আফিম_বড্ড_নেশালো(০২),০২,০৩

0
1207

#আফিম_বড্ড_নেশালো(০২),০২,০৩
#লেখিকা_মাহযাবীন
#পর্বঃ০২

নিজ বিছানায় বসে ল্যাপটপ কোলে নিয়ে অফিসের কাজে ব্যস্ত আফিম।এমন সময়েই দরজার কাছে দাঁড়ানো একজন গৃহপরিচারিকার কন্ঠস্বর শুনতে পায় সে।
-স্যার,নাফিয়া ম্যাম দেখা করতে চাইছে আপনার সাথে।
কথাটি শুনে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না আফিম।ল্যাপটপে দৃষ্টি স্থির রেখেই সে বলে ওঠে,
-আসতে বলো।
আফিমের আদেশ পেয়ে নাফিয়াকে ইশারা করতেই নাফিয়া আফিমের কক্ষে প্রবেশ করে।বেশ বড়সড় রুমের ঠিক মাঝ বরাবর একটি সাদা রঙের বিছানা পাতানো।আর বিছানার ডান দিকে আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপে ব্যস্ত একজন যুবক।ছেলেটা দেখতে শ্যামবর্ণা,টানা টানা চোখ তার,সরু নাক ও মাঝারি আকারের ঠোঁট।মোট কথা দেখতে সুদর্শন বলা যায়। স্বাথ্য নাও মোটা আবার নাও চিকন।উচ্চতা ৫ ফিট ৮ ইঞ্চি হবে হয়তো।ছেলে টা বসে আছে দেখে নাফিয়া উচ্চতা টা ঠিক-ঠাক আঁচ করতে পারলো না।
সে মনে একরাশ ভয় ও জড়তা নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আফিমের পা হতে মাথা অব্দি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে চলছে।কিভাবে কথা গুলো বলা শুরু করবে বুঝতে পারছে না বিধায় এই মুহূর্তে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আফিমকে দেখাটাই শ্রেয় বলে মনে হচ্ছে নাফিয়ার।
নাফিয়ার কিছু বলার অপেক্ষায় ছিলো আফিম কিন্তু তার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ল্যাপটপে দৃষ্টি স্থির রেখেই আফিম বলে ওঠে,
-wanna say something?[কিছু বলতে চাও?]
আফিমের কন্ঠস্বর কানে আসতেই মৃদু কেঁপে ওঠে নাফিয়া।জিহ্বা দ্বারা নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে নিম্ন স্বরে বলে ওঠে,
-আমার যদি ভুল না হয় তবে আপনিই সেদিন আমায় সাহায্য করেছিলেন।নিজ বাড়িতে আমায় ঠাঁই দিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছেন আবার দু’দিন যাবৎ আমার সেবাশুশ্রূষার ব্যবস্থা করেছেন।এসবের জন্য আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ।অনেক ধন্যবাদ।
নম্র স্বরে কথাগুলো বলে ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে আফিমের দিকে তাকিয়ে আছে নাফিয়া।আফিম কথাগুলো শুনে এক পলক তাকায় নাফিয়ার দিকে। অতঃপর ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে বলে ওঠে,
-এতো সস্তা জিনিস আফিম ইবনান নেয় না।
আফিমের কথা কানে আসতেই ব্রুদ্বয়ের মাঝে মৃদু ভাজ পরে নাফিয়ার।প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে সে চেয়ে আছে আফিমের দিকে।এবার আফিম ল্যাপটপ থেকে চোখ উঠিয়ে নাফিয়ার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে।দৃষ্টি স্থির রেখে বলে ওঠে,
-আমি তোমার জন্য এতো কিছু করলাম আর তুমি আমায় শুধু মাত্র একটা “ধন্যবাদ” দিচ্ছো?এতো সস্তা ডিল!!
এমন কিছু শুনার জন্য নাফিয়া বিন্দু পরিমাণ প্রস্তুত ছিলো না।সে বিন্দু পরিমাণ আশা করেনি যে আফিম এমন কিছু বলে বসবে!
কিন্তু সমস্যা আসলে আফিমের বলা কথাটি নয় বরং সমস্যা হচ্ছে নাফিয়ার কাছে এই মুহূর্তে নিজের থাকা খাওয়ার টাকাই নেই সেখানে আফিমকে দামী কিছু দিয়ে ধন্যবাদ বলা অসম্ভব+অসম্ভব মানে ডাবল অসম্ভব। কি করবে এখন সে?
চোখ-মুখে স্পষ্ট অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে নাফিয়ার।সে ঠোঁট উল্টে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে আফিমের দিকে।নাফিয়ার এমন চুপসে যাওয়া মুখ দেখে বহু কষ্টে নিজের হাসি চাপিয়ে রেখে এক ব্রু উঁচু করে আফিম গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে,
-এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
-না মানে আসলে বলছি যে! আমি তো এখন কিছু দিতে পারবো না আপনাকে।দামী ধন্যবাদটা নাহয় তোলা থাক?
-তোলা রাখা আমার ডিকশনারিতে নেই।আমি তোমাকে সাহায্য করেছি,তোমারও উচিৎ আমার জন্য কিছু করা।Cause i believe in give and take[কারণ আমি দেওয়া-নেওয়াতে বিশ্বাসী]
আফিমের কথায় যুক্তি খুঁজে পাচ্ছে নাফিয়া।আসলেই লোকটা ওর জন্য এতো কিছু করলো,ওর ও তো উচিৎ লোকটার জন্য কিছু করা।কিন্তু ও কি করবে!টাকা থাকলে হয়তো দামী কোনো উপহার দেওয়া যেতো কিন্তু এখন তো টাকাও নেই।কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে নাফিয়া মাথা নিচু করে বলে ওঠে,
-আমার কাছে একটুও টাকা নেই,কি করে দামী ধন্যবাদ দিবো?
নাফিয়ার বাচ্চামীতে হাসি পাচ্ছে আফিমের।মেয়েটা নিজে তো বাচ্চাই কথাও বলছে ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো।কিন্তু তার হাসা বারণ।বহু কষ্টে হাসি আটকিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-একটা উপায় আছে!
সাথে সাথে আফিমের চেহারা পানে চোখ তুলে তাকায় নাফিয়া।ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে উৎসুক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-কি উপায়?
-উম,তুমি চাইলে ৬ মাস আমার কেয়ার টেকারের জব করতে পারো।মানে তোমার কাজ থাকবে সারা দিন-রাত আমার সাথে থাকা আর আমার সব প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখা।
আফিমের কথা শেষ হতেই মন খারাপের স্বরে নাফিয়া বলে ওঠে,
-রাতেও আপনার সাথে থাকতে হবে?
-ঐ আমার ঘুমানোর আগ পর্যন্ত।আমি ঘুমিয়ে গেলে তুমি তোমার রুমে গিয়ে ঘুমাতে পারবা।
এবার একটু নিশ্চিন্ত হয় নাফিয়া।একে তো তার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে গেলো সেই সাথে দামী ধন্যবাদ দেওয়াও হয়ে যাবে।ঠোঁটে স্বস্তির হাসি টেনে নাফিয়া বলে ওঠে,
-আমি রাজি।
-স্যালারি কত লাগবে?
-লাগবেই না।স্যালারি নিলে তো আর এটা আমার তরফ থেকে আপনাকে দেওয়া দামী ধন্যবাদ হবে না।

ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে আফিমের।তার আর বুঝতে বাকি রয় না যে মেয়েটা আর যাই হোক লোভী নাহ।সে নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
-ঠিক আছে,যেতে পারো।কাল থেকে কাজ শুরু করবা।
নাফিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে আফিমের কক্ষ ত্যাগ করে।

!!
প্রতিদিন সকালের ন্যায় আজও ঘড়ির কাটা ৫ঃ৩০ এ এসে থামতেই আফিমের এলার্ম বাজতে আরম্ভ করলো।এক চোখ খুলে এলার্ম বন্ধ করে নিজের ফোন হাতে নেয় সে।উদ্দেশ্য কিছুটা সময় ফোন ঘেঁটে তারপর ফ্রেশ হতে যাবে।কিন্তু তা আর হলো না।ফোনের লক খোলা হতে না হতেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পায় আফিম।এ সময় তার কক্ষে কে আসবে! ভাবতে ভাবতেই সে বলে উঠলো,
-Come in.
আফিমের অনুমতি পেয়ে কক্ষে প্রবেশ করে নাফিয়া।হাতে কফির মগ ও ঠোঁটে হাসি নিয়ে আফিমের সামনে বরাবর এসে দাঁড়ায় সে।
-আসসালামু আলাইকুম,গুড মর্নিং স্যার।
নাফিয়া যে তার ডিউটি শুরু করে দিয়েছে তা বোধগম্য হলো আফিমের।বুঝতে পেরে বলে ওঠে,
-How do you know when i wake up?[তুমি জানলে কি করে আমি কখন ঘুম থেকে উঠি?]
-গতকালই অন্য সার্ভেন্টদের থেকে জেনে নিয়েছি আপনার সমন্ধে।কারণ আজ থেকে তো সব আমিই করবো।
-Good.
নাফিয়া উত্তরে কিছু না বলে ঠোঁটে হাসি নিয়ে কফিটা আফিমকে এগিয়ে দিতেই আফিম বলে ওঠে,
-ফ্রেশ না হয়ে আমি কফি খাই না।
-ফ্রেশ হতে হতে তো কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে!
হতাশ গলায় বলে ওঠে নাফিয়া।আফিম হাই তুলতে তুলতে বিছনা থেকে নেমে বলে ওঠে,
-Go and get another cup of coffee.[যাও,আরেক কাপ কফি নিয়ে এসো]
নাফিয়াও সম্মতি দিয়ে আরেক কাপ কফি বানাতে চলে গেলো।আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।তার এ হাসিটা মোটেও সুবিধের নয়।
আরেক কফি নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করতেই নাফিয়া দেখতে পেলো আফিম আয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে তার চুল ঠিক করছে।নাফিয়া কফি নিয়ে আফিমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আফিম তার দিকে না তাকিয়েই কফির কাপ নিজের হাতে তুলে নিয়ে বলে ওঠে,
-আমি কেমন কফি পছন্দ করি জেনে নিয়েছিলে?
-যে প্রতিদিন বানায় সেই বানিয়েছে তাই আমি আর জিজ্ঞেস করিনি।
নাফিয়ার কথায় এবার তার দিকে তাকায় আফিম। বলে ওঠে,
-কাজ টা এখন তার নাকি তোমার?
-উম,আমার।
কফির মগ টা নাফিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে আফিম বলে ওঠে,
– I hope you know what you have to do now! [আশা করি তুমি জানো এখন তোমার কি করতে হবে!]
উত্তরে নাফিয়া কিছু না বলে মনে একরাশ বিরক্তি নিয়ে চলে যায় কিচেনে আরেক কাপ কফি বানাতে।নাফিয়া কক্ষ ত্যাগ করতেই ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে নেয় আফিম।মনে মনে বলে ওঠে,
“এখন তো মাত্র শুরু।খেলা তো ধীরে ধীরে জমবে।”
নিজের হাতে কফি বানিয়ে নিয়ে আফিমের কক্ষে প্রবেশ করে নাফিয়া।কক্ষে প্রবেশ করে পুরো কক্ষে চোখ বুলাতেই অবাক হয়ে যায় সে।পুরো কক্ষের কোত্থাও আফিম নেই।অর্থাৎ ছেলেটা জগিং এর জন্য বেড়িয়ে পরেছে।রাগে-দুঃখে গা জ্বলে যাচ্ছে নাফিয়ার।তার মতো অলস মেয়ে এই ছেলের কথা মতো ৩ বার এই এক কফির পেছনে শ্রম দিলো কিন্তু ছেলেটা এই কফি খেলোই না।যদি খাওয়ার ইচ্ছা নাই থাকে তাইলে তাকে দিয়ে এভাবে খাটালো কেন! রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নাফিয়া মনে মনে বলে ওঠে,
“এর শোধ আমি শীগ্রই নিবো মিঃআফিম ইবনান।শেখ নাফিয়া কি জিনিস তা শীগ্রই টের পাবেন”

চলবে।

#আফিম_বড্ড_নেশালো_০২
#লেখিকা_মাহযাবীন
#পর্বঃ০৩

আফিমের সাথে নাফিয়াও তার পেছন পেছন আফিমের অফিসে প্রবেশ করে।অফিসে আফিমের পা পড়তেই একে একে সকল কর্মীরা উঠে দাঁড়িয়ে তাকে সালাম দিচ্ছে।আফিম সবার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি উপহার দিয়ে নিজ ক্যাবিনে প্রবেশ করে।এ কক্ষটি বেশ বড়সড়।কক্ষের বাম দিকে কোনো দেওয়াল নেই।পুরোটা গ্লাস দিয়ে আটকানো।বাইরের সবকিছু এখান থেকে স্বচ্ছ দৃশ্যমান।পুরো কক্ষে চোখ বুলিয়ে নাফিয়ার মন মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ।কক্ষের সব কিছু সাদা ও সোনালী রঙের।নাফিয়ার বুঝতে বাকি রইলো না যে আফিমের পছন্দের রং সাদা।
নাফিয়ার মুগ্ধ নয়ন কক্ষের প্রতিটি জিনিস দেখতে ব্যস্ত কিন্তু অন্য একজন অবাক চোখে তাকেই দেখে চলছে।বিষয়টি নাফিয়া লক্ষ্য না করলেও আফিমের চোখ এড়ায় না।সে রিয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-রিয়াদ,গতকাল তোমায় একটা ল্যাহেঙ্গা ডিজাইন দিয়েছিলাম।তার কাজ কত দূর?
আফিমের কন্ঠস্বর কানে আসতেই তৎক্ষনাৎ নিজের দৃষ্টি নাফিয়ার থেকে সরিয়ে আফিমের দিকে আবদ্ধ করে রিয়াদ।নিজেকে সামলে নিয়ে ভীতু স্বরে বলে ওঠে,
-আসসালামু আলাইকুম স্যার,কাজ একটু বাকি আছে।
আফিম গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে,
-দুপুরের মাঝে কমপ্লিট চাই।
রিয়াদ মাথা নিচু করে বলে ওঠে,
-ওকে স্যার।
কথাটি বলে রিয়াদ আফিমের কক্ষে পাতানো সাদা সোফাটিতে ল্যাপটপ নিয়ে বসতে যাবে ঠিক তখনই আফিম বলে ওঠে,
-রিয়াদ,এখন থেকে তুমি আমার পাশের ক্যাবিনে বসে কাজ করবে।
-কিন্তু স্যার?
রিয়াদকে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই আফিম বলে ওঠে,
-আজ থেকে অফিসে আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় সব কাজ করবে মিস.শেখ।তাই তোমার এখন থেকে আমার কক্ষে থাকার প্রয়োজন নেই।তুমি অফিসের কাজ গুলোয় মনোযোগী হও।
রিয়াদ অসহায় চোখে তাকিয়ে আফিমের কথা গুলো শুনে নিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো নাফিয়ার দিকে।এইটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে এসে তার আর তার কলিজার স্যারের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করছে ব্যাপার টা মানতে পারছে না রিয়াদ।এতো বছর ধরে সব সময় সে আফিমের সাথে সাথে থেকেছে।এখন কিনা তার বদলে এই মেয়ে থাকবে তার স্যারের সাথে!রাগ-দুঃখ নিজের মাঝে চেপে নিয়ে আফিমের কক্ষ ত্যাগ করলো রিয়াদ।
বিয়াদ কক্ষ ত্যাগ করার পর এতোক্ষণে নাফিয়ার মুখে কথা ফুটলো।সে বলে উঠলো,
-আপনার ক্যাবিন টা ভীষণ সুন্দর।
উত্তরে আফিম গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
-তোমাকে এখানে সৌন্দর্য উপভোগের জন্য নিয়ে আসা হয়নি মিস.শেখ।
কথাটি বলে নিজের হাতের ঘড়িটির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আফিম।সময় দেখে নিয়ে সে বলে ওঠে,
-Now it’s time to drink my green tea. [এখন আমার গ্রীন টি পান করার সময়]
উত্তরে কিছু না বললেও মনে মনে আফিমকে একশো একটা গালি দিতে দিতে কক্ষের বাম দিকে এগিয়ে যায় নাফিয়া।একটি ছোট্ট সাদা রঙের টেবিল পাতানো আছে সেদিকে।টেবিলের উপরেই কারেন্টে পানি গরম করার জগ,গ্রীন টি প্যাকেট এবং কাপ রাখা।প্রয়োজনীয় সব কিছু পেয়ে যাওয়ায় কাজটা সহজেই করে ফেললো সে।
গ্রীন টি বানিয়ে নাফিয়া তা আফিমের দিকে এগিয়ে দিতেই আফিম চোখের ইশারায় তা টেবিলের উপর রাখতে বলে।ছেলেটা খুব মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপে কিছু করছে।নাফিয়ার ইচ্ছে হচ্ছে দেখতে যে আফিম তার ল্যাপটপে কি করছে!কিন্তু আফিমের কাছে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না তার।এসব ভাবনার মাঝেই আফিম তাকে বলে ওঠে,
-Miss. Sheikh, my shoulder hurts. Can you massage? [মিস.শেখ,আমার কাঁধে ব্যাথা করছে।ম্যাসাজ করতে পারবে?]
নাফিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে আফিমের কাছে চলে যায়।ছেলেটার বাম দিকে দাঁড়িয়ে কাঁধে নিজের নরম হাতে মালিশ করতে করতে ল্যাপটপের দিকে দৃষ্টিপাত করে নাফিয়া।তাকিয়ে দেখতেই মুগ্ধতায় আপনা-আপনিই সে মনে মনে বলে ওঠে,
“অসম্ভব সুন্দর”
আফিম ল্যাপটপে একটি ব্রাইডাল লেহেঙ্গা ডিজাইন করছে।এখনো কমপ্লিটও হয়নি অথচ এখনই তা থেকে চোখ সরানো যাচ্ছে না,এতোটাই সুন্দর।এভাবেই মালিশ করতে করতে অনেকটা সময় পাড় হয়ে গিয়েছে।কিন্তু নাফিয়া মুগ্ধ চোখে আফিমের কাজ দেখায় এতোটাই ব্যস্ত যে তার সময়ের দিকে খেয়ালই নেই।হুট করেই আফিম কাজ বন্ধ করে নাফিয়ার পেটে মাথা ঠেকিয়ে বসে পড়ে।চোখ বুজে ক্লান্ত স্বরে বলে ওঠে,
-I am having headache too.
হটাৎ আফিমের এমন কাজে মৃদু কেপে ওঠে নাফিয়া।আফিমের মাথার ছোট ছোট চুলগুলো বিঁধছে তার পেটে।এতে কেমন জানি একটা অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করছে সে।একটু সুরসুরিও লাগছে তার।কিন্তু সব অনুভূতি নিজের মাঝে চেপে রেখে সে আফিমের কপালে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করে দেওয়ায় মনোনিবেশ করে।অনেক্ক্ষণ যাবৎ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থেকেই হয়তো ছেলেটার এখন মাথা ব্যাথা করছে।
ল্যাপটপের দিকে বেশিক্ষণ একভাবে তাকিয়ে থাকলেই চোখসহ মাথায় ব্যাথা হতে আরম্ভ করে আফিমের।এতোদিন ধরে এই অসহ্য যন্ত্রণা চুপচাপ সহ্য করেই কাজ করে গিয়েছে সে।কিন্তু এখন হয়তো সে দিন শেষ।এতো বছরে এই আজই এক জাদুকরী হাতের স্পর্শের সন্ধান পেলো সে।যে স্পর্শে প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছে আফিম।তার মাথায় হওয়া অসহ্য যন্ত্রণা এই স্পর্শ পেয়ে খুব কম সময়েই বিদায় নিয়েছে।কিন্তু ব্যাথা কমলেও এই হাতের স্পর্শ পেয়ে যেতে ইচ্ছে করছে আফিমের।তাই সে চুপটি করে নাফিয়ার গায়ে হেলান দিয়েই কপালে নাফিয়ার মালিশ অনুভব করছে।
জীবনে প্রথম হয়তো এভাবে কোনো পুরুষ এতোটা কাছে নাফিয়ার।নাফিয়া সবসময়ই ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলা মেয়ে।কখন ভুলেও কোনো ছেলের স্পর্শ লাগতে দেয়নি নিজের শরীরে কিন্তু আফিমের বেলায় কেনো যেনো বাজে অনুভব হচ্ছে না তার।আফিমের এভাবে কাছে আসা খারাপ লাগছে না তার বরং মায়া হচ্ছে আফিমের ক্লান্ত মুখখানা দেখে।জ্বর থেকে নিস্তার পাওয়ার পর থেকেই দূর থেকে যতবার সে আফিমকে দেখেছে ততবারই ছেলেটা নিজের ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত।এখন বুঝতে পারছে যে আফিম আসলে নিজের কাজের প্রতি ভীষণ নিষ্ঠাবান।প্রচুর পরিশ্রম করে ছেলেটা।এসব ভাবতেই আফিমের প্রতি আরো বেশি মায়া কাজ করছে নাফিয়ার।প্রায় ২ ঘন্টা যাবৎ সে আফিমের ম্যাসাজ করে দেওয়াতে ব্যস্ত।হাতদুটো ব্যাথা হয়ে আর চলতে চাইছে না। কিন্তু মেয়েটা নিজের ব্যথা পাত্তা না দিয়ে আফিমের সেবা করে চলছে।
এভাবেই ২ মিনিটের মতো অতিবাহিত হতেই চোখ মেলে তাকায় আফিম।নাফিয়ার থেকে সরে এসে সে ল্যাপটপে সময় দেখতেই অবাক হয়ে যায়।প্রায় ২ ঘন্টা হয়ে গিয়েছে! অবাক চোখে নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-হাত ব্যাথা করছে না তোমার?
নাফিয়া হাসি হাসি মুখে বলে ওঠে,
-করছে।
এতোক্ষণ যাবৎ মালিশ করলে হাতের অবস্থা কি হয় তা আফিম বেশ ভালোই বুঝতে পারছে।কিন্তু মেয়েটা যেভাবে বলছে যেনো বিষয়টা খুবই সামান্য।এইটুকু একটা মেয়ের কাছ থেকে এমন ধৈর্য্য মোটেও আশা করেনি আফিম।এতে মেয়েটিতে আরো একবার মুগ্ধ হয় সে।কিন্তু প্রকাশ করা তার ডিকশিনারিতে নেই।
নাফিয়ার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আফিম গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে,
-সোফায় গিয়ে বসো।
আফিমের কথায় নাফিয়ার ঠোঁটের হাসি গায়েব হয়ে গেলো।সে মনে মনে বলে উঠলো,
“কি খারুস!!একটা ধন্যবাদ ও দিলো না।একটা সুযোগ একটু পেয়ে নেই তখন মজা বুঝাবো এই ব্যাটারে,হুহ!”

!!
দুপুরের খাবারের বেলা হতেই একটি লোক এসে খাবার দিয়ে গিয়েছে আফিমের ক্যাবিনে।কক্ষে পাতানো সোফার সামনের টেবিলটায় খাবার গুলো রাখা।নাফিয়ার তো ভীষণ খিদে পেয়েছে কিন্তু আফিমের ভয়ে কিছু করার সাহস পাচ্ছে না।
নাফিয়াকে চুপচাপ লোলুপ দৃষ্টিতে খাবারের দিকে তাকিয়ে থেকে অসহায়ের মতো বসে থাকতে দেখে হাসি পাচ্ছে আফিমের।মেয়েটা ভালোই ভয় পায় তাকে তা বুঝতে পেরে বেশ ভালো লাগছে তার।
বেশ কিছুটা সময় পাড় হবার পর আফিমের কন্ঠস্বর কানে আসে নাফিয়ার।
“মিস.শেখ,এভাবে তাকিয়ে থাকার জন্য খাবার টা দিয়ে যাওয়া হয়নি।প্লেটে খাবার সার্ভ করুন আমি আসছি।”
ল্যাপটপে দৃষ্টি স্থির রেখেই কথা গুলো বলে ওঠে আফিম।ছেলেটার এসব কথায় ভীষণ রাগ হচ্ছে নাফিয়ার।আফিমের দিক থেকে রাগী দৃষ্টি সরিয়ে আবারও খাবারের দিকে তাকায় সে।রাগ পরে আগে পেটে খাবার দিতে হবে।পেটের ডাকে সাড়া দিয়ে খাবার গুলো প্লেটে সার্ভ করছে নাফিয়া।হটাৎ তার চোখ যায় তরকারির সাথে রাখা বোম্বাই মরিচের দিকে।এমন আস্তো একটা বোম্বাই মরিচ এই তরকারিতে মেশালে তা কোনো মানুষ খেতে পারবে বলে মনে হয় না নাফিয়ার।সাথে সাথে মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসে তার।
আগে নিজের প্লেটে তরকারি উঠিয়ে নিয়ে আফিমের তরকারিতে বোম্বাই মরিচ ছিঁড়ে ছোট টুকরো করে তা ভালো মতো মিশিয়ে দেয় সে।উপর থেকে দেখলে বোম্বাই মরিচ চোখে পড়বে না।লুকিয়ে খুব সাবধানতার সাথে কাজটি করে নাফিয়া মনে মনে নিজেই নিজেকে বলে ওঠে,
“সাব্বাশ নাফিয়া!!”

!!
কাজ শেষ করে একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিজের মাঝে টেনে নেয় আফিম।অতঃপর নাফিয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই দেখতে পায় ক্ষুদার্থ মেয়েটি বহু কষ্টে খাবার সামনে নিয়ে তার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় আফিম।ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ-হাত ধুয়ে এসে সোফায় নাফিয়ার পাশে বসতেই মেয়েটির চুপসে যাওয়া মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
তা দেখে নিয়ে আফিম নিজের প্লেট হাতে তুলতে তুলতে নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-খাও।
অনুমতি পেয়ে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করে না নাফিয়া।তড়িৎ গতিতে খাওয়া শুরু করে সে।এটি দেখে ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে আফিমের।কিন্তু এই হাসিটি দেখার বিন্দু পরিমাণ সময় নাফিয়ার নেই। সে তার খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত।
নাফিয়ার খাওয়া দেখে নিয়ে আফিম ও খাওয়া শুরু করে।এক লোকমা মুখে তুলতেই বুঝতে পারে তরকারি ভীষণ ঝাল।কিন্তু এতো বছরে এমন ঝাল দেওয়া তরকারি কখনো খায়নি সে।আজ এমন কি হলো! বুঝতে না পেরে তরকারিটি একটু নাড়াচাড়া করতেই আফিম এতে বোম্বাই মরিচের ছোট ছোট টুকরো দেখতে পায়।এভাবে তো কোনো সেফই এতো ঝাল দিয়ে তরকারি রাঁধবে না আর যদি রাঁধেও তাহলেও এতো ঝাল নাফিয়ার খেতে পারার কথা না কিন্তু নাফিয়া তো খাচ্ছে।ব্যাস,যা বুঝার বুঝা হয়ে গিয়েছে আফিমের।মেয়েটা তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।কত সাহস এটুকু একটা মেয়ের! যাই হোক,যুদ্ধে আফিমের পরাজয় অসম্ভব।যেভাবেই হোক তাকে জিততে হবে।
এসব ভেবে নিয়ে খাওয়া শুরু করে আফিম।বিনা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সে খেয়েই চলছে।আর অবাক চোখে তাকে দেখে চলছে নাফিয়া। ছেলেটা কি করে এতো ঝাল এতো সহজে খাচ্ছে তা কোনো ভাবেই মাথায় আসছে না নাফিয়ার।
আফিম পুরো খাবার শেষ করে নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে একটি বাঁকা হাসি টেনে নেয় ঠোঁটে।অতঃপর উঠে ওয়াশরুম ঢুকে পড়ে।
আফিমের এমন অদ্ভুত কান্ডের আগা-মাথা কিছুই বোধগম্য হলো না নাফিয়ার কিন্তু ভয়ে তার কলিজা কাঁপা-কাঁপি শুরু করে দিয়েছে।ছেলেটা বুঝে যায়নি তো যে এই কুকাম সেই করেছে!
ওয়াশরুমে ঢুকেই বারংবার কুলি করছে আফিম।ঝালে মুখ,জিহবা,ঠোঁট সব জ্বলছে।নাক,চোখ,ঠোঁট সব লাল বর্ণ ধারণ করেছে।কুলি করতে করতে আয়নায় চোখ পরতেই নিজের অবস্থা দেখে ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে নেয় আফিম।নিম্ন স্বরে বলে ওঠে,
“কার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছো তা এখনো টের পাওনি মিস.শেখ তবে শীগ্রই পাবে।”

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here