আবদ্ধ তোমার মধ্যে,১০ম পর্ব,১১তম পর্ব

0
3431

আবদ্ধ তোমার মধ্যে,১০ম পর্ব,১১তম পর্ব
নিয়াজ মুকিত
১০ম পর্ব

আমি বেশ চিন্তায় পড়ে যাই।আমার সামনে বসে থাকা নিদ্রও যে চিন্তিত সেটা বুঝতে পারছি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“এই অবস্থায় থাকতে পারবে না?”
আমি সাথে সাথে উত্তর দেই,
–“পাগল নাকি,এই অবস্থায় থাকা যায়।যেভাবেই হোক গোসল করতেই হবে।”

নিদ্র উঠে দাঁড়িয়ে বাহিরে যাওয়ার জন্য রওনা হয়।আমি তাকে পিছন থেকে ডেকে বলি,
–“আচ্ছা মা বাসায় নাই,তাকে ডেকে দিন না!”
নিদ্র স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়,
–“মা-বাবা কেউ‌ বাসায় নেই।বুঝতে পারছি না কোথায় গেছে।”

যেটুকু আশা জন্মেছিল মনে সেটাও উড়িয়ে যায় মন থেকে।আমি পুনরায় চিন্তিত হয়ে পড়ি।‌নিদ্র ঘুরে এসে আমার সামনে বসে বলে,
–“এক কাজ করি,আমি তোমাকে বাথটাবে বসিয়ে দিয়ে আসি পা-টা তুলে দিয়ে।তুমি গোসল শেষ হলে আমাকে ডাকিও আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।”
আমি তার দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বলি,
–“কাপড় চেঞ্জ করবো কেমনে?”

নিদ্র অন্যদিকে মুখ করে বলে,
–“আমি তো কয়েকদিন পর তোমার স্বামী থাকবো না।আমাদের ডিবোর্স হয়ে যাবে।সো আমি এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারবো না।”
হঠাৎ লোকটা সবকিছু পরিবর্তন হলো কেমনে সেটা বুঝতে পারছি না আমি।সকাল অবদি যে লোকটা আমাকে ভালোবাসতো‌ বিকেলে সে ডিবোর্সের কথা বলছে।আমি অবাক হয়ে নিদ্রকে বলি,

–“আপনি না আমাকে ভালোবাসেন,তাহলে ডিবোর্সের কথা বলতেছেন কেন?”
নিদ্র এবার আমার দিকে তাকিয়ে রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বলে,
–“একপক্ষের ভালোবাসায় সংসার হয় না।সংসার করার জন্য দুজনের ভালোবাসা প্রয়োজন।আমি ভালোবাসি কিন্তু তুমিতো বাসো না।তুমি যদি ভালোবেসে থাকো তাহলে বলো,গোসল করিয়ে দিচ্ছি।ডির্বোসও দিব না।তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?”

কি উত্তর দিব বুঝতে পারছি না আমি?নিদ্র যে আমাকে ভালো ভাবেই প্যাঁচে ফেলেছে সেটা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছি।নিদ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার মুখের দিকে।আমার মুখ থেকে কি উত্তর বের হয় সেটা শোনার জন্য চেয়ে আছে আমার দিকে।আমি বেশ চিন্তায় পড়ে যাই কি বলবো?সবশেষে মুখ ফুটে বলি,

–“একটু সময় দেন?”

আমার কথা শুনে নিদ্র দাঁড়িয়ে পড়ে সাথে সাথে।তারপর নরম গলায় বলে,
–“ওকে আমি ছাঁদে যাচ্ছি,এসেই তোমার উত্তর শুনবো।”
আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আমাকে বাথরুমে নামিয়ে দিয়ে যান!”
নিদ্র বের হতে হতে বলে,
–“উত্তর শোনার পরই সব করবো।”

এই বলে হরহর করে রুম থেকে বের হয়ে যায় নিদ্র।সে বের হয়ে যাওয়ার আগে আমাকে বেশ বড়সড় একটা চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়ে যায়।আ‌মি বসে বসে ভাবতে থাকি কি করবো এখন?গোসল করা ছাড়া এই অবস্থায় থাকা অসম্ভব কিন্তু গোসল করতে হলে যে কোন একটা উত্তর দিতেই হবে।

এবার আমি নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করি,
–“আচ্ছা আমি কি নিদ্রকে ভালোবাসি?নাকি না।”
আবার নিজেই নিজেই বলি,
–“অবশ্যই আমি নিদ্রকে ভালোবাসি।প্রথম থেকেই তাকে ভালোবাসি আমি।তার উপর আমি ক্রাশ খেয়েছি প্রথম দিনই।তাকে ভালোবাসি সেদিন থেকেই।মাঝখানের মনের মধ্যে অভিমান জমেছিল।কিন্তু এখন তো সে আমাকে ভালোবাসে।আমিও তাকে ভালোবাসবো তাহলে সংসার টাও নষ্ট হবে না আর কেউ কষ্টও পাব না।আমার উত্তর হবে হ্যা।

আমি এবার নিজের Nokia 1200 ফোনটা বের করে নিদ্রের ফোনে কল দেই।সে কল ধরার সাথে সাথে আমি তাকে নিচে আসতে বলে কলটা কেটে দেই।আর অপেক্ষা করি কখন সে নিচে আসে।এই মুহুর্তে দরজাটা খুলে যায়।ভিতরে প্রবেশ করে নিদ্রের বড় ভাই অনিক।আমি তাকে দেখে চমকে উঠি।ভিতরে ভিতরে ভয় পেয়ে যাই প্রচুর পরিমাণে।সে দরজাটা লাগাতে ধরলে বাহিরে থেকে কেউ তাকে ঠেলে ফেলে দেয়।বেশ খানিকটা দৌড়ে ভিতরে প্রবেশ করে নিদ্র।অনিক নিদ্রকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

–“তোদের ডিবোর্স কোনদিন?”
নিদ্র কোনো কথা না বলে মুচকি একটা হাসি দেয়।তারপর অনিকের সামনে নিজের হাতটা তুলে বলে,
–“এইতো সামনের মাসে।ওনার পা-টা ভালো হলেই ডিবোর্স।”
নিদ্রের কথা শুনে অনিক হেসে ওঠে।তারপর তার হাতটা নিদ্রের ঘাড়ের উপরে রাখতে ধরলে নিদ্র তার হাতটা ধরে ফেলে।তারপর বেশ চিল্লিয়ে বলে,
–“তোমাকে ভাই হিসেবে মানতাম আমি।কিন্তু আজকের পর থেকে বাবার সাথে সাথে তুমিও আমার কাছে মরে গেছ।এখন থেকে ভাববো আমার কোন ভাই ছিল না।তুমি কিভাবে পারলে নিজের ছোট ভাইয়ের ঘরে খারাপ মতলব নিয়ে ঢুকতে।”

এই বলে নিদ্র অনিককে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দেয়।তারপর চিল্লিয়ে দারোয়ানকে ডাকে নিদ্র।দারোয়ান আসলে চিল্লিয়ে বলে,
–“তোমাদের এমনি টাকা দেয়া হয় নাকি,অপরিচিত মানুয বাসার ভিতরে ঢুকে কেমনে?আর একবার আসলে তোমাদের দুজনকেই বের করে দেয়া হবে।”
এই বলে নিদ্র চলে আসে।দারোয়ান দুজন তাকে ধরে বাহিরে বের করে দেয়।বাহির থেকে অনিক চিল্লিয়ে বলে,
–“কাজটা ভালো করলি না নিদ্র,তোকে দেখবো আমি।”

নিদ্র কোনো কথা না বলে রু‌মের ভিতরে প্রবেশ করে।আমি ভয় ভয় চোখে তাকাই তার দিকে।আমার ভয় পাওয়া দেখে নিদ্র হো হো করে হেসে ওঠে।তার হাসি দেখে অনেক খানি ভয় চলে যায় আমার মন থেকে।নিদ্র আমার সামনে বসে বলে,
–“বলো এখন?”

আমি চোখ বন্ধ করে বলতে শুরু করি,
–“আমি আপনাকে ভালোবাসি,আপনার সাথে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চাই।আপনি কি আমাকে ভালোবাসবেন সারাজীবন?”
এই বলে আমি চোখ খুলে ফেলি।লজ্জা নিয়ে তাকাই নিদ্রের দিকে।তার উত্তর শোনার জন্য তাকাই তার মুখের দিকে।নিদ্র বেশ শান্ত গলায় বলে,
–“দেরি করে ফেলেছো।ডিবোর্স পেপার রেডি আর আমরা পরশু কক্সবাজারে যাচ্ছি।এই কথাগুলো আগে বললেই আজ এই দিনটা দেখতে হতো না।সরি,দেরি করে ফেলেছো তুমি।”

এই বলে নিদ্র উঠে দাঁড়ায়।আমি অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকাই।কি বলবো বুঝতে পারছি না?ভাবতেও পারছি না এই মুহুর্তে আমার কি বলা উচিত?নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“পার্টিতে আমি আমার সব ফ্রেন্ডকে ইনভাইট করেছি।তুমি কি কাউকে ইনভাইট করবে?”

আমি এবার বেশ রেগে বলি,
–“ফাজলামো করেন আমার সাথে,ডির্বোস দিবেন তাও আবার পার্টি করে।শয়তানির চুড়ান্ত পর্যায় অতিক্রম করছেন আপনি।”
নিদ্র মুচকি হেসে বলে,
–“দেখতে পাবে।”

আমি এবার সত্ত্যি সত্ত্যি ভয় পেয়ে যাই।নিদ্র কি সত্ত্যি সত্ত্যি আমাকে ডির্বোস দিতে চলেছে নাকি?নাকি আমার সাথে মজা করছে।মনে তো হচ্ছেনা মজা করছে।আমি তার দিকে তাকিয়ে করুন গলায় বলি,
–“আমি গোসল করবো কেমনে?”
নিদ্র রুম থেকে বের হতে হতে বলে,
–“মা আর রহিমাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
আমি চিল্লিয়ে বলি,
–“আপনি যে বললেন,মা,রহিমা খালা কেউ নেই?”
নিদ্র দরজা খুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“মিথ্যা বলেছি আপনার উত্তরটা শোনার জন্য।কিন্তু দেরি করে ফেললেন।একমিনিট আগে উকিল কল দিয়ে বললো সব রেডি।বাদ দিন,২দিন পর ডিবোর্স ওকে।”

এই বলে নিদ্র চলে যায়।আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি তার যাওয়ার দিকে।আমার এখনো মনে হচ্ছে সে মজা করছে।ওয়েট রুশাকে ফোন দেই সে জানবে সব কিছু আমার মনে হয়।কিন্তু রুশাকে কল করে এক তাজ্জব খবর পাই।কি করবো এখন বুঝতে পারছি না আমি..

চলবে..

আবদ্ধ তোমার মধ্যে
নিয়াজ মুকিত
১১তম পর্ব

আমি নিদ্রের প্লানটা সম্পর্কে আগে থেকে জানার জন্য রুশাকে ফোন দেই।কয়েকবার রিং হওয়ার সাথে সাথে ফোনটা রিসিভ করে সে।আমার নাম্বারটা মনে হয় সেভ করা ছিল তার ফোনে।তাই আলাদা করে পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না।রুশার সাথে কথা বলতে শুরু করি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।কথায় কথায় তাকে জানাই আমাদের কক্সবাজার যাওয়ার কথাটা।রুশা আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে,নিদ্রও তাকে কক্সবাজারের পার্টির কথা বলেছে।তবে সেটা কিসের পার্টি সেটা বলেনি।রুশার কাছ থেকে এর থেকে বেশি কিছু জানতে পারি না।অবশেষে তাকে বিদায় জানিয়ে ফোনটা কেটে দেই।হতাশ হয়ে বসে থাকি বিছানার মধ্যে।নিদ্রের কথাটা কি সত্য হবে নাকি?

এই মুহুর্তের রুমে প্রবেশ করে মা আর রহিমা খালা।মা আমার সামনে এসে বসে পড়ে।আমার ব্যান্ডেজটার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“কেমন করে হলো এরকম?নিদ্র আমাকে কিছুই বললো না।”
আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলি,
–“পড়ে গেছিলাম।সমস্যা নেই ডাক্তার দেখিয়েছি।ডাক্তার বলেছে কয়েকদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”
মা সাথে সাথে বলে,
–“তাই যেন

মা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“নিদ্র তো বললো আমরা নাকি কয়েকদিনের মধ্যে কক্সবাজারে যাচ্ছি সবাই মিলে।সেখানে একটা পার্টি হবে।”
আমি খানিকটা আগ্রহ নিয়ে বলি,
–“কিসের পার্টি বলেছে?”
মা মাথা নাড়িয়ে বলে,
–“না,শুধু বলেছে পার্টি হবে।”

এই বলে রহিমা খালাকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় মা।আমি হতাশ হয়ে তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি।কারো কাছ থেকে কোনো প্রকার তথ্য পাওয়া গেল না।এই মুহুর্তের দরজার কাছে দেখা যায় নিদ্রের চাঁদবদন খানা।আমি তার দিকে তাকিয়ে তাকে পর্যবেক্ষন করতে শুরু করি।সে হাসি মুখে এসে আমার সামনে বসে।আমি তাকে কিছু বলতে যাব তার আগেই সে বলে ওঠে,
–“কোনো প্রকার তথ্য কিংবা উপাত্ত যোগাড় করার দরকার নাই।পার্টিটা ডিবোর্সেরই।আর পরশুই আমরা রওনা হব যদি তোমার পা ভালো হয়।”

আমি এবার জোড় দিয়ে বলি,
–“এখনতো আমি আপনাকে ভালোবাসি,আপনিও আমাকে ভালোবাসেন তাহলে আকাদা হতে চাচ্ছেন কেন?কেন দুজনের ভালোবাসাকেই কবর দিতে চাচ্ছেন?বলেন?আমার কথার উত্তর দেন?”
নিদ্র আমার সব কথা ধৈর্য্য সহকারে শ্রবনকরে এবং বুঝে।তারপর বেশ গম্ভীর গলায় বলে,
–“দেখ,আমিও তোমাকে ভালোবাসি ঠিকই।কিন্তু তুমি তোমার মত জানাতে দেরি করেছে।আমি ডিবোর্সের সব কিছু তৈরি করেছি।তাই সরি।আর সব ভালোবাসাই পূর্নতা পায় না।কিছু কিছু ভালোবাসা অপুর্নই থাকে।”

আমি নিদ্রের দিকে তাকিয়ে ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করি সে মজা করছে কিনা।কিন্তু তার মুখে সেরকম কোনো চিহ্ন দেখতে পাই না।নিদ্র আবার বলতে শুরু করে,
–“দুজন দুজনকে ভালোবাসি ঠিকই কিন্তু এখন আর একসঙ্গে থাকা সম্ভব নয়।”
আমি নিদ্রের কথা শুনে অবাকের চুড়ান্ত পর্যায় অতিক্রম করে যাই।পাগল হয়ে গেল নাকি লোকটা।ভালোবাসে বলছে আবার বলছে একসঙ্গে থাকা সম্ভব নয়।আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।নিদ্রও উঠে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“একটুও ঘুমিয়ে নাও আরাম পাবে।”

এই বলে সে শুয়ে পড়ে।আমার এখনো অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি।চোখের কোণে পানি চলে এসেছে।আমি বুঝতে পারছি না আমি কেন কাঁদছি।এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা নিদ্র সত্ত্যি সত্ত্যি আমাকে ডিবোর্স দিতে চলেছে।সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে।বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে নিদ্রের সেই প্রপোজের দৃশ্যটা।আমি আস্তে করে বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ি।নিদ্র কি করতে চলেছে?

এসব ভাবতে ভাবতে একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ি আমি।নিদ্রের গা ঝাঁকানিতে ঘুম ছুটে যায় চোখ থেকে।আমি চোখ খুলে দেখি নিদ্র একটা ভাতের প্লেট নিয়ে আমার সামনে বসে আছে।আমি আস্তে করে উঠে বসি।নিদ্র আমার মুখের সামনে ভাতের নোকমা ধরে বলে,
–“খেয়ে নাও,ঔষুধ খেতে হবে।”
আমি নিদ্রের এগিয়ে দেয়া নোকমাটা মুখে না নিয়ে অন্যদিকে মুখ করে বলি,
–“কয়েকদিন পরই তো দুজনে আলাদা হয়ে যাব,তাহলে আমাকে এত মায়ায় জড়াচ্ছেন কেন?কেন নিজের প্রতি এত আকৃষ্ট করাচ্ছেন?”

আমার কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠে নিদ্র।আমি অবাক হয়ে তার হাসির কারন বোঝার চেষ্টা করি।নিদ্র তার নোকমাটা আমার দিকে থেকে সড়িয়ে প্লেটে রাখে।তারপর নতুন করে ভাত তুলে আমার মুখের সামনে ধরে।আমি অন্যদিকে মুখ করলে নিদ্র বলে ওঠে,
–“দেখ তুমি যদি আরেকটু আগে বলতে তাহলে এরকম হতো না।আমি নিদ্র চৌধুরী একবার যেটা বলি সেটাই করি।আমি আমার মুখ দিয়ে উকিলকে বলছি এখন যদি কথা ঘুড়িয়ে নেই তাহলে আমার মান-সম্মান শেষ হয়ে যাবে।”

আমি তার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলি,
–“মান-সম্মানটাই কি একটা সম্পর্কের চেয়ে বড়।আপনার এই কথাটার জন্য দুজনের ভালোবাসা কবর দিতে হচ্ছে।”
নিদ্র এবধর জোড় করে নোকটা আমার মুখে পুড়িয়ে দেয়।তারপর কড়া গলায় বলে,
–“এসব কথা বাদ দাও,আগে ভাতটা খেয়ে নাও।”

আমি কিছুক্ষন অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থেকে খেতে শুরু করি।নিদ্র সমানতালে আমাকে ভাত খাওয়াতে থাকে।ভাত খাওয়া শেষ হলে সে পানির গ্লাস আমার দিকে এগিয়ে দেয়।আমি পানি খেয়ে শেষ করলে সে ঔষুধ ধরিয়ে দেয় আমার হাতে।আমি ঔষুধ খেয়ে পুনরায় শুয়ে পড়ি।নিদ্র এটো প্লেটটা রাখার জন্য বাহিরে বের হয়ে যায়।আমি সমানতালে তার যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে থাকি।

নিদ্র বের হয়ে যায় রুম থেকে।কিন্তু আমি সেদিক থেকে চোখ সড়াতে পারি না।নিদ্র প্লেট রেখে ফিরে আসলেও আমার দৃষ্টি সেদিক থেকে সড়ে না।নিদ্র এসে আমার সামনে বসে পড়ে।আমি এবার চোখ তুলে তাকাই তার দিকে।নিদ্রও আমার দিকে তাকায়।দুজনের মধ্যে চোখাচোখি হয়ে যায়।দুজনের চোখের মধ্যেই এক অন্যরকম চাওনি।আমি করুন গলায় নিদ্রের দিকথ তাকিয়ে থেকে বলি,

–“প্লিজ আমাকে ডিবোর্স না দিলে হয় না!”

আমার চাহনি দেখে নিদ্র খানিকটা ইমোশনাল হয়ে পড়ে।সে আমার হাতদুটো ধরে বলে,

–“হ্যাঁ।কিন্তু তুমি আগে বললে হতো।”

তার উত্তর শুনে আমার খুব রাগ হয়।সাথে অভিমানও।যাক হোক ডিবোর্স।আর বলবো না আমি।আমি মুখ ঘুড়িয়ে শুয়ে পড়ি।নিদ্র হাসতে হাসতে আমার উপর শুয়ে পড়ে।তার হাসির কারনটা বুঝতে পারিনা।সে হাসতে হাসতে বলে,

–“তুমি ভাবছো আমি তোমাকে মিথ্যা বলছি।হুম আমি তোমাকে মিথ্যা বলি…”

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here