আবদ্ধ তোমার মধ্যে,৬ষ্ট পর্ব,৭ম পর্ব
নিয়াজ মুকিত
৬ষ্ট পর্ব
ধীরে ধীরে নিশ্বাসের বাতাসটা আরো প্রখর হতে থাকে আমার ঘাড়ের কাছে।আমি পিছনে তাকানোর চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হই।আমাকে পিছন থেকে খুব জোড়ে ধরে রেখেছে নিদ্র।একপর্যায়ে সে আমার ঘাড়ের মধ্যে এলো-পাতারি চুমু খেতে শুরু করে।দুহাত দিয়ে কোলে তুলে নেয় আমাকে তারপর শুইয়ে দেয় বিছানার মধ্যে।আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছি আদিলগ্ন থেকে।কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফল এসে দাড়াচ্ছেই ওই ব্যার্থতা।
নিদ্র এবার আমার উপরে উঠে হাতদুটো দুদিকে করে চিপে ধরে।তারপর মুখ আস্তে আস্তে এগিয়ে আনে আমার মুখের দিকে।একপর্যায়ে তার ঠোট দিয়ে আমার ঠোটটা ছুঁইয়ে দেয়।আমার শরিরের মধ্যে এক অজানা অনুভূতির শিহরণ বয়ে যায়।আমি আমার মাথাটা কাত করে ফেলি যাতে নিদ্র আর কিস করতে না পারে।এবার নিদ্র তার একহাত দিয়ে টেনে আমাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।তারপর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
–“অযাথা বিরক্ত করছো আমাকে,আমার কাজ আমাকে করতে দাও!”
তার কথা শুনে মাথায় রাগ উঠে যায় আমার।শয়তান পোলা আমারে থাপ্পড় মাইরা আবার আসছে ভাব জমাইতে।কিন্তু নিদ্র হঠাৎ আপনি থেকে তুমিতে চলে আসলো কেন বুঝতে পারছি না?পরবর্তিতে আবার ভাবলাম সে তো এখন মাতাল তাই হয়তো ভুলভাল বলছে।কালকে মাতাল থেকে ভালো হলে বলবে,
আপনি ইচ্ছা করে আমার সাথে এসব করেছেন।যাতে আমি আপনাকে ডিবোর্স দিতে না পারি।কিন্তু আপনার ধারনা ভুল,আমি আপনাকে ডিবোর্স দেবোই দেব।
সুতরাং আমি ভাবতে থাকি এখন কি করা যায়?এখনকার কথাটা নয় পরবর্তির কথা ভাবতে হবে।এদিকে নিদ্র একাধারে আমার উপর রোমান্টিক অত্যাচার করেই চলেছে।আমি ভাবছি এখন তার সাথে শারিরিক সম্পর্ক করলে পরবর্তিতে বিশাল প্রবলেম হবে।যথারীতি আট মাস পর আমাদের ডিবোর্স হলে বাচ্চাটার কি হবে?
এবার নিদ্র আমার ঠোটের সাথে তার ঠোট মিশিয়ে দেয়।আমি চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকি কিভাবে এখন নিজেকে রক্ষা করবো?অনেক বার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও নিদ্রের শক্ত হাতের সাথে পেরে উঠিনি।এবার অন্য বুদ্ধি বের করতে হবে সেটাও ভাবছি।কিন্তু কি বুদ্ধি?
আমি এবার হঠাৎ করেই নিদ্রকে নিচে শুইয়ে দিয়ে উঠে পড়ি।নিদ্র কিছুক্ষন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর মাথা নিচু করে বলে,
–“তুমি ভাবছো আমি এখন মাতাল,তোমার সাথে শারিরিক সম্পর্ক করলে ডিবোর্সের পর বাচ্চাটার কি হবে?আজকে আমি নিজে শারিরিক সম্পর্ক করে,কাল সকালে উঠে ঠিকই চলে যাব তোমাকে দোষারোপ করে।এসবই ভাবছো তাই না?”
আমি অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকাই।সে ঠিক আমার মনের কথাগুলো বলছে।আমি তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে নিরবে মাথা নাড়াই।নিদ্র এবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসি-মুখে বলে,
–“আমি এখন মাতাল নই,আমি সম্পুর্ন ঠিক আছি।”
তার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তাকাই তার দিকে।তারমানে এতক্ষন সে ইচ্ছা করেই এসব করছিল।কিন্তু সে তো আমাকে পছন্দ করে না,তাহলে এসব কেন করছিল?
নিদ্র আবার বলতে শুরু করে,
–“এখন তুমি ভাবছো,আমি তো তোমাকে পছন্দ করি না তাহলে এসব কেন করছি?তাহলে শোন,আমি এখন তোমাকে মন থেকে ভালোবাসি।”
এই বলে নিদ্র এসে আমার সামনে হাটুগেড়ে বসে পড়ে।তারপর পকেট থেকে একটা ডায়মন্ডের রিং বের করে আমার দিকে এগিয়ে ধরে বলে,
–“সত্ত্যি এতদিন আমি তোমাকে নিয়ে যা যা ভেবেছি তা ভুলই ভেবেছি।আমি ভেবেছিলাম কিভাবে এতো তারাতারি কারো প্রেমে পড়ে যেতে পারে কেউ?কিন্তু আজ বুঝলাম তুমি ঠিকই ছিলে।এতদিন তোমাকে বেহায়া ভেবেছিলাম।আসলে আমি তখন বুঝিনি ভালোবাসা কি জিনিস?তুমি আমাকে ভালোবেসে ছিলে।কিন্তু আমি তখন সেটা অনুভব করতে পারিনি।আজ বুঝতে পারছি।তুমি যখন চলে আসলে আমি রুমে আসতেই রুমটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগতে থাকে।কিছুক্ষন থাকার পর নিজেকে খুব একা মনে হয়।ঠিক তখনই বুঝতে পারি তোমার কষ্টটা।আমি যেমন তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না,তেমনি তুমিও ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেয়েও তাকে ছুতে পারছিলে না।তোমার বেহায়া হওয়ার কারন বুঝতে পারছিলাম তখন।শেষ কথা আমি এখন তোমাকে অনেক ভালোবাসি,নিজের থেকেও বেশি।আই লাভ ইউ।”
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি নিদ্রের দিকে।কয়েকঘন্টার মধ্যে একটা মানুষের মধ্যে এতটা পরিবর্তন কেমনে সম্ভব সেটা বুঝতে পারছি না।নিদ্র হাটুগেড়ে আমার সামনে বসে আছে রিংটা এগিয়ে ধরে।আমার মাথায় অন্য ভাবনা চলছে।এটা যদি নিদ্রের একটা প্লান হয়ে থাকে আমাকে তাদের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার বা আমার সাথে সম্পর্ক করার,তাহলে আমার সেই ফাঁদে পা দেয়া উচিত হবে না।আর আমি ভুলে যাচ্ছি কেন একটা সময় আমিও তাকে ভালোবাসতাম কিন্তু সে আমাকে অপমান করেছিল।আমি তাকে অপমান করবো না কিন্তু তার এই প্রস্তাবে রাজিও না।
এসব ভাবার পর আমি নিদ্রের হাত থেকে আংটিটা নিয়ে তার হাতেই আবার দিয়ে দেই।তারপর নিজের মুখে রহস্যময়ী একটা হাসি নিয়ে এসে তার দিকে তাকিয়ে বলি,
–“ভালোবাসা এতটা সোজা না মি.নিদ্র।মাত্র কয়েকঘন্টার মধ্যে ভালোবাসা বোঝা যায় না।আমি একটা সময় আপনাকে ভালোবাসতাম তখন আপনি আমাকে অপমান করতেন।এখন আমি চাইলে আপনাকে অপমান করতে পারি কিন্তু করবো না।আপনি কি ভালোবাসা মানে কি জানেন মি.নিদ্র?কয়েকঘন্টা নিজেকে একা মনে করা মানে ভালোবাসা নয়।ভালোবাসা হলো…”
এবার নিদ্র উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে থামিয়ে দেয়।আমি অবাক হয়ে তাকাই তার দিকে।নিদ্র তার হাটু ঝাড়তে ঝাড়তে আমাকে বলে,
–“আমাকে ভালোবাসা মানে কি বোঝাচ্ছো।আমাকে,এই নিদ্র চৌধুরীকে।ওকে ডান,ভালোবাসা কাকে বলে,কত প্রকার ও কি কি,এবং তাদের নাতি-পুতি সহ সব কিছু তোমাকে বুঝিয়ে দেব আজকে।সাথে ভালোবাসার সংজ্ঞাটাও বলে দেব।”
এই বলে নিদ্র আমাকে ধরে ফেলে।নিজের অবস্থা যে ভালো পর্যায়ে না সেটা ঢেড় আন্দাজ করতে পারছি আমি।নিদ্র আমাকে কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।আমি আর কোনো উপায় না পেয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আজকে মেয়ে বলে আপনার মতো শক্তি নাই।আপনার শক্তি আছে দেখে আমার উপর জোড় খাটাচ্ছেন।এর জন্য দাবি থাকবেন।”
নিদ্র তার ঝকঝকে সাদা দাঁতগুলো বের করে হাসি দিয়ে বলে,
–“শক্তি আর বুদ্ধিটাই তো আমার অহংকার।”
আমি তার এই কথাটার মানে বুঝতে পারি না।এই মুহুর্তের নিদ্রের মোবাইলে একটা ফোন আসে।নিদ্র মোবাইলটা বের করে পকেট থেকে।আমি তার মোবাইলের নাম্বারটা দেখে চমকে উঠি।ইংরেজীতে বড় বড় করে লেখা আছে,’Baby Kh’
দ্রুত ভাবনা চলতে শুরু করে আমার মগজে।নিদ্র অন্য একজনকে ভালোবাসে।তাহলে এতক্ষন আমার সাথে নাটক করছিল।তাতে কি আমিতো এখন আর তাকে ভালোবাসিনা।সে জাহান্নামে যাক।নিদ্র ফোনটা কেটে দিয়ে আমার দিকে তাকায়।তার চাহনি আএার রাগ বাড়িয়ে দেয় প্রচুর।আমি রাগি গলায় চিল্লিয়ে বলি,
–“ভালোবাসেন একজনকে সম্পর্ক করেন আরেকজনের সাথে।চরিত্রহীন লম্পট।ধুর হন।”
আমার কথা শুনে নিদ্র প্রচুর রেগে যায়।
চলবে..
আবদ্ধ তোমার মধ্যে
নিয়াজ মুকিত
৭ম_পর্ব
আমার কথা শুনে বেশ রেগে যায় নিদ্র।তার রাগকে ভয় না পেয়ে উল্টো আমারও রাগ হয়।কিন্তু যখন বুঝতে পারি তার রাগের অবস্থান ভালো না তখন আমার রাগ কিছুটা হলেও কমে যায় তবে সম্পুর্ন না।নিদ্র আমার হাত চিপে ধরে বেশ কড়া গলায় বলে,
–“কি বললে?কি বললে বলো?আমি চরিত্রহীন লম্পট!”
এক ঝটকায় তার কাছ থেকে নিজের হাতটা রক্ষা করে বেশ রেগেই বলি,
–“ভুল বললাম কোথায়?ঠিকই তো বলেছি।একটু আগে হাটু গেড়ে বসে আমাকে ভালোবাসার আহ্বান করলেন।তার কিছুক্ষন পরই দেখি ফোনে Baby kh ফোন দিয়েছে।বলি,একজনকে ভালোবেসে আরেকজনের সাথে নাটক করার কি দরকার?আপনার কোন উদ্দেশ্য থাকলে আমাকে বলুন আমি চেষ্টা করবো সম্পাদন করার তবুও অভিনয় করবেন না।”
আমার কথা শুনে যে নিদ্র প্রচুর অবাক হয়েছে সেটা বুঝতে পারি তার হা করে চেয়ে থাকা মুখটা দেখে।নিদ্র এবার বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়ায়।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে সুক্ষ্ম গলায় বলে,
–“তুমি এজন্য আমার প্রস্তাবে রাজি হচ্ছো না?নাকি অন্য বিষয়।”
তার প্রশ্নটাতে মনটা খানিকটা এলোমেলো হয়ে যায়।ভাবনা চলে আসে,আমি কি জন্য তার প্রস্তাবে রাজি হলাম না?কি কারণ?এবার আমি মনটা শক্ত করে বেশ শক্ত ভাবে বলি,
–“দেখেন আমার রাজি না হওয়ার পিছনে এটাও একটা বড় কারন।তবে এটা বাদেও আরো কারন আছে।আমি সেগুলো বলতে চাইনা।এতে আপনি কিংবা আমি ছোট হয়ে যাব।”
নিদ্র বেশ সময় নিয়ে তাকায় আমার দিকে।তারপর হো হো করে হেসে ওঠে পাগলের মতো।এই মুহুর্তে হঠাৎ করে তার এই হাসির রহস্য বুঝতে পারি না আমি।বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি তার দিকে।মনের মধ্যে ৫ শব্দের একটা বাক্য ভেসে ওঠে।’লোকটা পাগল হয়ে গেল নাকি?’
আমি অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে বেশ উত্তেজিত গলায় জিজ্ঞাসা করি,
–“আপনি পাগল হইলেন নাকি,এভাবে হাসতেছেন কেন?”
আমার কথা শুনে আমারই দিকে তাকায় নিদ্র।হাসির পরিমাণ কমিয়ে সেই হাসিটা মুখের মধ্যে বজায় রেখে বলে,
–“পাগল তো তুমি?”
তার কথা শোনার সাথে সাথে আপনা-আপনি আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়,
–“আমি…”
নিদ্র এবার শান্তস্বরে বলে ওঠে,
–“হুম তুমি,পাগল না হলে কেউ খালাকে কারো প্রেমিকা ভাবে।আরো পাগল Baby Kh মানে বেবি খালা।ala এটা লেখতে পারি নি তখন।আর তুমি বেবি মানে অন্য কিছু ভেবে বসে আছো।বাদ দাও,আমি চলে যাচ্ছি।কালকে যদি তুমি অফিসে না যাও তাহলে আমি রুশার জায়গাটাতে তোমাকে না অন্য একজনকে নিব।বাকিটা তোমার উপর।আমি গেলাম..”
নিদ্র যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে দরজার কাছে যেতেই হঠাৎ আমি বলে উঠি,
–“রাত তো অনেক হলো,এতরাতে যাবেন।আজকে থাকলে হয় না!”
আমার কথা শুনে মুচকি হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকায় নিদ্র।তারপর আবার দুয়েক পা এগিয়ে এসে বলে,
–“আমার জন্য এই ভালোবাসাটা রাখার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।আমি থাকবো না।কারন এখানে ডাবল বেড বা সোফা নেই।আর আমি সেদিনই তোমার সাথে একসঙ্গে থাকবো যেদিন তুমি নিজে বলবে।”
চালাক প্রকৃতির ছেলে নিদ্র যে আমাকে বেশ বড়সড় একটা প্যাচে ফেলে দিয়েছে সেটা বুঝতে আর অসুবিধা হয় না আমার।আমিও বেশ চিন্তায় পড়ে যাই।নিদ্র রহস্যময়ী হাসি মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।আমি বুঝতেছিনা নিদ্র থাকতে বলবো নাকি যেতে।এতরাতে গ্রাম থেকে শহরে যেতে দেয়া ঠিক না সেটা আমি জানি।কিন্তু তার সাথে একসাথেও থাকতে পারবো না।অবশেষে আমি সিদ্ধান্ত নেই,আমি মেঝেতে থাকবো সে বিছানায়।আমার মনের কথা তাকে জানালে সে বেশ কড়া গলায় জানিয়ে দেয়,
–“তোমার বাড়িতে এসে তোমাকে মেঝেতে রেখে আমি বিছানায় থাকবো এটা ভালো দেখায় না।তার চেয়ে আমি যাই বরং!”
এই বলে সে পা বাড়াতেই হুট করে আমি বলে উঠি,
–“ওকে আসেন,মাঝে কোলবালিশ দিয়ে রাখবো।”
বলার সাথে সাথে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে নিদ্র।লাইট অফ করতে বললে আমি নিষেধ করে দেই।কিন্তু তিনি বেশ কড়া গলায় আমাকে জানিয়ে দেন,লাইট জ্বালানো থাকলে তার ঘুম অসম্ভব।সো লাইট বন্ধ করতেই হবে।
জোর-যাবস্তি করে শেষ পর্যন্ত লাইট বন্ধ করে দেয় নিদ্র।অন্ধকারের মধ্যে একটা ভয় আসে মনের মধ্যে,এই মনে হয় নিদ্র ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার উপর।কিন্তু আমার মনের ভয়টাকে উড়িয়ে দেয়ার জন্য পূর্ব আকাশে দেখা দেয় সুর্য্যি মামা।বেশ খানিক্ষন পর ঝকঝকে হয়ে যায় চারদিকটা।
আমি বিছানা থেকে উঠে নিদ্রের তাকিয়ে বড় সড় রকমের একটা ক্রাস খেয়ে ফেলি।ও মাই গড,সারাজীবন শুনেছি মেয়েদের ঘুমন্ত অবস্থায় খুব সুন্দর দেখায়,এখন দেখছি অন্য।ছেলেদের ঘুমন্ত অবস্থায় এত সুন্দর দেখায় সেটা জানতাম না।আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি নিদ্রের দিকে।
তাকিয়ে থাকার একপর্যায়ে জেগে ওঠে নিদ্র।আমার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে,
–“গুড মরনিং”
আমি খানিকটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে গুড মরনিং বলে চলে যাই।নিদ্র আমার লজ্জা পাওয়ার কারন না বুঝে উঠে ওয়াসরুমে যায় ফ্রেস হতে।আমি বাহিরে বের হয়ে দেখি বাবা টেবিলে বসে আছে।তার সামনে নাস্তা এনে দিচ্ছে বুয়া।
আমি আর ওদিকে না গিয়ে আবার রুমে চলে আসি।রুমে এসে দেখি নিদ্র এখনো ওয়াসরুমেই রয়েছে।আমি ধপ করে বিছানায় বসে পড়ি।চোখ চলে যায় নিদ্রের মোবাইল ফোনটার দিকে।ওয়াসরুমের দরজার দিকে তাকিয়ে মোবাইলটা হাতে তুলে নেই আমি।লক করা নেই দেখে তারাতারি গ্যালারিতে চলে যাই।সেখানে বেশ কয়েকটা অ্যালবাম দেখতে পাই।তার মধ্যে একটা অ্যালবামে আমার নজর আটকে যায়।আগ্রহ নিয়ে ভিতরে যাই আমি।সেখানে অনেক বিদেশী মানুষের ছবি।আমি অবাক হয়ে দেখতে থাকি সব।শেষের দিকের কয়েকটা ছবি দেখে চমকে উঠি আমি।আমার ঘুমন্ত পিক..
চিলের মতো ছো মেরে আমার হাত থেকে মোবাইলটা ছিনিয়ে নেয় নিদ্র।তারপর পকেটে পুড়ে দৃঢ় গলায় ঘোষনা করে,
–“আমি যাব নাকি তোমার জন্য বসে থাকবো।”
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে ওয়াসরুমে প্রবেশ করি।নিদ্রের ফোনে নিজের ছবিটা দেখে কেন জানি খুশি খুশি লাগছে।
আমি নাচতে নাচতে ফ্রেস হয়ে বের হয়ে দেখি রুমের মধ্যে নিদ্র নেই।আন্দাজ করে নেই সে আমাকে রেখে চলে গেছে বাহিরে।আমিও এবার বাহিরে চলে আসি।বাহিরে এসে দেখি বাবা আর নিদ্র নাস্তা করছে আর গল্প করছে।আমি যেতেই বাবা বেশ রেগে আমার দিকে তাকায়।তার এই রাগের কারনটা বুঝতে পারি না আমি।আমি বসার সাথে সাথে বাবা বেশ রেগে বলে,
–“তোকে আমি এই শিক্ষা দিয়েছি।ছি.জামাই এত বলার পরও তোর চাকরী করাই লাগবে।বিয়ের পরেও চাকরী করতে চাস তুই।ছি.ছি.”
হঠাৎ বাবার কি হলো বুঝতে পারছি না আমি।আমি কিছু বলে ওঠার আগেই নিদ্র বলে,
–“বাবা থাক না।আমাদের অফিসই তো।সমস্যা নেই।”
নিদ্রের কথা শুনে বাবার রাগ কিছুটা কমে যায়।আমি মনযোগ নাস্তা করায়।নাস্তা শেষ করে রুমে এসে অফিসের জন্য রেডি হই।নিদ্রও রেডি হয়ে নেয়।রেডি বলতে কালকে যে গুলা পড়ে এসেছিল সেগুলা পড়ে নেয়।তারপর দুজনে বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেই অফিসের উদ্দেশ্য।
যাওয়ার পথে আমি নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলি,
–“আমি এসেছি আপনিও বেসরমের মতো আমার পিছন পিছন চলে এসেছেন।”
আমার কথা শুনে আমারই দিকে তাকায় নিদ্র।তবে এখন তার চোখে কোনো রাগ কিংবা কষ্ট কিছুই নেই।তার বদলে রয়েছে আলাদা এক চাহনি।আমি বুঝতে পারি না এটা কিসের চাহনি।নিদ্র কথা না বলে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে।
আমি বুঝতে পারছি না কথাটা বলা আমার ঠিক হলো কিনা।মাঝপথে গিয়ে নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আজকে আমি নিদ্র চৌধুরী বলছি,আর জীবনেও তোমাদের বাড়িতে আমার পা পড়বে না।যদি পড়ে সেদিনই আমার মৃত্যু হবে।কথাটা মনে রেখ।”
নিদ্রের কথা শুনে অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে যাই আমি।আমি তাকে উদ্দেশ্য করে বলি,
–“সরি,ভুল হয়ে গেছে।”
নিদ্র মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,
–“নিদ্র চৌধুরি কথা ঘোরায় না।আজ থেকে তোমাদের বাড়ির কথা আমার সামনে তুলবে না।কখনও না।”
আমি বুঝতে পারছি কতটা ভুল করে ফেলেছি।কিন্তু এখন কি করবো?তাকে যদি নিয়ে যেতে না পারি কখনো তাহলে গ্রামের মানুষের কান ফুসফুস কথাতে বাবা মরে যাবে।বেশ বড়সড় একটা চিন্তা আসে মনের মধ্যে।
এর মধ্যে আমরা অফিসে পৌছে যাই।নিদ্র আমাকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি পার্ক করে আসে।তারপর দুজনে একসাথে অফিসে প্রবেশ করি।অফিসে প্রবেশ করতেই আমার উপর পড়তে শুরু করে অনেককিছু।কি হচ্ছে বুঝতে পারি না আমি?নিদ্র হাসিমুখে তাকায় চারদিক।
চলবে….