আপনিময়_বিরহ,০২,০৩

0
682

#আপনিময়_বিরহ,০২,০৩
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
০২

এলোমেলো পায়ে হসপিটালের কড়িডোর দিয়ে ছুটে আসে অনিমা। শাড়ির আঁচল মাটিতে গড়াগড়ি করছে। চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি ঝরছে। হসপিটালে থাকা সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। পেছনেই শিশিরও ধীর পায়ে হেঁটে আসছে। শরীরের ভার আজ তার বড্ড বেশি মনে হচ্ছে। অনিমা ছুটে এসে তনিমাকে ধরে ভাঙা ভাঙা ভাবে বলে,

‘প্রিয়ু কোথায় তনু? ‘ও’ কেমন আছে এখন?’

তনিমা কিছু বলতে যাবে তার আগেই উদয় এসে অনিমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ঠা’স করে থা’প্প’ড় বসিয়ে দেয় গালে। অনিমা কান্না বন্ধ করে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। শিশির ছুটে এসে অনিমাকে ধরে। উদয় মুহূর্তেই হিংস্র রূপ ধারণ করে৷ তাঁরা বেগম ছুটে এসে ছেলেকে সরায়। সে তো মা, সে যে সবাইকে সমান ভালোবাসে। অনি আর তনি তার মেয়ে না হলেও সে কখনো নিজের মেয়ে নয় এমন ভাবেনি। অনিমাকে কোনো কিছু না বললেও সে চায় না তার ছেলে মেয়ের কোনো রকম উগ্র আচরণ। তাঁরা বেগম নিজেকে সামলিয়ে কঠোর গলায় বললেন,

‘এট কেমন ব্যবহার উদয়? তুমি ওকে থা’প্প’ড় মা’রলে কেন?’

‘ ‘ও’ কোন সাহসে এখানে এসেছে? আমার বোন ম’রে গেছে কি না তা দেখতে! আজ একমাত্র ওর স্বার্থপরতার জন্য আমার ছোট্ট বোনটা মৃ’ত্যুর সাথে লড়াই করছে।’

‘ভাইয়া!’

অনিমার কাতর কন্ঠও যেন উদয়ের মন ছুঁতে পারে না। রাগে অন্য দিকে চেয়ে থাকে। শিশির নরম গলায় বলে, ‘উদয় অনি শুধু প্রিয়তাকে একটু দেখতে এসেছে, প্লিজ তুমি…

আর কিছু বলার আগেই তেড়ে আসে উদয়। সাথে সাথে তাঁরা বেগম উদয় কে ঠা’স করে থা’প্প’ড় বসায়। রেগে বলে,

‘ছোট বোনের হাজবেন্ড কে মা’রতে যাচ্ছো? এই শিক্ষা দিয়েছি তোমাকে? তোমাার এক বোন ওদিকে মৃ’ত্যুর সাথে লড়ছে আর তুমি আরেক বোনকেও মে’রে ফেলতে চাচ্ছো! হিতাহিত জ্ঞান কি হারিয়ে গেছে তোমার?’

তাঁরা বেগমের কথায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এই মহিলা এতো ভালো কেন? নিজের মেয়ের এই অবস্থা যাদের জন্য তাদের এখনো সেইভ করছে! উদয় রেগে দেয়ালে আঘাত করে চলে যায় অন্যদিকে। তাঁরা বেগম চোখ মুছে শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। অনিমা নিজেও এতক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো তার বড় আম্মুর দিকে। এতো কিছুর পরও তাকে একটাও কড়া কথা শোনায়নি শুধু এই একটাই মানুষ। অনিমা কাঁদতে কাঁদতে তাঁরা বেগমের কাছে এসে বলে,

‘বড় আম্মু প্লিজ একবার প্রিয়ুকে দেখতে দাও, তাহলেই আমি চলে যাবো।’

তাঁরা বেগম কঠোর গলায় বললেন, ‘ঠিক আছে, তুমি দেখা করতে পারো শুধু তোমার কাছে একটাই অনুরোধ আমার মেয়েটা কে উত্তেজিত করো না কোনো ভাবে।’

অনিমা মাথা নাড়ায়। শিশির ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে এক কোণে। মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন, রাগ, ক্ষোভ তবুও সব মুখ বুঝে সহ্য করে নিচ্ছে। সবার এখন একটাই অপেক্ষা কখন প্রিয়তার সেন্স ফিরবে। প্রিয়তা তখনো অপারেশন থিয়েটারে। অতিরিক্ত মাত্রায় রক্তক্ষরণ হওয়ায় শরীর হিম শীতল হয়ে গেছিলো। ভাগ্যিস সময়মতো দরজা ভেঙে রুমে ঢুকেছিলো সবাই।

দীর্ঘ ১০ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে প্রিয়তার। জ্ঞান ফিরার পরও কারো সাথে একটা টু শব্দ অবদি করে নি। অনিমা কেবিনে আসার সাহস জোগাড় করতে না পেরে এতক্ষণ বাহিরেই ছিলো, অনেক কষ্টে সাহস নিয়ে সে প্রিয়তার কেবিনে যায়। প্রিয়তা তখনো নির্বাক, নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উপরে চলতে থাকা সিলিং ফ্যানের দিকে। অনিমা ঢোক গিলে ডাকে,

‘প্রিয়ু!’

প্রিয়তা চোখ নামিয়ে ঘাড় কাত করে তাকায়। অনিমাকে বসে থাকতে দেখে ঠোঁট এলিয়ে হাসে। আলগোছে উঠে বসার চেষ্টা করলে অনিমা তাকে ধরে বসায়। প্রিয়তার ঠোঁটে হাসি দেখে হুট করেই ভয় পায়। তাঁরা বেগমও আসে কেবিনে। প্রিয়তা লাজুক হেঁসে অনির দিকে তাকিয়ে বলে,

‘শিশির ভাই আসেনি অনু আপু?’

কথাটা যেন হৃদয় গহ্বরে গিয়ে আঘাত করে অনিমার। তাঁরা বেগমও অজানা আশাঙ্কায় এগিয়ে আসে। শুকনো ঢোক গিলে মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘তুমি এসব কি জিজ্ঞেস করছো প্রিয়তা? শিশির কেন আসবে? তুমি কি সব ভুলে গেছো?’

মুহুর্তেই চোখ মুখ হিংস্র হয়ে উঠে প্রিয়তার। হাত থেকে একটানে সুচ খুলে ফেলে। টপটপ করে রক্ত পড়তে থাকে তা থেকে। ভয়ে মেয়ের হাত চেপে ধরে তাঁরা বেগম। অনিমা দুকদম এগিয়ে আসতে নিলেই হিংস্র কন্ঠে চেচিয়ে বলে,

‘ও এখানে কি করছে? ওই বেইমান টা আসেনি? মরে গেছি কি না দেখতে এসেছো? কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা কি আরো দেবে? আর কতো টা কষ্ট দেবে তোমরা? মরার আগে অন্তত একটু শান্তিমতো মরতে দাও। বেড়িয়ে যাও, বেড়িয়ে যাও।’

পাগলের মতো চেঁচাতে থাকে প্রিয়তা। নার্স অবস্থা বেগতিক দেখে ছুটে এসে শান্ত করার চেষ্টা করে। প্রিয়তার শরীর দুর্বল হওয়ায় অল্পতেই ফের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অনিমা কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে যায়। তাঁরা বেগম আঁচলে মুখ গুজে কেঁদে ফেলে। তার দুই মেয়ের মাঝে এ কোন দেয়াল উঠে গেলো? এই দুইজন তো ছিলো একে অন্যের প্রাণ অথচ আজ একজন অন্যজনের প্রাণপুরুষ কেড়ে নিয়েছে আর অন্যজন তাকে দেখলেই দুর দুর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে।

বাইরে থেকে এক পলক প্রিয়তাকে দেখে শিশিরও হসপিটাল ত্যাগ করে। অনিমাকে সাথে নিয়ে বাড়ি চলে আসে। অনিমা এসেই ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে শাওয়ার ছেড়ে কাঁদছে। শিশির শুধু সেদিকে তাকিয়ে আছে। আজ আর তার কিছু করার নেই। সব তো সে নিজে হাতে শেষ করে দিয়েছে। কয়েকজনের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে তিনটে জিবন। এখানে আসার পর থেকেই সে দেখছে অনিমা, তনিমা আর প্রিয়তাকে। প্রিয়তা বড্ড চঞ্চল প্রকৃতির, উড়নচন্ডি যাকে বলে। তবে লজ্জার আভা সবসময়ই বেশি। অনিমা শান্ত প্রকৃতির, ভীষণ বই প্রেমী। অথচ এই দুই মেরুর দুই রকমের মানুষের সে কি দারুণ মিল। একে অন্যকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। তনিমা দুষ্টু, ঠোঁট কাটা স্বভাবের। যখন তখন যা তা বলে দেয়। ৩ বোনের গলায় গলায় মিল। কতোবার যে সবার সামনেই তার আর প্রিয়তার ব্যান্ড বাজিয়েছে তার ঠিক ঠিকানা নেই। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে শিশির। উঠে গিয়ে অনিমাকে ডাকে। অনিমার সাড়া না পেয়ে ভয় পায়। জোড়ে জোড়ে ডাকতে থাাকে অনিমাকে। এক সময় ক্লান্ত গলায় ছোট্ট করে অনিমা জবাব দিয়ে দরজা খুলে দেয়। শিশির এগিয়ে আসে অনিমার দিকে। অনিমা পলকহীন চেয়ে রয় তার দিকে। হুট করেই শিশিরের পায়ের কাছে বসে পড়ে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে,

‘আপনার পায়ে পড়ি শিশির ভাই আমার বোনটা কে বাঁচান। সে যে আপনি ছাড়া মরে যাবে। দয়া করেন আমাদের ওপর, আমাার ছোট্ট বোনটার সর্বস্ব জুড়ে শুধু যে আপনার বাস সে তো পারছে না এই ধাক্কা সামলাতে। তাকে রেহাই দিন আপনিময় বিরহ থেকে। আমি চলে যাবো আপনার জিবন থেকে শুধু আপনি প্রিয়তাকে ফের নিজের করে নিন।’

_______

গভীর রাত, তাঁরা বেগম প্রিয়তার কেবিনে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তনিমাও ঘুমিয়ে আছে। শুধু ঘুম নেই সদ্য এক হৃদয় ভাঙা কিশোরীর। এক প্রেমিক পুরুষ কিছুটা সময়ের ব্যবধানেই তার সব চাঞ্চল্য, সব অনুভূতি, সব আনন্দ কেড়ে নিয়ে গেছে। দিয়ে গেছে এক আকাশ সম বিশাল বিরহ, বিষাদ আর তিক্ততা। অনুভূতিহীন জড় বস্তুর ন্যায় শুধু বেঁচেই আছে সে। অথচ ভেতর থেকে যেন আস্ত এক জীবিত লাশ। আমাদের শহরে তো কতো শতো এমন জীবন্ত, অনুভূতিহীন নারীরা বেঁচে আছে। আচ্ছা বেঁচে থাকাটা কি খুব জরুরী? মরে গেলে কি খুব ক্ষতি হয়? যেখানে তারা অনুভূতিহীন সেখানে বাঁচবে কার জন্য? এর চেয়ে তো মৃত্যুই শ্রেয়। মুহুর্তেই মস্তিষ্ক কড়া প্রতিবাদ জানায় প্রিয়তার। ক্ষেপে উঠে যেন বলে,

‘কে বলেছে মৃত্যুই শ্রেয়? মৃত্যুই সব কিছুর সমাধান নয়। বাঁচতে হলে এমন শতো বার মরতে হবে। শতো বার বেরঙ অনুভূতি গিলতে হবে তাই বলে মরে গেলে জীবনের আনন্দ কই! জীবন তো কেবল আমাদের নিয়ে প্রচন্ড মজা করে খেলতে ভালোবাসে তাই বলে আমরা মৃত্যুর পথ কেন বেছে নিবো? আর কার জন্য বাঁচবে মানে কি? যারা জন্ম দিলো, ছোট থেকে বড় করলো, স্নেহ-ভালোবাসা দিলো, বুকে আগলে বড় করলো তাদের ভালোবাসা কি জিবনে কিছুই নয়? তাদের ১৮ বছরের ভালোবাসা কি এই ২ বছরের ভালোবাসার চেয়ে অনেক ছোট? কেন তাদের জন্য বাঁচলে কি খুব ক্ষতি হবে? তোমার কি অধিকার আছে তাদের থেকে তাদের আদরের মেয়েকে কেড়ে নেওয়ার! যারা তোমাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিলো তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দাও তুমি ভেঙ্গে যাওনি, দ্বিগুণ শক্ত হয়েছো। জীবন মানেই তো যুদ্ধ কথাটা কি তোমার অজানা?’

প্রিয়তা মস্তিষ্কের কথা গুলো নিজে নিজে কয়েক বার আওড়ালো। মায়ের মুখের দিকে তাকালো। ইসস কি মায়ায় ভরা মায়ের মুখ! এই মায়ের জন্য, ভাইয়ার জন্য আর তার প্রাণপ্রিয় বাবার জন্য বাঁচবে। একটা বেইমানের জন্য সে কেনো মরবে? সে বাঁচবে। ভালো থাকবে। চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়াতেই কারো হাতের উষ্ণ ছোয়া পায় প্রিয়তা। চোখ মেলে সেদিকে তাকাতেই দেখে তার মা তাকিয়ে আছে তার দিকে। প্রিয়তার চোখ ছলছল করে উঠে। ভাঙা গলায় বলে,

‘সরি আম্মু৷ আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।’

তাঁরা বেগম মুচকি হেঁসে প্রিয়তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে, ‘আমার বুঝদার মেয়েটা এমন অবুঝের মতো করবে আমি কিন্তু ভাবতে পারিনি। অবশ্য তার আর কি দোষ? প্রণয়ের বিরহে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো৷ তবে মা এতো সহজে ভেঙে পড়লে হবে? আচ্ছা বলো আমাদের থেকেও কি তোমার কাছে শিশির বেশি? আমাদের জন্য বাঁচা কি তোমার দায়? তবে কি আমাদের দেওয়া ১৮ বছরের ভালোবাসা তোমার কাছে তু্চ্ছ?’

প্রিয়তা মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘না। তোমরাই আমার সব। আমি তোমাদের জন্য বাঁচবো আম্মু। শিশির ভাই আর অনু আপু ভালো থাকুক। ওরা সুখী হোক অনেক।’

প্রিয়তা শব্দ করে কেঁদে দেয়। তাঁরা বেগম মেয়েকে বুকে আগলে নেন। তার কলিজার টুকরা ছেলে মেয়ে। এভাবে কষ্ট পাচ্ছে আর সে কিছু করতে পারছে না। তবে প্রিয়তা যে বুঝেছে এটাই অনেক। হয়তো নিজেকে সামলাতে সময় লাগবে তবুও ভুল পদক্ষেপ আর নিবে না। এমন ভাবে যদি সবাই বুঝতো তবে হয়তো এ সমাজে আত্মহত্যার চিহ্ন থাকতো না। তাঁরা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে থাকে।

___________

রাতের গভীরতা বেড়ে চললেও ঘুম নেই অনিমা আর শিশিরের চোখে। অনিমা জানালার সাথে হেলান দিয়ে বসে বাহিরে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। আর শিশির ছাঁদে গেছে। প্রিয়তার মতো এই দুজনেরও হয়তো আজ বিরহের রাত। অথচ বিয়ের রাতকে সবাই বাসর রাত বলে। অনিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। শাড়ি ঠিক করে হাঁটা লাগায় ছাঁদের উদ্দেশ্যে। ছাঁদের এক কোণে একজন পুরুষ অবয়ব দেখে সেদিকে এগিয়ে যায়। পাশে দাড়াতেই শিশির ঘুরে তাকায়। অনিমাকে দেখে চোখ ঘুরিয়ে আবার সামনে তাকায়। অনিমা ছোট একটা শ্বাস ফেলে বলে,

‘আপনি কিন্তু তখন উত্তর না দিয়েই বেড়িয়ে এসেছেন।’

‘কিসের উত্তর?’

‘প্রিয়ুকে নিজের কাছে ফেরাবেন না?’

‘সম্ভব না। তাছাড়া এখন আমি বিবাহিত।’

‘বিয়েটা মন থেকে আপনিও মানেন না আমিও মানি না। তবে কিসের বিয়ে? জোড় করে বিয়ে করেছেন। যার কোনো ভ্যালু নাই। প্রিয়ু আপনাকে ভীষণ ভালোবাসে ওকে ফিরিয়ে নিন নিজের জীবনে।’

মুহুর্তেই যেন রেগে যায় শিশির। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চোয়াল শক্ত করে বলে, ‘সেইটা সম্ভব হলে তোমাকে বিয়ে করতে হতো না আমার।’

গটগট শব্দ তুলে চলে যায়। নিষ্পলক সেদিকে তাকিয়ে অনিমা আস্তে করে বলে, ‘একদিন আপনি প্রিয়ুকেও হারাবেন আমাকেও হারাবেন শিশির ভাই। অবহেলা খুব খারাপ। আমি চাই না আপনি আমাকে ভালোবাসুন আপনি আমার বোনটাকে আজীবন ভালোবেসে যান। আমি মুক্তি দিয়ে যাবো আপনাকে।’

চলবে..

#আপনিময়_বিরহ (০৩)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
____________

২ দিন পরই প্রিয়তাকে রিলিজ করা হলো। সে এখন কিছুটা সুস্থ। যদিও এতো তাড়াতাড়ি হসপিটাল থেকে রিলিজ পেতো না তবুও প্রিয়তার জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়ে প্রিয়তার বাবা পলক সাহেব রিলিজ করিয়ে আনলেন। যখন মেয়ে এমন পরিস্থিতিতে ছিলো তখন সে ছিলো গ্রামের বাড়িতে। ওখাানে একটু সমস্যার জন্য গেছিলো। যখন শুনলো তার আদরের মেয়ের এ অবস্থা তখনই বিভ্রান্তের মতো ছুট লাগিয়েছে। বাবারা বুঝি এমনই হয়! এই দুদিনে অনিমা আর শিশির হসপিটালে যায়নি প্রিয়তা উত্তেজিত হতে পারে ভেবে। তবে দুজনের দুরত্ব কমার বদলে বেড়েছে শতগুণ। শিপন সাহেব রাগে, দুঃখে ছেলের সাথে কথায় বলছেন না৷ তবে শিলা বেগম স্বাভাবিক। যেনো কিছুই হয়নি। তাঁরা বেগম কিচেনে প্রিয়তার জন্য হালকা খাবার রান্না করছে। পলক সাহেব মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,

‘এখন শরীর কেমন লাগছে মা? বেশি কষ্ট হচ্ছে?’

প্রিয়তা মাথা নাড়িয়ে বোঝায় ‘না’। তার কষ্ট হচ্ছে না। পলক সাহেব মুচকি হেঁসে মেয়েকে বলে, ‘আমার ছোট্ট মা টা এতো অবুঝ কবে হলো? তুমি তো আমার লক্ষী একটা মা ছিলে তবে এমন ভুল সিদ্ধান্ত কেন মা? আমরা বুঝি তোমার কাছে মূল্যহীন!’

প্রিয়তা মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে ধরে। সে আবেগের তাড়নায় কত বড় ভুল করে ফেলেছে হয়তো বুঝতে পারছে। বাবা মা কে কষ্ট দিয়ে ফেললো সে! প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই উদয় এসে হাজির। একটা আপেল কামড়াতে কামড়াতে বললো,

‘কাকে কি বলো আব্বু? ওর কি আমরা কেউ হয়? ওর তো শিশিরই সব। তাই জন্যই ওর জন্য হাতের শিরা কে’টে ফেললো। একটাবার ভাবলো না বাবা মা, ভাইয়ের কি হবে!’

তাঁরা বেগম খাবার হাতে রুমে ঢুকতে ঢুকতে উদয়ের কথার জবাবে বললো, ‘এই একটা কথা ১০০ বার বলে ফেলছিস৷ অন্য কিছু বল। কানের কাছে তোর এই একই প্যান প্যান ভালো লাগছে না।’

উদয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই তনিমা হাজির। মুখ ভেংচি কেটে বললো, ‘তাছাড়া তুমি ওকে কি কথা শোনাও! তুমি নিজেই তো গার্লফ্রেন্ডের থেকে ছ্যাকা খেয়ে কয়দিন দেবদাসের মতো ছিলে হুহ।’

কথা বলতে দেড়ি কিন্তু উদয়ের দৌড়ানি দিতে দেড়ি নাই। পলক সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখেন প্রিয়তা মলিন মুখে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। এটা কয়েকঘন্টা আগের প্রিয়তা হলে হেঁসে গড়াগড়ি দিতো। অথচ এখন! একটা মন ভাঙার এতো ক্ষমতা যে মানুষকে সহজেই বদলে দেয়! পলক সাহেব প্রিয়তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,

‘জীবনে একটা ধাক্কা বড় জরুরি মা৷ তাতে তুমি মানুষ চিনতে শিখবে। আর একটা কথা মাথায় রেখো আল্লাহ যা করেন তা ভালোর জন্যই করেন। হয়তো শিশির তোমার জন্য সঠিক না তাই তাকে পাওনি। নিজেকে সামলে সামনে এগিয়ে যাও। কখনোই নিজের অতীত আঁকড়ে ধরবে না। যারা অতীত আঁকড়ে বাঁচে তারা বোকা। অতীত সবাইকেই একটা পীড়া দেয়, একটা দুঃস্বপ্নের মতো খারাপ স্মৃতি দেয় যা ভুলে যাওয়ায় শ্রেয়। আশা করবো তুমিও এক সময় নিজের খারাপ স্মৃতি ভুলে এগিয়ে যাবে।’

কথা শেষ করতেই প্রিয়তা বাবাকে জড়িয়ে ধরে৷ শব্দ করে কান্না করতে থাকে। কান্না করতে করতেই বলে,

‘আব্বু আমাাকে এখান থেকে নিয়ে যাও প্লিজ। এখানে আমার দম আটকে আসে। শিশির ভাই যেমন তেমন অনু আপুকে তো আমি খুব ভালোবাসি বলো। ছোট থেকে অনু আপু আর তনু আমার প্রাণ। কিন্তু অনু আপুই তো আমাকে ঠকালো। প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।’

___________

অনিমা শিলা বেগমের হাতে হাতে কাজ করছে আর গভীরভাবে কিছু ভাবছে। শিশির কয়েকবার ডেকেছে তাও কানে যায় অনিমার। পাশ থেকে শিলা বেগম অনিমার অন্যমনষ্ক ভাব লক্ষ্য করে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বললেন, ‘অনি কই হারিয়ে গেছো? শিশির তোমাকে কখন থেকে ডাকতেছে।’

অনিমার কান অবদি কথা টুকু পৌছাতেই ছুট লাগালো শিশিরের রুমের দিকে। শিশির ততক্ষণে বিরক্তি নিয়ে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত। অনিমা রুমে এসে ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললো,

‘ডাকছিলেন? কিছু হয়ছে?’

শিশির বিরক্তি চোখে তাকিয়ে রুক্ষ স্বরে বলে, ‘কতগুলো ডাক দিতে হয় তোমাকে? ডাকতে ডাকতে গলা ফেটে যায় তাও তোমার পাত্তা নাই। আমার শার্ট কই?’

অনিমা বোকার মতো তাকিয়ে বলে, ‘ওই যে ওখানে সব।’

‘ওগুলো আমিও দেখেছি। সাদা শার্ট কই? আমি অফিস যাবো না নাকি!’

অনিমা সাথে সাথে ছুট লাগায় ছাঁদের দিকে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকায় শিশির। খানিকটা সময় বাদেই ফিরে আসে অনিমা। হাতে সেই সাদা শার্ট। শুকাতে দিয়েছিলো। শিশির টান মেড়ে হাত থেকে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে, ‘বোনের ভালোবাসা কেড়ে নিয়ে খুব সুখী হতে চাইছিলে তাই না? এমন সুখী করবো তোমার বাবা মাও পা ধরে কান্না করবে।’

গটগট করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে অনিমা। মানে কি এতগুলো কথার? সে কখন কেড়ে নিলো তার বোনের ভালোবাসা? শিশিরই তো জোড় করে বিয়ে করলো! আর বাবা মা পা ধরে কাঁদতে যাবে কেন? তারা তো আরো ক্ষুব্ধ অনিমার ওপর। সব কথা যেনো মাথার ওপর দিয়ে গেলো। হাজার কথা ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরে এসে দেখে তার শ্বাশুড়ি রান্না করছে। হঠাৎ করেই একটা কথা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। যেখানে সবাই অস্বাভাবিক সেখানে তার শ্বাশুড়ি এতো স্বাভাবিক কিভাবে? ভাবসাব এমন যেনো কিছুই হয়নি। অথচ কত কি হয়ে গেলো! অনিমা শিলা বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে আস্তে করে ডেকে বললো,

‘আচ্ছা কাকিমা সবাই আমার ওপর রেগে আছে তুমি রেগে নাই কেন?’

উত্তরে শিলা বেগম নিজের কাজ করতে করতে বললো, ‘রেগে থাকার কি আছে? তুমি অনেক লক্ষীমন্ত মেয়ে তোমাকে ছেলের বউ হিসেবে পেয়েছি এটাই কম কিসের? আর কাকিমা কি? আমি তোমার শ্বাশুড়ি লাগি তাই মা ডাকবে।’

অনিমার যা বুঝার তা বুঝাা হয়ে গেছে। নিশ্চয় এই চারদেয়ালের মধ্যে এমন কিছু হয়ছে যাতে করে শিশির তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়ছে। কিন্তু কি এমন কারণ থাকতে পারে? এর মধ্যেই শিলা বেগম আবার বললেন, ‘প্রিয়তাকে নাকি বাড়িতে এনেছে। ও বাড়িতে যাবে না।’

বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে আসে অনিমার। শ্বাশুড়িমা কে একটা শিক্ষা তো দেওয়া দরকার। এতো ভালো বউ পায়ছে একটু শিক্ষা না পাইলে হয়? কুটিল হেঁসে হাই তুলতে তুলতে বললো,

‘শ্বাশুড়ি মা আপনি রান্না করেন আমি যায় রুমে। একটু ঘুমায় গিয়ে। অনেক ঘুম পাচ্ছে।’

শিলা বেগমের উত্তরের অপেক্ষা না করেই নাচতে নাচতে চলে যায় অনিমা। শিলা বেগম বিস্ময়ে হতভম্ব। সে কাজ করবে আর এ মেয়ে ঘুমাবে মাানে?

_________

সন্ধ্যার আগে দিয়ে শিশির ছাঁদে এসেছে। এক ধ্যানে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই পাশে কারো উপস্থিতির টের পায়। পাশে তাকিয়ে দেখে অনিমা দাঁড়িয়ে আছে। কিছু না বলে চলে আসার জন্য ঘুরতেই চোখে কিছু পড়ে যায়। চোখ চেপে ধরে দাঁড়িয়ে পড়ে নিজের জায়গায়। বার বার চোখ ডলছে খেয়াল করে অনিমা সামনে এগিয়ে এসে একটু উচু হয়ে হাত সরিয়ে নিজে দেখতে থাকে। পেছন থেকে যে কেউ দেখলে মনে করবে কিস করছে। ঠিক একই ভুল করলো প্রিয়তা। রুমে ভালো লাগছে না বলে তনিমা কে নিয়ে ছাঁদে এসেছে। তনিমার নুপুর খুলে যাওয়ায় সে সিড়িতে বসেই ঠিক করতে থাকে আর প্রিয়তা আস্তে আস্তে উপরে চলে আসে। তখনই চোখ যায় সামনের ছাঁদে। অনিমা আর শিশিরকে এমন অবস্থায় দেখে আর এক পাও নড়ে না। যেভাবে ছিলো ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে। এক দৃষ্টিতে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকতেই তনিমা দৌড়ে এসে কিছু খেয়াল না করেই বলে,

‘আরে প্রিয়ু এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? দ্রুত চল।’

‘প্রিয়ু’ নাম কানে আসতেই ছিটকে দাঁড়ায় অনিমা আর শিশির। সেই সময়ই তনিমাও ওদের দেখে। প্রিয়তা তখনো তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। তনিমার কয়েক সেকেন্ড লাগে পুরো বিষয়টা বুঝতে। মুহুর্তেই মাথায় রাগ চেপে বসে। প্রিয়তার হাত ধরে রুক্ষ স্বরে বলে,

‘চল এখান থেকে। কিছু মানুষ নোং’রামি করার জন্য জায়গা পাই না ছাঁদে আসে নোং’রামি করতে। এতো যদি শখ হয় সারাদিন রুমের দরজা লক করে বসে থাকতে পারে না! যত্তসব।”

অনিমা মাথা নিচু করে নেয়। নিজের বোনও তাকে এভাবে কথা শোনালো! শিশির অসহায় চোখে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়তা আর তনিমা চোখের আড়াল হতেই শিশির অনিমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে যায়। অনিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। সাথে সাথেই চোখের কোণা বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।

শিশির নিচে আসতেই শিলা বেগম তাকে ডাকলেন। চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে শিশির বললো, ‘কি?’

শিলা বেগম রুক্ষ স্বরে বললো , ‘অনিমা কই? তুই কি ওকে কিছু বলবি? ২ দিন হলো না বাড়ি আসছে তাতেই আমাকে অর্ডার শুরু করছে! রান্নার কাজে তো হাত লাগায়ইনি উল্টো সারাদিন আমাকে অর্ডার করে যাাচ্ছে।’

শিশির হুট করেই হেঁসে দিয়ে বলে, ‘কেন মা? তুমি না শান্তশিষ্ট, লক্ষী বউমা চেয়েছিলে! তোমার পছন্দের মেয়েকেই তো বিয়ে করেছি। তাহলে এখন এসব বলতেছো কাকে? ৩ দিনেই বিরক্ত হয়ে গেলে? আমি সারাজীবন কিভাবে কাটাবো? সংসার চেয়েছিলে না? ছেলেকে জীবন্ত লাশ করে শান্তি পেয়েছো তো!’

শিশির শব্দ করে চলে যায়। শিলা বেগম শূন্য দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকে৷

প্রিয়তা চুপচাপ নিজের রুমে বসে আছে। তনিমা হাজারটা কথা বললেও একটা কথাও তার কান অবদি পৌছাচ্ছে বলে মনে হয় না। তাঁরা বেগম এসে প্রিয়তাকে অন্যমনষ্ক দেখে তার কাঁধে হাত রাখে। প্রিয়তা তার দিকে তাকায়। অসহায় কন্ঠে বলে,

‘আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো না আম্মু। আমি এক্সামের সময় না হয় এখানে এসে এক্সাাম দিয়ে যাবো। প্লিজ আম্মু।’

তাঁরা বেগম মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে ধরে আসা কন্ঠে বললেন, ‘আর মাত্র ৩ দিন কষ্ট করে অপেক্ষা করো আম্মু। তারপর আমরা চলে যাবো এখান থেকে।’

প্রিয়তা এতক্ষণের আটকে রাখা কান্না উপচে দিলো। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। তাঁরা বেগম মেয়ের এমন কান্নায় নিজেই কেঁদে ফেললেন। আল্লাহ তার মেয়েকে এত কষ্ট কেন দিলো! মেয়েটা তো একদম ভেঙে পড়েছে। পাশ থেকে তনিমাও ঠোঁট চেপে কান্না করছে। উদয় প্রিয়তাকে দেখতে এসে এমন দৃশ্য দেখে ভড়কে যায়। তারপর নিজেকে সামলে যেভাবে নিঃশব্দে এসেছিলো সেভাবেই চলে যায়। যাওয়ার আগে তনিমার দিকে গভীর দৃষ্টি দেয়। মেয়েটা দুষ্টু, ঠোঁটকাটা স্বভাবের হলেও ভালো খুব। অন্তত বড় বোনের মতো পিছনে আঘাত করেনি৷ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের বাবার রুমে যায়। পলক সাহেব তখন সন্ধ্যার চা খাচ্ছেন ব্যালকনিতে বসে। উদয় সরাসরি নিজের বাবাকে প্রশ্ন করে বসে,

‘আমরা এখান থেকে কবে যাবো আব্বু?’

পলক সাহেব ছেলের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বলে, ‘বসো আগে।’

উদয় বাধ্য ছেলের মতো বসে পড়ে ফ্লোরে। পলক সাহেব তা দেখে মুচকি হাসে। বরাবরই উদয় এমন। পলক সাহেব চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘তোমার কি মনে হয় এখান থেকে গেলেই প্রিয়তা ঠিক হয়ে যাবে?’

‘তা হোক বা না হোক। কিন্তু এখানে থাকলে এই বে’ইমানগুলোর মুখ দেখতে হবে। যা ওর কাছে সহ্যের বাহিরে। তুমি যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে চলো।’

‘হুম। ৩ দিনের মধ্যেই আমরা চট্টগ্রাম শিফ্ট হবো।’

উদয় আর কথা বাড়ায় না। উঠে চলে যায়। পলক সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের কোণে জমা জল মুছে নেয়। মেয়ের কান্নার শব্দ সে এখান থেকেই পাচ্ছে। আহ কি হৃদয়বিদারক সে আওয়াজ। কি কষ্টের! আল্লাহর কাছে এখন এই পরিবারের সবার একটাই প্রার্থনা যেন প্রিয়তা অতীত ভুলে নিজের জীবনে এগিয়ে যায়। যত ও ওর অতীত মনে করবে তত ভেতর থেকে শেষ হয়ে যাবে। বে’ইমানরা তো ঠিকই সুখে শান্তিতে থাকবে আর দিনের পর দিন গুমড়ে মরবে এই ছোট্ট মেয়েটি।

________

গভীর রাতে প্রিয়তা উঠে জানালার ধারে দাঁড়ায়। এ জানালা থেকে সে বহুবার শিশিরকে দেখেছে। প্রেমিক পুরুষকে দেখেছে। কিন্তু এখন সবই স্মৃতি। এখন তো তাকে নিয়ে ভাবাও নিষিদ্ধ। আর মাত্র ৩ দিন এরপর সব স্মৃতি ফেলে প্রিয়তা পাড়ি জমাবে অন্য এক শহরে। যেখানে কারো স্মৃতি তাকে পীড়া দেবে না। এ বাড়ির কানায় কানায় তার, অনিমার আর তনিমার কত স্মৃতি! সে সব ধুলোয় পড়ে যাবে। ভাবনার মাঝেই জানালা দিয়ে নিচে তাকাতেই দেখে একটা অবয়ব সরে গেছে। প্রিয়তা দেখার চেষ্টাও করে না অবয়বটি কার! তার যেন কোনো কিছুতেই মাথা ব্যাথা নাই। জানালার পাশ থেকে সরে এসে ডায়েরী হাতে নিয়ে তাতে ছোট্ট করে দুলাইন লিখে,

‘আপনি আমার ভীষণ যত্নে রাখা সেই মানুষ
যার বিরহ আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আপনাকে পাওয়া হলো না ঠিকই তবে আপনিময় বিরহ পেলাম এক আকাশ
আমি না হয় এই বিরহেই সুখী।

আপনিময় বিরহ।’

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here