#আফিম_বড্ড_নেশালো_০২,০৪,০৫
#লেখিকা_মাহযাবীন
#পর্বঃ০৪
ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুম চলে আসে নাফিয়ার।সেই সকাল ৫ঃ৩০ হতে রাত ১০ টা অব্দি খাটিয়েছে আফিম তাকে।দুপুরে আফিমকে জব্দ করার উদ্দেশ্যে খাবারে সে ঝাল মিশিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু এর পর নিজেকেই জব্দ হতে হয়েছিলো তার।ঝাল খেয়ে আফিমের তো কিছু হয়ই নাই কিন্তু ধরা পরার ভয়ে তার নিজের আত্মা উড়ে গিয়েছিলো।কাজটা করার আগে ধরা পরে যাওয়ার কথা একবারও ভাবেনি নাফিয়া।সে তো শুধু সুযোগ খুঁজছিলো।আর সুযোগ পেতেই তা কাজে লাগিয়ে নিয়েছে।কিন্তু কাজ টা করার পর যখনই ধরা পড়ে যাওয়ার কথা মাথায় আসছে তখন থেকেই দোয়া-দরুদ সব পড়ে ফেলেছে সে।অতঃপর হয়তো আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে নিয়েছিলো এজন্যেই আফিম এই ঝালের বিষয়টা নিয়ে কোনো ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।জানে বেঁচে যাওয়ার খুশিতে মনে মনে আল্লাহকে বেশ ক’বার ধন্যবাদ দিয়ে বাকিটা সময় নিশ্চিন্তে কাটিয়েছে সে অফিসে।অফিসের কাজ শেষে বাসায় আসবার পর আফিম তাকে ঘুমোতে যেতে বলে নিজের কক্ষে চলে গিয়েছিলো।আর নাফিয়াও নিশ্চিন্ত মনে এখন নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে।
!!
মাঝ রাত!ঘড়ির কাটা ২ এর ঘর ছুঁই ছুঁই।এমন সময় হটাৎ করেই ঘুমের মাঝে নাফিয়ার নাকে কড়া পার্ফিউমের ঘ্রাণ এসে লাগছে।ভীষণ সুন্দর এই ঘ্রাণ টা।হুট করে ঘুমের মাঝে এমন সুঘ্রাণ নাকে এসে লাগায় ঘুম ভেঙে যায় নাফিয়ার।আধো আধো চোখ মেলে তাকাতেই আফিমকে দেখতে পায় সে।হয়তো ভুল দেখছে, এমনটি ভেবে বড় বড় চোখ করে তাকিয়েও আফিমেরই দেখা পায় সে।এবার ভালো করে আশে-পাশে সব দিকে চোখ বুলাতেই দেখতে পায় সে আফিমের কোলে এবং আফিম তাকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছে।হটাৎ এসবের কিছুই বুঝতে না পেরে যেই নাফিয়া কিছু বলতে যাবে ওমন সময়েই আফিম তাকে ওয়াশরুমের ভেতর দাঁড় করিয়ে সাথে সাথে ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।লাইট টাও অফ।সব অন্ধকার!ঘুটঘুটে অন্ধকার।
ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে সে দরজাতেই পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায় আফিম।কান খাঁড়া করে রয় নাফিয়ার ভয়ে চিৎকারের আওয়াজ শুনবার অপেক্ষায়।যুদ্ধ যখন মেয়েটা শুরু করেই দিয়েছে তাহলে সে পিছিয়ে থাকবে কেন!ইটের জবাব পাথর দিয়ে দিতে জানে আফিম কিন্তু এই বাচ্চা মেয়ে তা সহ্য করতে পারবে না ভেবে সে এই সহজ পন্থায় জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আফিম জানে এসব বাচ্চামি!তার মতো বিজনেসম্যান একটা কিশোরী মেয়ের সাথে এমন বাচ্চাদের মতো যুদ্ধে জড়াবে তা মোটেও শোভনীয় নয়।কিন্তু তার ভালো লাগছে এসব করে।ইচ্ছে করে নাফিয়াকে জ্বালানো,ভয় দেখানো আর শেষমেষ এই “যুদ্ধ” নামক বাচ্চামিতে জড়ানো সবটাই উপভোগ করছে আফিম।তার জীবনের ২৮ টা বছরে সে শুধু পড়াশোনা, কাজ আর প্রয়োজনের পেছনে ছুটেছে। একটু অবসর দরকার তার।জীবন নামক বেরঙ জিনিস টাতে একটু রঙের ছোঁয়া দরকার।
প্রায় ১৫ মিনিট পাড় হয়ে গিয়েছে কিন্তু ওয়াশরুমের ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ শোনা যাচ্ছে না।ব্রুদ্বয়ের মাঝে মৃদু ভাজ ফেলে আফিম দরজায় কান পাতে।তবুও কোনো ধরনের আওয়াজ শুনতে সক্ষম হয় না সে।মেয়েটা কি তবে অন্ধকার ভয় পায় না?নাকি অতিরিক্ত ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছে?
এসব ভাবতেই দরজা খুলতে আর দেরি করাটা উচিৎ হবে বলে মনে হলো না আফিমের।সে তৎক্ষনাৎ ওয়াশরুমের দরজা খুলে ভেতর প্রবেশ করে।ভেতর টা ভীষণ অন্ধকার।চিন্তিত চোখে সে নাফিয়ার খোঁজে ওয়াশরুমের ভেতরে চোখ বুলোতেই যাবে এরই মধ্যে তড়িৎ গতিতে কিছু একটা এসে আফিমের বুকে জায়গা করে নেয়।খুব জোরেশোরে আষ্ঠেপৃষ্ঠে আফিমকে জড়িয়ে ধরে আছে নাফিয়া।নিঃশব্দে চোখ থেকে পানি পড়ছে তার।নাফিয়ার এমন কাজে প্রথমে চমকে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে আলতো করে নাফিয়ার পিঠে হাত রাখে আফিম।
কান্না জড়ানো কন্ঠে নাফিয়া বলে ওঠে,
-আমি অন্ধকার ভীষণ ভয় পাই।আপনি প্লিজ আমাকে এখানে একা ছেড়ে যেয়েন না আফিম।
নাফিয়ার কথা শেষ হতেই আফিম নাফিয়ার থেকে একটু সরে এসে আলতো করে নাফিয়ার গাল স্পর্শ করে।নিজের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে নাফিয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে ওঠে,
-তোমার থেকে গুণে গুণে কত বছরের বড় আমি জানো?নিজের থেকে বড় মানুষের নাম ধরে ডাকা ব্যাড ম্যানার্স,শিখো নাই?
ব্রু নাচিয়ে শেষ প্রশ্নটি করে আফিম।নাফিয়া নাক টানতে টানতে বলে ওঠে,
-আর ৬ মাস পর আমার ১৮ তে পড়বে।তাই আমিও বড়।
নাফিয়ার কথায় মৃদু হাসি ফুটে ওঠে আফিমের ঠোঁটে।মাত্র ১৬ সম্পূর্ণ হয়ে ১৭ চলছে এমন বয়সের মেয়ে নাকি বড়!
-হ্যাঁ বড় দেখেই তো অন্ধকারে মাত্র ১৫ মিনিট থেকে চোখের পানি,নাকের পানি এক করে চোখ-মুখ লাল বানিয়ে ফেলেছো!
এক ব্রু উঁচু করে বাঁকা হেসে কথাখানা বলে আফিম।আফিমের কথা গুলো কানে আসতেই সাথে সাথে চোখের পানি মুছে নেয় নাফিয়া।ঠোঁট উল্টে বলে ওঠে,
-দুপুরে খাবারে ঝাল আমি দিয়েছিলাম তা বুঝেছিলেন আপনি, তাই না?এখন সেটিরই প্রতিশোধ নিলেন।আর দুপুর থেকে যে নিরব ছিলেন তা ঝড়ের পূর্বাভাস ছিলো তাই না?
আফিম ঠোঁটে মৃদু হাসি টেনে আলতো করে নাফিয়ার নাক চেপে ধরে বলে ওঠে,
-বুদ্ধিমতি মেয়ে!
আফিমের কথায় রাগ হচ্ছে নাফিয়ার।রেগে সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আফিম বলে ওঠে,
-এর পর থেকে আফিম ইবনানের সাথে লাগতে আসার সাহস তোমার হবে বলে মনে হয় না।ভীতু মানুষের এতো সাহস আসবে কোত্থেকে!
কথাটি বলেই আবারও বাঁকা হাসে আফিম।ঠোঁটে বাঁকা হাসি ও চোখ নাফিয়ার দিকে স্থির রেখে ধীরে ধীরে কদম ফেলে পেছনের দিকে সরে যেতে আরম্ভ করে সে।নাফিয়াও আফিমের দিকে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে।চোখে রাগ তার স্পষ্ট দৃশ্যমান।কয়েক কদম এভাবেই পিছিয়ে গিয়ে নাফিয়ার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে নাফিয়ার বিপরীত দিকে ফিরে সোজা কক্ষ ত্যাগ করে আফিম।দরজার কাছে এসে মনে মনে বলে ওঠে,
“এবার তো তুমি দুঃসাহস দেখাবাই মিস.শেখ।অপেক্ষায় আছি তার।”
আফিমের যাওয়ার আগ অব্দি তার যাওয়ার পানে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো নাফিয়া।ছেলেটি কক্ষ ত্যাগ করতেই নাফিয়া বলে ওঠে,
“আমার সাহস আছে কিনা তা দেখার অপেক্ষায় থাকুন দ্যা গ্রেট রুড ম্যান অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড”
!!
সকাল হতেই নাফিয়ার ডিউটি শুরু।৫ঃ৪৫ মিনিটে কফি নিয়ে হাজির হয় সে আফিমের কক্ষে।আফিম তখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছিলো।আয়নায় নাফিয়াকে দেখতে পেয়ে সে বলে ওঠে,
-Come in,Miss. Sheikh.
নাফিয়া কিছু না বলে চুপচাপ কক্ষে প্রবেশ করে। আফিমের কাছে গিয়ে তার দিকে কফির মগটি এগিয়ে দেয়।আফিম এক হাতে কফি নিয়ে অন্য হাতের চিরুনিটি নাফিয়ার দিকে এগিয়ে দেয়।চিরুনির দিকে এক বার তাকিয়ে আফিমের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় নাফিয়া।আফিম বলে ওঠে,
-আমার সব কাজ তোমার করা উচিৎ মিস.শেখ।কথা তো এমনই হয়েছিলো,তাই না?তো নিজের কাজ করো।
কথাটি বলে চিরুনির দিকে ইশারা করে আফিম।ইশারা বুঝতে পেরে একরাশ অনিচ্ছা নিয়েই চিরুনিটি হাতে নেয় নাফিয়া।আফিম তার বেডে বসতেই নাফিয়া তার চুল আঁচড়ে দেওয়ায় মনোনিবেশ করে।আর আফিম নাফিয়ার বিরক্তিতে ভরা চেহারার দিকে তাকিয়ে কফি খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে মৃদু হেসে নিচ্ছে।
চুল আঁচড়ানো শেষ হতেই আফিম বলে ওঠে,
-মিস.শেখ,জগিং থেকে ফিরেই আমি শাওয়ার নিবো।সো,সব কিছু রেডি করে রাখবা।আর আজ আমাকে তুমি গোসলে হেল্প করবা।
-অ্যা?
-হ্যাঁ,Be prepared.
কথাটি বলে আর দাঁড়ায় না আফিম।সোজা নিজের কক্ষ ত্যাগ করে।
এদিকে সকাল সকাল নাফিয়ার মেজাজের ১২ টা বেজে গিয়েছে।রাগে গা জ্বলছে তার।এখন কিনা এই বুইড়া ছেলেরে তার গোসলে সাহায্য করতে হবে।কোন ধরণের ফাইজলামি এটা! এসব ভাবতে ভাবতেই নাফিয়া মনে মনে বলে ওঠে,
“না জানি কবে বলে বসে,মিস.শেখ আমার মল ত্যাগ করবার জন্যেও তোমার হেল্প লাগবে।”
মনে মনে এমনটি ভাব্বার সাথে সাথেই নাফিয়া নিজে কল্পনা করা শুরু করলো যদি সত্যি এমনটা হয়?
কল্পনা করা শুরু করলেও তা শেষ করতে পারলো না সে।তার আগেই মনে মনে বলে উঠলো,
“ছিঃ!এমন কিছু আমি একটুও করবো না।উফ,এই দামী ধন্যবাদ আমার উপরই এতো ভারী পড়বে তা জানলে জীবনেও এই ব্যাটারে ধন্যবাদ দিতে যাইতাম না”
চলবে।
#আফিম_বড্ড_নেশালো_০২
#লেখিকা_মাহযাবীন
#পর্বঃ০৫
“Are you prepare, Miss. Sheikh?”
ঠোঁটে বাঁকা হাসি নিয়ে কথা টা বলে ওঠে আফিম।নাফিয়া ব্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে ওঠে,
-এই কাজটাও কি আমার দামী ধন্যবাদ এর মধ্যে পড়ে?
-হ্যাঁ।
-আমি যদি দামী ধন্যবাদ না দেই তাহলে?
-তাহলে তোমার আমাকে টাকা দিতে হবে।
-কেনো?
-Cause it was the deal. [কারণ এটা চুক্তি ছিলো]
-যেদিন বলেছিলাম আমি দামী ধন্যবাদ দিতে রাজি সেদিন রাতে একজন সার্ভেন্ট এসে যে একটা পেপারে আমার সাইন চেয়েছিলো সেটি এই ডিল এর ছিলো?
-না পড়েই সাইন করেছিলে?
-একটু পড়েছিলাম যে লেখা ছিলো ৬ মান্থ আপনার আন্ডারে আমি কাজ করতে ইচ্ছুক কিনা সেই ব্যাপারে লিখা ছিলো।
-হ্যাঁ।সাথে এটিও লেখা ছিলো যে ৬ মাসের আগে তুমি কাজ ছাড়লে ৬০০০০ টাকা দিতে হবে।
ষাট হাজার টাকা খুব বড় একটা এমাউন্ট না হলেও নাফিয়ার কাছে এ মুহুর্তে এটি বিশাল বড়সড় ব্যাপার তা অজানা নয় আফিমের।এজন্যেই সে এ ব্যবস্থা করে রেখেছে।
ছোটবেলা দিয়ে টাকার অভাব বুঝার মতো পরিস্থিতিতে কখনো পড়েনি নাফিয়া।তার চাহিদাগুলো পূরণ করার মতো আর্থিক স্বচ্ছলতা টা ছিলো তার অভিভাবকের।তার যখনই যত টাকার প্রয়োজন হতো তা সে পেয়ে যেতো কিন্তু আজ এমন এক পরিস্থিতির স্বীকার সে যে নিজের থাকা-খাওয়ার টাকা টাও তার কাছে নেই।এ মুহূর্তে আফিমের দেওয়া এই আশ্রয় টায় উপকৃত হচ্ছে সে নাহয় না জানি কত কাঠখড় পোড়াতে হতো শুধু কোনো রকম থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে!!
মাথা নিচু করে বেশ কিছু বিষয় ভেবে নিয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-গোসলে দেরি হচ্ছে না আপনার?
নাফিয়ার এমন কথায় যা বুঝার তা বুঝে নিয়েছে আফিম।ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যায় সে।
আফিম স্থান ত্যাগ করতেই মনে মনে একশো একটা গালি দিয়ে নাফিয়াও তার পিছু পিছু ওয়াশরুমে প্রবেশ করে।
আফিমের কক্ষের মতো তার ওয়াশরুম টিও ভালোই বড়।একদিকে ঝর্ণা ও তার পাশেই বাথটাব এবং অন্য সাইডে কাপর পরিধান করার জন্য আলাদা জায়গা।টয়লেটের জায়গাটা আলাদা কাঁচ দিয়ে ঘেরা।হলদে আলোতে চারিপাশ দেখতে ভালোই লাগছে।এসব দেখতে দেখতেই হটাৎ আফিমের দিকে চোখ পড়ে নাফিয়ার।ছেলেটা নিজের টি-শার্ট খুলে ফেলেছে।খালি গায়ে দাঁড়িয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
জীবনে প্রথম কোনো পুরুষকে এভাবে খালি গায়ে দেখায় ভীষণ লজ্জা ও অস্বস্তি লাগছে নাফিয়ার।কি করবে বুঝতে না পেরে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয় সে আফিমের থেকে।আফিম ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মৃদু হাসে।ঠোঁটের দুষ্টু হাসিটি নাফিয়ার থেকে লুকিয়ে বলে ওঠে,
-মিস.শেখ,এখানে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য তেমায় ডাকা হয়নি। Do your work fast![দ্রুত নিজের কাজ করো]
-কি করবো?
-সাওয়ার ওপেন করো।
কথাটি শুনে নাফিয়া আফিমের দিকে না তাকিয়েই সোজা এগিয়ে গিয়ে ঝরনা চালু করে দেয়।পানির ছিটা তারও গায়ে এসে লাগায় একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায় সে।
আফিম সাওয়ারের নিচে স্টিলের একটি টুল পেতে বসে পড়ে।নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-শ্যাম্পু করো চুলে।
আফিমের কথা কানে আসতেই দেওয়ালে লাগানো ছোট্ট ছোট্ট কাঠের বক্সের মধ্য থেকে শ্যাম্পু বের করে তার কাছে এগিয়ে যায় নাফিয়া।সাওয়ার বন্ধ করে আফিমের মাথায় শ্যাম্পু লাগিয়ে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করতে আরম্ভ করে সে।আরামে চোখ বুজে নিয়েছে আফিম।আর যাই হোক মেয়েটার হাতে জাদু আছে।মাথায় তার হাতের স্পর্শ লাগলেই ভীষণ আরাম অনুভব হয়।
মাথায় শ্যাম্পু ডলার মাঝেই নাফিয়ার চোখ যায় আফিমের উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের পিঠের দিকে।পিঠটা দেখতেই এতো মোলায়েম লাগছে যেনো কোনো মাখম।দেখতে ভালো লাগছে নাফিয়ার।ইচ্ছে করছে একটু ছুঁয়ে দিতে।এসব নিষিদ্ধ চিন্তা মাথায় আসতেই দ্রুত নিজেকে সামলে নেয় নাফিয়া।নিজেই নিজেকে কঠিন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বলে ওঠে,
“খবরদার,এসব লুচুমিমার্কা চিন্তাভাবনা মাথায় আনবি না নাফিয়া।একটা মেয়ে হয়ে লুচুমি!ছিঃ ছিঃ”
প্রায় ৪-৫ মিনিট সময় পাড় হবার পরেও নাফিয়া শ্যাম্পু করেই চলছে।এর কারণ বোধগম্য হলো না আফিমের।সে ব্রু কুঁচকে বলে ওঠে,
-আমার চুলে এতোও ময়লা হয়নি মিস.শেখ যে তুমি আধঘন্টা লাগিয়ে শ্যাম্পু করবা!
নিজের চিন্তার মাঝেই হটাৎ আফিমের এমন উক্তি শুনে থতমত খেয়ে যায় নাফিয়া।দ্রুত গতিতে সাওয়ার অন করতেই যাবে তার আগেই স্লিপ খেয়ে ধুম করে মেঝেতে পড়ে যায় সে।হটাৎ এমন কিছু হবে তা আফিমেরও ভাবনাতিত ছিলো।সে দ্রুত নাফিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে অবাক দৃষ্টিতে এক পলক তাকিয়ে পর মূহুর্তেই হেসে ওঠে।
এতোক্ষণ নাফিয়ার চেহারায় ব্যাথা পাওয়ার ছাপ দৃশ্যমান থাকলেও আফিমের হাসি দেখে চেহারায় রাগী ভাব ফুটে উঠেছে তার।রাগী দৃষ্টিতে আফিমের দিকে তাকাতেই আফিম হাসি থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে নাফিয়ার দিকে নিজের এক হাত এগিয়ে দেয় যেনো নাফিয়া তার হাত ধরে উঠে দাঁড়াতে পারে।কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর বদলে নাফিয়া এক হেঁচকা টানে আফিমকেও মেঝেতে ফেলে দেয়।আচমকা নাফিয়ার এমন টানে বেসামাল হয়ে মেঝেতে পড়ে আফিমও ব্যথা পায়।হাসি উড়ে গিয়ে “আউচ” শব্দ করে ওঠে সে।
এবার নাফিয়া হেসে ওঠে।আফিমের ডান বাহুতে জোরে চিমটি দিয়ে বলে ওঠে,
“হাসেন হাসেন,আরো হাসেন।”
কথাটি বলছে আর হাসছে নাফিয়া।মেঝেতে বসে উভয়ই সাওয়ারের পানিতে ভিজে একাকার।কিন্তু এদিকে দুইজনের কারোই খেয়াল নেই।
আফিম নাফিয়ার হাসিমাখা মুখপানে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে,
“দাঁড়াও দেখাচ্ছি তোমায়!”
বলেই উঠে দাঁড়ায় আফিম।নাফিয়াকে কোলে উঠিয়ে এগিয়ে যায় বাথটাবের দিকে।নাফিয়া বুঝতে পারছে না আফিম আসলে কি করতে চাইছে।সে শুধু আফিমের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য হাত-পা ছুড়াছুঁড়ি করছে।
আচমকা পানি ভর্তি বাথটবে পড়ে কোমরে বেশ ভালোই ব্যথা পায় নাফিয়া।চেহারায় ব্যথা পাওয়ার ছাপ ফেলে আফিমের দিকে তাকায় সে।আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে তাকিয়ে আছে তার দিকে।এতে নাফিয়ার রাগ আরো কয়েকশত গুণ বেড়ে যায়। কোনো কিছু না ভেবেই বাথটবের কাছে থাকা সাবান-শ্যাম্পু ও অন্যান্য প্রসাধনী যা পাচ্ছে তাই ই আফিমের দিকে ছুড়ে মারতে আরম্ভ করে সে।আফিম বার বার সরে যাওয়ায় কোনোটি তার গায় লাগছে না। কিন্তু হুট করে একটি ভারী বোতল এসে আফিমের বাম বাহুতে লাগে।বেশ ভালোই ব্যাথা পায় ছেলেটি।ব্যাথায় “আউচ” শব্দ করে নাফিয়ার দিকে এগোতে এগোতে বলে ওঠে,
“তোমাকে তো আমি”
আফিমের কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই কোনোমতে বাথটাব হতে উঠে দাঁড়ায় নাফিয়া।হাতে সাবান নিয়ে আফিমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
“কাছে আসবেন না,এটাও ছুঁড়ে মারবো কিন্তু!”
কে শোনে কার কথা।নাফিয়ার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে আফিম এগিয়ে যায় তার দিকে।যেই আফিম নাফিয়াকে ধরতে যাবে নাফিয়া তখনই দৌড়ে সরে যেতে চায়।কিন্তু তাতে সে সফল হয় না।আফিম পেছন থেকে দু’হাতের বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলেছে তাকে।এ বন্ধন হতে মুক্ত হওয়া অসম্ভব।আফিম নাফিয়াকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে বলে ওঠে,
-পালাতে পারবে না মিস.শেখ।আজ তোমাকে এই বাথটবের পানিতে চুবিয়েই ছাড়বো।
আফিমের কথা কানে আসতেই কাঁদো কাঁদো কন্ঠে নাফিয়া বলে ওঠে,
-স্যরি প্লিজ,ছেড়ে দিন।
নাফিয়া এভাবে স্যরি বলেই যাচ্ছে।নাফিয়ার এসব অনুনয় বিনয় দেখে হাসি পাচ্ছে আফিমের।মনে মনে তো সে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছে যে ৩-৪ বার আজ নাফিয়াকে সে পানিতে চুবাবেই চুবাতেই।আজকাল একটুও ভয় পাচ্ছে না মেয়েটা তাকে।এভাবে তো চলবে না।
এসব ভাবতে ভাবতেই আফিমের চোখ যায় নাফিয়ার শরীরের দিকে।ঢিলেঢালা সেলোয়ার-কামিজ পড়ে আছে মেয়েটি।কিন্তু পানিতে ভিজে তা একদম গায়ের সাথে লেপ্টে আছে।গায়ের ওড়না টাও পড়ে আছে বাথটবে।ভীষণ আবেদনময়ী লাগছে মেয়েটিকে।
এসব দিকে এতোক্ষণ খেয়াল করেনি আফিম।এতোক্ষণ চোখই যায়নি এসব দিকে।এখন চোখ যাওয়ায় সাথে সাথে নাফিয়াকে ছেড়ে দেয় আফিম।অন্য দিকে তাকিয়েই বলে ওঠে,
“যাও মাফ করে দিলাম”
হটাৎ আফিমের এতো দয়ার কারণ বোধগম্য হলো না নাফিয়ার।আর এখন এসব ভাব্বার ইচ্ছেও তার নেই।জানে বেঁচেছে এই তো অনেক।আফিমের থেকে ছাড়া পেতেই এক দৌড়ে বাথরুম হতে বেড়িয়ে যায় নাফিয়া।
চলবে।