#আনটোল্ড_ডিজায়ার
পর্ব_১৪
যেহেতু আমার গোপন করা পরিচয় ওরা জেনে গিয়েছে তার মানে আমি শতভাগ নিশ্চিত হলাম যে ইলিয়ানা কোনো না কোনো ভাবে ওদের সাথে জড়িত।
নগরীর দেয়াল গুলো নতুন পুরাতন টু লেট বিজ্ঞাপন হাতে অনেক দায়িত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রাত দুটা বেজে পনের মিনিট। সিদ্দীকের ফোন থেকে একটা চকচকে টু লেট বিজ্ঞাপনে ফোন দিলাম।
বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর ফোন পিক করলো একজন মাঝবয়েসী লোক।
– হ্যালো…. কে….
– জ্বী বাসা ভাড়া নেয়ার জন্য ফোন দিয়েছিলাম।
– ফাযলামী পাইছেন মিয়া! রাইতের বেলা ঘুম নষ্ট করে বাসা ভাড়া খুঁজতেছেন?
– আপনি কি বাসার মালিক?
– না আমি এই বাড়ির দারোয়ান।
– দারোয়ান হইলে তুমি রাতে ঘুমাও কেন? তোমার দায়িত্ব রাতে গেটে দাঁড়িয়ে পাহারা দেওয়া।
কাজে ফাঁকিবাজি করো আবার চিল্লাচিল্লি করছ?
– আচ্ছা আপনে কামের কথা কন। কি জানতে চান?
– নাহ তোমার মত কাজে ফাঁকি দেয়া দারোয়ান যে বাড়িতে আছে সে বাড়িতে আমি উঠবো না৷ আমার মালামাল সব চুরি হয়ে যাবে।
বলে ফোন কেটে দিলাম।
সিদ্দীক দেখি আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।
যাক ওর আমার সাথে হাঁটতে যে বোরিং লাগছে না এটাই ঢেড়।
কিছুক্ষন পরে ফোন দিলাম অন্য একটি বাসা ভাড়ার বিজ্ঞাপনের নাম্বারে।
এবার ও ফোন রিসিভ হলো।
ফোন ধরেই ছেলেটা বললো,
-“হ্যা” সোনা বলো।
– এক্সকিউজ মি, বাসা ভাড়ার নেয়ার জন্য ফোন দিয়েছিলাম।
– জানি সোনা। তোমার মত আমাকে কেউ ভালোবাসেনা।
আমিও তোমাকে মিস করি খুব।
( পাশ থেকে কান্নাজড়িত নারী কন্ঠে কেউ একজন বলছে,
দেখো শাহেদ তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, প্লিজ তুমি অন্য কারো সাথে কথা বলে আমাকে কষ্ট দিওনা। আমার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে আমি তোমার সব শূন্যতা – পূর্ণ করে দিব।
মেয়েটা তার কথা চালিয়ে যাচ্ছিলো আমি ফোনটা কেটে দিলাম।
পারিবারিক কলহ হয়ত।
ছেলেটা এমন একটা ভাব করেছে যে সে তার প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে কথা বলছে, হয়ত তার স্ত্রীর কোন আচরণে কষ্ট পেয়েই এমন একটা অভিনয় করলো।
আরো বেশ কিছু নম্বরে কল দিলাম, কয়েকটা ফোন রিসিভ হয়নি। মাঝে একটা ফোন রিসিভ হওয়ার পর একটা বাচ্চার হাসির শব্দ শুনতে পেয়েছি শুধু। বাবা মা সহ ঘুমিয়ে যাওয়ার পর হয়ত কলের সাউন্ডে বাচ্চাটার ঘুম ভেংগে যায়। আলোর ফোয়ারা দেখে ফোন হাতে নেয়ায় চাপ লেগে রিসিভ হয়ে যায় ফোনটি।
বেশ কিছুক্ষন ধরে ওর হাসির শব্দ শুনি আমি।
এরপর নিজ থেকেই ফোনটি কেটে যায়।
মানুষের জীবনের রাতের গল্পগুলো যে কতটা ভিন্ন তা আমি মাঝরাতে কল না দিলে কখনোই বুঝতাম না।
কিছু গল্প একান্ত রাতের ই থাকে যা কখনো দিনকে বলা হয়ে ওঠে না।
শেষবার যাকে কল দিলাম, তার কণ্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছিলো সে এখন বাসার বাইরে আছে। ফুরফুরে ফ্রেশ মেয়েলি কন্ঠস্বর।
এত রাতে বাসা খোঁজার জন্য কল করেছি দেখে মোটামুটি সবাই বিরক্ত হলেও মেয়েটাই প্রথম জিজ্ঞেস করলো, ভাইয়া আপনি কি বড় কোন বিপদে পড়েছেন?
জবাবে বললাম, বিপদ আমার উপরে এসে পড়েছে।
মেয়েটা আমাকে মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করতে বললো।
পাঁচ মিনিট পরে মাথায় হেলমেট, কনুই ও হাঁটুতে আর্মর লাগানো একটা মেয়ে স্কেটিং করতে করতে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
জিজ্ঞেস করলো আমরাই বাসা ভাড়া নেয়ার জন্য কল করেছি কিনা!
জবাবে জানালাম হ্যাঁ।
মেয়েটি পুনরায় প্রশ্ন করলো,
খেয়েছেন কিছু? দেখে তো মনে হচ্ছে খাওয়া দাওয়া হয়নি আপনাদের। ভেতরে চলুন,আমার সাথে খাবেন।
সাহস ভালো, কিন্তু দুঃসাহস ভালো না। মেয়েটি যা করছে সেটা এক প্রকার দুঃসাহসিক কাজ, আমরা যদি প্রফেশনাল ডাকাত হতাম,তবে এর কপালে আজ ভীষন খারাপ কিছু ছিলো।
যেতে যেতে মেয়েটি বললো, নতুন স্কেটিং শিখছি, তাই অনেক রাতে স্কেটিং করতে বের হই। রাস্তা একদম ফাঁকা থাকে।কথা বলা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ঘেউ ঘেউ করে দুবার কুকুরের ডাক শুনলাম। মেয়েটির পায়ের দিকে ভালোভাবে খেয়াল করে দেখলাম পা ঘেষে সাদা লম্বা লোমযুক্ত একটা কুকুর দাঁড়ানো। আমার দৃষ্টি কুকুরটার দিকে দেখে মেয়েটি বললো, এ হলো আমার সবথেকে কাছের বন্ধু, ” প্লুটো”।
যখন মেয়েটিকে অনুকরণ করে ওর বাসায় ঢুকলাম, তখন আমার ধ্যান ধারণা পুরোপুরিভাবে বদলে গেল।
কারো কারো ক্ষেত্রে দুঃসাহস করাটাও জায়েজ আছে।যখন গেট থেকে ভেতরে ঢুকতে গেলাম, তখন দেখলাম গেটে দুজন কর্তব্যরত পুলিশ দাঁড়ানো। মুহূর্তেই বুঝে নিলাম পুলিশের কোন উর্ধতন কর্মকর্তা বা বড় কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের বাড়ি এটা।
পুরো বাড়িটা সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত।
আমাদের নিয়ে বসানো হলো নিচতলার বিশাল এক গেস্টরুমে। এখানটা শুধুমাত্র গেস্টদের জন্য ব্যবহার করা হয়।মেয়েটা আমাদের বসিয়ে দিয়ে চলে গেল। একটু পর কিছু কর্মচারী এসে আমাদের মুখরোচক সব খাবার দাবার খেতে দিল।
গেস্ট রুমে বিশ্রামের ব্যবস্থাও ছিল। কর্মচারী আমাদের জানালো, যাতে আমরা খেয়েদেয়ে রেস্ট নেই। সকালে আমাদের সাথে ওনার ম্যাডাম কথা বলবে।
খেয়েদেয়ে বিশ্রামের জন্য বসলাম। ঘুমানোর ব্যবস্থা থাকলেও এখন ঘুম আসবেনা। আগে নিজের সাথে কথা বলতাম। এখন তাও কথা বলার জন্য সিদ্দীক আছে।
ওকে ডেকে বললাম, বুঝলে সিদ্দীক, ম্যাচের মালিকের বিষয়টা আমার কাছে অত্যন্ত রহস্যজনক বলে মনে হয়েছে।
সিদ্দীক মনোযোগ সহকারে আমার মুখের দিকে তাকালো।
বললো কিভাবে?
– কেউ এমন একটা জায়গায় কেন শো রুম দিবে, যেটা লোকচক্ষু থেকে অন্তরালে?
মনে হয়না ওনার ওখানে তেমন বেশি একটা বেচাকেনা হয়।
তবুও এত টাকার শো রুম নিয়ে বসার উদ্দেশ্য কি!
– তাইতো! বুঝতে পারছিনা। উদ্দেশ্য কি!
-এটা আমি ঢাকা শহরের বেশ কিছু জায়গায় খেয়াল করেছি। খুব দামি দামি আসবাবপত্র সহকারে এমন এমন জায়গায় বড় বড় শো রুমের স্টল দেয়া হয়, যেখানে মানুষ সপ্তাহের পর সপ্তাহ উঁকি দিয়েও হয়ত দেখে না। বেঁচাকেনা একদম ই নেই। তবুও স্টলগুলো বছরের পর বছর টিকে থাকে।
– এর পেছনে কারণ কি হতে পারে?
– একটা ব্যখ্যা আমার কাছে আছে।
– কি ব্যখ্যা?
– এই যে ধরো যারা এমনটা করে, তাদের কোন না কোন ভাবে অবৈধ লেনদেনের সাথে জড়িত।
এদের প্রচুর ব্লাক মানি থাকে। কখনো আইনী ভাবে নোটিশ দিয়ে এ টাকার উৎস কোথায় তা জানতে চাওয়া হয়, তখন এসব শো রুম থেকে কেনা বেচার একটা হিসেব দেখিয়ে দেয়া যায়।
ব্লাক মানিকে হোয়াইট মানি করার একটা প্রসেস মাত্র।
সিদ্দীক মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো, তার মানে আমাদের ঐ ম্যাচের মালিকের ব্লাক মানির সোর্স আছে?
– তার নেই। তবে তার স্ত্রীর আছে।
– আপনি কিভাবে জানলেন?
সেটা বলবো, তার আগে আমাকে বন্ডেজ ক্লাবটায় ঢোকার ব্যবস্থা কর সিদ্দীক।
সব রহস্য ওখানেই লুকিয়ে আছে, সব।
– আমি কিভাবে ব্যবস্থা করমু স্যার!
– তোমার ম্যাডাম বন্ডেজ ক্লাবে যেত, রাইট?
– হুম।
– তাহলে ওখানে প্রবেশের নিয়ম কানুন তোমার জানা আছে।
– ম্যাডাম একটা কার্ড ইউজ করত। ওটা সাথে রাখলে ঢোকার সময় কেউ বাঁধা দেয় না।
– কার্ড টা তোমার ম্যাডাম কোথায় রাখতো? তুমি জানো?
– ওনার রুমে খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে।
– আচ্ছা তুমি যেহেতু ঐ বাড়িতে দাড়োয়ানের কাজ করতে, বাড়িটা তোমার হাতের নকশার মত চেনা।
তুমি আমাকে বাড়িটার কোথায় কি আছে তা খুলে বলো ভালো করে।
– আপনে কি ঐ বাড়িতে ঢোকার প্লান করতেছেন।
– হুম, তুমি শুধু আমাকে বলো বাড়িটার কোন পাশে কি কি আছে! কিভাবে ঢোকা যায় সেটা আমি বের করবো।
– কিন্তু, আপনাকে বন্ডেজ ক্লাবে কেন ঢোকা লাগবে? এছাড়া কোন উপায় নেই?
– সিদ্দীক তোমাকে বলেছিলাম না ঐ ম্যাচের মালিককে আমার সন্দেহজনক মনে হয়েছে?
– হুম।
– সে নিয়মিত বন্ডেজ ক্লাবে যায়। তবে তার ক্ষেত্রে আরো একটা জঘন্য বিষয় আমি উদঘাটন করেছি। সে একজন সমকামী।
– কিভাবে উদঘাটন করলেন?
– তার শো রুমের কর্মচারী ছেলেটিকে অবজারভার করে।