আগুনের_তৃষ্ণা,Part.5
Maishara_Jahan
তারপর কি ঔষধ দিয়েছে ঘুমে কিছু চোখে দেখছি না, চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে অনেকটা সুস্থ মনে হচ্ছে। আশেপাশে কাওকেই দেখলাম না। টেবিলে একটা চিঠি রাখা ছিলো। যেটা পড়ে আমার খুশি হওয়া উচিত কিন্তু খুশি হতে পারছি না।
চিঠিতে লেখা,,,,,
আম রেলি সরি নীর,,তোমাকে এতোটা ভালোবাসি যে, তোমাকে হাড়ানোর কথা ভাবলেই পাগল হয়ে যায়। আমি তোমাকে অন্য কারো পাশে সহ্য করতে পারি না। অতিরিক্ত ভালোবাসি তোমাকে। আমি তোমাকে নিয়ে একটু বেশিই জেলেসি ফিল করি।
তোমাকে পাওয়ার নেশায় আমি অন্ধ হয়ে গেছি, তোমার কষ্ট গুলো আমার চোখে পড়েনি। আমি ভুলেই গেছি যে, তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি তোমাকেই কষ্ট দিচ্ছি। আমি আর তোমার মনের উপর জোর দিবো না।
তুমি যদি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাও তাহলে চলে যেতে পারো, আমি কোনো বাঁধা দিবো না। শুধু একটা কথা, আমাদের সম্পর্কটাকে যদি একটি সুযোগ দাও তাহলে ওয়াদা করছি জীবনে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববে না৷
আমার ভালোবাসায় আমি কোনো কমতি রাখবো না। আর যদি তোমার মনে হয় আমি কোনো সুযোগ পাওয়ার যোগ্যতা রাখি না, তাহলে আমাকে বলে দিয়ো, আমি আমাদের ডিভোর্স এর ব্যবস্থা করবো।
এসব কথা চিঠিতে বলছি কারন সামনা সামনি বলার সাহস নেয় আমার। আমি তোমার সামনে এই কথা গুলো বলতে পারবো না। জবাবটা আমাকে জানিয়ে দিয়ো পিল্জ।
চিঠিটা পড়ে বিছানায় বসে পড়ি,, না জানি কেনো অনেক অভিমান হচ্ছে উনার ওপর। এতো ভালোবাসে বলে আর আমাকে এতো সহজে যেতে দিচ্ছে। আর কালকের জন্যও অনেক অভিমান করেছি উনার উপর। আর উনি অভিমান না ভাঙিয়ে চলে গেছে। আমিও চলে যাবো, এসে নিক আজকে হুহহ।
বলে রাগে ফুস ফুস করতে করতে ওয়াশ রুমে গেলাম, ফ্রেশ হয়ে এসে নিয়ে যায়। সেখানে সবাই আছে শুধু অয়ন ছাড়া। কেনো জানি কিছু একটা খালি খালি লাগছে। নিচে যেতেই প্রহর জিজ্ঞেস করলো,,,, মারু এখন কেমন আছো, শরীর ঠিক আছে তো।
,,,হুমম এখন ঠিক আছি।
সায়ন,,,, ভাবী নাস্তা করবে আসো।
মারু বসে নাস্তা করছে কিন্তু তার মন অন্য দিকে। কিছু একটা গভীর চিন্তা ভাবনায় মগ্ন আছে। প্রহর মারুর দিকে তাকিয়ে তাকে কয়েক বার ডাক দেয় কিন্তু মারু শুনে না। একটু পর প্রহর একটা চামচ নিয়ে মারুর হাতে খোঁচা দেয়। তখন মারু বেক্কেলের মতো তাকিয়ে বলে,,, কি হয়েছে।
প্রহর,,, আমাদের তো কিছু হয়নি কিন্তু তোমার কি হয়েছে,এখানে থেকেও নেয়।
সায়ন খেতে খেতে বলে,,,,,,ভাইয়া কিছু বলেছে।
মারু মাথা নাড়িয়ে না করে দেয়। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি আমার রুমে চলে গেলাম। একেকটা মিনিট এক দিন করে লাগছে। বসে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগে না। মাথায় শুধু একটাই কথা ঘুরছে,, কি করা যায়, থেকে যাবো নাকি চলে যাবো।
বিরক্ত হয়ে আমি প্রহরের রুমের সামনে গিয়ে নক করি। প্রহর দরজা খুলে ভিতরে আসতে বলে, আমি ভিতরে যায়। প্রহর কিছু বলার আগেই আমি ওকে জিজ্ঞেস করি,,, অয়ন কখন আসবে, কিছু বলেছে আপনাকে।
প্রহর মুশকি হেঁসে বলে,,,, কেনো মিস করছো নাকি অয়নকে।
আমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললাম,,,,,আগ্গে না,, একটু দরকার ছিলো তাই জিজ্ঞেস করছিলাম।
প্রহর আমার সামনে এসে বললো,,,, তাহলে ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে নাও।
আমি মন খারাপ করে বললাম,,,,,, আমার কাছে ফোন কোথায় আছে। এমনি বোরিং লাগছে তার মধ্যে একটা ফোন ও নেয়। এমনিই অনেক কনফিউজড।
প্রহর আমার সাইডে বসে বললো,,,, কি নিয়ে কনফিউজড।
আমি অন্য দিকে চোখ সরিয়ে বললাম,,,,,, আমি যতো দূর বুঝতে পারছি, অয়নকে নিয়ে কনফিউজড তাই তো। অয়নকে বুঝতে হলে তোমার একটু সময় দেওয়া লাগবে। এক বার ওকে বুঝতে পারলে পরে আর সমস্যা হবে না। একটা সুযোগ তোমার অয়নকে দেওয়া উচিত। আমরা শুধু জীবনের এক সাইড দেখি অপর সাইড দেখি না। আমাদের দুনো সাইড দেখা উচিত, ঠিক তেমনি তুমি শুধু অয়নের এক সাইড দেখেছো। অন্য সাইডও দেখার একবার ট্রাই করা উচিত। কারন কোনো জিনিস এক বার হারিয়ে ফেললে তা পাওয়া সবার কপালে থাকে না বুঝলে।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,, হুমম বুঝলাম,, আপনি সব কথা এমন প্যাচিয়ে বলেন কেনো সোজা সোজি বলতে পারেন না। আপনার অর্ধেক কথা আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো৷
প্রহর মুশকি হেঁসে বললো,, যতো টুকু বুঝেছো, ততো টুকু কাজে লাগালেই চলবে।
,,,হুমম,,,আচ্ছা আপনি কি করছিলেন।
,,,তেমন কিছু না।
,,,আপনার আকাঁ ছবিটা কি আমি দেখতে পারি।
প্রহর কিছুটা অস্থির হয়ে বললো,,,, ছবি মানে কিসের ছবি, আমি কোনো কিছু আকঁছি না।
আমি একটু মুখ বকিয়ে বললাম,,,,,, না দেখাতে চাইলে না করে দিন, মিথ্যা বলার কি আছে।
প্রহর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,, তোমাকে কে বলেছে আমি মিথ্যা বলছি।
আমি ওনার চোখের একটু কাছে গিয়ে বলি,,, আপনার চোখ বলেছে, আর তাছাড়া আপনার শার্টে আর গালে রং লেগে আছে৷
প্রহর তাড়াতাড়ি তার চেহেরা হাত দিয়ে মুছতে থাকে। তাতে ওনার হাতে লেগে থাকা রং ও ওনার চেহেরায় লেগে যাচ্ছে।
আমি প্রহরের হাতটা সরিয়ে টেবিল থেকে একটা টিস্যু পেপার নিয়ে ওর গালে লেগে থাকা রং মুছে দিতে থাকি।
প্রহর গভীর মনোযোগ দিয়ে মারুর দিকে তাকিয়ে ভাবছে,,,, এই মূহুর্তটা যদি আমার হতো তাহলে পরম যত্নে আগলে রাখতাম। এতোটা কাছে হয়েও স্বপ্ন তুমি আমার অনেক দূরে। এই মূহুর্তে আমার অনেক সার্থপর হতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে তোমার জন্য সার্থপর হলেও কোনো পাপ হবে না৷
হঠাৎ করেই প্রহর আমার হাত থেকে টিস্যুটা নিয়ে বলে,,,, আমি মুছে নিবো, ধন্যবাদ।
আমি হেঁসে বললাম,,,, আচ্ছা ঠিক আছে,, তাহলে আপনার ড্রয়িং করা ছবিটা আমাকে দেখাবেন না তাই তো।
,,, এখনো সময় আসে নি যে।
,,,হুমম স্পেশাল কেও হবে হয়তো,, কিন্তু আমি একদিন ঠিক দেখে নিবো। আর হ্যাঁ আমার অয়ন এর নাম্বারটা লাগবে দিবেন।
,,,ঠিক আছে আমি লিখে দিচ্ছি।
,,লাগবে না, আপনি বলেন আমি মনে রাখবো। আমার স্মৃতি শক্তি অনেক ভালো।
প্রহর মুশকি হেঁসে নাম্বারটা বলে, আমি শুনে চলে যায়। রুমে গিয়ে বসে থাকি, কি করবো কিছু ভালো লাগছে না। বেলকোনিতে সোফায় পা তুলে বসে থাকি। এখন তো আমার ফুল ও ভালো লাগছে না। সব কিছু বে রং লাগছে৷ বেলকোনিটা অনেক বড়। হালকা হালকা বাতাস আসছে।
ভালে লাগছে না, একটু পর সোফাতে শুয়ে পরি। এতো বোরিং লাগছে যা বলার বাহিরে। বার বার অয়নের কথা মনে পড়ছে। এসব ভাবতে ভাবতে তো ঘুমিয়েই যায়। অনেক ক্ষন পর উঠে দেখি যে দুপুর হয়ে গেছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি, এখনো অয়ন আসে নি।
গিয়ে গোসল করে আসি, দুপুরে খাওয়ার জন্য ডাকছে। একটুও খেতে ইচ্ছে করছে না। তাও কোনো রকমে খেয়ে আসলাম, সবাইকে জিজ্ঞেস করলাম অয়ন কখন আসবে, সবাই বলছে জানে না। তাই আমি আসার সময় ড্রয়িং রুম থেকে টেলিফোনটা সাথে করে নিয়ে আসি।
টেলিফোনটা কোলে নিয়ে ভাবছি ফোন করবো কি না। কিছু ক্ষন পরে ফোন করেই দিয়। কয়েকবার বাঝার পরে অয়ন ফোন ধরে হ্যালো বলে। আমি চুপ করে আছি, ফোন করার কোনো বাহানা খুঁজে পাচ্ছি না।
অয়ন মুশকি হেঁসে বললো,,, কেনো ফোন করেছো নীর।
আমি তাড়া ফোঁড়া করে বলে দিয়,,, কে নীর আমি নীর বলছি না৷
এটা বলে নিজেই নিজের কপালে হাত। অয়নের হালকা হাসার আওয়াজ আসছে। আমি আস্তে করে বললাম,,,, আমি তো কোনো কথা বলিনি, তাহলে বুঝলেন কীভাবে যে আমি বলছি।
,,,তোমার নিশ্বাসের শব্দে বলে দিতে পারবো যে এটা তোমার নিশ্বাস। না দেখে তোমার পায়ের শব্দে বলে দিতে পারবো যে, তুমি আসছো। আচ্ছা এখন বলে কিসের জন্য ফোন করেছে।
আমি একটু রাগ দেখিয়ে বললাম,,,, কিসের জন্য মানে, আমি কি এমনি আপনাকে ফোন করতে পারি না। যান করবো না আপনাকে আর ফোন হয়েছে। রাখছি আমি।
,, আরে আরে দাঁড়াও,, বিয়ের পরে কোনো দিন আমাকে ফোন করোনি তো তাই ভাবলাম কোনো কিছু হয়েছে কিনা।
,,বিয়ে হলোই তো মাত্র কয়েকদিন, তার মধ্য আজকেই একবারো আপনাকে দেখা হয়নি আমার।
,,,ওহহ তাহলে মিস করছো বুঝি আমাকে।
,,,,জ্বি না।
তখনি নার্স এসে অয়নকে কিছু পেসেন্টের ফাইল দিয়ে যায়। মেয়ের আওয়াজ শুনে ভিতর থেকে কেমন জানি করে উঠলো। সন্দেহের কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,,,কোথায় আপনি।
অয়ন বললো,,,, হসপিটাল ছাড়া আর কোথায় থাকবো।
,,তাহলে মেয়েদের কন্ঠের আওয়াজ পাচ্ছি কেনো।
অয়ন মুশকি হেঁসে বললো,,,,,, হসপিটাল যে শুধু ছেলেদের জন্য হয় সেটা জানতাম না। ওটা নার্স ছিলো। কেনো আমার পাশে মেয়ের কন্ঠ শুনে খারাপ লাগলো বুঝি৷
,,,একদমি না,, খারাপ লাগবে কেনো। আচ্ছা আপনার শরীর কি খারাপ নাকি।
অয়ন,,,,,তোমার হঠাৎ এমন মনে হলো কেনো।
,,, না মানে আপনার কন্ঠটা কেমন জানি লাগছে।
,,না আমি ঠিক আছি।
,,,আচ্ছা তাহলে আপনি তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবেন কিন্তু।
,,কেনো।
,,কিছু কথা বলার আছে আপনাকে।
কথাটা শুনেই যেনো মনের ভিতরটা কেমন করে উঠলো, নিশ্চয়ই আমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলবে। নীরকে ছাড়া আমি কি করে থাকবো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।
,,কি হলে চুপ করে আছেন কেনো, যতো তাড়াতাড়ি পারেন আসবেন কিন্তু।
অয়ন মন খারাপ করে বলে,,, হুমম।
বেশ কিছু ক্ষন পর অয়ন বাসায় আসে। রুমে আসতেই আমি সিরিয়াস মুডে বলি,,, এতো লেইট করে আসলেন যে।
অয়ন মন খারাপ করে বলে,,, হসপিটালে কিছু কাজ ছিলো। বলো কি বলবে।
ভয়ে অয়নের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
,,, এখনি তো আসলেন, আগে ফ্রেশ হয়ে আসেন।
অয়ন দাঁড়িয়ে ভাবছে,,, আজকে আমাকে ভয়ে মেরে ফেলবে দেখা যায়।
অয়ন ওয়াশ রুমে যায়। একটু পরে কিছু একটা পড়ার আওয়াজের সাথে সাথে মারুর চিৎকার এর আওয়াজ ও আসে। অয়ন তাড়াতাড়ি বের হয়ে এসে। আশেপাশে মারুকে দেখতে না পেয়ে নিচে গিয়ে দেখে, বড় একটা ঝুমুর নিচে পড়ে ভেঙে আছে তারপাশে মারু পড়ে আছে।
সবাই নিচে আসে, অয়ন তাড়াতাড়ি গিয়ে মারুকে উঠিয়ে, তাকে ভালো ভাবে দেখতে দেখতে পাগলের মতো বলতে থাকে,,, বীর তোমার কিছু হয়নি তো, কোথাও ব্যাথা পাওনি তো, কোথায় লেগেছে বলো আমাকে।
মারু ভয়ে জরিয়ে ধরে অয়নকে। অয়ন মারুকে জরিয়ে ধরে বলতে থাকে,,, কি হয়েছে, কোথায় লেগেছে।
আমি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললাম,,, আমার কোথাও লাগেনি, সময় থাকতে দেখতে পেয়ে সরে গেছি, না হলে ঝুমুরটা পুরো আমার আমার শরীরে পড়তো, আর আমি মরেই গেলাম হলে।
অয়ন আমাকে ধরে বলে,,,,চুপ একদম এসব কথা বলবে না৷ আমি থাকতে তোমার কিছু হবে না।
অয়ন আমাকে সাইডে রেখে রাগে জোরে চিৎকার করে বলে,,,, কে লাগিয়েছে এই ঝুমুর যে পড়ে গেছে। সব গুলো সার্ভেন্টকে ডেকে নিয়ে আসো।
প্রহর ঝুমুরের কাছে দেখে বলে,,,এই রশি দেখে মনে হচ্ছে কেও কেটেছে ইচ্ছে করে। কিন্তু ইচ্ছে করে এমন কে করবে।
অয়ন,,,,,ইচ্ছে করে মানে। কে করেছে এমন আজি তার শেষ দিন হবে।
সায়ন,,,,, কিন্তু ভাবীর ক্ষতি কেও কেনো করতে চাবে, তাও আবার এখানে।
অয়ন,,,,,,যে এটা করেছে তাকে আমি রাখবো না।
জোরে জোরে বলার কারনে অয়ন কাশতে শুরু করে দেয়। মারু অয়নকে ধরে দেখে তার শরীরে অনেক জ্বর।
মারু,,,, আপনার শরীরে তো দেখি অনেক জ্বর,, চলেন রুমে।
অয়ন,,, না আজ, আগে বের করতে হবে যে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে।
সায়ন,,,,ভাইয়া তুমি যাও আমরা তো আছি। আমরা ঠিক বের করে নিবো।
মারু,,,,আরে চলেন আগে।
মারু জোর করে অয়নকে রুমে নিয়ে গিয়ে বসায়।অয়ন মারুকে জরিয়ে ধরে। মারু ছাড়াতে চাইলে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে।
চলবে,,,,,,,,,