আজও_ভালোবাসি_তোমায়❤ Part_15

0
3469

আজও_ভালোবাসি_তোমায়❤
Part_15
Writer_মাহিয়া_মিতু
?
?
সকাল বেলায় ড্রয়িং রুমে আওয়াজ শুনে মিতুর ঘুম ভাঙে, ও কিসের আওয়াজ আসছে তা দেখার জন্য ড্রয়িং রুমে যায়।
ড্রয়িং রুমে যেয়ে যা দেখে তাতে তো ও চোখ চড়ক গাছে, কারণ এখানে ফারহান, ওর বাবা মা, বোন, দুলাভাই, আবির, মালা সবাই উপস্থিত আছে।
সকাল সকাল এরা সবাই এখানে কি জন্য এসেছে, সেটাই বুঝতে পারছে না ও।
মিতুর পিছনে পিছনে মিমি ও বাইরে আসে, এসে ফারহান কে দেখেই ছুটে ওর কাছে চলে যায়, আর টুপ করে ওর গালে একটা চুমু দিয়ে বলে
—- প্রিন্স আংকেল তুমি এসেছো, সাথে দাদু দিদা ও এসেছে ☺, ইয়ে কি মজা আজকে আমি আবার সবার সঙ্গে খুব মজা করবো☺।
ওর কথা শুনে মিতু ছাড়া সবাই হেসে দেয়।তারপর ফারহান মা মিমি কে নিজের কাছে ডাকে।
—– দিদিভাই, আমার কাছে এসো?
মিমি ও ছুটে উনার কাছে যায়, তারপর উনি বলে
—– উনি তোমার আংকেল হয় না, দিদিভাই।
—– আংকেল হয় না, তাহলে কি হয়?
—– উনি তোমার বাবা।
—— বাবা! আমার বাবা☺, কিন্তু মাম্মা যে বলেছিলো আমার পাপপা আমাদের উপর রাগ করে বাইরে চলে গেছে?
—— হ্যা, কিন্তু এখন আবার ফিরে এসেছে।
—— তাই
—– হুম, তাই ?
তারপর মিমি আবার ফারহানের কাছে যায় আর বলে
—— প্রিন্স আংকেল তুমি সত্যি আমার পাপা☺
—— হ্যা, মা।?
—– তাহলে তুমি আমাদের ছেড়ে রাগ করে চলে গিছিলে কেন, জানো আমার কতো মন খারাপ করতো, সবার পাপা তাদের সাথে থাকে, আর আমার পাপা থাকে না বলে?
——- সরি মাম্মা, আমি আর কখনো তোমাদের ছেড়ে যাবো না।
——- প্রমিস
——প্রমিস?
তারপর মিমি ফারহানা কে দেখিয়ে বলে
—— পাপা, ইনি কে?
——- উনি তোমার ফুফি, আর ইনি তোমার আংকেল, আর এই যে এটা হলো তোমার ভাইয়া।
—— ভাইয়া, তোমার নাম কি ভাইয়া?
——- ফাহিম?।
এবার ফারহানা ওদের দুজন কে ডেকে বলে
——- মা, এবার ভাইয়া আর তুমি ওপাশে গিয়ে খেলো, কেমন?।
—– ওকে, ফুফি। চলো ভাইয়া?
মিতু এতোক্ষণ সবকিছু নিরব দর্শকের মতো দেখছিলো, ও এখনো বুঝতে পারছে না যে এসব হচ্ছে টা কি।
এবার ফারহানের মা মিতুর কাছে এগিয়ে আসলো
—– কেমন আছো মা।
—– জি আন্টি ভালো, আপনি কেমন আছেন?
—– ভালো, তুই খুব রেগে আছিস আমাদের উপর তাই না রে মা?
—– ছি ছি! কি বলছেন, রেগে থাকবো কেন।
—— তাহলে আমাকে আন্টি বলছিস যে মা বলবি না আমায়।
উনার কথা শুনে মিতু চুপ করে আছে।তারপর ফারহানের বাবা ওর দিকে এগিয়ে আসলো আর বললো
——- আমি জানি মা, তুমি খুব রেগে আছো আমাদের উপর।আর সেটাই সাভাবিক। আর এসব কিছুর জন্য আমিই দয়ী, আমি যদি সেদিন তোমাকে মেনে নিতাম, তাহলে এতো কিছু ঘটতোই না, আজ আমি বুঝতে পারছি মা, সেদিন টিনার কথায় তোমাকে ভুল বুঝে কতো বড় অন্যায় করেছি।
এই বুড়ো বাপ টাকে মাপ করা যায় না মা।
—– ছি ছি, আংকেল এসব বলে আমাকে লজ্জা দেবেন না, এখানে আপনার কোনো দোষ নেই।
——- তুমি না বললেই তো সত্যি টা মিথ্যা হয়ে যাবে না মা, যাক সেসব কথা, সবকিছু ভুলে আবার নতুন করে শুরু করো না মা, ফিরে চলো তোমার নিজের সংসারে।
তখনই মিতুর বাবা এসে বলে
—— হ্যা রে মা, উনারা সব বলেছে আমাদের, এখানে ওদের কোনো দোষ নেই মা, ওই টিনা আর রাজ মিলে সবাই কে ভুল বুঝিয়েছিলো, কিন্তু এখন তো যা হওয়ার হয়ে গেছে, তুই সব ভুলে আবার নতুন করে শুরু কর মা, আবার ফারহানের কাছে ফিরে যা।
——বাবা!!!
—– হ্যা রে মা, তোর বাবা ঠিক ই বলছে,ও তোকে এখনো খুব ভালোবাসে আর আমি খুব ভালো করেই জানি তুই মুখে না বললে ও এখনো ফারহান কে আগের মতোই ভালোবাসিস।
—— আর আমরা ও যে তোকে সুখি দেখে যেতে চায় রে মা, তোকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে গেলে আমরা যে মরে ও শান্তি পাবো না মা। তাই সব ভুলে আবার নতুন করে জীবন টা কে সাজিয়ে গুছিয়ে নে মা।
—— দেখ আমার কারো উপর কোন অভিযোগ নেই, কিন্তু আমি কারো কাছে ফিরে যেতে পারবো না, ইমপ্যাক্ট আমি সেটা চায় ও না, আমি আমার মেয়ে কে নিয়ে যেমন আছি বাকি জীবন টা ও সেভাবেই থাকবো।কারো দরকার নেই আমার জীবনে, আমি একাই ভালো আছি।
মিতু র কথা শুনে ফারহান অসহায় চোখে মিতুর দিকে তাকায়।
এবার ফারহানের মা বলে
—–তারমানে তুই আমাদের কে ক্ষমা করতে পারিস নি তাই না।
——- না মা, আমার সত্যি আপনাদের উপর কোনো রাগ বা অভিযোগ নেই। কিন্তু আমি আপনার ছেলের কাছে আর ফিরে যেতে চায় না।
—– এরকম বলিস না মা, মাফ করে দে না আমার ছেলেটাকে। তোকে কষ্ট দিয়ে ও নিজেও যে ভালো ছিলো এতো বছর, কারণ ও যে আজও তোকে খুব ভালোবাসে।
—— হুহহহ, ভালোবাসা!!! যদি সত্যি ই আমাকে ভালোবাসতো না মা, তাহলে আর যাই হোক, কখনো অবিশ্বাস করতো না, একটা সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস, আর সেটাই নেই তখন সেই সম্পর্কে আবার নতুন করে আমি নিজেকে জড়াতে চায় না, আমায় ক্ষমা করবেন মা, আমি পারবো না ওর কাছে ফিরতে।
বলে ওখানে থেকে চলে আসে আর ঘরে যেয়ে কাঁদতে থাকে, কিছুক্ষণ পর ও ওর কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পাই ও পিছনে ফিরে দেখে ফারহান দাড়িয়ে আছে
—– আপনি! এখানে কেন এসছেন, আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি,প্লিজ চলে যান এখান থেকে।
—– মিতু, আমি জানি আমি অনেক বড় ভুল করেছি, কিন্তু প্লিজ তুমি এভাবে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না, আমায় মাফ করে দাও প্লিজ। আমি তোমাকে যতো টা কষ্ট দিয়েছি তার থেকে বেশি নিজে কষ্ট পেয়েছি কারণ আমি যে #আজও_ভালোবাসি তোমায়, প্লিজ আমায় ফিরিয়ে দিও না, আমি মরে যাবো তোমায় ছাড়া।
—— সেটা আগে ভাবা উচিত ছিলো, কই সেদিন তো একবারও আপনি আমার কথা শোনেন নি, এতোবার আপনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, শুনেছিলেন আমার কথা, উল্টে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেদিন কোথায় ছিলো আপনার ভালোবাসা যে অন্যের কথা বিশ্বাস করে নিজের ভালোবাসা কে অবিশ্বাস করেছিলেন।আর আজ আপনি সত্যি টা জানতে পেরেছেন বলে আবার আমার কাছে এসছেন, যদি আজও আপনি এটা না জানতেন তাহলে কিন্তু আজও আসতেন না, তাই প্লিজ আমাকে বুঝিয়ে কোন লাভ হবে না৷ আপনি এখন আসতে পারেন।
—— বেশ, চলে যাচ্ছি আমি। কিন্তু আমি আবার আসবো, দেখি তুমি কতোবার আমাকে ফিরিয়ে দাও।
এই বলে ফারহান ওখান থেকে চলে আসে আর মিতু এবার কাদতে থাকে।
সেদিনের মতো সবাই চলে আসে মিতুকে অনেক বুঝিয়ে ও কেউ রাজি করাতে পারেনি,তাই বাধ্য হয়ে চলে আসে।
কিন্তু ফারহান হাল ছেড়ে দেয় নি ও প্রতিদিন মিতুর কাছে আসে ওকে বোঝানোর চেষ্টা করে, মিতুর বাবা মা, আবির মালা সবাই মিতুকে বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু মিতু তার সিদ্ধান্তে অটল, সে কারো কথায় শুনছে না।
এভাবে আরো একমাস পার হয়ে যায়।
বিকালে মিতু অফিস থেকে ফিরছিলো তখন ফারহান ওর সামনে আসে। প্রতিদিনই ফারহানের এই বিরক্ত করা, আর আজ আবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে এরকম করছে এতে মিতু খুব রেগে যায় আর বলে
—— কি সমস্যা আপনার, আবার কেন এসেছেন
—— কি করবো বলো, তুমি ই তো বাধ্য করছো তোমাকে ডিসটার্ব করতে, আমার কথা মেনে নিয়ে যদি তুমি এতোদিন তুমি আমার সাথে চলে যেতে তাহলে তো আর আমাকে এতো কষ্ট করতে হতো না, অনেক তো হলো আর কতো ঘুরবো বল তো এবার প্লিজ চলো না জান, যতোদিন ঘুরছি, তুমি সব মেনে নিলে, এতোদিনে আমার মেয়ের জন্য ভাই নিয়ে আসার প্রিপারেশন শুরু করে দিতে পারতাম।
এ কথা শুনে মিতু আরো রেগে গিয়ে বলে
—— কে বলেছে আপনাকে আমার পিছনে ঘুরতে, কেন পড়ে আছেন আমার পিছনে, কেন বুঝতে পারছেন না আপনাকে জাস্ট সহ্য হচ্ছে না, আপনাকে দেখলে এখন নিজের প্রতিই ঘৃণা হয় আমার এটা ভেবে যে আপনার মতো একটা মানুষ কে আমি ভাললবেসেছিলাম, যে কিনা আমাকে বিশ্বাস ই করে না।
—— মিতু, আমি তো মানছি আমি ভুল করেছি, কিন্তু তারজন্য তোমার কাছে ক্ষমা ও চেয়েছি, আজ একটা মাস ধরে কুকুরের মতো তোমার পিছনে ঘুরছি, নিজের মেয়ে কেও এতো কাছে থাকতে ও তার পাশে ও তুমি আমাকল যেতে দিচ্ছো না, আর কতো শাস্তি দেবে আমায়।
——- আমি তো বলিনি আমার পিছনে ঘুরতে, আপনি নিজের মতো করে সুখে থাকুন না, কেন এতো কথা শোনার পর ও আমার কাছেই আসেন।
—— আমি তো..
—— আর কিচ্ছু শুনতে চায় না আমি, আজকের পর থেকে যদি আপনি আমার সামনে আসেন তাহলে, তাহলে আমি নিজেকে ই শেষ করে দেব।
—— মিতু!!!!!!
তারপর একটু থেমে আবার বললো
—– ওকে, বেশ। আমার জন্য যখন তোমার এতো অসুবিধা হয়, তখন আজ থেকে আমি আর কোনোদিন ও তোমাট সামনে আসবো না, আর সহ্য করা লাগবে না আমাকে, বাই ভ ভালো থেকো। আ আর আ আমার মেয়েকে দেখে রেখো।ওকে বলো ও যেন বড় হয়ে আমাকে ভুল না বোঝে, বলো ওর বাবা ওকে সত্যি অনেক ভালোবাসে, নিজের চেয়ে ও বেশি।আ আসছি, বাই।
তারপর ফারহান ওখান থেকে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো, আর মিতু ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে, ও বুঝতে পারছে না ফারহান এভাবে কেন বললো৷ কোথায় যাবে ও তাহলে ও কি আর কোনো দিনও সত্যি ই আসবে না?
তারপর মিতু নিজেকে সামলে নিয়ে বাড়ি তে চলে গেলো।
.
?
….
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here