আনটোল্ড_ডিজায়ার #পর্ব_১৭_১৮

0
489

আনটোল্ড_ডিজায়ার
#পর্ব_১৭_১৮
লেখক_হাসিবুল_ইসলাম_ফাহাদ

১৭

টর্চের আলো জানালা দিয়ে ভেতরে ফেলতেই দেখতে পাই এক বিভৎস দৃশ্য।
খাটের উপরে পরে আছে দুটি পচা গলা লাশ।
পোকা গিজিগিজ করছে লাশের ভেতরে।
একটি লাশ বিছানার ঠিক মাঝ বরাবর। আরেকটি বিছানার একদম কিনারে।
কিনারের লাশটি থেকে একটি পা পচে গিয়ে ফ্লোরের উপরে খুলে পরে আছে। দৃশ্যটি দেখেই আমার মাথা ঘুরে উঠে। মনে হচ্ছিলো সানসেট থেকে পা ফসকে এখনি নিচে পরে যাব।
কোনরকম টাল সামলে নিজের নাক চেপে ভেতরে ঢুকে পারলাম। পেছন পেছন ঢুকলো সিদ্দীক এবং সবশেষে বাবুমিয়া।
লাশদুটোর দিকে তাকানোর ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও বার বার চোখ চলে যাচ্ছে। মুখমন্ডলের মাংস গলে ক্ষয়ে পড়েছে। প্রচন্ড ভয়ানক লাগছে দেখতে। তবে এদের কিভাবে খুন করা হয়েছে লাশের অবস্থা দেখে সেটা একেবারেই বোঝার উপায় নেই।
রুমের লাইট জ্বালানো যাবেনা। কারণ আশপাশের সবাই জানে এ বাড়িটা পরিত্যক্ত।
হুট করেই আমাদের কানে অদ্ভুত কিছু শব্দ এসে লাগলো।
বাবুমিয়া ভয়ে বেশ কিছুক্ষন ধরেই আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়ছেন। সিদ্দীক বার বার বাবুমিয়াকে খোঁচাচ্ছে, আপনি আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ ছাড়া কি আর কোন সুরা বা দোয়া জানেন না?
বাবুমিয়া উত্তর দেয়, ভয়ে সে সবকিছু ভুলে গেছে।
সিদ্দীক এবং বাবুমিয়াকে হাতের ইশারায় চুপ করতে বললাম।
ওদের কানের কাছে গিয়ে বললাম, আমার মনে হয় এ বাসাতে আমরা বাদেও আরো একজন আছে।
আমরা ছিলাম দ্বিতীয় তালায়, শব্দগুলো হচ্ছিলো নিচতলা থেকে। সিদ্ধান্ত নিলাম ফ্ল্যাশ লাইট বন্ধ করে সিদ্দীকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সিঁড়ি থেকে নিচে নামব। হয়ত লাশগুলোর খুনী এখনো এই বাসাতেই ঘাপটি মেরে বসে আছে।
আমরা দুজন সামনে আগানোর সময় হুট করে বাবুমিয়া পেছন থেকে আমার জামাটা খামচে ধরলো।বললো, তার প্রচন্ড ভয় লাগছে। সে নিচে যাবেনা। তার উপর এবার আমি চরমভাবে বিরক্ত হলাম।
কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম, এখানে আমরা ছেলেখেলা করতে আসিনি। কাজে এসেছি। শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।গাঢ় অন্ধকারে সিঁড়ি বেয়ে তিনজন আস্তে আস্তে নিচে নামছি।
বুকের ভেতর ঢিপঢিপানি বেড়েই চলেছে। এই মনে হচ্ছে হুট করে লাইট জ্বলে উঠবে, দেখব অস্ত্রধারী কিছু লোক আমাদের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে আছে।
আবার মনে হচ্ছে এই বুঝি পুলিশ এসে বাড়ি ঘেরাও দিলো। তবে মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতিও ও কাজ করছিলো, যা আমাদের সামনের দিকে পা বাড়াতে সাহায্য করে।
হুট করেই কিচেনের কাছ থেকে ঝপাং করে একটা স্টিলের বাটি পড়ার শব্দ হলো।
এরপর কারো দৌড়ানোর শব্দ। এরপর আবারো ধপাস করে একটা বিকট শব্দ। একটা মেয়েলী কন্ঠে আর্তচিৎকার,
পরে সবকিছু চুপচাপ। যেমন অন্ধকার, তেমনি নিরবতা।
সিদ্দীক ও বাবুমিয়া আমার পাশে আছে কিনা সেটাই টের পাচ্ছিনা। অন্ধকারে হাজার হাজার মানুষ একত্রে থাকলেও একা থাকার নিঃসঙ্গ অনুভূতি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়না।
বেশ কিছুক্ষন চারদিকে শুনশান নিরবতা বিরাজ করার পরে সাহস করে মোবাইলের টর্চ জ্বালালাম। সিদ্দীক এবং বাবুমিয়া ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। আমার দেখাদেখি তারাও লাইট জ্বালালো। চারদিকের অবস্থা প্রচুর খারাপ। মেঝে ভর্তি মোটা ধুলোর আস্তরণ, তার উপর বুটের পায়ের ছাপ। ছাপগুলো বেশ তাজা। আছে খালি পায়ের কিছু ছাপ ও।
যেখান থেকে এতক্ষন শব্দ আসছিলো সেদিকে লাইটের আলো ফেলতেই দেখতে পেলাম একটা জীর্ণ শীর্ণ মেয়ের দেহ মাটিতে লুটিয়ে আছে। জীবিত আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। তবে গায়ের চামড়া হাড়ের সাথে লেগে একদম কংকালের মত দেখাচ্ছে।
কে বা কারা যেন ওর হাত দুটো শিকল দিয়ে পেছনের দিকে বেঁধে রেখেছে।এক ছুটে তিনজন ই মেয়েটার কাছাকাছি গেলাম।
সিদ্দীক নাকের কাছে হাত নিয়ে দেখলো নিঃশ্বাস নিচ্ছে মেয়েটি। হয়ত ওকে কেউ এখানে বন্দী করে রেখে গেছে বহুদিন।হয়ত আমাদের আসার শব্দ পেয়ে মেয়েটি অন্ধকারে এলোপাতাড়ি দৌড়ে শক্ত কিছুতে ধাক্কা খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। শরীরের অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে,
বেশ কিছুদিন খাওয়াদাওয়া ছাড়াই কোনরকম ভাবে সার্ভাইব করে বেঁচে আছে মেয়েটি। ওকে উদ্ধার করে আমাদের সাথে নিয়ে যাওয়াটাও একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। আমার বিশ্বাস, এই মেয়েটিকে উদ্ধার করতে পারলে উপরে থাকা লাশ দুটির পেছনের রহস্য ও উদঘাটন করতে পারবো।
মেয়েটিকে ওখানে ওভাবে রেখেই আমি সিদ্দীকের নির্দেশনা অনুযায়ী চলে যাই ওর মালিকের লিভিং রুমে। জিনিসপত্র গুলো সব ছড়ানো ছিটানো আছে। সোনার গহনা সহ নগদ বেশ কিছু ক্যাশ টাকাও এদিক সেদিক ছড়ানো।
দেখে মনে হচ্ছে আমার আগে কেউ এখানে এসে বিশেষ কিছু খুঁজে গিয়েছে। তবে যে-ই আসুক টাকা পয়সার প্রতি তার লোভ লালসা ছিলনা। তাহলে এগুলো লুটপাট করে সব নিয়ে যেত।
সিদ্দীক কে বললাম, এখানে সোনা গহনা এবং নগদ ক্যাশ যা আছে সব প্যাক করো, আমাদের নিতে হবে এগুলো।
বাবুমিয়া এববগ সিদ্দীক দুজনেই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। হয়ত আমার পারসোনালিটির সাথে এমন একটা কথা মানানসই নয়। সিদ্দীক বললো, বস, আপনে আমাকে চুরি করতে বললেন!
বললাম, চুরি নয় সিদ্দীক,
অপ্রয়োজনীয় ভাবে ফেলে রাখা প্রয়োজনীয় জিনিস ভালো পথে ব্যয় করাটা একটা ভালো কাজ। কথা বাড়ানোর সময় নেই৷ যা বলেছি, দ্রুত করো।বাবুমিয়া এগিয়ে এসে বললো, এগুলো আমি প্যাকেট করার কাজ করি। তোমরা অন্য কাজ সেরে ফেলো।
সিদ্দীককে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার ম্যাডামের বেডরুম পর্যন্ত তোমার আসা যাওয়া ছিলো সিদ্দীক। তিনি তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কোথায় রাখতেন,তা নিশ্চয়ই জানো তুমি।
সিদ্দীক আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তার বক্স খাটের সাথে লাগোয়া একটা ড্রয়ার আছে,ডান পাশেই৷ ওটার ভেতরে তিনি তার ঔষধের প্রেসক্রিপশন সহ সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখতেন।
একটু খুঁজতেই পেয়ে গেলাম ড্রয়ারটি। কিন্তু সেখানেও কেউ কিছু খুঁজে গিয়েছিলো। সবকিছু ছড়ানো ছিটানো। কয়েকটি ঔষধের পাতা, আর কিছু তেলাপোকা ছাড়া ড্রয়ারে কিছুই ছিলোনা৷ সিদ্দীককে জিজ্ঞেস করবো, আর কোথায় তোমার ম্যাডাম তার কাগজপত্র রাখতে পারেন?
কিন্তু এ প্রশ্নটি করার জন্য পেছনে ঘুরে দেখি সিদ্দীক সেখানে নেই৷ বাবুমিয়ার ও টাকাপয়সা এবং গহনা প্যাকিং করা শেষ। তিনি এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সিদ্দীক কোথায়?
সে আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গিমায় মুখ বড় বড় করে বললো,
সে কি! আমি তো এগুলো প্যাকিং করায় ব্যস্ত ছিলাম। সিদ্দীক তো ছিলো তোমার কাছেই। আমি কিভাবে বলবো!
না বলে এভাবে হুট করে গায়েব হয়ে যাওয়াটা আমার পছন্দ হলোনা।
এটলিস্ট আমাকে বলে যেতে পারতো।
হুট করে কোথায় চলে গেল! নাকি অন্য কোন বিপদ হলো সে সন্দেহটাও আমার মাঝে দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
অন্ধকার বড়ই অদ্ভুত বিষয়। এখানে নিশ্চুপে অনেক অদ্ভুত কিছু ঘটে যেতে পারে। কিন্তু এখন এমন একটা অবস্থা, শুধু অদ্ভুত নয় আমাদের সাথে চরম খারাপ কিছু ঘটে গেলেও আমাদের কিছু করার বা বলার নেই। সবটাই ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতে হবে।
বন্ডেজ ক্লাবে ঢোকার জন্য যে এক্সেস কার্ডটি দরকার হয়, সেটি খুঁজতে এখানে আসা অথচ এখানে আসার পরে নতুন কতকিছুর সম্মুখীন হয়ে গেলাম।
কোথায় কার্ডটি থাকতে পারে চিন্তা করতে করতে কোন সমাধান খুঁজে পেলাম না।
এখানে যে বা যারা আগেও কোনকিছু খুঁজে গিয়েছে তারাও কি আমার মত এ কার্ডটি খুঁজেছে! যদি এটাই খুঁজে থাকে এবং পেয়ে নিয়েও যায় তাহলে আমার আশায় গুড়েবালি।
হুট করেই কাঠের একটা ওয়ারড্রবের উপরে চোখ গেলো।
ওয়ারড্রব দেখে মাথায় আসলো,জামাকাপড় এর কথা। সিদ্দীক এর মালকিন তো বেশ মোটা ছিলো, তিনি ঢোলাঢুলা জিন্সের প্যান্ট পড়তেন। ঐ প্যান্টের পকেটগুলো খুঁজে দেখা যেতে পারে।
যেরকম ভাবা সেরকম ই কাজ আগালাম।
তবে ওয়ারড্রবের জামাকাপড় না ঘেটে বাইরের হ্যাংগারে ঝুলতে থাকা বড় বড় জিন্সের প্যান্টের পকেটগুলো চেক করতে শুরু করলাম। বেশ কয়েকটা প্যান্ট চেক করার পরে নিরাশ হতে হলো আমাকে।
কিছুই খুঁজে পাইনি কিছু খুচরো টাকা ছাড়া।
পকেটে মাত্র খুচরো বিশ টাকা পাওয়া গেল।
টাকার সাথে সাথে মনে আসলো,মানিব্যাগের কথা।
আরে হ্যাঁ। মেয়েরা তো টাকা বা কাগজপত্র তাদের পার্সে রাখে।
এদিক সেদিক চোখ বুলাতেই একটা ক্রিম কালারের পার্সের দিকে আমার নজর গেল।
ওয়ারড্রবের উপর থেকে পার্স নিয়ে সেটার ভেতর তল্লাশী চালানোর পর বেশ কিছু কার্ড উদ্ধার করলাম, এর ভেতর ক্রেডিট কার্ড, ভিসা কার্ড এবং আমার কাঙ্ক্ষিত বন্ডেজ ক্লাবের কার্ডটির ও দেখা পেয়ে গেলাম। যা ছিলো সবকিছু সহ পার্সটি নিজের কাছে নিয়ে নিলাম।
এবার আমাদের বের হওয়ার পালা।
সিদ্ধান্ত নিলাম মেয়েটিকে আমাদের সাথে নিয়ে যাব।
এ সময়টাতে সিদ্দীককে আমাদের খুব প্রয়োজন ছিলো।
কিন্তু ওকে খোঁজার মত ফুসরৎ নেই, চিৎকার করেও ডাকা যাবেনা।
ধরা পরে যাওয়ার ভয় আছে।
আমার হাতে যা ছিলো তার সবকিছু বাবুমিয়ার কাছে তুলে দিলাম।
নিজের কাঁধের উপরে তুলে নিলাম মেয়েটিকে। মনে হলো পাটখড়ি দিয়ে বানানো কোন পুতুল কাঁধে তুলে নিয়েছি। এতটাই হালকা। আমার মনে হচ্ছে, এখান থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে মেয়েটিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
দ্রুত পায়ে, হেঁটে উপরের তলায় উঠে গেলাম। জানালা থেকে বের হয়ে মেয়েটিকে নিয়ে নিচে নামাটা খুব বড় রিস্কের ব্যাপার হবে। কিন্তু চেষ্টায় কোন কমতি রাখা যাবেনা।
যখন আমি ও বাবুমিয়া জানালা থেকে বের হওয়ার জন্য জানালার কাছাকাছি চলে আসলাম,
দেখতে পেলাম বাড়ির গেটের সামনের রাস্তায়, বেশ কয়েকটি পুলিশের গাড়ি দাঁড়ানো।
তাদের গাড়ি থেকে বিচ্ছুরিত হওয়া, নীল লাল লাইটের আলোয় আমাদের চোখ তাঁতিয়ে উঠলো।

#আনটোল্ড_ডিজায়ার
পর্ব ১৮
______________________
পুলিশের গাড়িগুলো লোহার মেইন ফটকের সামনের রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে আছে। আমরা জানালার পেছন থেকে পেছনে সরে এসেছি। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িটার দিকে কেউ একজন বেশ কয়েকবার টর্চ লাইট মারলো।ভয়ে আমাদের দুজনের ই অবস্থা খারাপ। একেতো বিছানার উপরে দুটো লাশ, তার উপর সাথে একজন অর্ধমৃত মেয়ে। যদি এ অবস্থায় ধরা পরি৷ ফাঁসির দঁড়িতে ঝুলতে হবে আমাদের সবাইকে।
আশ্চর্যজনক ভাবে আমাদের মাঝে তখন অর্ধগলিত লাশ নিয়ে কোন প্রকারের ভয়ভীতি কাজ করছেনা। লাশ দুটো থেকে বের হতে থাকা গন্ধটাও মানিয়ে গেছে।
নিঃশ্বাস আটকে দুজনে চুপচাপ বসে রইলাম বেশ কিছুক্ষন।
এ বাড়িটার মূল গেটে মস্ত বড় এক তালা ঝুলানো থাকায় এবং পরিত্যক্ত হওয়ায় পুলিশের লোকজন আর এদিকটায় ঘাটালো না। তবে ঐ এলাকার নাইট গার্ডের সাথে তাদের বেশ কয়েকজন৷ অনেক সময় নিয়ে কথা বললো।
হয়ত সিসিটিভি ক্যামেরা ভাংগার জন্য ইনভেস্টিগেশন করতে এসেছে।
দুজনেই দাঁতে দাঁত চেপে উত্তেজনায় কাঁপা-কাঁপি করছিলাম, এমন সময়ে কাঁধের উপর একটা ঠান্ডা শীতল হাতের স্পর্শ পেলাম। আমার গা শিওরে উঠলো। কিন্তু কিছু বলার মত পরিস্থিতি ছিলোনা। কানের কাছে ফিসফিসানি শব্দ শুনতে পেলাম-
বস আমি সিদ্দীক।
সিদ্দীকের মাথার উপর একটা চাটি মেরে জিজ্ঞেস করলাম, “কোথায় গিয়েছিলে আমাকে না বলে বেয়াদব!”
সিদ্দীক মাথায় হাত ডলতে ডলতে, বলল বস আমি তো ছলনার ছবি খুঁজতে গিয়েছিলাম।
” আমাকে বলে যেতে পারলেনা!”
বস আপনি কাজে বিজি ছিলেন তাই না বলেই চলে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম দু মিনিটে চলে আসব। কিন্তু ছলনার ছবি দেখে আমি ইমোশন কন্ট্রোল না করতে পেরে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম। তাই আসতে দেরি হলো।
হঠাৎ আমাদের সাথে করে নিয়ে আসা মেয়েটি পানি- পানি করে কোঁকাতে লাগতো। সিদ্দীক দৌঁড়ে নিচে চলে গেলো পানি আনতে। পুলিশের গাড়িগুলো গেটের রাস্তা থেকে সরে গিয়েছে।
কিন্তু জার্মান শেপার্ড কুকুরটাকে সাথে নিয়ে ওখানকার নাইট গার্ড ঘন ঘন চারদিকটা টহল দিচ্ছিলো।
সিদ্দীক পানি এনে দেয়ার সাথে সাথে মেয়েটি ঢকঢক করে বেশ অনেকখানি পানি পান করলো।
তবে ওর গায়ের শক্তি এতটাই কমে গিয়েছিলো যে মুখ দিয়ে দুটো শব্দ উচ্চারণ করার মত ও পরিস্থিতিতে ছিলো না। পানি খেয়ে চুপচাপ মরার মতই পরে রইলো। প্রথমে আমি সিদ্দীক কে দড়ি বেয়ে নিচে নামতে বললাম।
তারপর বাবুমিয়াকে এবং সবশেষে নামার সিদ্ধান্ত নিলাম আমি। সিদ্দীক ও বাবুমিয়া নেমে যাওয়ার পরে যখন কাঁধে মেয়েটিকে নিয়ে নামতে গেলাম, বুঝলাম যে ওজনে হালকা হলেও একজনকে কোলে নিয়ে দঁড়ি বেয়ে উপর থেকে নিচে নামা কতটা কষ্টকর। হাত পায়ের চামড়া উঠে গিয়েছে বেশ কয়েকজায়গা থেকে,
মনে মনে ভাবলাম! এই মেয়েটিকে তো ফেলে আসলেও পারতাম। একে সাথে করে নিয়ে আসার কারণ কি! শুধুমাত্র দায়িত্ববোধ নাকি রহস্য সমাধান এর চেষ্টা!
অতি কষ্টে মেয়েটিকে সাথে নিয়ে নিচে নামলাম।

এবার আমাদের এখান থেকে চলে যাওয়ার পালা।
আসার পথে ব্যাকইয়ার্ড এ বাবুমিয়া একটা নর্দমার মত জায়গা খুঁজে পেলো।
হুট করেই সে নর্দমাটির কাছে গিয়ে দু-হাতে কাদা নিয়ে গায়ে মাখা শুরু করে দিলো। তার এমন আচরণে আমি এবং সিদ্দীক হতবাক হলাম।
বাবুমিয়া আমাদের অবস্থা বুঝতে পেরে নিজে নিজেই বললো,
‘ কুকুরের ঘ্রাণ শক্তি অনেক বেশি থাকে। আমরা সবাই গায়ে কাঁদা মেখে ওর সামনে দিয়ে হেঁটে গেলেও ও আমাদের ঘাটাবে না। কারণ ভেজা কাঁদা গায়ে মাখলে শরীর থেকে বিচ্ছুরিত হওয়া ঘ্রাণ নষ্ট হয়ে যাবে।
আর কুকুরটিও অপরিচিত ঘ্রাণ পেয়ে আমাদের ঘাটাবে না।
বলে সে আরো বেশি করে কাদা দু হাতে নিয়ে পুরো গা ঢেকে ফেললো। শুধুমাত্র চোখ ছাড়া তার আর কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। পেছনের গেট থেকে আমাদের সবার আগে সে বের হলো,
এবং আমাদের বললো আমরাও যেন কাদা মেখে তার পেছন পেছন আসি।
বাবুমিয়া দু হাত দুদিকে ছড়িয়ে ভাব নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মেইন রাস্তায় চলে গেলে। ওখানে কিছুক্ষন পর পর ই জার্মান শেপার্ড কুকুরটি এসে ঘুরে ঘুরে টহল দিচ্ছিলো।
কুকুরিটি হুট করেই রাস্তার মাঝে এমন অদ্ভুত ভাবে একটা লোককে হাঁটতে দেখে মুখ নিচু করে ঘরঘর করতে শুরু করলো। আমরা চাপা স্বরে বাবুমিয়াকে ডাকলাম। কিন্তু কাদা মাখার সময়ে হয়ত উনি ওনার কানের ফুটো ও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তাই কুকুরের ঘরঘর কিংবা আমাদের ডাক কিছুই উনি শুনতে পান নি।
কুকুরটি যখন দৌড়ে এসে ওনার পেছন বরাবর কামড়ে ধরলো, তখন উনি বুঝতে পারলেন কাঁদা মেখেও পার পাওয়ার উপায় নেই। কিন্তু একটা উপকার হয়েছে৷ কাদার বাজে স্বাদ জিহবায় লাগায় কুকুরটি কামড় বসানো দাঁত উঠিয়ে নিয়ে এদিক সেদিক মাথা ঝাঁকি দেয়৷ এ সুযোগে মোটা পেটটি দু হাতে চেপে ধরে ঝেড়ে দৌড় লাগায় বাবুমিয়া।
একটু পর ফোনের ভিডিও অন করে পেছন পেছন দৌড়াতে শুরু করে নাইট গার্ডের লোকটিও। সামনে বাবুমিয়া, পেছনে কুকুর এবং তার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে নাইটগার্ড। কিছু সময়ের মধ্যেই রাস্তাটি পুরো ফাঁকা হয়ে যায়৷ সিদ্দীক ও আমি সময় নষ্ট না করে দ্রুত মেয়েটিকে কাঁধে নিয়ে বের হয়ে রাস্তার উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করি।
বেশ কিছুক্ষন হাঁটার পরে ভাগ্য সহায় হয়। একটা সি এন জির দেখা পেয়ে যাই আমরা। দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। বাবুমিয়াকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছিলো তবে আমাদের হাতে আর কোন উপায় ও ছিলনা।
সিদ্দীক এমন চিন্তার সময়ে বলে উঠলো,
বস আমার মনে হয় বাবুমিয়া পা* দিয়েছিল। যার গন্ধেই কুকুরটি টের পেয়ে ওনার পেছনে কামড়ে ধরে।
সিদ্দীককে ধমক দিলাম!
কি বলছো এসব!
বিরক্ত প্রকাশ করলাম এবং বললাম, ওয়াচ ডগরা শুধুমাত্র অপরিচিত ঘ্রাণ নয়, অদ্ভুৎ চলন – বেশবুশা এবং অপরিচিত শব্দতেও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।
আমি এটা আগেই জানতাম। কিন্তু বাবুমিয়াকে নিষেধ করিনি কারণ আমি জানতাম ধাওয়া দিতে বাবুমিয়ার পেছন পেছন নাইট গার্ড ও কুকুর দুটোই ছুটে যাবে এবং আমাদের রাস্তা ফাঁকা হয়ে যাবে।
,
,
সিদ্দীক আমার কথা শুনে কি বুঝলো, না বুঝলো তা আমি বুঝতে পারলাম না। সে মুখ চেপে কিছুক্ষন হাসলো, এমন অবস্থায় ওর হাসি আমার মোটেই ভালো লাগছে না।
হাসপাতালের সামনে নামার পর পরই দ্রুত গতিতে মেয়েটিকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করার ব্যবস্থা করতে হলো। শহরের হাসপাতাল এবং খাবার হোটেলগুলোই শুধুমাত্র সারারাত খোলা থাকে।
কিন্তু ক্লিনিকগুলোতে এভিডেন্স ও কাগজপত্র ছাড়া রোগী ভর্তি করানোটা আজকাল খুব টাফ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাইভেট ক্লিনিক গুলোতে আবার টাকা কথা বলে।
ভাগ্যিস বাবুমিয়ার কাছ থেকে টাকার ব্যাগটি আমি আগেই নিয়ে রেখেছিলাম।
আপাতত সব ঝামেলার একটা ছোট ইতি হয়েছে। তবে বাবুমিয়াকে দ্রুত উদ্ধার করতে হবে আমাদের এবং যেহেতু বন্ডেজ ক্লাবের এক্সেস কার্ডটি হাতে পেয়েছি,
খুব দ্রুত আবার পা রাখতে হবে পেইনফুল সেক্স, মাদকাসক্ত এবং সমকামীদের গোপন আস্তানায়। হাতে নষ্ট করার মত সময় একদম ই নেই।
আমার কন্যা এবং স্ত্রী অন্য একজনের হাতে বন্দী। অন্য একজন বলতে তার ই সাবেক প্রেমিকের কাছে বন্দী।
আল্লাহ না করুক, ফারহান যেন সাবিহার উপর কোন প্রকার যৌননির্যাতন না করে এটুকুই আমার প্রার্থনা।
মনে মনে বললাম, একটু ধৈর্য্য ধরো সাবিহা, আমি আসছি। খুব দ্রুত আমি তোমার কাছে আসছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here