আবদ্ধ তোমার মধ্যে,২য়,৩য় পর্ব

0
3869

আবদ্ধ তোমার মধ্যে,২য়,৩য় পর্ব
নিয়াজ মুকিত
২য়_পর্ব

কোনো স্বামী কখনো এভাবে নিজের বউকে ভাইয়ের কাছে ফেলে যেতে পারে সেটা আমার জানা ছিল না।এদিকে লোকটা আমার পাশে‌ চলে আসে।এমন সময় খট করে খুলে যায় দরজ।লোকটা সাথে সাথে পিছনে তাকায় অনেকটা ভয় নিয়ে।নিদ্র তারাতারি এসে দাঁড়ায় আমার আর লোকটার মাঝে।সে তার ভাইকে উদ্দেশ্য করে খানিকটা নিচু গলায় বলে,

–“অনিক ভাইয়া,তুই এখান থেকে চলে যা।বাবা আসতেছে আমার রুমে।বুঝলাম না কিভাবে টের পেল?”

নিদ্রের দিকে এবার বেশ খানিকটা সন্দেহ নিয়ে তাকায় অনিক।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একটু জোড় গলায় বলে,
–“আমাকে তাড়ানোর বুদ্ধি করেছিস নিদ্র।রক্ষা করতে চাইছিস তোর বউকে।তুই মনে রাখিস,এই মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে হবার কথা ছিল।”

নিদ্র শান্ত চোখে তাকায় অনিকের দিকে।তারপর পিছনে ঘুরে আমার দিকে তাকায়।তারপর আবার সামনে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
–“তাহলে বিয়ে না করে পালালে কেন?”

নিদ্রের এমন প্রশ্নে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় অনিক।সে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে,
–“নিদ্র,তুই জানিস আমি রুহিকে ভালোবাসি।আজ রুহিও আমাকে ছেড়ে চলে গেল..”
“তাই এখন বউয়ের দাবি নিয়ে এসেছো!” অনিকের বাকি কথাটা শেষ করে দেয় নিদ্র।সে অনিকের দিকে তাকিয়ে আবার বলে,

–“শোনো,তুমি পালিয়ে যাওয়ার কারনে ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।বিয়ে হয়েছে মানে সে আমার ওয়াইফ।যদিও ৮মাস পর আমাদের ডিবোর্স হবে,তবুও এখনতো সে আমার বউ।আর তুমি ভাবলে কি করে আমার বউকে আমি তোমার হাতে তুলে দেব এত সহজে।তোমাকে পরিক্ষা করলাম ভাইয়া,ছি.।আই হেট ইউর মাইন্ড।বাবা তোমাকে ত্যাজ্য করেছে।কারন তোমার মতো ছেলে বাবার চাই না।যে একটা মেয়ের জন্য নিজের বাবা-মাকে খুন করার প্লান করে,সেরকম ছেলে কো‌নো বাবা-মা চায় না।আমিও আজ থেকে তোমাকে ত্যাজ্য করলাম ভাই হিসেবে।বের হও নাহলে বাবাকে ডাকবো।”

বাবার কথা শুনে ভয় পেয়ে যায় অনিক।সে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে চুপ‌ করে বের হয়ে যায়।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে এসে সোফায় বসে পড়ে।আমি তার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

–“নেশা কেটে গেছে আপনার।”

আমি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলি,
–“যে অবস্থায় ফেলে ‌গেছেন,আরো নেশা থাকে।নেশা বাপ বাপ করে পালিয়ে গেছে।”
নিদ্র আমার কথায় শুধু মুচকি একটা হাসি দেয় কোনো ‌বলে না।আমি মেঝেতে শোয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।এমন সময় নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“বিছানাটা বড় আছে,চাইলে এক সাইটে থাকতে পারেন।তবে মাঝে কোল বালিশটা রাখতে হবে।লাইট অফ করা যাবেনা।”

তার কথায় আমি এক আলাদা প্রশান্তি খুঁজে পাই।সাথে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে,আচ্ছা আমি কি তাকে স্বামী হিসেবে চাই?কেন তার সাথে শোয়ার কথায় মনটা এত খুশি হলো?তবে কি তার প্রতি আমার অনুভূতি জন্মেছে?

এতশত না ভেবে আমি অনেকটা খুশি হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ি।কোল বালিশটা মাঝে রেখে তার দিকে চোখ করে শুয়ে থাকি।নিদ্র সোফা থেকে উঠে আমার পাশে শুয়ে পড়ে।এখন দুইজনে একই বিছানায় শুধু মাত্র কোল বালিশটা দিয়ে বর্ডার দেয়া।আমি বেহায়ার মতো নিদ্রের দিকে তাকিয়ে আছি।নিদ্র আমার এরকম তাকিয়ে থাকা দেখে নিজেও আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে থাকে।

প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় কে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারে?প্রতিযোগিতায় নিঃসন্দেহ জয় লাভ করে নিদ্র।তার এরকম তাকিয়ে থাকা দেখে লজ্জা পেয়ে চোখ সড়িয়ে নিতে বাধ্য হই আমি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

–“আপনার চাকরীটা চলে গেছে তাইনা?”

তার কথার উত্তরে আমি শুধু নিরবে মাথা নাড়াই কোনো কথা বলি না।সে মুখ দিয়ে এক অদ্ভুত ধরনের শব্দ করে।তারপর মুচকি হেসে বলে,
–“আপনাদের সাথে ডিলটা করলে আমাদের অনেক লস হতো।তাই আর ডিলটা করিনি।তার উপর রুশারও আপত্তি ছিল ডিলটা নিয়ে।তাই মুখের উপরই না বলে দিয়ে চলে আসি।”

আমি এবার নিদ্রের দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আমার চাকরীটা তো গেল।চাকরী খুঁজতে হবে এখন আবার।আচ্ছা ওই শুটকি আকৃতির বেয়াদপ মেয়েটার নাম কি রুশা?”

নিদ্র মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,
–“হুম।সে আমার পি.এ।অবশ্য এই মাস শেষ হলেই সে আমেরিকা চলে যাবে তার বরের কাছে।তখন পদটা ফাঁকা হয়ে যাবে।নতুন কোন মেয়েকে আনতে হবে আবার।”

আমি নিদ্রের মুচকি হাসিটার উপর বেশ বড়সড় ভাবে ক্রাশিত হই।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি তার দিকে।আমার এরকম তাকানো দেখে নিদ্র উল্টো দিকে ঘুড়ে সুয়ে পড়ে।তারপর আর এদিকে না তাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে।তার সাথে ঘুমিয়ে পড়ি আমিও।

পরেরদিন সকাল বেলা উঠে নিজেকে ঠিক জায়গায় আবিষ্কার করলেও নিদ্র তার জায়গায় দেখতে পাইনা।খানিকটা কৌতুহল নিয়ে চোখ পিটপিট করে চারদিকে তাকাই।একপর্যায়ে চোখ আটকে যায় ওয়াসরুমের দরজার সামনে।ওয়াও?

সদ্য গোসল শেষ করে বের হয়েছে নিদ্র।পরনে হাফ প্যান্ট আর এক গেঞ্জি।মাথার চুল গুলো ভালো করে না মোছার কারনে চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে হালকা হালকা।সেই সাথে তার লাল টকটকে ঠোটটা তার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে।আমি তার দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে পারছিনা।

নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে সোফায় বসে পড়ে।তার এই মুচকি হাসিটাই আমার মনটা কেড়ে নেওয়ার জন্য যতেষ্ট-এর থেকেও বেশি।আমি বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকি তার দিকে।নিদ্র সোফায় বসে ল্যপটপটা কোলে বসিয়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে শুরু করে।

আমি বিছানা থেকে উঠে বিছানা গোছাতে শুরু করি।আমি বারবার নিদ্রের দিকে তাকালেও সে একবারও আমার দিকে তাকায়নি।আমি ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বের হই।এমন সময় কাজের মেয়ে ফুলি এসে খবর দেয়,ব্রেকফাষ্ট করার জন্য নিচে ডাকছে সবাই।

নিদ্র হাফপ্যান্ট আর গেঞ্জি পড়া অবস্থায় ল্যাপটপটা কোল থেকে নামিয়ে রেখে বের হয়ে যায় রুম থেকে।আমি অবাক হয়ে তার পিছন পিছন বের হই রুম থেকে।

সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে।আমরা দুজন গিয়ে পাশাপাশি বসে পড়ি।নিদ্র খাবার তুলে নিয়ে খেতে শুরু করে।আমিও তার দেখাদেখি খাবার তুলে নিয়ে খেতে শুরু করি।প্রথমের দিকে সবাই চুপ থাকলেও মধ্যবর্তি সময়ে আমার শশুর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–“বউমা,তুমি আজকে অফিসে যাবে না!”

আমি মাথা নিচু করে বলি,
–“বাবা,আমার চাকরীটা চলে গেছে।এখন আরেকটা চাকরী খুঁজতে হবে।”
আমার এই কথাটা মনে হয় পছন্দ হয়নি আমার শাশুড়ির।তিনি খানিকটা রেগে বলেন,
–“আমাদের এত বড় একটা অফিস থাকতে তোমাকে কেন চাকরী খুঁজতে হবে।তুমি আজ থেকে নিদ্রের সাথে অফিসে যাবে।নিদ্র,বউমাকে অফিসে নিয়ে যাবি।”

নিদ্র এবার মাথা তুলে এর এই কথার প্রতিবাদ করতে শুরু করে।সে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে,যে অফিসে এই মুহুর্তে কোনো পদ ফাঁকা নেই।কিন্তু আমার অবুঝ শশুর-শাশুড়ি কড়া গলায় জানিয়ে দেন,পদ না থাকলে পদ বানিয়ে নিবি।তবুও তোকে অফিসে নিয়ে যেতেই হবে।

শেষ পর্যন্ত নিদ্র খাবার শেষ না করেই উঠে পড়ে।আমি নিদ্রের সাথে অফিসে যাব কথাটা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।মনে মনে এত খুশি হয়েছি যা বলে বোঝানো কঠিন।কিন্তু কেন খুশি হলাম আমি?আর ৮মাস পরতো আমরা দুজন আলাদা হয়ে যাব।এই কথাটা ভেবে মনটা খানিকটা খারাপ হয়ে যায়।

সেদিনের মতো নিদ্রের গাড়িতে করে অফিসে যাই আমি।প্রথমদিন অফিসে গিয়েই এরকম কিছু করে ফেলবো সেটা আমি কখনো ভাবতে পারিনি।নিদ্র আমাকে সামনে বসিয়ে রেখে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।চোখ দিয়ে আগুনের ফিরকি ঝড়ছে।

চলবে….

আবদ্ধ তোমার মধ্যে
নিয়াজ মুকিত
৩য় পর্ব

নিদ্রের সাথে গাড়িতে করে রওনা দেই অফিসের পথে।অফিসে পৌছে নিদ্র গাড়িটা পার্কিং করে আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা ধমক দিয়ে বলে,
–“চলুন তারাতারি!”
এই বলে তিনি হাটতে শুরু করেন।আমিও তার পিছন পিছন হাটতে শুরু করি।অফিসের দরজায় যেতে দারোয়ান আমাদের দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে।আমি ভালোভাবে লক্ষ করে দেখি,ওমা এটাতো আমার আগের অফিসটার থেকে ৪গুন বড়।

ভিতরে প্রবেশ করতেই শুটকি আকৃতির রুশা নামক ফালতু মেয়েটা এসে নিদ্রের সামনে দাঁড়ায়।তারপর নিদ্রের সাথে হাত মিলিয়ে খানিকটা সন্দেহ চোখে তাকায় আমার দিকে।রুশা এখনো নিদ্রের হাতটা ধরে আছে।নিদ্র এবার নিজ দায়িত্বে নিজের হাতটা সড়িয়ে নেয় রুশার কবল থেকে।নিদ্রের এই কাজ দেখে আমার মনটা বেজায় খুশি হয়।

–“নিদ্র,এইটা ওই মেয়েটা না।যে,নাইট ক্লাবে ঘুমিয়ে পড়েছিল।”কথাটা নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে রুশা।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,”হুম,ওই মেয়েটাই।”

রুশা সাথে সাথে আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা কড়া গলায় বলে,
–“এখানে কেন এসেছো তুমি?”
আমার কথাটার উত্তর নিদ্রই দিয়ে দেয়।সে রুশার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“ও এখানে জব করবে।রুশা,তুমি তোমার কাজে যাও আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি আমার রুমে।”

রুশা আর কিছু না বলে চুপ করে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।তার এরকম তাকানো মোটেও পছন্দ হয় না আমার।আমি তারাতারি নিদ্রের সাথে তার রুমের দিকে রওনা হই।রুশা কিছুক্ষন আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে রওনা হয়।

দরজা ঠেলে আমাকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে নিদ্র।আমি অবাক হয়ে দেখতে থাকি সম্পুর্ন রুমটা।অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা হয়েছে সব কিছু।নিদ্র নিজে ডেক্সের ওপাশের চেয়ারটাতে বসে,আমাকে তার সামনের চেয়ারটাতে বসতে বলে।আমি তার কথামতো তারাতারি করে বসে পড়ি তার সামনের চেয়ারটাতে।নিদ্র এবার আমার দিকে ঝুঁকে খানিকটা নরম গলায় বলে,

–“যতদিন রুশা আছে ততদিন আপনার কোনো কাজ নেই।রুশা গেলে তার জায়গাটাতে আপনাকে দেয়া হবে।এখন কি করবেন বলেন?”

আমি নিদ্রের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলি,
–“আপনি জানেন!”
নিদ্র এবার ঝোঁকা থেকে উঠে চেয়ারে হেলান দিয়ে রুবিক্স কিউবটা ঘোড়াতে ঘোড়াতে বলে,
–“আমি বাবাকে বলতে চাইছিলাম যে,পরের মাস থেকে এটেন্ড করতে।কিন্তু তিনিতো আমার কোনো কথাই শুনলেন না।আর মাত্র ১০দিন মাস শেষ হতে।আপনি একটু বুঝিয়ে বলবেন বাবাকে যে,পরের মাস থেকে জয়েন করবেন।অযাথা এখানে এসে বসে থাকার মানে হয়।”

আমি তার কথা শুনে নিজের মুচকি হাসিটা মুখের মধ্যে রেখে বলি,
–“না,আমি আপনার সাথে অফিসে আসবো প্রতিদিন।দরকার হলে আপনি কাজ করবেন আর আমি বসে বসে দেখবো।তবুও আসবো।”

নিদ্র আমার কথাটা শুনে হাল্কা রেগে যায়।সে একটু চিল্লিয়ে বলে,
–“থাকুন তাহলে বসে।আপনার ভালোর জন্য বলছিলাম আর আপনি।থাকুন বসে থাকুন”
এই বলে নিদ্র একটা ফাইল টেনে নিয়ে সেটা দেখায় মনোযোগ দেয়।আমি নিদ্রের রাগটা আরেকটু বাড়িয়ে দেয়ার জন্য শয়তানি করে বলি,
–“হুম,বসে বসে আমার বরকে দেখবো।”

কথাটা বলেই বুঝতে পারি কতটা ভুল করে ফেলেছি।নিদ্র বেশ রেগে তাকায় আমার দিকে।তারপর খানিকটা কড়া গলায় বলে,
–“ফালতু কথা বলবেন না।আমি আপনাকে স্ত্রী হিসেবে মা‌নি না।আর এমনিতে আটমাস পর আমাদের ছাড়া-ছাড়ি হবে।সো ডোন্ট কল মি হাসবেন্ড,ওকে।”

নিদ্রের কথা শুনে বুঝতে পারি সে কথাটা শুনে বেশি রাগেনি।উপরে উপরে রাগি ভাব ধরে রাখলেও নিচে বেশি রাগ নেই তার।তাই আমি উঠে দাঁড়িয়ে তার দিকে ঝুঁকে বলি,
–“নট ওকে,আমি আপনাকে বর বলেই ডাকবো।এতে যদি আপনার সমস্যা থাকে তাহলে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পানি খেয়ে আসুন।তবুও আমি আপনাকে বর ডাকবো।আর আপনি আমাকে বউ হিসেবে মানেন না তাতে কি হয়েছে?আমিতো আপনাকে বর হিসেবে মানি।”

নিদ্র রাগে দাঁত কিড়মিড় করে তাকায় আমার দিকে।আমি তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দেই।আমার এই হাসিটা তার রাগ ১গুণ থেকে ৩গুণ বাড়িয়ে দেয়।নিদ্র কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে পিয়নকে ডাকে।পিয়ন আসতেই নিদ্র খানিকটা চিল্লিয়ে বলে,

–“কফি নিয়ে আসো!”

পিয়ন দৌড় দেয় কফি আনতে।আমি নিদ্রকে ধরে আস্তে করে বসিয়ে দেই নিজের চেয়ারে।তারপর নিজে গিয়ে বসে পড়ি নিজের চেয়ারে।নিদ্র নিচের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।আমি নিদ্রের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে বলি,

–“দেখেন,আপনি আমাকে কেন স্ত্রী হিসেবে মানেন না একটা কারণ বলবেন?”

এমন সময় অনুমতি ছাড়া দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে রুশা।সে সন্দেহ চোখে তাকায় আমার দিকে।তারপর নিদ্রের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যায় তার দিকে।নিদ্র মাথা তুলে রুশার দিকে তাকিয়ে রুবিক্স কিউবটা হাতে নেয়।রুশা এসে বসে পড়ে আমার পাশের চেয়ারটাতে।

নিদ্র হাসি মুখে তাকায় রুশার দিকে।রুশা নিদ্রের দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলে,
–“নিদ্র,আমাকে আজকে বাসায় যেতে হবে।তাই ছুটি লাগতো!”
নিদ্র হাসি মুখে রুশাকে ছুটি দিয়ে দেয়।রুশা আরো একবার আমার দিকে সন্দেহ নিয়ে তাকিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে।

‌নিদ্র রুশার দেয়া ফাইলটা খুলতে খুলতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“আপনিও কি এখনি বাসা যাবেন?”
আমি মাথা নাড়িয়ে বলি,না।আমি আমার বরের সাথে এসেছি বরের সাথে যাব।
আমার কথায় নিদ্র প্রচুর রেগে যায় কিন্তু কোনো কথা বলে না।আমি যে দিন দিন নিদ্রের প্রতি দুর্বল‌ হয়ে পড়েছি সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না।নিদ্রের প্রতি জন্মাচ্ছে আমার ভালোবাসা।

এমন সময় পিয়ন এসে কফি দিয়ে যায়।নিদ্র এককাপ কফি আনতে বললেও পিয়ন দুইকাপ নিয়ে এসেছে দেখে নিদ্র অবাক হয়।সে অবাক হয়ে পিয়ন রহিম মিয়াকে জিজ্ঞাসা করে,দুইকাপ আনার কারন কি?

রহিম মিয়া তার হলদেটে দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বলে,
–“হার,আন্নি মোরে এককাপ আইনবার কইছেন কিন্তু মুই দুইকাপ লইয়া আইছি।কারন এইযে হ্যাডামটা আছে না,তার জইন্যে এককাপ আর আন্নের জইন্যে এককাপ।”

রহিম মিয়ার কথা বুঝতে অনেকক্ষন সময় লাগে আমার।নিদ্র রহিম মিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
–“গর্দভ ওটা হার না স্যার হবে।আর হ্যাডাম নারে ম্যাডাম।যা দুইকাপ আনছোস ভালো করছিস।”

রহিম মিয়া পুনরায় তার হলদেটে দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বলে,
–“হার মুই তেইলে গেনু।হ্যাডাম গেনু মুই।”
এই বলে রহিম মিয়া রুম থেকে বের হয়ে যায়।রহিম মিয়া বের হইতেই আমি ‌নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলি,
–“এনার কথা কেমনে বোঝেন।আমার বস হইলে কতদিনে বের করে দিত।”

নিদ্র কফির কাপটাতে চুমু দিতে দিতে বলে,
–“রহিমকে বাবা খুব পছন্দ করে।রহিমও বাবাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।আমারও রহি‌ম মিয়াকে ভালোলাগে।তার কথাগুলো শুনতে মন চায়।তাইতো শুরু থেকে বাবার সবাইকে চেঞ্জ করলেও রহিমকে রেখে দিছে অফিসে।”

এই বলে নিদ্র কফির কাপ রেখে উঠে দাঁড়িয়ে একটু বাহিরে যায়।আমি সাথে সাথে নিদ্রের কাপটা নিজে নিয়ে আমারটা নিদ্রের কাপের জায়গায় রেখে দেই।আমি এখন বেশ বুঝতে পারছি আমি নিদ্রকে সম্পুর্ন মনটা দিয়ে ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু আটমাস পর এই ভালোবাসাটা ছিন্ন হয়ে যাবে ভেবে খুব কষ্ট পাই।

নিদ্র রুমে প্রবেশ করে চেয়ারে বসে পড়ে।কফির কাপটার দিকে তাকিয়ে প্রচন্ড রেগে যায় সে।হাত দিয়ে তুলে আছাড় মারে কাপটাকে।তারপর রাগি চোখ নিয়ে তাকায় আমার দিকে।একপর্যায়ে চিল্লিয়ে বলে,
–“গেট লষ্ট।বের হন আমার অফিস থেকে।”

হঠাৎ নিদ্রের এরকম রেগে যাওয়ার কারন বুঝতে পারিনা আমি।নিদ্রের চিৎকার শুনে অফিসের সবাই ‌এসে দাড়িয়েছে দরজার বাহিরে।কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা আমি?এমন সময় একটা কাজ করে ফেলি উজবুকের মতো।আমি নিদ্রের ঠোটের সাথে নিজের ঠোট মিশিয়ে দেই।দরজার বাহিরে দাঁড়ানো সবাই‌ সাথে সাথে সেখান থেকে চলে‌ যায়।নিদ্রের রাগের পরিমাণ চুড়ান্ত পর্যায় ছাড়িয়ে যায়।চোখ-মুখ লালটকটকে রং ধারন করে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here