#আনটোল্ড_ডিজায়ার
#পর্ব_১
লেখক_হাসিবুল_ইসলাম_ফাহাদ
আমার বিবাহিত স্ত্রীর কাছে তার প্রাক্তন প্রেমিক যেদিন পুনরায় ফোন দেয়, সেদিন আমার বাচ্চাটার বয়স ছিল মাত্র দু দিন।
ছোট বাচ্চার যত্ন করতে গিয়ে রাতের ঘুম একেবারেই হারাম হয়ে যায় বাবা মায়ের। উক্ত রাতেও আমরা দুজন জেগে ছিলাম।
বাচ্চার নাম কি রাখবো এটা নিয়ে রিতীমত ঝগড়া চলছিলো আমাদের দুজনার মাঝে। এ ধরণের ঝগড়ার ভেতরে অন্যরকম এক আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু ঐ আনন্দটুকু মাটি করে দিলো
হুট করে আসা একটা ফোন কল। কিছুক্ষন মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকে, আমার সাথে ঝগড়া বন্ধ করে উঠে বারান্দায় চলে গেলো সাবিহা। ফিরলো ঠিক আধাঘন্টা পরে।
ফিরে এসে আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর চাহনি দিয়ে জানালো, সে তার কন্যা সন্তানের নাম রাখতে চায় সাফা।
বেশ অবাক হলাম।কিন্তু কথা বাড়ানোর শক্তিটুকু আমার মাঝে ছিলো না৷ আমি জানতাম সাবিহার প্রাক্তনের নাম ফারহান।
চোখে মুখে একগাদা অভিমান নিয়ে বেডের একপাশে শুয়ে পড়লাম। দেয়ালের দিকে ফিরে শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম এই একটু পর হয়ত পেছন থেকে সাবিহা আমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করবে “জান, তুমি কি আমার সাথে রাগ করেছ?”
তখন আমার অভিযোগের ঝাঁপি খুলে ওকে বলবো “প্রাক্তনের নামের সাথে মিলিয়ে তুমি আমার রাজকন্যার নাম কেন রাখলে? ”
আরো দু একটা শক্ত কথা শুনাবো৷ আরো বেশি অভিমান করে উঠে বারান্দায় চলে যাব।আমার রাগ ভাংগাতে আমার পেছন পেছন যাবে সাবিহাও।
শুয়ে শুয়ে কত কিছু ভেবে ফেলছি, কিন্তু সব সময়ের মত সাবিহা আর আমাকে সেদিন জড়িয়ে ধরেনি। জানতে চায়নি আমার অভিমানের কারণ। বন্ধ করা চোখ দিয়ে দু-ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো নিচে। নিজেকে অনেক একা লাগছে। অপেক্ষা করতে করতে কিছুক্ষন পরে নিজেই নিজেকে বুঝ দিলাম, হয়ত মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে বা ও আমাকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেনা। আমি বেশি রেগে আছি বুঝতে পেরে হয়ত ভয়ে কাছে আসতে পারছে না। আমার এত বেশি একা লাগছিলো যে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি নিজেই ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে অনুনয়ের সুরে বলবো, তুমি কিভাবে পারলে তোমার প্রাক্তনের সাথে মিলিয়ে আমার রাজকন্যার নাম রাখার কথা বলতে? আমি কি তোমাকে কম ভালোবাসি? বলো আরো কত ভালোবাসা লাগবে তোমার! এটা বলে ওকে অনেক অনেক আদর দিব। আমার ভালোবাসার পুরুটুকু উজাড় করে দিয়ে ওকে বলবো তুমি শুধু আমার।
মনে মনে এসব প্লান করে আমি উলটো দিক থেকে ঘুরে ওর দিকে ফিরি। দেখতে পাই সাবিহা কার সাথে যেন চ্যাটিং এ ব্যস্ত। টপাটপ কী-বোর্ড প্রেস করে মেসেজ লিখে যাচ্ছে৷ আমি যে ওর দিকে ঘুরলাম এই মাত্র, সেটাও ও খেয়াল করেনি। আমার মনের ভিতরে ওর কার্যক্রম নিয়ে যে অসম্ভব তোলপাড় হচ্ছে তাতে ওর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই৷
দুমড়ে মুচড়ে গোল হয়ে মাটিতে পড়ে থাকা ফেলনা কাগজের মতই অবহেলিত মনে হচ্ছিল নিজেকে।দীর্ঘ এক বছর অসীম ভালোবাসা ছাড়া সাবিহার কাছ থেকে আমি এমন অদ্ভুত আচরণ পাইনি।
বুকভরা চাপা দুঃখ নিয়ে নিরবে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে বালিশ ভেজাই৷ কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ি নিজের ই খেয়াল নেই।
যখন ঘুম ভাংগে, টের পাই সাবিহার হাত আমার কোমর জড়িয়ে আছে। সকালের মিষ্টি রোদ এসে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়েছে সাবিহার গাল। বড্ড নিষ্পাপ একটা ফুলের মত লাগছে ওকে। ওর ফর্সা গালটা অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত হয়ে মুহুর্তেই আমার কালকের সব রাগ অভিমান নিঃশ্বেস করে দিলো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে তুমুল চুমু খেতে শুরু করলাম। কপাল ঠোট নাক গাল কিংবা গলা, কোথাও বাদ রাখলাম না৷ ও ঘুমের মাঝেই আমার মাথা শক্ত করে ওর বুকের মাঝে চেপে ধরলো। স্পষ্ট ওর বুকের হার্ট বিট শুনতে পাচ্ছি। ওর সরু নরম হাতের বাঁধনে আমি স্বর্গীয় ভালোবাসায় ডুবে রইলাম কিছুক্ষন।
পাশে আমার রাজকন্যাটাও ঘুমাচ্ছে। পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে নিজেকে এখন। ভালোবাসা আসোলেই যত বড় কষ্ট রাগ অভিমান বা ক্ষোভ থাকুক না কেন মুহুর্তের মাঝেই সব ভুলিয়ে দিতে সক্ষম৷ কাল রাতের সবকিছু আমি বেমালুম ভুলে গেছি। আর মনেও করতে চাইনা।
সাবিহার ঠোঁটে লম্বা একটা চুমু খেয়ে উঠে পরলাম। ও শারিরীক ভাবে অসুস্থ থাকায় সকালের নাস্তাটা আমাকেই বানাতে হয়।
ওঠার সময়ে হঠাৎ সাবিহার ফোনের দিকে আমার চোখ গেলো।
কি মনে করে যেন মোবাইল টা হাতে নিলাম।
প্যাটার্ন জানা থাকায় লক খুলে ওর ফোন ঘাটতে শুরু করি।
একটা সিম থেকে আসা আনরিড মেসেজ চোখে পড়লো। নম্বরটা F লিখে সেভ করা।
মেসেজটা ওপেন করতেই চোখ কপালে উঠলো আমার৷ শুধুমাত্র একটা মেসেজ ই এসেছে ওদিক থেকে, সেখানে লেখা ছিলো ” ummmmaaaahhhh” বাকি সব মেসেজগুলো সাবিহা রাতেই ডিলেট দিয়ে রেখেছে।
হয়ত সাবিহা গুড নাইট লিখে ফোন রেখে দেয়ার পরে ঐ প্রান্ত থেকে এমন একটা মেসেজ সেন্ড করেছে ওর প্রাক্তন।
সাবিহার দিকে তাকালাম। ও আগের মতই ঘুমাচ্ছে। অপরূপ লাগছে ওকে। কিন্তু একটু আগে ওকে দেখে ঠিক যতটা ভালোবাসা তৈরি হয়েছিলো আমার মধ্যে, তার থেকেও বেশি ঘৃণা জেগে উঠছে৷ ইচ্ছে করছে গলা টিপে মেরে ফেলি। ও পুরোপুরিভাবে শুধু আমার। আমার নয় তো আর কারোই হতে পারবে না৷ একটা ধারালো ব্লেড এনে ওর গালে অনেকগুলো রেখা টেনে দিতে ইচ্ছে করছে। যাতে ওর সব সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়, সবার কাছে ওর গ্রহনযোগ্যতা হারিয়ে যায়। তখন আমি ছাড়া ওর আর দ্বিতীয় কোন পথ থাকবেনা।
অনেক কিছু উল্টাপাল্টা ভেবে ফেললাম। পর মুহুর্তেই আবার নিজেকে শান্ত করে ফেলি। একটা বিষয় ছোটবেলা থেকে আমার ভেতরে পরিলক্ষিত। তা হলো কেউ আমাকে কখনো রাগতে দেখেনি৷ আমার যত রাগ সব নিজের ভেতরে রেখে কন্ট্রোল করেছি, বাইরে হাসিমুখে থেকেছি।
কিন্তু এবার মনে হয়না আর নিজেকে শান্ত রাখা সম্ভব হবে।
তাও যতটা পারা যায় নিজেকে নিজে বুঝাই৷
অনেক ভেবে সিদ্ধান্তে আসি,
আমি সাবিহাকে কিছুই বলব না৷ ও ওর প্রাক্তন এর সাথে কথা চালিয়ে যাক। দেখি কথা বলা থেকে শুরু হয়ে দেখা সাক্ষাৎ সহ আরো কতদূর এ পানি গড়ায়৷ এমন একটা ভান করে থাকবো, যেন আমি কিছুই বুঝিনা।
বাসায় নাস্তা বানিয়ে রেখে এসে অফিসের জন্য বের হলাম।
এই সকালে অফিস টাইমে রিকশা পাওয়া ভার। যেখানে অফিস সেখানে বাস ও যায়না।
হাঁটতেও ভাল লাগছেনা। মন মেজাজ বিগড়ে আছে। দু একটা রিকশা খালি যাচ্ছে, তবে চালকদের দেখে মনে হচ্ছে এরা রিকশা না চালিয়ে মহাকাশযান চালাচ্ছে, “মামা যাবেন?” বলে ডাক দেয়ার আগেই সামনে থেকে রিকশা নিয়ে চলে যাচ্ছে। একেকজন যেন নাসার অফিসের কর্মকর্তা, তাদের গিয়ে জরুরি মিটিং এ এটেন্ড করতে হবে নাইলে দুনিয়া অচল হয়ে যাবে।
রিকশাওয়ালার ফোরটিন জেনারেশন উদ্ধার করে গালি ঝাড়লাম কিছুক্ষন।
এর মাঝে বৃদ্ধ এক লোক রিকশা নিয়ে আসলো আমার সামনে। বললো স্যার চলেন।
আমি একটা ছোট খাট লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম রিকশায়। ভাড়া কত, কোথায় যাব এসব আলাপ পরে করলেও হবে।
আগে উঠে নেই৷
ওঠা মাত্রই রিকশা চলতে শুরু করলো।আংকেল জিজ্ঞেস করলো কই যাবেন? বললাম ধানমন্ডি ১৫।
উনি রিকশা এনে একটা চায়ের দোকানের সামনে থামালো।
রিকশা থেকে নেমে একটা সিগারেট ধরালো, দুই কাপ চা নিল। এক কাপ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, বাবা চা খাও। একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। উনি মুখ থেকে সিগারেটের ধোঁয়া ফুস করে বের করে দিয়ে বললেন, দেখে মনে হইতাছে আমার সামনে কোন লাশ বইয়া রইছে। তোমারে অনেক চিন্তিত দেখাইতাছে। তুমি বাসায় চইলা যাও। মাথায় টেনশন নিয়া রাস্তাঘাটে চলা ঠিক না।
তুমি ধানমন্ডি ১৫ থেকেই তো রিকশায় উঠলা। কই যাইবা হেইডাও ঠিকমতো কইতে পারোনাই৷ রাস্তাঘাটে চলবা কিভাবে?
তার কথা শুনে লজ্জা পেলাম, দুনিয়ার সব রিকশাওয়ালা এক হয়না। একটু আগে যে সবাইকে একসাথে গালি দিলাম সে গালি আমি আবার ফিরিয়ে নিয়েছি।গালি ফিরিয়ে নিলে কি হয়? নিজের গায়ে এসে পড়ে? এটা নিয়া মহা চিন্তায় পরে গেলাম।
ওনাকে বললাম, মামা সামনে দুই মোড় ঘুরলেই ” সীমান্ত স্কয়ার।” ওখানে আমাকে নামিয়ে দিন।
চা শেষ করে উনি আমাকে নিয়ে সীমান্তের সামনে নামিয়ে দিলেন। চেহারা থেকে দুশ্চিন্তার ছাপ মুছতে একটা সার্জিকাল মাস্ক পরে নিলাম।
.
.
.
অফিসে আমার সামনের ডেস্কে যে তরুণী মেয়েটি বসে, সে আজ কলাপাতা রঙ এর একটা শাড়ি পরে এসেছে। প্রায় ছ’মাস এখানে চাকরি করেছি, ওর দিকে কখনো তেমন ভাবে তাকাইনি৷ তবে আজ আমার চোখে ওকে কেন যেন বেশ সুন্দর লাগছে।
শুধুমাত্র সুন্দর লাগছে বলেই যে ওর দিকে আমি বেশ কিছুক্ষন ধরে তাকিয়ে আছি, তেমনটা নয়৷ ওর চেহারায় লাল একটা থাপ্পড়ের দাগ স্পষ্ট।
ঠোটের কোনায় ও ফাঁটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু ওর মনে একদম ফুরফুরে প্রফুল্লতা বিরাজমান। কথাবার্তায় কোন জড়তা নেই চেহারায় চিন্তার ছাপ নেই।
আড়চোখে ওকে দেখছিলাম আমি।
মাঝে চেয়ার টেনে একবার উঠে ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় স্পষ্ট খেয়াল করলাম ও পা টেনে টেনে হাঁটছে। মনে হচ্ছে পায়ের উপরিভাগের কোন একটা অংশে ব্যাথা পেয়েছে অনেক।
গত ছ’ মাসে ওর দিকে তেমন ভাল করে খেয়াল করিনি৷ হুট করেই ওকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছি এ ব্যপারটা মেয়েটি কোনভাবেই টের পায়নি।
অফিসে ঢোকার পরে কেন যেন আমার মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে। আজ অফিসের কাজে একটু এদিক সেদিক হলেই সবার সাথে গলা উচু করে ধমক দিয়ে কথা বলছি।
এমনিতে সাধারণ দিনে কাজ-কর্ম করার সময়ে এ রুমটায় চাপা স্বরে কথাবার্তা বলার আওয়াজ শোনা যায়। কিন্তু আজ আমার ধমকা ধমকি, র্যুড বিহেভিয়ারের কারণে চারদিকে পিন পতন নিরবতা বিরাজ করছে। ঠান্ডা একটা মানুষ যখন রেগে যায় তখন চারদিকের সবাই কেমন অদ্ভুত ভাবে বদলে যায়। হাহাহা।
একটু পর অফিসের বস আমাকে কল দিয়ে ডাকলেন। এই বস লোকটাকে দেখলে আমার খাদক কত প্রকার কি কি তা মনে পরে যায়।মনে হয় আমার চিল্লাচিল্লিতে অতিষ্ঠ হয়ে কোন মাইনর পানিশমেন্ট দেয়ার জন্য ডাকলেন।
ওনাকে দেখলে আমার বিরক্ত লাগে।
হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে চেয়ারে বসলে শুধু পেটটাই দেখা যায়। টাক মাথাটা পেটের আড়ালে পরে থাকে। এই ব্যাটা রোমান্স করে কিভাবে সেটা নিয়ে আমি মাঝে মাঝে হিসেব নিকেশ করি। ফলাফল পাই মিশন – ইম্পসিবল। এজন্যই হয়ত এর বাচ্চাকাচ্চা হয়নি এখনো।
তার কামরায় গিয়ে বসতেই আমাকে বললো,
আ্যই একটু এদিকে আসো, আমার হাতের কাছে আসো।আমি উঠে তার কাছে যাওয়ার পর সে আমার পেটে হাত চাপড়ে দিয়ে বললেন সাবাশ, অফিসটা এভাবেই নিরিবিলি রাখবা সব সময়।দরকার হলে সবাইকে আরো বেশি বকা দিবা। গুড জব গুড জব। যাও গিয়ে বসো।
ওনার সামনের চেয়ারে এসে বসার পরে নিজেই আবার বললো,
তোমার পেটে হাত দিয়েছি তাই কিছু মনে করোনা৷ পিঠে চাপড় দিতে গেলে তো আমাকে চেয়ার থেকে উঠতে হতো। হেহেহে।
– আলসেমির একটা সীমা থাকে।
আমার মনে হচ্ছে এই লোক আলসেমি করার জন্যই বেতন পায়। উপর থেকে বলা আছে যত বেশি আলসেমি করবেন তত বেশি বেতন পাবেন। আর আমরা সারাদিন খাটাখাটুনি করে এর অর্ধেক বেতন ও পাইনা।
এই মোটা টাকলা লোকের নাম রামিম হয় কিভাবে তা আমি ভেবে পাইনা। এই নাম তো ওনাকে স্যুট করেনা। ওনার নাম থাকবে মোসাদ্দেক বা বাবলু। মনে মনে ভোটকা মোসাদ্দেক বলে গালি দিলে একটা অন্যরকম শান্তি পাওয়া যেত।
ওনার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে কাজে মন দেই আমি।
কাজের ফাঁকেই সাবিহাকে দুবার কল করেছিলাম, দুবার ই ফোন ওয়েটিং এ পেয়েছি।
.
.
.
বাসায় ফেরার পরে দেখলাম স্ত্রী মফস্বল থেকে তার ছোট ফুফাত বোনকে বাসায় নিয়ে এসেছে,আমার মেয়ের দেখাশোনা করার তাগিদে। ফোন ওয়েটিং এ পাওয়া নিয়ে আমার স্ত্রীকে কোন প্রশ্ন করলাম না। আমার মনে কষ্ট পাওয়া থেকেও আস্তে আস্তে দানা বেঁধেছে কৌতূহল। একটা মানুষ পরিপূর্ণ ভালোবাসা পাওয়ার পরেও, কোনো ধরণের অভাবে না ভোগার পরেও কোন সুখের জন্য সে অন্য নীড়ে ডানা মেলে এ প্রশ্নের উত্তর জানাটা আমার জন্য খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।
বাসার নতুন মেম্বারের নাম মনিকা। সারাদিন ফেসবুক ব্রাউজিং আর ফোনে কথা বলে সময় কাটিয়ে দেয়৷ ওর থাকার জায়গা হয়েছে আমাদের গেস্টরুমে।একটু বেশি কথা বলার অভ্যেস, তবে কাজ কর্মে পটু। আমার মেয়েটার দেখভাল করায় কোন কমতি রাখেনা সে। বরং সাবিহা মনিকার সহযোগিতার জন্য বাড়তি সময় পাচ্ছে তার প্রাক্তনের সাথে কথা বলার।
সবকিছু আমার চোখের সামনে ঘটতে দেখলেও আমি সাবিহার সাথে এমন ভাবে মিশছি, যাতে ও কিছু বুঝতে না পারে৷ হুটহাট জড়িয়ে ধরা,চুমু খাওয়া,অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময়ে ওর জন্য হাতে করে চকলেট নিয়ে আসা, কিংবা ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে ভালোবাসি বলা। সবকিছুই আগের মতই আছে। শুধু মনটা আমার বিষিয়ে আছে ওর প্রতি। প্রচন্ড ঘৃণা নিয়ে কাউকে ভালোবাসার অভিনয় করা খুব কঠিন। আমি বুঝতে পারছি ওর উপর থেকে আমার ভালোবাসা উঠে গিয়েছে তবুও আমি শেষ দেখতে চাই।
এদিকে ও নিজেও আগের মত আমাকে রিসপন্স করছে। আমি ভালোবাসি বললে ও নিজেও পরম মমতায় চুমু খেয়ে আমাকে ভালোবাসি বলে।মাঝে মাঝে পেছন থেকে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে৷ কিন্তু আমার অনুপস্থিতিতে সে আবার তার প্রাক্তন এর সাথে যোগাযোগ করে। তাদের কথাবার্তা চালিয়ে যায়। মন কে বুঝ দিলাম,
ও হয়ত আমার উপস্থিতির অভাবে এমনটা করছে।আমি সারাক্ষন ওর কাছে উপস্থিত থাকলে ও হয়ত এমনটা করতো না। এটা ভেবে
অফিস থেকে সাতদিন ছুটি নিলাম।
সারাক্ষন ওর পাশে পাশে থাকি।
ফোন ধরার মত সময় খুব কম পায়। তবুও খেয়াল করতাম ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে ও পাচ সাত মিনিট ফোন নিয়ে বাথরুমেই কাটিয়ে দিত।
ফোন নিয়েই গোসলে যেত।
প্রথম দু’দিন প্রফুল্ল থাকলেও তৃতীয় দিন থেকে আমার উপর ওর বিরক্তিভাজন দৃষ্টি ফুটে উঠতে দেখি।
মনের ভিতর সাবিহার কাজকর্ম নিয়ে হাজারো প্রশ্ন-উত্তর পর্ব খেলা করছে।একটা বাচ্চার ভবিষ্যৎ ও ওর সাথে জড়ানো।
বিষণ্ণ মন নিয়ে গেস্ট রুমের কম্পিউটারে গিয়ে বসি গান শোনার জন্য।
পিসি অন করতেই দেখতে পাই পিসিতে ভিপিএন ইন্সটল করা। অথচ আগে কখনোই এটায় ভিপিএন ইন্সটল করা হয়নি।
মনে কিঞ্চিৎ সন্দেহ নিয়ে ব্রাউজিং স্টোরিতে ঢুকি।
যা দেখি তাতে আমার চোখ চড়কগাছ হয়ে যায়৷
মনে শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরছিলো.. কাজটা কার, আমার স্ত্রী সাবিহার নাকি তার বোন মণিকার!!
চলবে……
চলবে……