আকাশের চেয়েও বেশী তোমায় ভালোবাসি,সূচনা পর্ব
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
“আজ আমাদের বাসর রাত আর বাসর রাতে আপনি আমাকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলছেন কোন আক্কেলে?”
কথাটা বললো আঁচল।
আবির রাগী চোখে আঁচলের দিকে তাকিয়ে বললো
“আরেকটা কথা বলবা তো থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিবো বেয়াদব মেয়ে।আর তোমার সাথে বিছানা শেয়ার করা ইমপসিবল।তোমাকে আমি বিছানায় ঘুমাতে দিবো না”
আঁচল এবার ভ্রু কুচকে বললো
“আজ বাসর রাতে আপনি আমাকে বিছানায় ঘুমাতে দিবেন না মানে কি?শুনেন আপনার এসব হিরোগিরি আর সাইকোগিরি বাহিরের মেয়েদের দেখাবেন আমাকে না। আর সরুন আমি ঘুমাবো প্রচুর ঘুম পাচ্ছে আমার”
আচঁল কোমরে হাত দিয়ে তার স্বামী আবিরকে এই কথাটা বললো। আবির চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বললো
“এই মেয়ে তোমার কি কথা কানে যায় না। শোনো আমি তোমাকে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করি নি তাই তুমি আমার বিছানায় ওহ সরি শুধু বিছানায় না তুমি আমার বেডরুমের মধ্যেও ঘুমাতে পারবে না”
আচঁল এবার দাঁতে দাঁত চেপে বললো
“আপনার ঘরের মধ্যে ঘুমাতে দিবেন না তো বিয়ে করেছিলেন কেনো?আমি তো আপনাকে জোর করে বিয়ে করি নি যে আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনবো ”
আবির এবার ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বললো
“বাবা মায়ের কথা রাখতে গিয়ে। আর আমি স্নেহাকে ভালোবাসি তাই তোমাকে আমার জীবনে জায়গা দেওয়া সম্ভব না। আর তোমাকে আজ বিয়ে করেছি কিছুদিন পরই স্নেহা লন্ডন থেকে ফিরলেই তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে ওকে বিয়ে করে ফেলবো”
আচঁল ভ্রু কুচকে বলে
“অন্য কাউকে ভালোবাসেন তো আমাকে বিয়ে করেছেন কেনো?আর বিয়ে যখন করেছেন তো আমার সোজাসাপটা কথাও আপনি জেনে রাখেন মরার আগে আমি আপনাকে ছাড়ছি না।আর অন্য কাউকে ভালোবাসেন বাবা মা কে আগে সেটা বলতে পারেন নি কুলাঙ্গার কোথাকার”
আবির এবার দাঁতে দাঁত চেপে বললো
“এই মেয়ে কি বললা তুমি। তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে কুলাঙ্গার বলার”
আঁচল রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে
“আমার সাহসের দেখেছেন নি মিস্টার বরবাবু।আরো অনেক কিছুই যে আপনার এখনো দেখার বাকি আছে”
আবির এবার রেগে বললো
“হাউ ডেয়ার ইউ। আমাকে বরবাবু বলছো কোন সাহসে। তুমি যেমন ক্ষ্যাত তোমার কথাবার্তাও ক্ষ্যাত”
আচঁল বাঁকা হেসে আস্তে করে বললো
“এই ক্ষ্যাত আপনাকে জীবনেও ছাড়ছে না বরবাবু”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“মানে?”
আচঁল এবার আবিরের পা ধরে সালাম করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে “গুডনাইট”
এতোটুকু বলেই ধপ করে ভারী লেহেঙ্গাসহ বিছানায় শুয়ে পড়ে আবির মনে মনে ভাবে
“এই মেয়ে মানুষ নাকি এলিয়েন এতো ভারী লেহেঙ্গা নিয়ে কেউ ঘুমায়? আর একে তো আমার বিছানায় আমি একদমই এলাও করছি না। ওয়েট বেবী দেখাচ্ছি মজা”
যেই ভাবা সেই কাজ আবির টেবিলে থাকা জগটা নিয়ে পুরো জগের পানি আঁচলের গায়ে ঢেলে দেয় যার ফলে বিছানাও ভিজে যায়। আচঁল উঠে দাড়ালে আবির বলে
“এমন হুতুমপেঁচার মতো দাঁড়িয়ে কি দেখছো। একটু আগে না বললে তোমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে তো ঘুমাও”
আচঁল আবিরকে বকতে বকতে আলমারি থেকে একটা শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আর আবির ভেজা বিছানা টা চেঞ্জ করে শুয়ে পড়ে।
(আঁচল মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। পুরো নাম আদ্রিজা আঁচল।অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে। গায়ের রঙ বেশ ফর্সা আর কোমরের নিচ পর্যন্ত লম্বাচুল।কালকের আগেও আঁচল জানতো না যে তার বিয়ে।তার বাবার বন্ধুর ছেলের সাথেই তার বিয়ে হয়েছে তাই বাবা মায়ের কথা রাখতে গিয়ে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছে। আঁচল যেমন তেজি তেমনি প্রতিবাদী। )
(আবির উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলে। পুরো নাম আবির আহমেদ। পাঁচ দিন আগেই আবির লন্ডন থেকে লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরলো।আর আজই আবিরকে তার বাবা মায়ের মন রক্ষার জন্য বিয়ের পিড়িতে বসতে হলো।আবির বেশ ফর্সা আর মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি।দেখতে বেশ সুন্দর লাগে।আবির বাবা মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে বড় জন আর ওর ছোটো ওর একটা বোন আছে)
কিছুক্ষণ পর আঁচল ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আবির খুব আরামেই ঘুমাচ্ছে। আঁচল গিয়ে ধপ করে আবিরের বুকের ওপর শুয়ে পড়লো। আবির চেচিয়ে উঠলো
“আউচ।এই মেয়ে তুমি আমার বুকের ওপর শুয়েছো কেনো? একে তো আটার বস্তা তারওপর তোমার একশো কেজি মেকাপ”
আঁচল ভ্রু কুচকে বললো
“প্রথম কথা হচ্ছে আজ থেকে এভাবে ঘুমানোর অভ্যাস করে নিন।দ্বিতীয় কথা হচ্ছে আমার নাম আঁচল আমাকে মেয়ে টেয়ে বলবেন না। আর শেষ কথা হলো আমি একদমই আটার বস্তা নই আর মেকাপ সব ধুয়ে এসেছি আপনার শরীরে কোনো জোর নেই যে সেটা বলুন শুধু শুধু আমাকে আটার বস্তা বলবেন না”
আবির এবার হাসি দিয়ে বলে
“লাইক সিরিয়াসলি আমার বডি দেখেছো তুমি?৷ জিম করা৷ বডি তোমার৷ মতো এরকম দশজন মেয়েকে কোলে নেওয়া তো আমার বাম হাতের কাজ”
আঁচল ভ্রু কুচকে বললো
“ঠিকাছে আপাতত আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমান তাহলেই হবে। আর যদি একটা কথাও বলেছেন তো সোজা আপনার বাবার কাছে গিয়ে নালিশ করবো”
আবির ঢোক গিলে বললো
“তুমি আমাকে থ্রেট দিচ্ছো?”
আঁচল আবিরের চোখে চোখ রেখে বলে
“জ্বি থ্রেট দিচ্ছি প্রথমবার বলে থ্রেট দিলাম কিন্তু এর পর আর কোনো থ্রেট দিবো না সোজা গিয়ে আপনার বাবাকে বলে দেবো”
আবির সন্দেহজনক৷ ভাবে তাকিয়ে বলে
“কি বলবে”?
আঁচল হালকা কেশে বললো
” বললো যে আপনার দশবারোটা রিলেশন আছে পাঁচ ছয়টা মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে গেছেন ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ”
আবির রাগী দৃষ্টিতে বললো
“মিথ্যা বলবে??”
আঁচল হাসি দিয়ে বললো
“স্বামীকে নিজের আঁচলে বেধে রাখার জন্য দু একটা মিথ্যা বলা জায়েজ আছে। আর আমি জানি আপনি আপনার বাবাকে কতোটা ভয় পান। যাইহোক কাল সকালে কথা হবে শুভ রাত্রি”
বলেই আঁচল আবিরের বুকে ঘুমিয়ে পড়লো আবির কোনো রিয়েক্ট করলো না। আপাতত আবির এই মেয়েকে উসকিয়ে নিজের বিপদ বাড়াতে চায় না তাই চুপচাপ আঁচলের কথা গুলো হজম করে ঘুমিয়ে পড়লো।
আঁচল নিজের রুটিনমতো ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নিলো। তারপর ওজু করে নামাজ পড়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে আবির এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আবিরকে ঘুমাতে দেখে আঁচল ধীরে পায়ে গিয়ে আবিরের পাশে বসে আবিরের কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো ডানহাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। তারপর আবিরকে ডাকে
“এই যে উঠুন নামাজ পড়বেন না”
আবির ঘুমঘুম চোখে বললো
“স্নেহা যাও তো এখন মজা করো না আমি ঘুমাবো”
স্নেহা নামটা শুনেই আঁচলের মেজাজ বিগড়ে যায়। আবির এর কলার চেপে ধরে বলে
“আরেকবার স্নেহা নাম শুনবো তো জানে মেরে ফেলবো মাইন্ড ইট”
আবির ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে আঁচল।আঁচলকে দেখে বেশ অপ্রস্তুত ভাবে বললো
“ওহ তুমি”
আঁচল দাঁতে দাঁত চেপে বললো
“কেনো আমার জায়গায় কি অন্য কারোর আসার কথা ছিলো?”
আবির এক হাতে চোখ মুছে বললো
“ধুর শালা আজকে পুরো দিনটাই খারাপ যাবে”
আঁচল ভ্রু কুচকে বললো
“কেনো?”
আবির দাঁত কেলিয়ে বললো
“এই যে তোমার মতো একটা ডাইনির মুখোমুখি হয়েছি সকাল সকাল তাই”
আঁচল রাগি গলায় বললো
“বাজে কথা বন্ধ করুন যান নামাজ পড়তে যান”
আবির আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়। আঁচল আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ায় আর নিজে নিজে ভাবে
“হায়রে কপাল। ভার্সিটিতে সব ছেলের ক্রাশ ছিলাম আর আমার বরবাবু তো আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। জীবনে প্রেম করিনি বিয়ের পর জামাইর সাথে করবো বলে কিন্তু আমার বরবাবুকে ওতোটাও সুবিধার মনে হচ্ছে না”
অনেকক্ষণ আবির ওয়াশরুম থেকে একটা সাদা পাঞ্জাবি পরে বের হয়ে দেখলো আঁচল আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের চুল আঁচড়াচ্ছে। আবির মনে মনে বললো
“বাহহ মেয়েটার চুল তো বেশ লম্বা”
আবিরকে দেখেই আঁচল তাড়াতাড়ি করে ঘোমটা দিয়ে বললো
“মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ুন”
আঁচলের কথায় আবির বললো
“ঠিকাছে”
আবির চলে গেলো।।
চলবে