#আপনিময়_বিরহ (০৯)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
__________________
হার্ট বিট বাড়ার সাথে সাথে মুহুর্তেই শ্বাসকষ্টও বেড়ে যায় প্রিয়তার। উত্তেজনায় শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। প্রিয়ম প্রথমে না বুঝলেও প্রিয়তার অস্বাভাবিক ভাব দেখে দ্রুত ছেড়ে দেয়। তারপর প্রিয়তাকে দুহাতে আগলে বসিয়ে দেয় বিছানায়। হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে দেখে প্রিয়ম আরো বেশি ভয় পেয়ে যায়। বার বাার প্রিয়তাকে ডাকতে থাাকে। যখন বুঝতে পারে প্রিয়তা কেন এমন করতেছে তখন নিজেকে সামলে বলে,
‘কাম ডাউন টুনটুনি। শান্ত হ। আমি জাস্ট মজা করেছি। সত্যি বলছি। তুই শান্ত হ।’
প্রিয়তা তবুও জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে যায় প্রিয়ম। দ্রুত উঠে ড্রয়ার চেইক করে। কারণ প্রিয়তা যা কেয়ারলেস তাতে যে সে ইনহ্যালার সাথে করে ঢাকাা নিয়ে যায়নি তা প্রিয়মের বুঝতে বাকি নাই। প্রিয়ম খুঁজে নিয়ে দ্রুত প্রিয়তার মুখের সামনে ধরে। যাদের হার্ট + এ্যাজমা এক সাথে হয় তাদেরকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইনহ্যালার দেওয়া হয়। প্রিয়তা শান্ত হতেই প্রিয়ম আগে এক গ্লাস পানি খায়। তারপর রাগী চোখে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ইডিয়ট একটা। কি সমস্যা তোর? না বুঝেই লাফ দিস কেন? তোর মতো হাজারটা প্রিয়তা আমার পিছে ঘুরে আমার তোকে প্রপোজ করা লাগবে? তোরে আমার মন চায়…
রেগে বেড়িয়ে যায় প্রিয়ম। প্রিয়তা থতমত খায়। এ কেমন লোক? নিজেই প্রথমে গোল্ডেন ওয়ার্ড বলে উত্তেজিত করে দিলো আর এখন নিজেই তাকে দোষ দিচ্ছে? খা’টাশ একটা। প্রিয়তা মনে মনে কয়েকদফা বকা দিলো প্রিয়মকে। তারপর উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লো।
__________________
সেদিনের পর কেটেছে অনেকগুলো দিন। প্রিয়ম আর উদয় নিজেদের পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার ছোটখাটো বিজনেস দেখতেছে। এসব নিয়েই দুজন ব্যস্ত থাকে। দুজনের দিনই ভালো কাটছে। প্রিয়তাও নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে অনেকটা। প্রিয়তাদের রেজাল্টও পাবলিশড হয়ে গেছে। প্রিয়তা আর তনিমা দুজনেই প্লাস মার্ক পেয়েছে। তনিমা এখনো তাদের বাড়িতে। উদয়কে ভালোবেসে সে পুড়ছে আরেক দহনে। লোকটা তাকে ভালোবাসে না কিন্তু প্রিয়তা বলে বাসে। এমন দেবদাসের প্রেমে সে পড়লো কেমনে আল্লাহ মালুম। তনিমা বসে বসে আকাশ দেখছে আর উদয়ের কথা ভাবছে। ঠিক সেসময়েই ফোনটা বিকট এক শব্দে বেজে উঠলো। তনিমা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফোনের দিকে একবার তাকিয়ে নিজের কাজে মন দিলো। সে জানে এখন প্রিয়তা ছাড়া কেউ কল দেবে না। মন খারাপ আর আলসেমিতে উঠে গিয়ে কল ধরে না। পরপর কয়েকবার ফোন বেজে কেটে যায়। পরের বার বিরক্তিতে গিয়ে ফোন তুলতেই চোখ ছানাবড়া। উদয়! তাকে এতো বার কল দিছে কেন হঠাৎ! তার ভাবনার মাঝেই ফোন আবার বেজে ওঠে। ভয়ে ভয়ে ফোন উঠাতেই উদয়ের ঝাড়ি। তনিমা ভয়ে বুকে থু থু দিয়ে বলে,
‘এ-এমন ঝাড়ি মারো কেন? আজব।’
‘না তোরে ঝাড়ি মারবো কেন! তোরে তো আদর করবো।’
তনিমা বিড়বিড় করে বলে, ‘সেইটা তোমার দ্বারা কখনোই হবে না।’
উদয় ধমক দিয়ে বললো, ‘বিড়বিড় করিস কেন? জোড়ে বল।’
‘আব না মানে কিছু না৷ তুমি কল দিচ্ছো যে হঠাৎ?’
‘তোরে নিয়ে আসবো। থাকবো না আমি। আগে ভাগে রেডি হয়ে থাক। আমি ট্রেনে আছি।’
তনিমা লাফায় উঠে। উত্তেজিত হয়ে বলে, ‘সত্যি বলতেছো?’
উদয় সন্দিহান কন্ঠে বলে, ‘এতো খুশি হয়লি কেন?’
‘আজব খুশি হবো না! কত্তো দিন পর সবাইকে দেখবো।’
‘হয়ছে নাচিস না। জলদি রেডি হ, আমি চলে আসছি কাছাকাছি।’
‘ওকে’ বলেই তনিমা ফোন কেটে নাচতে নাচতে রেডি হতে গেলো। ফোন কেটে নিঃশব্দে হাসে উদয়৷ মেয়েটা অনেক দুষ্টু কিন্তু মনটা ভীষণ রকমের ভালো৷
প্রিয়তা আর তনিমা দুজনেই ভাগ্য ভালো থাকায় একই ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে গেছে। কাল থেকেই তাদের ভার্সিটি লাইফ শুরু। প্রিয়ম আর উদয়ও সেই ভার্সিটিতেই আছে। তনিমার বাবা মা যেতে দিতে না চাইলেও তনিমার জেদ আর প্রিয়তার বাবার জন্য যেতে দিতে বাধ্য হলেন। উদয় বাড়িতে একটুও দেড়ি করেনি৷ শুধু তনিমাকে নিয়েই বের হয়ে আসছে। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। তনিমার ভীষণ মায়া লাগলো। বললো,
‘ভাইয়া একটু রেস্ট নিয়ে বের হও।’
‘না দ্রুত যাওয়া লাগবে। চল। টিকেট কাটা আছে। প্রয়োজন হলে স্টেশনে বসা যাবে।’
তনিমা আর কথা বাড়ায় না। উদয়ের সাথে পা মিলিয়ে হেঁটে আসে। এরপর দুজনে স্টেশনে এসে শোনে আরো আধাঘন্টা পর ট্রেন আসবে। তাই দুজনেই অপেক্ষা করে বেঞ্চে বসে। তনিমা নিজের মতো বসে আশপাশ পর্যবেক্ষণ করছে আর উদয় ফোনের ভেতর ব্যস্ত। অন্য সময় হলে তনিমা অনেক জ্বালাতো উদয়কে। কিন্তু উদয়কে দেখে তার আর জ্বালাতে মন চাইলো না। এমনিতেই সেই চট্টগ্রাম থেকে জার্নি করে এসে আবার এখনি যেতে হচ্ছে। ক্লান্ত নিশ্চয়! তনিমার ভাবনার মাঝেই একটা মেয়ে ছুটে এসে উদয়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। তনিমা ভয়ে লাফ দিয়ে উঠে। উদয় হেঁসে দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। তনিমা মেয়েটার হাত ধরে টেনে তুলে। বলে,
‘এসব কি ধরনের অসভ্যতা? চোখে দেখেন না নাকি! মানে ছেলে দেখলেই আপনাদের ঝাঁপাই পড়াা লাগে!’
মেয়েটা কিছু বলার আগেই উদয় তনিমার থেকে মেয়েটার হাত ছাড়িয়ে নেয়। রাগী কন্ঠে বলে, ‘সিনক্রিয়েট কেন করছিস? লোকজন দেখছে।’
তনিমা মুহুর্তেই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। মেয়েটা যখন ঝাপাই পড়লো তখন সেটা কিছু ছিলো না আর সে বলতেই সেইটা সিনক্রিয়েট হয়ে গেলো! কিছু বলতে যাবে তখনই উদয় আবার বললো, ‘আর ‘ও’ আমার গার্লফ্রেন্ড সো আমার ওপর ঝাঁপাই পড়বে নাকি অন্য কিছু করবে এতে তোর নাক গলানোর দরকার নাই।’
মুহুর্তেই চোখ ছলছল করে উঠে তনিমাার। এটা তাহলে তার উদয় ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড! তনিমা বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে নেয়। নিভু কন্ঠে মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘সরি আপু। বুঝতে পারিনি।’
রিনি বিরক্তি স্বরে বলে, ‘ইট’স ওকে। নেক্সট টাইম কাকে কি বলতেছো বুঝে বলো।’
তনিমা মাথা নাড়াতেই ট্রেনের আওয়াজ শুনতে পায়। রিনি আর উদয় গল্প করতে করতে হাঁটা লাগায়। তনিমা মাথা উচু করে সেদিকে তাকিয়ে চোখ মুছে নেয়। একটু এগিয়ে পেছন থেকে বলে, ‘ভাইয়া আমি বাড়ি চলে যায়! আসলে ভালো লাগতেছে….
কথা শেষ করার আগেই উদয় বলে, ‘আজব! এখন কি রাস্তাতেও তোর ঢঙ দেখা লাগবে!’
তনিমা হয়তো প্রথমবারের মতো উদয়ের বলা কথাগুলোতে কষ্ট পেলো। এর আগেও বহুবার বহু কথা বললেও তা কখনোই গায়ে লাগায়নি সে। আজ হঠাৎ করেই ছোট মনে এতো কষ্ট হচ্ছে কেন? তনিমা মুচকি হেঁসে বলে,
‘যাতে ঢঙ দেখতে না হয় তাই জন্য বাড়ি ফিরে যেতে চাচ্ছি।’
‘দেখ এমনিতেই আমি অনেক ক্লান্ত। এসব ছেড়ে চুপচাপ চল প্লিজ।’
তনিমা একবার উদয় আর একবার রিনির দিকে তাকালো। তারপর কোনো কথা না বলে চুপচাপ নিজের লাগেজ নিয়ে ট্রেনে উঠে পড়লো। উদয় আর রিনি পাশাপাশি বসেছে। তনিমা উদয়ের সামনে বসে চুপচাপ কানে হেডফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। হয়তো চোখ খুললেই টুপ করে চোখ থেকে জল গড়াবে। কানে হেডফোন লাগানো অবস্থাতেই ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ভেসে উঠে। মনে মনে আওড়ায়,
‘আজ নিজেকে বড্ড বেহায়া মনে হচ্ছে উদয় ভাই। এতোদিন তোমার হাজার কথা শুনেও আমি মজা ভেবে উড়িয়ে দিয়েছি, যা আমার নিজেকে কোনো কালেই মনে হয়নি আজ তা মনে হচ্ছে। সবার একটা করে আপনিময় বিরহ থাকে। আজ বুঝি তা টের পাচ্ছি। প্রিয়তার যেমন শিশির ভাইকে নিয়ে বিরহ তেমনই আমার তুমিময় বিরহ। এ বিরহ কাঁটার নয়।’
_____________
তনিমাদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে যায়। তনিমা পুরো সময় চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। চোখ মেলতেই সামনে দৃষ্টিগোচর হয় তার হৃদয় পোড়ানো এক দৃশ্য। রিনি সযত্নে তার মাথা উদয়ের ঘাড়ে দিয়ে আছে আর উদয় তা আবেশে আগলে নিয়ে আছে। রিনি ঘুমন্ত। উদয় জেগে আছে। তাদের স্টেশন আসতেই উদয় আস্তে করে রিনিকে ডাকে। এরপর ৩ জন নেমে বাড়িতে আসে। প্রিয়তা তনিমার আশায় লিভিং রুমে বসে আছে। প্রিয়মও আছে। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় তাহেরা বেগমও চলে এসেছে। তাঁরা বেগম আর তাহেরা বেগম গল্প করছে। প্রিয়তা কার্টুন দেখতেছে। প্রিয়ম ফোন ঘাটতেছে। সে সময় কলিং বেল বেজে ওঠে। প্রিয়তা দৌড়ে গিয়ে খুলে দিতেই দেখে উদয় আর তনিমার সাথে সাথে রিনিও দাঁড়িয়ে আছে। তনিমার মুখটা শুকনো। তনিমা মলিন মুখেই হাসি দিলো। প্রিয়তা তনিমাকে জড়িয়ে ধরে। তারপর এতো এতো কথাা বলতে বলতে ভেতরে ঢুকে। রিনিকে এতো রাতে বাড়িতে দেখে তাঁরা বেগম এগিয়ে আসেন। বিনয়ের সাথে বলে,
‘আরে রিনি তুমি এতো রাতে! এখানে!’
রিনি আহ্লাদী কন্ঠে বলে, ‘আন্টি আমি তো ঢাকা গিয়েছিলাম। আজ উদয়ও গেছিলো তাই ওর সাথেই ফিরলাম। এতো রাতে আর বাড়ি যাবো না। আজ তোমাদের এখানে থাকলে কি খুব প্রবলেম হবে?’
তাঁরা বেগম হেঁসে বলেন, ‘আরেহ না। সমস্যা নেই মা। তুমি থাকো।’
প্রিয়তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘প্রিয়তা ওকে রুম দেখিয়ে দাও।’
প্রিয়তা চোখ মুখ কুঁচকায়। এই মেয়েকে তার মোটেই সহ্য হয় না। গায়ে পড়া মেয়ে একদম। তার ভাই যে এমন একটা বান্ধবী পুষে কেমনে আল্লাহ মালুম। প্রিয়ম ভ্রু কুঁচকে তাকায় রিনির দিকে। উদয়ের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বোঝায় ‘আজ তোমারে একবার হাতে পাই চান্দু এরপর বুঝবা।’ উদয় সরাসরি সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে তাঁরা বেগমকে বলে,
‘আম্মু খায়তে দাও। ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।’
প্রিয়তা তনিমাকে নিজের রুমে যেতে বলে রিনিকে রুম দেখিয়ে দিয়ে আসে। এসে দেখে তনিমা তখনো ওভাবেই বসে আছে। অন্যমনস্ক বুঝেই প্রিয়তা তনিমার কাছে আসে। ঘাড়ে হাত রাখতেই চমকে তাকায় তনিমা। প্রিয়তাকে দেখে সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বলে,
‘আরে তুই! আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। দাঁড়া ফ্রেশ হয়ে আসি।’
তনিমা চলে যেতে নিলে প্রিয়তা আটকায়। শান্ত স্বরে বলে, ‘কি হয়ছে তনু? মন খারাপ কেন তোর?’
কান্না গুলো উগড়ে আসতে চাইলে অনেক কষ্টে নিজেকে আটকায় তনিমা। হেঁসে বলে, ‘ধুর যা। কি বলিস! মন কেন খারাপ হবে? ঠিক আছি আমি। ছাড়!’
প্রিয়তা হুট করেই তনিমাকে জড়িয়ে ধরে। তনিমা আর না পেরে ফুঁপিয়ে উঠে। প্রিয়তা মাথায় হাত বুলাতে থাকে। তনিমাকে কিছুটা সময় দিয়ে বসায়। তারপর নিজে ফ্লোরে হাঁটু মুড়ে বসে বলে, ‘কান্না করছিস কেন তনু? কি হয়ছে? বল।’
তনিমা কান্না করতে করতে মলিন হেঁসে বলে, ‘তোর মতো আমারও বিরহ এসে গেছে রে।’
ধ্বক করে ওঠে প্রিয়তার বুক। ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বলে, ‘কি বলছিস এসব? পাগল হলি নাকি!’
তনিমা উত্তর দেয় না। প্রিয়তার হাত সরিয়ে নিজের জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলে, ‘তার জীবনে এখন ভালোবাসার মানুষ আছে। তার কাছে সবার ভালোবাসার মূল্য আছে শুধু আমার নেই। আমার ভালোবাসা, কষ্ট, অনুভূতি সবকিছুই তার কাছে ঢঙ ব্যতীত অন্য কিছু নয়।’
আর এক মুহুর্তও দাঁড়ায় না তনিমা। ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। প্রিয়তা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে পড়ে ফ্লোরে। তার ভাই অজান্তেই এই মেয়েটার মন ভেঙে গুড়িয়ে দিলো না তো?
গভীর রাত অথচ ঘুম নেই ক’জন মানুষের চোখে। একই পরিবারের ৬ জন নিরবে কষ্ট চাপিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যার যার কষ্ট মেলে দেওয়ার জায়গায়। সবারই একটা করে আপনিময় বিরহ। কারো না পাওয়ার, কারো পেয়ে হারানোর, আবার কারো নিজের ভুলের আফসোস। এদের মাঝেও যোজন যোজন দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে ২ জন। সবারই নিরবতা জানান দিচ্ছে অনেক অনেক কথা। কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারছে না।
_______________
সকাল সকাল উঠে প্রিয়তা আর তনিমা রেডি হয়ে নিলো। প্রিয়ম, উদয় আর রিনিও যাবে। তনিমা কাল যতটা চুপচাপ ছিলো আজ আবার চঞ্চল হয়ে উঠেছে। প্রিয়তার থেকেও তো বড় শক সে পায়নি। উদয় তো তার কখনো ছিলোই না আর শিশির তো প্রিয়তার ছিলো তবুও ওদের বিচ্ছেদ হয়েছে। প্রিয়তা নিজেকে সামলে উঠতে পারলে সে কেনো পারবে না? হোক অভিনয় তবুও সে নিজের অস্তিত্ব বিলীন করবে না। উদয়, রিনি, তনিমা, প্রিয়তা নাস্তা শেষ করে উঠতেই প্রিয়ম হাজির। কফি কালার শার্ট পড়ে আছে। উপরের দুইটা বাটন খোলা। সিল্কি চুল গুলো কপালের ওপর পড়ে আছে। যে কেউ দেখলেই একদফা ক্রাশ খেয়ে পেট ভরাবে। আজকাল প্রিয়ম বেশি একটা প্রিয়তাকে জ্বালায় না। আগের চেয়ে গম্ভীর হয়ে গেছে। এমন গম্ভীর তো সে রেগে গেলে হয় তবে আজকাল কেনো গম্ভীর থাকে তা প্রিয়তার অজানা। প্রিয়তা শার্টের বাটনের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলে,
‘শার্টের বাটন খুলে রেখে কি মেয়েদের ইমপ্রেস করার চেষ্টা করতেছেন নাকি নিজেকে গু’ন্ডা প্রমাণ করতেছেন?’
প্রিয়ম গম্ভীর মুখেই ফোনে স্ক্রল করতে করতে বললো, ‘তোর জানার কি দরকার? নিজের কাজ কর। আর তাহসিন প্রিয়ম কখনো মেয়েদের ইমপ্রেস করতে যায় না। যার ইচ্ছা সে এমনিতেই ইমপ্রেস হয়ে যায়।’
বলেই উল্টো ঘুরে গটগট করে বেড়িয়ে যায়। তনিমা ‘থ’ মেরে যায়। একটু জোড়েই বলে ফেলে, ‘এটা কি সত্যিই প্রিয়ম ভাই ছিলো? না মানে এতো গম্ভীর টাইপ কবে হলো?’
উদয় ভ্রু কুঁচকে তাকায় তনিমার দিকে। প্রিয়তা ভেংচি কেটে তনিমাকে বলে, ‘এতো জেনে কি করবি? চল তো।’
তনিমা ঠোঁট উল্টে প্রিয়তার সাথে পা বাড়ায়। বাইরে প্রিয়ম গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতেছে। প্রিয়মকে দেখেই প্রিয়তা ভেংচি কাটে। সোজা গিয়ে পেছনে বসে পড়ে। একে একে সবাই গাড়িতে উঠতেই একটা মেয়ে দৌড়ে আসে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
‘প্রিয়ম ভাই মামি বলছে তোমার সাথে ভার্সিটি যেতে কিন্তু এখানে তো জায়গা নাই। তাহলে?’
প্রিয়ম শান্ত দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একবার প্রিয়তার দিকে তাকায়। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। প্রিয়ম উদয়কে বলে,
‘তুই ওদের নিয়ে যা। আমি সিমিকে নিয়ে বাইকে করে আসতেছি।’
উদয় কিছু বলতে গিয়েও বলে না৷ শুধু মাথা নাড়ায়। সিমি তো খুশিতে লাফ দিয়ে উঠে। প্রিয়তা বিড়বিড় করে বলে, ‘ঢঙ দেখলে বাঁচি না।’
তনিমা ঠোঁট চেপে হাসে। তারপর আস্তে করে বলে, ‘বাহ বাহ উদয় ভাইয়ের রিনি আর প্রিয়ম ভাইয়ের সিমি।’
প্রিয়তা রাগী দৃষ্টিতে তাকায় তনিমার দিকে। তনিমা ফিক করে হেঁসে দেয়।
ভার্সিটিতে প্রিয়তাদের আগেই প্রিয়ম চলে আসছে। সিমিকে নিজের ক্লাস দেখিয়ে দিয়ে এসে দেখে প্রিয়তারা চলে আসছে। প্রিয়মের কাছে আসতেই একদল ছেলে মেয়ে এগিয়ে আসে। উদয় রিনিকে বিদায় করে প্রিয়তাদের কাছে এগিয়ে আসে। প্রিয়ম চোখ মুখ খিচে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। তার মধ্যেই একটা ছেলে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলে,
‘প্রিয় না?’
প্রিয়তা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই ছেলেটা হেঁসে বলে, ‘না মানে প্রিয়তা!’
প্রিয়তা অবাক কন্ঠে বলে, ‘আপনি জানলেন কেমনে? আর প্রথমে প্রিয় বললেন কেন?’
‘প্রিয়’ ডাকটা শুনেই প্রিয়তার সেসব চিঠির কথা মনে পড়ে। প্রশ্নের ঠ্যালায় মাথায় জট পেকে যায়। কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রিয়ম সেখান থেকে চলে যায়…
চলবে…