আপনিতে ব্যস্ত,Part : 6
Write : Sabbir Ahmed
-কি সমস্যায় যে ফেলে দেন আপনি, বোন তো আছেই পারলে মা ও থাকবে (আমি)
-উহুমমম আপনাকে লাগবে, আমি সবসময় আপনাকে আমাতে ব্যস্ত রাখবো(ইরা)
-কেনো?
-বুঝেও না বোঝার ভান করেন কেনো? আর এখন মন ভালো হয়েছে চলুন
-ঠিক আছে চলুন
,,
বাড়িতে আসার পর..
-আন্টি আমার ভালো লাগছে না উনি আমার সাথে থাকুক (ইরা মা কে বলল)
,,
আমি জানতাম এমন কিছু একটা করবে সে। আমি মা’র দিকে তাকিয়ে আছি। মা ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-তুই তাহলে ওর কাছে থাকে, মেয়েটা ভয় পাচ্ছে (মা)
-মা তুমি ওর কাছে থাকো (আমি)
-না আন্টি ও থাকুক
-তুই থাক সমস্যা কি?
,,
শেষ পর্যন্ত জয় ইরার হয়। রুমে ঢুকে বিছানার দুপাশে দুজন বসে আছি।
-কিছু ভাবছেন? (আমি)
-হুমম কাল বাসায় গিয়ে কাকে কি বলব বুঝতেছি না, (ইরা)
-আংকেল তো দেশের বাইরে এখন বাসায় গিয়ে কি করবেন?
-তবুও যেতে হবে, আর সে দুদিন পরেই তো ফিরবে, সে যদি তার বউ নিয়ে আসে তো আমি এই বাসায় আর থাকবো না
-তো কই যাবেন?
-আপনার কাছে থাকবো
-আমার কাছে কেনো?
-ওহহ আপনিও তো আমাকে চান না, সমস্যা নেই যেখানে মন চায় যাবো
-আচ্ছা আমার কাছেই থাকবেন
-আমি জানি তো এটা আগে পরে অবশ্যই বলতেন। যাই হোক একটু কাছে আসেন তো
-কেনো?
-প্রমিস করাবো, উঠে কাছে আসেন
-আপনার দরকার আপনি আসেন
,,
ইরা কাছে এসে তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল..
-আমার হাতের উপর হাত রাখেন (ইরা)
-হুমম রাখলাম তারপর? (আমি)
-এখন বলেন যত ঝড় ঝঞ্ঝা আসুক আপনি আমায় ছেড়ে কোথাও যাবেন না
-কাউকে কথা দেওয়ার আগে ভাবতে হয়
-কিচ্ছু ভাবতে হবে না বলেন
-….(আমি চুপ)
-সেদিন স্টেশনে আপনার সাথে যদি দেখা না হতো জানি না আজ আমি কোথায় থাকতাম, হয়তো ওপারেই চলে যেতাম। আমার এমন পরিস্থিতিতে আপনার মতো কেউ একজন থাকবে আমি কখনো ভাবিনি। বলুন না থাকবেন আমার সাথে
-আপনি আমাদের এই পরিবেশ বেশি দিন থাকতে পারবেন না
-আপনি পাশে থাকলে সব পরিবেশে থাকতে পারবো। আমার চোখের পানি দেখে আপনার কি কিছুই মনে হচ্ছে না?
-হুমমম আপনাকে ছেড়ে যাবো না
-প্রমিস করলেন কিন্তু
-হ্যাঁ করলাম
-এখন একটু বুকের ভেতর নেন
-এরকম কোনো কথায় তো প্রমিস করিনি
-এটা বোনাস
-না না এরকম কিছু হবে না
,,
কে শোনে কার কথা, কোনো কথা না শুনেই জড়িয়ে ধরলো।
-তুমি যে আমার কত্ত ভালো বন্ধু (ইরা)
-আমি আপনার বন্ধু তাই না? (আমি)
-জ্বি, তুমিই আমার বন্ধু
-হইছে এখন ছাড়েন, শুয়ে পড়েন। কাল তো আবার আপনার বাসায় যেতে হবে
-আরেকটু থাকি?
-আমি আপনার বর না যে এভাবে থাকবেন
-বর আর বন্ধু দুটোই
-আগে হয়ে নেই তারপর
-হয়ে নেই মানে? এখন তো হয়েই আছি
-আচ্ছা আচ্ছা। ছাড়েন এখন
-হুমম
,,
ইরা আমার থেকে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
-আমি এখানেই আছি চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে যান (আমি)
-হুমম খুব ঘুম পাচ্ছে (ইরা)
,,
ইরা ঘুমিয়ে গেলো, আমি তার পাশেই বসে আছি। সারারাত এরকমই কাটলো। ভোর হতে না হতেই আমি বাইরে চলে যাই। আমার আগেই মা বাইরে বের হয়েছে। আমি মা কে বললাম যে ওর সাথে আবার ওর বাসায় যেতে হবে কারণ গুলো বললাম৷ ইরা কে যে কথা দিয়েছি সেটাও বললাম..
-এত বড় ঘরের মেয়ে তোর সাথে.. (মা একটু চিন্তিত হয়ে বলল)
-দেখো আপাতত ওর জীবন টা শেষ না করে দেই, পরের টা পরে দেখা যাবে (আমি)
-বুঝলাম না
-মানে ধরো ওর ভাইয়া বা ওদের আত্মীয় স্বজনরা যখন ওকে ডাকবে বা বিয়ে নিয়ে কথা উঠাবে ভালো পরিবার পেলে আমরা না হয় বুঝিয়ে সুজিয়ে পাঠিয়ে দিবো
-আর তোর কি হবে?
-আমার কি হবে মানে?
-আমি তোর মা আমি কি বুঝি না? একবারেই অবুঝ মনে করিস আমাকে
-না আমি তো..
-চুপ থাক, যাই করিস না কেনো ভেবেই করিস
-হুমমমম
,,
আমি আবার রুমে গেলাম আর এবার গিয়ে দেই ইরা উঠেছে মাত্র। আমাকে দেখে হুড়মুড় করে ওরনা টা ঠিক করে নিলো৷
-আপনি ভেতরে আসবেন নক দিয়ে আসবেন না?(একটু ধমকের স্বরে)
-আমি তো কিছু দেখি নি (আমি)
-আমি কি কিছু দেখার কথা বলেছি?
-সরি
-এ ভুল যেন না হয়
-হলেই বা কি, আমিই তো
-ঐ ঐ ঐ খুব দুষ্টামি শুরু হয়েছে তাই না?
-নিজেই তো বলেছেন আমি আপনার বর আর বন্ধু, তো এরকম হতেই পারে
-পদবি দেয়ার পর আসল মুখোশ টা দেখা যাচ্ছে
-একদমই না, ভেতরে আসাটা ভুল হয়েছে আর আমি ক্ষমা চেয়েছি
-….(ইরা চুপ)
-নিজে যে এসে জড়িয়ে ধরে সেটা কিছু না আর আমি একটু..
-ঐ ঐ দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা
,,
ইরা দৌঁড়ানি দিয়েছে আমাকে। আমিও কম না ভুলবশত মজা একটু বেশি করে ফেলেছি।
তারপর সকাল বেলা খাওয়া দাওয়া শেষ করে দুজন বেড়িয়ে পড়লাম এবারের পথটা চেনা।
,,
সারা রাস্তা গাড়ির মধ্যে বসে ভেবেছি ওখানে গিয়ে কি হবে মেয়েটার? এর যা জেদ তার বাবা যদি নতুন বউ দেশে নিয়ে আসে তো আগেই আমার সাথে চলে আসবে তাও সারাজীবন এর জন্য।
,,
মেয়েটার পুরো দায়িত্ব টা নিয়েছি আমি। আমি যদি আবার ওকে নিজের কাছে না রাখি কি যে করে ফেলবে! আর মেয়েটাও কত অল্প সময়ে আমার সাথে মিশে গেছে আমাদেরও একই অবস্থা।
,,
নাহহ এতদিন মেয়েটাকে পছন্দ করতাম, এখন থেকে ভালবাসা শুরু। আমি আমার ইরাতেই ব্যস্ত থাকবো।
ধূলাবালির শহরে প্রবেশ করতেই খারাপ লাগা শুরু। একে তো প্রথমে এসে আন্টির লাশ দেখতে হয়েছে, না জানি এবার কি দেখতে হয়।
,,
বাসায় পৌঁছে হাশেম চাচার সাথে দেখা। উনি আমাকে দেখে এগিয়ে এসে কথা বলা শুরু করলেন। ইরা তার সাথে দু-একটা কথা বলে বাসার ভেতরে চলে গেলো। আমি হাশেম চাচাকে ইরার বাবার ব্যাপারে জিজ্ঞাস করলাম। উনিও ব্যাপার টা জানেন, আরও শুনলাম যে উনি বউ নিয়ে দেশেই আসছেন।
,,
চাচার সাথে আর কথা না বাড়িয়ে বাসার ভেতরে গেলাম। ইরা আমাকে বলল কিছু খাবো কি না? আমি বললাম..
-বাইরের খাবার কিন্তু খাবো না (আমি)
-আমি তো রান্না করতে পারি না (ইরা)
-আমি পারি
-আচ্ছা আমার যেন কেমন লাগছে আমি একটু আমার রুমে যাচ্ছি
,,
ইরার অবস্থা তেমন সুবিধাজনক মনে হচ্ছে না আমি তার পিছু পিছু গেলাম। সে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। আমি দরজা লাগিয়ে দিয়ে তার কাছে গেলাম।
-খুব খারাপ লাগতেছে?(আমি)
-হুমম মাথা ঘুরাচ্ছে, চোখ মেলে তাকাতে পারছি না? (ইরা)
-তাহলে তো পানি ঢালতে হবে, দাঁড়ান আমি পানি নিয়ে আসি
ইরাকে শোয়া অবস্থায় রেখে আমি হাশেম চাচার কাছে গিয়ে এক বালতি পানি চাইলাম৷
চাচা বলল ইরার রুমর ওয়াশরুমেই পানি আছে। আবার রুমে গিয়ে ওয়াশরুম খুঁজে বের করলাম। সেখান থেকে পানি নিয়ে এসে ইরার মাথায় ঢলালাম। কিছুক্ষণ ঢালার পর ইরা বলল আর ঢালতে হবে না৷ তার নাকি খিদে পেয়েছে, চাচাকে দিয়ে খাবার নিয়ে এসে ইরাকে খাওয়ানো হলো সাথে আমিও খেয়ে নিলাম।
,,
এখন সে মোটামুটি সুস্থ, দুপুর থেকে একটু ঘুমিয়ে নিয়ে সে বিকালে ঘুম থেকে উঠে। আমি তার রুমে তার পাশেই বসে ছিলাম এতক্ষণ। সে উঠে আমাকে দেখে বলল..
-আপনি ঘুমান নি? (ইরা)
-আমি দিনে ঘুমাই না অভ্যাস নেই
-আর ধন্যবাদ এত কিছু করার জন্য
-কি করলাম
-এই যে আমাকে একটু সাহায্য করলেন
-আমার কিন্তু খুব রাগ হচ্ছে
,,
আমার রাগের কথা শুনে সে বালিশ টা নিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো। সাথে মুখে মিটিমিটি হাসি..
-কেনো রাগ হচ্ছে? (ইরা)
-আমি তো এসব ভালবেসেই করেছি(আমি)
-সেই জন্য তো ধন্যবাদ দিলাম
-আবার! ধন্যবাদ দিলে কেমন যেন ছোট ছোট মনে হয়৷ মনে হয় যে পর মানুষ হয়ে আপনার সেবা করেছি
-তাই??
-হ্যা
-ওকে ওকে তাহলে আর দিবো না। আচ্ছা চলুন আমরা বাইরে ঘুরে আসি
-দরকার নেই, আজ যাওয়া যাবে না আপনার শরীর খারাপ
-আমি এখন ঠিক আছি তো
-খারাপ হতে কতক্ষণ হ্যাঁ??
-এত ভাবেন কেনো আমার জন্য
-ভালবাসতে শুরু করেছি
-বাহহ দারুণ কাজ করতেছেন আপনি, প্রমোশন লাগবে আপনার?
-দিলে তো ভালই হয়
চলবে