আনটোল্ড_ডিজায়ার #পর্ব_২২_২৩_২৪

0
729

#আনটোল্ড_ডিজায়ার
#পর্ব_২২_২৩_২৪
লেখক_হাসিবুল_ইসলাম_ফাহাদ

২২

ও ব্যাথায় চিৎকার করে ওঠে।
চিৎকার করতে করতেই বলে,
-নীড়া, নীড়া।
পায়ের প্রেসার হালকা করলাম।
পিটার বলতে শুরু করলো,
ফারহান মূলত কোন কাজ ই করেনা। তবে ও উচ্চাভিলাষী জীবন যাপনে অভ্যস্ত। আর ওর এমন জীবনযাপন করার জন্য প্রচুর টাকা পয়সার দরকার হয়৷ টাকার যোগান দিতে ও টার্গেট করে শহরের ধনী ধনী মেয়েদেরকে।
একটা বিষয়ে সবাই অবগত যে, ক্লাবে যে সকল মেয়েরা আসে তাদের টাকাপয়সার অভাব থাকেনা। অনেকেই বিপুল পরিমান অর্থের মালিক হয়ে থাকে। আর ফারহান এমন মেয়েদের সাথেই যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরি করে এবং পরে নানান অযুহাতে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।
যেহেতু আমি একজন বন্ডেজ ট্রেইনার, আমার সাথে এমন অহরহ ধনী মেয়েদের যোগাযোগ থাকবে এটা স্বাভাবিক। তাই ফারহান নিজ থেকে এসেই আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং কয়েকজন মেয়েদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার কথা বলে।বিনিময়ে আমাকে বেশ বড় অংকের টাকার লোভ দেখানো হয়৷আমি ফারহানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হই এবং ওকে হেল্প করি। ফারহান এভাবে আমার সাথে জড়িয়ে যায়।
– সেদিন রাতে আমাকে খুন করার জন্য ফারহানের সাথে তুই ও যোগ দিয়েছিলি। আমাকে মারতে চাওয়ার কারণ কি? বল।
– পৃথিবীর সকল অনুভূতির উর্ধ্বে হলো ভালোবাসার অনুভূতি। নীড়ার সাথে বন্ডেজ সেক্স এর সম্পর্ক ছাপিয়ে, আমি ওকে আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলি। কিন্তু তখন হুট করেই ও আমার সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করে এবং বার বার আপনার কথা বলতে থাকে। ও এটাও বলেছিলো আপনাকে মাষ্টার বানিয়ে আপনার সাথেই ও বাকি জীবনটা কাটাতে ইচ্ছুক। আমি এ কথা শোনার পর থেকেই আপনার প্রতি মনে মনে অনেক রেগে যাই। ভালোবাসার টান ছাড়াও নীড়ার ছিলো আমার কাছে এটিএম কার্ডের মত। ওর কাছ থেকে আমি যে কত টাকা নিয়েছি তার হিসেব নেই। কিন্তু আমাদের মাঝে বাঁধা হয়ে আবির্ভূত হন আপনি। তাই আপনাকে ফলো করে মেরে ফেলার প্লান করি। এতে আমাকে সঙ্গ দেয় ফারহান। কারণ ফারহান ও ওর পারসোনাল ইস্যু নিয়ে আপনার উপর ক্ষোভ পুষে রেখেছিলো। ফারহানের সাথে আপনার শত্রুতা কি সেটা আমি জানি না। জিজ্ঞেস ও করিনি কখনো। তবে আমাদের দুজনের উদ্দেশ্য একই ছিলো। আপনাকে আমাদের মাঝ থেকে সরিয়ে দেয়া।
এজন্যই নীড়ার বাসা থেকে বের হওয়ার পরে আপনার উপর হামলা করে তুরাগ নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
পিটারের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ওর ঘাড় বরাবর খুব জোরে একটা ঘুষি দিতেই ও ঘাড় কাত করে অচেতন হয়ে পরে।
এরপর চেয়ার টেনে নিয়ে গিয়ে বসি প্রাপ্তির সামনে।
মেয়েটি স্বাভাবিকের তুলনায় একটু মোটা। অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি খুব শান্তভাবে ওর চোখের উপরে আমার ঘৃণার দৃষ্টি রাখলাম।
ঠান্ডা মাথায় জিজ্ঞেস করলাম,
ফারহান বর্তমানে কোথায় আছে?
– আমি সত্যি ই কিছু জানিনা ফারহানের ব্যপারে।
– হাসপাতাল থেকে একসাথে তিনজন স্টাফ রিজাইন নিয়েছো৷ সবাই ফারহানের কালোকারবারীর সাথে যুক্ত ছিলে এবং টাকার হিসসা ও নিতে। তোমরা না জানলে কে জানবে!
সোজা আংগুলে ঘী না উঠলে আংগুল কিভাবে বাঁকা করতে হয় সেটা আমার ভালো করে জানা আছে।
মেয়েটি বললো, আমি যদি জানতাম, আপনাকে বলে দিতাম স্যার।
সারিকাকে বলি, সারিকা প্রাপ্তির ফোনটা আমাকে দাও।
সারিকা প্রাপ্তির ফোন এনে আমার হাতে দেয়। বার বার লক খুলতে রিকুয়েষ্ট করার পর ও প্রাপ্তি ওর ফোনের লক খুলতে অস্বীকৃতি জানায়। বাধ্য হয়ে ওর গালে কষিয়ে একটা চড় মারতে হলো। এত জোড়ে চড় লেগেছে যে প্রাপ্তি ওহ মা বলে একটা চিৎকার দিয়ে নেতিয়ে পড়লো। বোধ হয় অজ্ঞান হয়ে গেছে। এতটা সময় ধরে হিমশীতল কক্ষে থাকার পরে এমনিতেই ব্লাড সার্কুলেশনের স্পীড কমে লো প্রেসারে ভুগিছিলো। তার উপর এমন একটা চড়!
অজ্ঞান হওয়ায় ভালোই হলো। ওর ফিংগারপ্রিন্ট ইউজ করে সহজেই ফোনের লক খুলে নিলাম। কল লিস্ট চেক করে পেলাম মাত্র একদিন আগেই ফারহানের সাথে ওর কথা হয়েছে। তাও এক দু-মিনিট না। বেশ অনেক্ষন।
প্রাপ্তি তাহলে আমাদের মিথ্যা বলেছে। ওর জ্ঞান আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাক। ততক্ষন আমি কি করব তা ভাবতে ভাবতে প্রাপ্তির ফোনের গ্যালারিতে ঢুকলাম।
ওর ফোনের ভিতর ওর নিজের ই হাজার হাজার ন্যুডস ছবি। এসব ছবি দিয়ে বৃদ্ধ টাকা ওয়ালা লোকদের ফাঁদে ফেলে কিছু টাকা হাতানোর ব্যবস্থা করে প্রাপ্তি। তবে ফারহান বা পিটারের মত বড় দান মারার প্লেয়ার প্রাপ্তি না। ওর দেহের সাইজ দেখে মেয়েদের সংস্পর্শে আসার একদম ই সুযোগ পায়না এমন ছেলে ছাড়া কোন ছেলেই সেক্স করার আগ্রহ পাবেনা।
তবুও প্রাপ্তির ভাগ্যে দু একজন পেডোফাইল টাইপ ধনী লোক জুটে যায়। আর তাদের কাছ থেকে পাওয়া টাকা দিয়েই হাই সোসাইটিতে শো অফ করে ঘুরে বেড়ায় প্রাপ্তি।
যাই হোক ওর জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যেহেতু ফারহানের সাথে খুব রিসেন্টলি ওর যোগাযোগ হয়েছে, সুতরাং ওর কাছ থেকে ফারহানের বর্তমান ঠিকানা উদ্ধার করা সময়ের ব্যপার মাত্র।
তবে মাথা থেকে একটা বিষয় সহজে দূরীভূত হচ্ছে না। তা হলো আন্টোল্ড ডিজায়ার জানতে চেয়ে প্রশ্ন করে যে গ্যাং টি ওদের হদিস এখনো মিললো না। তবে আমাকে যেখানে আটকে রাখা হয়েছিলো সেখানে অভিজান চালালে হয়ত কোন একটা ক্লু খুঁজে পাওয়া যাবে।
বেশ কিছুক্ষন পরে চোখেমুখে পানির ছিটা দিতেই চোখ মেলে তাকায় প্রাপ্তি। ওকে আবারো জিজ্ঞেস করি ফারহানের অবস্থানের ব্যপারে। প্রাপ্তি চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে করতে ফারহানের অবস্থান সম্পর্কে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানায়। যখন নীড়ার সাথে বন্ডেজ সেক্স এ লিপ্ত ছিলাম তখন অত্যাচার চালাতে চালাতে আমার মনে একটা নিষ্ঠুর ইচ্ছে জেগেছিলো,
ওর গালে ধারালো ব্লেড দিয়ে আঁকিবুঁকি করা। সে ইচ্ছেটা পূরণ করার আরেকটা উপায় পাওয়া গেলো।
পকেট থেকে মানিব্যাগে রাখা নতুন ধারালো ব্লেড টা বের করলাম। প্রাপ্তির দিকে একবার তাকানোর পরে মনে হলো ওর গালে না। সুবিশাল স্তনে ব্লেডের কোনা দিয়ে আঁকিবুঁকি করাটাই আমার জন্য বেশি শান্তির হবে। ভাবনা অনুযায়ী আমি ব্লেডের এক কোণা ওর বাম স্তনে গেঁছে এলোমেলো ভাবে টানতে শুরু করলাম। মুহুর্তেই ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসলো। টপ টপ করে ফ্লোরে রক্ত পড়ছে। স্তনের উপর থেকে ব্লেডের পোঁচ চলে গেলো পেটের উপরেও। মুহুর্তেই কয়েকশ রেখায় পরিপূর্ণ হয়ে গেলো ওর পেটের চামড়াটাও।
এর ভেতরে সারিকার থাপ্পড় খেয়ে হুট করে চেয়ার থেকে নিচে পরে গেলাম।
সাথে সাথে শুনতে পেলাম গগনবিদারী চিৎকার করে চলেছে প্রাপ্তি। ব্লেড দিয়ে দেহে রেখা এঁকে দিতে দিতে আমি এমন একটা ঘোরের ভেতরে চলে গিয়েছিলাম,
এতক্ষন ধরে প্রাপ্তির বা সারিকার কোন কথা কিংবা চিৎকার আমার কানে এসে লাগেনি।
সারিকার থাপ্পড়ে আমি ঘোর থেকে বাস্তবতায় পদার্পণ করি। আমার দিকে তাকিয়ে সারিকা বলে, মেয়েটি তো বলেই দিয়েছে সবকিছু। তুমি তবুও ওকে এত নৃশংসভাবে আঘাত করে চলেছো কেনো!
বললাম- দুঃখিত। আমি আসলে ঘোরের ভিতরে ছিলাম প্রাপ্তি কি বলেছে কিছুই শুনিনি।
– সমস্যা নেই। আমি সবকিছু শুনেছি। এবার ওঠো। সময় নষ্ট করাটা আমাদের জন্য ঠিক হবেনা।
প্রাপ্তির শরীর থেকে প্রচুর ব্লাড ঝড়ছে।
এভাবে কিছুক্ষন থাকলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে ও।
সারিকা ওর পরিচিত এবং বিশ্বস্ত একজন সার্জারি স্পেশালিস্ট ডাক্তারের তত্তাবধানে প্রাপ্তিকে রেখে দেয়।
আমি এবং সারিকা আবারো গাড়িতে চেপে৷ বসি।
গাড়ি ছুটে চলে বাবু মিয়াকে মুক্ত করে বাসায় দিয়ে আসার জন্য।
যখন গিয়ে হাসপাতালে বাবুমিয়ার কেবিনে পৌঁছালাম, দেখলাম বাবুমিয়া উপুর হয়ে শুয়ে আছে। সে চিৎ হয়ে শুতে পারেনা। বসতে পারেনা এমনকি বিশেষ কাজেও তার গুরুতর সমস্যা হয়। আমাকে দেখা মাত্রই বাবুমিয়া আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লো। সারিকাকে পরিচয় করিয়ে দিলাম বাবুমিয়ার সাথে।
এটাও বলে দিলাম, সে সব ধরণের আইনি ঝামেলা থেকে মুক্ত।
বাবুমিয়া আনন্দে সারিকার হাত ধরে কেঁদে দিলো। এত ইমোশনাল মানুষ আমি দুনিয়ায় কম দেখেছি। বাবুমিয়াকে আমাদের সাথে করে নিয়ে আসলাম।সে আমাদের সাথে বেশ কিছু সময় ব্যয় করে নিজের বাসায় চলে যায়। সারিকা গাড়ি করেই তার নিজ বাসার সামনে নামিয়ে দেয় তাকে।
এ পুরো সময়টা আমি পথে পথে সারিকাকে বার বার জিজ্ঞেস করেছি প্রাপ্তি ফারহানের লোকেশন কোন জায়গায় বলেছে, সারিকা আমাকে একটাই জবাব দিয়েছে,
তোমাকে বলবোনা আমি তোমাকে নিয়ে যাব গাড়ি চালিয়ে। এটা তোমার জন্য বেশি এক্সাইটমেন্ট এর হবে। তবে যাওয়ার আগে আমাদের কিছু টুলস নিয়ে যেতে হবে।
সারিকার একঘেয়েমিতার কাছে আমাকে হার মানতে হলো।চুপচাপ বসে রইলাম।
ঠিক করলাম আজ রাতেই অপারেশন এ নামব।
সারিকা আমি এবং সিদ্দীক তিনজন একত্রে যাব। সারিকা বেশ কিছু টুলস সাথে নিলো। জ্যাপিং গান, যেটা দিয়ে ইলেকট্রিক শক প্রয়োগের মাধ্যমে মুহুর্তেই অজ্ঞান করে ফেলা যায় যে কাউকে,
সাথে কিছু শক্ত দড়ি, আমি রিভালবার ইউজ করতে পারি কিনা জিজ্ঞেস করে সারিকা। আমি উত্তরে জানাই হ্যাঁ, রিভালবার চালানোতে আমি অভ্যস্ত। আমাকে তিন রাউন্ড বুলেট সহ একটা রেজিস্ট্রেশন করা গ্লোক থার্টি সেভেন রিভালবার দেয়া হয়। সিদ্দীক ও বাদ যায়নি। ওকে দেয়া হয় একটা বেসবল ব্যাট।
মোটামুটি সবকিছু প্রস্তুত করার পর আমরা রাতে রওনা দেই ফারহানের গোপন আস্তানার উদ্দেশ্যে।
বেশ অনেকটা পথ পার হয়ে মূল ঢাকার বাইরে চলে যাই আমরা। যখন গন্তব্যে পৌঁছাই তখন রাত্র দুটা বেজে ত্রিশ মিনিট।
অনেকটা গ্রাম্য একটা অঞ্চল। পায়ে হেঁটে কিছু কাঁচা পাকা বাড়ি পার হতেই চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাইটিং এর একটি তিনতলা বাসার উপর নজর যায় আমাদের।
বাসার চারদিকে জেলখানার দেয়ালের মত উঁচু প্রাচীর,উপরে আবার কাঁটা তারের বেড়ী লাগানো। এ দেয়াল টপকানো একেবারেই অসম্ভব কিন্তু গেট থেকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টাও করা যাবেনা। তাহলে সব প্লান বরবাদ হয়ে যাবে আমাদের। আশপাশের দেয়ালে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম কোনো উপায় আছে কিনা দেয়াল টপকানোর। সারিকা মনে মনে গালি দিলো প্রাপ্তিকে।ও একবারের জন্য ও বলেনি যে এ বাড়িটির চারদিকে এমন দুর্ভেদ্য দেয়াল রয়েছে।
দড়ি দিয়ে বেয়ে কোনভাবে উপরে উঠলেও কাটাতারের বেড়ায় হাত পা ছিড়ে যেতে পারে। ওপাশে যদি কোন গার্ড ঘোরাঘুরি করে তাদের ও চোখে পড়ে যেতে পারি।
সব মিলিয়ে গুড়ে বালি পড়ার মত অবস্থা তৈরি হলো। মূল গেটের ফাঁকা দিয়ে ওপাশে কি আছে সেটা দেখার ও কোন ওয়ে নেই। কারণ প্রধান ফটকটি ছিলো পুরোটাই লিফটের দরজার মত সলিড স্টিলের তৈরি।
অনেক ভাবনা চিন্তা করার পরে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা সিদ্দীক কে রেকি করার কাজে এ এলাকায় কিছুদিন রেখে যাব। ও ছদ্দবেশে ঘুরেফিরে এখানের কার্যক্রম লক্ষ করবে এবং আমাদের রিপোর্ট জানাবে। যখন ভেতরে ঢোকার মত কোন উপায় খুঁজে বের করতে পারব তখন দ্রুত আমরা চলে আসব এবং বন্দীদের মুক্ত করব। আমার ধারণা যদি ভুল না হয়, তবে এখানে আমার কন্যা এবং স্ত্রীর মত আটকা পরে আছে আরো অনেকেই।
আমি একটা বিষয় খুব ভালো করে বুঝতে পারছি, সারিকা চাইলে ওর ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে খুব দ্রুত স্পেশাল সোয়াট বাহিনী দ্বারা সবাইকে উদ্ধার করতে পারে। তবে ও নিজের এডভেঞ্চারের জন্য আমাদের সাথে মিলে নিজেই কাজ করছে। তবে এ বিষয়ে সারিকাকে আমি কিছু বলতে চাচ্ছিনা৷ ও নিজ থেকে আমার জন্য যা করেছে যতটুকু করেছে সেটাই অনেক।
সেদিন রাতে সিদ্দীক কে ওখানে রেখেই আমরা ফিরে আসি। আমাদের প্রথম যাত্রা সফল হয়নি। এসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি প্রাপ্তির শারিরীক অবস্থা ঝুঁকিমুক্ত৷
ও এখন ব্যাথায় মাঝেমাঝে চিৎকার চেঁচামেচি করছে।
পিটারের অবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক আছে।
ওর কাছ থেকে আমার আর নতুন কিছু জানার বা তথ্য পাওয়ার নেই। তবে একটা বিষয়ে আমি পিটারের সাহায্য নিব। সে ইচ্ছেটা আমার মনের ভিতরে আপাতত গোপন রাখলাম।
.
.
.
.
আনটোল্ড ডিজায়ার প্রশ্ন করা গ্যাং এর কার্যক্রম ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের হট টপিকে চলে এসেছে অনেক পুলিশ এবং সিক্রেট গোয়েন্দারা খুঁজে বের করার চেষ্টা করে চলেছে ওরা কে বা কারা। কিন্তু ফলাফল শূন্য। ফোন নম্বর ট্রাক করেও কোন লাভ হচ্ছেনা কারণ এমন লোকদের ফোন দিয়ে ওরা মানুষদের ফোন করছে যে লোকগুলোকে ইতিমধ্যেই ওরা মেরে ফেলেছে৷
লোকেশন ট্রাক করে কিংবা সিসি ক্যামেরা ঘাটাঘাটি করেও কোন প্রকার লাভ হচ্ছেনা। অনেক গুলো ফোন রেকর্ডিং বিভিন্ন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে ফাঁস করেছে গোয়েন্দা বিভাগ। যা শুনে পুরো দেশবাসির মনের ভিতরে কাঁপন ধরে গেছে। এখন কেউ আর আননোন নম্বরে সহজে ফোন রিসিভ করেনা। কেউ কেউ করলেও যদি আনটোল্ড ডিজায়ার কি এটা জিজ্ঞেস করে তবে ফোন অফ করে পুলিশে খবর দেয়া হয়৷
আনটোল্ড ডিজায়ার সিক্রেট এভাবে ওপেন হয়ে যাওয়ায় ঐ গ্যাং এর এক্টিভিটি অনেকটাই কমে যায়৷
কিন্তু বিষয়টা মোটেই ভালো লাগলো না আমার কাছে। ইচ্ছে ছিলো ওদের ভেতরকার রহস্য উদঘাটন করা। এজন্য ওদের কার্যক্রম ওদের মত চালাতে দেয়টা খুব ই জরুরী ছিলো।
সিদ্দীকের সাথে নিয়মিতভাবে আপডেটেড থাকায় খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেলাম আমরা।
ও ওখানে মসজিদের খাদিম হিসেবে কাজ নিয়ে গুপ্তচরের দায়িত্ব পালন করছে।
হঠাৎ করে আমাদের কাছে বাবুমিয়ার একটি কল আসে। সে জানায় তার ফোনে একটা আননউন নাম্বার থেকে কল এসেছে এবং জানতে চাওয়া হয়েছে হট ইজ হিজ আনটোল্ড ডিজায়ার।
এরকম একটা কিছু ঘটার খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো। সাথে সাথেই বাবুমিয়াকে জানালাম যাতে আমাদের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করে। বাবুমিয়া জানালো সে তার ফার্নিচারের দোকানেই আছে। সারিকা এবং আমি দ্রুত তৈরি হয়ে রওনা দিলাম বাবু মিয়ার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে।
পৌঁছানোর পরে জিজ্ঞেস করলাম সে কি কোন উত্তর দিয়েছিলো কিনা! বাবু মিয়া জানালো সে কিছুই বলেনি ফোন রেখে দিয়েছে। পরে আরো বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলো কিন্তু সে পিক-আপ করেনি। আমি সারিকা এবং বাবু মিয়া অপেক্ষা করতে থাকলাম আরো একবার ফোন আসার। প্রায় ঘন্টা দুই পরে একটা ফোন আসলো।
লাউড স্পিকারে রেখে ফোন রিসিভ করলাম।
ওপাশ থেকে ছেলে মেয়ে মিশ্রিত গলায় একটা প্রশ্ন ভেসে আসলো,
মিস্টার, হট ইজ ইউর আনটোল্ড ডিজায়ার।
যতটা সম্ভব পারা যায়, গলা বাবু মিয়ার মত করে উত্তর দিলাম, মাই আনটোল্ড ডিজায়ার ইজ সিয়িং ইউ।
অর্থাৎ আমার না-বলা চাওয়া হচ্ছে আপনাকে দেখা।
ওপাশ থেকে টুট টুট সাউন্ড হয়ে ফোন টা কেটে গেলো।এরপর আমরা সবাই নিশ্চুপ। পরবর্তীতে আবারো ফোন আসলো ঠিক দশ মিনিট পরে।
রিসিভ করার পরে ওপাশ থেকে কেউ একজন বললো,
অবশ্যই আপনি আমাকে দেখবেন।
আমি ই হবো আপনার দেখা শেষ মানুষ।
এরপর আবারো নিজ থেকেই ফোনটা কেটে যায়।
বাবুমিয়া ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়।
সারিকা এবং আমি বাবু মিয়াকে অভয় দেই৷ আমরা থাকতে ওনার কোন ক্ষতি হতে দিবনা এটাও জানাই।
সে কিছুটা আশ্বস্ত হয়।
সারিকা এবং আমি প্লান করে বাবু মিয়াকে এমন কিছু জায়গায় ঘুরতে যেতে বলি যে সকল জায়গা সাধারণত লোকজন খুব কম যায়। ওরা বাবুমিয়াকে যে ফলো করবে সেটা খুব ভালোভাবেই জানা ছিলো আমাদের।
তবে আমাদের প্লান ফেইলর হয়। কয়েকদিন কেটে গেলেও বাবুমিয়া কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হয়নি।
প্রতিদিনের মত বাবুমিয়া সকাল সকাল তার শো রুমের দোকানে এসে বসেন। আরাম আয়েশ করেন টিকটক ভিডিও বানান।
টিকটক ভিডিও বানানো তার নতুন অভ্যেস। বাবুমিয়া বর্তমানে সেলিব্রেটি একজন পারসোন। কুকুরের ধাওয়া খাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে সে অনলাইনে খুবই জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। তার যে কোন ভিডিও খুব দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তুলে দেয়।
টিকটক ভিডিও বানানোর সময়ে সে খুবই সিরিয়াস মুডে থাকে। কিন্তু তার ভিডিও বানানোতে ব্যাঘাত ঘটায় একজন নিউ কাষ্টমার। কিছুটা বিরক্ত হয়ে বাবুমিয়া ভিডিও অফ করে কাষ্টমারের প্রতি মনোযোগী হন।
কি ধরণের ফার্নিচার তার পছন্দ জিজ্ঞেস করেন,
নীল শাড়ি পড়া মেয়েটি জানায় একটা ভালোমানের ওয়ারড্রব দরকার তার। বাবুমিয়া তার কর্মচারী ছেলেটিকে বলেন যে ওয়ারড্রবগুলো তাদের কালেকশন এ আছে সেগুলো দেখাতে। ছেলেটি মেয়েটিকে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ওয়ারড্রব গুলো দেখায়। বাবুমিয়া ফোনের দিকে পুনরায় মনোযোগী হয়।
হুট করে ধুপ করে কিছু পরে যাওয়ার শব্দে বাবুমিয়া এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখতে পায় তার সহকর্মী ছেলেটি মাটিতে পরে আছে। নীল শাড়ি পরিহিত মেয়েটির মুখে বাঁকা হাসি।
বাবুমিয়া উঠে দরজার দিকে দৌড়াতে যাবে,
এমন সময়ে সাথে করে নিয়ে আসা রিভালবার বের করে বাবুমিয়ার দিকে তাক করে ধরে মেয়েটি।
বাবুমিয়া দু হাত উপরে তুলে দিয়ে ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
কম্পিত গলায় প্রশ্ন করে কে আপনি?
মেয়েটি উত্তর দেয়, যাকে দেখা আপনার অপ্রকাশিত ইচ্ছে ছিলো, আমি সে।
ভালোভাবে দেখে রাখুন। কারণ একটু পর একটা গুলি আপনার মাথা এঁফোড় ওঁফোড় হয়ে বেরিয়ে যাবে।
” সে সুযোগ আর তুমি পাবেনা”
কথাটা শুনেই পেছন ফিরে তাকায় মেয়েটি।
আমার হাতে থাকা রিভালবারটি মেয়েটির দিকে তাক করে রেখেছি। মেয়েটি পেছন ঘোরার সাথে সাথেই সারিকা একটা স্পিনিং কিক মেরে ওর হাতে থাকা রিভালবারটি ফেলে দেয়।
সম্পূর্ণভাবে আমাদের হাতে ধরা পরে যায় অদ্ভুত ফোনকলের পেছনে থাকা মানু্ষটি।
ওকেও নিয়ে আসা হয় আমাদের টর্চার রুমে।১২ ঘন্টা ফ্রিজিং তাপমাত্রায় রেখে তারপর ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
দু হাত পেছনে বেঁধে স্টিলের চেয়ারের সাথে বেঁধে আটকে রেখে চলে আসি আমি ও সারিকা।
সারিকা চলে যাওয়ার ঠিক কিছুক্ষন পরে আমি আবারো আমাদের টর্চার সেলের ভেতরে ঢুকি।
মেয়েটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি,
” আমাকে মারতে চাওয়ার পেছনে তোমার উদ্দেশ্য কি ছিলো ইলিয়ানা রহমান? ”
ইলিয়ানা চোখ তুলে আমার দিকে তাকায়।
ও দৃঢ় গলায় বলে,
তুমি আমাদের পুরো টিমের কাছেই টার্গেট হয়ে গেছিলে। আমরা একটা মিশনে আছি।
– আমি টার্গেট হয়ে গেছিলাম? এর পেছনে কারণ কি?
– আমাদের টিম সমাজের আগাছা নিধনে কাজ করে। খোঁজ নিয়ে দেখবে, এখন পর্যন্ত যারা আমাদেএ হাতে মৃত্যুবরণ করেছে তারা কোনো না কোনো ভাবে খারাপ ও অবৈধ কাজের সাথে জড়িত।
সমাজ থেকে এমন মানুষদের ধরে ধরে সরিয়ে দেয়াই আমাদের টিমের কাজ।
তুমি আমাকে চাইলে মেরে ফেলতে পারো ফাহাদ। কিন্তু আমি আমাদের টিম সম্পর্কে একটি তথ্য ও তোমাকে দিব না।
– ইলিয়ানাকে আমি যে ক’দিন ধরে চিনি, তাতে ওকে আমি অবিশ্বাস করতে পারলাম না।
রুম থেকে বের হয়ে চলে আসলাম। সারিকাকে জানালাম না ইলিয়ানা আমার পূর্ব পরিচিত।
ইলিয়ানার সাথে আমার আরো কিছু কথা ছিলো। কিন্তু সারিকা চলে আসতে পারে তাই দ্রুত বের হয়ে চলে আসলাম।
আমার এখন দরকার মালিহার বাবা মায়ের ব্যপারে খোঁজ নেয়া। তারা কি কোন অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলো কিনা এবং বাবুমিয়ার বা আমার অপরাধটাও বা কি যার কারণে আমাদের মেরে ফেলার জন্য টার্গেট করা হয়েছে,
এগুলো সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়ার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here