আফিম_বড্ড_নেশালো_০২,৩৪,৩৫

0
1267

#আফিম_বড্ড_নেশালো_০২,৩৪,৩৫
#লেখিকা_মাহযাবীন
#পর্বঃ৩৪

প্রচন্ড মাথা ব্যথা হওয়ায় কাজ হতে খানিকটা সময় বিরতি নিয়ে দু’হাতে মাথা চেপে ধরে বসে আছে রিয়াদ।এ মুহূর্তে এক কাপ কড়া করে বানানো কফির খুব প্রয়োজন অনুভব করছে সে।কিন্তু কেউকে এক কাপ কফি দিতে বলার শক্তিটুকুও এ মুহূর্তে লোপ পেয়েছে তার।অনিহা কাজ করছে সামান্য একটু নড়তেও।ঠিক এমন সময় কোনো একজনের গলার স্বর কানে আসে রিয়াদের।
“মে আই কাম ইন স্যার?”
শত খারাপ লাগার মাঝেও কাজের ব্যাপারে ছাড় দিতে রাজি নয়।তাই এমন মাথা ব্যথা নিয়েও স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে সে।প্রচন্ড অনিহা নিয়ে চোখ মেলে তাকায় দরজার দিকে।বলে ওঠে,
-কাম ইন।
রিয়াদের পারমিশন নিয়ে ক্যাবিনে প্রবেশ করে কুসুম।হাতে থাকা গরম ধোঁয়া উড়া কফির মগটি রিয়াদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
-স্যার,হয়তো এটা প্রয়োজন আপনার।আর আমার কাছে মাথা ব্যথা কমানোর একটা বাম[balm] আছে।যদি অনুমতি দেন তাহলে লাগিয়ে দিবো?
রিয়াদের ক্যাবিনটা কাঁচ দিয়ে ঘেরাও করা।ফলে ক্যাবিনের ভেতর-বাহির সম্পূর্ণটাই দৃশ্যমান।রিয়াদ বুঝলো, কুসুম বাইরে থেকেই খেয়াল করেছে তার দু’হাতে মাথা চেপে ধরে রাখার দৃশ্য।
ব্রুদ্বয়ের মাঝে মৃদু ভাজ পড়লো রিয়াদের।এই মেয়ের কেনো এতো খেয়াল তার প্রতি? সেই প্রথম থেকেই কুসুমকে ঠিক সুবিধের ঠেকছে না রিয়াদের।তার উপর মেয়েটার এমন সব সন্দেহজনক কাম-কাজ রিয়াদের নেতিবাচক চিন্তেগুলোকে আরো প্রশ্রয় দিচ্ছে।
কিন্তু এ মুহূর্তে মাথা ব্যথা দিয়ে বাঁচতে কফির মগ নিজের হাতে নিয়ে নিলো রিয়াদ।ছোট্ট করে বলে উঠলো,
-ধন্যবাদ।
এরপর পরই চুমুক বসালো কফির মগে।এক চুমুকেই মনে প্রশান্তি লাভ করলো রিয়াদ।ঠিক যেমন কফি এ মুহূর্তে সে চাইছিলো অর্থাৎ কড়া করে বানানো এক মগ কফি ঠিক সেভাবেই বানিয়েছে কুসুম।
রিয়াদের কফিতে চুমুক দেওয়ার মাঝেই কুসুম জিজ্ঞেস করে উঠলো,
-মলম টা লাগিয়ে দিবো?
বেশি ভাবলো না রিয়াদ।চোখ বুঁজে নিয়ে চেয়ারে মাথা ঠেকিয়ে বলে উঠলো,
-দেও।
অনুমতি পেয়ে ঠোঁটে হাসি ফুটলো কুসুমের।অনতিবিলম্বে সে এগিয়ে গেলো রিয়াদের ধারে।দু’আঙুলে মলম নিয়ে আলতো হাতে যত্নের সহিত মালিশ করতে আরম্ভ করলো রিয়াদের কপালে।

!!
“আমি মাম্মির সাথে কথা বলতে চাই,আফিম”
অনুনয়ের স্বরে উক্ত বাক্যটি বললো নাফিয়া।চোখে তার স্পষ্ট আকুতি প্রকাশ্যমান।এ দৃষ্টি হতে চোখ ফিরিয়ে নিলো আফিম।বলে উঠলো,
-নুরি মা নিজের সীদ্ধান্ত জানিয়েছেন যে,তুমি যতদিন পর্যন্ত নিজেকে প্রতিষ্ঠিত অর্থাৎ নিজেকে কোনো একটা পর্যায়ে নিয়ে না দাঁড় করাচ্ছো ততদিন পর্যন্ত তিনি তোমার সাথে দেখা করবেন না এবং কথাও বলবেন না।
আফিমের এমন নির্দয় উত্তর আশা করেনি নাফিয়া।এ উত্তর টি যেনো ঠিকঠাক হজম হলো না তার।তৎক্ষনাৎ প্রশ্ন করে উঠলো,
-কেনো?
-কারণ তার মতে তুমি আইলসা এন্ড গুড ফর নাথিং।সে এটাও বিশ্বাস করে যে তোমার দ্বারা কোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব না অনলি আইলসা অ্যাওয়ার্ড পাওয়া ছাড়া।আর তুমি সোজা আঙুলে ঘি উঠা টাইপের মেয়েও না।তাই তিনি আঙুল বেঁকা করেছেন এবং বলেছেন,আঙুল বেঁকা করেও যদি নিকাম্মার দ্বারা কিছু করানো সম্ভব হয় তাহলে তাতে ক্ষতি কী?
অপমানে মাথা নিচু করে নিয়েছে নাফিয়া।সে শতভাগ নিশ্চিত যে এগুলো তার মাম্মিই বলেছে। কারণ ছোটবেলা দিয়ে এ সংলাপ গুলো কম তো আর শোনেনি সে।সেই সাথে তার মাম্মির কথায় আরেকটু মসল্লা লাগিয়েই যে আফিম তাকে কথা গুলো বললো তা বুঝতেও বাকি রয়নি মেয়েটার।কিন্তু এ মুহুর্তে আফিমের প্রতি রাগ এলো না তার।অভিযোগ তৈরি হলো নিজের মাম্মির উপর।মানুষটা এই লেকচারগুলো নিজ অব্দিই সীমাবদ্ধ রাখতে পারতো।কিন্তু তা না করে তার মাম্মি তার জামাইর সামনেও তাকে এভাবে বেইজ্জত করলো? এটা মানা যায়?
লজ্জায় মাথা আর উঁচু করতে পারছে না নাফিয়া।মুহূর্তেই মনে মনে নিজের সাথেই নিজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে নিলো সে যে,যত পরিশ্রমই করা লাগুক না কেনো সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দেখাবেই দেখাবে।
প্রতিজ্ঞা করা শেষে নিজেকে এই লজ্জার পরিস্থিতি হতে উদ্ধার করতে নাফিয়া বলে ওঠে,
-আমার টিউশনির সময় হয়ে গিয়েছে বোধহয়,চলুন বেরোই।
নাফিয়ার কথায় নিজের হাতঘড়িটার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আফিম।দেখতে পেলো সবে মাত্র ২ টো বেজেছে।চোখমুখে চিন্তার ছাপ ফেলে আফিম নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-কিন্তু ঘড়ি তো অন্য কিছু বলছে!
আফিমের কথায় মৃদু ব্রু কুঁচকে নাফিয়া জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-কি বলছে?
-It says……
এতোটুকু বলে থামে আফিম।চোখমুখে দুষ্টুমি ফুটিয়ে তুলে এক কদম এক কদম করে এগিয়ে আসতে আরম্ভ করে সে নাফিয়ার দিকে।আর একই গতিতে পেছাতে থাকে নাফিয়া।পেছাতে পেছাতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে তার।এগিয়ে আসতে আসতে নাফিয়ার একদম কাছে চলে আসে আফিম।নাফিয়ার ডান দিকে দেওয়ালে হাত ঠেকায় ছেলেটা। মুখ এগিয়ে নিয়ে যায় নাফিয়ার কানের ধারে।মৃদু কন্ঠে বলে ওঠে,
-It says now is the right time to romance.
কথাখানা শেষ করেই অনতিবিলম্বে মেয়েটির কানের নিচে ঠোঁট ছোঁয়ায় আফিম।শিউরে ওঠে নাফিয়া।শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আফিমের শার্টের হাতা।ছেলেটি কানের নিচ হতে একের পর এক চুমুর বর্ষণ করে কাঁধ ও কাঁধ হতে গলায় এসে থামে।গলায় ঠোঁট বুলিয়ে উঠে আসে চিবুক অব্দি।চুমু বসায় সেথায়ও।
ধীরে ধীরে নিঃশ্বাসের গতি বাড়ছে নাফিয়ার।কোনো এক ঘোরে বিলীন হচ্ছে সে ক্রমশ।
চিবুকে চুমু দিয়ে আফিম তাকায় নাফিয়ার মুখ পানে।চোখ বুঁজে রেখেছে মেয়েটি।তার নিঃশ্বাসের গতিই বলে দিচ্ছে তার হৃদযন্ত্রের উপর হওয়া নির্মম অত্যাচারের আত্মকাহিনী।হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের হার এতোটাই বেড়ে গিয়েছে মেয়েটির যেনো আরেকটু বাড়লেই তার হৃদযন্ত্র ফেটে ব্লাস্ট হয়ে যাবে।
নাফিয়ার এমন অবস্থা দেখে ঠোঁট কামড়ে মৃদু হাসে আফিম।নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা নাফিয়ার নিচের ঠোঁট আলতো করে স্পর্শ করে আফিম বলে ওঠে,
-এতোটুকু আদরে এই অবস্থা! ডোজ বাড়লে কি করবা?
এমন প্রশ্নে লজ্জানুভূতি বৃদ্ধি পেলো কিশোরীর।মুখ লুকোতে ঠাঁই নিলো নিজের একান্তই ব্যক্তিগত পুরুষটির বক্ষ মাঝে।শক্তপোক্ত বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে লজ্জারাঙা একখানা হাসি ফুটালো নিজ ওষ্ঠে। হাসলো আফিমও।তার বুক ভরা প্রশান্তি, দুঃখ কোথায়?তবে কি বলা যায় না ‘জীবন সুন্দর’? যায় তো।এক গাল হেসে মন থেকে বলা যায়,
“আলহামদুলিল্লাহ, জীবন সুন্দর”

!!
অন্ধকার একখানা কক্ষ।চারিদিকে সিগারেটের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে।আছে বিদেশি মদের বোতলেরও সমাহার।লাখ টাকার একখানা দামী চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন কোনো এক অবৈধ টাকায় কোটিপতি হওয়া চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তি।হাতে রয়েছে তার ট্রেজারার ব্র্যান্ডের সিগারেট। তাতে একের পর এক সুখটান দিচ্ছেন তিনি।এ কক্ষে উপস্থিত আছেন আরো একজন ব্যক্তি।মাথা নিচু করে চুপচাপ দাড়িয়ে আছেন তিনি।চাইছেন কিছু বলতে কিন্তু এখন অব্দি অনুমতি না পাওয়ায় মুখ বুঁজেই রেখেছেন।
সিগারেটে শেষ টান দিয়ে তা হাত থেকে ফেলে দিয়ে পা দ্বারা পিষে ফেলতে ফেলতে লোকটি তাকায় তার সামনের ব্যক্তির দিকে।আঙুলের ইশারায় কিছু একটা বুঝাতেই দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা বলতে আরম্ভ করে,
-আফিম ইবনানের বাবা দেশে ফিরেছেন গতকাল সকালের দিকে।কিন্তু বাবা-ছেলের সাক্ষাৎ হয়েছে আজ সকালে।এতো বছর পর বাবা দেশে ফিরার পর ছেলের এতো কিসের ব্যস্ততা ছিলো যে সে টানা ১২ ঘন্টার মতো দেরি করে বাবার সাথে দেখা করেছে? ব্যাপারটা সন্দেহজনক।তাই আরো খোঁজ নিলাম।জানলাম ছেলের কোনো ব্যস্ততা ছিলোই না।সে নাফিয়াসহ নিজের ফার্মহাউজে রাত কাটিয়েছে।

কথাটা বলে একটু থামে লোকটা।একটা সাধারণ বিষয়কে কুৎসিত রূপে উপস্থাপন করারই প্রচেষ্টা এই লোকের।ক’সেকেন্ডের বিরতি নিয়ে আবারো বলে ওঠে,
-তারপর আরো একটা সন্দেহজনক ঘটনা ঘটেছে।সেটি হলো আরহান ও আফিমের সাক্ষাতের সময় বাড়ির সব স্টাফদের আধাঘন্টার ছুটি দেওয়া হয়েছিলো।এখানে প্রশ্ন জাগে এমন কি কাহিনি আছে যা মিঃআফিম ইবনান এভাবে লুকোচ্ছে?

নিরবে সবটা শুনে বাঁকা হাসেন সে ব্যাক্তি।হাই তুলে বলে ওঠেন,
-ডিটেকটিভ বাড়ান শাহীন মিঞা।আপনার দেওয়া খবরে মজা নাই।

চলবে।

#আফিম_বড্ড_নেশালো_০২
#লেখিকা_মাহযাবীন
#পর্বঃ৩৫

গোসল শেষ করে নিজের কক্ষ ত্যাগ করে নাফিয়া।একবার উঁকি দেয় আফিমের কক্ষে।ছেলেটা এখনো বাথরুমে।গোসল শেষ হয়নি তার।অতঃপর আফিমের কক্ষে উঁকি দেওয়া শেষে আরহান সাহেবের কক্ষের দিকে এগিয়ে যায় সে।
জানে না আরহান সাহেবকে কি বলবে সে বা কি বলা উচিৎ তার।সে শুধু জানে যে তার অবশ্যই উচিৎ আরহান সাহেবের সাথে কথা বলা।কারণ বিয়ের সম্পর্ক শুধু মাত্র একজন পুরুষ ও নারীর মধ্যকার সম্পর্ক নয়।এটি একটি পারিবারিক সম্পর্ক অর্থাৎ যেখানে দু’টো পরিবার অন্তর্ভুক্ত থাকে।আফিমই তো বলেছিলো তাকে যে, স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্বের মাঝে একটি হচ্ছে একে-অপরের পরিবারকে আপন করে নেওয়া।অর্থাৎ আরহান সাহেব এখন থেকে নাফিয়ারও আপনজন।যেমন সে আফিমের বাবা ঠিক তেমনই এখন থেকে সে নাফিয়ারও বাবা।
মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতে আরহান সাহেবের কক্ষ অব্দি এসে পৌঁছায় নাফিয়া।ভয়,অস্বস্তি সব এসে জায়গা করে নিয়েছে তার হৃদয়ে।ভেবে পাচ্ছে না কক্ষে প্রবেশ করে সে কি বলবে আরহান সাহেবকে!আর আরহান সাহেবও বা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে তাকে দেখে!রেগে যাবে তার উপর?নিজের ছেলের প্রতি উৎপন্ন হওয়া রাগ তার উপর আবার ঝাড়বে না তো?
এমন প্রশ্ন মনে উদিত হতেই মৃদু ঢোক গেলে নাফিয়া।মনে মনে বলে ওঠে,
“যদি রাগ ঝাড়েনও তাতেও বা কি এমন হবে?মা-বাবা বকে না নাকি?বকলে বকা শুনে নিবো।তিনি বাবা তাই রাগ ঝাড়া ও বকা দেওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে তার।”
মনে মনে কথাগুলো বলে লম্বা একটি নিঃশ্বাস নিজের মাঝে টেনে নেয় নাফিয়া।দরজায় দু-তিন বার কড়া নাড়াতেই ভিতর থেকে আওয়াজ আসে,
“দরজা খোলা আছে”
মনে সাহস সঞ্চয় করে কক্ষে প্রবেশ করে নাফিয়া।ধীর কদম ফেলে আরহান সাহেবের সামনে বরাবর গিয়ে দাঁড়ায় সে।আরহান সাহেব নিজ বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন।নাফিয়া সামনে এসে দাঁড়াতেই পত্রিকা হতে চোখ উঠিয়ে মেয়েটির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন তিনি।তবে কিছু বলেন না,নিরব রন।অপেক্ষা করেন নাফিয়া কি বলতে চাইছে তা শোনার।
আরহান সাহেবের মুখ পানে একবার তাকায় নাফিয়া।এক পলক তাকিয়েই নিজের দৃষ্টি অবনত করে নেয় সে।সভ্য ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-একটু কথা আছে,বলবো?
নাফিয়ার প্রশ্নে চোখের ইশারায় সম্মতি দেন আরহান সাহেব।তবে তিনি মুখে কিছু বলছেন না।সেই সাথে চেহারাতেও কোনো প্রকার ভাব ফুটিয়ে তুললেন না।
অনুমতি পেয়ে নাফিয়া বলতে আরম্ভ করে,
-আমি নাফিয়া,পুরো নাম শেখ নাফিয়া।মৃত শেখ নাজিমউদ্দীন ও রুহানি বেগমের একমাত্র কন্যা।ছোট বেলায়ই বাবা-মা মারা যাওয়ায় বড় হয়েছি খালা অর্থাৎ আমার মাম্মির কাছে।সেখানে মাম্মি আমার মা হতে পারলেও খালু কখনো পারেননি বাবা হয়ে উঠতে।
এটুকু কথা বলে থামে নাফিয়া।একবার তাকায় আরহান সাহেবের দিকে।লোকটি এখনো সেই একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।সে দিকে পরোয়া না করে নাফিয়া বলে ওঠে,
-আমি সম্পূর্ণ কাহিনি জানি না যে কেনো আফিমের মনে আপনার জন্য এতোটা অভিমান জমে আছে।তবে এটা জানি যে যার প্রতি ভালোবাসা যত বেশি তার প্রতি অভিমান টাও তত বেশি হয়।আফিমও ভালোবাসে আপনাকে অনেক এজন্যই আপনার প্রতি তার এতো অভিমান।আর এ অভিমান যে সাময়িক সময়ের জন্য তাতেও সন্দেহ নেই।তাই অনুরোধ আপনি কষ্ট বা রাগ হবেন না।
এটুকু বলে আবারও থামে নাফিয়া।এবারও আরহান সাহেবের কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে সে নিরাশ হয়ে বলে ওঠে,
-আমাকে মেনে নিতে হয়তো কষ্ট হচ্ছে আপনার।আফিম আপনার একমাত্র ছেলে।তার বিয়ে নিয়ে, নিজের ছেলের বউকে নিয়ে হয়তো আপনার কিছু স্বপ্ন, আশা বা চাওয়া ছিলো।আমি আপনার তেমন মনমতো পুত্রবধূ না হতে পারলেও আপনার মেয়ে হওয়ায় যথাসাধ্য চেষ্টা করবো,এটা ওয়াদা আমার।আমার মাম্মি বলতো,আমার শশুরই আমার বাবা হয়ে উঠবেন।আমি কি আপনাকে বাবা ডাকতে পারি?
নাফিয়ার কথাগুলো চুপচাপ শোনেন আরহান সাহেব।হাতে থাকা খবরের কাগজ বিছানায় রেখে বসা হতে উঠে দাঁড়ান তিনি।নাফিয়ার কাছে এগিয়ে এসে নিজের ডান হাত খানা স্থাপন করেন মেয়েটির মাথায়।
এক স্নেহ ভরা হাতের স্পর্শ পেয়ে অবনত চোখ উপরে তোলে নাফিয়া।তাকায় নিজের সামনে দাঁড়ানো স্নেহমাখা স্পর্শ প্রদানকারী বাবার দিকে।দেখতে পায় আরহান সাহেবের ঠোঁটে মৃদু হাসির ছাপ।সাথে সাথেই নিজের ঠোঁটেও হাসি ফুটিয়ে তোলে মেয়েটা।
আরহান সাহেব বলে ওঠেন,
-বাবাকে অধিকারের সাথে বাবা ডাকতে হয়, অনুমতি চাইতে হয় না।
কথাটা বলে একটু থামেন আরহান সাহেব।ঠোঁটে হাসি লেগে আছে তার।ক’সেকেন্ড সময় নিয়ে সে নিজেই বলে ওঠেন,
-প্রতিটা সত্যের দু’টো দিক থাকে, মা।আফিম শুধু এক দিক জানে কিন্তু অপর দিকটা তার অজানা।এজন্য তার এতো অভিমান।বাবা হিসেবে তোমাকে একটা উপদেশ দেই।জীবনে কখনো কোনো বিষয় এক তরফা জেনে বিচার করবা না।সবসময় মনে রাখবা,প্রতিটি জিনিসের দুটো দিক থাকে।তুমি যদি এক দিক দেখে তা বিচার করো তাহলে তা কখনোই নির্ভুল হবে না।চেষ্টা করবা সম্পূর্ণ টা জানার।কারণ এক তরফা তথ্য দিয়ে তৈরি ভুল ধারণা ভুল বুঝাবুঝির জন্ম দেয়।আর এই ভুল বুঝাবুঝি বা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিংস এর জন্য মানুষ খুব দামী কিছুও নিজের জীবন থেকে হারিয়ে ফেলে।

বাবার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলো নাফিয়া।মাথা নাড়িয়ে বুঝালো সে সবটা বুঝেছে।মৃদু হাসলেন আরহান সাহেব।বলে উঠলেন,
-নুরি আপার আপব্রিংগিং এর প্রতি এমনটাই আশা ছিলো আমার।ভদ্র,সভ্য ও বুদ্ধিমতী মেয়ে হিসেবে গড়ে তুলেছেন তিনি তোমাকে।
আরহান সাহেবের কথায় খুশিতে গদগদ হয়ে যায় নাফিয়া।উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-আপনার মনে আছে মাম্মির কথা?আর কি করে বুঝলেন আমার মাম্মির নাম নুরি?
-আজ সুখে আছি দেখে দুঃখের সময়ের বন্ধুর কথা ভুলে যাবো?নুরি আপা ভুলে যাওয়ার মতো মানুষ নন।তিনি তোমার শাশুড়ী সানিয়ার বান্ধবী কম বোনই ছিলেন প্রকৃত অর্থে।অভাবের সংসারে টাকা ধার দিয়ে হোক,বাজার পাঠানো বা তরকারি রান্না করে পাঠানোসহ যত প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করা যায় তিনি তা সব করেছিলেন।
আর তোমার বলার আগেই রিয়াদের কাছ থেকে সবটা জেনে নিয়েছিলাম আমি।

!!
“ছেলেদের পাঞ্জাবি গুলো হয় বলতে গেলে সব একি ডিজাইনের।তাই একটু ইউনিক কিছু ভেবে এই ডিজাইন টা বানালাম।এই ডিজাইনের বিশেষত্ব হচ্ছে পাঞ্জাবির বোতামগুলো।এগুলো দেখলেই একটা রয়াল রয়াল ভাব আসে এবং এটি বেশ আকর্ষণীয়।নরমালি পাঞ্জাবির বোতাম থাকে বুকের মাঝ বরাবর কিন্তু এ পাঞ্জাবির বোতাম গুলো সাইড দিয়ে দু’টো দু’টো করে মোট ৬ টা। আর প্রতি দু’টো বোতামের মাঝে একটু গ্যাপ রেখেছি।সেই সাথে আরো একটা বিশেষত্ব হচ্ছে পাঞ্জাবির প্রিন্ট টা যা দেখতেই পারছেন।”
ল্যাপটপে করা কুসুমের ডিজাইন দেখতে দেখতে কথাগুলো শুনছিলো রিয়াদ।কুসুমের কথা শেষ হতেই রিয়াদ বলে ওঠে,
-ইমপ্রেসিভ মিস.কুসুম।ওয়েল ডান।আপনি দ্রুতই এর বাকি কাজ শেষ করুন।কান্ট ওয়েট টু সি ইট ইন রিয়াল।
ঠোঁটে হাসি নিয়ে কথাগুলো বলে রিয়াদ।মেয়েটার কাজে আসলেই মুগ্ধ সে।রিয়াদের মুখে নিজের কাজের সুনাম শুনে খুশিতে নেচে উঠে কুসুমের হৃদয়।বহু কষ্টে নিজের খুশি নিজের মাঝে চেপে রেখে সে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে ওঠে,
-থ্যাংক ইউ স্যার।ইট মিন্স অ্যা লট।

!!
পড়ানো শেষে স্টুডেন্টের বাসা হতে বেড়িয়ে গাড়ি পার্কিং প্লেসে আসতেই আফিমের গাড়ির দেখা পায় নাফিয়া।ঠোঁটে হাসি টেনে এগিয়ে যায় গাড়ির দিকে।ড্রাইভিং সিটে বসে ফোনে কারো সাথে কথা বলায় ব্যস্ত আফিমকে দেখে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে মেয়েটি।আফিমের মুখ পানে তাকিয়ে পাড় করে কয়েক সেকেন্ড।অতঃপর নিজের ওড়নার এক কোণ হাতে নিয়ে আলতো করে মুছে দিতে আরম্ভ করে ছেলেটির কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো।

ফোনে কথা বলার মাঝেই নাফিয়ার স্পর্শ পেয়ে তার দিকে তাকায় আফিম।কথা শেষ হওয়ায় কল কেটে দেয় সে।প্রেয়সীর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু এঁকে দেয় সেথায়।জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-কেমন কাটলো সময়?
-ভালো।আচ্ছা গাড়িতে এসির মধ্যে বসে ঘামছেন কেনো আপনি?হাই প্রেসারের সমস্যা আছে?
-উম, আছে তো।কিন্তু এখন ঘামার কারণ টা হচ্ছে এই সামনেই একটা পার্ক আছে।ওখানে হাঁটতে গিয়েছিলাম।সেখান থেকে মাত্রই ফিরলাম।
-আচ্ছা।
কথাটি বলে সযত্নে নিজের ওড়না দিয়ে আফিমের পুরো মুখশ্রীতে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো মুছে দিলো নাফিয়া।তার দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে আফিম।ঘাম মুছা শেষে আফিমের চোখে চোখ রাখলো সে।জিজ্ঞেস করে উঠলো,
-এখন কোথায় যাবো?অফিসে?
নাফিয়ার প্রশ্নে বাঁকা হাসলো ছেলেটা।বলে উঠলো,
-উহু,প্রেম করতে যাবো।
কথাখানা বলেই চোখ মারে সে।

চলবে।

[নেক্সট পার্টে প্রেমিক আফিমকে দেখতে প্রস্তুত তো সবাই??]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here