#আজল,পর্ব-১০,১১
Farhana_Yesmin
#পর্ব-দশ
২৩.
“তুমি হয়তো ভাবছো এসব কথা তোমাকে কেন বলছি? তাই না?”
তানভীর মাথা নাড়ল।
“কারন তো অবশ্যই আছে। এই পৃথিবীতে কোন কিছুই কারন ছাড়া ঘটে না, জানো তো? তো যা বলছিলাম…. আমি আসলে ফ্যামিলির দ্বায়িত্ব পালন করতে করতে বুঝতেই পারিনি যে আমার আসল ফ্যামিলি যারা আমার…. শুধুমাত্র আমার দ্বায়িত্ব তাদেরকেই অবহেলা করেছি সারাজীবন ভর। অবশ্য না বোঝার যথেষ্ট কারনও ছিল…. তোমার শাশুড়ি মা আমাকে কোনোদিনও কোনো ব্যাপারেই কোনো অভিযোগ দেননি কখনো। ছেলেমেয়েরাও কখনো বলেনি যে, বাবা তোমার এই কাজটা পচ্ছন্দ হচ্ছে না…বা বাবা আমি এই কাজটা করতে চাই। অথবা এমন হয়েছে হয়তো যে, ওরা বলতে চেয়েছে…. ওদের মা ওদের বলতে দেয়নি….কিংবা প্রচন্ড অভিমান ওদের বাঁধা দিয়েছে?? আর ওরা যদি কিছু বলতোও আমার মনে হয়না সেই সময় আমি ওদের কথা কখনো আমলে নিতাম। কারন ততদিনে আমি আমার সংসারে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছি। কারো কোনো কথা কখনো শুনিনি আর তখনো শুনতাম বলে মনে হয় না। ফুয়াদ সারাজীবন আমি যেভাবে বলেছি সেভাবেই ওর জীবন চালিয়েছে…. পড়ালেখা করেছে, চাকরি করছে… এর পাশাপাশি হয়তো আরো কিছু করে। আর মেয়েটা প্রচন্ড মেধাবী হওয়া সত্বেও তাকে আমি সবার অমতে তোমার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। মেয়ের বিয়ের সময়ই প্রথম তোমার শাশুড়ি মা আমার মতের বিরুদ্ধে কিছু বলার চেষ্টা করেছিলেন, সাথে ফুয়াদ তো ছিলোই। আমি কারো মতের তোয়াক্কা না করেই প্রিয়র দ্বায়িত্ব তোমায় দিয়েছিলাম। মনে করেছিলাম তুমি আমার মেয়েকে স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে। এখন আমি তোমায় জিজ্ঞেস করছি- তুমি কি আমার বিশ্বাসের মান রাখতে পেরেছো?”
তানভীরের দিকে প্রশ্ন ছুরে দিয়ে থামলেন আজমল সাহেব। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দেখছেন তানভীর কে। তানভীর সেই দৃষ্টির সামনে অস্বস্তি বোধ করলো।
“আসলে বাবা, আমি বুঝতে পারছি না কি হয়েছে? প্রিয় কি কিছু বলেছে? আমি তো নিজের দ্বায়িত্ব ঠিক ভাবেই পালন…. ”
শেষ করতে পারলো না তানভীর, তার আগেই ওকে থামিয়ে দিলো আজমল সাহেব।
” তোমার কি ধারনা? প্রিয়তা এসব বলতে পারে আমাকে? নিজের স্ত্রীকে এই চেনো তুমি? আমি ভেবেছিলাম তোমার সৎসাহস আছে! সেই গাটস আছে যা তুমি সত্য বলায় ব্যবহার করো। কিন্তু আমি ভুল। আসলে কি বলোতো…. টাকা থাকলেই মানুষ ধরাকে সরা জ্ঞান করে… ভাবে যে, সে যা খুশি তাই করতে পাড়ে। কিন্তু আসলে কি তাই…. ”
শশুরের কথা বলার টোনে তানভীর এবার ঘামতে শুরু করলো। লোকটা এতো স্ট্রং ভয়েজে কথা বলছে যে, তানভীরের মনে হচ্ছে ওর ভিতর টাও দেখে নিচ্ছে আজমল সাহেব, মগজের চিন্তাগুলোও পরে ফেলছে সব!!! তানভীরের সব কথা গুলিয়ে গেলো।
” আমি তোমার লাস্ট কয়েকটা বিজনেস ট্রিপের খবর নিয়েছি….দুর্ভাগ্যজনক হলো সেরকম ভালো বলার মতো কিছু পাইনি। তুমি যদি ভেবে থাকো যে মেয়ে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি তাই ঝাড়া হাত পা হয়ে কারো কোনো খবর রাখবো না তাহলে ভুল ভাবছো!!..মেয়েকে যেমন নিজের ইচ্ছায় তোমার সাথে বিয়ে দিয়েছি তেমনি সেরকম মনে হলে তাকে ফিরিয়ে নিতে দ্বিধা করবো না….”
তানভীরের মুখটা এই মুহূর্তে প্রচন্ড হাস্যকর দেখাচ্ছে। ফ্যাকাসে রক্তশুন্য মুখ… মুখোশ উন্মোচন হলে যেমনটা হয় আর কি….
” তুমি এতদিন প্রিয়র সাথে কি করেছো, স্বামী বা বাবার দায়িত্ব পালন করেছো কি না এসব কথা আর তুলছি না। এখন তুমি কি করবে সেটাই আমি দেখবো। আমি তোমাকে ছয়মাস টাইম দিলাম… এই ছয়মাসে তুমি আমার মেয়ের মনে তোমার জন্য জায়গা তৈরী করবে… উহু ভয় দেখিয়ে না.. ভালবাসা দিয়ে…৷ যেন তোমার কথা মনে হলেই তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে…সে হাসিটা অবশ্যই যেন সুখের হাসি, ভালোবাসা, বিশ্বাস আর নির্ভরতার হাসি হয়।”
তানভীর এর মুখে কোনো কথাই ফুটছে না… এতো বড় বিজনেসম্যান…. আজ এই লোকটাকে ভয় পাচ্ছে একটু একটু। বাবা মারা গেছে সেই কবে? ভাইয়েরা সবাই নিজের নিজের সংসার নিয়ে ব্যাস্ত। আর মা বরাবরাই ওকে একটু বেশি আদর করতো তাই শাসন সেভাবে পায়নি তানভীর। আর এখন তার শশুর মশাই তাকে রীতিমতো ভদ্র ভাষায় শাসন করে যাচ্ছে! রাগ ওঠার কথা তানভীরের কিন্তু তার বদলে ওর ভয় লাগছে একটু একটু। শশুরের কনফিডেন্স লেবেল ওর মনে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। সত্যি সত্যি কি লোকটা ওর বিজনেস ট্রিপ এর খবর জানে? লোকটা আবার মাকে কিছু জানিয়ে দেবে নাতে? যত যাই হোক মা আবার প্রিয়কে খুব ভালোবাসে। প্রিয়র সাথে ও এরকম করে শুনলে খুব কষ্ট পাবে মা!
” এবং তোমার আমার মধ্যকার এই কথাবার্তা যেন সে ঘুনাক্ষরেও টের না পায়। মনে কর তোমাকে নতুন করে জীবন গড়ার সুযোগ দিচ্ছি। সেই সুযোগটা তুমি কিভাবে কাজে লাগাবে নাকি কাজে লাগাবে না সেটা একান্তই তোমার ব্যাপার। মাত্র ছয় মাস…. এই ছয়মাসে নিজের বউ বাচ্চাকে কিভাবে নিজের করে নেবে সেটাই চিন্তা করো…. তা না হলে… একদিন আফসোস করতে হবে।”
উঠে দাড়ালেন আজমল সাহেব। এসে তানভীরের কাছে দাড়ালেন…কাঁধে হাত রেখে বললেন
” ইয়াংম্যান! আমার কথাগুলো নেগেটিভলি না নিয়ে পজিটিভলি নাও…আশাকরি ভালো হবে… তা না হলে একদিন আমার মতো পস্তাতে হবে, বুঝলে?”
বলেই সেখানে আর দাড়ালেন না আজমল সাহেব। দ্রুত বের হয়ে এলেন রেস্টুরেন্ট থেকে। সাহস নিয়ে পুরো অনুমানের ভিত্তিতে ঢিল ছুড়েছিলেন তানভীরের দিকে। ঢিলটা জায়গা মতো লেগে গেছে বলে মনেমনে একটু হাসলেন আজমল সাহেব। তার ষাট বছর জীবনের মানুষ চেনার অভিজ্ঞতা এবার আসল কাজে লাগলো, মনেহয়!!! তানভীর যে রকম ছেলে তাতে আজকের ডোসটাই পারফেক্ট, আর কিছু করার দরকার হবে বলে মনে হয় না? মেয়ের জীবনে যদি সুখটা ফেরত আসে তাহলে আর কি চাই জীবনে??? সারাজীবন বাচ্চাদের জন্য ওদের মনের মতো কিছু করতে পারেননি, এখন তার এইটুকু প্রচেস্টা যদি ওদের জীবনে ভালো কিছু সুখের মুহুর্ত এনে দেয় তাহলে উনি মরেও শান্তি পাবেন। এটা ভাবতেই মনটা ফুরফুরা হয়ে গেল আজমল সাহেবের। তিনি খুশি মনে গাড়িতে না উঠে ফুটপাত ধরে হাঁটতে শুরু করলেন।
২৪.
★
মনের মধ্যে যতনে রেখেছি এক কুঠুরি আজল
সেই আজলে লুকিয়ে আছে দুঃখ আমার সকল।★
আজ তিনদিন ধরে সচির মাথায় ঘুরছে লাইন দুটো। শয়নে, স্বপনে, জাগরণে সব সময় এই দুটো লাইন নিয়েই ভেবে যাচ্ছে। তিনদিন সময় দিয়েছিল ফুয়াদ। এরমধ্যে উওর বলতে না পারলে ফুয়াদের গোপন কথা জানা তো হবেই না সেই সাথে বেড়ানোর সুযোগটাও হাত থেকে যাবো-এটা ভাবতেই মাথার চুলগুলো সব টেনে ছিড়তে ইচ্ছা করছে সাঁচির। তিনদিনের আজ শেষ দিন। কি করা যায়…কি করা যায়… ভাবতে ভাবতেই ছোট বোনের কথা মনে পড়লো। ওকে একবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলেই তো হয়….ওর সামনে ভার্সিটি এ্যাডমিশন এক্সাম… পড়ালেখার মধ্যে আছে….ওর আবার রহস্য ভেদের আগ্রহ অনেক…একবার ট্রাই করে দেখা যাক… ট্রাই করতে দোষ কোথায়? সাঁচি ফোন দিলো ছোট বোন প্রাচিকে-
“হ্যালো!প্রাচী, কোথায় রে তুই?”
“আপ্পি, কেমন আছিস? এতদিন পর বোনকে মনে পড়লো?? বাসাতেও তো আসিস না অনেকদিন? তুই কি রে? বর পেয়ে আমাদের এইভাবে ভুলে গেলি?”
“আস্তে… মেরি মা আস্তে…তোর সব অভিযোগ পরে শুনবো… আগে তুই আমাকে একটু হেল্প কর। একটা প্রবলেমে ফেসে গেছি..”
“হুম, তাইতো বলি… আপ্পি.. আজ কেন ফোন করেছে…”
“এই রাখলাম…যা তোর হেল্প লাগবে না… দুষ্টু মেয়ে…”
“ওহ, আপ্পি! একটু দুষ্টুমিও করতে দেবে না নাকি…আচ্ছা বলো কি বলবে?”
“তোকে একটা ধাঁধা বলবো তুই আমাকে এর উত্তর টা বলবি…. একঘন্টা সময়….”
“এতোক্ষণ লাগবে না… বলোতো তুমি কি ধাঁধা। ”
“উম্মাহ! আমার বোনটা… তোকে এত্তগুলা ভালোবাসা… আচ্ছা লিখে নে…..”
প্রাচিকে বলতে পেড়ে খুব নিশ্চিত হলো সাঁচি। ও জানে প্রাচি ঠিক বের করে ফেলবে উত্তর। বড়ো একটা শ্বাস নিয়ে হাত দুটো ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। উফ! এই দুটে দিন খামোখাই নিজে টেনশন নিয়েছে… আগেই যে কেন প্রাচির কথা মনে আসেনি? যাক বাবা…. তাও ভালো…. সময় থাকতেই মনে এসেছে!!! ফুয়াদ বাবু!এখন কি করবে তুমি…. হানিমুনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নাও…মনে মনে বলতে বলতে একা একাই হাসছে সাঁচি।
অফিসে আজ কাজের চাপ একটু কম ছিলো। ফুয়াদ ভাবলো আজ অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবে। অনেকদিন কারো সাথে দেখা হয়না। সেই যে বিয়েতে দেখা হলো তারপর আর কারোরই কোনো খবর নাই। দেখি ওদের কে ফোন দিয়ে… কি অবস্থা সবার…ভাবতে ভাবতে ফোনটা হাতে নিতে না নিতেই ফোন বেজে উঠলো….সাঁচির ফোন!! ও তো কখনো এই সময় ফোন দেয় না…. তাহলে কি ও জবাবটা পেয়ে গেছে?
“হ্যালো”
“কোথায় আপনি?বাসায় কখন আসবেন?”
“এই তো অফিসে… কেন? কি দরকার? ”
“আরে!আমরা বেড়াতে যাবো না….কোথায় যাবো…কখন যাবো… এগুলো ঠিক করতে হবে না?তাড়াতাড়ি চলে আসেন না আজ!!!”
“আচ্ছা! ঠিক আছে আসছি। ”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন কাটলো ফুয়াদ। বিয়ে করলে আসলেই জীবনটা আবদ্ধ হয়ে যায়… শুধু মেয়েদের না ছেলেদেরও….ভাবলো ফুয়াদ।
বাসায় ঢুকতেই রান্নার সুঘ্রাণ পেলো ফুয়াদ। নিশ্চয়ই আজ পোলাও হচ্ছে… ড্রইংরুমে দেখলো প্রিয়, বাবা, মা বসে আছে…প্রিতি আর সাঁচি দুজনে খেলছে…
“ভাই, এসেছিস?”
“তুই হঠাৎ এলি যে?”
প্রিতিকে কোলে নিয়ে আদর দিলো ফুয়াদ। প্রিতিও মামাকে পাল্টা আদর দিলো।
“আর বলিস না…ভাবি জোর করলো খুব…তোরা নাকি হানিমুনে যাচ্ছিস? সে উপলক্ষে ভাবি আজ রান্না করেছে নিজ হাতে…সবাই মিলে একসাথে খাব…”
শুনে কাশি উঠে গেল ফুয়াদের। এই মেয়ে তো আচ্ছা ত্যাদর… বেহায়া মেয়ে…উনি হানিমুনে যাবেন তাই ঢোল পিটিয়ে সবাই কে জানাচ্ছে…. আজব???
সাঁচি গ্লাসে পানি এনে দিলো….হাত বাড়িয়ে পানি নিলো…
“ভাই যা তো তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে… আমি আবার খেয়েই বেড়িয়ে যাবো.. এক্সাম চলছে তো আমার…” প্রিয়তা বললো।
ফুয়াদ মাথা নেড়ে উঠে এলো নিজ রুমে….আনমনে রুমে ঢুকতেই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো সাঁচি….চমকে উঠে ফুয়াদ বললো-
“কে?”
“আপনার বউ গো? আর কে হবে?”
সাঁচির হাতটা ছাড়াতে চেষ্টা করলো ফুয়াদ-
“কি হচ্ছে এসব? গেট খোলা তো…বাবা মা দেখতে পাবে তো?”
” দড়জা বন্ধ, আপনার টেনশনের কোনো কারন নেই?”
পিঠে মুখ রেখে বললো সাঁচি।
“তোমার আজকাল সাহস বেড়েছে দেখছি! ছাড়ো তো দেখি…কেন ধরেছো আমাকে….”
পিছন থেকে একটা চিরকুট বাড়িয়ে দিলো সাঁচি
” আমি শ্রীমঙ্গল যেতে চাই…চা বাগানের বাংলোয় বসে গভীর রাতে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শুনবো… তারপর সমুদ্র দেখবো….কক্সবাজারে…”
ফিসফিসিয়ে বললো সাঁচি।
“উহ! সাঁচি, ছাড়ো আমাকে….”
জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো ফুয়াদ। চিরকুটে চোখ বুলিয়ে দেখলো সেখানে ওর জানতে চাওয়া ধাঁধার উওরটা গোটাগোটা অক্ষরে লেখা।
“শর্ত অনুযায়ী তুমি যেখানে যেতে চাও নিয়ে যাব। বাট প্লিজ যখন তখন এভাবে জড়িয়ে ধরবে না…আমি চাই না কোনোভাবেই তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে…. বাট তুমি…তুমি বারবার সেই সুযোগটাই নিচ্ছো।”
সাঁচির খুব… খুব লজ্জা লাগলো ফুয়াদের কথা শুনে…ও তারাতাড়ি ফুয়াদ কে ছেড়ে দিলো…চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো একটা কথাও না বলে…আসলেই তো…ও মনেহয় একটু বেশিই করে ফেলেছে…সবসময় কি জোর চলে…এই প্রথম ফুয়াদ কে রেগে যেতে দেখলো ও…
“প্লিজ,ডোন্ট ক্রস ইয়োর লিমিট…সবসময় ভালো লাগে না…বিয়ে করেছি বলেই কি সবসময় এমন করতে হবে? যত্তোসব…”
ফুয়াদের হঠাৎই রাগ উঠে গেল..কেন ও নিজেও যানে না?
ফুয়াদের শেষের কতাগুলো শুনে অপমানে লাল হয়ে গেল সাঁচি…কষ্ট পেল খুব…কান্না চলে আসলো…এই প্রথম ফুয়াদের রুদ্র রুপ দেখলো…চোখদুটো জলে ভরে গেলো আপনাতেই…টুপটুপ করে চোখ থেকে পানি পড়ছে….দু দিন না হয় জোর করে কিসি দিয়েছি আর আজ খুশির চোটে একটু না হয় জড়িয়ে ধরেছি সব ভুলে… তাই বলে এভাবে কথা শোনাবে…কান্নার বেগ বাড়ছে সাঁচির। ও চায়না ফুয়াদ ওর কান্না দেখে ওকে আরো কয়েকটা কথা শোনাক…তাই ও দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।
ফুয়াদের হঠাৎ হুঁশ হলো-হায় হায় কি করলো এটা! সাঁচির সাথে এতো রুডলি কথা বললো….কি করলো এটা…মেয়েটা মনেহয় কাঁদছে?কেন জানেনা আজ প্রচন্ড রাগ উঠে গেল….নিজেকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। সাঁচির কাছে নিজের বন্ধ ডায়েরির পাতাগুলো মেলে দিতে হবে বলেই কি এতো রাগ!!!
এখন নিজের উপরই রাগ লাগছে ফুয়াদের। সে হাতে থাকা চিরকুট টা দুমড়ে মুচড়ে সজোরে ছুরে ফেললো ঘরের কোনে….
চলবে—-
Farhana_Yesmin
#আজল
#পর্ব-এগারো
২৫.
দুদিন হলো শ্রীমঙ্গল এসেছে ফুয়াদ আর সাঁচি। সাঁচিকে ও কথা দিয়েছিল যে চা বাগান ঘোরাবে। সেই কথা রাখতেই সাঁচিকে নিয়ে শ্রীমঙ্গল এসেছে। ফুয়াদের এক বন্ধুর বাবা চা বাগানের মালিক। ফুয়াদ ঐ আংকেলকে বলে চা বাগানে তিনদিন থাকার জন্য অনুমতি নিয়ে নিয়েছে। সাঁচি অবশ্য এতে খুশি কিনা বোঝা যাচ্ছে না। সেই দিনের পর থেকে সাঁচি কেমন যেন হয়ে গেছে। সব সময় চুপচাপ থাকে, মুখে যেন একটা গাম্ভীর্যের মুখোশ এটে নিয়েছে…হাসে না একদমই। ফুয়াদের সাথে আগের মতো কথাও বলে না। শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কথাটা বলে.. তাও মনেহয় যেন জোর করে বলছে। ফুয়াদ দু এক বার ওকে সরি বলতে চেয়েছে… কিন্তু কি কারনে যেন বলতে যেয়েও বলতে পারেনি। আর তাছাড়া ফুয়াদ কিছু বলতে গেলে সাঁচি আর আগের মতো আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে না… বরং ওর কথা না শুনেই হেটে চলে যায়। সাঁচির এই চেন্জটা ফুয়াদের ভালো লাগছে না…আবার নিজে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছে না। খুবই অসস্তিকর অবস্থা… দুজন মানুষ একসাথে খাচ্ছে, ঘুরছে, পাশাপাশি ঘুমাচ্ছে কিন্তু কেউ কারো সাথে প্রয়োজনের বাইরে কোনো কথা বলছে না…ব্যাপারটা মোটেও সুখকর না! ফুয়াদ মাঝে মাঝেই দুর থেকে সাঁচির দিকে তাকিয়ে থাকে…বোঝার চেষ্টা করে ওর মনে কি চলছে? কিন্তু সাঁচি যেন আজকাল অচেনা বইয়ের পাতা। ওর মুখে কেমন এক ধরনের কঠোরতা চলে এসেছে, কি অদ্ভুত নির্লিপ্ততা ওর চোখে মুখে…ফুয়াদ বোঝে, সেদিনের কথাগুলো সাঁচির আত্মসম্মানে আঘাত হেনেছে…ও আর এতো সহজে ফুয়াদের সাথে সহজ হবে না হয়তে???
এই দুদিনে ওরা আশপাশের বেশ কয়েকটা জায়গা ঘুরে ফেলেছে। চিড়িয়াখানা, মাধবপুর লেক আর আজ গেছিলো লাউয়াছড়া উদ্যানে। ওখান থেকে তাড়াতাড়িই ফিরে আসতে হলো আজ বৃষ্টির কারনে। বৃষ্টিতে ভিজতেই সাঁচির হাঁচি আর কাশি শুরু হলো। সাঁচি অবশ্য কিছু বলছিলো না, ফুয়াদ ই জোর করে সাঁচিকে নিয়ে ফিরে আসলো বাধ্য হয়ে। যেভাবে ও হাঁচি দিচ্ছিলো ফুয়াদ ভয় পেয়ে গেলো। সাঁচি অবশ্য ওকে অভয় দিচ্ছিলো, কিছু হবে না বলে. . . ফুয়াদ শুনলো না। ফেরার পথে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে এক রেস্টুরেন্টে লান্চও করে নিয়েছে ওরা। ফুয়াদ খেয়াল করেছিলো সাঁচি কিছু না খেয়ে কেবল খাবার নাড়ছিলো। ও হাবিজাবি কিছু খাবার প্যাক করে নিলো সাঁচির জন্য।
ওদের এই চা বাগান থেকে সব গুলো ঘোরার স্পটই দুরে হয়ে যাচ্ছে। একদিনে একজায়গায় গেলে আর অন্য কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। তবে বাগানের মধ্যেই বেশ ভালো লাগে…বিশাল বড় বাগান, মাঝখানে এই বাংলো…বাংলোটার চারদিকেই বারান্দা…. যে কোন দিকে বসেই বাগান দেখা যায়… বেশ ইউনিক ডিজাইনে তৈরি। ঘোরার সময় বাদে বাকি সময় প্রায় পুরোটাই সাঁচি বাগানে কাটায়। দিনের বেলা হলে ঘুরে ঘুরে মালিদের কাজ দেখে, গল্প করে আর রাত হলে মগ ভর্তি চা নিয়ে বাংলোর বারান্দায় বসে থাকে অনেক রাত অবধি। ফুয়াদ না ডাকলে সে ঘরে ঢোকে না, ঠায় ওভাবেই বসে থাকে বারান্দা অন্ধকার করে। গতকাল মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেছিলো ফুয়াদের…দেখে খাটে পাশের জায়গাটা ফাঁকা। খুজতে খুজতে বারান্দায় এসে দেখে সাঁচি চুপচাপ বসে আছে বারান্দায়। আশ্চর্য মেয়েটা! এতো রাতে ভয় করে না ওর? আর তাছারা একা একা কথা না বলে এতোক্ষণ একটা মানুষ কিভাবে থাকে? ফুয়াদ ভাবে। এই সাঁচিকে ফুয়াদের ভীষণ অচেনা লাগে।
আজ ফিরতে ফিরতে সন্ধা লেগে গেল প্রায়। বাংলোয় ফিরে এসে কাপড় চেন্জ করেই বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে গেল ফুয়াদ। খুব টায়ার্ড লাগছিল ওর। সাঁচি একবার ওর দিকে তাকিয়ে নিজের জামাকাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো। আজকাল আর শাড়ি পড়ে না সাঁচি। কি হবে শাড়ি পড়ে? কে দেখবে ওকে? দরকার নেই কোন শাড়ি পড়ার-নিজের মনেই কথা বলে সাঁচি। গোসল করে সুন্দর ফুলেল কাজের এ্যাশ কালারের একটা থ্রিপিছ পড়ে বাথরুম থেকে বের হলো সাঁচি। ওদেরকে দেখা মাত্রই বাগানের কেয়ারটেকার টা পট ভর্তি করে চা বানিয়ে দিয়ে গেছে…সেই সাথে বলে গেছে আজ রাতে খিচুড়ি আর সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস কসানো খাওয়াবে। সাঁচি এক মগ ভর্তি করে চা নিয়ে বারান্দার বসলো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে….বাগানের শ্রমিকগুলো সব সারিবদ্ধভাবে বেড়িয়ে যাচ্ছে। এই বারান্দায় বসে দৃশ্যটা দেখতে বেশ ভালো লাগে সাঁচির। গত দু’দিন ধরে এই সময়টার এই দৃশ্য দেখছে। চমৎকার আবহাওয়া…. সূর্য ডুবে গেছে…চারিদিকে লালচে একটা আভা ছড়িয়ে আছে। এই সময়টা খুব উপভোগ করে সাঁচি, কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিজেকে ভুলে থাকা যায়। আজকাল নিজের মনকে বেশ প্রবোধ দিয়ে ফেলেছে… ফুয়াদের সাথে আর কথা বলতে যায় না নিজ থেকে…কি দরকার! অযাচিতভাবে কাউকে বিরক্ত করার!! এর চেয়ে এই ভালো..নিজেকে নিয়ে ভালো থাকা। এই যে শর্ত জিতে বেড়াতে আসলো…ফুয়াদ ওর অজানা অধ্যায় জানাবে বলেছিল..অথচ কিছুই বলছে না এখন? এই যে সাঁচি রাগ দেখিয়ে ওর সাথে কথা বলছে না তবুও ওকে একবার সরি বলারও প্রয়োজন মনে করছে না? সাঁচি ভেবে রেখেছে এবার ঢাকায় ফেরত যেয়ে ফুয়াদকে বলবে, লাষ্ট সেমিস্টার টা ও বাবার বাসায় থেকে করবে। ফুয়াদকে ওর হালে ছেড়ে দেবে। ও নিজে থেকে অনেক চেষ্টা করেছে সম্পর্কটা স্বাভাবিক করার জন্য… এখন ফুয়াদের পালা। ফুয়াদ যদি এগিয়ে না আসে তাহলে আর ওর কিছুই করার নেই। নিজেকে আর ছোট করতে পারবে না সাঁচি!!
ফুয়াদের ঘুম ভাংলো রাত তখন সাড়ে আটটা বাজে। বেলের শব্দে ঘুম ভাঙলো ফুয়াদের। দড়জা খুলে দিতেই কেয়ারটেকার রাতের খাবার গুলো টেবিলে সাজিয়ে দিয়ে চলে । ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গেলো ফুয়াদ, জানে সাঁচি ওখানেই আছে….বাতি জ্বালিয়ে সাঁচির পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলো, এক নজর সাঁচির দিকে তাকিয়ে দেখলো, এ্যাশ কালারের উপর মাল্টিকালারের সুতোর কাজের জামায় সাঁচিকে বেশ অন্যরকম লাগছে, যদিও চেহারায় মলিনতা স্পষ্ট। ফুয়াদ মুখ ফিরিয়ে বললো –
“আমাকে একমগ চা দেবে, সাঁচি?”
চমকে ফুয়াদের দিকে ফিরলো সাঁচি। মনেহচ্ছে কতযুগ পর ফুয়াদের মুখে নিজের নাম শুনলো। কারন কি? আজ গলায় একটু আন্তরিকতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে মনেহয়? সাঁচি কিছু না বলে উঠে গেল। মগ ভর্তি চা নিয়ে ফেরত আসলো। মগটা ফুয়াদের হাতে দিয়ে ফেরত আসছিলো সাঁচি, তখনই ফুয়াদ বললো-
“বসো না, তোমার সাথে গল্প করি একটু! ”
সাঁচি বসলো ওর চেয়ার টাতে।
“আমার ধাঁধার উত্তর টা কি ছিলো যেন?”
“অতীত। আপনি আপনার বুকের ভেতর কোনো একটা অতীত লুকিয়ে রেখেছেন সেটাই তো?”
“হুম। তো তোমার সাথে সেই অতীত টা শেয়ার করার কথা ছিলো, তাই না? আজ ভাবছি কথাগুলো বলবো? তুমি কি শুনবে?”
সাঁচি কিছু না বলে অবাক হয়ে তাকালো ফুয়াদের দিকে। “বাহ!ভালো,উন্নতি হয়েছে ফুয়াদ সাহেবের? আজ নিজে থেকেই কথা বলছে? “মনেমনে আউরালো সাঁচি। ফুয়াদ সাঁচির উত্তরের অপেক্ষা না করে চায়ে চুমুক দিয়ে নিজেই শুরু করলো-
” আমি না ছেলেবেলা থেকেই ভদ্র, আলাভোলা টাইপ ছেলে ছিলাম। বাবাকে ছোট থেকেই প্রচন্ড রাগী হিসেবেই পেয়েছি। মা ছিলো আমার বন্ধু, মাও বাবাকে প্রচন্ড ভয় পেতেন। কি কারনে এত ভয় পেতেন তখনো বুঝিনি, কারন ভয় পেলেও মা বাবাকে ভালোও বাসতেন প্রচুর। বাবা এমনিতে তো কিছু বলতেন না কিন্তু তার কথার বাইরে যাওয়ার কারো কোনো উপায় ছিলো না । একান্নবর্তী বিশাল পরিবারে বাবার কথাই ছিলো শেষ কথা। ছোট থেকে সব ঠিকই চলছিলো, আমার আট বছর বয়সে প্রিয়তা আসলো আমাদের মা ছেলের দুনিয়ায়। বাবা প্রচন্ড ব্যস্ত থাকতেন ব্যবসা নিয়ে। তাই আমরা তিনজন মিলে বেশ সুন্দর একটা দুনিয়া সাজিয়ে নিলাম। আমি যাই করতাম মা আমাকে প্রচন্ড উৎসাহ দিতেন। আমার আবৃতি ভালো লাগতো, সাহিত্য পড়তে ভালো লাগতো, মা আমাকে সঙ্গ দিতেন। আমি মাঝেমাঝে স্কুলে অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃতি করতাম। বাবার কাছে সব খবরই যেত। কখনো কিছু বলেনি এব্যাপারে। হয়তো আমার রেজাল্ট ভালো হচ্ছিল বলে। এভাবেই আমার দিন কাটছিলো। প্রথম ধাক্কা খেলাম ক্লাস এইট থেকে নাইনে যখন উঠলাম। আমার ইচ্ছা ছিল আর্টস বা কমার্সে পড়বো যাতে পরবর্তী কালে বাংলা বা ইংরেজি নিয়ে পড়তে পাড়ি। কেন জানিনা কবিতা বা গল্প লিখতে, পড়তে প্রচন্ড মজা লাগতো। বাবা সেই প্রথম আমার উপর রাগলেন। এতো ভালো ছাত্র আমি, সেই আমি কিনা এইসব হাবিজাবি পড়বো। মারলো বেধড়ক। লাইনে চলে আসলাম মার খেয়ে। বাবার মারের ভয়েই কিনা জানিনা আমি আর টাঙ্গাইল থাকাকালীন কোনোদিনো ওসব গল্প, কবিতার ধারে কাছেও যাইনি। মা মাঝে মাঝে আমাকে কবিতা আবৃতি করতে বলতেন আমি মানা করে দিতাম, প্রচন্ড অভিমান হতো মায়ের উপর, সে কেনো বাবাকে বোঝালো না! মা বুঝতে পেরেছিলেন, আমি রাগ করে হয়তো আর কবিতা আবৃতি করবো না কোনো দিন। যাই হোক, সায়েন্সে পড়ে এইচ এস সি পাশ করে ফেললাম বেশ ভালো মতোই। তারপর চান্স হয়ে গেলো বুয়েটে। আমার খুব আনন্দ হচ্ছিল। এই কারনে না যে আমি বুয়েটে চান্স পেয়েছি! আনন্দ টা এই কারনে বেশি ছিল যে, এই প্রথম বাড়ির বাইরে আমি একটা স্বাধীন জীবনের স্বাদ পাবো। কারন, বাড়িতে কোনোদিনও নিজের ইচ্ছা মতো কিছু করতে পারতাম না। মোটকথা মুক্তির আনন্দে আমি পাগল ছিলাম প্রায়। আমার ঢাকায় আসার আগেরদিন বাবা ডাকলেন আমাকে-
“ফুয়াদ, কাল তো ঢাকা যাচ্ছিস, তাই না?”
“জ্বী, বাবা।”
“এই প্রথম আমার চোখের আড়ালে যাচ্ছিস, আমার খুব চিন্তা হবে রে তোর জন্য।”
“বাবা, চিন্তার কি আছে? টাঙ্গাইল থেকে ঢাকার দূরত্ব আর কতটুকুই বা!”
“তবুও তো…চাইলেই আর দেখতে পাবো না…. যাইহোক তোকে যে কারনে ডেকেছিলাম…”
“জ্বী,বাবা বলেন না?”
“আমাদের থেকে দূরে থাকবি, একা একা থাকবি, দেখার কেউ নাই, শাসন করার কেউ নাই।”
ফুয়াদ নিশ্চুপ দাড়িয়ে থাকে কোনো কথা না বলে।
” হঠাৎ করে এরকম স্বাধীনতা পেলে বেশিরভাগেরই হজম হয় না। বখে যায়, নস্ট হয়ে যায়, প্রেম ভালোবাসা করে। বুঝলি?”
ফুয়াদ মাথা নাড়ে। বাবার কথাতে লজ্জায় ওর মাথা টা আরেকটু হেলে যায়।
“তোমার কাছে আজ কিছু চাইবো, দেবে?”
ফুয়াদ অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকায়। বাবা ওকে তুমি করে বলছে? তারমানে বাবা সিরিয়াস কিছু চাইবে?
“আমাকে তোমার কথা দিতে হবে, এই পড়ালেখার সময়টাতে তুমি কোনো ধরনের কোনো সম্পর্কে জড়াবে না! তুমি এতদিন যে রকম ভালো রেজাল্ট করেছো সেটা ধরে রাখবে। এমন কিছু করবে না যাতে তোমার বাবা কস্ট পাবে! আর জানো তো বাবা কস্ট পেলে মা ভীষণ কষ্ট পাবে?”
ফুয়াদ ভয় পেল। ততদিনে ফুয়াদ জেনে গেছে, ওরা কিছু দোষ করলে বাবা ওদের কিছু না বললেও মাকে খুব বকে।ফুয়াদ তাই সবসময় চেষ্টা করে ওর দ্বারা ওর মা যেন কষ্ট না পায়। ও ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ে।
“মুখে বলো।”
বাবা হুঙ্কার ছাড়ে।
“জ্বী, বাবা। কথা দিলাম।”
ফুয়াদ মৃদু সুরে জবাব দেয়।
এইটুকু বলে ফুয়াদ থামে। চায়ে চুমুক দেয়, চুপচাপ কিছুক্ষণ ভাবে। ওপাশে সাঁচি উশখুশ করে। জানতে চায় তারপর কি হলো, কিন্তু মুখে কিছু বলে না। দুজনাই বেশ অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে আছে। সাঁচি ভাবে, এতোক্ষণ হয়ে গেল, তাও চুপ! কি এতো ভাবছে? জিজ্ঞেস করবে ভাবলো….মুখ খুলতে যাবে তখনই ফুয়াদ বলে-
“এক হিসেবে তুমি অনেক লাকি,জানো তো?”
“কেন?”
থাকতে না পেরে সাঁচি বলে উঠলো।
“এই যে আমার মনের একান্ত কথাগুলো, এই যে গোপন অতীত, যা এতোদিন কেবল আমার ছিলো তা এখন তোমারও হতে যাচ্ছে। যেগুলো বলছি তা আমি ছাড়া কেউ জানতো না, আজ তুমি জানছো, আরো জানবে হয়তো ভবিষ্যতে। ”
“আপনি ভাববেন না! কথাগুলো আপনি যেভাবে স্বযতনে রেখেছেন আমার কাছেও সেভাবেই থাকবে। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে দামী অতীত স্মৃতি যা আপনি আমার সাথে শেয়ার করছেন। ”
“থ্যাংকস। আর একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম?”
“বলুন!”
“যেগুলো বলবো সেসব কোনো মেয়েরই ভালো লাগবে না। তোমারও কষ্ট হবে। তাই আগে থেকেই সরি বলছি তোমাকে। যদি এগুলো না বলে তোমার সাথে সম্পর্ক টা কন্টিনিউ করতে পারতাম তাহলে ভালো হতো। কিন্তু তা করতে পারছি না। এতে তোমাকে ঠকানো হবে। সেটা নিশ্চয়ই তোমার ভালো লাগবে না?”
“হুম, ভালো তো লাগবেই না। কষ্ট হলেও আমি শুনবো। আপনি বলুন।”
“আমাকে বোঝার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ”
“ঠিক আছে। এবার বলুন তারপর কি হলো?”
“আচ্ছা আমরা ডিনারটা সেরে নিয়ে আবার বসি? আমার না খিদে পেয়ে গেছে। আসলে, এতোক্ষণ যেটুকু বললাম সেটুকু কেবল পটভূমি, আসল গল্প এরপর শুরু হবে। তাই একটু এ্যনার্জি নিয়ে নিতে চাচ্ছিলাম। ”
সাঁচি কিছু না বলে উঠে এলো। সাথে সাথে এলো ফুয়াদ ও। দু’জনে নিঃশব্দে খেয়ে উঠলো। সাঁচির খুব অস্থির লাগছে, বাকিটুকু জানার জন্য ওর তর সইছে না। কি হয়েছে এরপর? ফুয়াদ নিশ্চয়ই কারো প্রেমে পড়েছিল? নিশ্চয়ই ভালোবেসেছিল কাউকে? বোঝাই যাচ্ছে, তাকেই এখনো মনের মধ্যে বসিয়ে রেখেছে! তাহলে,ওকে বিয়ে করলো কেন? ব্রেকাপ হয়ে গেছিলো? ছ্যাকা খেয়েছে নিশ্চয়ই? নাকি ওর শশুর কিছু করেছিলো? মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারছে। উফ কখন শুনবো বাকিটুকু????
চলবে—