখছে
স্টিফেন ন্যান্সিকে বললো
-তুমি এখানেই থাকো আমি ঔষুধ নিয়ে আসছি
প্রেসকিপশনটা নিয়ে স্টিফেন চলে গেলো ঔষুধ আনতে।
প্রায় সব কয়টা দোকানে খোজ করলো
কিন্তুু আশ্চর্যের বিষয় একটা দোকানেও ঔষুধগুলো পাওয়া গেলো না।
কিন্তুু এখনই লাগবে ঔষুধগুলো।নয়তো এলিনা….
-না না আমি আমার মেয়ের কিছু হতে দেবো না যে করেই হোক ঔষুধগুলো পেতেই হবে কিন্তুু কি করে?
স্টিফেন ভাবছে এমন সময় হঠাৎ
ওকে পেছন থেকে কেউ একজন ডাক দিলো।
পেছনে ঘুরে তাকাতেই দেখে একজন মাঝবয়সি মহিলা দাড়িয়ে।
স্টিফেন একটু অবাক হয়ে বললো
-কে আপনি?
-এখন এতো কথা বলার সময় নেই মেয়ের জন্য ঔষুধ লাগবে তাই তো?
স্টিফেন ঠিক বুঝলো না এই মহিলাটি জানলো কিভাবে যে ওর মেয়ে অসুস্থ।
মহিলাটি আবারও বললো
-কি হলো কথা বলছো না কেনো?
স্টিফেন এবার হ্যাসূচক মাথা নাড়লো।
মহিলাটি ওকে হাতের ইঁশারায় আসতে বলে হাঁটা ধরলো।
মহিলাটি আগে আগে যাচ্ছে আর স্টিফেন পেছনে পেছনে।কিছুক্ষণের ভেতরেই
স্টিফেনকে নিয়ে ফাঁকা একটা গলিতে ঢুকে গেলো মহিলাটি।
ও বুঝতেই পারছে না এই মহিলাটি ওকে নিয়ে আসলে যাচ্ছেটা কোথায় এদিকেতো কোনো ঔষুধের দোকান থাকার কথা না।
আর কে এই মহিলাটি?
চলবে…………………..