#আজল
#পর্ব-উনিশ
৩৫.
সাঁচি কিছুতেই আসতে রাজি হলো না ফুয়াদের সাথে। তার এক কথা সে যাবে না। ফুয়াদ যদি বেশি জোরাজোরি করে তাহলে তাদের ব্যাপারটা বাবা মাকে জানিয়ে দেবে, এই বলে হুমকি দিলো ফুয়াদকে। শেষমেষ ফুয়াদ বাধ্য হয়ে সাঁচিকে বাবার বাড়িতে রেখেই চলে আসলো। ওকে দেখেই ফুয়াদের মা প্রশ্ন করলেন-
“বউ কই, আসেনাই?”
“আসতে চাইলো না মা। শরীর এখনো দূর্বল, তাই আমিও আর জোর করি নাই। থাক না হয় কয়দিন?”
“ওওও, আচ্ছা। ভালো করেছিস। ওর যেটা ভালো লাগে করুক।”
“হ্যা, মা সেটাই।”
“বাবু, শোন?”
“বলো, মা। কি বলবে?”
“তোদের মধ্যে সব ঠিক আছে তো?”
“কেন, হঠাৎ এ কথা জিজ্ঞেস করছো যে মা?”
“এমনি মনে হলো? সাঁচির মনটন কেমন খারাপ থাকে মনেহলো!”
“না, মা টেনশন করার মতো কিছু হয়নি। সব ঠিকই আছে। ”
ফুয়াদ মাকে আশ্বস্ত করে। নিজের রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে ফুয়াদ। ভাবতে থাকে কিভাবে সাঁচিকে মানাবে! মেয়েটা সুযোগ তাকে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু কেমন যেন কঠোরতাও এসেছে ওর ব্যবহার আর আচরনে। আগের সাঁচি হলে হয়তো পটিয়ে ফেলা যেতো এক নিমিষেই। কিন্তু এখনকার সাঁচিকে ফুয়াদের অচেনা লাগে, ভয় হয় একটু। মেয়েটাকে শেষ পর্যন্ত মানাতে পারলে হয়! ফুয়াদ জানে যারা একটু সরলরৈখিক হয় মানে যারা ভালোমানুষ আরকি! তারা রেগে গেলে ভয়ংকর হয়ে যায়। সহজে তাদের রাগ পরে না। তাই সাঁচিকে নিয়ে একটু ভয় পাচ্ছে ফুয়াদ। মাঝে মাঝে নিজেরই নিজেকে কষে থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করে। কেন সময়ের আগে সব বুঝ আসলো না। কেন সে নিজেই রেহনুমা কে খুঁজে বের করলো না?
নাহ, এইখানে একটু ভুল আছে। ফুয়াদ চেষ্টা করেছিলো রেহনুমার খোঁজ করার কিন্তু মিলি ওকে রেহনুমার কোনো খবরই দেয়নি।ওর ই বা কি করার ছিলো! চেষ্টা তো করছিলো কিন্তু ব্যাটে বলে হয়নি। কিংবা এমনও হতে পারে যে, ফুয়াদ হয়তো মন থেকে চায়নি যে রেহনুমার সাথে ওর দেখা হোক? মানুষিক দূর্বলতা ছিলো হয়তো! সত্যের মুখোমুখি হওয়ার মনমানসিকতা সবসময় থাকে না। তখনও হয়তো ছিলো না কিংবা এখন যে হয়েছে তাই বা কে বলবে? হঠাৎ করে রেহনুমাকে কাছে দেখে হয়তো আড়স্ঠতা কমে গেছে? হঠাৎ ফুয়াদের মাথায় একটা প্রশ্ন খেলে যায়। আচ্ছা! সাঁচি কিভাবে ওর খোঁজ পেলো? জিজ্ঞেস করতে হবে ওকে? বেশ কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে ফুয়াদের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো, ওর মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
দিন দু’য়েক পরে রাতে খাবারের পর রুমেই হাটাহাটি করছিলো সাঁচি। ছোট বোন প্রাচী এলো রুমে-
“আপু, চা খাবি?”
“এতো রাতে? তোর পড়া নেই?”
সাঁচি ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
“এতো রাত? মাত্র রাত দশটা! পড়া আছে রাতে করে নেবো। খাবে?”
কিছু একটা ভেবে সাঁচি বললো-
“ঠিক আছে, বানা।”
কিছুক্ষণ পরে দু’মগে চা নিয়ে ফিরলো প্রাচী। মগে চা দেখে সাঁচির ফুয়াদের কথা মনে পড়ে গেলো। ফুয়াদ মগে করে চা বা কফি খেতে খুব পচ্ছন্দ করে। সাঁচির মনটা খারাপ হয়ে গেলো কেন জানি! ফুয়াদের কথা মনে পরলে মনটা ভীষন ভার হয়ে যায়। সাঁচি মাইন্ড ডাইভার্ট করার চেষ্টা করে।
“এতো চা এনেছিস কেন? আমি এতো চা খাবো না ”
“আপু, চলো ছাদে যাই। হাটতে হাঁটতে চা খাবো, এইজন্যই মগে চা এনেছি। ”
“নাহ, ইচ্ছে হচ্ছে না…”
“ওহ চলো তো.. তোমার শরীর টা ফ্রেশ লাগবে দেখো।”
প্রাচী টানতে টানতে সাঁচি কে ছাদে নিয়ে এলো। সুন্দর ঝিরিঝিরি হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছে…ছাদের একপাশের ছোট বাগানের গাছগুলো হালকা দোল খাচ্ছে, দেখেই সাঁচির মন ভালো হয়ে গেলো। প্রাচী সাঁচির হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিলো।
“তুই কোথায় যাচ্ছিস? একা একা ভয় লাগবে আমার!”
“আছি এখানেই। ওপাশ থেকে একটু হেঁটে আসি। তুমি গাছ দেখো।”
সাঁচি আর কিছু না বলে গোলাপ গাছে ফুটে থাকা ফুলগুলো দেখতে লাগলো। আগে এই গাছগুলোর যত্ন সাঁচিই নিতো। এখন তো এবাড়িতেই থাকা হয়না, তার যত্ন কিভাবে নেবে? আর ও বাড়িতেও গাছ আছে কিন্তু কেন যেন সাঁচির সেসব যত্নের ইচ্ছে হয় নাই। ফুয়াদের সাথে বিয়ের পরে কি ও চেঞ্জ হয়ে গেছে? আগে তো এমন ছিলো না? কেমন কাঠখোট্টা টাইপ হয়ে গেছে? নিজের শখ আহলাদ, ইচ্ছে পূরন সব ভুলে গেলো নাকি? সব কিছু কেমন যেন ফুয়াদ কেন্দ্রীক হয়ে গেছে! ফুয়াদ না থাকলে কিছু ভালো করতে লাগে না, খেতে ভালো লাগে না! এ কেমন অসুখ? মেয়েদের জীবনটাই বুঝি এমন! প্রথমে বাবা মায়ের ছায়াতলে থাকা পরে স্বামীর, শশুরবাড়ীর ছায়াতলে থাকা। নিজের বলে কিছু থাকে না নাকি?
সাঁচি মনে মনে ভাবলো এখন থেকে আগে নিজেকে নিয়ে ভাববে। নিজের ছোট ছোট শখ আহলাদ গুলে পূরন করবে। কাউকে এতোটাও ভালোবাসা উচিত না যে সে হাত ছেড়ে দিলে, পথ চলার শক্তিটুকুও হাড়িয়ে যায়। এই ভাবনাটুকু সাঁচিকে অনেকখানি নির্ভরতা দিলো। মনের ভার কমাতে গুনগুন করে গান ধরলো-
“প্রিয়তম
কি লিখি তোমায়?
কি লিখি তোমায়?
তুমি ছাড়া আর কোনো কিছু ভালো লাগেনা আমার
কি লিখি তোমায়?
কি লিখি তোমায়?”
ওপাশ থেকে একটু গুনগুন শুনতেই সাঁচি থেমে গেলো। কে যেন গান গাইছে-
“আমার সারাটাদিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম;
শুধু শ্রাবন সন্ধাটুকু তোমার কাছেই চেয়ে নিলাম;”
সাঁচি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলো ওপাশের ছাদে। একটু ভয় ভয় লাগছে। এই সময় ছাদে কে থাকবে? সাঁচি প্রাচীকে দুইবার ডাকলো-
“প্রাচী, এই প্রাচী! আছিস?”
গানটা থেকে গেলো। সাঁচি আর একটু এগিয়ে গেলো, একটা ছেলের আয়বর ছাদের রেলিং ঘেঁষে উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। চেহারা দেখা যাচ্ছে না। চাঁদের আবছা আলোয় তাকে রহস্যময় লাগছে। সে এবার নতুন গান ধরলো-
“আবার হবে তো দেখা
এ দেখাই শেষ দেখা নয়তো
কি চোখে তোমায় দেখি বোঝাতে পারিনি আজো হয়তো
এ দেখাই শেষ দেখা নয়তো।”
“এই কে আপনি! এতো রাতে ছাদে কি করেন?”
ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে সাঁচি।
“তুমি কি করো? এতো রাতে মেয়েদের একা ছাদে আসতে নেই জানোনা? ”
সাঁচি আরো ভয় পেয়ে চিৎকার শুরু করলো-
“এই প্রাচী, প্রাচী কোথায় তুই?”
কোনো সারা না পেয়ে সাঁচি দৌড়ে চলে আসতে নেয়। পেছন থেকে বাধা পায়-
“আআআআ, মাগো, ভুত….বাঁচাও? ”
চোখ বন্ধ করে চিৎকার করেই যাচ্ছে সাঁচি। কেউ একজন ওর কানের কাছে ফিসফিস করলো-
“শশশশশশ,চুপ করো আমি, ফুয়াদ! এখন কি আমাকে শশুরের হাতে পিটুনি খাওয়াতে চাও নাকি?”
সাঁচি চিৎকার থামিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।
“আপনি এতো রাতে? কি করেন? এখনই জানটা বের হয়ে যাচ্ছিলো?”
“ইশ! ভীতুর ডিম একটা! আমার বউটা একেবারে ভীতু! ”
“আমি মোটেও ভীতু না। আগে বলেন আপনি কি করছেন এখানে এতোরাতে?”
“তোমার সাথে প্রেম করতে আসছি।”
বলে দাঁত বের করে হাসলো ফুয়াদ।
“এহ, প্রেম করতে আসছে? ঢং! আপনার সাথে কে প্রেম করবে? গম্ভীর রসকষহীন মানুষ একটা! উনি নাকি আমার সাথে প্রেম করবে?”
সাঁচি চলে আসতে নেয়। ফুয়াদ ওকে পেছন থেকে জাপটে ধরে।টানতে টানতে নিয়ে আসে ছাদের কোনায়। সাঁচি কে সামনে দাড় করিয়ে দিয়ে নিজে পেছনে দাঁড়িয়ে সাঁচির কাঁধে থুতনি রাখে-
” আজ আকাশে চাঁদ আছে, পুরোটা না হলেও অর্ধেকের বেশি আছে। ঠান্ডা বাসাত আছে তোমার আমার হাতে চায়ের মগ আছে, প্রেম করার জন্য আর কি লাগবে বলো তো?”
ফুয়াদের নিঃশ্বাস যেয়ে বাড়ি খাচ্ছে সাঁচির গলায়। সাঁচি তাতে কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করলো।
“ওহ, এটা তবে আপনার প্লান? প্রাচীকে দিয়ে আমাকে ছাদে আনানো?”
“হুম, আমার বউটার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছি একটু। কি গান যেন গাইছিলে? আবার গাও না, বেশ ভালো লাগছিলো?”
“আমার বয়েই গেছে আপনাকে গান শোনাতে!”
“শোনাও না! আমাকে মিস করেই তো গানটা গাইছিলে, তাই না?”
“মোটেই না! আমি এমনিতেই গাইছিলাম ”
“গাওনা?”
“উহু, আটটার সংবাদ একবারই হয়?”
সাঁচির কথা শুনে গলা ফাটিয়ে হাসলো ফুয়াদ-
“আচ্ছা, একদিনে একবারই হয়। তবে কালকে শুনাবে তো? আজ বরং গল্প করি!”
“আমি যাই, ঘুম পাচ্ছে খুব।”
সাঁচি চলে আসার জন্য ঘুরে দাঁড়ায়।
“তুমি কিন্তু আমার সুযোগ দিয়েছো একবার। এখন যদি আমার সাথে কথা না বলো তবে আমি সে সুযোগটা পাবো কিভাবে? ”
ফুয়াদের কথা শুনে সাঁচি থেমে গেলো। লোকটা আসলেও একটা বিটকেল লোক। সবসময় ব্লাকমেইল করে কাজ আদায় করে। সামনে এগিয়ে যেতেই দেখলো ফুয়াদ পাটি বিছাচ্ছে, তারপর দুটো বালিশ আনলো কোত্থেকে বা। সবশেষে সাঁচিকে ডাকলো-
“এসো আজ সারারাত জেগে গল্প করবো না না শুনবো। আজ তুমি বলবো আমি শুনবো।”
সাঁচি বাধ্য হয়ে এসে পাটিতে বসলো। ফুয়াদ পাশে শুয়ে ছিলো। সাঁচিকে টানলো-
“শোও না। আকাশের তাড়া দেখতে দেখতে গল্প করার মজাই আলাদা। দেখো, কি মজা লাগছে?”
“আপনার বুঝি আগে এই এক্সপেরিমেন্ট হয়ে গেছে, আপনার রেনুর সাথে?”
ফট করে বলে ফেলে সাঁচি। বলেই বুঝলো ভুল বলে ফেলেছে, ফুয়াদের হাসোজ্জল মুখটা নিমিষেই গম্ভীর হয়ে গেছে।
“সরি, বলতে চাইনি, মুখ থেকে বেড়িয়ে গেছে।”
“ইটস ওকে, আমি কিছু মনে করিনি। আমার ভালো লাগতো আগে ছাঁদে শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখতে। তাই ভাবলাম তোমার সাথে আজ এই প্রিয় একটা কাজ শেয়ার করি।”
সাঁচি ফুয়াদের পাশে শুয়ে পড়লো। আকাশের দিকে তাকিয়ে বেশ অদ্ভুত লাগলো। মনেহলো আকাশটা এক্কেবারে কাছে চলে এসেছে। এতো বিশাল আকাশের মাঝে নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হচ্ছিল ভীষণ। দুজনেই বেশ অনেকক্ষণ চুপ করে রইলো। একসময় সাঁচি বললো-
“আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই?”
“বলো?”
“আপনি কি বাবার উপর এখনো রাগ করে আছেন? কথা টথা খুব কম বলেন দেখি?”
“উমমম, রাগ হয়তো নেই অভিমান থাকতে পারে চাপা। বাবা আসলে কখনো আমাদের সাথে বন্ধু সুলভ ছিলেন না। আমরা বাবাকে ভয় পেতাম, মনের কথা বলার তো প্রশ্নই আসে না। তাই বাবার সাথে কখনো সেরকম সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। আর তাছাড়া বাবা আমার ভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় গায়ে হাত তুলেছিলেন। সেটা নিয়ে আমার প্রচন্ড রাগ ছিলো। আর যাই হোক এটা করা তার উচিত হয়নি। বুঝিয়ে বলতে পারতো, কিন্তু তা না করে সোজা গায়ে হাত। আবার প্রিয়তার বিয়েটা ওভাবে না দিলেও পারতো বাবা! তুমি জানো,ও কতো ব্রাইট স্টুডেন্ট ছিলো? এই যে সংসারের এতো ঝামেলা সামাল দিয়ে ও পড়ালেখা করে যাচ্ছে, এটা কি এতো সহজ মনেহয় তোমার কাছে? একটা সরকারি ভার্সিটিতেও তো চান্স পেয়ে গেছিলো। অথচ তানভীর এর জন্য পড়তে পারলো না। এতো অল্প বয়সে এতো দায়িত্ব ও আসলে ডিজার্ভ করে না। এসব মনে হলে বাবার উপর রাগ হয় প্রচুর।”
“যত যাই হোক ওনারা আমাদের বাবা মা। আপনি প্লিজ বাবার সাথে কথা বলবেন ঠিক মতো। এখন বয়স হয়ে গেছে, তার নিশ্চয়ই খারাপ লাগে?”
“আমিও বুঝি বাট মন থেকে সারা পাই না। তবুও তো এখন বাবার সাথে অনেক কথাই বলি। কি জানো, বাবা মায়ের যখন বয়স হয়ে যায় তখন আর তাদের উপর রাগ করা যায় না। আমি তাই চাইলেও বাবার সাথে রাগ দেখাতে পারছি না। এখন আর মন থেকেই আসে না ব্যাপারটা।”
“এই তো বুঝতে পেরেছেন। সবাই তো ভুল করেই শেখে তাই না। বাবাও নিশ্চয়ই এখন বোঝে তার কোন কাজগুলো ভুল ছিলো? আমার তো বাবাকে দেখলে কেমন অনুতপ্ত মনে হয়?”
“কি জানি হতে পারে? এবার তোমার কথা বলো তো? আমি খালি নিজের কথা বলি।”
“আমার আর কি কথা? সেরকম স্পেশাল কোনো কথা তো নেই?”
“তোমার কোনো ক্রাশ নেই যাকে খুব পচ্ছন্দ করতে?”
“হুম, আছে তো? আমার সালমান কে ভালো লাগে। না, ওর ছবির জন্য না! ওর অসাধারণ ব্যাক্তিত্বের জন্য। সে যে কারো বিপদে যেভাবে পাশে দাঁড়ায় সেটা আমার খুব ভালো লাগে।”
“বলিউডি নায়ক? হুম, আসলেও লোকটা ইউনিক। আর পড়ালেখা? ”
“আমার খুব ইচ্ছা আছে এখানকার পড়া শেষ করে একটা বিদেশি ডিগ্রি নেবো। তারপর কোনো ভার্সিটিতে টিচার হয়ে যাবো।”
“অন্য কোনো প্রফেশন ভালো লাগে না? শেষ পর্যন্ত টিচার?”
“আমার পড়াতে ভালো লাগে। আর রেজাল্ট ভালো আছে, সো নিজ ভার্সিটিতে যদি চান্স পেয়ে যাই তবে খারাপ কি? ওটাতে একটা আলাদা মজা আছে। অথবা নিজে একটা ছোটখাটো বিজনেস করলাম! ”
“বাব্বাহ, এতো চিন্তা করে ফেলেছো? আমি তো কোনোদিন ও ভবিষ্যৎ ভাবি না। সামনে যা আসে সেটাই করে ফেলি।”
“সেটাও খারাপ না। এতো প্লান প্রোগ্রাম করে আসলে কোনো লাভ হয় না। কপালে যেটা থাকে সেটাই হয়।”
এভাবেই এটাসেটা গল্প করে দু’জনে রাত পার করে দিলো। পাঁচটার দিকে ফুয়াদ উঠে বাসায় চলে গেলো আর সাঁচি চোরের মতো পা টিপে টিপে ঘরে এসে শুয়ে পড়লো। ঘুমিয়ে পড়ার আগে তার চেহারায় প্রচ্ছন্ন হাসি ছিলো একটা। অল্প সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো সাঁচি। ঠোঁটের কোনে ফুটে ওঠা হাসিই বলে দিচ্ছিলো আজ সে গভীর প্রশান্তির এক ঘুম দিয়েছে । বহুদিন পর এরকম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে সে।
চলবে—-
Farhana_Yesmin