আঁধারে_মাতৃ_দুহিতা
#পর্ব_৪_ও_৫_শেষ_পার্ট
লেখা_আল_আমিন
মহিলাটি আগে আগে যাচ্ছে আর স্টিফেন পিছনে।
বেশ কিছুটা এসেই মহিলাটি হঠাৎ দাড়িয়ে গেলো।
স্টিফেন ঠিক বুঝলো না কি কারণে এখানে দাড়িয়ে গেলো।মহিলাটি স্টিফেনের দিকে ঘুরে বললো
-ঔ যে দূরে একটুকরো আলো দেখতে পাচ্ছো?
স্টিফেন সামনে তাকিয়ে দেখলো অনেক দূরে একটুখানি আলো দেখা যাচ্ছে।
মনে হচ্ছে কেউ লন্ঠন জ্বালিয়ে রেখেছে।
-হ্যা দেখতে পাচ্ছি
-ওখানেই তোমার মেয়ের সব ঔষুধ পেয়ে যাবে যাও শীঘ্রই দেড়ি করো না।
স্টিফেন আর কিছু না ভেবে দ্রুত সেই আলোটার কাছে যেতে লাগলো।
কাছে যেতেই দেখে একজন বৃদ্ধলোক লন্ঠন জ্বালিয়ে বসে আছে।তার পাশে একটা পোটলা মতো কিছু।
স্টিফেনকে দেখেই সে ওর পোটলা খুলে ঔষুধ বের করে স্টিফেনের হাতে দিয়ে দিলো।
স্টিফেন খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে লোকটির দিকে কারণ লোকটা জানলো কি করে যে এই ঔষুধগুলোই লাগবে আর যে ঔষুধ শহরের নামিদামি দোকানে পাওয়া গেলো না সেটা এনার কাছে আছে খুবই অদ্ভুদ ব্যাপার।
স্টিফেন লোকটিকে টাকা দিতে গেলে লোকটা ইঁশারায় বললো টাকা লাগবে না।
ও সেখানে আর সময় নষ্ট না করে যতো দ্রুত সম্ভব হসপিটালের দিকে যেতে লাগলো।
আসার সময় সেই মহিলাটিকে আর দেখতে পেলো না কোথাও।
হসপিটালে পৌঁছেই ঔষুধগুলো নার্সকে দিলো।
নার্স যেগুলো নিয়ে ভেতরে চলে গেলো।এদিকে ন্যান্সি অসহায়ের মতো বসে আছে।ওর একটি মাত্র মেয়ের এমন কষ্ট ও সহ্য করতে পারছে না।
স্টিফেন ন্যান্সির পাশে বসে বললো
-এলিনার কিছু হবে না ও খুব তারাতারিই সেরে উঠবে
-হঠাৎ করে মেয়েটার সাথে এসব কি হচ্ছে কেনো হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না
-সেটা আমিও বুঝছি না কে এসব করছে।কিন্তুু সেটা জানতে হবে।
তুমি হসপিটালে এলিনার কাছেই থাকো আমি বাড়ি যাচ্ছি আর যে কোনো দরকার হলেই আমাকে কল দিবে।
ন্যান্সি হ্যাসূচক মাথা নাড়লো।স্টিফেন হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে পড়লো।
ফাঁকা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে আসতে বেশি সময় লাগলো না।
বাড়িতে ঢুকেই স্টিফেন প্রথমে গেলো এলিনার ঘরে।
খুব ভালো করে সবকিছু দেখলো কিন্তুু কিছুই পেলো না।নিজের রুমে এসে বসে ব্যাপারটা নিয়ে আবারও ভাবছে।
এটার কোনো কুলকিনারাই খুজে পাচ্ছে না স্টিফেন।
এতো চিন্তার মধ্যেও চোখে যেনো ঘুম জড়িয়ে আসছে।স্টিফেন আর নিজেকে জাগ্রত রাখতে পারলো না বেডে সুয়ে গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লো।
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ও স্বপ্নে দেখলো এলিনা ওর সামনে দাড়িয়ে।
একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।স্টিফেন এলিনাকে বললো
-এলিনা কি হয়েছে তোর?ওমন করে তাকিয়ে কি দেখছিস?
এলিনা কিছু না বলে স্টিফেনের দিকে ঠিক সেভাবেই তাকিয়ে রইলো।
স্টিফেন আবারও বললো
-বল ওমন করে তাকিয়ে আছিস কেনো?
এলিনা এবার বললো
-আব্বু কেনো করলে তুমি এমনটা?
-কি করেছি আমি?
-তুমি জানো না তুমি কি করেছো?
-না আমি জানি না
-তুমি জানো আব্বু খুব ভালো করেই জানো
কথাটা বলেই এলিনা হাসতে শুরু করে দিলো।
সেই হাসির শব্দে স্টিফেনের কান যেনো ফেঁটে যাবার জোগার।ও দু হাত দিয়ে নিজের কান চেপে ধরে বললো
-হাসি বন্ধ কর হাসি বন্ধ কর
এই শব্দ আমি আর সহ্য করতে পারছি না
এমন সময়ই স্টিফেনের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
পুরো শরীর ওর ঘামে ভিজে গিয়েছে।খুব অস্তস্থিবোধ হচ্ছে ওর।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে রাত আড়াইটা বাজে।ন্যান্সিকে আরেকবার কল করবে নাকি ভাবছে এমন সময় হঠাৎ কলিংবেলটা বেজে উঠলো।
এতো রাতে কে এলো আবার?
#পর্ব_৫_ও_শেষ_পার্ট
কলিংবেল শুনে স্টিফেন দরজা খুললো।
কিন্তুু বাহিরেতো কেউ নেই তাহলে এতো রাতে কে কলিংবেল বাজালো?
স্টিফেন এদিক-ওদিক তাকালো কিন্তুু কাউকেই দেখতে পেলো না।
দরজা বন্ধ করতে যাবে এমন সময় হঠাৎ ওর পায়ে কোনো কাগজ ঠেকলো বলে মনে হলো।
নিচে তাকাতেই দেখে একটা চিঠি পড়ে আছে।
চিঠিটা তুলে দরজা বন্ধ করে রুমে চলে এলো স্টিফেন।
বিছানাতে বসে চিঠিটা খুললো।কারো নাম লিখা নেই শুধু ভেতরে কিছু লিখা।
সেখানে লিখাঃ-
মিঃস্টিফেন নিজের মেয়েকে নিয়ে খুব চিন্তিত তুমি।
খুব কষ্ট পাচ্ছো তার জন্য।হ্যা আমিও পেয়েছিলাম সেদিন যেদিন শুনেছিলাম আমার ছোট মেয়েটিকেও কেউ ধর্ষণ করে হত্যা করেছিলো।
আর সেটা অন্য কেউ নয় তুমিই।আমি সেদিন অভিশাপ দিয়েছিলাম যে এমনটা আমার মেয়ের সাথে করেছে ঠিক তেমনটাই যেনো তার মেয়ের সাথেও হয়।
আর সেটাই হচ্ছে তোমার মেয়ের সঙ্গেও।
কিন্তুু আমি এই অভিশাপের জন্য সত্যই আজ অনুতপ্ত কারণ অপরাধি ছিলে তুমি আর শাস্তি ভোগ করছে তোমার মেয়ে তাইতো ওকে বাঁচানোর জন্যই তোমাকে ঔষুধের ব্যবস্থা করে দিলাম।
যদি নিজের মেয়েকে বাঁচাতে চাও তবে তোমাকে নিজের জীবন দিয়ে সেই অপরাধের প্রায়চিত্ত করতে হবে।
এটাই একমাত্র রাস্তা আর আমার আত্তাও মুক্তি পাবে।
চিঠিটাতে ব্যস এতুটুকুই লিখা ছিলো।
স্টিফেন এখন বুঝতে পারছে কেনো এলিনার সাথে এসব হচ্ছে।
আর তাহলে রাতের সেই মহিলাটি ছিলো একটা আত্তা?
কিন্তুু ওর পাপের শাস্তি কেনো ওর এই ছোট মেয়েটি পাবে?
ওর পাপের শাস্তি ও নিজেই পাবে।
স্টিফেন কিচেনে গিয়ে একটা ছুড়ি হাতে তুলে নিলো।শেষবারের মতো ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই রাতের সেই দৃশ্যটা যেদিন ও একটা ১০বছরের মেয়েকে রাতের আঁধারে ধর্ষণ তারপরে হত্যা করে একজন মায়ের বুঁক থেকে তার মেয়েকে কেঁড়ে নিয়ে ছিলো।
স্টিফেন আর কোনো দিকে না ভেবে ছুড়িটা চালিয়ে দিলো নিজের গলায়।
ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে ওর দেহটা মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো।
.
ওদিকে ডাক্তারদেরকে অবাক করে দিয়ে এলিনা একদম সুস্থ আর স্বাভাবিক হয়ে গেলো।
কেউ যেনো এটা বিশ্বাসই করতে পারছে না।
কারণ কিছুক্ষণ আগেও এলিনা জীবন-মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলো।
আর কখনো হয়তো এলিনাকে ওই অদৃশ্যশক্তিটার স্পর্শে ভৃত হতে হবে না কারণ অপরাধি তার কৃতকর্মের শাস্তি নিজেই পেয়ে গিয়েছে
(সমাপ্ত)