আজও ভালোবাসি তোমায়❤
Part_1
Writer_মাহিয়া মিতু
পাঁচ বছর পর নিজের ভালোবাসার মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফারহান, নিজের মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এসেছে সে, কিন্তু সে জানেই না যে মেয়েটা তার।
মিতু ও খুব অবাক হয় এতোদিন পর নিজের ভালোবাসার মানুষকে দেখে, আর এটা দেখে আরোও অবাক হয় যে ফারহান ওদের মেয়ে কে কোলে নিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে, তাহলে কি সবকিছু জেনে গেল ও।
নাহহহ, আর ভাবতে পারছে না। অপলক তাকিয়ে আছে দুজন দুজনের দিকে।
কতক্ষণ এভাবে ছিলো ওদের জানা নেই, কিন্তু ওদের ঘোর কাটে মিমির কথায় ( ফারহাত মিমি, ওদের মেয়ে)
—-মাম্মা, তোমাকে আমার প্রিন্স আংকেল এর কথা বলেছিলাম না, এই হলো আমার প্রিন্স আংকেল ?। আর প্রিন্স আংকেল, এই হলো আমার মাম্মা ☺।
মিতু এখনো চুপ করে দাড়িয়ে আছে, ও কি করবে ভাবতে পারছে না, তবে ও এটা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে ফারহান এখানে সব জেনে নয়, না জেনে এসেছে, কারণ ও জানলে এখানে আসতো না।
মিতুকে চুপ থাকতে ফারহান নিজেই আগে কথা বললো, কারণ ও চায় না সবার সামনে ওদের অতীত চলে আসুক।
—–হাই, আমি ফারহান, মিমির কাছে নিশ্চয় আমার কথা শুনেছেন।
ফারহান কথা শুনে মিতু খুব অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো কারণ ও নিজেও চায় না সবার সামনে কনো সিনক্রিয়েট করতে।
—–হ্যা, মিমির কাছে আপনার কথা অনেক শুনেছি। তো কেমন আছেন আপনি( জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করে)
—-আছি ভালোই, তো আপনি কেমন আছেন।
—- এইতো চলছে।
মিতুর কথার মাঝখানে একজন সুদর্শন পুরুষ এসে ওদের সামনে দাড়ালো, মিমি তাকে দেখেই বাবাই বলে তার কাছে গেল, এটা দেখে ফারহান যেন নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। তারমানে মিতু সত্যি ই নতুন করে নিজের জীবন সাজিয়ে নিয়েছে, ভেবেই একটা তাছছিল্লের হাসি দিলো ফারহান। ও আর একমুহূর্ত এখানে দাড়িয়ে থাকতে পারছে না, কিন্তু তবুও ও নিজেকে সামলে নিয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলো।
ফারহানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওর বন্ধু নয়ন বেশ বুঝতে পারছে ফারহানের মনের মধ্যে কি চলছে, তাই ও চায়ছে যাতে তাড়াতাড়ি ফারহান কে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারে।
তারপর সবাই মিলে মিমিকে কেক কাটতে নিয়ে গেলো।
এভাবে অনুষ্ঠান শেষ হলো, আর ফারহান ও ওখান থেকে চলে আসবে সেই সময় মিতুকে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে ও ওর কাছে গেল আর বললো
—- বাহ! ভালোই তো নিজের সংসার সাজিয়ে নিয়েছো, তাহলে আগে শুধু শুধু নাটক কেন করেছিলে, যে তুমি শুধু আমাকেই ভালোবাসো, আমাকে ছাড়া তুমি বাঁচবে না। হুহ, আসলে তোমাদের মতো মেয়েরা এমনই হয়, লো ক্লাস মেন্টালিটির মেয়ে তোমরা।
ফারহানের কথা শুনে মিতুর মনে হলো ওর বুকের ভিতর কেউ হাতুড়ি দিয়ে মারছে, ও আর নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না, কিন্তু মুখে কিছু বলতেও পারছে না, কারণ ও জানে ফারহান ওর কোনো কথা বিশ্বাস করবে না, তাই শুধু শুধু বলে কোনো লাভ নেই।
তারপর ফারহান ও আর কোনো কথা না বলে নয়নের সাথে বাড়ি চলে যায়।
মিতু ও নিজেকে সামলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে এসে দেখে মিমি আবিরের সাথে খেলা করছে।
মিতু ওখানে যেতেই মিমি ছুটে এসে ওর কোলে ওঠে।
মিতু ও মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেই তারপর আবিরকে বলে
—- ভাইয়া, তুমি একা কেন এলে, ভাবি কোথায়।
—- আার বলিস না, দুজনে একসাথে রেডি হয়ে বেরিয়েছি, সেই সময় ওর স্কুল থেকে ফোন আসছে ওকে এখনি যেতে হবে, তাই আর কি করার।
—– তাহলে এক কাজ করি ভাবি ফোন দিয়ে এখন এখানে আসতে বলি, তোমরা আজ থেকে কালকে যেও।
—– হ্যা, মাম্মা, খুব ভালো হবে☺। বাবাই তুমি কিন্তু আজ যেতে পারবে না।
—– ঠিক আছে মা, যাবো না।
—– তাহলে ভাবির কাছে ফোনটা করি।
—— আচ্ছা।
রাতে
ফারহান একা ছাঁদে দাড়িয়ে আছে আর আজকের কথা গুলো ভাবছিলো, তখনই পিছন থেকে কেউ ওর কাধে হাত রাখে।
ও পিছনে ফিরে দেখে নয়ন দাঁড়িয়ে আছে, ও নয়নের দিকে একবার তাকিয়ে আবার আগের মতো করে দাড়িয়ে থাকে।
তারপর নয়ন জিজ্ঞেস করে
—— কিরে, এতো রাত হয়ে গেছে, এখনো এখানে দাড়িয়ে আছিস যে, ঘুমাবি না।
—– ঘুম আসছে না।
—— হুম, জানি গত পাচ বছর ধরেই তোর এমনই হয়, আর কতো ফারহান, কতো কষ্ট দিবি আর নিজেকে, এবার সবকিছু ঠিক করে নে না ভাই। আর আমি এটাও জানি যে মিতুও তোর মতোই কষ্টে আছে।
নয়নের কথা শুনে ফারহান হেসে উঠলো।
—- কিরে হাসছিস, কেন।
—– তোর কথা শুনে, তুই কি বললি মিতু আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে। আরে ইয়ার আমি জানি, তুই সব সময় মিতুর সার্পোটে কথা বলিস, আর আগে তুই না জেনে বলতিস কিন্তু আজ তো নিজের চোখেই দেখলি ও তো ভালোই সুখে সংসার করছে।আর তুই কিনা বলছিস ও আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে,হুহ।
—– হ্যা, বলেছি, আর এখনো বলছি।
—- মানে, তুই এখনো ওকে
—- হুম, আমি এখনো বিশ্বাস করি ভুল টা তুই করছিস, আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি, চোখের দেখা ও অনেক সময় ভুল হয় ফারহান।
তাই আমি আবার ও বলছি এখনো সবটা জানার চেষ্টা কর।
—- আর কিছু ই জানার নেই আমার।
—– আরে তুই
—- নয়ন প্লিজ, আমি ওর নামে আর কিছু ই শুনতে চায় না, চোখের সামনে ওর স্বামী মেয়েকে দেখে ও ওর নসমে সাফাই গায়ছিস।
—- আমি মানছি সব, কিন্তু এটাও তো হতে পারে যে মিমি তোর মেয়ে
—– মানে! কি বলতে চায়ছিস তুই
—– যেটা বলতে চায়ছি, তুই খুব ভালো করেই বুঝতে পারছিস।
—-?????
—– এনিওয়ে, চল ঘুমাবি। আমাকে আবার সকালে চলে যেতে হবে না।
—- হুম, ওকে চল।
তারপর ওরা নিচে চলে আসে।
এদিকে মিতুর চোখে ও ঘুম নেই, বার বার শুধু ফারহানের কথাই মনে পড়ছে।
মিতু মিমি কে ঘুম পাড়িয়ে ছাঁদে গিয়ে দাড়ালো আর আজকের কথা গুলো ভাবতে লাগলো, ঠিক তখনই পিছনে থেকে আবির ওকে ডাক দিলো।
আবিরের ডাক শুনে মিতু পিছনে ফিরলো আর বললো
—– কিছু বলবে
—— তোর কি হয়েছে মিতু,সেই অনুষ্ঠানের সময় থেকে দেখছি।
—– কিছু না, তুমি ভুল ভাবছো।
—- লুকানোর চেষ্টা করছিস
—– নাহ, আমি তো
—– দেখ আমি তোকে খুব ভালো করেই চিনি, তাই মিথ্যা বলার চেষ্টা করিস না, কি হয়েছে সত্যি করে বল, আর আমি এটা ও খেয়াল করেছি মিমির ওই আংকেল ফারহান না কি যেন নাম উনাকে দেখার পর থেকে ই তুই আপসেট হয়ে আছিস আর উনাকে আমি তোর সাথে আলাদা কথা বলতেও দেখেছি। তুই কি ওকে আগে থেকে চিনিস।
আবিরের কথা শুনে মিতু আর কিছু লুকালো না
—–হুম, চিনি। আর শুধু তাই নয় খুব ভালো করেই চিনি, আর উনিই মিমির বাবা।
—–কি!!!!
পিছনে থেকে কারো আওয়াজ শুনে মিতু ও আবির দুজনেই পিছনে ফিরে দেখে আবিরের স্ত্রি মালা
—- মালা, তুমি
—– হ্যা, আবির আমি, তোমাকে ঘরে না খুজতে খুজতে এখানে এলাম আর তোমাদের কথা শুনলাম। মিতু কি বলছে এটা মিমির ওই প্রিন্স আংকেল ই মিমির বাবা।
—– হ্যা, ভাবি।
তারপর কেউ আর কোনো কথা বললো না, কারণ ওরা ফারহান কে না চিনলে ও মিতু আর ওর সর্মপকে সবকিছু ওরা জানে।
তারপর আবির বললো
—— অনেক রাত হয়ে গেছে, চলো সবাই ঘুমাতে যায়।
—- ভাইয়া তোমরা যাও, আমি একটু পরেই আসছি।
—— ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি আয়।
—– হুম।
তারপর আবির আর মালা নিচে চলে যায় আর মিতু ওখানে বসে তার অতীতের ভাবনায় ডুব দেয়।
কত সুন্দর ছিলো সেই সময় টা, খুব খুশি ছিলো ফারহান এবং মিতু দুজনেই। কিন্তু এক দমকা হাওয়াতে সব শেষ হয়ে গেল।
অতীত…………..
.
.
.
চলবে…..