আজও_ভালোবাসি_তোমায়❤
Part_6,7
Writer_মাহিয়া_মিতু
Part_6
?
?
এরই মধ্যে ফারহানের স্টাডি ও কমপ্লিট হয়ে গেছে। আর ও ওর বাবার কথামতো ওদের বিজনেস দেখা শোনা ও শুরু করে দিয়েছে।
কারণ ওর বাবা চায় ওর যেহেতু লেখা পড়া শেষ সো সবকিছু এবার ওকে বুঝিয়ে দিতে চায়।
আর ফারহান ও অমত করে নি, আজ না হোক কাল ওকে ই তো সব সামলাতে হবে, তাই আর দেরি করে কি লাভ।
আর তাছাড়া আর একটা কারণ ও আছে, ওর ধারণা ও যতো তাড়াতাড়ি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত আর যোগ্য করে তুলতে পারবে ততো তাড়াতাড়ি মিতুর
কথা ও বাড়ি জানাতে পারবে?।
আগে নিজে স্বাবলম্বী না হয়ে তো আর বিয়ের কথা বলা যায় না☺।
ফারহান এখন মন প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করার আর ও সফল ও হয়েছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে ও একজন সফল বিজনেস ম্যান হয়ে উঠেছে।
ছেলের এতো সুন্দর কাজের গতি দেখে ওর বাবা তো খুব খুশি।
এতো কাজের মধ্যে ফারহান মিতুকে তেমন সময় দিতে পারছে না, এর জন্য মিতুর একটু অভিমান হলে ও ওকে বুঝতে দেয় না। কারণ ও নিজেও চায় ওর জন্য যেন ফারহানের কাজের উপর কোনো ইফেক্ট না পড়ে।
এরমধ্যে একদিন ফারহান অফিস থেকে ফিরে রাতে ওর বাবা মায়ের সাথে ডিনার করতে বসেছে, তখন ওর বাবা বললো
——- ফারহান, তোমার সাথে জরুরি কিছু কথা ছিলো।
——– বলো, কি কথা।
——– এখানে না, খাওয়া শেষ করে আমার রুমে এসো।
——— ওকে।
তারপর ওর খাওয়া শেষ করে ওর বাবার রুমে যায়
——– আব্বু আসবো।
——– হ্যা, এসো।
——– বলো কি বলবে।
——– দেখ তুমি লেখাপড়া শেষ করেছো, এখন আমার বিজনেস দেখাশোনা করছো, সব কিছু ঠিক ভাবেই চলছে। তাই আমি আর তোমার মা চায়ছিলাম এবার তোমার বিয়েটা দিয়ে দিতে।
——- হ্যা বাবা, তোর বাবা ঠিক ই বলছে, তুই রাজি হয়ে যা।
ফারহান তো মনে মনে সেই খুশি কিন্তু বাবা মায়ের সামনে তো সাথে সাথে রাজি আছি একথা বলা যায় না, তাই ও বললো
—— আচ্ছা, তোমরা যা ভালো মনে হয় তাই করো।
বলে ও ঘরে চলে আসলো। ও খুব খুশি মনে মিতুকে ও ফোন করে সব বললো।
মিতুও খুব খুশি হয় ফারহানের কথা শুনে। কিন্তু ওদের এই খুশি বেশিক্ষণ থাকে না।
সকালে নাস্তা করার সময় ওর বাবা ওকে বলে
—— ফারহান, আজকে তোমার অফিস যেতে হবে না।
——– কেন, আব্বু।
——— আজ তোমার লতিফ আংকেলের বাসায় যাবো, তোমার আপুকে ও আসতে বলেছি।
—— কিন্তু আব্বু হঠাৎ করে লতিফ আংকেলের বাসায় যাবো কেন তাও আবার সবাই একসাথে।
——- হুম, কারণ আমরা ওখানে লতিফের মেয়ে টিনার সাথে তোমার বিয়ের কথা পাকা করতে যাবো।
——- ওয়াট!!!!!! কি বলছো বাবা তুমি এসব। হঠাৎ করে এসব তুমি আমার কাছে একবার শোনার প্রয়োজন মনে করলে না।
তখন ওর মা বলে উঠলো
——- আরে বাবা, তুই তো কাল রাতেই মত দিয়ে দিলি।
——– আর টিনাকে ও আমাদের পছন্দ তাই আমরা চায়ছি ওর সাথে তোমার বিয়ে টা হোক।
—— কিন্তু বাবা আমি
—— আরে তুই এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন বলতো, রাজি হয়ে যা না বাবা, মায়ের কথা টা রাখ।
——- আরে আ
আর কিছু বলার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো ওর আর মিতুর কথা বলা হলো না, তাই ও ওর ঘরে চলে গেলো।
ওর মা গিয়ে দরজা খুলে দেখে ওর বোন এসেছে।
ওর বোন ফারহানা ভিতরে এসে নিচে ফারহান কে না দেখে ওর ঘরে যায়, যেয়ে দেখে ও মন খারাপ করে বসে আছে।
তাই ও ভিতরে ঢুকে বললো
—– কিরে এমন মন খারাপ করে বসে আছিস কেন, বিয়ে ঠিক হতে চলছে, তোর তো খুশি হওয়ার কথা রে ভাই কিন্তু তা না তুই মন খারাপ করে বসে আছিস।
—— আপু, তুই এসেছিস ভালোই হলো আব্বু আম্মু এসব কি শুরু করেছে বল তো, আরে আমার মতামতের কোনো গুরুত্ব নেই নাকি। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে বিয়ে ঠিক করলেই হয়ে গেল!!!!
—— আরে আরে এতে কি তুই লজ্জা পাচ্ছিস না কি, ওলে বাবালে, থাক আর লজ্জা পেতে হবে ন?
—– আপু, আমি কিন্তু সিরিয়া
—— মানে!!!!
——?????
—— ফারহান, এই। তোর কি এই বিয়েতে মত নেই।
—— না।
—— না!!!! তাহলে তুই কি কাউকে পছন্দ করিস।
——- হ্যা,আপু। কিন্তু মা বাবা তো আমার কথা শুনতেই চাচ্ছে না, আপু তুই প্লিজ আব্বু আম্মু কে বুঝিয়ে বল। কারণ আমি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না, আমি ওকে ভিষণ ভালোবাসি।
——তুহ
—— এসব তুই কি বলছিস বাবা
ফারহানা কিছু বলার আগে পিছনে থেকে ওর মা বলে উঠলো।
—— মা, তুমি সবকিছু..
——- হ্যা, আমি তোদের সব কথায় শুনেছি ?
——- তাহলে তুমি প্লিজ আব্বু কে বুঝিয়ে বলো, প্লিজ। আমার পক্ষে ওকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।
——- ছোট বেলা থেকে তোদের কোনো ইচ্ছা আমরা অপূর্ণ রাখিনি তাই আজও জোর করবো না, তাই তুই যা চাস তাই হবে।
পিছনে থেকে কারো মুখে এ কথা শুনে ওরা পিছনে ফিরে দেখে ওর বাবা, ফারহান খুব অবাক হয় সাথে খুশিও হয়।
—– আব্বু তুমি!!!!
—— হ্যা বাবা আমি, তোর সব কথা শুনেছি, এবার বলতো মেয়েটি কে, আর কোথায় থাকে। আরে বিয়ের কথা বলতে হবে না!
—— আব্বু তুমি সত্যি বলছো ?
——- হুম, মাই সান। আমার ছেলে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি সেটা দেব না তা কি হতে পারে।
—থ্যাংক ইউ আব্বু।
তারপর ফারহান ওদের সবাই কে মিতুর সব কথা বলে, মিতুর ফ্যামেলি বাকগ্রাউন্ড শুনে ওর বাবার যদি ও তেমন একটা মত হয় নি মিডিলক্লাস ফ্যামেলি বলে। কিন্তু ছেলের কথা ভেবে আর কিছু বলেন নি।
ফারহানের বাবা সব কথা টিনার বাবাকে বলে, আর এটাও বলে যে উনি ছেলের অমতে কিছু করতে চান না, তার জন্য উনার কাছে ক্ষমা ও চেয়ে নেন।
টিনার বাবাও সব শুনে আর কিছু বলেন না, কারণ উনি ও চান না যে তার মেয়ে এমন কারো সাথে বিয়ে যে কোনোদিন হয়তো তার মেয়েকে ভালোই বাসতে পারবে না।
কিন্তু টিনা এটা কিছু তেই মেনে নিতে পারছে না, ও এবার আরো বড় প্ল্যান করে ওদের দুজন কে আলাদা করার।
টিনা পরদিন সকালে ফারহানদের অফিসে যায় ওর বাবার সাথে দেখা করতে, ও খুব সাবধানে ফারহানের বাবার কেবিনে যায়, কারণ ও চায় না ফারহান ওকে দেখে ফেলুক।
ও ওখানে যেয়ে
—– আসবো আংকেল।
——- আরে টিনা মামনি, এসো ভিতরে এসো।
—— কাল আপনাদের যাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু আপনারা তো যান নি তাই আমি ই এলাম আপনার সাথে দেখা করতে ?
——- আসলে মামনি আমি জানি তুমি ফারহান কে খুব ভালোবাসো, আমার ও তোমাকে বেশ পছন্দ, তোমার সাথে ওর বিয়ে টা হলে সবচেয়ে বেশি খুশি তো আমিই হতাম, কিন্তু ফারহান টা
——- আমি জানি আংকেল সবটা, আর আমি একটু ও কষ্ট পাই নি, আমি চায় ফারহান সুখে তাহলে আমি ও খুশি থাকবো। কিন্তু
—— কিন্তু কি মামনি।
——- আংকেল ফারহান ভুল করছে
—— মানে টা হলো, ফারহান নিশ্চয়ই আপনাকে বলেছে যে ওই মেয়েটা মিডিল ক্লাস ফ্যামেলির মেয়ে।
——- হ্যা, আর এজন্য তো আমার ও মত হচ্ছে না, কিন্তু কি করবো বলো।
——- সেটা সমস্যা নয় আংকেল কিন্তু
——- কিন্তু
——- আংকেল মেয়েটার চরিত্র ভালো না, ওর এরকম অনেকগুলো ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে, ও এভাবে বড়লোক ছেলেদের ফাঁসিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা লুট করে।
—— ওয়াট!!!
—— হ্যা আংকেল। আমি সত্যি বলছি, এএই দেখুন ওই মেয়েটার ছবি।
ছবিটা দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন মেয়েটা কেমন, এই যে ছেলেটা এ ও অনেক বড়লোক, আর এর কাছ থেকে ও টাজা পয়সা সব নিয়ে এবার ফারহানের পিছনে পড়েছে। আমি ফারহান পাই বা না পাই কিন্তু সত্যি তো এটাই যে আমি ওকে খুব ভালোবাসি তাই আমি চায় না ওর সাথে খারাপ কিছু হোক।
—— ছি ছি!! শেষে আমার ছেলে এরকম একটা মেয়ের ফাঁদে পড়লো। না, এই বিয়ে আমি কিছু তেই হতে দেবো না, আর তোমাকেও আমি কথা দিচ্ছি যে ফারহানের বিয়ে তোমার সাথে ই হবে এই মেয়েটার সাথে নয়।
টিনা তো একথা শুনে খুব খুশি। সবকিছু ওর পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে।
তারপর ও আবার বলে
—— কিন্তু আংকেল ফারহান কে এখুনি এসব কিছু বলবেন না, কারণ ওই মেয়ে ওকে এমন যাদু করে রেখেছে না, যে ও আপনার কোনো কথায় বিশ্বাস করবে না।
——- তাহলে কি করবো।
—— এমন কিছু করতে হবে যাতে ওই মেয়ে নিজেই ফারহানের জীবন থেকে চলে যায়। আর ফারহান ও ওই মেয়েকে ভুল বোঝে।
—— হুম, তুমি ঠিক বলেছো।
—— আচ্ছা আংকেল তাহলে আমি আজ আসি, আমাকে এখান থেকে আবার ভার্সিটি যেতে হবে।
—— আরে আমি৷ ও তো ওইদিকে যাবো, তাহলে চলো আমি তোমাকে ড্রপ করে দেয়।
—— ওকে চলুন?
তারপর টিনা উনার সাথে বেরিয়ে যায়। মাঝরাস্তায় জ্যামে ওরা আটকা পড়ে যায়। কিন্তু এই জ্যামের কারণে টিনার আইডিয়া যেন শতগুনে সফল হয়ে যায় কারণ হঠাৎ করে টিনার চোখ যায় রাস্তার ধারে যেখানে মিতু একটা ফুসকার দোখানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে সাথে একটা ছেলে, একে টিনা চেনে দিনার বয়ফ্রেন্ড। তার ওপাশে দিনা ও দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু তাতে কি ফারহানের বাবাতো আর দিনা কে চেনে না।
হঠাৎ করে হাঁটতে যেয়ে মিতু কিছুতে বেঁধে পড়ে যেতে নিলে ওই ছেলেটা ওকে ধরে নেয়, টিনা এই সুযোগ টা কে কাজ লাগায়, কারণ দূর থেকে মনে হচ্ছে ওরা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে।
টিনা ফারহানের বাবাকে ডেকে এই দৃশ্য দেখায়, ওর বাবা এটা দেখে তো টিনার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করে নেয়। আর এটাও ঠিক করে ফেলে যে কিছুতেই এই মেয়ের সাথে ফারহানের বিয়ে হতে দেবে না
.
.
চলবে…….
#আজও_ভালোবাসি_তোমায়❤
#Writer_মাহিয়া_মিতু
#Part_7
?
?
পরেরদিন সকালে ফারহান সবার সাথে বসে নাস্তা করছে, সেই সময় ওর বাবা ওকে বললো
—– ফারহান
—— হ্যা, আব্বু বলো।
——- তোমাকে আজই ইউ কে যেতে হবে।
——– আজকেই!!!!! কিন্তু আব্বু হঠাৎ করে
——- হুম হঠাৎ করেই কাজ পড়ে গেলো, তোমাকে ওখানে আর কে কোম্পানির সাথে একটা ডিল সাইনের জন্য যেতে হবে। ইউ নো যে এই টা আমাদের জন্য একটা বড় সুযোগ, এই ডিল টা যদি পেয়ে যায় তো প্রায় হাজার কোটি টাকা লাভ হবে। সো বুঝতে ই পারছো যাওয়া টা কতোটা জরুরি। তোমার পার্সপোর্ট ভিসা সবকিছু রেডি, রাত আটটায় তোমার ফ্লাইট।
——- ও ওকে আব্বু, আমি যাচ্ছি।
তারপর ও মিতুর সাথে ওর যাওয়ার কথা বলে, মিতুর একথা শুনে একটু মন খারাপ হয়েছিল যখন শুনলো ফারহানের ফিরতে এক সপ্তাহের বেশি লাগবে, কিন্তু ফারহান ওকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে সেদিন চলে যায়।।
আর তার পরেরদিন ই টিনার কথা অনুযায়ী ফারহানের বাবা মিতুদের বাড়িতে যায়, মিতু ওই সময় বাড়িতে ছিলো না, দিনার সাথে বাইরে গিয়েছিল।
ওর বাবা মিতুদের বাড়িতে পৌঁছে কলিং বেল বাজায়,বেলের শব্দ শুনে মিতুর মা এসে দরজা খুলে অপরিচিত কাউকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
—— কে আপনি, আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
——– বলছি, তার আগে বলুন, এটা কি আরমান সাহেবের বাড়ি।
——– হ্যা।
——– উনি কি বাসায় আছেন।
——- হ্যা, আছে। আপনি বসুন আমি ডেকে আনছি।
তারপর মিতুর মা যেয়ে ওর বাবাকে ডেকে আনলো।
মিতুর বাবা উনার সামনে আসতেই ফারহানের বাবা বললেন
——– তো, আপনিই আরমান সাহেব।
—— জি, কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
—— না, চেনার ই কথা। তা মিঃ আরমান আপনার মাসিক ইনকাম কত, জানতে পারি।
——- আমি আসলে কিছু বুঝতে পারছি না, আপনাকে আমি চিনি না জানি না, হঠাৎ করে এসে আমার মাসিক ইনকাম কত জানতে চায়ছেন যে।
——- অবশ্যই কোনো কারণ আছে, তাই জানতে চায়ছি, প্লিজ বলুন।
——- জি, চল্লিশ হাজার টাকা।
——- মাত্র চল্লিশ হাজার টাকা! এজন্য ই বুঝি মেয়েকে বড়লোক ছেলেদের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছেন বাড়তি টাকা হাতানোর জন্য।
——- তারমানে!!!!!!! কি বলতে চায়ছেন আপনি।
——- হুম, ঠিক ই তো বলছি।
——- না বলছেন না, কারণ আমার মেয়ে এরকম না, এই শিক্ষায় আমি আমার মেয়ে কে মানুষ করিনি।
——- হ্যা সে তো দেখতেই পাচ্ছি আপনার মেয়ে কও শিক্ষায় মানুষ হয়েছে, এজন্যই তো আমার সম্পত্তির লোভে পড়ে আমার ছেলের পিছনে পড়েছে। তা কতো টাকা হলে আপনার মেয়ের থেকে আমার ছেলেকে মুক্ত করতে পারবো বলুন। আপনি যতো টাকা চায়বেন আমি দিতে রাজি আছি।
—— বাজে কথা বলা বন্ধ করুন। আমরা আপনাদের মতো বড়লোক না হতে পারি কিন্তু লোভি নয়, আমাদের যা আছে তাতেই আমরা খুশি। আর আমার মেয়ে কখনো এরকম কাজ করতে ই পারে না।
——– ওকে, আমার কথা বিশ্বাস না হলে আপনি আপনার মেয়েকেই জিজ্ঞেস করুন যে সে আমার একমাত্র ছেলে ফারহান চৌধুরীর পিছনে পড়েছে কি না। আমি আজকে ভালোভাবে বলে গেলাম নিজের মেয়েকে সামলান, তা নাহলে এই ফারহাদ চৌধুরী কি করতে পারে দেখবেন।
তারপর ফারহানের বাবা ওখান থেকে চলে আসে।
আর মিতুর বাবা মা যেন অসড় হয়ে গেছে এসব শুনে, যে মেয়েকে ওরা এতো টা ভরসা করতো আজ তার জন্য এতো অপমান সহ্য করতে হলো, তবে মিতুর বাবা এখনো বিশ্বাস করে নি যে মিতু এসব করতে পারে।
সন্ধার দিকে মিতু বাড়ি ফিরে দেখে ওর বাবা মা দুজনেই ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
ও যেয়ে ওদের পাশে বসে, কিন্তু ওদের এভাবে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস
——– কি হয়েছে আব্বু, আম্মু তোমরা এভাবে মন খারাপ করে বসে আছো কেন।
মিতুর কথা শুনে ওর আম্মু রেগে গিয়ে বললো
——- তো আর কি করবো, তুই যা করেছিস তারজন্য তো আর কয়দিন পর মানুষের সামনে মুখ দেখাতেই পারবো না, ছি!!!!! তোকে আমরা এতো বিশ্বাস করি আর আজ তুই তার এই প্রতিদান দিলি?
——– মানে!!!!!!! আমি কি করেছি আম্মু।
——- হুহহহ, কি বাকি রেখেছিস সেটা বল, তোর জন্য লোকে বাড়ি বয়ে এসে এতোগুলো কথা শুনিয়ে গেলে,ছি! আমার ভাবতেই মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
——- আহহহহ, তুমি থামোতো, মিতু তোমাকে যা জিজ্ঞেস করবো সব ঠিক ঠিক উত্তর দেবে।
মিতু ওর বাবার কথা শুনে একটু ঘাবড়ে গেল কারণ ওর আব্বু তখনই ওর নাম ধরে ডাকে যখন ও বড় কোনো অপরাধ করে, তারপর ও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
——- বলো আব্বু, কি বলবে।
——- তুমি ফারহান নামে কাউকে চেনো।
মিতু ফারহানের নাম শুনে খুব ঘাবড়ে গেল যে ওর আব্বু কি করে জানলো।
ওকে চুপ করে থাকতে দেখে ওর মা বললো
——- কি রে চুপ করে আছিস কেন বল?
—— হ হ হ্যা, চ চ চিনি।
—— ওর সাথে তোমার কি সম্পর্ক
——- মিতু চুপ করে আছে
তা দেখে ওর মা ওর হাত টেনে নিজের মাথার উপর দিয়ে বললো
——- আমার মাথায় হাত দিয়ে বল কি সম্পর্ক তোর ওর সাথে।
আর যাই হোক মায়ের মাথায় হাত দিয়ে মিতু আর মিথ্যা বলতে পারলো না।তাই ভয়ে ভয়ে বললো
——– আ আ আমি ও ওকে ভ ভ ভালোবববাসি আম্মু।
বলার সাথে সাথে ওর মা ওর গালে ঠাসসসসস করে একটা চড় মারলো।
——– তোর ওই ভালোবাসার জন্য ওর বাবা আমাদের বাড়ি এসে যা নয় তা বলে অপমান করে গেছে, বলেছে আমরা নাকি টাকার জন্য তোকে এভাবে লেলিয়ে দিয়েছে, এতো কষ্ট করে তোকে আমরা মানুষ করেছি এইসব শোনার জন্য বল।
——- ফারহানের বাবা এসব বলে গেছে।
——- হ্যা।
মিতু আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে কিছু পড়ার শব্দ শুনে ও পিছনে ফিরে দেখে ওর বাবা বুকে হাত দিয়ে নিচে পড়ে গেছে। ও আর ওর মা খুব ভয় পেয়ে যায় তাড়াতাড়ি ওর বাবাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।
ডক্টর সবকিছু দেখে বলে
—— অতিরিক্ত মানসিক শকের কারণে উনার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।
একথা শুনে মিতু আর ওর মা খুব ভয় পেয়ে যায়
—— না না, আপাততো ভয় কেটে গেছে তবে সাবধান উনাকে যেন কোনো ভাবেই আর চিন্তায় ফেলবেন না তাহলে কিন্তু বড় কোনো দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
তারপর ওর বাবার জ্ঞান ফিরলে ওরা কবিনের ভিতর যায় ওর বাবার সাথে দেখা করতে, মিতু ওর বাবার পাশে যেয়ে বসে আর বলে
—— আব্বু বিশ্বাস করো আমি এমন কেনো কাজ করিনি যাতে তোমাকে এভাবে অপমানিত হতে হবে। তারপর ও কি থেকে কি হয়ে গেছে, তুমি আমাকে মাপ করে দাও আব্বু, আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি আর কোনো দিন ও ওর সাথে কথা বলবো না, ওর সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবো না, ? আজ থেকে ওর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ?, তুমি কারো কাছে ছোট হয়ে যাও এমন কোন কাজ করবো না,প্রমিজ।
তারপর ওর বাবা সুস্থ হয়ে গেলে ওরা বাড়ি চলে আসে। এভাবে সাত দিন পার হয়ে যায়, একয়দিনে মিতু ফারহানের সাথে কোনো যোগাযোগ করে নি, ফারহান ও মিতুর সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে ওর যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে, ও তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে আট দিনের দিন বাড়ি ফিরে আসে।
এদিকে মিতু ও ফারহানের সাথে কথা বলে ওর ও খুব কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু ওর বাবার জন্য চায়লেও যোগাযোগ করতে পারছে না, আর ওর বাবার তো সত্যি ই কোনো দোষ নেই, ফারহানের বাবা যদি ওর বাবাকে এভাবে অপমান না করতো তাহলে তো এসব কিছু ই হতো না, আর ওর বাবা ও সুস্থ থাকতো। এটা ভেবে আবার মিতুর ফারহানের উপর ভিষণ রাগ ও হচ্ছে, তাই ও ঠিক করে নেই ওর যতই কষ্ট হোক ও আর ফারহানের সাথে কোন রকম যোগাযোগ করবে না।
কিন্তু যতই বলুক, মন তো আর মুখের কথা শোনে না। তাই মিতু ও সব সময় মন খারাপ করে থাকে, ও যেন এইকয়দিনে হাসতেই ভুলে গেছে।
এদিকে ফারহান দেশে ফিরে আগে বাড়ি না যেয়ে মিতুর খোঁজে যায়, মিতু তো ফোন ধরছে না, তাই ও বাড়ি নাকি ভার্সিটি সেটাও তো ও জানে না, তাই ও প্রথমে ভার্সিটিতে যায় ওকে খুজতে।
ফারহান সেখানে যেয়ে মিতুর ক্লাস রুম, ক্যামপাস সব জায়গায় খোজ করে কিন্তু পাই না, তখনই ওদিনা কে দেখতে পাই একা একা ভার্সটি থেকে বের হচ্ছে।
ফারহান দৌড়ে ওর কাছে যায়, ওকে এভাবে আসতে দেখে দিনা খুব অবাক হয়।
ফারহান যেয়েই ওকে জিজ্ঞেস করে
——- দিনা তুমি একা কেন, মিতু কোথায়। আমি আজ সাত দিন ধরে ওকে ফোন করছি ও আমার ফোন ধরছেই না।
——– এতোকিছুর পরেও ও আপনার ফোন রিসিভ করবে এটা আপনি কি করে ভাবছেন ভাইয়া (আসলে দিনা সবকিছু জানে ওদের কথা, সেদিনা যা হয়েছিল)
——- তারমানে!!! কি বলছো তুমি এসব, আমি তো কিছু ই বুঝতে পারছি না।
—— আপনি সত্যি ই কিছু জানেন না।
——– নারে বাবা, আমি তো আজই ফিরলাম আর এসেই এখানে এলাম মিতুর খোঁজে।
ফারহানের কথা শুনে দিনা ওকে সব বললো যে সেদিন কি কি হয়েছিল আর ওর বাবার এসব অপমানের জন্য মিতুর বাবা ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে সেটাও বললো।
সব শুনে ফারহান যেন খুব বড় শক খেলো, ও ভাবতে পারছে না ওর বাবা এসব, ছি! তাহলে সেদিন উনার কথাগুলো সব মিথ্যা ছিলো, ও আর ভাবতে পারছে না, ও তাড়াতাড়ি ওখান থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা মিতুদের বাড়িতে আসলো, এসে ওকে ডাকতে শুরু করলো।
ফারহানের কথা শুনে মিতু ওর ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো সাথে ওরআবাবা মা ও।
ফারহান কে দেখে ওর বাবা বললো
——- তুমি ই ফারহান।
——- জি আংকেল।
——– তা এখানে কি চায়, এতোকিছুর পরেও।
——- আংকেল আমি জানি না আমার বাবা আপনাকে এসব কেন বললো, আমার বাবা তো আমাদের দুজনের বিয়ের কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ করে কি এমন হলো বুঝতে পারছি না। কিন্তু আমার বাবা মা মানুক আর না মানুক আমি মিতুকে হারাতে পারবো না, প্লিজ আংকেল আমার বাবার হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চায়ছি, তবু্ও মিতুকে আমার কাছ থেকে আলাদা করবেন না প্লিজ।
——–সরি, এটা সম্ভব নয়, তুমি চলে যাও এখান থেকে।
——আংকেল প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না। আমার বাবা মা যদি ওকে মেনে না ও নেয় তবে ওকে নিয়ে আমি আলাদা হয়ে থাকবো, বিশ্বাস করুন কোনো কষ্ট পেতে দেবো না ওকে।
——- কিন্তু আমি চায় না তুমি আমার মেয়ের কারণে তোমার পরিবার থেকে আলাদা হও। তারচেয়ে ভালো তুমি ওকে ভুলে যাও।
——- ভুলে যাবো!!! এটা বলা যতোটা সহজ ভুলে যাওয়া টা এতোটা সহজ নয়। আমি তো মিতুর কাছ থেকে শুনেছিলাম যে আন্টি কে ও আপনি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন, আর উনার বাবা মা রাজি ছিলো না বলে আপনারা পালিয়ে এসেছিলেন, আমরা তো সেরকম কিছু করছি না, আমরা তো আপনাদের অনুমতি নিয়ে আমাদের নতুন জীবন শুরু করতে চায়ছি।
আপনি আজ নিজেকে একজন বাবা নয়, যে অবস্থানে থেকে আপনি আন্টি কে নিয়ে পালিয়ে এসছিলেন আজ আবার নিজেকে সেখানে দাড় করিয়ে বলুন তো আমরা কি ভুল করছি।
ফারহানের এ কথা শোনার পর মিতুর বাবা কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না, সত্যি ই তো সেদিন মহিনী কে পাওয়ার জন্য কোন কিছু না ভেবেই পালিয়ে এসেছিলো, আর মহিনী ও নিজের পরিবার ছেড়ে শুধু মাত্র ভালোবাসার জন্য ওর হাত ধরে চলে এসেছিলে।
ওরা ও জানে যে ভালোবাসার জন্য কোন বাধা মানে না, তাহলে আজ কিভাবে ওরা তাদের মেয়ের ভালোবাসার মাঝে বাধা হয়ে দাড়াবে। কিসের জন্য শুধু মাত্র আত্নসম্মানের জন্য, নিজের মেয়ের ভালোবাসার চেয়ে নিজের সম্মান আজ তার কাছে বড় হয়ে গেলো। অথচ, একদিন সে নিজেই অন্য এক বাবার সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে তার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে এসেছিলো। তাহলে আজ কেন সে তার মেয়ের ভালোবাসা মেনে নিতে পারছে না। তাছাড়া তার মেয়ে তো তার বিরুদ্ধে কিছু ই করে নি বরং তার অনুমতি চায়ছে, কি করা উচিৎ তার সে ভেবে পাচ্ছে না।
ঘরের এককোণে নিরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর চোখের পানি ফেলছে মিতু, তার ও যে কিছু বলার নেই, একদিকে নিজের ভালোবাসা অন্য দিকে বাবার সম্মান, কোনটা বাঁচাবে সে।
পুরো ঘর জুড়ে নিরাবতা বয়ছে কারো মুখে কোন হাসি নেই, আছে শুধু ই শোকের আভাস।
সব নিরাবতা ভেঙে ফারহানের দিকে তাকিয়ে মিতুই কথা বলে উঠলো…….
.
.
.
চলবে……