#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১২,১৩
লেখিকাঃমাহযাবীন
১২
রাত ঠিক ১০ টা বাজে।আফিমের কথা রাখতেই নিজের পরিবারকে বুঝিয়ে আজই আফিমদের বাড়িতে চলে আসে নাফিয়া।ঠিক সন্ধ্যে ৭ টায় এ বাড়িতে এসে পৌঁছায় সে।দাদী ও সানিয়া বেগম উভয়ের সাথে দেখা হলেও আফিমের দেখা পায় না সে।তার দুচোখ জোড়া আফিমকেই খুঁজে বেরাচ্ছিলো কিন্তু চোখের তৃষ্ণা মিটলো কই?
দাদী ঘুমিয়ে যাওয়ায় নিজ কক্ষে এসে গোসল টা সেরে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ায় নাফিয়া।মন টা তার ভালো নেই।আফিমকে একটি বারের জন্য হলেও আজ দেখতে চায় সে।আকাশ পানে তাকিয়ে মুখ গোমড়া করে সে বলে ওঠে,
-কাল তো খুব বলেছিলো,”I wanna see you tomorrow at home” আর এখন নিজেরই খবর নেই।
ঠিক এই সময়ই নাফিয়ার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হয়।ওমনি ধুক করে ওঠে নাফিয়ার হৃদয়।হয়তো আফিম এসেছে এই ভেবে ধুকপুক করা হৃদয় নিয়ে ধীরে ধীরে দরজার কাছে এগিয়ে যায় সে।এক বুক আশা নিয়ে দরজা খুলতেই দেখতে পায় দরজার ওপাশে একজন গৃহ পরিচারিকা দাঁড়িয়ে আছে।মুহূর্তেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো নাফিয়ার।ব্রু কুঁচকে মেয়েটির দিকে তাকাতেই মেয়েটি বলে,
-আফিম স্যার আপনাকে ছাঁদে যেতে বলেছেন,ম্যাম।
বিগড়ে যাওয়া মেজাজ আবারও ভালো হয়ে যায় নাফিয়ার।সে কোনোমতে ওরনা পেঁচিয়ে ছাঁদের দিকে এক প্রকার দৌড়ে অগ্রসর হয়।ঠোঁটে তার আলতো হাসি।
!!
ছাঁদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে আফিম।পরনে সাদা একটি শার্ট এবং ব্লু জিন্স প্যান্ট।বাতাসে তার শার্টসহ চুলগুলো নড়ছে আর সে নিস্তব্ধ হয়ে এক দৃষ্টিতে আকাশপানে তাকিয়ে আছে।
আকাশে আজও চাঁদ নেই তবে আজ তারা আছে।কালো আকাশ টায় ঝলমলে তারাগুলো দেখতে বেশ লাগছে আফিমের।
ছাঁদে এসে আফিমের পেছন দিকটা চোখে পরে নাফিয়ার।আফিমের উপস্থিতিই তার মাঝে ভালো লাগা তৈরিতে সক্ষম।সাদা শার্টে আফিমকে পেছন থেকেই দেখতে খুব ভালো লাগছে তার।না জানি সামনে দিয়ে দেখতে কতোটা সুন্দর লাগছে ছেলেটিকে!
নাফিয়া ধীর পায়ে আফিমের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সেদিকে তাকায় আফিম।নাফিয়াকে দেখে দৃষ্টি স্থির রাখে সে নাফিয়ার দিকে।আবারও এই গাঢ় খয়েরী রঙের চোখে ঘায়েল হলো নাফিয়া।দু’জনই একে-অপরের চোখের গভীরতা মাপতে ব্যস্ত হয়ে পরে।আফিম ধীর পায়ে নাফিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে।এবার আর নাফিয়া পিছিয়ে যায় না বরং আফিমের চোখে চোখ রেখে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে।আফিম,নাফিয়ার কাছে এসে দু’হাতে নাফিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে নাফিয়াকে একদম নিজের কাছে নিয়ে এসে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-You won’t get leave anymore.[তুমি আর ছুটি পাবে না]
আফিমের বলা কথাটি শুনা মাত্রই নাফিয়ার মনে একরাশ ভালোলাগা এসে জায়গা করে নেয়।তবে কি আফিম চায়,সে সর্বদাই আফিমের বাড়িতে থাকুক?ঠিক এই মুহূর্তেই নাফিয়ার মনে পরে তার মা-বাবা তার জন্য ছেলে পছন্দ করেছে।ভালোলাগা গুলো মুহূর্তেই মধ্যেই বিলীন হয়ে গেলো।নাফিয়া আফিমের চোখে চোখ রেখে বলে ওঠে,
-আগামী মাসে হয়তো আমায় এই চাকরিটি ছাড়তে হবে।
কথাটি শোনা মাত্রই আফিমের চেহারায় স্বাভাবিকভাবটা পরিবর্তন হয়ে রাগান্বিতভাব প্রকাশ পেতে আরম্ভ করে।আফিম নাফিয়ার কোমর আরেকটু শক্ত করে ধরে বলে ওঠে,
-এন্ড ইউ থিংক আই উইল এলাউ ইউ টু ডু দিস?[আর তোমার মনে হয় আমি তোমাকে এমনটা করতে দিবো?]
উত্তরে নাফিয়া মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-বাবা-মা আমার বিয়ের জন্যে ছেলে পছন্দ করেছে।
সাথে সাথেই আফিম নাফিয়ার কোমর হতে নিজের হাত সরিয়ে নেয়।এক-দু পা পিছিয়ে গিয়ে এক দৃষ্টিতে নাফিয়ার চোখে চোখ রেখে দাঁড়ায় আফিম।আফিম যে ভীষণ রেগে গিয়েছে তা বুঝতে বাকি রইলো না নাফিয়ার।আফিম আর কিছু না বলেই স্থান ত্যাগ করার জন্য অগ্রসর হতেই নাফিয়া আফিমের হাত ধরে ফেলে।ভীষণ খারাপ লাগায় নাফিয়ার চোখজোড়া কিছুটা ঝাপসা হয়ে আসছে।সে আফিমের হাত ধরেই বলে ওঠে,
-বিয়েতে আমার মত নেই।
নাফিয়ার দিকে ফিরে তাকায় আফিম।নাফিয়া আবারও বলে ওঠে,
-না এ বিয়ে করতে চাইছি আর না এ চাকরি ছাড়তে চাইছি।
নাফিয়ার কথায় আফিমের চেহারায় যে রাগান্বিতভাব টা প্রকাশ পেয়েছিলো তা দূরীভূত হয়ে গেলো।সে নাফিয়ার দিকে ফিরে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-কেনো চাইছো না?
উত্তরে চুপ থাকে নাফিয়া।তার চোখ দুটো যেনো আফিমকে না বলা অনেক কথাই বলে দিচ্ছে। আফিম কিছুটা সময় নাফিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে কাছে এসে একহাতে নাফিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে এবং অন্য হাতে নাফিয়ার গাল স্পর্শ করে বলে ওঠে,
-উইল ইউ বি মাই অ্যাডিকশন[addiction] মিস.শেখ?
এই মুহূর্তে আফিম তাকে এ কথাটি বলে বসবে তা ভাবনাতিত ছিলো নাফিয়ার।যতটা না সে অবাক হয়েছে তার চেয়েও বেশি,অতিরিক্ত খুশিতে তার হৃৎস্পন্দন ক্রমশ বেড়ে চলছে।এতো এতো সুখানুভূতি নাফিয়ার হৃদয়ের পুরোটা জায়গা দখলে নেওয়ার পরেও চোখের অশ্রু কণা হয়েও বেড়িয়ে এলো কিছু।ডান চোখের পাশ দিয়ে একটি অশ্রু কণা গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো নাফিয়ার।সে ভাঙা কন্ঠে আফিমকে বলে ওঠলো,
-উহু!
নাফিয়ার কথাটি যেনো আফিমের কানেই এলো না।সে তো ব্যস্ত নাফিয়ার চোখের গভীরতায় ডুব দিতে।নাফিয়ার ঠোঁট “উহু” বললেও তার চোখজোড়া তীব্রভাবে অসম্মতি জানাচ্ছে।কিছুটা সময় নিয়ে সে বলে ওঠে,
-আমি আপনার আসক্তি নই বরং আপনাতে আসক্ত হতে চাই,আফিম।এতোটাই আসক্ত হতে চাই যতটা হলে একটি দিনও আপনিহীনা থাকতে পারবো না,এতোটাই আসক্ত হতে চাই যে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত অন্য কোনো নেশা আমায় কাবু করতে পারবে না,এতোটাই আসক্ত হতে চাই যে প্রতিটি দিন এর আসক্তি বৃদ্ধি পাবে কিন্তু কিঞ্চিৎ পরিমাণও কমবে না।এতোটাই আসক্ত হতে চাই যে নাফিয়ার মাঝে নাফিয়া কম আফিমকেই বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে।বৈধভাবে আপনার হতে চাই,আফিম।আপনার মিস.শেখ থেকে মিসেস.আফিম ইবনান হতে চাই।
এতোটা সময় খুব মনোযোগ দিয়ে নাফিয়ার চোখে চোখ রেখেই নাফিয়ার বলা প্রতিটি শব্দ নিজের মাঝে অনুভব করছিলো আফিম।নাফিয়ার বলা প্রতিটি শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে নাফিয়ার চোখও যেনো অনেক কথাই বলে দিলো আফিমকে।অনুভূতির যে গভীরতায় এই মুহূর্তে দু’জন আছে সেখানে পুরো পৃথিবীটাই অনুপস্থিত।এরা দু’জনই যেনো দুজনের পৃথিবী।বাকি কিছু এই মুহূর্তে তাদের মাথায় নেই।এ এক অন্য রকম ঘোরের মাঝেই বিরাজ করছে তারা।
আফিম নাফিয়ার দিকে নিজের ওষ্ঠদ্বয় এগিয়ে নিয়ে কপালে এক গভীর চুমু এঁকে দেয়।অতঃপর নাফিয়ার চোখজোড়ায় নিজের ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দু’গালেও ঠোঁট ছোঁয়ায়।প্রতিটি স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে নাফিয়া।সে এই মুহূর্তে এ পৃথিবীতে নেই বরং আফিম নামক এক নেশাময় ঘোরে বিলীন হয়ে আছে।আফিম নিজের ওষ্ঠদ্বয় নাফিয়ার ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে এগিয়ে নিতে গিয়েও থেমে যায়।নাফিয়ার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে ওঠে,
-ইউ উইল বি মিসেস.আফিম ইবনান ভেরি সুন।
নাফিয়ার দিকে তাকিয়েই কথাটি বলে আফিম।নাফিয়া তো সেই কখন থেকে চোখ বুজে আছে।আফিমের কথা কানে আসতেই চোখ বুজে থাকা অবস্থাতেই ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে তার।নাফিয়ার ঠোঁটের হাসিটি দেখে আর দেরি করে না আফিম,নাফিয়াকে ছেড়ে সে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।কারণ সে জানে এখানে আর একটু সময় থাকলে এমন কিছু হয়ে যেতে পারে যা হওয়া উচিৎ নয়।
!!
সকাল হতেই অতিরিক্ত রকমের মন ভালো নাফিয়ার।ঠোঁটের হাসি যেনো এক মুহূর্তের জন্যেও উপস্থিতি হারায়নি।প্রতিটি কাজ বেশ উৎসাহের সাথে করছে সে।মন ভালো হওয়ায় পক পক ও কম করছে না সে।নাফিয়ার এই পরিবর্তিত আচারণ প্রত্যেকের নজরে পরছে।সার্ভেন্টস রা তো সবাই এক প্রকার কানাঘুঁষা করা শুরু করে দিয়েছে।সানিয়া বেগম এবং দাদীও বিষয়টি বেশ কিছুক্ষণ ধরেই লক্ষ্য করছেন।অতঃপর সানিয়া বেগম জিজ্ঞেস করেই বসলেন,
-কি ব্যাপার নাফিয়া,তোমায় খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে।
-এ শুধু খুশি নয় বৌমা,এই খুশিতে একটু লজ্জা লজ্জা ভাবও আছে।বিয়ে ঠিক হলো নাকি?(দাদী)
ডাইনিং টেবিলেই বসে ছিলো সবাই সকালের নাস্তা করবার জন্যে।দাদীর প্রশ্নটি করার সময়ই সেখানে উপস্থিত হয় আফিম।নাফিয়ার কিছু বলার আগেই আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বলে ওঠে,
-ভুল বলোনি দাদী।হতেই পারে গত রাতে ছাঁদে বসে মিস.শেখ এর বিয়ে ঠিক হয়েছে।[নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে সবার অগোচরে চোখ মারে আফিম]
আফিম চোখ মারতেই লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয় নাফিয়া।আফিম আসতেই নাফিয়ার চেহারা লজ্জায় লাল হওয়াটা লক্ষ্য করেন সানিয়া বেগম।সেই সাথে আফিমের এমন উদ্ভট কথা!বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে তার কাছে।
দাদী আফিমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন,
-কি সব বলছো!রাতে তাও আবার ছাঁদে বসে কারো বিয়ে ঠিক হয়?
-মিস.শেখ আপনি বলুন,হয় না?
এ কোন বিপাকে ফেললো আফিম তাকে?এ প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে সে!নাফিয়াকে চুপ করে থাকতে দেখে দাদী বলে ওঠেন,
-তুমি খাও তো,সকাল সকাল এই ছেলের মাথার তার ছিড়ে গিয়েছে।
চলবে
[সত্যিই কাল গল্প দেওয়ার খুব ইচ্ছে ছিলো।কিন্তু সময়ের সাথে পারলাম না।]
#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১৩
লেখিকাঃমাহযাবীন
“আমি মিস.শেখকে বিয়ে করতে চাই,মম।”
নিজ কক্ষে এক কাপ গ্রীন টি হাতে নিয়ে সোফায় বসে ছিলেন সানিয়া বেগম।আফিম হটাৎই অনুমতি নিয়ে তার কক্ষে এসে নম্র কন্ঠে কথাটি বলতেই ছেলের দিকে চোখ উঠিয়ে তাকান সে।কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠেন,
-সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছো?
-তোমার মতামত ছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়াটা শিখিয়েছো আমায়?
কথাটি শোনা মাত্র সানিয়া বেগমের ঠোঁটে এক চিলতে হাসি জায়গা করে নেয়।ছেলেকে সুশিক্ষা দিতেই তো তিনি নিজের জীবনের মূল্যবান সময়গুলো ছেলেকে ঘিরেই শেষ করে দিয়েছেন।সেই সাথে ত্যাগ স্বীকারও তো কম করেননি তিনি।আজ তার ছেলে তাকে প্রাপ্য সম্মান,মূল্য এবং ভালোবাসা দেয় এটিই কি তার প্রাপ্তি নয়!
কিছুটা সময় নিশ্চুপ থেকে সানিয়া বেগম বলে ওঠেন,
-আফিম,আমি তোমায় ভীষণ যত্নে বড় করেছি বাবা।তোমায় একজন যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে গড়তে আমি নিজের তরফ থেকে কোনো কমতি রাখিনি।আলহামদুলিল্লাহ!হয়তো আমি সফলও।অতীতে যেহেতু তোমায় সঠিক পথ প্রদর্শনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি বর্তমানে এর বিপরীত করবো না।
মায়ের কথা শুনে ঠোঁটে আলতো হাসি টেনে আফিম সোফায় তার মায়ের পাশে যেয়ে বসে।মায়ের একটি হাত তার দু’হাতের মাঝে নিয়ে তাতে ঠোঁট স্পর্শ করে বলে ওঠে,
-I know mom[আমি জানি মা]
ঠোঁটে হাসি টেনে সানিয়া বেগম বলে ওঠেন,
-আমি চাইছি বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তুমি নাফিয়াকে ভালো করে জেনে-বুঝে নেও।তোমার বাবা এবং আমার সম্পর্কের বিষয়ে তুমি অজানা নও,আফিম।যে ভুল আমি এবং তোমার পিতা দু’জনে করেছিলাম সে একই ভুল তুমিও করো তা চাইছি না।ঠিক এজন্যেই তোমার ৩৩ বছর বয়স হবার পরও কখনো বিয়ের জন্যে চাপ দেইনি,নিজের থেকে কোনো মেয়েও তোমার জন্যে পছন্দ করিনি।আমি চেয়েছি তোমার জীবন সঙ্গী তুমি নিজে খুঁজে নেও।
-নিয়েছি মম।মিস.শেখ আমার জীবন সঙ্গী হওয়ার জন্য পুরোপুরি যোগ্য।
-ভেবে বলছো?
-হ্যা।
ছেলের কথায় ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে সানিয়া বেগম ছেলের কান টেনে বলে ওঠেন,
-কবে দিয়ে চলছে এসব হ্যা?তলে তলে টেম্পো চালাচ্ছিলে দু’জন?
মায়ের কথায় হেসে দেয় আফিম।
!!
“গার্ডেনে এসো ফাস্ট”
আফিমের নাম্বার হতে ম্যাসেজটি পেতেই ব্রু কুঁচকে ফেলে নাফিয়া।দিনে-দুপুরে চাইছে টা কি ছেলেটা!
দাদীর পায়ে ব্যথা অনুভব হওয়ায় নাফিয়া দাদীর পা ম্যাসেজ করছিলো।এখন কিভাবে যাবে সে আফিমের কাছে!
নাফিয়া পা ম্যাসেজ করতে করতেই দাদীর দিকে তাকায়।দেখতে পায় দাদী ঘুমিয়ে পরেছেন।এখন আর তাকে আঁটকায় কে!খুশিতে তার ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে।আর দেরি না করে ধীরে ধীরে দাদীর কাছ থেকে উঠে গার্ডেনের দিকে অগ্রসর হয় নাফিয়া।
অনেকটা জায়গা নিয়েই বাড়ির চারপাশ ঘিরে বড় করে গার্ডেন করা হয়েছে।নাফিয়া গেটের বাইরে এসে বুঝে উঠতে পারছে না যে সে আসলে গার্ডেনের কোন দিক টায় গেলে আফিমকে পাবে।ঠিক এমন সময় নাফিয়ার কানে একটি শব্দ আসে।কেউ শিস বাজালে যেমন শব্দ হয় ঠিক তেমনই শব্দ টা।শব্দের উৎসের দিকে তাকাতেই নাফিয়া দেখা পায় আফিমের।ছেলেটি তার দিকে তাকিয়েই পকেটে দু’হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নাফিয়া ধীরে ধীরে তার দিকে এগোতে শুরু করে।সেই সাথে একটু একটু করে লজ্জারা এসে জায়গা করে নিচ্ছে নাফিয়ার মনে, হৃদয়ও আনন্দানুভব করছে।আফিমের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই আফিম নাফিয়ার আরো কাছে এসে দাঁড়ায়।এক হাতে নাফিয়ার গাল স্পর্শ করে নাফিয়ার নাকের সাথে নিজের নাক আলতো করে ঘষে মৃদু স্বরে আফিম বলে ওঠে,
-কি করছিলে?
নাফিয়া চোখ বুজা অবস্থায় মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-পা ম্যাসেজ।
নাফিয়ার কথাটি শুনে চোখ মেলে তাকায় আফিম।শান্ত কন্ঠেই বলে ওঠে,
-এসবের জন্যে সার্ভেন্ট আছে।
ঠোঁটে হাসি টেনে নাফিয়া বলে ওঠে,
-দাদীর প্রতিটি কাজ করার দায়িত্ব আমার নয় কি?
-না।তোমার দায়িত্ব শুধু দাদীর সাথে থাকা এবং তার তিন বেলার ওষুধের প্রতি খেয়াল রাখা।
নাফিয়া কিছু না বলে ঠোঁটে একটু হাসি নিয়ে আফিমের এক গালে হাত রেখে বলে ওঠে,
-দাদীর কাজগুলো করতে আমার ভালো লাগে।আর পা ম্যাসেজ দাদী আমায় করতে বলেননি আমি নিজে থেকেই করেছি।
কথাটি শুনে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-দাদী শাশুড়ীর মন জয় করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে বুঝি?
এমন কথায় লজ্জা পায় নাফিয়া।আফিমের গাল থেকে নিজের হাতটি সরিয়ে নিচের দিকে দৃষ্টি অর্পন করে সে।
নাফিয়ার লজ্জামাখা চেহারাখানির দিকে কিছুটা সময় নিরবে তাকিয়ে থাকবার পর এক ঘোরলাগা কন্ঠে আফিম বলে ওঠে,
-উইল ইউ বি ইন মাই আর্মস,মিস.শেখ?[আপনি কি আমার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হবেন,মিস.শেখ?]
আফিমের করা প্রশ্নে নাফিয়ার লজ্জা আরো কয়েক শত গুণ বেড়ে গেলো।সেই সাথে তার অবাধ্য হৃদয়ের স্পন্দনও বাড়তে আরম্ভ করেছে।নাফিয়া একটু একটু করে কচ্ছপের গতিতে আফিমের একদম কাছে গিয়ে আফিমের বুকে আলতো করে মাথা রাখে।
নাফিয়ার মনে হচ্ছে সে যেনো কোনো এক অসাধ্যকে সাধন করে ফেলেছে।আফিমের হৃদয়ের স্পন্দন প্রথমবারের মতো অনুভব করায় এক অদ্ভুত রকমের প্রশান্তি নাফিয়ার হৃদয়জুড়ে জায়গা করে নিয়েছে এবং আফিমের প্রতিটি হৃৎস্পন্দন,নাফিয়ার হৃৎস্পন্দনকে কয়েকশো গুণ বাড়িয়ে চলছে।দ্রুতগতিতে স্পন্দিত হওয়া হৃদয় নিয়ে আবেশে নিজের চোখজোড়া বুজে নেয় সে।
নিজের বুকে নাফিয়ার অস্তিত্ব পেয়ে ঠোঁটে আলতো হাসি ফুটিয়ে তোলে আফিম।তার প্রিয়াকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নেয় সে।
!!
চিন্তার ভাজ নয়না বেগম ও তার স্বামী উভয়ের কপালেই বিদ্যমান।উভয়ই নিজ কক্ষে বসে গভীর ভাবে কিছু একটি নিয়ে ভাবছেন।নিরাবতা ভেঙে নয়না বেগম বলে ওঠেন,
-শুনছেন?
-হুম।
-ব্যাপারটি মোটেও সুবিধের মনে হচ্ছে না আমার।
স্ত্রীর দিকে চোখ উঠিয়ে তাকান অভ্র সাহেব।নয়না বেগম স্বামীর কিছু বলার অপেক্ষা না করে আবারও বলে ওঠেন,
-একে তো অর্থবিত্তের দিক থেকে তারা আমাদের তুলনায় বেশ এগিয়ে।সেই সাথে ছেলের চেহারা তো মা শাহ আল্লাহ!সেখানে আমাদের নাফিয়া শ্যামবর্ণা।তবে কেনো তারা তাদের সোনার টুকরা একমাত্র ছেলের জন্যে নাফিয়ার হাত চাইছে?
-পারিবারিক বিয়েতে আমরা রুপ এবং অর্থবিত্তকে প্রাধান্য দিলেও ভালোবাসা কিন্তু এসবের মোহতাজ নয়।যতটুকু আঁচ করতে পারছি,আফিম হয়তো নাফিয়াকে পছন্দ করেছে।আর নিজের একমাত্র ছেলের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়েই সানিয়া বেগম এবং তার শাশুড়ি আজ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন।
-সানিয়া বেগম ও তার স্বামীর সম্পর্ক টাও তো ঠিক নেই।এইসব বড় ঘরের মানুষের সম্পর্ক টেকেই নাহ।আমি আমার মেয়ের বিয়ে এমন ঘরে দিতে চাইছি না।
উত্তরে মুচকি হাসেন অভ্র সাহেব।তিনি তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন,
-সম্পর্কে আবদ্ধ দুটি মানুষই যখন সম্পর্কের যত্ন নেয় তখন সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে না।উভয়ের মাঝে ভালোবাসা থাকলে সম্পর্কে যত্ন থাকে।সময়ের অভাবে একজন যত্ন একটু কম নিলে আরেকজন হয় অভিমান করে সতর্কবার্তা দেয় নাহয় অপর মানুষটির ব্যস্ততা উপলব্ধি করে মানিয়ে নেয় এবং নিজের তরফ থেকে যত্ন নেওয়া টা বাড়িয়ে দেয়।সম্পর্কের যত্ন নেওয়ার জন্য উভয়ের মাঝে ভালোবাসাটা থাকা আবশ্যক।তাই নাফিয়া এবং আফিম উভয় যদি উভয়কে ভালোবাসে তবে এ সম্পর্কে আমরা দ্বিমত করবো না।তবে আফিম মানুষ হিসেবে কেমন সে সমন্ধে খোঁজ নিতে হবে।তুমি নাফিয়ার সাথে কথা বলে জেনে নেও ওর কি মতামত এ বিয়ে নিয়ে।
!!
বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে নাফিয়া।নিজের ভাগ্যের উপর নিজেরই হিংসে হচ্ছে তার।এতো এতো নিয়ামত আল্লাহ এই ক্ষুদ্র সময়ের মাঝে তাকে দিয়েছেন যে সে নিজের ভাগ্যকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।সেই সাথে নিজের এতো আনন্দ রাখবার জায়গা ও তো খুঁজে পাচ্ছে না সে।
বেশি না কয়েক ঘন্টা আগেরই কথা।নাফিয়া গার্ডেন হতে আফিমের সাথে দেখা করে আবারও দাদীর কক্ষে ফিরে আসে।এসে দেখে দাদীর ঘুম ভেঙে গিয়েছে এবং সানিয়া বেগমের সাথে কোনো একটি বিষয়ে কথা বলছেন।বিরক্ত করা টা ঠিক হবে না ভেবে দাদীর কক্ষে আর প্রবেশ না করে নিজের কক্ষে চলে যায় সে।এরই ঠিক ১ ঘন্টার মাঝে সানিয়া বেগম নাফিয়াকে এসে বলেন নাফিয়া যেনো প্রস্তুতি নেয় নিজ বাড়িতে যাবার জন্যে।সেই সাথে এও বলেন যে,সে এবং দাদীও যাবেন।নাফিয়া প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না।আফিমকে কল এবং ম্যাসেজ উভয়ই করেছিলো সে কিন্তু আফিমের তরফ থেকে কোনো সাড়া পেয়েছিলো না।ভয় মনে চেপে রেখে দাদী এবং সানিয়া বেগম উভয়কে নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসে।সানিয়া বেগম এবং দাদীর সাথে ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলেন অভ্র সাহেব এবং নয়না বেগম।কথার মাঝ দিকে ড্রাইভার দু-হাত ভরে মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবার নিয়ে উপস্থিত হয়।এসব দেখে এবং লুকিয়ে কিছু কথা শোনার পর নাফিয়ার আর বুঝতে বাকি রয় না কিছু।খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় সে।সেই সাথে একটু চিন্তেও হচ্ছে,তার বাবা-মা বিয়ে টা মেনে নিবে তো?
হটাৎই নাফিয়ার কক্ষের দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ হয়।নাফিয়া দেরি না করে দ্রুত পদে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।নয়না বেগম কিছু না বলে কক্ষে প্রবেশ করে বিছানায় গিয়ে বসেন।নাফিয়াও মায়ের পেছন পেছন গিয়ে বিছানার পাশে দাঁড়ায়।নয়না বেগম গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করে ওঠে,
-আফিমের জন্য তোমার হাত চাইতে এসেছিলেন সানিয়া বেগম।এ বিষয়ে কিছু জানতে?
-নাহ।
-বিয়েতে তোমার মত কি?
লজ্জায় কি বলবে বুঝতে পারছে না নাফিয়া।নিজের মেয়ের লজ্জায় লাল হওয়া মুখটা দেখেই যা বুঝার বুঝে নেন নয়না বেগম।
চলবে