আপনিময়_বিরহ (০৪)

0
556

#আপনিময়_বিরহ (০৪)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী

আজ প্রিয়তারা চট্টগ্রাম চলে যাাবে। সব কষ্টের শেষে হয়তো এবার একটু সুখ মিলবে। এই ৩ টা দিন প্রিয়তা রুম থেকে বের হয়নি। যদি আবারও দুজনকে এক সাথে দেখে তাহলে তো তার কলিজায় আঘাত লাগবে৷ সব গুছিয়ে নিয়ে প্রিয়তা আরো একবার ভালো ভাবে সব পরখ করে নিলো৷ নিজের রুম, বাবা-মায়ের রুম, উদয়ের রুম, তনিমার রুম বাড়ির প্রত্যেকটা কোণা ভালো ভাবে দেখে নিলো৷ এটাই হয়তো শেষ দেখা নয়। আবারও হয়তো আসবে এ শহরে, এ বাড়িতে। তাঁরা বেগম সব গুছিয়ে প্রিয়তার রুমে এসে দেখে মন মরা হয়ে বসে আছে। অবশ্য সেদিনের পর প্রিয়তা হাসে নি। একটা মানুষ জিবনের সব না তবুও একট মানুষই যথেষ্ট জিবনটা এলোমেলো করার জন্য। তনিমাও প্রিয়তাদের সাথে যাবে। যদিও তার বাবা মা যেতে দিতে চায়নি তবুও এসময় প্রিয়তার পাশে থাকা দরকার বলে সে নিজেই জিদ ধরে যাচ্ছে। তনিমা রেডি হয়ে এসে প্রিয়তার কাছে আসে। তারপর ৩ জন মিলে সব দেখে নেয় ঠিকঠাক আছে কি না। বাড়ি থেকে বের হতে যাবে এমন সময় হুরমুড় করে ঢুকে পড়ে অনিমা৷ প্রিয়তা অনিমাকে দেখেও কিছু না বলে নিজের মতো চলে যেতে গেলে অনিমা আটকায়। তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞেস করে,

‘কোথায় যাাচ্ছিস?’

প্রিয়তা উত্তর দেয় না। অনিমা তাঁরা বেগমের দিকে তাকিয়ে তাকে ফের শুধায়, ‘কোথায় যাচ্ছো বড় আম্মু? তোমরা নাকি বাড়ি ছেড়ে দিচ্ছো!’

তাঁরা বেগম কিছু বলার আগেই তনিমা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে, ‘হ্যাঁ ছেড়ে দিচ্ছে। তো? এখানে থেকে কি তোদের নাটক দেখতে দেখতে ম’রবে নাকি মেয়োটা!’

অনিমার কথাগুলো সব গলায় আটকে যায়। আসলেও প্রিয়তা এখান থেকে না গেলে হয়তো স্বাভাবিক হতে পারবে না। মাথা নিচু করে সরে দাঁড়ায়। প্রিয়তা চলে যেতে নিলে বলে, ‘জানি কখনো মাফ করতে পারবি না। তবুও যদি কখনো পারিস মাফ করিস।’

প্রিয়তা তাচ্ছিল্যের সাথে হেঁসে পা বাড়ায়। কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা গাড়িতে গিয়ে বসে৷ মুহুর্তের মধ্যেই গাড়ি চলতে শুরু করে৷ অনিমা এক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। তখনই দৌড়ে আসে শিশির। এসে হাঁপাতে হাঁপাতেই জিজ্ঞেস করে, ‘প্রিয়ু কই অনিমা?’

অনিমা ভাঙা ভাঙা ভাবে উত্তরে বলে, ‘চলে গেছে।’

শিশির অবাক হয়৷ মেয়েটা চলে গেলো? তাকে ফেলে? চোখে মুখে ফুটে উঠে একরাশ অসহায়ত্ব। অনিমা হয়তো শিশিরের মনোভাব বুঝতে পারে। তাই তাচ্ছিল্যের সুরে হেঁসে বলে, ‘কি ভাবছেন? মেয়েটা আপনাকে ফেলে চলে গেলো! এটা?’

শিশির অনিমার দিকে তাকায়। অনিমা নিজেই উত্তর দেয়, ‘ভাবলেন কি করে প্রিয়ুকে ঠকানোর পরও ও থাকবে!’

ধপ করে আগুন জ্বলে উঠে শিশিরের মাথায়। রেগে বলে, ‘তুমি কি সাধু? তুমি ঠকাওনি ওকে?’

অনিমা মৃদু হেঁসে মলিন মুখে বলে, ‘হয়তো ঠকিয়েছি। হয়তো বলছি কি! ঠকিয়েছি তো। আমার জীবনের চরম ভুল কি জানেন? আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হওয়া। সেদিন যদি আমি আপনার জোড়ে কবুল না বলতাম! আবেগ প্রশ্রয় না দিতাম! স্বার্থপর না হতাম তবে আজ এমন দিন আসতো না। তবে হ্যা আপনার মায়ের ইচ্ছা কিন্তু পূরন হয়েছে। শান্তশিষ্ট লক্ষী বউমা পাাইছে হা হা হা। লক্ষীর কতগুণ তা উনি এই কয়দিনে বুঝে গেছে। পস্তাতে টাইম লাগবে না। যে কদিন থাকবো সে কদিন আপনার মা’কে শান্তির সংসার পেতে দেবো না। ইটস মাই প্রমিজ।’

গটগট শব্দ তুলে চলে যায় অনিমা। শিশির হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।

__________

দীর্ঘ জার্নি শেষে প্রিয়তারা এসে পৌঁছায় চট্টগ্রামে। ট্রেনের মধ্যেও কোনো কথা বলেনি প্রিয়তা। তনিমা কথা বলার চেষ্টা করলেও প্রিয়তার নিশ্চুপতা খেয়াল করে চুপ হয়ে গেছে। মেয়েটা তো বুকে হাজারটা কষ্ট চাপা দিয়ে চুপ করে আছে। ট্রেন থেকে নেমে একপাশে দাঁড়াতেই ‘উদয়’ বলে কেউ ডাকে। উদয় ডাক অনুসরণ করে সেদিকে তাকিয়ে দৌড়ে যায়। তনিমা আর প্রিয়তাও সেদিকে তাকায়। প্রিয়তা অপরিচিত একটা ছেলে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করতে থাকে। উদয় ছেলেটাকে নিয়ে কাছে আসতেই ছেলেটা পলক সাহেব আর তাঁরা বেগমকে সালাম দেয়। পলক সাহেবও প্রথমে চিনতে না পেরে উদয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। উদয় হেঁসে বলে,

‘আব্বু চিনতে পারোনি তাই না। উমমম আম্মু তুমি…

কথা শেষ করার আগেই তাঁরা বেগম বলে উঠে, ‘প্রিয়ম!’

প্রিয়তা চমকে তাকায়। ‘প্রিয়ম মানে?’ গভীর দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকাতেই প্রিয়তা ভাঙা ভাবে বলে, ‘প্রিয়ম ভাই!’

প্রিয়ম হেসে তাঁরা বেগমকে জড়িয়ে ধরে। তাঁরা বেগম এতদিন পর আদরের ভাগ্নেকে পেয়ে কেঁদে উঠে। প্রিয়ম হেঁসে বলে, ‘আরে মামনি কান্না করো কেন? চলো আম্মু কিন্তু তোমাদের জন্য অপেক্ষা করতেছে।’

তাঁরা বেগম পলক সাহেবের দিকে তাকাতেই তিনি উদয়ের দিকে তাকান। উদয় ভাব নিয়ে বলে, ‘এভাবে তাকানোর কি আছে? ওদের বাসার সাথের ফ্ল্যাটটা আমরা কিনেছি। সে হিসেবে খালামনি ওয়েট করতেই পারে।’

তাঁরা বেগম উদয়ের কান টেনে ধরে বলে, ‘তোকে নিয়ে আর পারলাম না। একবারও বললি না যে ওদের বাসার সাথে বাসা নিয়েছিস।’

‘উউ আম্মু ছাড়ো। তোমাদের সারপ্রাইজ দিলাম।’

প্রিয়ম হেঁসে প্রিয়তার দিকে তাকায়। সাথে সাথেই হাসি মুখ মলিন হয়ে যায়। মেয়েটার মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে গেছে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। তবুও অদ্ভুত রকম এক সৌন্দর্য সারা মুখে বিরাজ করছে। মায়া ভরা মুখে কি এতো মলিনতা মানায়? প্রিয়ম দুষ্টুমি করে বলে, ‘কিরে টুনটুনি অনেক বড় হয়ে গেছিস দেখি। তা চোখ মুখের এ অবস্থা কেন? কার থেকে ছ্যাকা খায়ছিস?’

বলেই হা হা করে হাসতে থাকে। আর বাকি সবার মুখ মলিন হয়ে যায়। প্রিয়ম সেটা খেয়াল করে নিজেও চুপ হয়ে যায়। বুঝতে পারে না কি এমন হলো! উদয় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে, ‘আরে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি আজব? তাড়াতাড়ি বাড়ি চলো।’

বাকি সবাই তাতে সায় দিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। প্রিয়মের মনে প্রশ্ন জাগলেও আর তা জিজ্ঞেস করে না। চুপচাপ ড্রাইভিং সিটে বসে। প্রিয়তা জানালার পাশে বসে বাহিরে তাাকিয়ে থাকে। প্রিয়ম প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে চিন্তামগ্ন হয়ে যায়। আগে যখন প্রিয়তাকে টুনটুনি ডাকতো তখন সে রেগে যেতো। কিছু বলতে না পারলে কেঁদে কেটে পাগল হয়ে যেতো। মূূলত তার নামের সাথে মিলিয়েই সে নাম রেখেছিলো প্রিয়তার। এই পিচ্চি মেয়েটাকে সে অনেক অল্প সময়ই জ্বালাতে পেরেছিলো। পরে একটা ঝামেলার জন্য প্রিয়মরা কখনো ঢাকা যায়নি আর প্রিয়তারাও কখনো চট্টগ্রাম আসেনি। আজ আবার এতগুলো দিন পর সবাইকে এক সাথে পেয়ে সে তো মহাখুশি কিন্তু প্রিয়তার এমন মলিন মুখের কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। তাছাড়া সামনেই ওর এইচএসসি এক্সাম। এ সময় ঢাকা ছেড়ে কেন চট্টগ্রামে তা বুঝে উঠতে পারছে না। এতো শতো ভাবনার মাঝেই গন্তব্যে পৌঁছে গেলো সবাই। গাাড়ি থেকে নামতেই তাঁরা বেগমকে জাপটে ধরে তাহেরা বেগম। বোনকে পেয়ে দুজন সে কি কান্না। কতগুলো বছর পর আবার সবাই একসাথে। দু বোনের কান্না দেখে প্রিয়ম হাই তুলতে তুলতে বলে,

‘তোমরা যেভাবে কান্না করছো মনে হচ্ছে কেউ তোমাদের প্রেমিক ছিনিয়ে নিয়েছে।’

প্রিয়মের কথা শুনে উদয় আর তনিমা ফিক করে হেঁসে দেয়। কিন্তু প্রিয়তার কোনো হেলদুল নেই। মানে মনে হচ্ছে না যে সে এখানে আছে! তাহেরা বেগম প্রিয়মকে চোখ গরম দিয়ে বলে,

‘আজ শুধু বাড়ি চল। দেখাচ্ছি তোকে।’

‘কে যাবে তোমার বাড়ি? আমি তো মামনির বাড়িতে থাকবো। কি মামনি থাকতে দিবে না?’

‘কেন দিবো না? তোরও তো বাড়ি।’

প্রিয়ম ৩২ টা দাঁত বের করে হাসে। সে হাসি দেখে তার মা বলে, ‘দাঁত বের করা হচ্ছে। করো করো। ঝাড়ুর মাইর একটা মাটিতে পড়বে না।’

‘খালামনি শুধু ঝাড়ু দিয়ে পিটাবে? জুতা কষ্ট পাবে তো।’

প্রিয়ম কটমট করে তাকায় উদয়ের দিকে৷ দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘তুই বন্ধু নাকি শ’ত্রু? তোর মতো ভাই থাকার থেকে তো ওই কালাই ভালা।’

‘কালা ডা কে?’

প্রিয়ম দাঁত কেলিয়ে বলে, ‘কেন? ওই যে রাস্তার পাশে থাকে না কুকুরটা।’

উদয় কটমট করে তাকায়। তাহেরা বেগম আর তাঁরা বেগম হেঁসে দেয়। পলক সাহেব তাড়া দিয়ে বলেন, ‘আরে বাইরে আর কতক্ষণ! তাড়াতাড়ি ভেতরে চলো।’

তাহেরা বেগম বোনকে ছেড়ে প্রিয়তার কাছে এগিয়ে আসে। তারপর হেঁসে বলে, ‘আমার মিষ্টি মা টা কেমন আছে? কতদিন দেখিনি তোকে। এমন শুকিয়ে গেছিস কেন?’

প্রিয়তা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে, ‘ভালো আছি খালামনি। তুমি কেমন আছো?’

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো। চল চল ভেতরে যায়।’

প্রিয়ম এতক্ষণে প্রিয়তার হাতের দিকে খেয়াল করে। হাতে ব্যান্ডেজ না থাকলেও সেলাই আছে। ভ্রু কুঁচকে তাকায় প্রিয়ম। হাতে সেলাই কেন? ততক্ষণে প্রিয়তা বাড়ির মধ্যে চলে গেছে। প্রিয়মও পিছু পিছু বাড়িতে ঢোকে।

________

অনিমা সারাদিন কোনো কাজ করে না। যত কাজ শিলা বেগমের একা করতে হয়। অনিমা পারলে আরও অর্ডার করে। শিলা বেগম এ নিয়ে ভীষণ রেগে থাকে৷ অনিমা দুপুরে একটা ভাত ঘুম দিয়ে উঠে বিকালের পর। ফ্রেশ হয়ে রাান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যায়। শিলা বেগম তখন রান্নার সব ব্যবস্থা করতেছে। অনিমা হাই তুলতে তুলতে বলে,

‘কি শাশুড়ি আম্মু কাাজ করতেছেন! করেন করেন। আমার জন্য নুডলস বানায়েন তো। ভীষণ খেতে ইচ্ছা করছে।’

শিলা বেগম রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘তোমার মতো বেয়াদব মেয়ে একটাও দেখিনি। নিজে তো সারাদিন একটা কাজও করো না আবার অর্ডার করতেছো!’

অনিমা দাঁত বের করে বলে, ‘ওমা! আপনার না লক্ষীমন্ত বউমা চায় তো পেয়ে গেছেন তো। এখন লক্ষী বউমার গুণ গুলো দেখবেন না শাশুড়ী মা?’

শেষের কথা গুলো কিছুটা টেনে বলে অনিমা। তারপর শিলা বেগমের কাছে গিয়ে বলে, ‘যে শান্তির সংসারের আশায় এতোটা নিচে নেমেছেন। মন ভেঙেেছেন সে শান্তি ইহজীবনে পাবেন না। হ্যাঁ আমিও দোষী তাই তো আমিও….

কথা শেষ না করে শিলা বেগমের পাশ থেকে একটা গাজর নিয়ে খেতে খেতে রুমে চলে আসে। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে দুর আকাশের দিকে তাকায়। তাার কোনোকালেই ইচ্ছা ছিলো না এমন ব্যবহার করার। কিন্তু হয়তো এরাই দায়ী এমন ব্যহারের জন্য। সে শিশিরের সংসার করবে না ঠিক কিন্তু তার আগে শিলাা বেগমকে জ্বালিয়ে মা’রবে। সে একদিন বলতে বাধ্য হবে ‘প্রিয়তাকে বউ করে আনলেই ভালো হতো।’ প্রিয়তার কথা মনে পড়তেই বুকটা চিনচিনে ব্যাথা করে উঠে। সে কি সুন্দর তার বোনের স্বপ্ন ভেঙে নিজে বসে আছে এই সংসারে। আহারে জিবন! টুপ করে এক ফোটা জল চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়াতেই পেছন থেকে কেউ তার হাত ধরে টান দিয়ে সামনে ফিরিয়েই ঠাস করে থা’প্পড় বসিয়ে দেয়। বিস্ময়ে হতভম্ব অনিমা। ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখে শিশির তাকে থা’প্পড় মে’রেছে। চোখে জল থাকা স্বত্তেও সে তাচ্ছিল্যের সুরে হাসে।

_______

সন্ধ্যার দিকে প্রিয়ম উদয়কে নিয়ে ছাদে আসে। উদ্দেশ্য কিছু প্রশ্নের উত্তর। প্রিয়ম নিজের মনে থাকা প্রশ্ন করে, উদয় সব খুলে বলতেই রাগে ফেটে পড়ে প্রিয়ম। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে রাগে। উদয় নিজেও বলতে বলতে চোখ মুখ শক্ত করে ফেলেছে। দুজনেই নিশ্চুপ। এর মাঝেই ছুটে আসে তনিমা। প্রিয়ম আর উদয়কে দেখে কিছু বলতে না দিয়েই দ্রুত বলে,

‘উদয় ভাইয়া তাড়াতাড়ি নিচে আসো। প্রিয়তা কেমন করতেছে! শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ওর। হসপিটালে নিতে হবে।’

বলেই এক ছুটে চলে যায়। বাকরুদ্ধ প্রিয়ম আর উদয়। দুজনেই ছুট লাগায় প্রিয়তার রুমে। গিয়ে দেখে প্রিয়তা কেমন করতেছে। শ্বাস নিতে পারছে না তা ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। হঠাৎ এমন কেনো হলো তাই কেউ বুঝতে পারতেছে না। তাঁরা বেগম মেয়ের অবস্থা দেখে কেঁদে যাচ্ছে। প্রিয়ম আর এক সেকেন্ডও দেড়ি না করে প্রিয়তাকে কোলে তুলে নেয়। শ্বাসের জন্য মেয়েটা কেমন ছটফট করছে। উদয়ও পিছে পিছে ছুট লাগায়। তাঁরা বেগম আর তনিমা গাড়িতে বসতেই তাদের কাছে প্রিয়তাকে বসিয়ে দেয়। পলক সাহেব বাজারের দিকে গেছেন বলে বাড়ির কোনো খবর সে জানে না। তাহেরা বেগম পলক সাহেবের জন্য থেকে গেলেন। একসাথে উনার সাথে যাবে।

প্রিয়তাকে হসপিটালে এনেছে অনেকক্ষণ। ডক্টর অনেকগুলো টেস্ট দিয়েছেন সবই করিয়েছে। বসে আছে রিপোর্টের অপেক্ষায়। পলক সাহেবও চলে এসেছে। ৩ ঘন্টা পর রিপোর্ট হাতে পেয়ে সেগুলো নিয়েই ডক্টরের কাছে গেলো প্রিয়ম আর উদয়। ডক্টর সব রিপোর্ট দেখে চিন্তিত সুরে বললেন,

‘উনার তো এ্যাজমা। অতিরিক্ত উত্তেজিত হলে, ভয় পেলে উনার শ্বাসকষ্ট হবে। উনাকে যত সম্ভব শান্ত রাখবেন। আর উনার কথায় যা বুঝেছি এবং রিপোর্ট যা বলছে তাতে পেশেন্টের হার্টে প্রবলেম আছে। উনার হার্ট অতিরিক্ত দুর্বল। কোনো প্রকার শক যেনো উনি না পায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। সব সময় হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করবেন। ইন শাহ আল্লাহ উনি সুস্থ থাকবেন।’

প্রিয়ম আর উদয় বাহিরে আসলে সবাই চেপে ধরে ডক্টর কি বলছে তা নিয়ে। প্রিয়ম আর উদয় শুধু এ্যাজমার কথা বলে। আর বলে ডক্টর প্রিয়তাকে সব সময় হাসি খুশি থাকতে বলেছে। কেবিন থেকে প্রিয়তা প্রিয়ম আর উদয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। তারপর চোখ বন্ধ করে নেয়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here