আজও_ভালোবাসি_তোমায়❤
Part_14
Writer_মাহিয়া_মিতু
?
?
বাড়ি ফিরে ধরে ফারহান কোনো কাজে মন বসাতে পারছে না, ওর মাথায় শুধু আবিরের বলা কথা গুলো ই ঘুরছে।
ওর নিজের ও এবার মনে হচ্ছে যে ও সত্যি ই কেনো ভুল করছে না তো, সত্যি ই যদি সেরকম কিছু হয় তাহলে ওকে নিজেই সেটা ঠিক করতে হবে।
কিন্তু ওর কি করা উচিৎ ও বুঝতে পারছে না। ফারহান ওর ঘরে বসে এসব ভাবছিলো, তখনই ওর মা এলো ওর ঘরে।
ছেলেকে ওরকম অস্থির দেখে উনি এগিয়ে যেয়ে ছেলের কাঁধে হাত রাখলেন তারপর বললেন
—— কি হয়েছে রে বাবা তোর, এরকম অস্থির লাগছে কেন, কয়দিন ধরেই দেখছি তুই কেমন যেন করছিস।
কি হয়েছে বাবা, মাকে বলবিনা।
ওর মায়ের কথা শুনে ফারহান আর নিজের কষ্ট টা লুকিয়ে রাখতে পারলো না তাই ওর মায়ের দিকে ফিরে মায়ের কোলের উপরে মাথা রাখলো তারপর একে একে সব বললো ওর মাকে।
—– কি!!! মিমি তাহলে তোর মেয়ে। তুই সেদিন কিছু বললি না কেন।
—— মা আমি নিজেও কনফিউজড, তোমাকে কি বলতাম। আমার তো মনে হচ্ছে আমি এখনো বড় কোনো গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে আছি আর এখান থেকে কি করে বের হবো সেটাও আমার জানা নেই।
——- আমার ও মনে হচ্ছে তোরই হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস তুই সব সত্যি টা খুঁজে বের করতে পারবি। পারতে যে তোকে হবেই।
—— হুম, তুমি ঠিক বলেছো আম্মু, পারতে আমাকে হবেই।
—— আমার মনে হয় না মিতুর কোনো দোষ আছে, আমি খুব তাড়াতাড়ি আমার বৌমা আর নাতনি কে এই বাড়িতে দেখতে চায়, সসম্মানে।
তারপর ওর মা চলে যায় আর ফারহান নয়নকে ফোন করে ওর সাথে দেখা করতে বলে।
ওরা একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করবে তাই ফারহান সোজা সেখানে চলে যায়। আর নয়নের আসতে দেরি হচ্ছিল বলে ও একা একা সেখানে বসে ওর জন্য ওয়েট করতে থাকে।
——– কেমন আছো ফারহান?
পিছন থেকে কোন মেয়েলি কণ্ঠ শুনে ফারহান পিছনে ফিরে তাকায় আর যা দেখে তাতে ও যেন একবারে এক হাজার বোল্টেজের শক খেয়েছে এমন মনে হয়।
কারণ ওর সামনে টিনা এবং রাজ দুজনেই একসাথে দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান কে ওদের দিকে তাকিয়ে এভাবে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রাজ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবার বলে
—— কি হলো ফারহান বললে না তো কেমন আছো?
এবার ফারহানের হুশ আসে তারপর ও বলে
—— হুহ, তুমি নিজে আমার জীবনে আগুন লাগিয়ে তুমি ই শুনতে এসেছো যে আমি কেমন আছি, ভেরি ফানি।
ফারহানের কথা শুনে টিনার চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে তা দেখে ফারহান বলে
—— আরে তুমি কাদছো কেন! আর তোমরা দুজন একসাথেই বা কি করে?
—— হ্যা একসাথে কারণ আমরা দুজন হাসবেন্ড -ওয়াইফ।
—— ওয়াট!!!!মজা করছো আমার সাথে?
——- না ফারহান, রাজ সত্যি বলছে।
——- তাহলে মিতুর সাথে ওসব…
——-স সব মিথ্যে ছিলো
—– ওয়াট!!!!!!!
——- হ্যা ফারহান, সবটাই ছিলো তোমাদের দুজন কে আলাদা করার পরিকল্পনা। আর এই কাজে রাজ একা নয় আমি ও ওর সাথে ছিলাম।
——– তাহলে ওই ছবি গুলো
——- ওগুলো সব এডিট করা।
ওদের কথা শুনে ফারহান যেন কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে, ওর এখন এদের দুজন কে খুন করে ফেলতে ইচ্ছা করছে কিন্তু ওর যেন সবকিছু থমকে গিয়েছে, ওর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
ওর শুধু একটা কথায় মাথায় আসছে, কি করে মিতু কে অবিশ্বাস করলো, আর এখন ওর সামনে যেয়ই বা কি করে দাড়াবে, মিতু কি ওকে ক্ষমা করবে।
——- ফারহান, প্লিজ তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও।
এবার ফারহানের রাগ যেন মাথায় উঠে গেল, ও উঠে রাজের কলার ধরে বললো
—— ক্ষমা! ক্ষমা মাই ফুট?, আমাদের জীবন টা নষ্ট করে দিয়ে, এখন আসছে ক্ষমা চাইতে, ব্যাস! সাত খুন মাফ হয়ে গেলো, তাই না?
—– না ফারহান। শুধু সরি বলেই সব মাফ হয়ে যায় না সেটা আমরা ও জানি। আর এটাও জানি যে আমরা তোমাদের সাথে যে অন্যায় করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য।
—— হ্যা, কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাদের সাথে অন্যায় করে আমরা বাঁচতে পারিনি, প্রকৃতি আমাদের ছাড়ে নি, সে ঠিকই তার প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে?
—— মানে!
——– বলছি শোনো?, তোমাদের দুজনকে আলাদা করার পিছনে আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো, তোমরা আলাদা হওয়ার পর রাজ মিতুকে পাবে আর আমি তোমাকে। কিন্তু আমাদের সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়, সেদিন মিতুকে ও আর খুঁজে পাই নি আর তুমি ও দেশের বাইরে চলে যাও।
এতোকিছু করে ও তোমাদের আলাদা করতে পারলে ও আমরা কেউ তোমাদের দুজন কে পেলাম না, তখন বুঝতে পেরেছিলাম এটা হয়তো আমাদের ভাগ্যে ছিলো।
আর আমরা সেটা মেনে নিয়েছিলাম, তারপর রাজ আমাকে বিয়ের কথা বললে আমি ও রাজি হয়ে যায়, তারপর আমরা বিয়ে করে নিই, কিন্তু তখনো ও না আমাদের মধ্যে কোন অনুশুচনা বা আপসোস হয় নি তোমাদের সাথে অন্যায় করেছি বলে।
তারপর আমরা বেশ ভালোভাবে ই চলছিলাম, খুব হ্যাপি ছিলাম। কোন কিছু র কমতি ছিলো না।
তারপর যখন জানতে পারলাম আমি মা হতে চলেছি তখন যেন আরো সুখ ধরা দিলো, সবাই খুব কেয়ার করতো, সবার কাছে খুব প্রিয় ছিলাম।
এভাবে খুব সুখের মধ্যে দিয়ে আমাদের দিনগুলো চলছিলো, তোমাদের কথা যেন ভুলেই গিয়েছিলাম, কিন্তু প্রকৃতি ভোলে নি, ঠিকই প্রতিশোধ নিয়েছে, আমরা আমাদের পাপের শাস্তি খুব ভয়ংকর ভাবে পেয়েছি। ?
বলে টিনা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো তারপর আবার বলতে শুরু করলো
——- আমার প্রেগনেন্সির যখন আট মাস চলে তখন আমরা দুজনে একদিন ঘুরতে বেরিয়ে ছিলাম।সেদিন খুব বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটেছিলো, যা আমাদের পুরো জীবন টা ই এলোমেলো করে দিলো?
সেদিনের দূর্ঘটনায় আমাদের সন্তান টা মারা যায়, আর আমি সারাজীবনের মতে মা হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি?
বলে টিনা এবার জোরে কেঁদে উঠলো, রাজের চোখেও পানি।
তারপর রাজ বলতে শুরু করলো
—— জানো সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, তখনই আমার তোমাদের কথা মনে হয়েছিল, তোমরা ও নিশ্চয়ই এরকমই কষ্ট পেয়েছিলে সেদিন, যে কষ্ট টা আমরা দুজনে মিলে দিয়েছিলাম তোমাদের।
—— আর আজ দেখো, সেদিন তোমরা সত্যি টা জানতে না পারলেও আমরা ঠিকই আমাদের পাপের শাস্তি পেয়েছি, নিজের সন্তান কে হারিয়েছি, এমন কি আর কোনো দিন ও বাবা মা হতে পারবো না?।
——- সেদিনের পর থেকে তোমাদের খুঁজে চলেছি মাফ চাওয়ার জন্য। তোমরা ক্ষমা না করলে যে সারাজীবন ভিতরে ভিতরে আমরা এই পাপের বোঝা নিয়ে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবো?, প্লিজ ফারহান তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও।
——- হ্যা, বিশ্বাস করো আজ তিনটা বছর ধরে এই পাপের বোঝা মাথায় নিয়ে আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি, প্লিজ আমাদের কে মাফ করে দাও?
ওদের সব কথা শুনে ফারহান বললো
——- তোমরা যা অন্যায় করেছো তার শাস্তি তোমরা পেয়েছো, আমার তোমাদের উপর কোন ক্ষোভ নেই। আমার সাথে যা হয়েছে এটা হয়তো আমার ভাগ্যে ছিলো, তোমরা শুধু শুধু এটা নিয়ে গিল্টিফিল করবে না, আমার সত্যি এখন আর তোমাদের উপর কোন রাগ নেই। তোমরা খুব ভালো থেকো দুজনে।
——থাংকস ফারহান?
——- আজ তাহলে আমরা আসি
—— ওকে।
তারপর ওরা দুজন চলে যায় আর ফারহান ওখানে মাথা নিচু করে বসে থাকে।
তখনই পিছনে থেকে কেউ ওর কাঁধে হাত রাখে, ও পিছনে ফিরে দেখে নয়ন
——- নয়ন, তুই কখন আসলি
—— অনেক সময়৷ যখন তোরা কথা বলছিলি।
——- তুই সবকিছু
—— হ্যা, আমি সবকিছু ই শুনেছি। দেখলি, আমি তোকে বলেছিলাম না, সব সময় চোখের দেখা সত্যি হয় না, মিললো তো।
—– আমি এখন কি করবো রে নয়ন, সত্যি আমার মাথা কাজ করছে না।
——- রিলাক্স ইয়ার, টেনশন করে লাভ হবে না, তুই মিতুর কাছে সবটা বল, আমার বিশ্বাস ও তোকে ক্ষমা করবে, তোকে ফেরাতে পারবে না।
——- তুই ঠিক বলেছিস, আমাকে ওর সাথে কথা বলতে হবে, দরকার পড়লে ওর পায়ে ধরে মাফ চাইবো।
—– হা হা হা, আচ্ছা এখন বাড়ি চল।
—–ওকে চল।
তারপর ফারহান বাড়ি চলে আসে আর ওর বাবা মাকে সব কিছু বলে। সবকিছু শুনে ফারহানের বাবা ও খুব কষ্ট পাই, সেদিন যদি উনি টিনার কথা শুনে এসব না করতেন তাহলে হয়তো এসব কিছু ই হতো না, সব ঠিক থাকতো।
সব কিছুর জন্য এখন উনি নিজেকেই দায়ী করছেন।তাই উনি ঠিক করেছেন, উনিই সব ঠিক করে দেবেন।
আর কোনো কষ্ট পেতে দেবে না নিজের ছেলেকে। দরকার হলে মিতুর বাবার পায়ে ধরে উনার কাছে উনার মেয়েকে ভিক্ষা চাইবেন।
?
চলবে…..