আজও_ভালোবাসি_তোমায়❤
Part_11,12
Writer_মাহিয়া_মিতু
Part_11
?
?
চোখ মেলে মিতু নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলো। মাথায়, হাতে , পায়ে প্রচুর ব্যাথা অনুভব করতে পারছে। ধীরে ধীরে মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসলো আর সামনে একজন পুরুষ আর একজন মহিলা কে বসা দেখতে পেলো।
হঠাৎ করে ওর বাচ্চার কথা মনে আসতেই ও চিৎকার করে উঠলো এবং পেটে হাত দিয়ে বললো
——–আ আমার বাচ্চা! আমার বাচ্চা ঠিক আছে তো
তখনই পাশে বসে থাকা মহিলাটি এগিয়ে এসে বললো
—— হ্যা, ডোন্ট ওয়ারি, তোমার বাচ্চা একদম ঠিক আছে।
মিতু কিছু সময় মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো তারপর বললো
——– আপনি?????
——– আমি মালা, ও হচ্ছে আমার হাজব্যান্ড আবির?, কাল রাতে তুমি আমাদের গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছিলে। আমরা কালকে একটা পার্টিতে গিয়েছিলাম সেখান থেকে ফিরছিলাম, আর তখনই মাঝ রাস্তায় তুমি আমাদের গাড়ির সামনে চলে আসলে আর ধাক্কা খেলে।
তারপর আমরা গাড়ি থেকে নেমে তোমার কাছে যায় কিন্তু ততক্ষণে তুমি সেন্সলেস হয়ে গিছিলে, আমরা তো কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না, তাড়াতাড়ি করে তোমাকে হসপিটালে নিয়ে এলাম, এখানে ডাক্তার রা তোমাকে দেখার পর জানলাম যে তুমি প্রেগন্যান্ট, ভাগ্য ভালো ছিলো যে অল্পের জন্য বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয় নি। তোমার বাচ্চা একদম সেফ আছে ?
——- আমার জন্য আপনাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হলো তাই না, আই আম সরি ?
——-আরে তুমি কেনো সরি বলছো, বিপদ কখনো বলে কয়ে আসে না বোন, আর তাছাড়া আমদের গাড়িতে তুমি আঘাত টা পেয়েছো, তাই সরি টা বরং আমাদের তোমাকে বলা উচিৎ।
——- না না, দোষ টা তো আমারই, কারণ আমিই আপনাদের গাড়ির সামনে চলে এসেছিলাম।?
——– আরে বাদ দাও এবার এসব, বাট তুমি এতো রাতে রাস্তায় ওভাবে ছুটছিলে কেন।
পিছন থেকে মেয়েটির হাজব্যান্ড বলে উঠলো।
——– আসলে আমি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম তখনই কোথা থেকে কয়েক ছেলে এসে আমাকে টিস করছিলো, আমি ওদের ভয়ে কোনদিকে না দেখে ছোটা শুরু করি আর তখনই আপনাদের গাড়ির সাথে ধাক্কা খায়। ?
—— এসব ছেলেগুলোর জন্য মেয়েরা ইচ্ছা মতো রাস্তা ঘাটে চলতে ও পারবে না?, আচ্ছা ডাক্তার বলেছে তুমি এখন মোটামুটি সুস্থ, বাড়িতে গিয়ে রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে, তুমি তোমার নিজের কারো ফোন নং দাও আমি ফোন করে আসতে বলি তা নাহলে ঠিকানা বলো আমরাই তোমাকে পৌঁছে দিবো।
——– হ্যা, আবির ঠিক ই বলেছে, তোমার বাসা কোথায় বলো।
ওদের কথা শুনে মিতু এবার কেঁদে ফেলে, ওর কান্না দেখে মেয়েটি বলে
——- একি তুমি কাঁদছো কেন।
——— আমার যাওয়ার মতো আপাতত কোনো জায়গা নেই, জানি না আমি এখন কোথায় যাবো। আপনারা এখন যান, এবার আমি নিজে একটা ব্যবস্তা করে নেবো।
——– আরে সেটা কি করে হয়, আমরা তোমাকে এভাবে ফেলে চলে যেতে পারিনা।
তখনই পিছনে থেকে ছেলেটা বলে উঠলো
——- তারচেয়ে বরং এক কাজ করো তুমি আমাদের সাথে চলো, আমার না কোনো বোন নেই তোমাকে দেখে কেন জানি না আমার ভিষণ মায়াময় লাগছে তোমাকে। যাবে এই ভাইয়া আর ভাবির সঙ্গে ?।
—— ভাইয়া!!!! ভাবি!!
তখনই পাশ থেকে মেয়েটি বলে উঠে
—— হ্যা, ভাইয়া ভাবি, ও যখন তোমাকে বোন বলেছে তখন আজ থেকে আমরা তোমার ভাই ভাবি, তুমি আজ থেকে আমাদের সাথে ই থাকবে। আমাদের ছোট্ট সংসারে আজ থেকে একজন সদস্য বাড়বে, খুব ভালল থাকবো আমরা সবাই মিলে, চলো না বোন, প্লিজ না করো না।
ওদের কথা শুনে মিতু খুশিতে কেঁদেই দেয় আর বলে।
——- হ্যা, আমি যাবো আপনাদের সাথে।
তারপর ওরা মিতুকে নিয়ে ওদের বাড়িতে যায়।তারপর রাতে খাওয়া দাওয়া র পর ওরা একসাথে বসে ছিলো তখনই মালা বললো
——- আচ্ছা মিতু তোমার সাথে আসলে কি কি হয়েছে আমাদের বলবে, না মানে তোমার বাচ্চা! তাহলে তোমার স্বামী কোথায়। দেখো আমরা তোমাকে জোর করছি না, শুধু তোমার কষ্ট টা শেয়ার করতে বলছি। কষ্টের কথা শেয়ার করলে নাকি কষ্ট টা একটু হলেও হালকা হয়, তাই বলছি তুমি আমাদের নিজের মনে করে বলতে পারো।
তারপর মিতু ওদের প্রথম থেকে সবকিছু খুলে বললো। তা শুনে আবির বললো
——- কিন্তু ফারহান তোমাকে একবার ও বোঝার চেষ্টা করলো না, এভাবে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারলো।
—— আচ্ছা মিতু তুই কি চাস ওর সামনে সত্যি টা প্রমাণ করতে যদি চাস তো আমরা সাহায্য করবো তোকে।
——- হ্যা, তোর ভাবি ঠিক ই বলছে।
—— না ভাইয়া ভাবি আমি এরকম কিছু ই করতে চায় না, কারণ আমার বিশ্বাস আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে একদিন ও নিজেই সত্যি টা জানতে পারবে ও ঠিক একদিন আমার কাছে ফিরে আসবে?।
——– মানুষ কখনো সবদিক থেকে পরিপূর্ণ সুখ পাই না মিতু, তাই এই নিয়ে কখনো মন খারাপ করবি না, এখন তোর সাথে ওরা কেউ নেই কিন্তু তোর সন্তান আছে আর জন্য তোকে ভালো থাকতে হবে।কারণ এটা যে তোর অনেক বড় পাওয়া, হয়তো তুই এখনি এর মর্ম বুঝবি না, যখন তোর সন্তান তোর কোলে আসবে তখন বুঝবি যে তুই কি পেয়েছিস। সন্তান না থাকার যে কি কষ্ট সেটা আমি জানি রে,?
——- আহ, মালা আবার এসব তুলে মন খারাপ করছো।
—— মানে!!! ভাবি তুমি
——- হ্যা রে মিতু। আমি কোনোদিন ও মা হতে পারবো না?।
——- ভাবি মন খারাপ করো না, তুমি ই তো বললে মানুষ সবদিক থেকে পরিপূর্ণ হয় না, তোমার সন্তান হয় নি ঠিক কিন্তু দেখো না তোমাদের মধ্যে আছে সীমাহীন ভালোবাসা, এটা ই বা কম কি বলো।
——- হুম তুই ঠিক বলেছিস, আমি আর এটা নিয়ে মন খারাপ করবো না।
তারপর ওরা ঘুমিয়ে পড়ে।
এদিকে ফারহান পরেরদিন বাড়ি চলে যায়।
এতোদিন পর ওর মা ওকে দেখে খুব খুশি হয়
——- ফারহান বাবা তুই এসেছিস, আমি জানতাম আমার ছেলে আমাকে ছেড়ে থাকতেই পারবে না। কিন্তু তোকে এমন লাগছে কেন বাবা, কি হয়েছে।
ফারহান এবার ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে
—— মা মিতু আমাকে ঠকিয়েছে মা, ও এখন আর আমাকে চায় না,তাই ওকে আমি তাড়িয়ে দিয়েছি মা?
——- ফারহান বাবা তোর বুঝতে ভুল হচ্ছে না তো, মিতু
——- না মা আমার কোনো ভুল হচ্ছে না
——- তবু্ও তুই
——– আহা শিফা ছাড়ো না, এতোদিন পর ছেলেটা ফিরে এসেছে এটাই অনেকে ওই মেয়েকে নিয়ে আর কোন কথা বলে না তো।
——– আব্বু!!
——– বাবারে, সব বাবা মা তার সন্তানের ভালো চায়,তুই এতোদিন আমাদেরকে ছেড়ে ছিলি এতে আমরা ও ভালো ছিলাম না রে, যাইহোক তোদের মাঝে কি হয়েছে আমি কিছুই জানতে চায়বো না, তুই ফিরে এসেছিস এতেই আমি খুশি।
—— থাংকস আব্বু
তারপর ফারহান ওর ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে রেস্ট নেয় আর সেদিন সারা রাত ভেবে ও একটা ডিসিসন নেই।
পরেরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে বসে ফারহান বলে
—— আব্বু আম্মু তোমাদের সাথে আমার জরুরি কথা ছিলো।
——- বলো কি বলবে।
——– আব্বু আমি লন্ডন চলে যেতে চায়, ওখানে আমাদের যে বিজনেস টা আছে আমি নিজে দেখাশোনা করতে চায়।
এটা শুনে ওর মা বলে
——- এসব কি বলছিস বাবা, এতোদিন পর ফিরে এলি আবার মাকে ছেড়ে চলে যাবি।
—— আম্মু প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো আমি মেন্টালি খুব ডিপ্রেজড। আমি কিছুদিনের জন্য নিজেকে ব্যস্ত রখতে চায় যেটা এখানে থাকলে পারবো না, হাঁপিয়ে গিয়েছি আমি এবার আর পারছি না।
—— কিন্তু বাবা তুই
——- শিফা, চুপ করো। আচ্ছা বেশ তুই যখন চায়ছিস আমি তোর যাওয়ার ব্যবস্তা করছি।
—— তুমি ওকে
——- শিফা ও ঠিক কথায় বলছে, কিছু দিন নিজেকে বিজি রাখুক ওর যখন মনে হবে এবার ও নিজেকে সামলাতে পারবে তখনই ও ফিরে আসবে।
তারপর ওর বাবা ওর যাওয়ার ব্যবস্তা করে ফেলে।
যাওয়ার দিন ওর বাবা মা বোন সবাই ওকে ইয়ারপোর্টে পৌঁছে দিতে আসে তারপর ফারহান সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।
এটা নিয়ে টিনা আর রাজের তো আফসোসের শেষ থাকছে না। ওরা কিছুতেই মানতে পারছে না এভাবে তীরে এসে তরি ডুবে গেলো?,ওরা ভেবেছিলো ফারহান মিতুকে বের করে দিলে ওকে রাজ নিজের কাছে নিয়ে আসবে কিন্তু তার আগেই মিতু যে কোথায় চলে গেলো, আর খুজেই পেলো না?।
আর টিনা ভেবেছিলো ফারহান বাড়িতে ফিরে গেলে ও তো এখন শুধু মিতুকে ঘৃণা করবে এই সুযোগে ওর মন জয় করে বাবাকে বলে ওর সাথে বিয়েটা দিয়ে দেবে। কিন্তু তার আগেই ফারহান দেশ ছেড়ে চলে গেলো।?
এদিকে মিতুর মা অনেকদিন ধরে মিতুর কোন খোঁজ না পেয়ে চিন্তায় পড়ে যায় সাথে ওর বাবাও।
মিতুও বাবা মার জন্য মন খারাপ লাগছে, তা দেখে মালা ওকে বলে ফোন দিয়ে ওর বাবা মার সাথে কথা বলতে।
যদিও মিতুর সাহস হচ্ছে না, যার জন্য নিজের বাবা মাকে ছাড়লো আজ সেই তাকে ফেলে চলে গেল, কিন্তু ও বুঝতে পারছে ওর বাবা মা ও ওর জন্য টেনশন করছে, তাই ও আর কিছু না ভেবে ফোন দিলো।
মিতুর মা কিচেনে রান্না করছিলো, ফোনের শব্দ শুনে বেরিয়ে এসে দেখে আননোন নং, তারপর উনি ফোন রিসিভ করে, ওপাশ থেকে মিতুর কন্ঠ শুনে উনি খুব খুশি হয়, তারপর অনেক সময় মিতুর সাথে কথা বলেন ওর বাবা ও পাশে ছিলো, ফোন লাউড স্পিকারে রেখে ওর মা কথা বলছিলো।
তারপর মিতু ভয়ে ভয়ে ওর মাকে সব বললো, সাথে বাচ্চার কথা ও সব শুনে ওর বাবা মা কি বলবে বুঝতে পারছিলো না, তারপর ওরা মিতুর কাছ থেকে আবিরের ঠিকানা নিয়ে ওখানে মিতুকে দেখতে যায়। মিতু এতোদিন পর বাবা মাকে দেখে খুব খুশি হয় ওর বাবা মা ও মেয়েকে পেয়ে খুব খুশি হয়।
তারপর ওরা মিতুকে ওদের সাথে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু মিতু রাজি হয় না সাথে আবির আর মালা ও। কারণ এই অবস্থায় নিয়ে গেলে লোকের কথা ও শুনতে হবে, যা এই মুহুর্তে মিতুর জন্য ভালো হবে না। কারণ ওর এখন একদম টেনশন করা যাবে না।
তারপর আবির আর মালা ওর বাবা মাকে বুঝিয়ে বললে ওরা মিতুকে রেখে চলে যায়।
আস্তে আস্তে মিতুর ডেলিভারি ডেট এগিয়ে আসে, ওর বাবা মা ও প্রায় এসে মেয়েকে দেখে যায়।
দেখতে দেখতে সেই দিন চলে আসে যেদিন মিতুর লিভার পেইন ওঠে মালা তাড়াতাড়ি করে আবির কে বাসায় আসতে বলে আর ওর বাবা মাকে ও খবর দিয়ে মিতুকে নিয়ে হসপিটালে যায়।
মিতুকে ওটিতে ঢুকিয়ে ওরা সবাই বাইরে ওয়েট করতে থাকে। কিছু ক্ষণ পর ডাক্তার বেরিয়ে আসে ফুটফুটে একটা মেয়ে বাবু কোলে নিয়ে।ওরা সবাই খুব খুশি হয়।
তারপর মিতুকে বাড়িতে নিয়ে আসে। এভাবে দিন চলতে থাকে।ওর মেয়ে যখন আধো আধো কথা বলতে শেখে তখন মিতুই ওকে আবির কে বাবাই আর মালা কে মামনি ডাকা শেখায়।এতে আবির মালা ও খুব খুশি হয়, এমনিতেই ওরা মিমি কে নিজের মেয়ের মতো দেখে তাই মিতু ওদের কে বাবা মা ডাকা শেখাতে ওরা খুব খুশি হয়, নিজেদের সন্তান হয় নি তো কি হয়েছে বাবা মা ডাক তো শুনতে পারছে, এই বা কম কিসে।
তারপর মিতুর বাবা মা জোর করে মিতুকে ওদের কাছে নিয়ে যায়, কারণ এতোদিন মেয়েকে ছেড়ে ছিলো কিন্তু এখন নাতনিকে ছেড়ে ওরা থাকতে পারবে না।
এবার আর আবির মালা ও বাঁধা দিতে পারে নি। তবে মিমিকে ছেড়ে থাকতে ওদের ও খুব কষ্ট হয়, তবে সমস্যা হয় না কারণ মিতু সপ্তাহে দুই দিন করে ওদের কাছে এসে থাকে আর বাকি দিনগুলোতে ওরা তো যায়ই।
এভাবে সময় যেন স্রোতের বেগে চলে যায়, দেখতে দেখতে পাচ বছর কেটে যায়। মিতুর বাবা এখন আর চাকরি করে না, এখন মিতুই সংসার চালায়।
অনেক কিছু ই বদলে গেছে এই পাঁচ বছরে ছোট্ট মিমি টা ও এখন অনেক টা বড় হয়ে গেছে।
আর ফারহান ও এই পাঁচ বছর লন্ডন থেকে এবার ফিরে এসেছে শুধু মায়ের জেদের কারণে।
দেশে এসে ও ওদের এখানকার বিজনেস দেখাশোনা করছে। একদিন ও রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো, হঠাৎ করে ওর গাড়ি খারাপ হয়ে যায়, তাই ও গাড়ি থেকে নেমে আশেপাশে দেখছিলো তখনি ওর চোখ যায় পাশে একটা স্কুলের মাঠে একটা ফুটফুটে ছোট্ট পরির মতো মিষ্টি মেয়ে বাচ্চাদের সাথে খেলছে।
হঠাৎ করে ওদের বলটা ফারহানের পায়ের কাছে এসে পড়ে আর সেই ছোট্ট পরিটা ওর কাছে সেই বলটা নিতে আসে।
তারপর ফারহান অনেক সময় ধরে মেয়েটার সাথে কথা বলে। কেন যেন ওর মেয়েটা কে ভিষণ ভালো লাগছে, মনে হচ্ছে খুব আপন কেউ।
সেদিন থেকে ই মিমির সাথে ফারহানের পরিচয়। তারপর থেকে প্রতিদিনই না চায়তেও ফারহান এই স্কুলের সামনে এসে মিমির জন্য ওয়েট করতে থাকে, ওর সাথে খেলা করে, ঘুরে।
মিমি ও ফারহানের সাথে মিসতে খুব ভালো লাগে।
ফারহান যে কিসের টানে ওর কাছে আসে সেটা ও নিজেও জানে না, কিন্তু মিমি কে এখন একদিন না দেখে ও থাকতে পারে না।
এভাবেই চলতে থাকে। মিমিও বাড়ি তে গিয়ে মিতুর সাথে বলে ওর প্রিন্স আংকেল এর কথা।
তারপর ওর জন্মদিনে ফারহান কে মিমি ইনভাইট করে আর ফারহান ও যায়, আর সেদিন ই মিতুর সাথে ওর আবার দেখা হয়।
এসব ভাবতে ভাবতে কখনোই যে রাত পার হয়ে গেছে মিতু বুঝতে ই পারে না আযানের শব্দে মিতুর ঘোর কাটে। আর ও চোখ মুছে নিজে নেমে আসে।
.
.
.
?
চলবে….
#আজও_ভালোবাসি_তোমায়❤
#Writer_মাহিয়া_মিতু
#Part_12
?
?
নিচে এসে মিতু নামাজ পড়ে মেয়ের পাশে কিছুক্ষণ বসে থাকে তারপর রান্নাঘরের দিকে যায়, রান্না করতে। আজকে আবার আবির আর মালা ও আছে।
মিতু রান্না শুরু করার পরপরই মালা আসে আর বলে
——- আরে তুই একা কাজে লেগে পড়লি, আমাকে ডাকলি না কেন। দে আমি হেল্প করছি।
——- আরে আমি একা পারবো, তুমি…
—— দূর, সর তো উনি কাজ করবে আর আমি নাকি বসে বসে দেখবো।
——- আচ্ছা বাবা, তোমাকে বসে থাকতে হবে না, তুমি কাজ করো?
তারপর ওরা দুজনে মিলে রান্না শেষ করে একে একে টেবিলে সাজিয়ে রাখে।
তখনই আবির বেরিয়ে আসে মিমি কে কোলে নিয়ে।
——- আরে তোমাদের রান্না শেষ, দেখ আমরা চলে এসেছি। তাড়াতাড়ি খেতে দাও তো আমাদের কিন্তু খুব খিদে পেয়েছে, তাই না মামনি।
——– হ্যা, আর খাবারের দারুণ গন্ধে খিদে আরো বেড়ে গেছে।
মিমির কথা শুনে সবাই হেসে উঠে।
——- আচ্ছা, মাম্মা। নানুরা কখন আসবে বলো তো, ওরা জানে না যে আমি ওদের খুব মিস করছি। আমার বার্থডে তেও ওরা থাকেনি?
——- এইতো নানুভাই, আমরা চলে এসেছি।
মিতুর মা বাবা কে দেখে মিমি ছুটে যেয়ে ওদের জড়িয়ে ধরে
——– তোমরা এসে গেছো, আই আম সো হ্যাপি বাট আমি তোমাদের উপর খুব রেগে আছি, তোমরা আমার বার্থডে তে থাকো নি।?
——— এত্ত গুলো সরি দিদিভাই, আর আমরা জানি তো যে আমার নানুভাই টা খুব রেগে আছে আমাদের উপর তাই তো তার রাগ ভাঙানোর জন্য এত্ত গুলো চকলেট এনেছি, এই দেখো?
——– ওয়াও, এগুলো সব আমার ☺ উমমমা তোমরা খুব ভালো।
তারপর ওরা ভিতরে ঢুকে সোফায় বসে আর মিতু বলে
——- মামার শরীর এখন কেমন আছে মা।
——– এখন অনেক টা ভালো, তাই তো চলে এলাম। মিমি টা কে রেখে কোথাও যেয়ে মন দাঁড়াতেই চায় না?।
তারপর ওরা সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে।
এদিকে ফারহান দের বাড়িতে সকালে ও নাস্তা করতে বসে সেই সময় ওর মা বলে
——- ফারহান বাবা, একটা কথা বলার ছিলো তোকে শুনবি।
——– বলো কি বলবে।
——– ইয়ে ম মানে
——– আরে আম্মু কি ইয়ে মানে মানে করছো, যা বলবে ক্লিয়ারলি বলে ফেলো তো।
—— আসলে বলছিলাম যে, অনেক তো হলো বাবা, এবার বিয়েতে রাজি হয়ে যা না বাবা। তুই আমাদের একমাত্র ছেলে, আমাদের ও তো ইচ্ছে করে তোর বিয়ে দেবো নাতি নাতনীর মুখ দেখবো।
——- হয়েছে, শেষ তোমার বলা। এবার আমি যায়,
——- রাগ করছিস কেন।
——– তো কি করবো, আসলে ধরে সেই এক টপিক নিয়ে পড়ে আছো। একবার বলেছি না, আমাকে বিয়ের কথা বলবে না।?
——- ফারহান, তোমার আম্মু তো ঠিক ই বলেছে।
——– আব্বু প্লিজ, এবার তুমি ও আম্মুর মতো শুরু করো না, আসছি আমি।
—— আরে ফারহান, শোন বাবা। খেয়ে যা। না খেয়ে কোথায় যাচ্ছিস, ফার, উফ চলে গেলো।
ফারহান রেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায়, ও গাড়ি তে করে যেতে যেতে মিমির স্কুলের সামনে মিমি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামিয়ে ওর কছে যায়।
মিমি তো ফারহান কে দেখে খুব খুশি হয়ে দৌড়ে ওর কাছে আসে।
——- আরে প্রিন্স আংকেল তুমি☺
——- হ্যা মামনি, কিন্তু তুমি এখানে দাড়িয়ে আছো কেন মা।
—— আম্মু স্কুলে দিয়ে গেছে আর বলেছে স্কুল ছুটি হলে এসে নিয়ে যাবে কিন্তু আজকে কি জন্য যানি না তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিয়েছে, তাই এখানে দাড়িয়ে ছিলাম?, ভালোই হলো তুমি এসেছো, আম্মু আসবে তো এখনো অনেক পরে ততো সময় আমি তোমার সাথে ঘুরবো☺, আমায় নিয়ে যাবে তো প্রিন্স আংকেল তুমি ঘুরতে ?।
—– ঠিক আছে মা, তাহলে তুমি বলো কোথায় যাবে আজ আমি তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবো?।
——– সত্যি আমি যেখানে যেতে চায়বো সেখানে নিয়ে যাবে☺
—— হ্যা, মা। নিয়ে যাবো?
—— প্রমিস
—— প্রমিস?
——- ওকে, তাহলে আজ আমাকে তোমার বাড়িতে নিয়ে চলো। তুমি তো আমাকে বলেছিলে আমাকে একদিন তোমাদের বাড়ি তে নিয়ে যাবে, ওখানে আমার আরো একটা দাদু দিদা আছে, তাদের সাথে দেখা করাতে, তাহলে আজ নিয়ে চলো না, প্লিজ☺
——- ওকে মা, চলো।
তারপর ফারহান স্কুলের দারোয়ান কে বলে মিমিকে সাথে নিয়ে আবার বাড়ি ফিরে আসে।
ফারহান মিমি কে কোলে করে নিয়ে বাড়ি তে ঢোকে। তখন ওর বাবা মা ড্রয়িং রুমে বসে ছিলো।
ফারহান মিমি কে ওদের সামনে নিয়ে গিয়ে বলে
—— মামনি এই দেখো তোমার আর একটা দাদু আর দিদা, আর আব্বু আম্মু এ হলো মিমি, তোমাদের কে যার কথা বলেছিলাম।
ফারহানের মা ওর কথা শুনে মিমির দিকল তাকায়, তাকানোর সাথে সাথে উনি দাড়িয়ে যান আর অবাক চোখে মিমির দিকে তাকিয়ে থাকে।
——- কি হলো আম্মু, তুমি ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
——- আরে এ তো
——- কি আম্মু
——- আরে ফারহান একে দেখে আমার মনে হচ্ছে আমি যেন বিশ বছর আগের তুই সেই ছোট্ট ফারহান কে দেখছি। যেন একদম তোর কার্বন কপি।হবুহু তোর মতই?, আর দেখ ওর চোখ, ঠোঁট একদম তোর মতো। ছোট্ট বেলায় তুই একদম এরকম ছিলি। আমার যেন মনে হচ্ছে যে আজ আমার সেই ছোট্ট ফারহান আর বড় ফারহান একসাথে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ?
—— আরে সত্যি ই তো তাই, ওই দেখো ফারহান তোমার ছোট্ট বেলার ছবি, ছবিটা নিয়ে তুমি নিজেই মিলিয়ে দেখো, তাহলে তুমি বলবে, যে ও একদম তোমার মতো।
ওর বাবা মার কথা শুনে ফারহান ওর ছবি নিয়ে দেখে, এবার ওর মনে খুব বড়ো সড় একটা ধাক্কা লাগে, কারণ সত্যি ই মিমিকে একদম ওর মতোই মনে হচ্ছে।
কিন্তু এটা তো তখনই সম্ভব যদি…, তাহলে কি মিমি
ও আর ভাবতে পারছে না।
তারপর মিমি ওদের বাড়ি তে অনেক সময় থাকে, ওর বাবা মার ও মিমি কে খুব ভালো লাগে, যেতেই দিতে ইচ্ছা করছিলো না। মিমি ও ওদের সাথে খুব মজা করে।
ওকে এদের সাথে এভাবে মিশতে দেখে মনে হচ্ছে কতোদিনের চেনা, আসলে রক্তের সম্পর্ক মনে হয় এরকমই হয়।বাইরের চোখে যতই অচেনা মন হোক না কেন, মনের চোখ চিনতে ভুল করে না।
তারপর ফারহান মিমি কে নিয়ে বেরিয়ে যায় ওকে দিতে কারণ মিতু হয়তো এতো সময় চলে এসেছে, ও চিন্তা করবে।
ওর বাবা মার ও ইচ্ছে করছে না মিমি কে যেতে দিতে কিন্তু কি করবে।
ফারহান মিমি কে নিয়ে আবার ওর স্কুলের সামনে আসে, এসে দেখে মিতু দাঁড়িয়ে আছে। তারপর ও গাড়ি থেকে নেমে মিমি কে নিয়ে মিতুর কাছে য়ায়।
মিমি কে দেখে মিতু দৌড়ে আসে
——- কোথায় গিয়েছিলে মা তুমি আমাকে না বলে, মাম্মা র টেনশন হয় তো।
——- সরি মাম্মা, আসলে আমি ভাবলাম তোমার আসতে দেরি হবে তাই আমি প্রিন্স আংকেলের বাড়িতে গিয়েছিলাম।জানো মাম্মা ওখানে আমার আরো একজন দাদু আর দিদা আাছে, ওরা আমাকে কত্ত আদর করেছে৷ ☺
মিমির কথা শুনে মিতু খুব অবাক হয় সাথে মিমি কে হারানোর একটা ভয় ওর মনে তাড়া দেয়। শত হলেও ফারহান ওর বাবা। মিমির উপর ওর ও যতোটা অধিকার আছে ফারহানের ও ততোটাই আছে।
ফারহান যদি এটা জেনে যায় যে মিমি ওর মেয়ে তাহলে যদি ওকে মিতুর কাছ থেকে কেড়ে নেয়।
নাহহহহ! মিতু এটা কিছু তেই হতে দেবে না।
ফারহান এভাবে মিতুকে কিছু একটা ভাবতে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায় কিন্তু কিছু বলে না।কারণ ওর সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা নেই ওর।
তাই ও মিমি কে বলে
—— মামনি আজ তাহলে আমি আসি, তুমি তোমার মায়ের সাথে বাড়ি চলে যাও, কেমন?
——- ওকে।
তারপর ফারহান চলে যায় আর মিতু ও মিমি কে নিয়ে বাড়ি চলে আসে।
.
.
চলবে….