আপনিতে ব্যস্ত,Part : 3

0
1366

আপনিতে ব্যস্ত,Part : 3
Write : Sabbir Ahmed

-না বাড়ি যাবো আমি
-মেজাজ গরম করিয়েন না, আমি কিন্তু অনেক রাগি, কথা যদি না শোনেন এখানেই মাইর শুরু করবো(ইরা)
-এমন করেন কেনো? আমার কি বাড়ি যেতে হবে না?
-অবশ্যই যাবেন, আপনি এতদূর থেকে এসেছেন আর আমার বাড়ি যাবেন না তা কি হয়?
,,
ম্যাডাম এর জোরাজুরিতে আর মানা করলাম। এতকরে বলছে আমি না গেলে পরে আবার আমারই খারাপ লাগবে। ইরা আমার থেকে বয়সে ছোট হলেও আমার থেকে বেশ চালাক।
,,
সে আমাকে নিয়ে যাচ্ছি বার বার গাড়ি চেঞ্জ করতে হচ্ছে। আমার মাথাটা ঘুরতেছে কোনদিন থেকে কোনদিকে নিয়ে যায় তার হদিস পাচ্ছি না৷ আমাকে একা ছেড়ে দিলে তো নিজের বাড়িতেই আর যেতে পারবো না।
,,
তখনও আমরা ইরার বাসায় যায়নি মাঝপথে হসপিটাল থেকে ফোন আসলো আর জানা গেলো ইরার মা আবার স্ট্রোক করেছে আর মারাও গিয়েছে। ইরা পথেই হাও মাও করে কান্না করতে লাগলো। লোকজন কাছে এসে জিজ্ঞাসা করা শুরু করলো। আমি আর উনাকে নিয়ে দেড়ি করলাম না সি.এন.জি নিয়ে হসপিটালে চলে এলাম।
,,
গাড়িতে উনি কয়েকবার জ্ঞান হারিয়েছেন, প্রত্যেক বার পানি ছিটিয়ে তার জ্ঞান ফেরানো হয়েছে। একসময় হসপিটালে পৌঁছে যাই। আমরা পৌঁছে দেখি ইরার মা’কে বাইরে বের করে এনেছে এখন এম্বুলেন্সে তুলে বাসায় নিয়ে যাবে।
,,
ইরা কান্না করতে করতে তার বাবার কাছে চলে গেলো। তারপর আর কান্না থামায় কে! কান্না করবেই না বা কেনো? পৃথিবী থেকে সবচেয়ে কাছের মানুষটা খুব তাড়াতাড়ি বিদায় নিলো।
,,
আমি সবার থেকে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছি, কিছু লোক আমাকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখছে। হয়তো ইরাদের আত্মীয় এরা, কেউ এসে জিজ্ঞাস করলো আমি কে? পরিচয় জানতে চাইলো আমি শুধু বললাম ইরার ফ্রেন্ড এখানেই থাকি।
,,
কথাটা যে শুনে সেই ভ্রু কুঁচকে তাকায়, হয়তো বয়স মেলাতে পারছে না। সে যাই হোক ইরার মা’কে বাসায় নিয়ে গেলো। আমি সেখান থেকে আর বাড়ি ফিরলাম না কারণ এভাবে যাওয়া যায় না। আমিও তাদের পিছু পিছু চললাম।
,,
সন্ধ্যার পর..
বাদ এশা লাশ দাফন করা হবে। সেই প্রস্তুতি চলছে, সবাই টুকটাক কাজ করছে আমিও তাদের অনেক কাজে সাহায্য করলাম। ইরার সাথে আর দেখা হয়নি সে কেমন কোন অবস্থায় আছে তাও জানি না, আমি বাসার বাইরে ভেতরে যাওয়ার কোনো সুযোগই নেই। আর যেহুতু অপরিচিত মানুষ ভেতরে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
,,
এশা পর দাফন হলো, আমি মাটি দিয়ে সবার সাথে সাথেই ইরাদের বাসায় আসলাম। আমি এখন বাড়ি ফিরতে হবে। তাকে বলে যাবো কি না সেটা ভাবছি বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে।
হঠাৎ..
-ভেতরে চলো (ইরার বড় ভাই, হসপিটাল থেকে ফেরার পথে পরিচয় হয়েছে)
-না ঠিক আছে আমি এখন চলে যাবো(আমি)
-ওহহ ইরার সাথে দেখা করে যাও
-আচ্ছা ঠিক আছে
-আসো
,,
আমি তার পিছু পিছু গেলাম, বাসার ভেতরে এখন পুরোটাই ফাঁকা রাত অনেক হয়েছে যে যার বাসায় চলে গেছে। ভেতরে টা দেখে মনে হচ্ছে এখানে কিছুই হয়নি। শহুরে পরিবেশ টা পুরো ভিন্ন সকাল হলেই কাজে ব্যস্ত হয়ে পরবে সবাই, যাকে আজ রেখে আসলাম দিনশেষে তার কথা কেউ মনেই রাখবে না৷
,,
ইরার ভাইয়া আমাকে ইরার রুম পর্যন্ত নিয়ে গেলো…
ভাইয়া ইরাকে ডাকলো। ইরা বাইরে আসতেই দেখি কান্না করে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে আর ফুলেও গেছে। ইরা আমাকে দেখে চোখের পানি মোছার চেষ্টা করলো। এদিকে ভাইয়া পানি মুছতে মুছতে চলে গেলো..
-যা হয়েছে এটার জন্য তো কোনো সান্ত্বনা হয় না, আমি দিতেও পারবো না, আপনি কান্না কইরেন না বেশি বেশি দোয়া করেন (আমি)
-হুমমম
-আচ্ছা আমি যাই তাহলে
-এখন কত বাজে?
-এগারোটা
-এত রাতে গাড়ি পাবেন না থেকে যান
-চেষ্টা করলে পাবো
-আমি হাশেম চাচা কে বলে দিচ্ছি আপনাকে একটা রুম দিতে
,,
আমার কেমন কেমন যেন লাগছে এইরকম একটা দিনে আমি একজনের বাসায় এসে তাদের উপর আলাদা চাপ সৃষ্টি করছি৷ আমারও কিছু করার নেই তাকে জোর ও করতে পারবো না উভয় সংকট।
,,
সব কিছু হজম করে নিয়ে হাশেম চাচার সাথে দেখা হলো তিনি এই পুরো বাড়িটা দেখাশোনা করেন। উনি আমাকে আলাদা একটা রুন দিতে চাইলেন আমি তাকে বললাম..
-আপনার সাথেই থাকি? (আমি)
-ইরা’মা জানতে পারলে আমার অবস্থা খারাপ করে দিবে (হাশেম চাচা)
,,
আমি আর কি বলব? আমার জন্য একটা মানুষের অবস্থা খারাপ হোক এটা আমি চাই না। উনি আমাকে একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বললেন, কোনো রকম সমস্যা হলে তাকে জানাতে আমি হ্যা বলে সম্মতি করলাম৷
,,
বেশ চকচকে ঝকঝকে রুম হয়তো এটা গেস্ট রুম। শহরের মানুষ তো তাই বলে। বিছানায় আসে আগে বাড়িতে আমার চাচার কাছে কল দিলাম৷ উনি ফোন নিয়ে মা’কে ধরিয়ে দিলেন৷
,,
মা’কে সব বললাম। উনিও দেখি কেমন যেন ফোনের মধ্যে কান্না কান্না ভাব৷ মেয়ে মানুষের মনটা কেমন যেন আরেকজনের একটু দুঃখের কথা শুনলে তারাও ঠিক থাকতে পারে না। যাই হোক ফোনে বললাম আমি কাল ফিরবো৷ ঘুমানোর একটু আগে হাশেম চাচা আমাকে খাবার দিয়ে গেলেন। দেখে মনে হচ্ছে বাইরে থেকে খাবার আনিয়েছে বাসায় রান্না হয়নি৷
,,
খেয়ে দেয়ে ঘুম। পরদিন সকাল বেলা উঠে এক অন্যরকম পরিবেশ দেখলাম বাসাটাতে৷ ঘুম থেকে উঠে বাইরে এসে দেখি ইরা হাশেম চাচার সাথে কথা বলছে৷ ইরা আমাকে দেখে বলল..
-একটু ভেতরে চলেন
পিছু পিছু ভেতরে ঢুকলাম।
উনি বলতে শুরু করলো..
-দেখেন অবস্থা বাবা চলে গেছে তার দেশের বাইরে আজ জরুরি মিটিং, না গেলে অনেক টাকা ক্ষতি হয়ে যাবে৷ ভাইয়া তার অফিস সামলাতে চলে গেছে। আর এইতে আমি এখন একা (ইরা)
-আজই চলে যেতে হলো (আমি)
-এরা টাকার পেছনে ছুটছে, মা আমাকে টাকার পেছনে ছুটতে বারন করেছে
-টাকা ছাড়া তো কিছু হয় না
-টাকা ছাড়াই আবার অনেক কিছু হয়
-হুমম।
-আপনি কি এখন যাবেন?
-গেলে তো ভালই হয়
-হুমম অনেকটা সময় আপনাকে ধরে রেখেছি আর বাবাকে আপনার কথা বলে কিছু করে দিতে মানে আপনার জন্য কিছু করতে চাইলাম হলো না। উনি অনেক ব্যস্ততা দেখালেন
-না না ঠিক আছে, আমার জন্য আবার কি করতে হবে? আমি এমনই দিব্বি আছি
-হুমমম
-আচ্ছা আসি তাহলে
-আমি একদম একা হয়ে যাচ্ছি আপনি ক’দিন থেকে যান। বাসায় মা থাকতো এখন সেও নেই৷ উনি ব্যস্ত থাকতে কিন্তু তাও সময় দিতেন আমাকে আর এখন (ইরা আবার কান্না শুরু করলো)
,,
আমি হ্যাঁ না কিছুই বলতে পারছিলাম না৷ উনি কান্না থামাতে আমি তাকে আমার আর্থিক বিষয় টা বুঝিয়ে বললাম।
উনি বললেন..
-টাকা আমি দিবো (ইরা)
-আমি আপনার সাহায্যে কেনো চলবো? আমি এরকম টাকা নিতে পারবো না (আমি)
-হুমম ঠিক আছে, দেখে যাইয়েন
-হুমম
,,
বিদায় নিয়ে বাসার বাইরের গেট পর্যন্ত আসলাম। আবার ফিরে গেলাম।
-কি হয়েছে কোনো সমস্যা (ইরা)
-এভাবে যাওয়া যায় না (আমি)
-সমস্যা নেই আমি একা থাকতে পারবো
-দেখতেছি তো কত থাকতে পারবেন, কান্না করে তো চোখ মুখের অবস্থা খারাপ করে দিয়েছেন। আচ্ছা আপনি আমার সাথে আমার বাড়িতে যাবেন?
-না এখন যেতে পারবো না, পুরো বাসাটা ফাঁকা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না
-ওহহ আচ্ছা তাহলে আমি থাকি
-না আপনি চলে যান, আন্টি আবার চিন্তা করবে
-আপনার যা অবস্থা কিছুদিন পর তো আপনাকে খুঁজেই পাওয়া যাবে না, এমনিতে শুকনো মানুষ, তারউপর কাল থেকে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিছেন৷ এভাবে দিন চলবে হ্যাঁ? আন্টির জন্য দোয়া করতে হবে বেশি বেশি, নামাজ পরে আল্লাহ কে বলবেন আন্টি যেন ভালো থাকে আর এই জন্য তো শক্তি দরকার তাই না? সকালে খেয়েছেন??
-না
-তা খাবেন কেনো? আমি হাশেম চাচাকে বলতেছি খাবার আনতে
-আমি খাবো না
-ওদিকে আন্টি কিন্তু কষ্ট পাবে
-আচ্ছা তাহলে খাবো…

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here