#আড়ালে_কে,০৪,০৫
[ #পর্ব – ০৪ ] [ ভায়োলেন্স এলার্ট ]
#লেখক – #সালাহউদ্দিন_তারিক ( জুনিয়র মুগলি )
স্ত্রী সাইফার পিঠে একের পর এক লা*থি দিয়ে চলেছে সিয়াম। একবারের জন্যও তার নজরে আসেনি র*ক্তের ফোয়ারা। সাইফার মাথা থেকে র*ক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে যখন মেঝের মাঝখানে চলে এসেছে তখন তা নজরে আসে তার। র*ক্ত দেখে ভয়ে কলিজা শুঁকিয়ে আসে সিয়ামের। পা দু’টো আর তার ভর রাখতে পারে না। ধপাস করে পরে যায় সে। সাইফার মাথাটা দ্রুত তার পায়ের উপরে উঠিয়ে আনে। তারে পুরো হাত র*ক্তে ভরে যায়। সিয়ামের মুখ থেকে একের পর এক অর্থহীন শব্দ বেরিয়ে আসে। কিংকর্তব্য বিমুখ হয়ে যায় সে। অনেকক্ষন ধরে সাইফার মাথাটা পায়ের উপরে নিয়ে বসে থাকে।
সাইফার মাথায় এক টুকরো কাপড় চেপে ধরার কথাও মনে হয় না সিয়ামের। র*ক্ত বেরুতে বেরুতে দরজার নিচে দিয়ে বাইরে চলে যায়। সাইফার শরীরটা আস্তে আস্তে নড়তে শুরু করে। একে ঠিক নড়াচড়া বললে ভুল হবে। কয়েকটা কাঁপুনি দিয়েই নিস্তেজ হয়ে যায় তার শরীর। ঠান্ডা হতে শুরু করে সাইফার মৃতদেহ।
হুঁশ ফিরে সিয়ামের, স্ত্রী মাথাটা পা থেকে নামিয়ে দৌড়ে গোসল খানায় যায় সে। তাড়াতাড়ি পুরো শরীরের রক্ত ধুয়ে ফেলে। পরনের লুঙ্গিটা র*ক্তে লাল হয়ে গেছে। তাই সেটা পাল্টে পেন্ট পরে নেয়। পরনের টি-শার্ট ও পাল্টে নেয়। হন্য হয়ে কতক্ষণ দৌড়াতে থাকে পুরো ঘরে। কি রেখে কি নিবে বুঝতে পারে না। পুরো ঘর খুঁজে কোথাও দশটা টাকাও পায় না। নিজের পকেটে আগের মাত্র পঞ্চাশ টাকা ছিল। এই টাকা আর সাইফার বাটন ফোন ও নিজের মোবাইল সহ দরকারি সব কাগজপত্র নিয়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। বারান্দায় এসে দেখে র*ক্ত বারান্দাতেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।
ঘর থেকে বেরুতে গিয়ে পায়ে অল্প র*ক্ত লেগে গিয়েছিল। সেগুলো বাইরের একটা টিপকল থেকে ধুয়ে বেরিয়ে গেল সে। কোথায় যাবে, কি করবে কিছুই জানা নেই তার। সে কেবল একটি কথাই জানে, যেভাবেই হোক তাকে পালাতে হবে। অনেক দুরে পালিয়ে যেতে হবে ।
..
পাঁচ ( লেখকের আইডি – #সালাহউদ্দিন_তারিক )
..
নাজমুল সাহেবের বুক থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে সোহানা। বারবার মোচড়াচ্ছে নিজের শরীর। এটা মোটেও পছন্দ হয় না নাজমুল সাহেবের। তাই সোহানার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, ‘চুপচাপ শুয়ে থাক, বেশি মোচড়ামুচড়ি করলে হাত ঠ্যাং মুচড়ে ড্রামের ভিতরে ঢুকিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দিব।’
ভয়ে সোহানায় কান ঠান্ডা হয়ে আসে। একেবারে জড় পদার্থের মতো চুপ হয়ে যায় সে। প্রথমবারের মতো একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় এই নবদম্পতি।
.
.
ফজরের আজানের পরপরই দেশি মোরগের ডাক শোনা যায়। ঘুম ভাঙে নাজমুল সাহেবের। ডিম লাইটের আলোতে দেখতে পায় সোহানা একটা বাচ্চা মেয়ের মতো গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে। কানের উপরের ছোট চুল গুলো মুখের উপরে ঝুলে আছে। সোহানাকে দেখে কেমন যেন মায়া লাগতে থাকে ওনার। নিজের মুখটা সোহানার খুব কাছে নিয়ে যান উনি। ডিম লাইটের সল্প আলোতে অতোটা বুঝা যাচ্ছে না, কিন্তু তবুও স্ত্রীর গলাতে নিজের আঙুলের ছাপ দেখতে পান নাজমুল সাহেব। সোহানার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেন। খুব আস্তে আস্তে বলেন, ‘তোমাকে খুব আঘাত করে ফেলেছি! তাই না সোহানা?’
কথাগুলো এতোটাই তীক্ষ্ণ শব্দের ছিল যে তা সোহানার কান অবধিও পৌঁছেছে বলে মনে হয় না। নাজমুল সাহেব অনেকক্ষণ বসে থাকেন সোহানার মাথার পাশে। তার লাবণ্যময়ী চেহারাটা ডিম লাইটের নীলচে আলোতে চকচক করছে। কি ভেবে যেন আবারও স্ত্রীর দিকে ঝুঁকে গেলেন নাজমুল সাহেব, কতক্ষণ খুব কাছ থেকে তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। অতঃপর তার চুলের মন মাতানো সুগন্ধ নিলেন নিঃশ্বাসের সাথে। সোহানা একটু নড়েচড়ে উঠল, পার্শ পরিবর্তন করে অন্য দিকে ফিরল। নাজমুল সাহেব নিজেকে একটু সামলে নিলেন, পরীক্ষা করে দেখলেন সোহানা তখনও গভীর ঘুমেই তলিয়ে আছে। নিশ্চিত হতেই চোখ বন্ধ করে সোহানার কপালে একটা চুৃমু খেয়েই দ্রুত সরে গেলেন সেখান থেকে। সোহানা একটু নড়ে উঠে বাম হাতের পিঠ দিয়ে কপাল মুছল। নাজমুল সাহেবের বুুক যেন ধুকধুক করে উঠল, কোথাও সোহানা জেগে ছিল না তো!
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে আবার নিজেই উত্তর দিলেন মনে মনে, ‘যা, উঠলে কি হয়েছে। আমার বউরে আমি চুমু দিছি তাতে সমস্যা কি!”
অতঃপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কতক্ষণ নিজেকে দেখলেন নাজমুল সাহেব। চুলগুলো খুঁটিয়ে দেখলেন ভালো করে, ‘কই একটা চুলও তো পাকেনি!’
খোচা খোচা দাঁড়ি গুলোও খুঁটিয়ে দেখলেন, ‘সব কালো চকচকে।’
বিভিন্ন পোজ দিয়ে নিজেকে ভালো করে দেখলেন তিনি, সব দিক দিয়েই তো সুপুরুষ মনে হচ্ছে! নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করতে লাগলেন একেকপর এক। পাঁচ ফিট ছয় ইঞ্চি উচ্চতা, কোনো মেদ নেই, চুলে পাক ধরেনি। তবুও কি সমস্যা আমাকে পছন্দ করতে! বয়স কি খুব বেশি হয়ে গেছে! সবে মাত্র ৩০ বছর। ওর থেকে মাত্র আট বছরের বড়। তাতে কি হয়েছে, কেন অপছন্দ হবে আমাকে!
ভাবনায় কোনো কুল কিনারা পেলেন না তিনি। পরনের টি-শার্ট টা খুুলে অন্য একটা গায়ে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। বাবা-মার ঘরের দরজাতে কান পেতে শোনার চেষ্টা করলেন কেউ উঠেছে কি-না। ভিতরে একটা ইঁদুর দৌড়ানোর শব্দও ওনার কানে আসল না। কালকে রাতের কথা মনে পরতেই ওনার বুক কেঁপে উঠল। মায়ের এখন বিশ্রামের প্রয়োজন, এই ভেবে কাউকে আর ডাকলেন না তিনি।
আস্তে আস্তে সিঁড়ি ঘরের দরজাটা খুলে ছাদে উঠে গেলেন। মুক্ত বাতাসে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে নিতে হিসাব করতে লাগলেন জীবনের পাওয়া না পাওয়াগুলো। কলেজ জীবনে অন্য দশ জনের মতো ওনার জীবনেও প্রেম এসেছিল। ভালো লাগত, সব লজ্জা ঝেড়ে মুছে প্রিয়জনকে জানিয়েছিলেন ভালোলাগার কথাটুকু। কিন্তু প্রেমের সুযোগ হয়ে উঠেনি। মেয়েটা পূর্ব থেকেই অন্য জনের প্রেমে মজেছিল। নাজমুল সাহেব তখন দ্বিতীয়বার আর ঘাঁটেননি সেই মেয়েকে। কলেজ জীবন ছেড়ে ভার্সিটিতে উঠার পরে আর এসব নিয়ে ভাবারই সময় পাননি। বাবার অসুস্থতা ওনাকে একের পর এক টিউশনি করতে বাধ্য করেছে। মাস্টার্স শেষ করে আর পড়াশোনাতে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগও করতে পারেননি। যোগ দিতে হয়েছিল চাকরিতে।
তারপর কবে যে সংসারের ঘানি টানতে শুরু করলেন আর বিয়ের বয়স পেরিয়ে যেতে থাকল তা বুঝতেই পারেননি। হাত দু’টো দু’দিকে ছড়িয়ে দিয়ে একটু ব্যায়াম করার চেষ্টা করলেন। কতদিন শরীরের যত্ন নেওয়া হয় না। ভুঁড়িটা অল্প অল্প করে বাড়তে শুরু করেছে। ছাদের মেঝেতে ভর দিয়ে কয়েকটা বুক ডাউন চেষ্টা করলেন। পাঁচটা নিয়েই হাঁপিয়ে উঠলেন। মসৃণ পরিষ্কার ছাদেই শুয়ে পরলেন ক্লান্ত হয়ে। নিজেকে নিজেই বলতে থাকলেন, ‘তুই তো বুড়া হয়ে যাচ্ছিস নাজমুল। তুই বুড়া হয়ে যাচ্ছিস।’
বেশিক্ষণ আর একা থাকা হলো না নাজমুল সাহেবের। ছোট বোন মোবাইল হাতে দৌড়ে ছাদে আসল, ‘ভাইয়া ভাইয়া, তোমার ফোন আসছে।’
বোনের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে দেখলেন অফিসের কল। রিসিভ করে কানে দিতেই বস একটার পর একটা দ্বায়িত্ব দিতে থাকলেন ওনাকে। নাজমুল সাহেব রোবটের মতো কেবল ‘ জি স্যার, জি স্যার’ করে গেলেন।
কথা শেষ করে কল কাটতেই খেয়াল করলেন ছোট বোন মাথার পিছনে এসে দাড়িয়েছে। নাজমুল সাহেব তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আচ্ছা নাদিয়া আমাকে দেখে তোর বুড়া মনে হয়?’
নাদিয়া কতক্ষণ ঠোঁট উল্টে ভাবল। তারপর ভাইয়ের মাথার চুল গুলো টানতে টানতে বলল, ‘আমার কাছে তো মনে হয়। কিন্তু ভাবী কি তোমাকে বুড়া বলল না-কি?’
নাজমুল সাহেব ঘাড় নাড়লেন, না সূচক জবাব দিলেন নাদিয়াকে।
নাদিয়া আরো কতক্ষণ ভাইয়ের চুল টেনে দিল। তারপর আমতা আমতা করে বলল, ‘ভাইয়া তোমাকে একটা কথা বলি?’
নাজমুল সাহেব হেসে বললেন, ‘তুই আমার একটা মাত্র বোন। তুই একটা কেন একশোটা বলবি। তবে শর্ত আছে একটা।’
নাদিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ কি শর্ত? ‘
নাজমুল সাহেব হেসে বললেন, ‘খালি চুলগুলো আরেকটু ভালো করে টেনে দিতে হবে। সেই কখন থেকে খালি হাত বুলিয়ে যাচ্ছিস।’
নাদিয়া উচ্চস্বরে হাসল আর ভালো করে চুল গুলো টানতে লাগল।
আরামে চোখ দু’টো বন্ধ করলেন নাজমুল সাহেব। লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস নিলেন কিছুক্ষণ। তারপর নাদিয়াকে তাগাদা দিলেন তার কথাটা বলার জন্য।
নাদিয়া আমতা আমতা করে বলল, ‘আমার না খুব ভয় করছে ভাইয়া। তুমি আবার বকা দিবে না তো আমাকে?’
নাজমুল সাহেব তাকে আশ্বাস দিলেন। নাদিয়া কতক্ষণ ভেবে চিন্তেে বুকে সাহস নিয়ে বলল, “আমি না ভাবীকে একটা ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে খেতে দেখেছি।’
নাজমুল সাহেব দ্রুত বেগে ঘাড় ঘুরালেন নাদিয়ার দিকে। নাজমুল সাহেবের লালচে চোখ দু’টো দেখেই ভয় পেয়ে গেল নাদিয়া। ভয়ে তার বুক দ্রুত বেগে উঠানামা করতে লাগল। ভাইয়ের মুখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকার সাহস হলো না নাদিয়ার। সিঁড়ি দিয়ে একপ্রকার দৌড়ে ঘরে চলে গেল সে।
( চলবে ইন শা আল্লাহ )
#গল্প – #আড়ালে_কে [ পর্ব – ০৪ ]
#লেখক — সালাহউদ্দিন তারিক (জুনিয়র মুগলি)
#গল্প – #আড়ালে_কে [ #পর্ব -০৫ ] [ ১৮+ এলার্ট ]
লেখক – #সালাহউদ্দিন_তারিক
নিজের স্ত্রী অন্য কারো সাথে ঘুরে, অন্য কারো সাথে রেস্টুরেন্টে যায়। এমন কথা শুনলে কারোরই মাাথা ঠিক থাকার কথা নয়। এমনিতেই রাতে হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ দেখার পর থেকেই মাথা গরম হয়ে আছে এখনতো রাগে নাজমুল সাহেবের মাথার রক্ত টগবগ করতে শুরু করছে। চোখ বন্ধ করে কতক্ষণ কি যেন ভাবলেন, তারপর স্বজোরে এক ঘু*ষি মারলেন ছাদের পিঠে।
ছাদের উপরের দিকে তেমন কোনো শব্দ না হলেও নিচের ঘরে দ্রিম করে প্রচন্ড শব্দ হলো। নাজমুল সাহেবের বাবা-মা আধ সজাগ থেকে লাফিয়ে উঠৈ পরলেন। সোহানারও ঘুম ভেঙে গেল। সোহানা ভয়ে এদিক ওদিক থেকে দেখতে লাগল। নাজমুল সাহেবকে কোথাও দেখতে না পেয়ে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।
ঘু*ষি দেওয়ার পরপরই উনি বুঝে গেলেন যে নিচে কি পরিমাণ শব্দ হয়েছে। তাড়াতাড়ি বসা থেকে উঠে পরলেন, পাশেই একটা কাঠের টুকরো দেখতে পেলে সেটা নিয়ে ছাদে ঠকঠক করতে লাগলেন। ওনার ছোট বোন নাদিয়া আবারও দৌড়ে ছাদে আসে শব্দ শুনে। এসে দেখে তার ভাই একটা কাঠের টুকরো নিয়ে ছাদে ঘসছে। তবুও ভাইকে জিজ্ঞেস করে, ‘কি হয়েছে ভাইয়া? ‘
নাজমুল সাহেব স্বাভাবিক গলায় উত্তর দেয়, ‘কাঠটা উপর থেকে নিতে গিয়ে পরে গেছিল।’
‘ ওহ্, নিচে কি জোরে শব্দ হয়েছে, আব্বু-আম্মু ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠেছে। ‘
‘ আল্লাহ্ আম্মু ভয় পাইছে! ইশ্ যা যা, নিচে যা তাড়াতাড়ি। আম্মু যেন রাগারাগি না করে।’
নাদিয়া আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি নিচে চলে গেল।।
ঘড়িতে তখন সময় সকাল ৬:২২ মিনিট।
এখন সকালের রান্না বসানোর সময় হয়ে এসেছে। তারমধ্যে রাতে যা হয়েছে সেটা নিয়েও ভয়ে আছে সোহানা। তাই নাজমুল সাহেব সামনে পরার আগে আগেই রান্নার সরঞ্জাম গোছাতে শুরু করল রান্না ঘরে চলে যাওয়ার জন্য। অমনি ঘরে ঢুকল নাদিয়া। পায়ের শব্দ পেতেই ভূত দেখার মতো পিছনে তাকালো সোহানা। নাদিয়ার চেহারা দেখে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘ওহ্ নাদিয়া তুমি! আসো ভিতরে আসো।’
নাদিয়া ঘরে ঢুকে আয়নার সামনে থাকা সাজসজ্জার জিনিস একটার পর একটা ধরতে লাগল। সোহানা কখনো এটা পছন্দ করে না যে কেউ তার সাজের জিনিস ধরুক। সে মাত্র ঘাড় ঘুরিয়ে বলতে যাবে ‘এগুলা ধরো না নাদিয়া।’ অমনি আবারও রাতের কথা মনে হয়। ভাবে নাজমুল সাহেবের আদরের বোনের সাথে ঝগড়া করার সাহস এখন করা যাবে না। ওর মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হয় না। কেবল দ্রুত হাতে ফ্রিজে থাকা তরকারি বের করে একটা পাতিলে নেয়।
নিজের দুই হাতে সব আঁটছে না দেখে নাদিয়াকেও কিছু নিতে বলে। নাদিয়া বিনা বাক্যে ভাবির কাজে সাহায্য করে। সোহানা নিজের হাতের সব রান্না ঘরে রেখে আবার ঘরে আসতেই দেখে নাজমুল সাহেব ঘরে চলে এসেছে। ভয়ে ভয়ে ঘরে ঢুকে সে। আড় চোখে ওনার দিকে তাকাতেই দেখে ডান হাতের পিঠে অনেকটা র*ক্ত। আঙুলের কর গুলোর পিছনে র*ক্তের ফোঁটা গুলো উঁচু হয়ে আছে। সোহানা প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে ধারণা করতে পারে একটু আগের ঐ শব্দের কারণেই তবে এই র*ক্ত। কোনো কারণে ওয়ালে ঘু-ষি দিয়েই তবে হাত ছিলেছে। নাজমুল সাহেব সোহানার উপস্থিতি টের পেতেই নিজের হাত সামলে নিলেন। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকালেন সোহানার দিকে। সোহানার ভয় কমে না, ঘন ঘন ঢোকর গিলতে থাকে সে। নাজমুল সাহেব নিজের দৃষ্টি পরিবর্তন করেন, ঠোঁট দু’টো শক্ত করে একে অপরের সাথে চেপে ধরে নিজের রাগের বহিঃপ্রকাশ করেন। সোহানায় মুখটা আরো মলিন হয়ে যায় মাথা নিচু করে ফ্রিজের দিকে হাঁটা দেয়। তাড়াতাড়ি নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
নাজমুল সাহেব একা একা-ই হাসতে থাকেন। মনে মনে বলেন, ‘তোর চেহারায় আরো কত ভঙ্গিমা দেখা বাকি তা আমি নিজেও জানি না।’
হাত ধুয়ে মুছে অল্প হ্যাক্সিসল লাগিয়ে আবারও বিছানায় একটু পিঠ ঠেকান তিনি।
অফিসে দ্বায়িত্ব বেড়ে গেছে, কাজ বেড়ে গেছে, অতিরিক্ত সময়ও দিতে হবে সেখানে। বাসা থেকে আসা যাওয়া করে অফিস করার সুযোগ আর নেই। অফিসের আসে পাশে একটা বাসা নিতে পারলে মন্দ হয় না। সেই সাথে সোহানাকে যদি সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়, তবে হাড়ে হাড়ে বুঝানো যাবে তার এই দুঃসাহস কতটা ক্ষতির কারণ হতে পারে। ভাবতেই শয়তানি হাসি ফুটে উঠে নাজমুল সাহেবের মুখে।
লেখকের আইডি- #সালাহউদ্দিন_তারিক
এসব ভাবতে ভাবতে আবার কখন ঘুমিয়ে গেলেন তিনি নিজেও বুঝতে পারলেন না। নাদিয়া এসে যতক্ষণে খাওয়ার জন্য ডাকল ততক্ষণে অনেক সময় হয়ে গেছে। অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে, তাড়াতাড়ি কয় লোকমা মুখে দিয়ে অফিসের জন্য তৈরী হলেন তিনি। অন্যদিন যা-ও এই সময়টাতে সোহানা ওনার কাছে আসত, কোনো জিনিসের প্রয়োজন থাকলে সেটার কথা বলত, আজকে আর তার সাহস পায়নি সে। যতক্ষণ নাজমুল সাহেব অফিসে রওনা দেননি ততক্ষণ সে একপ্রকার লুকিয়ে লুকিয়ে ছিল। নাজমুল সাহেব অফিসে রওনা হতেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল সে। বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে মোবাইলটা হাতে নিল সবার আগে। হোয়াটসঅ্যাপের সব মেসেজ চেক করল একে একে। কোথাও তার প্রেমিকের মেসেজ নেই। তার সব মেসেজ ডিলেট করা। সোহানার স্পষ্ট মনে আছে যখন সে মোবাইল রেখে শুয়ে পরেছিল তখন মেসেজ ডিলেট করতে খেয়াল ছিল না তার। এরপর যখন নাজমুল সাহেব ঘরের দরজায় টোকা দিলেন, তখনও সে উঠে সবার আগে মোবাইলের মেসেজ চেক করে। সেখানেও প্রেমিকের একটা মেসেজও ছিল না। ঘুমানোর সময় সে দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়েছিল। কারণ নাজমুল সাহেবের বাবা-মা এবং ছোট বোন আলাদা ইউনিটের রুমে থাকে আর ওনাদের নবদম্পতির ঘর আর রান্নাঘর হচ্ছে আলাদা ইউনিটে। এজন্য সব সময়ই দরজায় লক দেওয়া থাকে ভিতর থেকে।
ভিতর থেকে দরজা দেওয়া, ঘরে অন্য কেউ ছিল না। তবে মেসেজ কে ডিলেট করতে পারে! মোবাইল কে জায়গা থেকে সরাতে পারে! কোনো ভাবেই এসব বুঝে আসে না সোহানার। সে একবার ভাবে হয়তো সে নিজেই মেসেজ ডিলেট করে ঘুমিয়েছিল কিন্তু সেটা তার খেয়াল নেই। কিন্তু পরবর্তী আবার যখন রাতের জঘন্য আক্রমণের কথা মনে পরে তখনই আবার সে মনে করে নাজমুল সাহেব হয়তো তার মেসেজ গুলো দেখে ফেলেছে। মেসেজ যদি না-ই দেখে তবে হঠাৎ এভাবে আক্রমণাত্মক কেন হয়ে যাবে! আবারও ভাবে দরজা তো ভিতর থেকে লক করা ছিল, তিনি কিভাবে দেখবেন!
বার বার সোহানার চিন্তাগুলো একটা আরেকটার সাথে প্যারাডক্স তথা আপাতবিরোধী হয়ে যাচ্ছে। কোনো বিষয়ই তার মাথায় খেলছে না। শেষে সিদ্ধান্ত নিল এইসব কিছু তার প্রেমিককে জানাবে।
দেরি না করে, ফোনে কল দিয়ে রাতের সব কথাই তাকে জানালো সে। তাগাদা দিল যত দ্রুত সম্ভব তাকে যেন বিয়ে করে নেয়। সে তার বর্তমান স্বামীকে তালাক দিয়ে দিবে। ওপাশ থেকে অনুরোধ আসল, “দয়া করে আর কিছুদিন অপেক্ষা করো। আমি বাড়িতে জানাতে পারব না এখন। তাই কিছু টাকা পয়সা হাতে নিয়ে নিই।”
সোহানা তার রাগ ঝাড়তে থাকে, “হ্যাঁ তুমি ঐ টাকা জোগাড় করতে করতে আমিই মরে যাব। আমার লাশ নিয়ে গিয়ে বিয়ে কর তখন।”
ওপাাশ থেকে আবারও অনুরোধ আসে, “সত্যি বলছি, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। একটু এই সপ্তাহ টা সময় দাও আমি সব ব্যবস্থা করতেছি, তুমিই বলো আমার কি তোমার কষ্ট সহ্য হয়?”
ইমোশনাল কথায় মন গলে সোহানার। মিষ্টি গলায় বলে, “আচ্ছা জানটা খুব তাড়াতাড়ি করো। আমিও তোমার সাথে এক ছাদের নিচে থাকার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি।”
– ‘শুধু কি এক ছাদের নিচে?’ রোমান্টিক ইঙ্গিত আসে ওপাশ থেকে।
সোহানাও সাড়া দিয়ে বলে, “জি না, আরো অনেক কাছে প্রিয়তম। খুব কাছে থাকব, তোমার শরীরের সবচেয়ে কাছে।”
ওপাশের ছেলেটা হেসে হেসে বলে, “হ্যাঁ প্রিয়তমা অনেক কাছে আসবে তুমি। এখন আর এসব বলো না। এসব কথা রাতে বলব আমি রাস্তায় আছি, বাজারে যাব। ”
‘ আচ্ছা তবে বাজারে যাও। রাতে সুযোগ পেলে কথা বলব, অনেক কাছে আসব, অনেক কথা বলব। ‘
‘ আচ্ছা ঠিক আছে জান, আমিও তোমাকে কাছে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। এখন ফোন রাখি!’
সোহানা ছোট্ট করে উত্তর দেয়, “আচ্ছা।’
ফোনকল কেটেই মুচকি মুচকি হাসতে থাকে সোহানা। মুহুর্তেই যেন সে ভুলে যায় নাজমুল সাহেবের কথা। গতরাতে সাথে এতো কিছু হওয়ার পরেও আজ রাতে প্রেমিকের সাথে একান্ত আলাপের ইচ্ছে পোষণ করে।
এবার মোবাইল ফোন রেখে আয়নার সামনে দাঁড়ায় সে। গলায় পেঁচানো ওরনাটা খুুলে নিখুঁত ভাবে দেখে নিজেকে। গলাতে এখনো কয়েকটা দাগ রয়ে গেছে আঙুলের। রাতের কথাগুলো মনে করে নাজমুল সাহেবের প্রতি ঘৃণার নিঃশ্বাস ফেলে সে। মনে মনে চিন্তা করে, ‘এহ্ তিন লাখ টাকা দেনমোহর দিয়ে আমার শরীরটা যেমন কিনে নিয়েছে। আমার তোকে পছন্দ না, তোকে দিব না আমার শরীরে টাচ করতে। আমার শরীর শুধু আমার কলিজার জন্য।”
ক্রোধে লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস নেয় আর গলার দাগ গুলো দূর করার চেষ্টা করে যায়। কিন্তু কিছুতেই যেন যেতে চায় না। কেমন একটা নীলচে ছাপ পরে আছে গলাতে। হঠাৎই মাথায় আরো জঘন্য একটা চিন্তা আসে সোহানার। মোবাইল ফোনে ভালো করে কয়েকটি ছবি তুলে নেয় গলার দাগের। অতঃপর খেঁকখেঁক করে শয়তানি হাসি দেয় আর ভাবে, “এবার একটা নারী নির্যাতনের মামলা করে দিলে তোকে কে বাঁচাবে রে নাজমুল!”
নতুন এই কু-ধারণা নিয়ে আর নিজের প্রেমিকের সাথেও পরামর্শ করার কথা ভাবে না সোহানা। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নেয়। শাশুড়ীকে মার্কেটে যাওয়ার কথা বলে সোজা চলে যায় থানায়। নিজের মন মতো সত্য মিথ্যা বেশ কিছু অভিযোগ এক করে নাজমুল সাহেবের নামে নারী নির্যাতনের একটা সাধারণ ডায়েরি করে ফেলে সে। তার সাথে নিজের মোবাইলে তোলা ঐ ছবি গুলো প্রিন্টআউড করে হার্ডকপিও জমা দিয়ে আসে।
নাজমুল সাহেবের অজান্তেই এমন এক ভয়ানক মামলা ঝুলে যায় ওনার গলাতে……।
( চলবে ইন শা আল্লাহ)
#গল্প – #আড়ালে_কে [ পর্ব – ০৫ ]
© #লেখক — সালাহউদ্দিন তারিক ( জুনিয়র মুগলি )