#আজল
#পর্ব-পাঁচ
১২.
প্রিয়তার আজকাল কেন জানি সবকিছু অসহ্য লাগে। মনের মধ্যে বিচিত্র ধরনের অস্থিরতা। এমন অবস্থা যে মেয়েটা কেও মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত লাগে। ভাইয়ের বিয়ের পর থেকে এই অসহ্য লাগাটা যেন বেড়ে গেছে। ভাবি, সাঁচিকে ওর খুব হিংসে হচ্ছিল। কি সুন্দর পড়ালেখা প্রায় শেষ করে বিয়ের পিড়িতে বসলো! অনার্স শেষ করে দুবছর চাকরি ও করেছে। তারপর আবার মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে। আর ভাইয়ের সাথে বয়সের ডিফারেন্স টাও বেশি না, দু তিন বছর হবে হয়তো? দুজন পাশাপাশি দাড়ালে কি সুন্দর মানিয়ে যায়! দুজনেরই কথা, বার্তা, আচার আচরনে এক ধরনের স্থীরতা আছে। ভবিষ্যতে যে ওরা সুখি হবে তা যে কেউ চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারবে। আর তার অবস্থা হচ্ছে একেবারে বিপরীত। জীবনের মানে বোঝার আগেই জীবনটাকে বোঝা মনে হচ্ছে! এই বাইশ বছর বয়সেই সে দুই বছর বয়সের এক বাচ্চার মা। তার উপর সুখি হওয়ার অভিনয় করতে করতে ও টায়ার্ড হয়ে গেছে। তানভীরের সাথে ওর কোন কিছুতেই মিল হয় না। ও ডানে গেলে তানভীর যায় বামে! হবেই বা কিভাবে? বারো বছর, পুরো এক যুগ পার্থক্য দুজনার!? এই ব্যবধানটাও মেনে নেওয়া যেতো যদি তানভীর ওকে বোঝার চেষ্টা করতো, ওর প্রতি সহানুভূতিশীল হতো!
ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়তো প্রিয়তা। মনে কত রঙিন স্বপ্ন ছিলো। ভার্সিটি তে পড়বে, চাকরি করবে, ঘুড়ে বেড়াবে। কোনো কিছুই পূরন হলো না!বয়সে বারো বছরের বড় একজনার সাথে ধরে বেঁধে বাবা আঠারো তেই বিয়েটা দিয়ে দিলো। ভাইয়া বাবাকে মানা করেছিল অনেক, কিন্তু বাবা কোন বাড়নই শোনেনি। বাবার কথা অনুযায়ী বিয়ের পরে পড়াশোনা, ঘুড়ে বেড়ানো, চাকরি যা মন চায় কোরো। প্রিয়তা তো ভেবেছিলো জীবনে মনে হয় আর পড়া হবে না! তাও ওর ভাগ্য ভালো যে, তানভীর ওকে পড়ালেখার ব্যাপারে বাধা দেয়নি। তানভীর নিজে মাস্টার্স পাশ তাই বউ অন্তত অনার্স পাশ হবে এটা ভেবেই হয়তো মানা করেনি। আর তাছারা তানভীরের অন্য ভাবীরা সবাই উচ্চ শিক্ষিত হওয়ায় প্রিয়তা জোর বাঁচা বেঁচে গেছে! ও এই কারনেই পড়ালেখার সুযোগ টা পেয়েছে হয়তো!
কিন্তু এর জন্য কম কষ্ট ও সহ্য করেনি প্রিয়তা! ইন্টার শেষ হওয়ার আগেই বাচ্চা পেটে চলে আসলো। সেই অবস্থায় পড়ালেখাটা করাটা যে কি কষ্টকর তা একজন প্রেগনেন্ট মেয়ে ছাড়া আর কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব না। তানভীর কে ও রিকোয়েস্ট করেছিলো, বাচ্চাটা পরীক্ষার পরে নিতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? সে নিজের ইচ্ছার বাইরে এক পাও নড়ে না। ওর ইচ্ছা হয়েছে বাচ্চা নেবার তাই তখনই নেবে। প্রিয়তা ভেবে পায়না তানভীর একজন শিক্ষিত লোক হয়ে কিভাবে প্রতি পদে পদে ওকে অপদস্থ করতে চায়! এই যে এখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পরে প্রিয়তা! সরকারি তে চান্স পাওয়া সত্বেও বাড়ির কাছাকাছি একটা বেসরকারি তে পড়তে হচ্ছে প্রিয়তার, বলাই বাহুল্য সেটাও তানভীরের ইচ্ছাতেই। তাছাড়া আরো কত শত ইচ্ছা যে প্রতিনিয়ত মনের মধ্যে চাপিয়ে রাখতে হয় তা কে বুঝবে? ভার্সিটিতে ওর বান্ধবী গুলো যখন আড্ডা দেয়, শপিং এ যায়, রেস্টুরেন্টে খেতে যায় ওর তখন মেয়ের জন্য পরিমরি করে ঘরের দিকে ছুটতে হয়। সবাই যখন দূরের ট্রিপ প্লান করে তখন ও ঘর পাহারা দেওয়ার প্লান করে। কারন তানভীর বিজনেস ট্রীপে। এসব কিছু যখন মনে পড়ে খুব কান্না পায় প্রিয়তার। ও ছটফট করে খাচায় বন্দী পাখির মতো। ওর ও ইচ্ছে করে একটু আকাশে ডানা মেলে উড়তে। কিন্তু কিভাবে উড়বে? ওর তো ডানাটাই কেটে নেওয়া হয়েছে??
অথচ তানভীর ঠিকই ঘুরে বেরাচ্ছে নিজের মতো। বিজনেসে ট্রিপের নাম দিয়ে দেশ বিদেশের কত জায়গায় ঘুরে আসলো তানভীর। আসার পর দামী কিছু গিফট প্রিয়তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের কর্তব্য সারে। আজকাল এই বন্দীত্ব মেনে নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে প্রিয়তার। প্রায়ই মন বিদ্রোহ করে উঠতে চাচ্ছে। মনে হয় ভাইকে জানাক যে, ও ভীষন কষ্টে আছে। এই জীবন মেনে নিতে পারছে না আর। ও জানে ফুয়াদকে বললে ও হয়তো এক সেকেন্ড ও থাকতে দেবে না প্রিয়তাকে এই নরকে। শুধু বাবার ভয়ে চুপচাপ আছে প্রিয়তা। আবার ভাইয়ের ও নতুন বিয়ে! ওর জীবনের নতুন পথ চলার কেবল শুরু! এখন ওকে কোন টেনশন দিতে চায় না প্রিয়তা। কিন্তু কতদিন চুপ থাকবে?? কতদিন এরকম নিজের মনকে মেরে পথ চলবে প্রিয়তা? কতোদিন তানভীরের এই অন্যায় আচরণ মেনে নিতে হবে? কতোদিন?
১৩.
” আর ইউ ইন আ রিলেশনশিপ? আর ইউ ইন লাভ উইথ সামওয়ান? অর আর ইউ আ গে?”
অফিস থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে ফুয়াদ। ওর চোখের উপর হাত। ফ্রেশ হতেও ইচ্ছা করছে না। কেমন যেন ক্লান্ত লাগছে শরীর টা। আর মনটাও ভার হয়ে আছে কদিন থেকে। আসলে শুয়ে শুয়ে সাঁচির কথা ভাবছিলো। সেদিনের পর থেকে ও সাঁচির সাথে কথা বলছে না খুব একটা। খুব বিরক্ত লেগেছিলো সাঁচির কাজ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে এত করে বুঝানোর পরও সে যদি এরকম করে তাহলে বিরক্ত লাগবে না? ফুয়াদ তো সময় চেয়েছিলো আর সাঁচিও রাজি হয়েছিল। তবে? তবে কেন এমন করলো? ওর সাঁচির দিকে তাকালেও খারাপ লাগে। মেয়েটা তারপর থেকে মন খারাপ ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওর সামনে আসে না পারতপক্ষে। ইদানিং আবার প্রিয়তার রুমে থাকতে শুরু করেছে। মানা করতে যেয়েও করেনা ফুয়াদ। কেন করবে? সাঁচি কেন ওকে সরি বললো না? থাক তবে ওর মতো?
এসব আকাশ পাতাল ই ভাবছিলো তখনই সাঁচির গলা শুনলো। হাত সরিয়ে দেখলো সাঁচি দাড়িয়ে আছে সামনে, চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি।
“সরি! কিছু বলছিলে নাকি?”
” আর ইউ আ গে? ”
চোখ বড় বড় করে তাকালো ফুয়াদ। চোখে অবিশ্বাসের দৃষ্টি –
“কি বললে?”
” ও আচ্ছা! ইংলিশ বোঝেন না? আচ্ছা ঠিক আছে, বাংলায় বলছি। আপনি কি গে মানে সমকামী ??”
ওর কথা শুনে ফুয়াদ বিছানায় উঠে বসলো। ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করলো। ওর হাসি দেখে কিছুক্ষণ রাগী দৃষ্টিতে ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে থাকল সাঁচি- “বেহায়া লোক! হাসি হচ্ছে! আমি কি এমন হাসির কথা বলেছি!”
বিরবির করলো সাঁচি। ফুয়াদের হাসতে হাসতে কাশি উঠে গেল। সাঁচি সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিলো ফুয়াদের দিকে। ফুয়াদ হাসি আটকে পানি খেলো একটু, তারপর গ্লাস টা আবার সাঁচির দিকে ফেরত দিলো। সাঁচি গ্লাস হাতে নিতে নিতে বললো-
” খুব তো হাসলেন? তা এখন বলেন তো? আপনি যদি গে না হয়ে থাকেন তবে চুমুতে এতো কিসের এ্যালার্জি!? একটা চুমুই তো খেয়েছি! তাতেই এতো রাগ? মেয়েদের মতো কান্না কাটি করছেন।
মনে হচ্ছে আপনার ইজ্জত লুটে নিয়েছি। ”
“কি বলছো এসব? তোমার কি ধারনা আছে তুমি কি বলছো?”
“খুব জানি!আপনার আচরন দেখে এর চাইতে ভালো কিছু মনে আসছে না,বুঝলেন? ”
” ওহ সাঁচি! তুমি আসলেই একজন মজার মানুষ, বুঝলে? এতো মজা করে কথা বলো ক্যান? আচ্ছা! একটা চুমুই তো! ঠিকই বলেছো! গতদিন তো তুমি করেছিলে? আজ আমি করি? আমার কাছ থেকে চাও তো নাকি? আর চুমু খেলেই বোঝা যাবে যে আমি ঐ টা না। তাইতো?”
হাসতে হাসতেই কথাটা বললো ফুয়াদ।
” হ্যা, চাই। আপনার কাছে চাইলেই মনে হচ্ছে করবেন? হুহ! চরিত্রবান স্বামী বলে আমাকে চুৃুমু দেবে! এতো এলার্জি মেয়েতে তো বিয়ে করেছেন কেন?”
” এটা একটা ভালো প্রশ্ন করেছো! আমিও ভাবি কেন বিয়ে করলাম? তবে উত্তর কিন্তু আছে আমার কাছে। শুনবে?”
সাঁচি ভ্রু কুঁচকে তাকালো ফুয়াদের দিকে।
“আজকাল বয়স হচ্ছে বুঝলে? বন্ধু বান্ধব সব বিয়ে করে ফেলছে। আমি কিভাবে সিংগেল থাকি বলোতো? কথা বলার ও তো লোক চাই, তাই না?”
“স্বার্থপর কোথাকার? শুধু নিজের চিন্তা করেছেন। যাকে বিয়ে করেছেন তার চিন্তা কে করবে শুনি?”
“আমিই করবো! কে করবে আবার?”
“এই আপনার চিন্তা করার নমুনা? আপনি আমাকে দূরে সরিয়ে রাখছেন। কেন রাখছেন তার কোনো ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না! এসবের মানে কি?”
“সাঁচি, সেদিনই তো কথা হলো তোমার সাথে? কিভাবে আগাবো জীবনে দু’জনে বসেই তো ঠিক করলাম। তবে এতো তাড়াতাড়ি অস্থির হচ্ছো কেন বলো তো? এরমধ্যেই তুমি আবার… ”
ক্লান্ত গলায় বলে ফুয়াদ। মেয়েটা সত্যি বড্ড অবুঝের মতো করছে।
“ঠিক তো হয়েছিলো কিন্তু আপনি তো হাত পা গুটিয়ে বসে আছেন। তাই আমাকেই স্টেপ নিতে হচ্ছে। ”
“আচ্ছা, কি প্রমান করতে হবে? আমি গে না বা আমার কোন প্রবলেম নাই এটাই তো? আসো আজকে তোমাকে একটা চুমু দেই। আ লং ওয়েটেড কিস, তবে একটা শর্ত আছে কিন্তু!?”
সাঁচি তাকিয়ে থাকলো ফুয়াদের দিকে। বুঝার চেস্টা করছে, ফুয়াদ কি ওর সাথে ফান করছে নাকি? ও কি সত্যি সত্যি কিসি দেবে সাঁচিকে?
“ওমা! ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন!? এসো, কাছে এসো! আচ্ছা ঠিক আছে, আমিই আসছি। ছেলেদের ই তো কাছে আসতে হয় তাই না?”
সাঁচির সামনে এসে দাড়ালো ফুয়াদ। সাঁচি এখনো ভ্রু কুঁচকে আছে? ওর ঠিকঠাক বিশ্বাস হচ্ছে না যে ফুয়াদ এমনটা করবে। ফুয়াদ সাঁচির দিকে তাকিয়ে চোখ নাচায় –
“শর্তটা শুনবে না?”
“কিকককি শর্ত?”
নার্ভাস সাঁচি।
“চুমুর পরে তোমায় বলতে হবে যে আমি গে নাকি পুরুষ মানুষ!!?”
ফুয়াদের চোখে দুষ্টমি খেলা করছে। সাঁচি এবার একটু ঘামতে শুরু করেছে। ফুয়াদ সত্যি সত্যি ওকে কিস করবে!! শরীরের তাপমাত্রা বাড়ছে সাঁচির। গরম লাগছে ওর। সাঁচি যখন বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে দুলছিল তখনই ফুয়াদ ওর আরো একটু কাছে এলো, একহাত দিয়ে কোমর পেচিয়ে ধরল আর এক হাত চুলের মধ্যে দিয়ে মুখটা উচু করে ধরলো। কিছুক্ষণ সাঁচির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে নিলো ঠোঁট টা। তারপর একবার আলতো করে ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট ছুইয়ে পরে পুরো ঠোঁট ই মুখে নিয়ে নিলো। সাঁচি আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো, নিজের অজান্তেই ওর হাত দুটো চলে গেল ফুয়াদের বুকে।
কিছুক্ষণ বাদে সাঁচিকে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে এসে দাড়ালো ফুয়াদ। সাঁচি তখনো বিভোর হয়ে আছে নেশায়। চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে আগের মতই। ফর্সা মুখটা টকটকে লাল হয়ে আছে, নাকের ডগা ঘামে চিকচিক করছে। অসম্ভব মায়াবী লাগছে সাঁচিকে। ফুয়াদের যে কি হলো তখন? বুকের মাঝে উথাল পাথাল আবেগের ঢেউ আছরে পড়ল যেন! সব কিছু ভুলে ও নেশারুর মতে এগিয়ে গেল সাঁচির দিকে। সজোরে সাঁচিকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো চুমো খেতে শুরু করলো।
ঠিক কতক্ষণ পরে জানে না সাঁচি, মনেহলো ওর গাল দুটো ভিজে যাচ্ছে। সাঁচি বুঝলো না কার চোখের পানি? ওর নিজের নাকি ফুয়াদের? কিন্তু ফুয়াদ কেন কাঁদবে? ও তো নিজ ইচ্ছায় চুমু দিচ্ছে ওকে! তখনই মনে পড়লো যে, সেদিন ও কাঁদছিলো ফুয়াদ যখন সাঁচি ওকে চুমু দিয়েছিলো। কেন কাঁদে ফুয়াদ? একটা চুমুতে কান্নার কি?? ও কি তবে অন্য কাউকে ভালোবাসে? তাহলে ওকে কেন বিয়ে করলো?? ওর মতো ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষ বিয়ে করে একটা মেয়েকে ঠকাবে এমনটাও মানতে পারে না সাঁচি! তাহলে কি হতে পারে!!??
” আমি খুব কস্টে আছি, ফুয়াদ! আমাকে তুমি মুক্ত করো, প্লিজ! আর পারছি না। নিয়ে যাও আমায়,প্লিজ!”
কে যেন ফুয়াদের কানে কানে ফিসফিস করে। আচমকা ছিটকে সরে যায় ফুয়াদ। কি করলো ও? এতো অল্পতেই সাঁচির কথার ফাঁদে পা দিলো? এতো অল্পতেই হেড়ে গেলো নিজের রিপুর কাছে? নিজের কাছে করা নিজের ওয়াদাও তো রাখতে পারলো না? মেয়েরা এমন হয় কেন? মায়া আর আবেগ দিয়ে যে কাউকে বেধে ফেলে অল্প সময়েই। এই কয়েকদিনের পরিচিত মেয়েটাও কিভাবে ওকে মায়ায় জড়িয়ে ফেলছে? ওর প্রতি ঠিকঠাক রাগও দেখাতে পারে না আর দূরেও ঠেলতে পারছে না? কি এক অদ্ভুত দোলাচল! ফুয়াদ সাঁচির দিকে তাকিয়ে দেখলো ও তখনও চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে। ওর চোখের পানিতে সাঁচির মুখ ভিজে আছে। সাঁচির থেকে মুখ ফিরিয়ে ফুয়াদ চট করে বাথরুমে ঢুকে গেল। ওর কান্না ভেজা মুখ সাঁচিকে দেখাতে চায় না। পুরুষ মানুষের আবেগ দেখাতে নেই, পুরুষ মানুষের কান্না করা পাপ!
এই প্রথম ভালোবাসার ছোয়ায় সাঁচি ভেসে যাচ্ছিলো। ভালোলাগায় ডুবে বুদ হয়ে থাকা সাঁচির চোখ খুলতে ইচ্ছা হচ্ছিল না একটুও। একটু লজ্জা ও লাগছিলো ফুয়াদের সামনাসামনি হতে। তবুও অনেক কস্টে জোর করে চোখ খুলে দেখলে ফুয়াদ নেই। রুমে চোখ বুলালো, নাঃ! নেই! কোথায় গেল? হঠাৎ বাথরুমে পানি পড়ার আওয়াজ। বুঝলো ফুয়াদ বাথরুমে ঢুকেছে। যাক ভালোই হলো ও সামনে নেই। লজ্জা পেয়েছে হয়তো? ফুয়াদের চোখের পানিতে ভিজে যাওয়া গাল দুটো মুছে নিলো সাঁচি। একটুখানি ভালোবাসা তবুও কতো ভালো লাগছে? প্রিয় মানুষের ছোয়া বুঝি এমনই! একটুতেই মন ভরে যায়! শেষের দিকে এসে ঠোঁটে একটা কামড় দিয়েছে ফুয়াদ। জ্বলছে খুব এখন। হাত দিয়ে দেখলো রক্ত বেরোচ্ছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে টিস্যু দিয়ে ঠোঁট টা মুছে একটু লিপজেল লাগিয়ে নিলো। সাঁচি ভাবছে ফুয়াদের কি এমন কষ্ট যার কারনে ও কাঁদে! ওর জানতেই হবে? একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ যখন কাঁদে তখন বুঝতে হবে ব্যাপারটা গুরুতর। নিশ্চয়ই বুকের ক্ষতটার গভীরতা অনেক!!??
ফুয়াদের মা কতো আশা করে ছেলের দ্বায়িত্ব তার হাতে দিয়েছে, এখন ফুয়াদ যদি এরকম পাগলামি করতে থাকে তাহলে তো বিপদ? ওই বা আর কতোদিন ধৈর্য্য ধরে বসে থাকবে? এরকম চলতে থাকলে ওরও তো বিরক্তি চলে আসবে ফুয়াদের প্রতি। আর ছেলেটাই বা এমন কেন করছে? ছেলেটার মনে কি চলছে তা মুখে না বললে বুঝবে কি ভাবে সাঁচি? কথাও তো বলতে চায় না? অর্ধেক কথা বলে আর অর্ধেক মনের মধ্যে রেখে দেয়! এমন অবস্থায় সল্যুশান আসবে কোত্থেকে?
চিন্তিত অবস্থায় রান্না ঘরের দিকে গেল সাঁচি।
চলবে—-
Farhana_Yesmin