আপনিতে ব্যস্ত,7 END PART
Write : Sabbir Ahmed
-ভালবাসতে শুরু করেছি (আমি)
-বাহহ দারুণ কাজ করতেছেন আপনি, প্রমোশন লাগবে আপনার?(ইরা)
-দিলে তো ভালই হয়
-হাহ দেখি কি করা যায়। এখন চলুন বাইরে হাঁটি
-মানা করলাম তো
-উমম তাহলে ছাদে?
-হুমম চলুন
,,
ইরার সাথে ধীর ধীর পায়ে তাদের বাসার ছাদে উঠলাম। বাসাটা বেশ বড় হওয়ায় চারদিকে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিলো। বাসার কেয়ার টেকার ছাদে বাগানের পরিচর্যা বেশ ভালই করেছে।
-চলুন বাগান টা দেখি অনেকদিন হলো আসি না (ইরা)
-আগে কি প্রতিদিন আসতেন? (আমি)
-আমার বাসা আমি তো সবসময়ই আসতাম
-ওহহ তাই তো
-কেমন লাগছে?
-দারুণ
-আমি বাবা ভাইয়া আর মা চারজন মিলে এটার উদ্যেগ নিয়েছিলাম। এখন দেখেন দিন দিন এটার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর আমাদের পরিবারের সৌন্দর্য হ্রাস পাচ্ছে
-একসময় ঠিকই বৃদ্ধি পাবে
-হুমম সেটা হয়তো অন্যরকম ভাবে। যাই হোক চলুন বসে কথা বলি
,,
ছাদে রাখা একটা বেঞ্চে দুজন বসলাম। ইরা আমার থেকে কিছুটা দূরে বসলো।
-আপনাকে একটা কথা বলি?? (ইরা)
-হুমম বলেন (আমি)
-রাগ করবেন না তো?
-কি যে বলেন রাগ কেনো করবো? আপনি বলেন
-এখন যে অবস্থায় কাজ করছেন, চিরদিন এভাবে থাকা যাবে না। বোনেদের ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে হলে ভালো কিছু করতে হবে। এভাবে গ্রামে থেকে আপনি কি করবেন?
-হুমম
-এখন যদি না ভাবেন তো, আর সময় কই বলুন
-বুঝলাম সবই কিন্তু
-কোনো কিন্তু নেই আপনি ওদের জন্য হলেও ভালো কিছু একটা করুণ
-দেখি কি করতে পারি, আমিও তো চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আর ক…(পুরো কথা বলার আগেই ইরার ফোন বেজে উঠলো)
,,
সে হাতের ইশারায় আমাকে চুপ করতে বলল। আমি কথা বলা বন্ধ করলাম।
-বাবা কল করেছে (ইরা)
-কথা বলুন (আমি)
-বলব
-হ্যাঁ কেনো বলবেন না? কথা বলুন
,,
ইরা ফোন রিসিভ করে..
-হ্যালো (ইরা)
-কোথায় তুমি (ফোনের ওপাশ থেকে)
-বাসায়
-ওহহ বন্ধুর বাসা থেকে কবে ফিরেছো?
-আজ-ই
-গুড, আমি আজ দেশে ফিরছি
-দুদিন আগেই!
-তোমার সাথে কথা আছে তাই
-ওহহ
-আমি রাতেই পৌঁছে যাবো
-হুমমম
,,
ইরা কথা শেষ করে আমার দিকে তাকালো।
-বাবা আসছে (ইরা)
-ওহহ তাহলে তো ভালই (আমি)
-না ভালো নয়
-কেনো?
-হয়তো একা আসছে, আর তাই যদি আসে তাহলে আমাকে নিয়ে যাবে
-নিয়ে যাবে?
-হুমম আপনাকে একটা কথা বলাই হয়নি
-কি কথা?
-ভাইয়া আমাকে কল করে অনেক কিছুই জানিয়েছে। বাবা যদি একা আসে তাহলে আমাকে একেবারে বিদেশ নিয়ে যাবে। আর দেশে আসা হবে না
-ওহহ এই কথা? এটা তো ভালই (আমি-ই আবার মনে মনে কষ্ট পাচ্ছি। এখানে আসার আগে ভাবলাম ভালবাসতে শুরু করবো তাকে আর এখন শুনছি এক হৃদয় ভাঙা কাহিনী)
-ভালো কিভাবে হয়, আমি তার নতুন বউ এর সামনে যেতে পারবো না
-তাহলে বাবাকে বলবেন যে আলাদা থাকার ব্যবস্থা করে দিতে
-দেখি, উনি আগে আসুক
,,
ইরা চুপ হয়ে গেলো। সাথে আমিও, কিন্তু আমার মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘুরছে। সেটা হলো, ইরা যে বলেছিলো সে আমাতে ব্যস্ত থাকবে। তাহলে তার এমন মনের অবস্থা কেনো? নাকি সবকিছুই তার আবেগ ছিলো? কিছুই তো বুঝে উঠতে পারছি না।
,,
আমার জানামতে সে তো আমাকে অনেক ভালবাসে। এখন তার ভাবমূর্তি দেখে মনে হচ্ছে ভালবাসার “ভ” টুকুও আমার জন্য নেই। আচ্ছা আংকেল আসুক দেখি কি বলে।
,,
তারপর কিছু কথাবার্তা হওয়ার পর বাসার মধ্যে চলে গেলাম। আংকেল আসছে তাই ইরা আগে ভাগে কিছু খাবার আনিয়ে রাখলো। রাত তখন আট’টা বাজে আমি ইরার রুমেই বসে আছি। সে টিভিতে কার্টুন দেখছে।
,,
মনে মনে ভাবছি তাকে কিছু বলব। তেমন সাহস ও পাচ্ছি না। বার বার তার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছি। মুখ ফুটে বলেই ফেললাম..
-আপনি যে বলেছিলেন আমাকে ছেড়ে যাবেন না(আমি)
,,
ইরা আমার কথা শুনে একটু নড়ে চরে বসলো
-কিছু বললেন? (ইরা এগিয়ে এসে)
-রা রা রাতের খাওয়া টা (আমি)
-না না এটা বলেন নি, আপনি কি যেন ছেড়ে ও হ্যা বুঝতে পেরেছি।
,,
ইরা মন ভাড় করলো, কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলল…
-আমি যদি আপনাকে রেখে চলে যাই কষ্ট হবে আপনার? (ইরা)
-আরে নাহহ কি যে বলেন কষ্ট হবে কেনো? বাবার কাছে থাকবেন সেটাই ভালো (আমি)
-আমি বুঝি আপনি আপনার কষ্ট টা লুকাচ্ছেন
-কষ্ট নেই তো
-আমি আপনার কাছে থাকবো, কখনো ছেড়ে যাবো না এমনটা কথা দিয়েছিলাম। আমি জানি না আমি কিসের মধ্যে ছিলাম এখন আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না
-ধুরর বাদ দেন তো এত টেনশন কি জন্য করেন, আংকেল আসতেছে হাসি খুশি থাকেন। আপনি টিভি দেখেন আমি হাশেম চাচার কাছে গিয়ে গল্প করি
-আচ্ছা
,,
আমি ইরার রুমের বাইরে চলে আসলাম। হাঁটছি আর ভাবছি হঠাৎ পরিবর্তন টা কেমন যেন আমার ভালো লাগে না। উনি আমার কাছে থাকতে চেয়েছিলেন কারণ তখন তার স্বাভাবিক জীবন ছিলো না। আমি জানি না সে কিভাবে হঠাৎ তার মন পরিবর্তন করলো, হয়তো তার ভাই আর বাবা তাকে কিছু বুঝিয়েছে যা সে আমাকে বলেনি।
,,
ধুরর আমি এত কিছু ভাবছি কেনো? উনি গেলে যাবে। হঠাৎ করে এসেছিলো হঠাৎ করেই চলে যাবে। আর কি না কি ভাবছি এগুলা। সে যদি আমার কাছে থেকেও যায় তার ভরণপোষণ করা কি চাট্টিখানি কথা! এত বড় ঘরের মেয়ে।
,,
এসব ভাবতে ভাবতে পরক্ষণেই ভাবি, যত বড় ঘরের মেয়েই হোক না কেনো ভালো তো বেসেই ফেলেছি সেটার কি হবে? এসব কথা ভাবতে ভাবতে চাচার কাছে এসে বসলাম। ভাবনা গুলো একপাশে রেখে চাচার সাথে আড্ডায় বসে গেলাম৷
,,
তখন এগারোটা বাজে, ইরার বাবা একটু আগেই বাসায় আসছে। আমি এখন তার সামনে দাঁড়িয়ে, আমার সাথে দাঁড়িয়ে আছে হাশেম চাচাও। ইরা তার বাবার পাশে বসে আছে। আংকেল বলা শুরু করলো..
-আমি যা করেছি সেই কাজে হয়তো সবাই খারাপ বলবে এমনকি আমার ছেলে মেয়ে আমাকে ভুল বুঝবে। কিন্তু আমি খারাপ কাজের আড়ালে ভালো কিছুই করেছি সেটা হলো আমি যাকে বিয়ে করেছি সে আত্মহত্যা করে মরতে যাচ্ছিলো। সে বাঙালি বিদেশে এক খারাপ লোকের চক্করে পরে। কোনো এক কারণে সে আত্মহত্যা করতে চায় সে চেষ্টাও করেছিলো কিন্তু আমি তাকে বাঁচিয়ে নেই আর তার মুখ থেকে সব শুনে আমি একটা প্রাণ বাঁচানোর জন্য বিয়ের জন্য তাকে প্রস্তাব করি আর জোর ও করি। আমার মাথা তখন ঠিক ছিলো না৷ কি করেছি আমি নিজেও তখন বুঝতে পারিনি। যাই হোক উনি এখন আমার কাছেই আছেন।
,,
আংকেল এবার ইরার দিকে তাকিয়ে বলল..
-তুমি চলো আমার সাথে (আংকেল)
-আমি যেতে চাইছি না(ইরা)
-তুমি রাগ করে থেকো না। বাবা হিসেবে তোমাকে যতটুকু আদর স্নেহ করার কথা আমি করতে পারিনি। আমি চাচ্ছিনা তুমি আর আমার থেকে দূরে থাকো
,,
ইরা তার বাবার কথা শুনে আমার দিকে তাকালো। আমি মাথা নাড়িয়ে মুচকি হেসে তাকে বুঝিয়ে দিলাম যাতে হ্যাঁ বলে দেয়।
,,
ইরা তাই করলো, সে তার বাবাকে বলল..
-ঠিক আছে তোমার সাথে যাবো (ইরা)
,,
আমি আর চাচাও খুশি হলাম। তবে আমার খুশির পুরোটা অভিনয়ের মতো। বুকের ভেতরটাতে মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে৷ হাসি মুখ নিয়ে সেখান থেকে চলে এলাম।
,,
কিছুক্ষণ পর ইরা আমাকে তার রুমে ডাকলো।
-কথা বলার হয়তো সময় পাবো না, সকালেই চলে যাবো (ইরা)
-হুমম গুছিয়ে নিন সবকিছু (আমি)
-আপনি কিছু বলবেন না?
-হ্যা বলতেছি তো, দেখে যাইয়েন আর নতুন মায়ের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন
-এগুলো বলতে বলিনি। আমি চলে যাচ্ছি আপনার খারাপ লাগছে না?
-খারাপ লাগবে কেনো? বাবার কাছে যাচ্ছেন এটাই ভালো
-হুমম তা ঠিক। আচ্ছা আমি আপনাকে অনেক কথাই বলেছি আবার অনেক ওয়াদা করিয়েছি আর দেখেন আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি
-আরে পাগল হইছেন যা হইছে হইছেই সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে না
-তাই?
-হ্যা আচ্ছা বিদেশ দেখতে কেমন? আমি শুনেছি ওখানকার মানুষ অনেক স্মার্ট আর রাস্তা ঘাট ও অনেক পরিষ্কার(কথা ঘুরানোর জন্য বললাম)
-শুভ সাহেব আপনার দৌড় কোন পর্যন্ত আমি জানি
-কি বললেন বুঝলাম না
-কথা ঘুরানোর চেষ্টা করতেছেন সেটা কি আমি বুঝতেছি না
-নাহহ সেরকম কিছু না
-চোখ দেখে তো মনে হচ্ছে কান্না করেই দিবেন
-আরেহ হা হা হা কি যে বলেন না আপনিহ কান্না করবো কেন?
-আপনি তো বাচ্চা টাইপের মানুষ কান্না করতেই পারেন। যাই হোক কিছু বলার থাকলে বলেন আমি এখন ঘুমাবো। সকালে হয়তো একবার কথা হবে তাও কম। মনের কোনো কথা থাকলে বলতে পারেন
-না কি বলব? দেখেশুনে থাইকেন। আর কখনো তো আসবেন না তাই না?
-মনে হয় না
-ওহহ
-আচ্ছা একটু কাছে আসবেন
-কেনো?
-ব্যাগ টা ধরতে সাহায্য করেন
,,
আমি কাছে যেতেই ইরা আমার কানে ফিস ফিস করে বলল..
-আমার এখন শাড়ী পড়তে মন চাচ্ছে একটু পড়িয়ে দিবেন?? (ইরা)
-আমি এখন কিভাবে কি দিয়ে শাড়ী..
-আমি সাহায্য করবো
-এটা কি ঠিক হবে?
-হুমম ঠিক হবে চেয়েছি দিতে হবে
-না আমি পারবো না
-কেনো?
-নিজে আমার হবে না আর বলছেন শাড়ী পড়িয়ে দিতে
-এইতো বাচ্চার মুখ ফুটেছে। দুই হাত দুই দিকে দেন তো
-কেনো
-আর দেন তো আগে
,,
আমি দুই হাত দুইদিকে প্রসারিত করতেই ইরা আমার বুকে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি কিছু বুঝতেছি না কি হচ্ছে।
-আপনাকে খুব চিন্তায় ফেলে দিলাম তাই না? (ইরা)
-হুমম (আমি)
-আহারে আমি চলে যাবো দেখে বেচারার মুখ শুকিয়ে গেছে। এই পাগল এই আমি যাচ্ছি না তো। একটু তুই করে বলি আপনাকে?
-হুমম
-তুই একবারও কেন বললি না আমার জন্য থেকে যাও?
-আপনার যাওয়ার ইচ্ছে অনেক তাই?
-তোর কি মনে হয় আমি তোকে এমনি এমনি প্রমিস করিয়েছি?
-জানি না
-শয়তান আমাকে যেতে দিচ্ছে কই আটকাবে তা না..
-আংকেল তো তোমাকে নিয়েই যাবে
-না পাগল আমি বাবাকে সব বলেছি, পরে উনি আমাকে এখানেই থেকে যেতে বলেছে
-কখন বললে?
-তুমি চাচার সাথে বাইরে যাওয়ার পর। আমি শুধু তোমার চোখের ভাষা পড়েছি আর পড়ে যা বুঝলাম আমি চলে গেলে তুমি ভেঙে পরবে। তাই ভাবলাম পাগল যখন পাইছি পাগলের কাছেই থাকি
-সত্যি তো?
-সত্যি না হলে কি এভাবে জড়িয়ে ধরতাম শাড়ী পড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতাম?
-হুমম
-তুমি এমন কেনো?
-কেমন?
-ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে পারো না কেনো?
-ভয়
-কিসের ভয়??
-যদি সবকিছু বেশি বেশি হয়ে যায়
-এখন তো বেশি বেশি করতেছো এত জোরে কেউ জড়িয়ে ধরে?
-আমার খুশি লাগছে তাই
-উমমম এই খুশিতে আমাকে শাড়ী পড়িয়ে দিতে হবে
-আচ্ছা বিয়ের পরে
-জ্বি না এখন
-না এখন একটু জড়িয়ে ধরে থাকি
-হুমম ঠিক আছে। দুপুর থেকে টেনশনে ছিলা?
-অনেক
-দূর হয়েছে?
-অনেকটাই
-আমি থেকেছি কি জন্য জানো তো?
-হুমম
-কি জন্য বলো তো
-তোমাতে ব্যস্ত থাকার জন্য
-ব্যস্ততা যদি একটু কম হয়রে তাহলে একদম চলে যাবো
-একটুও কম হবে না
-হুমম আমার ব্যস্ততায় কে থাকবে শুনি একটু
-শুধু “আমি”
সমাপ্ত