#আফিম_বড্ড_নেশালো_০২,অন্তীম_পর্ব [প্রথমাংশ]
#লেখিকা_মাহযাবীন
ক্লান্ত শরীরে অফিস হতে সবেই বাড়ি ফিরেছে আফিম।আগের মতো সারাটাক্ষণ নাফিয়াকে আর সান্নিধ্যে রাখা হয়ে ওঠে না তার।মাঝে কত বসন্তই তো পাড় হলো, সময়ের সাথে সাথে সেই সপ্তদশী কিশোরী আজ কত বড় হয়ে গেছে।বেড়েছে তার দায়িত্ব, চাপ ও কর্মব্যস্ততা।সময় কই আগের মতো সারাটা দিন আফিমের সাথে তার ক্যাবিনে পরে থাকার!অবশ্য আফিমও তো তা চায় না।সে নিজেও তো চায় তার অর্ধাঙ্গীনি দায়িত্ব নিক,পরিবার সামলে রাখার পাশাপাশি কর্মজীবনেও হোক সফল।
তাদের সারাদিনের এই বিচ্ছেদ টাই যেনো দিনশেষে তাদের একে-অপরের কাছে আসার লোভ বাড়িয়ে দেয়, হৃদয়কে করে রাখে ব্যাকুল।রোজকার মতো আজও ব্যাকুল হৃদয়ে বাড়ি ফিরেছে ছেলেটা।নিজের প্রেয়সীর স্পর্শে ক্লান্তি দূর করবে বলে তড়িঘড়ি করে নিজের কক্ষে প্রবেশ করে সে।কক্ষে প্রবেশ করতেই আফিম অবাক হলো খানিক।অন্ধকার কক্ষের কোথাও অস্তিত্ব নেই নাফিয়ার।তবে বিছানার মাঝ বরাবর দীপ্যমান কিছু একটা নজর কাড়ছে তার।আফিম এগিয়ে যায় সেথায়।দেখতে পায়,বিছানার ঠিক মাঝ বরাবর একখানা চিঠি খামে মুড়িয়ে রাখা।তার পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা বেশ কয়েকটা জুঁইফুল ও রঙিন মোমবাতি।
ঠোঁটে হাসি ফোটে আফিমের।’সাদা’ রঙ টা তার ভীষণ পছন্দের।তাই জন্যে ফুলের ক্ষেত্রেও সাদা রঙের ফুলগুলোর প্রতি বেশি ঝোঁক তার।মেয়েটা জানে তা।তাই তো আফিমকে দেওয়ার জন্য শুভ্র রঙা সুঘ্রাণযুক্ত জুঁইফুলটাই বেছে নিয়েছে সে।
আফিম হাতে তুললো সেই চিঠি খানা।শার্টের বুকের কাছের কয়েকটা বোতাম খুলতে খুলতে বসলো বিছানায়।অতঃপর খাম হতে চিঠি বের করে পড়তে আরম্ভ করলো,
“প্রিয় অভিরতি,
মনে পরে?এক তীব্র বর্ষণের রাতে আপনার দেখা হয় এক মেঘবালিকার সাথে।জ্বরের ঘোরে আপনি যখন তার খুব কাছে এসেছিলেন, এতোটা কাছে যে আপনার উষ্ণ নিঃশ্বাস তার চোখমুখে আছড়ে পরছিলো ঠিক ঐ সময় তার চোখ পরে আপনার চোখে।কি স্বচ্ছ, স্পষ্ট ভাষা সে চোখের!আপনি কি জানেন আপনার সেই চাহনিতে নিরাপত্তা,নিশ্চয়তা খুঁজে পেয়েছিলো সেই মেঘবালিকা।সেই আপনাকে প্রথম দেখেই তার মন বলেছিলো,
“এই মানুষটা ভরসার যোগ্য”
মনে বড় বড় দুঃখ চেপে রাখা অসহায় ছোট্ট মেঘকন্যাকে যত্ন করে নিজের হৃদয়ে তুলে নিয়েছিলেন আপনি৷দিয়েছিলেন আপনার হৃদয়ের বিশাল অন্তরীক্ষে আধিপত্য।
ছোট্ট সেই কিশোরীর জীবনে তখন তার মাম্মি ছাড়া কিচ্ছু ছিলো না,কোনো যোগ্যতা ছিলো না,মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো না,জীবন বেরঙ ও ভালোবাসা শূন্য হয়ে ছিলো।সেই কিশোরীকে নিজ হাতে গড়েছেন আপনি।আজ এই যুবতীর ভীষণ গুণ।এক সনামধন্য কলেজের শিক্ষিকা সে।প্রায় সব রকম রান্নাবান্না করতে জানে,সুন্দর নাচতে জানে, সেলাইয়ের কাজ করতে জানে,অ্যাম্বোটারির কাজ করতে জানে,ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবেও খুব খারাপ না আর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতেও পিছিয়ে নেই এই গুণবতীটা আফিম ইবনানের হাতে গড়ে ওঠা এক যুবতী।এই গুণবতী নিজের আত্মরক্ষা করতেও জানে।মাঝে রাস্তায় একদিন যখন কয়েকটা ছেলে বাজে ইশারা করেছিলো সেদিন চুপ করে, মাথা নিচু করে ঐ জা*য়ারগুলোকে পাশ কাটিয়ে যেতে হয়নি এই যুবতীর।বরং এক মেয়ের শক্ত হাতের থাপ্পড় খেয়ে যখন এক একটা মুখ থুবড়ে পড়েছিলো রাস্তায় সেদিন নির্ঘাত টের পেয়েছিলো এই রমনী আসলে রমনী না বরং আফিম ইবনানের ‘ঝাঁসি কি রানী’।
সেই ছোট্ট মেঘকন্যাকে গুণে গুণান্বিত করবার পাশাপাশি তার ভালোবাসা শূন্য বেরঙ জীবনটাকে রঙধনুর ন্যায় রঙ দিয়েছেন আপনি।প্রেম, ভালোবাসা, আদরের পাঠ পড়ানোর পাশাপাশি বিবাহিত জীবনের দায়িত্বগুলোও শিখিয়ে দিয়েছেন সুনিপুণ ভাবে।ভুল হলে পথপ্রদর্শক হয়েছেন,অপরাধ করলে শাসক।আবার অনুভূতি প্রকাশে অস্বস্তি অনুভব করলে খুব কাছের বন্ধুর মতো হাত রেখেছেন কাঁধে।বাকিটা সময় তো ছিলেন শুধুই তাহার প্রেমিক।
আপনি কি জানেন আপনার এই ছোট্ট মেঘবালিকা আপনাকে ভীষণ ভালোবাসে?ভীষণ মানে ভীষণ। উম,ভাব্বেন না এই ভালোবাসা টা কৃতজ্ঞতা থেকে এসেছে।এসেছে মুগ্ধতা থেকে।এই মেঘবালিকার হৃদয় জুড়ে ছেয়ে আছে আপনিময় মুগ্ধতা।আপনার অনন্য চিন্তাচেতনাই এই মুগ্ধতার প্রধান কারণ।এই মেঘবালিকা আমৃত্যু আপনাতে মুগ্ধ হয়ে থাকতে চায় আফিম।আপনার আদরে মুড়িয়ে রাখতে চায় নিজেকে।এক অনন্য চিন্তাচেতনা ও আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যের নেশালো পুরুষটার নেশায় আসক্ত হয়ে থাকতে চায় এই মেঘকন্যা।এই ‘আফিম’ নামক নেশাটাকে সে আমৃত্যু নিজের একান্তই নিজের করে রাখতে চায়।থাকবেন আফিম?এই মেঘবালিকাকে নিজের হৃদয়ের বিশাল অন্তরীক্ষে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেওয়ার সুযোগ দিবেন?কখনো ‘বিচ্ছেদ’ নামক কালো আঁধারে নিমজ্জিত হবে না তো আমাদের সম্পর্ক টা?যদি হয় তাহলে জেনে রেখেন আপনার মেঘকন্যা সে আঁধার ঠেলে কখনো আলোর সন্ধান পাবে না।সে ডুবে যাবে সেই আঁধারে আর তার হৃদয় জুড়ে ছেয়ে যাবে অপূর্ণতা,শূন্যতা ও ‘আফিম’ নামক এক তীব্র নেশার অপূরনীয় অভাব।
ইতি,
আপনার অর্ধাঙ্গীনি”
চিঠি খানা পড়া শেষ হলেও ঘোর কাটলো না আফিমের।তার হৃৎপিণ্ডের সংকোচন-প্রসারণ কমলো না বৈকি বেড়েই চললো।প্রতিক্রিয়া দেখাতে যেনো ভুলেই গিয়েছে ছেলেটা।ডুবে রইলো তার প্রেয়সীর আবেগঘন সে চিঠিখানাতে।
এমন সময় ফোন বেজে ওঠে আফিমের।ধ্যান ভাঙে তার।ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই দেখতে পায় নিজের প্রেয়সীর নামখানা।তৎক্ষনাৎ তড়িঘড়ি করে কল রিসিভ করে সে।কিন্তু কল রিসিভ করতেই অপর পাশ হতে কল কেটে দেওয়া হয়।ব্রু কুঁচকায় আফিম।ক’সেকেন্ড বিলম্বে কিছু না ভেবেই আবারও সে নাম্বারে ডায়াল করতে উদ্ভূত হয় সে।কিন্তু তার আগেই একখানা ক্ষুদেবার্তা আসে ফোনে।সেখানে লেখা,
“আজ হটাৎ নিজের মনে লুকোনো অনুভূতিগুলো আপনাকে কেনো জানিয়েছি সে প্রশ্নে জেগেছে মনে?উত্তর জানতে চাইলে আগে ফ্রেশ হয়ে নিন।তারপর আমি যে জামা বের করে রেখে এসেছি তা পড়ে নিয়ে খুঁজুন আমাকে।ওয়েটিং ফর ইউ।”
!!
প্রবাহমান নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে দু’জন মানব মানবী।কালো আবরণে আবৃত আকাশের বুকে দীপ্যমান মস্ত বড় একখানা চাঁদ।শো শো বাতাস বইছে চারিপাশে।এই বাতাসে মৃদু দুলছে এক কৃষ্ণকলির খাটো ঝরঝরে চুল।
রিয়াদ কিছুটা সময় চাঁদে দৃষ্টি আবদ্ধ করে রাখবার পর নিজের দৃষ্টি ফেরায় তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কুসুমের দিকে।মেয়েটার ঠোঁটে মৃদু হাসি।অন্যমনস্ক হয়ে কি যেনো ভাবতে ব্যস্ত সে।রিয়াদ দূরত্ব কমায় দু’জনের মাঝের।আলতো করে হাত রাখে নিজের স্ত্রীর কোমরে।কোমরে মৃদু চাপ প্রয়োগ করে নিজের আরও কাছে টেনে নেয় মেয়েটিকে।
হটাৎ রিয়াদের স্পর্শে চমকে ওঠে মেয়েটা।রিয়াদের শান্ত চোখে চোখ রাখে সে।রিয়াদ প্রশ্ন করে ওঠে,
-কি ভাবছিলেন?
এবার মৃদু হাসে কুসুম।রিয়াদের দিকে ফিরে দু’হাতে গলা জড়িয়ে ধরে ছেলেটার।রিয়াদও দু’হাতে আঁকড়ে ধরে তার কোমর।দু’জনার চোখ একে-অপরে আবদ্ধ।কুসুম শীতল কণ্ঠে বলে ওঠে,
-এইযে এতোটা বছর কাটিয়ে দিলাম আপনার স্ত্রী হয়ে।মাঝে মাঝে মনে হয় এ সব টাই স্বপ্ন।নাহয় আমার মতো কৃষ্ণবর্ণাকে বাস্তবে কোনো সুদর্শন পুরুষ কি করে ভালোবাসতে পারে?
কুসুমের কথায় মুহূর্তেই চোখমুখে বিরক্তি ফুটে ওঠে রিয়াদের।এইযে মেয়েটা নিজের গায়ের রং এর জন্য নিজেকে ছোট করে দেখে এটাই সহ্য হয় না তার।বুঝে পায় না গায়ের রং টা ফর্সা হলেও বা কি পরিবর্তন আসতো?কুসুম কি পরিবর্তন হয়ে যেতো?অন্য কেউতে পরিণত হয়ে যেতো?যদি এমনটাই হতো তাহলে তো তাকে ভালোবাসতো না রিয়াদ।কারণ সে তো এই কুসুম টাকেই চায়।যে কুসুমের সুখ সে,দুঃখ সে,ব্যধি সে,নিরাময় ও সে।এই কুসুমটার চোখে যে তার জন্য এক সমুদ্র সমান ভালোবাসা সে দেখতে পায় সেই একই ভালোবাসা কি সে পেত কোনো শ্বেতবর্ণার ধারে?পেলেও সেই শ্বেতবর্ণাকে চায় না রিয়াদ।সে শুধুই তার কৃষ্ণচূড়াকে চায় কারণ এই কৃষ্ণচূড়াতেই তার মন বাঁচে।
বিরক্ত কন্ঠে কিছু বলতে উদ্ভূত হয় রিয়াদ।তবে তাকে থামিয়ে দেয় কুসুম।বলে ওঠে,
-আমাকে বলতে দিন রিয়াদ।আমি বলতে চাই।জানেন,প্রথম যেদিন বললেন আপনি আমাকে চান সেদিন হৃদয়ে সুখের বন্যা বয়ে গিয়েছিলো আমার।কিন্তু মনের কোণে এক ভয় বাসা বেঁধেছিলো এই ভেবে যে, আমার প্রতি আপনার অনুভূতি ক্ষণিকের জন্য নয় তো?ক’দিন পরেই কি ঝোঁক কেটে যাবে আপনার?সমাজের অন্য মানুষগুলোর মতো আপনিও কি আমায় অবহেলায় মুড়িয়ে দিবেন?এসব চিন্তায় ভয়ে ভয়ে থাকতাম সবসময়।কিন্তু আমার সব চিন্তা ভুল প্রমাণিত করে আপনি নিজের বউ বানিয়ে ঘরে তুললেন আমায়।শুরু হলো সমাজের আরেক ধরনের মানসিক অত্যাচার।যে-ই আমাদের দেখতো বা দেখে বলে যে,”ইশ,কি সুন্দর ছেলের কি এক বউ! /ছেলেটা এতো সুন্দর, কি দেখে এমন মেয়ে বিয়ে করছে?/ইশ,ছেলেটার কপাল কি খারাপ,এতো সুন্দর হয়েও বউ পাইলো এমন কালা!” এমন সব কথা প্রায় সবাই বলতো।এক প্রকার সবার মুখে মুখে রটে গেলো রিয়াদের কপাল খারাপ।কেনো খারাপ?কারণ তার বউ কালো।আপনি প্রতিবাদ করতেন এসব কথার,বুঝাতেন আমাকে,বেশি বেশি আদর দিয়ে আমার মন ভালো করার চেষ্টা করতেন।এতে আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা,সম্মান অনেকাংশে বেড়ে যেতো।সেই সাথে বেড়ে যেতো আপনাকে হারানোর ভয় টাও।আপনার কথামতো আমি ঠিকই মানুষের কথা কানে তোলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম কিন্তু মনের কোণে আবারও একটা ভয় তৈরি হলো।মনে হতে লাগলো, মানুষের এসব কথায় যদি আপনি প্রভাবিত হয়ে যান কোনো দিন?যদি সত্যিই কোনো সুন্দরীর মোহে আঁটকে যান?যদি আমার প্রতি আপনার মন উঠে যায়?
এসব ভেবে ভেবে মানসিকভাবে ভীষণ কষ্ট পেতাম।কত যে কাঁদতাম লুকিয়ে লুকিয়ে।আল্লাহকে বলতাম আপনার চোখে আমাকে দিন দিন সুন্দর বানিয়ে দিতে যেনো কখনো ছেড়ে না যান আমাকে।
আমি জানি না আমার সে দোয়া কবুল হতো কিনা কিন্তু প্রতিবার দোয়া করবার পর দেখতাম আগের থেকে আপনি আমাকে আরও ভালোবাসতে আরম্ভ করেছেন।এইযে এতো গুলো বছর পাড় হলো,এখন আমি শুধু আপনার স্ত্রী নই বরং আপনার দুই বাচ্চার মাও।মানুষ বলে বিবাহিত জীবন সময়ের সাথে সাথে বেরঙ হয়ে যায়।এক সময় সংসার টিকে থাকে শুধু মাত্র সন্তানের মুখ চেয়ে।আমাদের বিয়ের বয়স বাড়লো,বাচ্চা হলো এখন বাচ্চারা কিছুটা বড়ও হয়েছে কিন্তু কই আমাদের সম্পর্ক টা তো বেরঙ হয়নি।বরং প্রথম দিনের থেকে এখন আপনার চোখে আমি নিজের জন্য বেশি ভালোবাসা দেখতে পাই।এইযে দ্বিতীয়বারও আমার সব চিন্তাগুলোকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে আপনি আমাদের কুৎসিত সমাজটাকে একটা সুন্দর মনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।ভালোবাসাটাকে জয়ী করে বর্ণবৈষম্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিলেন। যারা বলতো,”সুন্দর মেয়েরাই জামাই ধরে রাখতে পারে না সেখানে এই কাইল্লা সংসার টিকাবে কেমনে?” তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন সৌন্দর্য আসলে সাদাকালোতে নয় বরং সুন্দর মন ও স্বচ্ছ নিয়তে।
কথাগুলো বলে থামে কুসুম।তার টলমল চোখে একরাশ মুগ্ধতা ফুটে আছে।এ মুগ্ধ চোখ জোড়ায় দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে রিয়াদ বলে উঠলো,
-সব ক্রেডিট আমায় দিয়ে দিলেন অথচ নিজের সৌন্দর্য টা নিজেই উপলব্ধি করলেন না।সমাজের কি দোষ যেখানে আপনি নিজেই নিজেকে ‘অসুন্দর’ উপাধি দিতে ব্যস্ত!সমাজ যদি কুৎসিত হয় তাহলে সেই কুৎসিত সমাজের বহির্ভূত তো আপনি নিজেও নন।কিন্তু আমার যতটুকু মনে পরে আমি এমন একটা মেয়েকে ভালোবেসেছিলাম যে নিজেকে সুন্দর বলেই মানতো, যার অভিযোগ ছিলো না নিজের প্রতি।সেই কুসুম টা কই যার কাছে সে কালো না বরং কৃষ্ণকলি ছিলো?
-হারিয়ে গেছে রিয়াদ।হারিয়ে গেছে একের পর এক সমাজের কটুক্তিতে ও নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয়ে, অনিশ্চিয়তায়।
কুসুমের ভাঙা কন্ঠস্বরে উক্ত উত্তর পাওয়া মাত্রই তার মুখ দু’হাতে আঁকড়ে ধরে রিয়াদ।শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
-নিজেকে একটু আমার চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করেন প্রিয় কৃষ্ণচূড়া।দেখেন কি সুন্দর হরিণা টানা টানা চোখদুটো আপনার।খাঁড়া নাক,মাঝারি ঠোঁট আর ঐ চাঁদের মতো গোল মুখশ্রী।এতো এতো সৌন্দর্য তো দিয়েছেন আপনাকে স্রষ্টা তাও কেন এতো হীনমন্যতা? অনুচিত না?
চোখে পানি।ঠোঁটে হাসি আর বুকভরা প্রশান্তি নিয়ে মাথা নাড়ায় কুসুম।বলে ওঠে,
-রিয়াদের কৃষ্ণচূড়া সুন্দর, ভীষণ সুন্দর।
হাসি ফুটে ওঠে রিয়াদের ঠোঁটেও।বিলম্ব করে না রিয়াদ।নিজের কৃষ্ণচূড়ার কম্পিত ঠোঁটজোড়া নিজের ঠোঁটের মাঝে টেনে নেয় সে।উভয়ই চোখবুঁজে একে-অপরের মাঝে হারাতে ব্যস্ত হয়ে পরে।
চলবে।