আবদ্ধ তোমার মধ্যে,১২তম পর্ব,১৩তম পর্ব (ডিবোর্স হবে কিনা)
নিয়াজ মুকিত
১২তম পর্ব
নিদ্রের কথা শুনে আমি তাকে সড়িয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ি।নিদ্রও আর কোনো কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পড়ে।কিছুক্ষন আগে বিরাট একটা ঘুম হওয়ার কারনে সহজে ঘুম চোখে ধরা দিতে চাচ্ছেনা।আমার প্রবলেম এটা,এই প্রবলেমটা কি নিদ্রেরও হচ্ছে,নাকি সে ঘুমিয়ে পড়েছে?এই ভাবনা আমার মাথায় বেশ ভালোভাবেই চেপে বসে।শেষ পর্যন্ত আমি উঠে বসে পড়ি নিদ্র ঘুমিয়েছে কিনা জেগে আছে দেখার জন্য।আমি টের চোখে তাকাই নিদ্রের দিকে।সাথে সাথে নিদ্র উঠে বসে পড়ে।তার এভাবে বসে পড়ায় আমি বেশ চমকে উঠি।আমাকে এভাবে চমকে উঠতে দেখে নিদ্র হেসে ফেলে।মনের ভয় দূর করার জন্য আমি বুকের মধ্যে আলতো করে থু থু দেই।আমার কান্ড দেখে নিদ্র হো হো করে হেসে ওঠে।সে হাসতে হাসতে বলে,
–“তোমারও কি ঘুম আসছে না আমার মতো?”
আমি মাথা নাড়িয়ে হা বলি শুধু।নিদ্র এবার আমার দিকে ঝুঁকে নিজের গালে হাত রেখে বেশ চিন্তিত ভাব নিয়ে বলে,
–“এখন কি করা যায় বলোতো?”
আমি মাথা নাড়াই শুধু।এর একটা উত্তর যে আমি কিছু জানিনা।নিদ্র আমার মাথা নাড়ানো দেখে বলে,
–“চলো ছাঁদে যাই।কি বলো?”
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না?আমার ভাবনাটা ধরে ফেলে নিদ্র।সে তার হাত নাড়িয়ে বলে,
–“চিন্তা করার কারন নেই,আমি কোলে করে নিয়ে যাব।”
তার কথায় খুশি হতে পারিনা তবে বেজারও না।নিদ্র উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে কোলে তুলে নেয়।হঠাৎ সবকিছু হয়ে যাওয়া বেশ অপ্রস্তুত ছিলাম আমি।সেই ঝোক সামলাতে বেশ সময় লাগে আমার।ততক্ষনে আমাকে নিয়ে ছাদে চলে আসে নিদ্র।সে আলতো করে আমাকে দোলনায় বসিয়ে দেয়।তারপর ধপ করে নিজে বসে পড়ে।
জ্যোৎনা রাত থাকার কারনে চারদিকের সবকিছু উজ্জলই দেখাচ্ছিল।নিদ্র একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার সামনের আকাশটার দিকে।আমার দৃষ্টি কিন্তু আকাশের দিকে নয়,আকাশের চাদঁটার আলো যেখানে পড়ছে সেদিকে।মানে আমার দৃষ্টি নিদ্র সাহেবের মুখটার দিকে।নিদ্র এবার আমার দিকে ঘুরে বসে।হঠাৎ এভাবে ঘুরে বসায় আমি খানিকটা চমকে উঠি।তারপর নিজেকে ঠিক করে নেই মুহুর্তের মধ্যে।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“মিহি আজকে রাতটা অনেক সুন্দর তাই না?”
আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে হা বলি কিন্তু মুখে কোনো কথা বলি না।আসলে এখন নিদ্রের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করেনা আমার।সবসময় ডিবোর্সের কথাটা মাথায় আসে।নিদ্র আবার বলতে শুরু করে,
–“দুইদিন পর ঠিক এরকম একটা রাতেই আমরা দুজন দুজনের থেকে আলাদা হবো।চিরজীবনের জন্য আলাদা হয়ে যাব।কেমন লাগবে তোমার?আমাকে মিস করবে না?”
নিদ্রের এমন প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।তার প্রশ্ন শুনে আমি থতমত খেয়ে যাই।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে আমতা আমতা করে বলি,
–“কর-বো মি-স।অ-অ বস্যই করবো।”
নিদ্র সন্দেহ চোখে আমার দিকে তাকায়।তারপর ভ্রু-কুঁচকে বলে,
–“তুমি থোতলাচ্ছো কেন?”
আমি আমতা আমতা করে আবার বলি,
–“কই না-নাতো?তোমার শুনতে ভুল হচ্ছে।”
নিদ্র এবার ঝুঁকে আমার বেশ কাছে চলে আসে।আমি খানিকটা ভয় পেয়ে যাই হঠাৎ এরকম কাছে আসার কারনে।নিদ্র ভ্রু-নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–“তুমি আমাকে তুমি করে বলছো কখন থেকে?দেখ এখন এসব বলে লাভ নেই।তারচেয়ে তুমি আমাকে ভাইয়া বলে ডাকিও!”
নিদ্রের কথা শুনে আমি সাথে সাথে চিল্লিয়ে বলি,
–“ভাইয়া”
নিদ্র তার ডান হাতটা দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরে বলে,
–“হুম ভাইয়া।কয়েকদিন পরই আমরা আলাদা হয়ে যাব।বলতে গেলে এখনি হয়েছি শুধুমাত্র সাইনটার কারনে হচ্ছি না।সো আগে থেকেই প্রাকটিস করো ভাইয়া ডাকার।পরে সহজ হবে।মনে রাখবে,প্রাকটিস মেকস অ্যা ম্যান পারফেক্ট।”
আমি এবার এক ঝটকায় তার হাতটা সড়িয়ে দেই।তারপর বেশ রেগেই বলি,
–“ফাজলামি শুরু করছেন,নিজের বরকে কেউ ভাইয়া ডাকে।পাগল হয়ে গেছেন আপনি।অন্যকেউ এই কাজ করতে পারলেও আমি পারবো না।”
এই বলে আমি উঠে দাঁড়াতে যাই।আমার যে একটা পা অকেজো সেটা ভুলেই গেছিলাম সেই সময়ে।ফলস্বরুপ ধপাস করে পড়তে গিয়ে বেঁচে যাই।নিদ্র নামক ব্যাক্তিটা তার শক্ত হাত দিয়ে আমাকে চেপে ধরেন।তারপর নিমিষে কোলে তুলে নেন আমাকে।
আমি তার দিকে তাকিয়ে বেশ লজ্জা পাই।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলে,
–“রাগলে হুস,জ্ঞান সব কোথায় চলে যায় তোমার?এখনি পড়ে গেলে কি হতো?ও মাই গড,কত বড় বড় নখ।এখনি কেটে দিচ্ছি চলো..”
আমি এবার তাকে থামিয়ে দিয়ে বলি,
–“কিন্তু রাতে তো নখ কাটা যায় না।আমার দাদুমা বলতো রাতে নখ কাটলে গরীব হয়।”
নিদ্র আমার দিকে কপাল কুঁচকে তাকায়।তারপর হাটতে হাটতে বলে,
–“এসব কথা বাদ দাও তো।এখনকার চিন্তা করো,এই নখগুলো না কাটলে যদি কাউকে লাগে তার কত বড় ক্ষত হবে বুঝতে পারছো?”
আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে হা বলি।নিদ্র আমাকে নিয়ে রুমে পৌঁছায়া।তারপর আস্তে করে আমাকে বিছানার উপর বসিয়ে দিয়ে নিজে বাহিরে যায়।আমি এক দৃষ্টিতে সেই দিকেই তাকিয়ে থাকি।ছেলেটার মনে কি চলছে আল্লাহই জানে।কাল বাদে পরশু আলাদা হবো জেনেও কিরকম ব্যবহার করছে।সে কি বুঝতে পারছে না আমি আস্তে আস্তে তার প্রতি আরো দুর্বল হচ্ছি।
এই মুহুর্তে নিদ্ব একটা নেইলকাটার নিয়ে রুমে প্রবেশ করে।তারপর আমার সামনে এসে বসে পড়ে সে।আলতো করে আমার পা-টা নিজের কোলে তুলে নেয়।আর আঘাতপ্রাপ্ত পা-টা সড়িয়ে রাখে সে।তারপর গভীর মনোযোগ দিয়ে এক এক করে নখ কেটে দিতে শুরু করে।নিদ্র নখ কাটছে আর আস্তে আস্তে করে গান গাইছে।আমি টের চোখে তার দিকে তাকাই।এমন সময় বেজে ওঠে নিদ্রের ফোনটা।
নিদ্র বেশ বিরক্ত হয়ে ফোনটা তুলে নিয়ে কড়া গলায় বলে,
–“হ্যালো,কে বলছেন?”
ওপাশ থেকে কি বলে কিছুই শুনতে পারি না আমি।নিদ্র এবার আমার পা-টা নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ায়।আমি এবার সরাসরি তাকাই তার দিকে।নিদ্র রুমে হাটতে হাটতে বলে,
–“ওকে,আমরা কালই রওনা দিব।৫টা টিকিট ম্যানেজ করো তুমি।”
এই বলে নিদ্র ফোন কেটে দিয়ে আমার দিকে তাকায়।আমি তার দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে বলি,
–“এতরাতে কাকে টিকিট কাটতে বললেন?”
নিদ্র পুনরায় আমার নখ কাটতে কাটতে বলে,
–“কক্সবাজার যাওয়ার টিকেট।কালকেই রওনা দিব।এখন ঘুমাও.!”
এই বলে নিদ্র আমার পা-টা নামিয়ে দিয়ে আমার পাশে শুয়ে পড়ে।কিছুক্ষনের মধ্যে আমার চোখে ঘুম চলে আসে।ঘুমিয়ে পড়ি আমি।জানিনা নিদ্র কি করছে?ঘুমাচ্ছে নাকি না।
পরেরদিন সকালবেলা সবাই ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।নিদ্রের মা আমাকে রেডি করিয়ে দিয়ে যান।নিদ্র আমাকে ধরে নিয়ে যায় গাড়ি অবদি।কালকে মেডিসিন খেয়ে শোয়ার কারনে আজকে একটু হাটতে পারছি।এক এক করে সবাই বসে পড়ে গাড়িতে।চলতে শুরু করে গাড়ি।গাড়ি যতই এগোচ্ছে তত আমার মনের মধ্যে ভয় বাড়ছে।ডিবোর্সটা তাহলে সত্ত্যিই হচ্ছে??
চলবে..
আবদ্ধ তোমার মধ্যে
নিয়াজ মুকিত
১৩তম পর্ব (ডিবোর্স হবে কিনা)
গাড়ি যতই এগোচ্ছে ততই বুকের ভিতরের ভয়টা প্রখর হচ্ছে।নিদ্র একমনে ড্রাইভ করে চলেছে।তার পাশে বসে আছে তার বাবা।কারের পিছনে আমি আর মা।একপর্যায়ে আমরা এসে পৌঁছাই এয়ারপোর্টে।কিছুক্ষন পর সেখানে উপস্থিত হয় রুশা।সবাই একসঙ্গে উঠে পড়ি প্লেনের মধ্যে।কিছুক্ষনের মধ্যেই প্লেন রওনা হয় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে।প্লেনে আমার আর নিদ্রের সিটটা পাশাপাশি।আমাদের সামনের সিটটাতে বসে আছে নিদ্রের বাবা-মা।তার সামনে রুশা ও একটা মেয়ে।মেয়েটাকে আমরা চিনিনা কেউই।
একপর্যায়ে নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“কেমন লাগছে?বাসে আসলে সম্পুর্ন একদিন লাগতো,আবার কষ্টও বেশি।তাই প্লেনের টিকিট কাটছি।টাকা যাক কিন্তু কষ্টটা কম হবে।ভালো না!”
আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে হা বলি মুখে কোনো কথা বলি না।সত্ত্যি বলতে খুব খারাপ লাগছে আমার।মাথাটা ব্যাথা করছে প্রচুর পরিমাণে।মনের মধ্যে এক অজানা ভয় কাজ করছে।আমি নিদ্রের দিকে না তাকিয়ে বলি,
–“ডিবোর্সের পর কি আমাকে সেখানেই রেখে চলে আসবেন?নাকি আপনাদের সঙ্গে নিয়ে এসে পাঠিয়ে দিবেন?”
নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
–“নিয়ে আসবো!তোমার জামা-কাপড় গুলা আছে না।সেগুলো নিয়ে পাঠিয়ে দেব।”
আমি নিদ্রের মুচকি হাসিটা দেখার জন্য তার দিকে ঘুরে বসতে চেষ্টা করি কিন্তু সিটবেল্টটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।নিদ্র আমার অবস্থা দেখে বলে,
–“পার্টিটা বেশ বড়ই হবে বুঝলে।নিদ্র চৌধুরীর ডিবোর্স পার্টি বলে কথা,একটু আলোকসজ্জা না হলে চলে বলো?”
আমি মাথা ঘুড়িয়ে চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকি।নিদ্র আমার তাকানো দেখে শুধু একটা হাসি দেয়।আমি মাথা ঘুড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকি।
দেখতে দেখতে কক্সবাজারে পৌঁছে যাই আমরা।সবার সামনে সিট থাকায় সবার আগে প্লেন থেকে নামে রুশা।তারপর নিদ্রের বাবা-মা।তারপর নিদ্র আমাকে ধরে আস্তে করে নামায় প্লেন থেকে।নিদ্রের বাবা একটা গাড়ি ডাকে।আমরা সবাই গাড়িতে উঠে বসি।গাড়ি এসে নামিয়ে দেয় একেবারে হোটেলের সামনে।আগে থেকে হোটেল বুক করে রাখার কারনে কোনো প্রকার সমস্যা হয় না নতুন করে।
একজন লোক আমাদের রুম দেখিয়ে দেয়।সবচেয়ে বেশি অবাক হই আমার আর নিদ্রের রুম আলাদা দেখে।নিদ্র আমাকে আমার রুমে রেখে নিজের রুমে চলে যায়।রুশা চলে যায় নিজের রুমে।রুশার সাথে কথা বলে জানতে পারি,তার বর আসবে কালকে।নিদ্র তার রুম থেকে কাপড় চেঞ্জ করে আমার রুমে চলে আসে।আমি বিছানায় শুয়ে ভাবছি,সত্ত্যি তাহলে ডিবোর্সটা হচ্ছে।নিদ্র এসে আমার সামনে বসে পড়ে।একই সাথে ভিতরে প্রবেশ করে নিদ্রের বাবা-মা।সবার শেষে নিদ্রের বাবা ভিতরে প্রবেশ করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।তারপে তারা দুজন এক এক করে বসে পড়ে সোফায়।
আমি শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ি।নিদ্র পা তুলে বিছানার উপর বসে পড়ে।নিদ্রের বাবার নজর মেঝের দিকে কিন্তু তার মায়ের নজর নিজের ছেলের দিকে।নিদ্র এবার তার বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“বলো কি বলবে?”
সাথে সাথে নিদ্রের বাবা বলে ওঠে,
–“মিহি মা,আমাদের সত্ত্যিই খুব খারাপ লাগছে।নিদ্র আমাদের বলেছে পার্টিটা কিসের।দেখ,তোমাদের সংসার তোমরা করতে না চাইলে আমরা কি করবো বলো?নিদ্র তোমার সাথে থাকতে চায় না।তাই ডিবোর্স দিচ্ছে।আমরা দুঃখিত তোমার জীবনটা নষ্ট করার জন্য।”
একই কথা বলে নিদ্রের মাও।তিনি আমার গলায় একটা সোনার হার পড়িয়ে দেন।তারপর আমার কপালে চুমু খেয়ে বলেন,
–“তোকে নিজের মেয়ে মনে করতাম।কিন্তু..”
আমি তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলি,
–“থাক,মা।আমিও তোমাকে নিজের মা মনে করতাম।মায়ের অভাবটা তোমাকে দিয়ে মেটাতে চেয়েছিলাম,কিন্তু সেটা আমার কপালে নেই।”
নিদ্রের মা আর বাবা দুজনে রুম থেকে বের হয়ে যায়।নিদ্রও বের হয়ে যায় রুম থেকে।বের হওয়ার আগে বলে যায়,
–“আমি ওদিকটা দেখছি,তুমি রেডি থেকো।”
আমি যতই নিদ্রকে দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।ডিবোর্সের সময়ও এতটা খুশি সে।নিদ্রের বাবা-মায়ের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।আমার জীবনটা নষ্ট করে এখন সরি বলছে।আমি বিছানায় শুয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলতে থাকি।মনের মধ্যে অনেক কষ্ট ভীড় জমিয়েছে।বুকটা চিনচিন ব্যাথা করছে।আমি মাথা তুলে পায়ের ব্যান্ডেজটার দিকে তাকাই।তারপর শোয়া থেকে আস্তে করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।প্রথম চেষ্টা আস্তে করে দাঁড়াতে পারি।অনেক কষ্টে এক পা খুঁড়িয়ে ব্যালকনিতে যাই।ব্যালকনিতে রাখা চেয়ারটায় বসে পড়ি ধপ করে।এতক্ষন আরাম করে বসে থাকা বুলবুলিটা উড়ে যায় ব্যালকনির কাছ থেকে।যাবার সময় কিচিরমিচির করে আমাকে অভিশাপ দিয়ে যায় তার আরাম নষ্ট করার কারনে।
আমি একপানে তাকিয়ে থাকি খোলা আকাশটার দিকে।উপরে নীল আকাশ নিচে সমুদ্র।হঠাৎ আমার চোখ আটকে যায় একটা জায়গায়।নিদ্র কিছু লোককে দিয়ে কাজ করাচ্ছে।আমি সেদিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে পুনরায় তাকাই আকাশের দিকে।নিজের অজান্তেই চোখের কোণে পানি চলে আসে।
হঠাৎ রুমে কারো উপস্থিতি টের পাই।ঝট করে মাথা ঘুড়িয়ে সেদিকে তাকাই।রুমের ভিতরে প্রবেশকারী ব্যাক্তিটিকে দেখে ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যায় আমার।অনিক…
অনিক দরজাটা বন্ধ করে দেয়।আমি চোখের পলকে উঠে দাঁড়াই চেয়ার থেকে।হঠাৎ উঠে দাঁড়ানোর কারনে প্রচন্ড ব্যাথা পাই পায়ের মধ্যে।নিজেকে সামলাতে না পেরে মেঝেতে পরে যাই।পলকের মধ্যে আমার সামনে এসে দাঁড়ায় অনিক।আমি উঠে দাঁড়ানোর আগেই আমার নাকে একটা রুমাল চেপে ধরে অনিক।মুহুর্তের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি আমি।তারপর আমার সাথে কি হয়েছে মনে নেই?
যখন জ্ঞান ফেরে নিজেকে বিছানার উপর আবিষ্কার করি আমি।নিজের কাপড়-চোপড় সবকিছু ঠিকঠাকই রয়েছে,তাহলে অনিক আমার সাথে কি করলো?দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি দরজা খোলা রয়েছে।আমি বিছানায় শুয়ে থাকি সেই অবস্থায়।এমন সময় রুমে প্রবেশ করে নিদ্র আর রুশা।নিদ্র ভ্রু-কুচকে তাকায় আমার দিকে।তার তাকানো দেখে ভয় পেয়ে যাই আমি।আমার ভয় পাওয়া দেখে নিদ্র হো হো করে হেসে ওঠে।তারপর রুশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“রেডি করো তুমি।”
রুশা এসে আমাকে রেডি করতে শুরু করে।আমি রুশার দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আচ্ছা পার্টিটা কালকে হওয়ার কথা ছিল না?”
রুশা মাথা নাড়িয়ে না বলে।আমি চুপ হয়ে বসে থাকি।রুশা আমাকে সাজাতে থাকে।আমার মনের মধ্যে একটাই চিন্তা অনিক আমাকে অজ্ঞান করে কি করলো?রুশা আমাকে রেডি করে নিদ্রকে ফোন দেয়।নিদ্র এসে আমাকে নিয়ে বের হয় রুম থেকে।আমরা পৌঁছে যাই সেই স্টেজে।ও মাই গড অনেক লোক এখানে।এত লোক আমি স্বপ্নেও আশা করি নি।
নিদ্র আমাকে বসিয়ে রেখে মাইকের সামনে দাঁড়ায়।সবার উদ্দেশ্যে বলে,
–“গাইস,প্রথমেই আমরা আমাদের আসল কাজটা সেড়ে ফেলবো।আমি ডিবোর্স পেপারে সাইন করছি।ও সাইন করলেই শেষ।”
এই বলে নিদ্র আমার দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দেয়।সেখানে বড় বড় করে লেখা আছে,
‘ডিবোর্স পেপার’
চলবে…