আবার দেখা হবে,শেষ পর্ব

0
1964

আবার দেখা হবে,শেষ পর্ব
জাহান আরা

আজকে শেষ লড়াই রানী অশ্রুমালা আর রানী লীলাবতীর।
কে শেষ হবে আজকে??
আজকে কি জিতবে,রানী অশ্রুমালা নাকি রানী লীলাবতী??

ঝিম মেরে বসে আছি সকাল থেকে।
আজকেই আমার জীবনের শেষ দিন,খুব কান্না পাচ্ছে। কতোদিন বাবা মাকে দেখি না।খুব ইচ্ছে করছে শেষ দেখা দেখতে তাদেরকে।
রাফিদকে জড়িয়ে ধরে রাখতে ইচ্ছে করছে।
অনেক দিন বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে।

কেনো আমার সাথে এরকম হলো??

আমি কেনো অশ্রুমালা ছিলাম,আমি তো খুব সাধারণভাবে বাঁচতে চেয়েছি।ছোট একটা সুখের সংসার চেয়েছি আমি।
কপালে সব থাকে না।
রাফিদ সকালেই বের হয়ে গেছে ঘর থেকে।কি রকম যেনো লাগতেছে,মনে হচ্ছে হঠাৎ করেই আমি কেমন ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছি।




রাফিদঃ বাবা তুমি সেই আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী ওঝাকে পেয়েছো??

বাবাঃ হ্যাঁ পেয়েছি,কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কি জানিস?

রাফিদঃ কি বাবা??

বাবাঃ ওই সাধু লোকটা নাকি এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলো।এইজন্য প্রতি পূর্নিমাতে সে চলে আসে এখানে,রানী অশ্রুমালাকে বাঁচানোর জন্য।

রাফিদঃ রানী অশ্রুমালার কথা ওই সাধু কিভাবে জানে বাবা??

বাবাঃ জানি না।

রাফিদঃ বাবা আমি তার সাথে কথা বলবো।তুমি পরীর কাছে যাও,ও ঘরে একা আছে।

রাফিদ সেই সাধুর কাছে যায়।

রাফিদঃ সাধুবাবা আপনি কি আমার পরীকে বাঁচাতে পারবেন??
আমার পরীর খুব বিপদ আজ।

সাধুঃ আমি রানী অশ্রুমালাকে বাঁচানোর জন্য প্রতি পূর্নিমাতে এখানে আসি।আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ অশ্রুমালা কে বাঁচানোর জন্য।

রাফিদঃ কেনো??

সাধুঃ রানী লীলাবতীর শাসনামলে আমার বাবা ছিলেন তাদের প্রজা।
রানী লীলাবতীর অন্যায় বিচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করাতে রানী লীলাবতী আমার বাবাকে আর আমাকে কারারুদ্ধ করে,তখন আমি খুব ছোট ছিলাম।
গর্দান নেয়ার আদেশ দেয় অহংকারী রানী লীলাবতী কিন্তু রানী অশ্রুমালার ছিলো দয়ার শরীর।
রাতের অন্ধকারে সে কারাগারে এসে আমাকে আর বাবাকে মুক্ত করে দেয়,নিজের থেকে স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে আমাদের কে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলে লীলাবতীর হাত থেকে বাঁচার জন্য।

সেদিন বাবা আমাকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিলো যদি কখনো সুযোগ পাই তাহলে যেনো রানী অশ্রুমালার প্রাণ বাঁচিয়ে তার ঋণ পরিশোধ করি।
বাবা মারা যায়,আমি হিমালয়ে চলে যাই,সন্নাস গ্রহণ করি।
বাবাকে দেয়া কথা ভুলি নি।অনেক যজ্ঞ,সাধনা করে আধ্যাত্মিক ক্ষমতা লাভ করি।আধ্যাত্মিক ক্ষমতার বলেই জানতে পারি রানী অশ্রুমালা আবার এসেছে দুনিয়ায়,লীলাবতী তার প্রতিশোধ নিবে অশ্রুমালার থেকে,একমাত্র আমার সেই ক্ষমতা আছে রানীকে বাঁচানোর জন্য,তার ঋণ পরিশোধ করার জন্য,সে আমার আর আমার বাবার প্রাণ বাঁচিয়েছে আমি যদি তার প্রাণ না বাঁচাতে পারি তাহলে আমার এই জীবন ব্যর্থ।

রাফিদঃ আপনি কি আসবেন আমার সাথে??

সাধুঃ না আমি এখন যাবো না।তুই যা।আমি সময় মতো পৌঁছে যাবো।
আর হ্যাঁ শুন।

রাফিদঃ জ্বী বলেন।

সাধুঃ রানী অশ্রুমালার কক্ষে তার ব্যবহৃত জিনিস আছে এখনো,তোদের বাগানে একটা ছোট মন্দির আছে,সেখানে অশ্রুমালা,লীলাবতীর প্রতিমা আছে,অশ্রুমালার গলায় অশ্রুমালার গহনা আছে,আজকে সেই গহনা,সেই কাপড় পরাবি রানীমা কে।
আর হ্যাঁ রানীমা ছাড়া কেউই এই প্রতিমার গা থেকে গহনা নিতে পারবে না,তাই তাকেই নিতে হবে।
লীলাবতী চাইবে না এই গহনা অশ্রুমালা নিতে পারুক,সে বাঁধা দিবে গহনা নিয়ে ফেরার পথে।

রাফিদঃ তাহলে আমি কি করবো??

সাধুঃ সেটা তুই জানিস কিভাবে তুই রক্ষা করবি সেই হার।রানীমার জন্য ওই হার অতীব গুরুত্বপূর্ণ আজকের রাতে।

রাফিদ বাসায় ফিরে এলো,আবার সেই কক্ষে গেলো যেখানে অশ্রুমালার ছবি পেয়েছে সে।
অনেকগুলো পুরোনো আমলের আলমারি, অনেক মোটা তালা দেয়া কোনোভাবেই খোলা সম্ভব না সেগুলো।
শেষে তালা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয় রাফিদ।কিন্তু তাতে ও লাভ হয় না।তালা কিছুতেই ভাঙা যায় না।অথচ আজকের রাতে এসব খুব দরকার।পরীকে বাঁচানোর জন্য।

তালা ভাঙার মিস্ত্রি ডেকে আনা হলো কিন্তু কিছুতেই এই তালা ভাঙা যায় না।
রাফিদ মা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়,আজকে কি তার পরীকে সে বাঁচাতে পারবে না???

কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎ রাফিদের মনে হয় পরীর কথা,লীলাবতীর সেই কক্ষের তালা পরী হাত লাগাতেই খুলে গেছে।

মা কে ছেড়ে রাফিদ ছুটে যায় পরীর কাছে,পরী কেমন ঘোর লাগা মানুষের মতো পড়ে আছে।
রাফিদ যতোই ডাকাডাকি করে সাড়া পায় না।

রাফিদঃ বাবা কি হইছে ওর,তোমাকে না ওর পাশে থাকতে বলছি??

বাবাঃ আমি আসার পর থেকেই দেখছি ও এভাবে পড়ে আছে,কোনো সাড়া দেয় না আমি যতো ডাকছি।

রাফিদঃ ঠিক আছে তুমি যাও আমি দেখছি।

বাবা রুম থেকে নের হয়ে যেতেই রাফিদ পরীর পাশে গিয়ে বসে,পরীকে নিজের দিকে টেনে নিয়েই পরীর ঠোঁটে চুমু খেতে থাকে।

পরীর আস্তে আস্তে ঘোর কেটে যেতে থাকে।

হঠাৎ করেই দেখি রাফিদ আমাকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেছে এবং গভীর ভাবে চুমু দিচ্ছে।
আমিও রেসপন্স করি রাফিদের চুমুতে,চুমে খেতে খেতে রাফিদ আমার আরো কাছে চলে আসে।
আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমার উপরে উঠে আসে ও।
আদরে আদরে ভরিয়ে দেয় আমায় ও।
অনেকক্ষণ পর রাফিদ আমাকে ছাড়ে।

২ জন গোসল করে নিই।

রাফিদ আমাকে সব খুলে বলে কি কি বলেছে সেই সাধুবাবা।
আমাকে নিয়ে রাফিদ সেই রুমে আসে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো এবারো আমি হাত লাগাতেই আলমারির তালা খুলে যায়।ভিতরে অনেক কাপড় চোপড় কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো একটার ও ভাজ নষ্ট হয় নি।
রাফিদ বেছে ওখান থেকে সাদা লাল শাড়ি বের করে।
তারপর ওখান থেকে এসে আমাকে নিয়ে বাগানের ছোট মন্দিরে যায়।

সেই আমলে তাদের রেওয়াজ ছিলো কাউকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য মূর্তি বানিয়ে রাখা।রাজা শখ করে ২ রানীর ২টা প্রতিমা বানিয়েছেন।

রাফিদ আর আমি বাগানে যাই,খুজতে খুজতে সেই মন্দির দেখতে পাই,ভিতরে কি সুন্দর শ্বেত পাথরের প্রতিমা,যেনো জীবন্ত আমি দাড়িয়ে আছি।
প্রতিমার গায়ে হাত দিয়ে রাফিদ হার নেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু হার যেনো ঢালাই করা প্রতিমার সাথে কিছুতেই উঠানো যাচ্ছে না।

রাফিদ সরে যেতেই আমি হাত রাখি।আমি হাত রাখতেই হার টা আমার হাতে চলে আসে।

রাফিদঃ এখন কি হবে??

আমিঃ আমাকে পড়িয়ে দাও এটা।

রাফিদঃ কিন্তু লীলাবতী যে নিয়ে যেতে চাইবে??

আমিঃ আমার গলায় চন্দ্রহার আছে,মা বলেছে এই হারের অনেক গুণ আছে।আমার মনে হয় চন্দ্রহারের সাথে থাকলে এই হার লীলাবতী ধরতে পারবে না।

রাফিদ আমাকে হার পরিয়ে দিলো।
আমি আর রাফিদ মন্দির থেকে বের হয়ে আসলাম।
মূল বাড়ি থেকে মন্দিরে যেতে ৫ মিনিট লাগে,আমার মনে হচ্ছিলো যেনো অনন্তকাল ধরে হাটতেছি তবু বাড়িতে পৌঁছাতে পারছি না।
রাফিদ আমার হাত ছাড়ছে না মুহূর্তের জন্য।
আমার গলায় ফাঁসের মতো লাগছে,ইচ্ছে করছে গলা থেকে সব হার খুলে ফেলতে।
আমি রাফিদকে সে কথা বলতেই রাফিদ পিছন থেকে হারের হূক শক্ত করে ধরে রাখে যাতে আমি খুলতে না পারি এদিকে আমার অশান্তি বেড়েই যাচ্ছে হার খুলে ফেলার জন্য।মনে হচ্ছে দম আটকে মরে যাবো আমি এখনি যদি খুলতে না পারি।রাফিদকে ইচ্ছেমতো গালাগালি করতে লাগলাম কেনো হার ছাড়ে না।
রাফিদ অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে আচমকা আমাকে কোলে তুলে নিয়ে ছুটতে থাকে,এক ছুটে মহলে পৌঁছে যায়।

দিন শেষ হয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে,আমার বুকের ধুকপুকানি বাড়তে থাকে।
মনে হচ্ছে যেকোনো সময় হৃদস্পদন বন্ধ হয়ে আমি মারা যাবো।
প্রথম দিনের সেই ওঝা আসে,উনি এসে আমাকে একটা তাবিজ দেয় হাতে রাখতে,যাতে আমার ঘোর না লাগে।

আমাকে সেই শাড়ি গহনা পরতে বলে রাফিদ।
আমিও পরে নেই,আয়নায় তাকাতেই দেখি রানী অশ্রুমালা দাঁড়িয়ে আছে বিজয়িনী ভঙ্গিতে।
কি ভেবে যেনো আমি কোমরে তলোয়ার নিই,পায়ে ঘুঙুর পরে নিই।




একটু পর সেই আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী সাধুবাবা প্রবেশ করে মহলে।
উনি এসেই পুরো মহলে ৩ বার চক্কর দিলেন।তারপর সেই বিশাল হলরুমে হাজির হলেন।
বাগানে গিয়ে রানী লীলাবতীর প্রতিমা নিয়ে আসলেন হলরুমে।
হলরুমের চারদিকে কড়ি দিয়ে বাঁধ দিলেন।

লীলাবতীর কক্ষ থেকে শাড়ি এনে সেই প্রতিমার গায়ে জড়িয়ে দিলেন।

একটু পর রাফিদকে বললেন অশ্রুমালা কে নিয়ে আসার জন্য,রাফিদ ও অশ্রুমালা ছাড়া যাতে আর কেউ না থাকে সেখানে।

বাবা মা চলে গেলো নিচে তাদের রুমে।

রাফিদ পরীকে নিয়ে এলো।

সাধুবাবা পরীর দিকে অপলক তাকিয়ে রইলেন।
এই সেই রানী অশ্রুমালা।

একটা বৃত্ত আঁকলেন,বৃত্তের ভিতর ১টা তারা আঁকলেন।

একটা তারার মাঝখানে পরীকে দাঁড় করালেন,পাশে লীলাবতীর প্রতিমা।

সাধুবাবাঃ রানীমা,আমি আপনাকে পথ দেখিয়ে দিতে পারবো,কিন্তু শত্রু নিধন আপনাকে করতে হবে।

আমিঃ কিভাবে??

সাধুবাবাঃ আমি লীলাবতীর আত্মাকে তার এই প্রতিমাতে স্থাপন করবো,তারপর আপনাদের লড়াই হতে পারে।আপনি একটাই সুযোগ পাবেন,১ বারের চেষ্টায় আপনাকে রানী লীলাবতীর প্রতিমা থেকে মাথা আলাদা করে ফেলতে হবে।যদি না পারেন তাহলে আমি আর কিছু করতে পারবো না রানীমা। কোন অবস্থাতেই আপনি বৃত্তের বাহিরে যাবেন না।যাই হয়ে যাক না বাহিরে।

পারবেন রানীমা??

আমিঃ পারবো।

সাধুবাবা ধূপ পোড়া দিলেন।ঘরের ৪ কোনায় ৪টা মোমবাতি জ্বালালেন।
তারপর লীলাবতীর প্রতিমার চারপাশে ঘুরে ঘুরে মন্ত্র জপতে লাগলেন।
বাহিরে মনে হচ্ছে যেনো ঝড় শুরু হয়ে গেছে,যেনো বাগানের সবগুলো গাছ কেউ ভেঙে ফেলছে।
আমি জানি সে আসছে।

একটু পর ঘুঙুরের শব্দ ভেসে আসতে লাগলো।কেউ যেনো অনেক দুর থেকে নৃত্য করছে।
আস্তে আস্তে শব্দ স্পষ্ট হচ্ছে, সে এগিয়ে আসছে।

হঠাৎ করেই পুরো ঘর অন্ধকার হয়ে গেলো, সব মোমবাতি নিভে গেলো।

অন্ধকার যেনো গাঢ় হচ্ছে আরো। আস্তে আস্তে সব দেখতে পাচ্ছি আমি।লীলাবতীর প্রতিমা জীবন্ত হয়ে গেলো।
আমি দেখতে পাচ্ছি সে নৃত্য করছে।

লীলাবতীঃ বলেছিলাম না তোমাকে,আবার দেখা হবে??

আমিঃ হ্যাঁ,বলেছো।আমি প্রস্তুত তোমার সাথে দেখা করতে লীলাবতী।

লীলাবতীঃ আজকেই তোমার শেষ দিন।

আমিঃ শেষ দিন আমার না,তোমার।আজকে তুমি মুক্তি পাবে লীলাবতী।
লীলাবতীঃ দেখো তাহলে।

সাথে সাথে অন্ধকার গাঢ় হতে লাগলো, কিছুই দেখা যায় না।

একটু পর রাফিদের চিৎকার শুনতে পেলাম,আমি বুঝতে পারলাম আমাকে বৃত্ত থেকে বের করার জন্য লীলাবতী রাফিদকে কিছু করেছে।
তবু আমি বের হলাম না বৃত্ত থেকে।
কিছুক্ষণ পর সব শান্ত।

একটু পর শুনি আমার মা আমাকে ডাকছে,বিয়ের পর থেকে একবারও বাড়ি যাই নি মা আমাকে দেখতে এসেছে,মায়ের গলা শুনে বের হতে নিলাম তখনি মনে পড়ে গেলো সাধুবাবার নিষেধাজ্ঞা।

তখনো আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
একটু পর লীলাবতী আমার চারপাশে ঘুরতে শুরু করলো,আমার গায়ে তরবারির কোপ লাগছে আমি বুঝতে পারলাম,১ টা,২টা,৩টা।
দিয়েই যাচ্ছে আমি কিছুই দেখতে পারছি না অন্ধকারে। এভাবে হলে তো আমি ওকে কিছু করতে পারবো না।

লীলাবতী হাসতে লাগলো।আর তরবারি ঘুরাতে লাগলো সপাং সপাং করে আমার ৪ পাশে।

আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম,চোখ বন্ধ করতেই আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম চোখ বেঁধে কিভাবে তরবারি চালোনা করা যায় শুধু মাত্র শব্দ শুনে।আমি দেখতে পাচ্ছি আমি কোনো একসময় চোখ বেঁধেই তলোয়ার চালাচ্ছি।আমার মনে পড়ে গেলো সব কৌশল।

লীলাবতী আবার তরবারি চালালো আমার বাম হাতে,এবার আমি ঘুরে দাড়ালাম,ওর ঘুঘুঙের শব্দ পাচ্ছি ও যে ঘুরছে চার পাশে।
প্রথমে বুঝতে চেষ্টা করলাম ও কোন দিকে থেকে ঘুরছে আমাকে কোন দিক থেকে আঘাত করতে হবে।
ও আমার ডানে থেকে ঘুরছে,খুব দ্রুত ঘুরছে।আমার কাছে ১টা সুযোগ আছে,এই ১ টা সুযোগ কাজে না লাগালে আমি হেরে যাবো।

চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে লাগলাম,লীলাবতী ঠিক যেখানে ছিলো তার একটু সামনে তরবারি দিয়ে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে কোপ দিলাম,যেই মুহুর্তে আমি কোপ দিলাম সেই মুহুর্তে লীলাবতী সেখানে এলো,তারপর ১ মুহূর্ত সব স্তব্ধ হয়ে গেলো,পুরো পৃথিবী যেনো থমকে গেছে….

তারপরই লীলাবতীর প্রতিমা ভেঙে পড়তে লাগলো।ঘুঘুঙের শব্দ দূরে মিলিয়ে যেতে লাগলো।
ঘরের ৪ পাশের মোমবাতি আবার জ্বলে উঠলো।
কিন্তু লীলাবতীর প্রতিমার কিছুই দেখতে পেলাম না কোথাও,আমার হাত থেকে রক্ত পড়ছে অনবরত।
আশেপাশে কোথাও সেই সাধুবাবাকে দেখতে পেলাম না।

চারদিকে পূর্নিমার আলো,কি সুন্দর সব দেখা যাচ্ছে অথচ একটু আগে আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না।

বৃত্ত থেকে বের হয়ে রাফিদকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম,রাফিদের গায়েই আমি জ্ঞান হারালাম।

চোখ মেলতেই দেখি সকাল হয়ে গেছে,আমি আমাদের রুমে শুয়ে আছি।রাফিদের বুকে।

আমি উঠে বসতেই রাফিদ আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
২ জন মিলে নিচে গেলাম।

মাঃ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে,আজকেই আমরা ঢাকা ফিরে যাবো,তুই আর রাফিদ গিয়ে তোর বাবা মার সাথে দেখা করে আয়।

আমি আর রাফিদ মিলে বাড়িতে গেলাম।বাবা মার সাথে দেখা করে দুপুরে খেয়ে চলে এলাম,রাতের বেলা সবাই গাড়ি তে উঠে বসলাম,বাবা মা পিছনের সিটে আমি রাফিদের পাশে ড্রাইভিং করছে রাফিদ।

বাড়ি থেকে গাড়ি বের করছে রাফিদ,আমি লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে আছি।
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি পিছনে দাড়িয়ে আছে রানী অশ্রুমালা,সেই বিজয়িনী ভঙ্গিতে। গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে,রানী অশ্রুমালা ও সাথে সাথে আসছে।

কে সে আসলে??
রানী অশ্রুমালা নাকি আমি??
আমি নাকি রানী অশ্রুমালা??
আমি কে??
পরী নাকি অশ্রুমালা???
অশ্রুমালা নাকি পরী???

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here