আনটোল্ড_ডিজায়ার #পর্ব_৫,০৬

0
596

আনটোল্ড_ডিজায়ার
#পর্ব_৫,০৬
লেখক_হাসিবুল_ইসলাম_ফাহাদ
০৫

অফিস ছুটি হয় বিকেল পাঁচটার দিকে।
নীড়ার চোখেমুখে একটা কুটিল আনন্দ ঢেউ খেলছে।
কেন জানিনা, অকারণেই আমার বুকের মাঝে ধুকধুক করছে। এটা ভয়ের অনুভূতি কিনা তা বলতে পারব না,কারণ আমার ভেতরে অজানা একটা বিষয় সম্পর্কে জানার প্রবল আগ্রহবোধ টাও কাজ করছে।
নীড়ার পেছনে অনুসরণ করলাম।
ওর স্কুটিতে চেপে বসার আগে জিজ্ঞেস করলাম,
এখন কি ক্লাবে যাব?
উত্তরে নীড়া বললো- ধুর, না।
– তবে?
আগে তোমাকে নিয়ে ঘুরব, তারপর শপিং করব, তারপর খাওয়াদাওয়া, তারপর ক্লাব।
নীড়ার চোখেমুখে অপার এক আনন্দ দেখতে পাচ্ছি।
ওর হাসিটাও আজ অনেক প্রানবন্ত লাগছে।
জিজ্ঞেস করলাম- কোথায় ঘুরতে যাচ্ছি?
– চন্দ্রিমাতে।
উদ্যানটা আমার বেশ পরিচিত। সাবিহার সাথে আমার অনেক সুখকর স্মৃতি আছে এখানে।
নীড়া ওর পিংক কালারের স্কুটিটি পার্ক করে। এর একটু পর ই ঝামেলা বেঁধে যায়৷ ওর স্কুটির পেছনে সাদা রঙ এর একটা গাড়ি পার্ক করা ছিল। ওটার জানালা থেকে কে যেন একটা প্লাস্টিকের বোতল বাইরে ছুড়ে মারে। নীড়া গিয়ে বোতল হাতে তুলে আবার ঐ গাড়ির জানালা দিয়ে ভিতরে ছুড়ে দেয়৷ সাথে সাথেই জানালা দিয়ে বাইরে গলা বের করে উঁকি দেয় আন্টির বয়সি একজন মহিলা। সে অতি উত্তেজিত অবস্থায় এমন ভাবে গলাটা বের করেছে যে আরেকটু হলেই জানালার ফাঁকা দিয়ে টুপ করে বাইরে পরে যেত। ভাগ্যিস তার ইয়া বড় ভুড়ির রহমতে এমন একটা বিপদ থেকে বেঁচে গেলেন তিনি।
– এএএই এইই বেয়াদব মেয়ে, তুমি এটা কি করলে?
– আন্টি আপনি যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে পরিবেশ দূষণ করছেন। আমার যেটা করা বলে উচিত মনে করেছি সেটাই করেছি।
– চুপ করো বেয়াদব। আমি বোতল ফেলেছি দেখে দেশ নোংরা হয়ে গেছে, আর ঐ যে ঐ দেখ গাছের নিচে বসে একটা রিকশাওয়ালা যে প্রস্রাব করছে সেটা দেখছিস না?
– প্রস্রাবের থেকে প্লাস্টিক বেশি পরিবেশ দূষণ করে। আপনিও দরকার হলে ওখাবে গিয়ে প্রস্রাব করুন আমি কেন কেউ ই কিছু বলবে না। কিন্তু পলিথিন বা প্লাস্টিক যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকুন। এগুল অপচনশীল।
নীড়া মহিলাটির সাথে কথা কাটাকাটি করছে আমি দূর থেকে দেখছি৷ সাবিহা মোটেই এমন ছিল না৷ ও বরং ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করতো।
বিজয়ের হাসি হাসতে হাসতে নীড়া আমার কাছে এসে বলে, একদম ঠিক শিক্ষা দিয়েছি মহিলাটাকে। আর কোনদিন রাস্তায় প্লাটিক ফেলবে না।
– আমি কিন্তু ইচ্ছা করেই রাস্তার উপরে প্লাস্টিকের বোতল ফেলি।
নীড়া চোখ বড় বড় করে তাকালো।
বললো কেন?
– আমাদের ফেলা প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে তা বিক্রি করে অনেকের সংসার চলে যায়৷টোকাই নামক এক মানুষের দল আছে আমাদের শহরে ওদের কাছে এগুলো খুব প্রয়োজনীয় ।
– ডাস্টবিনে ফেললে তো সেখান থেকেই নিতে পারে।
– মানুষ যখন পুকুরে মাছকে খাবার দেয়, তখন কি সব খাবার একসাথে এক জায়গায় দেয় নাকি ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়?
– ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
কিছুক্ষন চুপ থেকে নীড়া বললো ওহ বুঝেছি।
মনটা হঠাৎ উদাস হয়ে গেল। নীড়ার সাথে ঘুরছি ঠিক ই কিন্তু আমার মনে পড়ছে সাবিহার কথা। ওর সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো আমার জীবনের সবথেকে দামি অনুভূতি গুলোর ধারক।
তবে সাবিহার মত নীড়া সবসময় গম্ভীর থাকেনা। খুব অল্পতেই হাসে ও৷বেশি হাসা মানুষগুলোর সাথে চলতে ভাল লাগে। চলার পথে গাছ থেকে টুপ করে একটা পাতা ছিড়ে হাতে দিয়ে যদি বলা হয়,
“পৃথিবীর কোন এক প্রেমিক তার ছাগলিকে প্রেমিকাকে ভালোবেসে একটা পাতা উপহার দিল”
এটুকুতেই ওরা বেশ খুশি হয়।
তবে নীড়ার আনন্দটা ঠিক কি নিয়ে সেটা বুঝতে আমার কষ্ট হচ্ছে।
আমার বাহুর ভেতরে হাত ঢুকিয়ে বেশ কিছুক্ষন পার্কে হাঁটাহাঁটি করলো নীড়া।
নীড়াকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার স্ত্রী সন্তান আছে, তুমি জানো।
তবুও আমার সাথে মিশছো কেন?
নীড়া সোজাসাপটা উত্তর দেয়,
আমার মনে হয় তুমি আমার জন্য পারফেক্ট মাষ্টার হতে পারবে।
যখন অফিসের বাকি কলিগদের তোমার ভরাট কন্ঠে ধমক দিতে, আমি তোমার এগ্রেসিভ এটিটিউড এর উপর ক্রাশ খেতাম। আমার তো ইচ্ছে করতো তোমার কাছে সারাদিন বকা শুনি, বকা তো ভালো। মার খেতে ইচ্ছে করত।
– মার খেতে ভাল লাগে এটা আমি এই প্রথম শুনলাম।
উঁহু, শুধু মার না। আমি ভালোবাসা ও ব্যাথা একসাথে উপভোগ করতে পছন্দ করি।
– কিভাবে সেটা উপভোগ করে?
পেইন উইথ প্লেজার, ক্লাবে গেলে বুঝবে। এখন ওসব বাদ দাও। আমি কিছুক্ষন তোমাকে আমার মন থেকে অনুভব করার চেষ্টা করি।
আমি হ্যাঁ না এমন কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না।
বেশ ঘুরাঘুরি করলাম। বাদাম চানাচুর চা আইসক্রিম সহ অনেক স্ট্রিটফুড খেলাম আমরা। একটা বিষয় খেয়াল করলাম নীড়ার সাথে ঘুরতে বের হয়ে আমার বয়স কমে গেছে।
আমি তুলনা দেয়ার চেষ্টা করলাম দুজনের ভেতরে।
সাবিহার সাথে ঘুরতে বের হলে অনেক গম্ভীর হয়ে থাকতে হয় একটা দায়িত্ববোধ থাকে নিজের ভেতরে। ওকে গাইড করতে হয়। ওর কথা শুনতে হয়।
কিন্তু নীড়ার সাথে ঘুরতে বের হয়ে মনে হচ্ছে ছোটবেলার দুই বন্ধু মিলে ঘুরতে বের হয়েছি। প্রথমদিকে একটু গম্ভীর থাকার চেষ্টা করেও লাভ হলোনা।
কিছুক্ষন পর ই নীড়ার সাথে আমিও সেট হয়ে গেলাম। এদিক সেদিক তিড়িং বিড়িং করে লাফাচ্ছি, স্ট্রিট ফুড খাচ্ছি, মাঝে মাঝে একজন আরেকজন কে ধাওয়া দিচ্ছি কে কাকে ধরতে পারে দৌড়ে তা পরখ করে দেখছি, জীবনের এ অংশের আনন্দটা আমার কাছে এতদিন চাপা পরে ছিল। নীড়ার সঙ্গ পেয়ে যেন সব আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
বেশ ভালো একটা বিকেল সন্ধ্যা কাটালাম আমরা।
এরপর নীড়া আমাকে নিয়ে গেল একটা শপিং মলে।
সেখানে গিয়ে ইয়োলো শো রুম থেকে আমার জন্য বেশ দামি গেঞ্জি, প্যান্ট এবং বেল্ট কিনে দিল। বললো ট্রায়াল রুম থেমে চেঞ্জ করে আসতে। আমি নীড়ার কথা মত চেঞ্জ করে আসলাম। নীড়া আয়নার সামনে এসে আমার গায়ের সাথে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে বললো দেখো আমাদের কত সুন্দর দেখাচ্ছে,
নীড়ার জামাকাপড় এর চয়েস ভাল মানতে হবে আমাকে আগের থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় লাগছিল ব্লাক কালার টি-শার্ট স্ক্রাচ করা স্কাই ব্লু জিন্স এবং স্নাকারসে।
নিজের মনের অজান্তে নীড়ার কোমড়ে হাত দিয়ে ওকে আমার দিকে টেনে নিয়ে বললাম,
তোমাকে আমার পাশে সুন্দর দেখায়।।
নীড়ার আনন্দ মাখা মুখটা আগের থেকে আরো বেশি প্রফুল্ল হয়ে উঠলো।
শপিং শেষে আমরা একসাথে খাওয়া দাওয়া করলাম। নীড়ার বিশাল আয়োজন। ক্যান্ডেল লাইট ডিনার।
খাবারদাবার অর্ডার করে আমরা বসে আছি, নীড়া হঠাৎ আমার হাত চেপে ধরে বললো, এখন থেকে তোমাকে আমি মাষ্টার ডাকবো।
– ডেকে কি হবে?
– তুমি সত্যি ই আমার মাষ্টার হয়ে যাবে। আমি হবো তোমার স্লেভ।
তুমি যা চাও আমার সাথে করতে পারবে।
কি উত্তর দিব ভাবছিলাম।
এমন সময়ে খাবার চলে আসে। অকোয়ার্ড একটা সিচুয়েশন থেকে মুক্তি পাই আমি।
খাবার শেষ করতে করতে রাত ৯ টা বেজে যায়।
ফোন কখন যেন সুইচড অফ হয়ে রয়েছে খেয়াল করিনি। নীড়ার থেকে একটু দূরে গিয়ে ফোন অন করি।
অন করার কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই কল আসে সাবিহার। ফোন পিক করতেই ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই সাবিহার। জিজ্ঞেস করে কোথায় আছি।
আমার উত্তর দিতে ইচ্ছে করছিল,
” তুমি কখন কোথায় ছিলে আমি কি জিজ্ঞেস করেছি?”
কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম কাজে আছি৷ রাতে হয়ত ফেরা হবে না৷
বাবু কি করছে জানতে চাইলাম। জানালো ও ঘুমিয়ে পড়েছে৷ আমি ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দেই।
অন্য কোন সময় হলে ও খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করতাম। কিন্তু সাবিহা খাক কিংবা না খাক তাতে আমার আর কিছু যায় আসেনা।
.
.
.
৯ঃ৪৫ পর্যন্ত নীড়ার বাসার নিচে দাঁড়িয়েছিলাম। ও নিজের বাসায় ঢুকে চেঞ্জ করে এসেছে।
ড্রেস চেঞ্জ করে আসার পরে ওকে আমি একদম ই চিনতে পারলাম না৷
একটা পিংক কালার গেঞ্জির একপাশ থেকে অনেকটা নামানো৷ কাঁধের উপর থেকে ভেতরে পরিহিত ছোট ড্রেসের ফিতা দেখা যাচ্ছে। সাথে ব্লাক জিন্স এবং ব্লাক হাই হিল।গলায় ব্লাক চোখার,চোখে কালো কাজল। চাহনীতে এক সমুদ্র তৃষ্ণা
ওকে এমন রূপে আমি আগে কখনো দেখিনি৷
এসে বললো, মাষ্টার, কখনো মুভি দেখেছেন হলে?
– হ্যাঁ
– আজ আমরা বন্ডেজ ক্লাবে মুভি দেখবো৷ তবে এটা শুধুমাত্র এডাল্ট দের জন্য।
এখানে কোন ডিজিটাক স্ক্রিনের পর্দা থাকেনা৷ সরাসরি লাইভ দেখা হয়।
– আমাকে এখানে নিয়ে যাওয়ার কারণ?
– শেখানো, হাউ টু বি এ পারফেক্ট মাষ্টার।
কথা বলতে বলতে স্কুটি চলে আসে একটা নামকরা শপিং মল এর সামনে৷
নীড়াকে ফলো করে লিফট বেয়ে একদম রুফ টপে চলে যাই। সেখানে নানারকমের সী ফুড ফাস্ট ফুড ও চায়নিজ খাবারের দোকান।
এগুলোর ভেতরে মোটামুটি মানের একটা কোর্টে ঢুকে যায় নীড়া। ঢুকে একদম সরাসরি কিচেনে চলে যায়৷ পেছন পেছন যাই আমিও৷ কিচেনের একদম শেষ প্রান্তে তাকালেই কিছু পাটের চট ঝুলতে দেখা যায়। জায়গাটা বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। নীড়া এগিয়ে গিয়ে এক হাত দিয়ে চট সরায়। উন্মুক্ত হয় একটি গোপন লিফট।লিফটের ভেতর থেকে কেউ একজন বাইরে অবস্থান করা আমাদের ছোট একটা ছিদ্র দিয়ে দেখে নিল। একটু পর খুলে গেল দরজা। নীড়ার এখানে যাতায়াত আছে বোঝাই যায়৷
লিফট কতক্ষন ধরে নিচে নামে অনুমানের বাইরে। তবে একটা পর্যায়ে লিফটের চলন বন্ধ হয়৷ লিফট থেকে বাইরে বের হতেই কানে আসে ধুম ধারাক্কা নাচ গানের শব্দ।পুরো কামরা লাল নীল আলো আর ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ।
আমাদের মত এখানে অনেকেই জোড়ায় জোড়ায় আছে। অনেকে সিংগেল। মদ খেয়ে মাতলামো করছে। কিছু কিছু মেয়েরা ট্রে তে মদের গ্লাস নিয়ে বিক্রির জন্য সবার মাঝে হাঁটাহাঁটি করছে। তাদের বুকে কোন কাপড় নেই৷ একদম উদোম। নিচে হালকা কোন রকমের একটা কাপড় পেঁচিয়ে পড়া। মাতাল অবস্থায় অনেকেই ওদের গায়ে হাত বুলাচ্ছে। কিন্তু এতে মেয়েগুলোর কোন ভ্রুক্ষেপ ই নেই৷ তারা ব্যস্ত তাদের হাতের দামি ড্রিংকস গুল টাকাওয়ালা লোকদের খাইয়ে পকেট থেকে বেশি বেশি টাকা খসিয়ে নিতে।
নীড়া দুই গ্লাস ড্রিংক্স নেয়৷
আমার দিকে এগিয়ে দিলে আমি খেতে অসম্মতি জানাই৷ বলি আমি অভ্যস্ত নই৷ কিন্তু নীড়া বলে এরপর যা দেখতে যাচ্ছি তা তোমার স্বাভাবিক মাথা নিতে পারবেনা৷
তাই একটু ড্রিংস করে নেয়াটা জরুরি । ও আরো জানায় আর এটায় তেমন নেশা হবেনা৷ কিন্তু শরীরে উত্তেজনা বাড়বে৷
আমি নাক সিটকে কয়েক চুমুকে খেয়ে নিলাম।
নীড়া এবার আমাকে নিয়ে এগিয়ে গেল সামনে। কয়েকটা দরজা পার হয়ে একটা রুমের সামনে নিয়ে আসে আমাকে। গেটে হাত পা বাঁধা একটা অর্ধ উলঙ্গ মেয়ে বসে আছে এমন একটা পোস্টার লাগানো। নীড়া দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে। ভিতরে ঢোকার পর পর ই বুকের ভিতর ধুক করে উঠে আমার৷
সিলিং থেকে নেমে এসেছে একটা লম্বা তার। সে তারের মাথায় ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা ১০০ ওয়াটের একটা লাল লাইট
পুরো রুমকে আলোকিত করে রাখার দায়িত্ব নিয়েছে। লাইটের নিচেই রাখা একটা চেয়ার। চেয়ারের চারপাশে থাকা আরো কিছু মোটা মোটা শিকল ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দেখে মনে হচ্ছিল এটা একটা টর্চার সেল।
নীড়া হুট করে বাইরে গিয়ে আবার কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই চলে আসে। ওর হাতে দুটো সাদা রঙ এর টিকেট। আমরা রুমের অন্য কোনায় গিয়ে বসি৷ সেখানে ঐ ঝুলে থাকা লাল লাইটের বাতি পৌঁছায় না। আমরা সব ক্লিয়ার দেখতে পেলেও যারা লাইটের আলোর নিচে থাকবে তারা আমাদের দেখতে পারবেনা৷
আমাদের মত আরো বেশ কয়েক দম্পতি বসা আছে অন্ধকারের ভেতরে। তারাও আমাদের মত কিছু একটা দেখতে এসেছে।দম্পতি কেন বললাম। জুটি বলা ভাল, হয়ত আমাদের ই মত তারাও।আমার কাছে অবশ্য সার্কাসে বসে পশু পাখির নানা ধরণের পারফরম্যান্স দেখার মত ফিল হচ্ছিল।
কিছুক্ষন পরে শুরু হয় আসল ঘটনা।
প্রথমেই এক হাতে একটা চেইন ও অন্য হাতে মিডিয়াম সাইজ একটা লাঠি নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করে এক মাঝবয়েসী ছেলে।চেইনের অপর প্রান্তে বাঁধা আছে একজন মেয়ে৷ যে কুকুরের মত চার হাত পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে হেঁটে ভেতরে আসে। নীড়া আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ভালো ভাবে দেখে শিখে নাও৷ কিভাবে ডমিনেন্স করতে হয়। নীড়া প্রায় আমার কোলে উঠে বসেছে। তার চোখ তখন মঞ্চের দিকে ।
মাঝবয়েসী ছেলেটা মেয়েটাকে লাঠি দিয়ে ইশারা করতেই মেয়েটা চেয়ারে উঠে বসলো৷ ছেলেটা মেয়েটাকে কি কি যেন বলছে, শোনা যাচ্ছে না। হুট করে মেয়েটার গালে সজোরে একটা চড় বসালো।এক চুলের মুঠি ধরে পেছন দিকে টান দিয়ে অন্য হাতের বেশ কয়েকটা আংগুল মেয়েটার মুখের ভেতরে ঢুকিয়ে ভেতর বাহির করতে শুরু করলো৷ এত জোরে চুল টানছিল যে মনে হচ্ছিল মেয়েটার মাথার চুল সব উঠে যাবে। মেয়েটাকে দেখে তবুও মনে হচ্ছেনা যে সে খুব বেশি ব্যাথা পাচ্ছে বরং তার চোখে খেলা করছে ছেলেটার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা আর আনুগত্য।
ছেলেটা কিছুক্ষন পরে মেয়েটার মুখ থেকে হাত বের করে আনে৷ নিজের প্যান্টের চেইন খুলে ফেলে একটানে৷ এরপর আরো একটা ঘৃণ্যতম দৃশ্য হজম করতে হয় আমার। ছেলেটা তার নিজের পুরু_ষাঙ্গ বের করে মেয়েটার মুখের ভেতরে প্রবেশ করায়৷ এর মাঝে বেশ কয়েকবার চড় দিতে দেখা যায় ছেলেটিকে।চড়ের শব্দগুলো আমাদের কানে এসে লাগছে৷ আমি ওদের থেকে চোখ সরিয়ে নীড়ার দিকে তাকাই। নীড়া বেশ উপভোগ করছে৷
একটু পর চেয়ার সরিয়ে ফেলা হয়। মেয়েটার হাত পেছন দিকে নিয়ে পড়ানো হয় হ্যান্ডকাফ।
লোহার ভাড়ি শেকল গুল নামিয়ে আনা হয় আরো নিচে। সেগুলোর সাথে মেয়েটিকে বেঁধে শূন্যে তুলে দেয়া হয় কিছুটা।
মেয়েটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে এভাবে শিকলে বদ্ধ হয়ে শূন্যে ভাসতে ওর অনেক কষ্ট হচ্ছে। লোহার শেকল হাত পায়ের মাংসের ভেতরে কেটে পড়েছে।
এভাবে ঝুলন্ত অবস্থাতেই ছেলেটা মেয়েটির পরিহিত সব বস্ত্র টেনে ছিড়ে ফেলে।
উন্মুক্ত হয়ে যায় মেয়েটির ফর্সা দেহ। ছেলেটা শেকলের বাঁধা মেয়েটির চারদিকে ঘুরে ঘুরে কিছুক্ষন দেখে। যেন একটা বাঘ তার খাবার কে দেখছে।
একটু পর পাশের টেবিলে থাকা একটা স্কেল নিয়ে মেয়েটির রানে -বুকে প্রচন্ড জোরে আঘাত করে। ফর্সা দেহটি স্কেলের আঘাতে লাল হয়ে উঠে মুহুর্তেই। আঘাতের পর আঘাত দিয়ে
পশুর মত নির্মম ভাবে হামলে পরে মেয়েটির উপর। স্বাভাবিক যৌ_ন মিলনের থেকে বেশ হিংস্র ভাবে মিলন প্রক্রিয়া চালাতে থাকে ছেলেটি। এবার সাথে যোগ করে নেয় চামড়ার একটি বেল্ট। যৌ_ন মিলনের মাঝে মাঝেই চামড়ার বেল্ট দিয়ে আঘাত করে মসৃণ একটা শরীর রক্তবর্ণ করে দেয়।নীড়া ইতিমধ্যে অনেক উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। ও আমার দিকে তাকিয়ে বললো জানতে চেয়েছিলে না বন্ডেজ কি যেটা দেখলে এটাই হলো বন্ডেজ। কিছু মেয়েরা এরকম পেইন উইথ প্লে_জার পছন্দ করে, আমিও চাই তুমি আমাকে এভাবে অনেক আঘাত কর ও শারিরীক শান্তি দাও।
আমার হাত ধরে টান দিয়ে উঠিয়ে ফেলে নীড়া। বলে, চলো।
আমি জিজ্ঞেস করি কোথায়?
ও জানায় – ওর বাসায়।
ওর বাসায় এর থেকেও অনেক বেশি ইন্সটুমেন্ট রয়েছে। আজ আমাকে নীড়ার মাস্টার হতে হবে।
.
.
.
নীড়ার স্কুটি চেপে ওর বাসার নিচে আসার আগেই সাবিহার ফোন আসে।
রিসিভ করার পর ওপাশ থেকে কান্না জড়িত কন্ঠ শুনতে পাই।
– সাফা অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে তুমি একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আস।
সাফার কথা শুনেই আমি নীড়াকে স্কুটি থামাতে বলি। রাত তখন দেড়টা।
নীড়া সাফার অসুস্থতার কথা জানালে ও আমাকে আটকায় না। তবে ওর চোখে আমি এক রাজ্যের হতাশা খুঁজে পাই।

.
.
.
রিকশা নিয়ে বাসার দিকে যাচ্ছি। একটু আগে কি দেখেছি তা আমার মাথাতে নেই। মাথায় সাফার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
হঠাৎ আমার রিকশার সামনে এসে দাঁড়ায় কালো রং এর একটি প্রাইভেট কার।
সেখান থেকে নেমে আসে চারপাঁচ জন মানুষ। সবার হাতে দেড় ফুট সাইজের লোহার রড।
রিকশাওয়ালা রিকশা থামিয়ে পাশে দাঁড়ায়। লোকগুলোর ভেতর হাতা কাটা ড্যানিমের শার্ট পড়া ধূসর চোখের এক ছেলে এসেই আমার মাথায় সজোরে আঘাত করে।
ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটে পরে রিকশাওয়ালা চাচার নাকমুখে। তিনি চিৎাকার করতে করতে দৌড়ে কোথায় যেন চলে যান।
এরপরে আরো কয়েকটি এলোপাতাড়ি আঘাত এসে আমার শরীর ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। চোখ বন্ধ হয়ে আসে আমার। স্পষ্ট টের পাই আমাকে টেনে গাড়িতে তোলা হচ্ছে।
নড়ার মত শক্তি নেই। তবে জ্ঞান হারাইনি।
চোখ বন্ধ করে অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করলাম ” সাবিহা!”
শেষপর্যন্ত সাবিহা আমাকে ট্রাপে ফেলল!
যে ছেলেটা আমাকে প্রথম আঘাত করেছিলো ওর গলায় চেইনের সাথে F বর্ণের একটা লকেট ঝুলানো।
ফারহান এরকম লকেট পড়ত। সাবিহার কাছ থেকেই জেনেছি। কিছুক্ষন বাদে গাড়ি থামে। আমি সব টের পাচ্ছি কিন্তু কিছু অনুভব করা বা নড়ার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। কোন একটা উঁচু ব্রিজের ওপর থেকে আমাকে ছুড়ে ফেলা হয়েছে নিচে। ঝুপ করে পানিতে পরার পরে ক্রমে ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছি নদীর গভীর পানির তলদেশে।
.
.
.
#পর্ব_৬
___________________________
বেশ অনেক দিন পরে টিভিতে আমার কন্যা সাফার মুখ দেখলাম। প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পরে নিজ কন্যার ফুটফুটে মুখটা দেখতে পেলাম।
মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। তবে
সাফা এখন পিতৃহারা, আর আমার স্ত্রী সাবিহাকে এখন সবাই বিধবা হিসেবে চেনে। টিভিতে সাবিহা এবিং সাফার ইন্টারভিউ নিচ্ছে। সাবিহা অঝোরে চোখের পানি ফেলে মিডিয়ার সামনে আমার কিছু ভালো দিক তুলে ধরলো।
আমার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাইলো সরকারের কাছে। ইন্টারভিউ চলাকালীন সময়ে সাবিহা যখন কান্না করছে টেলিভিশন পর্দার ওপারে।ঠিক তখন আমি সাবিহার কথাগুল শুনে মনে মনে হাসছিলাম।
এর ভেতরে দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করে হাসু।
হাসুর ভালো নাম হাসান।গায়ের রঙ টা অদ্ভুত রকম কালো। তবে স্বভাবে হাসু বেশ চঞ্চল, কথা বলার সময়ে ঘাড় কাত করে কথা বলাটা ওর মূদ্রা*দোষ।
গ্রামের সবাই ওকে হাসু ডাকে।এখানের লোকরা সহজ সরল। এতটাই সহজ সরল যে, মানুষের নামটাকেও তারা সহজ করে ডাকার চেষ্টা করে। এভাবেই অনেকের সহজ পরিচয় হাসান থেকে হাসু, মিজান থেকে মিজু, শফিক থেকে শইফ্যা হয়ে ওঠে।
তাড়াতাড়ি রিমোট চাপ দিয়ে চ্যানেল ঘুরিয়ে দিলাম।
সাবিহার ইন্টারভিউ দেখাচ্ছিল যেখানে সেখানের টিভি পর্দার ডান পাশে আমার একটা ছবি ভাসছিলো।
যদিও এ ছবি দেখে আমাকে খুঁজে বের করার উপায় নেই কারো। কারণ আগে ক্লিন শেভ করা আমার মুখে এখন ঘণ, খোঁচা দাড়ি।
নিজের নামটাও বদলে দিয়েছি। শহর আহমেদ থেকে ফাহাদ খান।
চুলগুলো বেশ বড় হয়েছে। কিছুদিন পর ছোট খাট একটা ঝুটি বেঁধে ফেলা যাবে।
আমার মাঝে পুরোনো শহরকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত পরিচিত মানুষ ছাড়া অন্য কারো একেবারেই নেই।
যাই হোক,
হাসু রুমে ঢুকেই মুখ কালো করে জিজ্ঞেস করলো,
” ও ছার, ছার আমনে চা খাইবেন? আফায় আমনেরে চা বানাইয়া দিতে কইছে।”
বুঝলাম হাসুর এখন চা বানাতে ইচ্ছে করছে না।
তাই ওকে একজন চা বানাতে আদেশ করা সত্ত্বেও ও আমার কাছে বানাবে কিনা, এবং আমি খাবো কিনা তা জিজ্ঞেস করছে, সম্ভাবনা কম হলেও “খাবনা” কথাটি শোনার আশায়।
হাসুকে নিরাশ করলাম না। বললাম চা খেতে ইচ্ছে করছেনা। সাথে সাথে হাসু লাফাতে লাফাতে নাচতে নাচতে চলে গেল।
আগে চা বানানোর ক্ষেত্রে হাসুর এমন অনীহা দেখা যায়নি। বুঝলাম
বাসায় হয়ত দুধ কিংবা চিনি ফুরিয়ে গেছে, যেটা আনতে যেতে হবে আরো ১০/১৫ কি. মি দূরের এক বাজারে।বাসার দৈনন্দিন জিনিসপত্র শেষ হয়ে গেলে তা বাজার থেকে কিনে আনার জন্য হাসুর কোন বিকল্প নেই৷ এজন্যই ও মহা খুশি। আপাতত বাজারে যাওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলেছে হাসুর। ওর খুশি হওয়ার কারণ এটাই।

.

আমি যে গ্রামটিতে আছি এ গ্রামের নাম মহেশপুর। ঢাকা থেকে অনেক দূরে। তবুও ঢাকায় যে আমার মৃত্যুখবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটা আমি মহেশপুর বসেই জেনে ফেলেছি।
কে বা কারা যেন একটা বিকৃত চেহারার লাশকে আমি বলে চালিয়ে দিয়েছে। টাকা খরচ করে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বদলে অন্যের লাশকে আমার লাশ বানিয়ে দেয়ায় আমি এখন অফিসিয়ালি ডেড।
মহেশপুর গ্রামের চেয়ারম্যান ইদ্রীস আলীর বাসায় আমার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে।
অবশ্য এখানে থাকার পেছনে যার অবদান সবথেকে বেশি তার নাম হলো “ইলি”।
ভালো নাম ইলিয়ানা।
নদীর পানিতে ভাসতে ভাসতে এ গ্রামে এসে পৌঁছেছি ব্যপারটা এমন নয়৷
যতদূর মনে আছে আমি নদীর গভীরে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছিলাম।
এরপর যখন জ্ঞান ফেরে নিজেকে আবিষ্কার করি একটা টিনের চালা দেয়া ঘরের বদ্ধ রুমে।
হাত পা নাড়ানোর মত শক্তি ছিলনা৷ শুধু বুঝতে পারছিলাম কেউ বা কারা আমাকে উদ্ধার করে সেবা শুশ্রূষা চালাচ্ছে। যখন সবকিছু পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারলাম,
তখন বুঝলাম আমি মাদক চোরাচালানকারী একদল লোকের হাতে পরেছি৷
পুরোপুরিভাবে সুস্থ হতে আমার প্রায় একমাস লেগে যায়৷ এই একমাস তারা আমার আদর যত্নের কোন কমতি রাখেনি।
কিন্তু যখন একটু সুস্থ হয়ে উঠলাম, আমার কাছে প্রস্তাব আসলো, আমাকে তাদের সাথে মাদক সরবরাহের কাজে নিয়োজিত প্রাণ হতে হবে। অন্যথায় আমার পরিণতি – মৃত্যু।
মাদক ব্যবসায়ীদের বাহ্যিক পরিচয় ছিলো ওরা জেলে।
সারারাত নদীতে মাছ ধরে, সেই মাছ বিক্রি করে সংসার চালায় ।
কিন্তু রাতের আঁধারের চাদরে তাদের মুখোশটা ছিল ভিন্ন।
কোটি কোটি টাকার মাদক মাছের শরীরে ঢুকিয়ে বা অন্য কোন ভাবে নির্বিঘ্নে পরিবহণ করে৷
এই মাদক ঢাকা শহরে ঢুকিয়ে দেয়ার পর কিছু খুচরো ব্যবসায়ী তা সংগ্রহ করে এবং ঢাকার বিভিন্ন আনাচে কানাচে নিজের দক্ষতায় গোপনীয়তা সহকারে কাষ্টমারদের হাতে পৌঁছে দেয়।
.
.
.

ইলিয়ানা রহমান,
বয়স ২৩
বর্তমানে জার্নালিজম নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে।
পাশাপাশি জব করত একটা বেসরকারি টিভি চ্যানেলের জুনিয়র রিপোর্টার হিসেবে। আমাদের মাদক সরবরাহের ব্যপারে গুপ্তচর লাগিয়ে অনেক তথ্য জোগাড় করে ফেলে সে। কিন্তু যারা মাদক চোরাচালানকারী হিসেবে বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছে, তারা অতিশয় ধূর্ত এবং খুব অল্প সময়ের ভেতরেই ইলিয়ানার গোপন অভিযান সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যায়।
আমি নিজ থেকে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি৷ কারণ, আমি যার জন্য পৃথিবীতে বেঁচে থাকবো, সে-ই চেয়েছিলো আমার মৃত্যু। বরং এ মাদকব্যবসায়ী লোকগুলো আমাকে হীন একটা কাজ করতে আমার উপর জোড় খাটালেও আমি বেঁচেই আছি তাদের জন্য।
প্রকাশ্যে কোন কাজে কেউ বাধ্য করলে যতটুকু মেনে নেয়া যায়, পেছনে বসে ষড়যন্ত্র করে কাছের মানুষরা ক্ষতি করার চেষ্টা করলে এবং সেটা জানতে পারলে নিজেকে কিছুতেই বুঝ দেয়া যায়না।পুরো পৃথিবীটা তখন বিষাদময় মনে হয়।
আমার কাছেও পৃথিবী বিষাদময় এখন।
মনে একটু প্রফুল্লতা আনতে সন্ধ্যায় ওদের ডেরার সামনে আয়োজন করা খালি গানের গলার আসরে যোগ দেই। সবার ভেতরে আসলাম ভাইয়ের গলা অনেক ভালো। আসলাম ভাইকে আমার ব্যক্তিগত দিক থেকেও ভাল লাগে।
সে নিজে সময় নিয়ে আমাকে অন্যভাবে মাদকের বিষয়টা বুঝিয়ে দিয়েছে।
” দেখো ভাই, আমি কিন্তু কোন প্রকার নেশা করিনা।
আমার ছোট পোলা মাইয়া আছে, বউ আছে। টানাটানির সংসার। আমিও চাইনা আমার মাইয়াপোলাগুলা মাদক সেবী হউক। কিন্তু তাও আমি মাদক চালান দেই বাজারে।
কেন জানো? যত বড় বড় রাজনীতিবিদ, বড়লোকরা আছে, এরা এবং এদের ছেলেরাই বেশিরভাগ মাদক সেবন করে।
আমি চাই আস্তে আস্তে এসব অসৎ লোকরা সবাই ধ্বংস হয়ে যাক। ওদের পকেটের কিছু অবৈধ টাকা আমাদের হাতে আসুক। ”
আসলাম ভাইয়ের কথা ফেলার মত না। যাক তাও মনকে একটু শান্তি দেই আমি।
যখন প্রফুল্ল চিত্তে গানের আসরে বসে আসলাম ভাইয়ের ” আমার ভাংগা তরী ছেড়া পাল” গানটা শুনছিলাম, তখন কানে ভেসে আসে একটা মেয়ে কন্ঠের আর্তচিৎকার।
গান শোনা ছেড়ে আমি উঠে যাই৷
শব্দ অনুসরণ করে করে আবিষ্কার করে ফেলি,
জুনিয়র রিপোর্টার ইলিয়ানা রহমান কে কিডন্যাপ করে উঠিয়ে আনা হয়েছে।
ওকে একটা রুমে আটকে রাখা হয়েছে এবং ধর্ষণ করার বন্দোবস্ত চলছে।
কোন একটা কারণে ওরা সেদিন ইলিয়ানাকে ধর্ষণ না করে শুধুমাত্র ওদের গোপনীয় কামরায় আটকে রেখে চলে যায়।
ওদের সাথে ঠিক ঠাক ভাবে কাজ করার সুবাদে আমি ওদের খুব বিশ্বস্ত একজন হয়ে উঠেছিলাম।
তাও একটু লুকিয়ে লুকিয়ে আমি প্রবেশ করি ইলিয়ানাকে যে কামরায় আটকে রাখা হয়েছে সেখানে।
প্রথমে ঢুকেই চোখ বন্ধ করে ফেলতে হয় আমার।
এমন একটা ধাক্কা খাব ভাবিনি।
দু হাত দুদিকে খুটির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে ওর।
মাথাটা নুইয়ে পড়ছে।
পরনে শুধুমাত্র আন্ডারওয়্যার ছাড়া আর কিছুই নেই। গায়ের সব জামাকাপড় ছিড়ে ফেলা হয়েছে। হাত ও বুকের কিছু কিছু জায়গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
বুঝলাম কেন রেপ না করেই আটকে রাখা হয়েছে ওকে।
মেয়েটার পিরিয়ড শেষমেশ ওর রক্ষা কবচ হয়ে দাঁড়ালো।
সিদ্ধান্ত নিলাম,
আমার যা হয় হোক,
মেয়েটাকে আমি এখান থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করব।
.
.
অনেক কষ্টে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে যখন আমি একটা ডিংগি নৌকায় ইলিয়ানাকে উঠিয়ে দেই, ও আমার হাত চেপে ধরে।
বলে আমি একা পারব না।
আপনি আমার সাথে চলুন। নইলে আমার করুণ পরিণতি হবে মৃত্যু।
আমি কি যেন একটু ভেবে নৌকার মাঝিকে ঘাটে রেখে ইলিয়ানাকে নিয়ে নৌকা করে রওনা দেই অজানা গন্তব্যে।
নৌকায় বসেই জেনে নেই ও বাড়ি থেকে অনেক আগেই বের হয়ে এসেছে। ইন্টার পাশ করেছে ঢাকাতে ফুপুর বাসায় থেকে। ওর গ্রামের বাড়ি মহেশপুর। সেখানে যেতে পারলে আর কোন বিপদ নেই।
বেশ কিছুক্ষন পার হয়ে যাওয়ার পর ডিংগি নৌকা নিয়ে ফেরত আসছিনা দেখে মাঝি গিয়ে আমাদের কথা বলে দেয় মাদক চোরাচালানকারী দলের সদস্যদের কাঁছে।
মুহূর্তেই আমাদের খোজার জন্য স্পিডবোড ও দ্রুতগামী ট্রলার নিয়ে বের হয়ে পড়ে ওরা।
সাপের লেজে পা দিয়ে সাপকে জীবিত রাখাটা যেমন বিপদ, একজন সাংবাদিক কে অপহরণ করে তাকে জীবিত ছেড়ে দেয়াটা তার থেকেও বেশি বিপদের।
রাতের বেলা খুব দূর থেকেও স্পিড বোডের শব্দ ভেসে আসে। বুঝতে পারি আমাদের পেছনে লোক লেগেছে।
নৌকা কিনারায় ভিড়িয়ে লাফ দিয়ে নেমে যাই।
পরবর্তীতে ছুটে নদীর পাশের একটা মফস্বলে গিয়ে ঢুকি।
মফস্বলের শেষ মাথায় একটা কাচা রাস্তা। এটা শহরের দিকে চলে গেছে। ঐ রাস্তা ধরে দৌড়াতে থাকি আমরা। পুরো সময়টা আমি ইলিয়ানার হাতের কবজি ধরে রেখেছিলাম শক্ত করে।
ও শুধু আমার লিড অনুসরণ করছিল।
কিছুদূর যাওয়ার পরে একটা ভ্যান পাই আমরা। ভ্যানে উঠে নিকটস্থ বাস স্টান্ডের উদ্দেশ্যে শুরু হয় আমাদের মাঝ রাতের ভ্যান যাত্রা।
ইলিয়ানা ভ্যানে বসার পরে ওর মাথাটা আমার কাধের উপর দিয়ে চোখ বুজে চুপ করে থাকে।
বুঝতে পারছিলাম না ঘুমিয়ে গেছিল কিনা।
তবে চাঁদের আলো এসে ওর চোখমুখে পড়ায় ঘুমন্ত ইলিয়ানাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছিল।
ফর্সা মেয়েরা অসহায় হয়ে পড়লে আরো বেশি সৌন্দর্যে বৃদ্ধি পায়।

যাই হোক,প্রায় দু দিন ভেংগে ভেংগে জার্ণি করে, অনেক কষ্টের পরে আমরা মহেশপুর পৌঁছাই।
ওর বাবা নিজের মেয়েকে পেয়ে এত আনন্দ করলো, মনে হলো যেন কোন মৃত ব্যক্তি তার জীবন আরেকবারের জন্য ফিরে পেয়েছে।
ইলিয়ানা পুরো সত্য ঘটনাটাই ওর বাবার সামনে উপস্থাপন করে।
ওর বাবা সবকিছু শুনে বুঝতে পারেন ঢাকা কিংবা অন্য কোথাও আমার জন্য নিরাপদ নয়।
তিনি আমাকে তাদের সাথেই থেকে যেতে বলেন।
এরপর থেকে ঐ বাড়িতেই আমার থাকার ব্যবস্থা করা হয়।দুমাসে আস্তে আস্তে বাড়ির সবাই আমার খুব আপন হয়ে ওঠে,সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসে।
হাসু, চেয়ারম্যান আংকেল, ইলিয়ানা থেকে শুরু করে এখানে কাজ করা প্রতিটা মানুষের কাছে আমার সম্মান অনেক অনেক বেশি।
তবে ইলিয়ানার ব্যপারটা ভিন্ন। ও আমাকে একটু অন্যভাবে ভালোবাসে। ও খুব কাঠখোট্টা একজন মেয়ে। রোমান্টিকতা জানেনা। ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলতে শিখেনি। রোবটের মত কিছু কাজ করে নিজের ভালোবাসার জানান দেয়।
আমি হাসি।
আর তো মাত্র কয়েকটা দিন। সবাইকে না বলে টুপ করে পালিয়ে যেতে হবে এখান থেকে।পালিয়ে যেতে হবে আমার নগরীতে।
এতদিন নিরব দর্শক হয়ে দেখেছি সব।
এবার ঢাকা ফেরার পালা।
আমার শহরে পা রাখবো খুব শীঘ্রই, তবে নম্র- ভদ্র,সবকিছু মেনে নেয়া শহর আহমেদ হিসেবে নয়।
ফাহাদ হিসেবে।
একজন শিকারী হিসেবে।
আমার শিকারের লিস্টটাও যে অনেক বড়।
ভাবতে ভাবতেই শরীরের রক্তগুলো শিরশির করে উত্তাল হয়ে ওঠে। হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে যায়।
বিড়বিড় করে উচ্চারণ করি দুটো লাইন,
শেষ নাহি যে, শেষ কথা কে বলবে,
আঘাত হয়ে দেখা দিলো, আগুন হয়ে জ্বলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here