#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ০২,০৩
লেখিকাঃমাহযাবীন
০২
-ঠিক আছে খেয়ো না।এখানেই থাকতে চাইছো?গত রাতে আমার ঠোঁটের মায়ায় পড়ে গিয়েছো বোধহয়!
ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে কথাগুলো বলতে বলতেই নাফিয়ার দিকে এগিয়ে যায় আফিম।আফিমকে নিজের কাছে আসতে দেখে নাফিয়া বলে ওঠে,
-খেয়ে নিচ্ছি আমি।
বলেই সোফায় বসে যেই খাবারে হাত দিতে যাবে ওমনি আফিম বলে ওঠে,
-ইডিয়ট!এট ফার্স্ট ব্রাশ ইউর টিথ এন্ড ওয়াশ ইউর হ্যান্ডস।
আফিমের কথায় ঠোঁট উল্টে ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হয় নাফিয়া।ওয়াশরুমে ঢুকেই সে মনে মনে বলে ওঠে,
“নিজের ফালতু কথায় আমার মাথা নষ্ট করে আবার নিজেই আমায় এভাবে অপমান করলো।কি ভাবে নিজেকে?কোনো মহাপুরুষ নাকি দুনিয়ার সবথেকে পরিষ্কার ব্যক্তি?হুহ্!”
হাত-মুখ ধুয়ে সোফায় বসে নিজের খাবার শেষ করে নিলো নাফিয়া।আড়চোখে নাফিয়ার কার্যকলাপ বেশ ভালোভাবেই পর্যবেক্ষণ করছে আফিম।খাওয়া শেষ হতেই নাফিয়া আর দেরি করতে চায় না।আড়চোখে একবার তাকায় আফিমের দিকে।আফিম বিছানায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে কিছু একটা করছে।গত রাত হতে এই পর্যন্ত আফিমের আচরণে নাফিয়া ওকে ঘৃণাই করে।তাই আফিমের সাথে কোনো কথা বলার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে নেই নাফিয়ার।তাই সে আফিমকে কিছু না বলেই নিজের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে কক্ষ হতে বেরোতেই যাবে ওমনি আফিম বলে ওঠে,
-হেই মরন![Moron=বোকা/হাবা]
আফিমের এই ডাকে ভিষণ রেগে যায় নাফিয়া।সে রেগে আফিমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
-আমার একটি সুন্দর নাম আছে,”নাফিয়া”।
-আচ্ছা তাই!তাহলে “মরন” বলে ডাকাতে তুমি সারা দিলে কেনো?এতে এটাই প্রমাণ হয় যে তুমি স্বীকার করেছো তুমি “মরন”।(বাঁকা হেসে বলে আফিম)
আফিমের কথায় যেমন রাগ হচ্ছে নাফিয়ার ঠিক তেমন নিজের বোকামোর জন্যেও।তাকে এই ডাকে সাড়া দিতে বলেছিলো কে!
নাফিয়া আর কিছু না বলে আবারও দরজার দিকে অগ্রসর হতেই আফিম বলে ওঠে,
-কথা শেষ হয়নি আমার।এক পাও আগাবার দুঃসাহস করবে না।
দাঁড়িয়ে যায় নাফিয়া।নিজের ভেতর ভিষণ ভয় অনুভব করছে সে।আফিম কি আদৌও তাকে যেতে দিবে?
-এদিকে এসো।(আফিম)
একরাশ ভয় নিয়ে আফিয়া ধীরে ধীরে এক পা এক পা এগিয়ে আফিমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
আফিম বলে ওঠে,
-যেতে দিচ্ছি বলে ভেবো না ছেড়ে দিচ্ছি।আফিম ইবনানকে থাপ্পড় মারার মতো ভয়ানক দুঃসাহস করেছো তুমি এবং এর ভয়ংকর পরিনতির জন্যে প্রস্তুত থেকো।(স্বাভাবিক ও শান্ত স্বরে কথাগুলো বললেও এর পেছনে আফিমের ভয়ংকর রাগ ঠিকই আঁচ করতে পারছে নাফিয়া।)
কথা শেষ হবার পরও নাফিয়াকে হাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আফিম বলে ওঠে,
-জাস্ট গেট লোস্ট ফ্রম মাই রুম,ইডিয়ট।
আফিমের উচ্চস্বর শুনে ভয়ে কেঁপে ওঠে নাফিয়া।সে আর এক মুহূর্তও দেরি না করে দ্রুত পদে আফিমের রুম ত্যাগ করে।
!!
বাড়িতে পৌঁছিয়ে দরজায় কড়া নাড়তে সময় লাগলে ও নাফিয়ার মা নয়না বেগমের দরজা খুলতে সময় লাগলো না।মেয়ের অপেক্ষায় যেনো সে দরজার ধারেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।নাফিয়াকে দেখে তিনি কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকে কিচ্ছুটি না বলেই মেয়ের গালে একটি চর বসিয়ে দেন।নাফিয়া এতে বিন্দু পরিমাণ অবাক নয়।সে গালে হাত দিয়ে মেঝেতে তাকিয়েই বলে ওঠে,
-স্যরি আম্মু।জানি সারা রাত অনেক টেনশন করেছ।কিন্তু কি করবো!রাতে ফোনে টাকা ছিলো না তাই তুবার বাসায় যাওয়ার আগে তোমাদের কেউকে জানাতে পারিনি আর ওখানে যেতেই আন্টির সে কি আপ্যায়ন!সব শেষে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।তোমাদের কারো কল রাতে ঘুমের জন্যে টের পাইনি তাই রিসিভ ও করতে পারিনি।সকালে ফোনে টাকা ঢুকিয়েই তোমাকে ম্যাসেজ করেছিলাম যে,আমি ঠিক আছি।
-তুবার ফোন ছিলো না?ওর বাসার অন্য কারো ফোনও কি ছিলো না?কোনোভাবেই আমাদের জানানো যেতো না?আমাদের এখানে এভাবে টেনশনে ডুবিয়ে রেখে তুই ওখানে শান্তিতে ঘুমোচ্ছিলি?(নয়না বেগমের চোখে জল এবং কন্ঠে একরাশ অভিমান)
-স্যরি মা!জানোই তো কত পরিশ্রম করতে হয় সারাটি দিন আমায়।ওদের বাসায় যেয়ে এতোটাই ক্লান্ত ছিলাম যে মাথায় কিচ্ছুটি আসেনি।ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।কাজটি সত্যিই অন্যায় করেছি। মাফ করে দেও।
নয়না বেগম উত্তরে কিছু না বলে চোখের জল মুছতে মুছতে নিজের কক্ষের দিকে এগিয়ে যান।ভিষণ অভিমান জমেছে তার নিজের মেয়ের প্রতি।নাফিয়া বেশ বুঝতে পারছে তার মায়ের অভিমান অল্পতে কমবে না।সে বাসায় ঢুকে নিজের কক্ষে আসতেই দেখে তার ছোট বোন অবনী মুখ গোমড়া করে বসে আছে।বোরকা টা খুলে বিছানায় ফেলে আলমারি থেকে কাপড় বের করতে করতে অবনীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
-কিরে দেখিস নাই আমি আসছি?
উত্তর না পেয়ে নাফিয়া আবারও বলে ওঠে,
-বাহ!বড় বোন যে গত রাতে বাড়ি ফেরেনি সে খবর আছে?
-এসেছ কেনো?যেখানে ছিলে সেখানেই থাকতে।
-আচ্ছা চলে যাবো।(মন খারাপের নাটক করে বলে ওঠে নাফিয়া)
অবনী নাফিয়ার কথা শুনে পেছন ফিরে তাকায় তার দিকে।অবনীর দিকে তাকাতেই নাফিয়া দেখে মেয়েটা কাঁদছে।নাফিয়া দ্রুত পদে বোনের কাছে যেয়ে বলে ওঠে,
-কাঁদছিস কেনো?
-তুমি জানো গত রাতে আমরা সবাই কতোটা চিন্তায় ভুগেছি!মা-বাবা,আমি সারা রাত ঘুমাইনি।বাবা তো চেয়েছিলেন সকালেই থানায় যাবেন আর আম্মু তো কেঁদে অস্থির। আমি তোমার সব ফ্রেন্ডদের কল দিয়েছি তাদের মধ্যে শুধু তুবা আপু এবং অরিন আপু কল ধরেনি।
-আচ্ছা স্যরি।
বলেই নিজের ছোট বোনকে বুকে জরিয়ে নেয় নাফিয়া এবং মনে মনে বলে ওঠে,
“ভাগ্যিস তুবা কল ধরেনি।”
!!
নাফিয়া নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পর পরই আফিমও রওয়ানা হয় নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে।বাড়িতে পৌঁছিয়ে নিজের রুমের দিকে যাওয়ার সময় আফিমের মা সানিয়া বেগম তাকে দেখে বলে ওঠে,
-আফিম,সারা রাত কোথায় ছিলে?
-বাংলোতে মম।
-কেনো?
-এমনিই।
-এমনিই মানে কি?এভাবে না জানিয়ে হটাৎ বাংলোতে কেনো গেলে?
-ওহহো বউমা!আমার পোতাকে এতো প্রশ্ন কেনো করছো যেনো সে কোনো ক্রিমিনাল?(আফিমের দাদী)
-আম্মা ছোটবেলা থেকে ওকে এভাবেই আদর দিয়ে বাঁদর বানাচ্ছেন।
-খবরদার আমার পোতাকে নিয়ে একটিও বাজে বকবে না।যাও ওর জন্য খাবার প্রস্তুত করো।
সানিয়া বেগম শাশুড়ির আদেশে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।মায়ের প্রশ্নের ভান্ডার থেকে রেহাই পেয়ে আফিম খুশিতে তার দাদীকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
-লাভ ইউউউউ।
-লাভ ইউ ঠু।(আলতো হেসে)
-তোমার শরীর কেমন এখন?
-মোটামোটি।তোর বাবা বললো আমার পরিচর্যা, দেখা-শোনার জন্যে একজন লোক রাখবে।
-বাহ!কোনো লোক ঠিক করেছে?
-এখন অব্দি না।
কথাটি শোনা মাত্র বাঁকা হাসে আফিম।কিছু একটা ভেবে সে তার দাদীর গালে চুমু বসিয়ে তার থেকে বিদায় নিয়ে নিজ কক্ষে প্রবেশ করে।তার মুঠোফোন টি বের করে তাতে একটি নাম্বার ডায়াল করে কানে ধরে,
-আসসালামু আলাইকুম স্যার।(ফোনের ওপাশের ব্যক্তি)
-তোমায় গত রাতে একজনের ডিটেইলস জেনে আমায় জানাতে বলেছিলাম!
-জ্বি স্যার।মোটামুটি জেনেছি কিন্তু পুরোপুরি সবটা এখনো জানতে পারিনি।
-ইউ পিপল আর সাচ্ আ লুজার!ডু ইউর ওয়ার্ক অন টাইম আদারওয়াইজ ইউ অল উইল লস ইউর জব।
-স্যরি স্যার।
-আই হেইট স্যরি!
-আজ রাতের মধ্যেই সব ডিটেইলস রেডি করে ফেলবো স্যার।
-ফাইন।মেয়েটি কি মধ্যবিত্ত?
-জ্বি স্যার।সেই সাথে তাদের একটি বড় ঋণ নেওয়া আছে।
-কিসের ঋণ?
-তা এখনো জানতে পারিনি স্যার।
কথা শোনা মাত্রই রাগ উঠে যায় আফিমের কিন্তু কোনো মতে সে রাগ চেপে বলে ওঠে,
-বাবা দাদীর জন্যে একজন কেয়ার টেকার রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।আই হোপ ইউ নো,হোয়াট ইউ হেভ টু ডু নাও।
-জ্বি স্যার জানি।
ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে ফোনটি কেটে দেয় আফিম।
চলবে।
#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ০৩
লেখিকাঃমাহযাবীন
-মা আমার এই চাকরি টা প্রয়োজন।বোঝার চেষ্টা কেনো করছো না?(নাফিয়া)
-কিছু বুঝতে চাইছি না আমি।এ চাকরি টি তুমি করছো না এটিই আমার শেষ সিদ্ধান্ত।
-তোমার সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান করি কিন্তু তুমি শুধুই এক তরফা ভাবছো মা!তুমি শুধুই আমার সেফটির কথা ভাবছো কিন্তু এটি একবারও ভাবছো না যে এ চাকরিটি করলে আমাদের বিপদ কতোটা কেটে যাবে।থাকা,খাওয়া ফ্রীতে সেই সাথে মাস গেলে ২৫ হাজার টাকা!আর আমার কাজ টা কি?শুধু একজন বৃদ্ধার সাথে সারাদিন থাকা এবং তার ঔষধ থেকে শুরু করে তার যাবতীয় সব দিকে খেয়াল করা।ভাবতে পারছো এই প্রস্তাবটি আমাদের জন্য কতোটা লাভজনক?
-বোকার মতো কথা বলছো নাফিয়া।শুধু মাত্র একজন বৃদ্ধার দেখাশোনা করবা সেজন্যে মাস গেলে ২৫ হাজার টাকা?আবার শর্ত রাতেও থাকতে হবে!এটা কোনো ফন্দিও তো হতে পারে।
-বৃদ্ধ মানুষ!হুটহাট রাতেও অসুস্থ হয়ে পরতে পারে সেজন্যই হয়তো ঔ শর্তটি।আর ওরা অনেক বড়লোক মা!যে লোকটি কথা বলতে এসেছিলেন সে তাদের কর্মচারী কিন্তু সেই কর্মচারীকে দেখতেই লাখো পতি মনে হচ্ছিল।এখন তুমিই ভাবো,ওদের কাছে মাসে ২৫ হাজার কোনো ব্যাপার?
-ওরা তোমায় কোথায় পেলো?আর এই প্রস্তাব তোমাকেই কেনো দিলো?
-লোকটা বলেছিলো আমার কোনো এক স্টুডেন্টের প্যারেন্টস তাদের আমাকে এ কাজটি দেওয়ার জন্যে পরামর্শ দিয়েছে।
-তোমার স্কুলের চাকরিটার কি হবে?
-তা অব্যাহত থাকবে।আমি কথা বলে নিয়েছি লোকটির সাথে।স্কুলে আমার ৩ টি ক্লাস পরাপর আছে যা দের ঘন্টার ব্যাপার এতোটুকু ছাড় দিবেন তারা।
-তাও আমার মন সায় দিচ্ছে না।
-উফ মা!!
বলেই নাফিয়া তার মাকে জড়িয়ে ধরে।কন্ঠে একটু আহ্লাদীভাব এনে বলে ওঠে,
-মা প্লিজ না করো না।আমি সেফ থাকবো ইন শাহ আল্লাহ।আর তুমি নাহয় ৩ বেলা নিয়ম করে কল দিও।আর আল্লাহ না করুক কোনো সমস্যা হলে ব্যাস ৩৫/৪০ মিনিটের পথ।রাজি হয়ে যাও না?
-আচ্ছা করো যা ইচ্ছা।আমার কথা কি আর কেউ দাম দেয়!বাবাসহ মেয়ে দুটো ও তাই ই করবে যা তাদের মন চাবে।(বলতে বলতেই নাফিয়ার বাহুবন্ধনী হতে নিজেকে ছাড়িয়ে নাফিয়ার কক্ষ ত্যাগ করেন নয়না বেগম)
!!
সকাল সকাল নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগ ভর্তি করে নিজে প্রস্তুত হয়ে নেয় নাফিয়া।অতঃপর পরিবারের সকলের থেকে বিদায় নিয়ে রওয়ানা হয় নিজের নতুন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে।
বিশাল জায়গা নিয়ে ঘেরাও করা একটি তিন তলা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে নাফিয়া।মুগ্ধ হয়ে বাড়িটি দেখছে সে।সাদা এবং কমলা রং এর বাড়ি টির চারপাশ উঁচু দেওয়ালে ঘেরা।দেওয়ালের ভেতরের দিকটা বিভিন্ন ফুল গাছ দ্বারা সজ্জিত।মেইন গেইটি যেমন বড় তেমন এর উপর করা কারুকাজগুলোও আকর্ষণীয়।মুগ্ধতা নিয়ে নাফিয়া বাড়ির সদর দরজার বেল বাজাতেই একটি ২১/২২ বছরের মেয়ে দরজা খুলে বলে ওঠে,
-আসসালামু আলাইকুম ম্যাম।কাকে চাই?
-জ্বি আমাকে এ বাড়ির একজন বুজুর্গ ব্যক্তির পরিচর্যার দ্বায়িত্বে নিয়োগ করা হয়েছে।
-ওহ ভেতরে আসুন।
মেয়েটি নাফিয়াকে সোফার দিকে ইঙ্গিত করে বলে ওঠে,
-এখানে বসুন।আমি ম্যামকে দেকে দিচ্ছি।
-জ্বি।
মেয়েটি যেতেই নাফিয়া পুরো হল রুমটিতে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।একটি বেশ বড় সাইজের টিভি দেওয়ালে লাগানো।সেই সাথে আরো অনেক আকর্ষনীয় আসবাবপত্র দিয়ে পুরো হল রুমটি সাজানো।এসব দেখার মাঝেই আফিমের মা সানিয়া বেগম এসে হাজির হন।তিনি নাফির সামনের সোফায় বসে যেই কিছু বলতে যাবে ওমনি কারো কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
-হোয়াট’স ইউর নেম?
কন্ঠস্বরটি কানে আসতেই চোখজোড়া রসগোল্লার ন্যায় বড় বড় হয়ে যায় নাফিয়ার।সে নিজের জায়গায় একদম স্থির হয়ে থাকে।আফিম সিড়ি দিয়ে নামতে নামতেই প্রশ্নটি করেছিলো।এখন তার মায়ের পাশে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আফিম বলে ওঠে,
-কি হয়েছে? শুনতে পাওনি আমার প্রশ্ন?
আফিমকে নিজের সামনে দেখে একই ভাবে রসগোল্লার ন্যায় চোখ করে তাকিয়ে আছে নাফিয়া।সে এতোটাই অবাক হয়েছে যে বুঝে উঠতে পারছে না তার আসলে কি প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিৎ।নাফিয়ার এমন অস্বাভাবিক আচরণটা সানিয়া বেগমের বোধগম্য হয় না।তিনি কিছু বলতেই যাবে ওমনি আফিম বলে ওঠে,
-মম,তুমি একটু দাদীকে নিয়ে এসো আমি ততক্ষণে ওর সাথে কথা বলছি।
সানিয়া বেগমও আর কথা বাড়ান না।চলে গেলেন তার শাশুড়ি মাকে নিয়ে আসতে।সানিয়া বেগম যেতেই আফিম নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-হোয়াই আর ইউ স্টেয়ারিং (staring) লাইক দিস?(রাগান্বিত ও শান্ত কন্ঠে)
-আআআপনি এএএখাননে?
-আমারই বাসা।আর হ্যা খবরদার!যদি ভুলেও এই চাকরিটি না করার কথা চিন্তা করো তবে বেশ বড় ভুল করে বসবে।কারণ তোমার ঔ স্কুলের চাকরি যার টাকা দিয়ে তুমি চলো সেই চাকরিটি তোমার হাত ছাড়া করতে আমার জাস্ট একটা আদেশই যথেষ্ট।এছাড়াও তোমার এবং তোমার পরিবারের সদস্যদের জীবন নরক বানিয়ে দেওয়াও তেমন কোনো কঠিন কাজ নয় আমার জন্যে।
নাফিয়া বেশ ভালোই বুঝতে পারছে যে সে খুব বাজেভাবে ফেঁসে গিয়েছে।সে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আফিমকে বলে ওঠে,
-প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন সেই অপরাধ টার জন্যে! আমি সত্যিই ইচ্ছে করে করি..
নাফিয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই আফিম বলে ওঠে,
-শাট আপ মরন।মাই মম এন্ড গ্রানী মাস্ট বি কামিং সুন।বিহেভ নরমাল!
সাথে সাথেই নাফিয়া নিজেকে ঠিকঠাক করে নেয় স্বাভাবিক না হয়ে ও স্বাভাবিক আচরণ করার জন্যে।
তার একটু পরেই আফিমের মা ও দাদী এসে পরেন।দু’জনে বসে প্রথমে নাফিয়ার সম্পর্কে জানতে চায় এবং পরে সারাদিনে দাদীর কি কি ঔষধ আছে সেগুলো এবং নাফিয়ার কাজ বুঝিয়ে দেন।কথার পর্ব চলাকালীনই চা-নাস্তাও সেরে নেওয়া হয়।সব শেষে,সেই মেয়েটিকে ডেকে বলা হয় নাফিয়াকে গেস্ট রুম কোথায় তা দেখিয়ে দিতে।
নাফিয়া গেস্ট রুমটায় প্রবেশ করে দেখে এ রুমটিও সুন্দর,বেশ পরিপাটি।কিন্তু এখন চেয়েও মুগ্ধ হতে পারছে না সে।কারণ তার মধ্যে মুগ্ধতার ‘ম’ ও কাজ করছে না,মন-মস্তিষ্ক সব জায়গায় আফিম নামক বড্ড ভয়ংকর প্রাণীটি ঘুরছে।যা হচ্ছে তা হতে দেওয়া ছাড়া যেহেতু আর কোনো উপায় নেই তাই নাফিয়া বেশি না ভেবে নিজের পরিহিত বোরকা খুলে ফ্রেশ হয়ে নেয়।অতঃপর তৈরি হয়ে সে অগ্রসর হয় দাদীর রুমের দিকে।পথে আফিমের চোখে পরে যায় নাফিয়া।নাফিয়া একটি হাতা লম্বা লং ড্রেস পরেছে সেই সাথে এমনভাবে ওড়না পরেছে যে মাথার চুল থেকে কোমড় অব্দি পুরোটাই ঢেকে আছে।না চাইতেও নাফিয়ার এই শালীনতাটি ভালো লাগে আফিমের।এক পলক দেখেই চোখ সরিয়ে নেয় আফিম এবং অগ্রসর হয় সদর দরজার দিকে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।আফিন দরজার কাছাকাছি যেতেই তার দিকে চোখ পরে নাফিয়ার। আফিমকে দেখেই নাফিয়া মনে মনে বলে ওঠে,
“যতই ভয়ংকর প্রাণী হও না কেন মিঃআফিম ইবনান আমিও এবার তোমায় দেখাবো আমি কি জিনিস।”
!!
আফিমের অফিসে যাওয়ার পর দিয়ে নিশ্চিতে দাদীর সাথে সময় পার করেছে নাফিয়া।প্রথম দিনেই দাদীর সাথে বেশ গল্প জমে তার।তারপর দুপুরে দাদীকে সময় মতো ঔষুধ খাওয়ানো,খাবার খাওয়ানো,বিকেলে দাদীর সাথে বাড়ির সামনের বিশাল বড় বাগান টায় হাঁটা সব কিছুই খুব উপভোগ করেছে নাফিয়া।তার এখানে এসে ভালোই লাগছে শুধু আফসোস সেই ভয়ংকর প্রাণীটিকে নিয়ে!
সন্ধ্যায় দাদীকে সোফায় বসিয়ে দাদীর ঘাড় ম্যাসাজ করে দিচ্ছিলো নাফিয়া ঠিক এমন সময় আফিম এসে হাজির হয়।এক নজর নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে আফিম সোজা নিজের কক্ষে চলে যায়।আফিমকে দেখার পর থেকেই ভয়ে নাফিয়ার হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়ে চলছে।না জানি কি করে!
কিছুটা সময় অতিক্রম হতেই নিচে নেমে আসে আফিম।সোফায় আয়েশ করে বসে নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-ইউর নেম?শেখ নাফিয়া রাইট?
-জ্বি।
-ব্রিং আ কাপ অফ কফি ফর মি।
-আমি?
-তো?
-আচ্ছা আনছি।
বলে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে নাফিয়া মনে মনে বলে ভাবে,
“এই কাজ তো আমার না তাহলে আমি কেনো করছি! করবো নাকি করবো না?ধুর না করলে আবার না জানি কি শাস্তি দেয় তার চেয়ে এক কাপ কফি বানালে ক্ষতি নেই।”
কফি বানিয়ে আফিমের কাছে এসে কফির মগটি তার দিকে এগিয়ে দেয় নাফিয়া।আফিম কফির মগটি নেওয়ার সময় হুট করে মগটি তার হাত থেকে পিছলে পড়ে যায় ফলে গরম কফি ছিটকে গিয়ে পড়ে নাফিয়ার পায়ের উপর।সোফাতেই বসে ছিলেন দাদী।নাফিয়ার পায়ে গরম কফি পরতে দেখে তিনি দ্রুত উঠে টি-টেবিলে রাখা পানির জগ হতে কিছু পানি নাফিয়ার পায়ে ঢেলে দিলেন।নাফিয়ার পা টা জ্বলছে,সে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে সহ্য করছে।দাদী নাফিয়াকে আফিমের পাশে বসিয়ে একজন গৃহ পরিচারিকাকে ডেকে মলম আনতে বললেন।মলম আনা হলে তা নাফিয়ার পায়ে লাগাবার কিছু টা সময় পরই জ্বলা টা কমে যায়।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই দাদী আফিমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-তোমার ভুলে মেয়েটা ব্যথা পেলো তাকে একটি স্যরি পর্যন্ত না বলে তুমি পত্রিকায় মুখ গুঁজে আছো?এ কেমন ভদ্রতা?
-আই এম স্যরি মিস.শেখ।(আফিম)
আফিমের দিকে তাকাতেই নাফিয়া দেখে আফিমের ঠোঁটে বাঁকা হাসি যা দাদীর নজরে পরেনি।আফিমের এ হাসিটির অর্থই হচ্ছে কাজটি আফিম ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে।দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগটি নিয়ন্ত্রণ করে নাফিয়া বলে ওঠে,
-দাদী আমি নিজের রুমে যেতে চাচ্ছি।যাবো?
-হ্যা হ্যা যাও।
নাফিয়া সোফা থেকে উঠে আফিমের সামনে থেকে যাওয়ার সময় ইচ্ছে করে এমন ভাবে আফিমের পায়ের উপর পারা দিলো যেনো এটি অনিচ্ছাকৃত হয়েছে।পায়ে উঁচু জুতো থাকায় আফিমের পা খানিকটা কেটে যায়।পত্রিকা পড়ার মাঝেই ব্যথা অনুভব হওয়ায় “আহহ” শব্দ করে ওঠে আফিম।নাফিয়া চমকে যাওয়ার নাটক করে বলে ওঠে,
-স্যরি স্যরি স্যরি,আমি খেয়াল করিনি।
এদিকে আফিমের দাদী তার আদুরে পোতার পায়ে সামান্য রক্ত দেখে অস্থির হয়ে ওঠেন।এ সবের মাঝে আফিম চোয়াল শক্ত তাকিয়ে থাকে নাফিয়ার দিকে।সে বেশ বুঝতে পারছে নাফিয়া এটি ইচ্ছে করেই করেছে।আফিমের এমন রাগান্বিত চাহনিতে নাফিয়ার হৃৎস্পন্দন থেমে থেমে যাচ্ছে।সে মনে মনে ভাবে,
“আমার হয়তো এই কুমারী অবস্থায়ই মরতে হবে।”
চলবে