আবদ্ধ তোমার মধ্যে,৪র্থ পর্ব,৫ম পর্ব

0
3027

আবদ্ধ তোমার মধ্যে,৪র্থ পর্ব,৫ম পর্ব
নিয়াজ মুকিত
৪র্থ_পর্ব

নিজেকে অনেক বেহায়া মনে হচ্ছে সাথে কমনসেন্সলেসও।কিভাবে এই কাজটা করতে পারলাম?নিদ্রর তো রেগে যাওয়া ঠিকই আছে।অফিসের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।নিদ্র আমাকে থাপ্পর মেরে বের করে দেয় রুম থেকে।তারপর সে গাড়ি নিয়ে রওনা দেয় বাসার উদ্দেশ্য।আমিও আর সেখানে না থেকে হাটতে শুরু করি।অফিস থেকে বের হওয়ার সময় রহিম মিয়া সামনে এসে এক গাল হেসে বলে,

–“হ্যাডাম,মন খারাপ করিয়েন না।হারের একটু রাগ বেশি।”

আমি রহিম মিয়ার কথায় স্লান একটা হাসি দিয়ে বের হয়ে আসি অফিস থেকে।হাটতে শুরু করি বাসার উদ্দেশ্যে।নিজেকে বেহায়া ভাবার কারন অনেক আছে।কিন্তু এই মুহুর্তের কারনটা খুবই বাজে।আমি এখনো বুঝতে পারছি না কেন তখন কিসটা করলাম।যদি কাউকে এই কথা বলি তাহলে সবাই পাগল বলবে এটা বুঝতে পারছি।কিন্তু সত্ত্যি আমি বুঝতে পারছি না তখন হঠাৎ করে আমার কি হলো?আজ যদি আমার বিয়েটা নিদ্র এর সাথে না হতো না হলে এই দিনটা দেখতে হতো না।সত্ত্যি আমি নিদ্রের প্রতি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছি।এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসি।

বাসার সামনে এসে দেখি নিদ্রের গাড়িটা বাহিরে দাঁড় কড়ানো।আমি মাথা নিচু করে ভিতরে প্রবেশ করি।নিচে কেউ নেই দেখে সোজা রওনা হই রু‌মের দিকে।রুমের সামনে গিয়ে দেখতে পাই দরজাটা লাগানো।হাত দিয়ে বুঝতে পারি শুধু আলগা করে আটকে দেয়।আমি হাত দেয়ার সাথে সাথে খুলে যায় দরজা।আস্তে করে রুমের ভিতরে প্রবেশ করি।রুমের চারদিকে তাকিয়ে নিদ্রকে দেখার চেষ্টা করি।কিন্তু নিদ্র রুমের কোথাও নেই।

আমি ধপ করে বসে পড়ি বিছানার মধ্যে।ঝট করে খুলে যায় ওয়াসরুমের দরজা।হাফপ্যান্ট পড়া অবস্থায় ওয়াসরুম থেকে বের হয় নিদ্র।আমি তার দিকে তাকাতে গিয়ে চোখ নামিয়ে নেই।আর তার প্রতি দুর্বল হওয়া যাবে না।আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে যাই।নিদ্র আমার দিকে তাকালো কিনা বুঝতে পারছি না।তবে কিছুক্ষন পর আলমারি খোলার আওয়াজ হয়।নিদ্র মনে হয় সেখান থেকে শার্ট বের করছে পড়ার জন্য।

আমার ধারনাই ঠিক।নিদ্র একটা শার্ট বের করে পড়ে ফেলে।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি নিদ্রের যাওয়ার দিকে।যে মানুষটা কালকে রাতে ভালো করে কথা বললো সে আজ কথাই বলছে না।খুব কষ্ট লাগছে।তবে এই ভেবে একটু ভালো লাগে যে,তার সাথে তো আট মাস পর ডিবোর্স হবে।কথা বলুক আর না বলুক আমার কি?তবুও কথা বলার খুব ইচ্ছে হচ্ছে।যদিও বিরাট ভুল করে ফেলেছি।

আমি আবার ধপ করে বিছানায় বসে পড়ি।চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে শুরু করে।মনের মধ্যে চলে আসে আট মাস পরে কি করবো তার ভাবনা?বাসায় গিয়েও থাকতে পারবো না।বাবা থাকলেও মা অনেক আগেই আমাদের ছেড়ে গেছে।মাকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে ওই বাড়িতে থাকা কঠিন।তাইতো বাড়ি ছেড়ে শহরে এসে থাকতাম।আট মাস পর কোথায় থাকবো আমি?

এই মুহুর্তে মাথায় চাপ দেয় পুরনো একটা খারাপ অভ্যাস।কোনো কিছু বুঝতে না পারলে হাত কাটা।এটা আমার অনেক দিন আগের অভ্যাস।সামনে একটা ফলকাটা চাকু দেখতে পাই।চাকুটা হাতে নিয়ে আস্তে করে কাটতে শুরু করি হাতটা।চাকু দিয়ে লিখে ফেলি নিদ।র ফলাটা দেয়ার আগেই আমার কাছ থেকে চাকুটা নিয়ে নেয় কেউ একজন।

অবাক হয়ে ‌মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে নিদ্র নামক লোকটা।তার চোখ গুলো দেখে আমার মনটা পুনরায় ভয় পেয়ে যায়।নিদ্র তার হাতটা তুলে বসিয়ে দেয় গালের উপরে।একটু জোড়ে হওয়ায় চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে আমার।

নিদ্র চাকুটা টেবিলের উপর রেখে কোনো কথা না বলে বেড়িয়ে যায় সেখান থেকে।এই অবস্থায়ও নিদ্র আমার সাথে কথা বললো না দেখে বুঝতে পারি সে প্রচন্ড রেগে আছে আমার উপর।হয়তো আর কখনো কথা বলবে না।এই মুহুর্তে একটা বাক্স নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে নিদ্র।আমার দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে পড়ে আমার সামনে।আমার কাটা হাতটা তার নিজের হাতে তুলে নেয়।তারপর গভীর মনোযোগ দিয়ে ওয়াস করতে শুরু করে হাতটা।মাঝে মাঝে একটু আধটু লাগছে আমার।তবে নিদ্রের মুখটা দেখে সবটা ভুলে যাচ্ছি আমি।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়েই পড়ছে।মনটা বলছে,এই ছেলেটা এত পাষাণ কেন?একবারও আমার দিকে তাকাচ্ছে না।কথাও বলছে না।সে কি আমার মনটা বুঝতে পারছে না,বুঝতে পারছে না আমার কান্না করার কারণ।

আমি নিদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে।মনটাকে বোঝাতে পারছি না যে আটমাস পর আমরা আলাদা হয়ে যাব।

নিদ্র আমার হাতটা ব্যান্ডেজ করা শেষ করে মুখ তুলে তাকায় আমার দিকে।আমি তারাতারি নিজের চোখটা সড়িয়ে নেওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা করি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,
–“এসব কি?হাত কাটছেন কেন?”

নিদ্রর কথা শুনে আমি চোখ তুলে তাকাই তার দিকে।কোনো কথা না বলে ঢ্যাপঢ্যাপ করে দেখতে থাকি তাকে।নিদ্র আমার চোখের সামনে একটা আঙ্গুল তুলে ধরে বলে,
–“বাদ দিন।আর এরকম করবেন না।”

এই বলে উঠে দাঁড়ায় নিদ্র।তারপর এয়ারফোন আর মোবাইলটা নিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে।আমি এক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকি।নিদ্র বের হয়ে গেলে মনটা এক অজানা অনুভূতিতে ভরে যায়।আমি কতটা বেহায়া সেটা বুঝতে পারছি নাহলে এই কয়েকদিনের মধ্যে একটা ছেলের প্রেমে পড়ে যাই।

মুখে-ঠোটে কথা বলতে পছন্দ করি ছোটবেলা থেকেই।তাই সিদ্ধান্ত নেই মনের ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেব নিদ্রকে।রিজেক্ট করবে বুঝতে পারছি,তবুও বলেই দেখি।

মনের কথা বলার জন্য রওনা হই ছাদের দিকে।ছাঁদে গিয়ে প্রথমে চুপ করে একটা ফুল ছিড়ে নেই নিদ্রের বাগান থেকে।তারপর আস্তে আস্তে এগোতে থাকি নিদ্রের দিকে।একপর্যায়ে গিয়ে বসে পড়ি নিদ্রর ঠিক পিছনে।তারপর চোখ বন্ধ করে বলতে শুরু করি মনের কথাগুলো।

সব কথা শেষ হতেই ঘুড়ে দাঁড়ায় নিদ্র।আমি তার দিকে ফুলটা এগিয়ে দিয়ে বলি,আই লাভ ইউ।
নিদ্র আমার হাত থেকে ফুলটা নিয়ে এমন একটা কাজ করে যা আমি ভাবতেও পারিনি।হায় আল্লাহ..

চলবে…..

আবদ্ধ তোমার মধ্যে
নিয়াজ মুকিত
৫ম_পর্ব

আমার এতক্ষন থেকে বলে যাওয়া কথাগুলো শুনে নিদ্র রাগার বদলে হো হো করে হেসে ওঠে।তার হাসির কারনটা বোঝার চেষ্টা করি আমি।নিদ্র তার কান থেকে এয়ারফোনটা খুলে আমার হাত থেকে গোলাপটা নিয়ে নেয়।তারপর হাসতে হাসতে গোলাপটা মাটিতে ফেলে দেয়।আমি বুঝতে পারি তার উত্তর কি?লজ্জায় লাল হয়ে যায় মুখটা।আমি উঠে দাঁড়িয়ে নিচে নামার জন্য প্রস্তুত হই।এই মুহুর্তে আমার হাতটা টেনে ধরে নিদ্র।বেশ অবাক হয়ে তার দিকে তাকাই আমি।নিদ্র অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,

–“ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে বলে এই না যে ভালোবেসে ফেলেছি।একটা মেয়ে কিভাবে এত বেহায়া হয়?আপনার ফ্যামিলি প্রবলেম আছে।মনে রাখবেন আট মাস পর ডিবোর্স।”

আমি তার কথা শুনে কোনো উত্তর না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।সিদ্ধান্ত নেই কয়েকদিনের জন্য বাবার বাড়ি যাব।অনুমতি নেয়ার জন্য নিদ্রের বাবার রুমে গেলে তিনি অনুমতি দিয়ে দেন।নিদ্রকে আমার সাথে নিতে বললে আমি না করে দেই।এতে বেশ অবাক হন তিনি।অবশেষে ড্রাইভারকে আদেশ দেন আমাকে রেখে আসতে।

তার কথা মতো নিদ্রকে না জানিয়ে রওনা হয়ে যাই বাসার উদ্দেশ্য।ধীরে ধীরে পশ্চিম আকাশে সুর্য ডুবতে শুরু করে।চোখে পানি,বুকে একরাশ অভিমান নিয়ে চলেছি বাসার উদ্দেশ্যে।একপর্যায়ে সিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ি।ড্রাইভার আমাকে জাগিয়ে দেয় বাসার সামনে এসে।আমি গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভারকে বিদায় দিয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করি।আমাকে একা দেখে খানিকটা অবাক হন আমার বাবা।আ‌মি তার দিকে তাকিয়ে খানিকটা হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে যাই।

রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ি।বাবা বাহিরে থেকে ডাকতে শুরু করে।আ‌মি খানিকটা চিল্লিয়ে তার উদ্দেশ্যে বলি,
–“বাবা,আমি একটু পরে বের হচ্ছি।”
বাবা আর কোনো কথা না বলে চলে যায়।আমি উপুর হয়ে বালিশে মাথা গুজে শুয়ে থাকি।চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে শুরু করে বিপুল পরিমাণে।কি ভুল করেছি আমি?কি ভুল করেছি?তাকে নিয়ে সংসার সাজাতে চেয়েছি।তার জন্যেই এত বেয়াহা হয়েছি।তার জন্যেই নিজের অবস্থা থেকে নিচে নেমেছি।শুধুমাত্র তাকে ভালোবাসি বলে।কিন্তু এটা ভাবিনি যে একপক্ষের ভালোবাসা দিয়ে কোনো কিছু হয় না।একটু ভালোবাসা চেয়েছিলাম শুধু।একটু,এতটুকু ভালোবাসাও কি দেয়া যায় না?

এই মুহুর্তে মাকে খুব মনে পড়ছে।মায়ের শান্তনা গুলো।সত্ত্যি মা যে আমার জীবনে কি ছিল সেটা এখন বুঝতে পারছি?চিৎকার করে মাকে ডাকতে চাচ্ছে এই বেয়াহা মনটা।মনে হচ্ছে কেউ নিরবে আমার ‌মাথায় হাত বোলাচ্ছে।মাথা তুলে তাকাই মাথার দিকে।মাকে দেখতে পাই সেখানে।তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন,

–“পাগলি মেয়ে,মায়েরা সব স‌ময় সন্তানের পাশে থাকে।সন্তানের সব কাজ কর্মে তাদের সঙ্গে থাকে মায়েরা।মা জাতি এমন এক জাতি,যারা সন্তানকে ছাড়া কোথাও থেকে শান্তি পায় না।মা জাতি একটু বেয়াহা হয় রে।সন্তানের জন্যে তারা সব করতে পারে।আমি সব সময় তোর সাথে আছি আমার পাগলি মেয়ে।কান্না নয় সামনের বিপদটাকে তাড়ানোর চেষ্টা কর।খবরদার,নিজেকে কখনো বেয়াহা বলবি না?”

এই বলে আস্তে আস্তে মিলিয়ে যান তিনি।আমি বালিশে মাথা গুজে নিরবে কাঁদতে থাকি।মনে হচ্ছে মা সত্ত্যি সত্ত্যি এসেছিল।তার কথাগুলো এখনো কানে বাজতেছে।তিনি বলে গেলেন,”পাগলি মেয়ে,মায়েরা সব স‌ময় সন্তানের পাশে থাকে।সন্তানের সব কাজ কর্মে তাদের সঙ্গে থাকে মায়েরা।মা জাতি এমন এক জাতি,যারা সন্তানকে ছাড়া কোথাও থেকে শান্তি পায় না।মা জাতি একটু বেয়াহা হয় রে।সন্তানের জন্যে তারা সব করতে পারে।আমি সব সময় তোর সাথে আছি আমার পাগলি মেয়ে।কান্না নয় সামনের বিপদটাকে তাড়ানোর চেষ্টা কর।খবরদার,নিজেকে কখনো বেয়াহা বলবি না?”

আমি এবার উঠে বসে পড়ি।মায়ের কথাটা মনে করি,কান্না নয় সামনের বিপদটাকে তাড়ানোর চেষ্টা কর।হুম আর কান্না করবো না।সামনের বিপদটা তাড়ানোর চেষ্টাই করবো।এর জন্য ভালো হতে হলে ভালো হবো,বেয়াহা হতে হলে বেয়াহা হব।চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়াই আমি।ব্যাগ থেকে সুন্দর একটা শাড়ি বের করে শাওয়ার নেয়ার জন্য ওয়াসরুমে প্রবেশ করি।

ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে সোজা গিয়ে বসে পড়ি আয়নার সামনে।আজ মনের মতো সাজবো।মা মারা যাওয়ার পর কখনো সাজিনি আমি।কিন্তু আজ সাজবো।নিজের এত বড় পরিবর্তন দেখে নিজেই অবাক হই।সবশেষে চোখে কাজল দিয়ে উঠে দাঁড়াই আমি।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিঁখুত ভাবে দেখতে শুরু করি।সত্ত্যি অনেক সুন্দর লাগছে আজকে আমাকে।

আমি দরজা খুলে বের হই রুম থেকে।বাবা সোফার মধ্যে বসে আছে কপালে হাত দিয়ে।আমি গিয়ে বাবার সামনের সোফাটায় বসতে বসতে বলি,
–“বাবা,তুমি কি কোনো কারণে চিন্তিত?”

হঠাৎ আমার কথা শুনে মাথা তুলে আমার দিকে তাকায় বাবা।আমাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখে বেশ অবাক হয়েছেন তিনি সেটা বুঝতে পারছি।আমি উঠে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলি,
–“চা খাবে না কফি।”

বাবা এবার সোফায় হেলাম দিয়ে তার মুখের হাসিটা বজায় রেখে বলে,
–“চা”
আমি কিচেনে যাই যা তৈরি করতে।কিচেনে চা তৈরি করতে করতে একটু আঘাত লাগে ক্ষত স্থানটায়।গোসলের সময় ব্যান্ডেজটা খোলার পর আর ব্যান্ডেজ করা হয়নি এখনো।আমি চা তৈরি করে নিয়ে গিয়ে বাবার সামনে বসে পড়ি।সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি চা খেতে খেতে বাবাকে জানাবো ডিবোর্সের কথাটা।পরক্ষনে আবার ভাবি তিনি খুব কষ্ট পাবেন।শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেই যা হবার আমার উপর দিয়েই হোক,বাবাকে কষ্ট দেয়ার মানে নেই।আমিই বেয়াহা হব,আমি পার্সোনালিটি হীন হবো,তবুও বাবার যেন কোনো কষ্ট না হয়।

আমি একটা কাপে চা ঢেলে এগিয়ে দেই বাবার দিকে।বাবা হাসি মুখে চায়ের কাপটা নিয়ে খেতে শুরু করে।আমিও একটা কাপে চা নিয়ে খেতে শুরু করি।খাওয়ার সময় বাবার সাথে না বিষয়ে অনেক কথা হয়।পরিশেষে জানতে পারি,আজকে বুয়া আসবে না।সো,আমাকেই রান্না করতে হবে।

বাবা বাজারের পথে রওনা হয়ে পড়েন ব্যাগ নিয়ে।আমি ছাঁদে যাই আমার লাগানো গাছ গুলো দেখতে।রাতের বেলা ছাদে যাওয়ার অভ্যাস আমার নেই বললেই চলে।তবুও আজকে আসলাম।বাবা বের হয়ে রিকশা ডেকে তাতে চড়ে বসেন।রিকশাওয়ালা চলতে শুরু করে।আমি উপর থেকে সব দেখছিলাম।এমন সময় ‌একটা কার এসে থামে আমাদের বাড়ির সামনে।কারটা যে নিদ্রের সেটা বুঝতে পারছি।কিন্তু এতো রাতে নিদ্র কেন সেটা বুঝতে পারছি না।

নিদ্র গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে প্রবেশ করে।আমি তারাতারি করে নিচে নামতে শুরু করি।একপর্যায়ে সোফার ঘরে এসে দেখি নিদ্র সোফার উপরে পড়ে আছে।আমি তার কাছে যেতেই একটা বাজে গন্ধ পাই।সে যে ড্রিঙ্ক করেছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না আমার।সে এখন অচেতন হয়ে পড়ে আছে।

দ্রুত ভাবনা চলছে আমার মাথায়।নিদ্রকে এই অবস্থায় দেখলে বাবা খুব কষ্ট পাবেন।তার একমাত্র মেয়ের জামাই কিনা রাত-দুপুরে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে শশুর বাড়ি আসে।এটা প্রত্যেকটা শশুরের জন্যই কষ্টের।আমি তারাতারি করে নিদ্রকে দাঁড় করাই।নিদ্র আমার কাধে মাথা দিয়ে এলোমেলো পা ফেলতে থাকে।অনেক কষ্ট করে তাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসি আমি।এখন একটাই চিন্তা গাড়িটা কোথায় রাখবো।

এর মধ্যে এসে উপস্থিত হন বাবা।তিনি গাড়িটা দেখে আমাকে জিজ্ঞাসা করে,
–“জামাই এসেছে?কোথায় ডাক?”
আমি আমতা আমতা করে বলি,
–“বাবা,ওনার খুব মাথা ব্যাথা করতেছে,তাই এসেই ঘুমিয়ে গেছে।কাল সকালে দেখা করিও।”

বাবা আর কোনো কথা না বলে বাজারের ব্যাগটা আমার হাতে দিয়ে চলে যান।সেদিনের মতো খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমাতে আসি আমি।নিদ্রকে বিছানায় রেখে বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়ি মেঝেতে।যখনই চোখে ঘুমটা আসবে আসবে ভাব ঠিক তখনই নিজের ঘাড়ে কারো নিখুঁত ছোয়া পাই আমি।

চলবে..ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here