আবার দেখা হবে সিজন 2 শেষ পর্ব

0
2499

আবার দেখা হবে
সিজন 2
শেষ পর্ব
জাহান আরা

রাফিদ যা বলে তার জন্য তারা কেউই প্রস্তুত ছিলো মা,এভাবে তাদের সকল আশা-ভরসা কবর দিতে হবে তা কেউ স্বপ্নে ও কল্পনা করে নি।
পরীর ইউটেরাস কেটে ফেলতে হবে,পরী কখনো মা হতে পারবে না।

রাফিদ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। নিজে ডাক্তার হয়েও নিজের স্ত্রীকে রক্ষা করতে পারছে না,ভাবতেই রাফিদের ২ চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে।

পরীকে ৪ সপ্তাহ হাসপাতালে রাখা হয়,এর মাঝে রাফিদ যতোবারই পরীর কাছে গিয়েছে পরী অঝোরে কেঁদেছে।
পরী কে জানানো হয় নি তার জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে।

একটা মেয়ের জীবনের সবচাইতে সুখের মুহূর্ত মা হওয়ার মুহূর্ত। কিন্তু যখন সে সারাজীবনের জন্য মা হওয়ার সুখ থেকে বঞ্চিত হয় তারচেয়ে অসহায় দ্বিতীয় কেউ থাকেনা।

পরী বারবার রাফিদকে বলে রাফিদ আমাদের বাবুটা কি আর নেই???.
রাফিদঃ না পরী,আল্লাহ ওকে নিয়ে গেছে,আমাদের চাইতে বেশী যত্নে রাখবেন ওকে আল্লাহ।

পরীঃ তুমি আমাকে আরেকটি বাবু দিবে বলো না রাফিদ,আমি মা ডাক শুনতে চাই,আমি আর কখনো তোমার কথার বাহিরে যাবো না,রুম থেকে বের হবো না রাফিদ আমাকে আরেকটি বাবু দাও তুমি।

রাফিদঃ দিবো পরী,সুস্থ হয়ে আগে বাসায় যাই আমরা।

পরী ‘কে এই কথা বললে পরী ঠিক থাকতে পারবে না রাফিদ জানে।
কি করবে ভাবতে থাকে দিনরাত।




কয়েকদিন পর…………

রাফিদের ফোনে একটা থেকে কল আসে।
রাফিদ বারান্দায় গিয়ে কথা বলছে,আমি রাফিদের জন্য চা নিয়ে গেছি।
সেদিনই আমি শুনতে পাই আমার জীবনের চরম সত্য।

রাফিদঃ কে আপনি???
ঃ………………
রাফিদঃ আমার বৌ’য়ের চাইতে বেশি কোনো কিছুই আমার কাছে ইম্পোরটেন্ট না,মিসেস পদ্মা,আননোন নাম্বার থেকে কল দিলে যে আমার কালসাপ চিনতে ভুল হবে,তা ভাবিয়েন না আবার।
ঃ………………
রাফিদঃ এটা কোনো ব্যাপার না যে আমার পরীর জরায়ু অপসারণ করতে হয়েছে,ছোট্ট একটা জীবন আমি আমার পরীর মুখের দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দিতে পারবো,আমার স্ত্রী সন্তান জন্মদানে অক্ষম তা নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত না,বরং আগের চাইতে আমার ভালোবাসা আরো বেড়ে গেছে পরীর জন্য।
নেক্সট টাইম যদি তোর কল পাই,তো তোর সংসার ভেঙে দেয়ার জন্য যা করা দরকার আমি তাই করবো। মাইন্ড ইট।

আমার পায়ের নিচের মাটি সরে যেতে লাগলো, এ আমি কি শুনলাম!!!!
আমি মা হতে পারবো না!!!!
আমার ইউটেরাস নাই,আমি আজীবন মা ডাক শোনা থেকে বঞ্চিত!!!

রাফিদ পিছনে ফিরতেই দেখে পরী দাঁড়িয়ে আছে। পরী যে সব শুনে ফেলেছে রাফিদ বুঝতে পারে।

রাফিদঃ পরী শুনো আমার কথা।

আমিঃ এতো বড় একটা সত্য কথা তুমি আমার থেকে লুকালে কেনো রাফিদ??

রাফিদঃ পরী আমি চাই নি তুমি কষ্ট পাও,পরী আমার বাচ্চা লাগবে না, আমার তোমাকে চাই শুধু।

আমিঃ কিন্তু আমি যে চাই রাফিদ,আমি যে মা ডাক শুনতে চাই।

রাফিদঃ আমরা বাচ্চা এডপ্ট নিবো পরী।

আমিঃ না রাফিদ,আমি তো আমার নিজের পেটের বাচ্চা চাই,তোমার,বাবা-মার সেই পাগলামি দেখতে চাই,আমি নিজের বাচ্চা চাই রাফিদ।

রাফিদঃ কিভাবে হবে পরী,অবুঝ হয়ো না,প্লিজ।

আমিঃ আমি জানি না রাফিদ কিভাবে হবে,আমি যদি বাচ্চা জন্ম দিতে না পারি,তো তুমি আমাকে হারাবে মনে রেখো।

আমি জানি আমি যা চাই তা এই জীবনে সম্ভব না,কিন্তু মাতৃত্বের স্বাদ পেতে কার না ইচ্ছে করে। আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না যে আমি মা হতে পারবো না।তারচেয়ে আমার মরে যাওয়া ভালো।

দিন দিন রাফিদের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে আমার।রাফিদ আমাকে যতোই কাছে টানতে চায়,আমি ততই দূরত্ব বাড়াই।এখন আর শারীরিক প্রয়োজনে ও রাফিদের ডাকে সাড়া দিই না।




দিনের পর দিন পদ্মা বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল দিয়ে যায় রাফিদকে,দিয়েই টিটকিরি করে যায়। অন্যদিকে পরীর অবহেলা।
রাফিদের জিদ চেপে যায় মনে।যেভাবেই হোক,পরীর ইচ্ছে পূর্ণ করতে হবে।
ভাবতে ভাবতে রাফিদ ঘুমিয়ে পড়ে।ঘুমের ঘোরেই রাফিদের মনে পড়ে যায় সুইডেনের সেই নারীর কথা,যার জরায়ু প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে সন্তান হয়।

চমকে উঠে রাফিদ ঘুম থেকে উঠে যায়। পরী অন্য রুমে ঘুমিয়েছে,উঠে গিয়ে দরজায় নক করে।
কিন্তু পরী দরজা খোলে না।
উত্তেজনায় রাফিদ সারারাত ঘুমাতে পারে না।

পরীকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য সকালে আর কিছু বলে না রাফিদ।
পরের ১ সপ্তাহ যায় রাফিদের ভিসা প্রসেসিং এ।

আগামীকাল সকালে ফ্লাইট। অথচ পরী এখনো রাফিদের সাথে কথা বলে না, এক রুমে ঘুমায় না।
রাফিদ বুঝতে পারে পরীর কষ্ট টা,তাই নিজেও পরীকে কিছু বলে না।

ফ্লাইটের আগের রাতে রাফিদ বাবা মা,শ্বশুর শাশুড়ী সবাইকে জানায় আগামীকাল তাদের আমেরিকা যাওয়ার কথা।সবাই নামাজ পড়ে তাদের জন্য দোয়া করে।পরীর বাবা মা’কে রাতেই চলে আসতে বলে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেই সব কিছু রেডি করে নেয় রাফিদ।
পরী নামাজ পড়ে বসে আছে জায়নামাজে।
রাফিদ গিয়ে পরীর সামনে বসে।

রাফিদঃ আর কতো রাগ করে থাকবি তুই বৌ??

পরীঃ আমি কারো উপরে রাগ না,আমার ভাগ্য খারাপ।আমার ভাগ্যের উপর রাগ আমি।

রাফিদঃ না পরী,তোমার ভাগ্য খারাপ না,আমি শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করে যাবো তোমার মুখের হাসিটুকুর জন্য,আজকে ১০ টার ফ্লাইটে আমরা আমেরিকা যাবো,আগামীকাল ওখানে তোমার অপারেশন হবে ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টারে।

উঠে রেডি হও,বাবা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে নিচে,মা নাশতা নিয়ে বসে আছে।

নিচে যেতেই দেখি আমার বাবা মা বসে আছে ডাইনিং টেবিলে।
আমাকে দেখেই মা কান্না শুরু করে দিলো।
খাওয়া দাওয়া করে বাবা-মা শ্বশুর শাশুড়িকে সালাম করে বের হয়ে গেলাম। বাবা-মা শ্বশুর শাশুড়ী সবাই এয়ারপোর্টে গেলো আমাদের সি অফ করতে……

আমেরিকা যাওয়ার পর আমরা হোটেলে উঠি,আমার খুব ভয় লাগতেছিলো।
সারারাত রাফিদ ঘুমায় নি,কিছুক্ষণ পর পর কান্না করে উঠে।

সকালে উঠে হাসপাতালে যায় রাফিদ পরীকে নিয়ে,১০ টায় অপারেশন। পরীকে যখন অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় রাফিদ বাড়িতে ফোন করে কান্না করতে থাকে।
টানা ৬ ঘন্টা পর অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হয়।
রাফিদ এগিয়ে যেতেই রাফিদকে কংগ্রাচুলেশনস জানায় ডাক্তার, তাদের অপারেশন সফল হয়েছে।

১ সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর রাফিদ আর পরী দেশে ফিরে আসে।

পরীকে আরো ১ বছর অপেক্ষা করতে হয় সন্তান ধারণ করার জন্য।

১ বছর পর………….

সকালে নাশতা করার জন্য সিড়ি বেয়ে নামতে যেতেই পরী বুঝতে পারে তার খুব মাথা ঘোরাচ্ছে।
রাফিদ কে বলতেই রাফিদ পরীকে ধরে নামায়।খাওয়া দাওয়ার পর রাফিদ পরীর ইউরিন টেস্ট করে।
রেজাল্ট পজিটিভ আসে

প্রেগন্যান্সির পুরো সময় টা পরীর ঘোরের মধ্যে কাটে,আগেরবারের মতো এবার ও পরীর উদ্ভট ইচ্ছে জাগে কিন্তু যতোবারই কিছু করতে যায় রানী অশ্রুমালা এসে সামনে দাঁড়ায় পরীর।

পরীর ১ টা মেয়ে হয়,মা হওয়ার স্বপ্ন পরীর সত্যি হয়,কিন্তু পদ্মার আর মা হওয়া হয় না, যতোবারই পদ্মা প্রেগন্যান্ট হয় ততোবারই তার মিসক্যারেজ হয়ে যায়।
পরী জানে পদ্মার মিসক্যারেজ হয়ে যাওয়ার পেছনে রানী অশ্রুমালা আছে।
পদ্মার শাস্তি এটা সে পদ্মাকে দিচ্ছে।

৫ বছর পর………..

পরী এখন ১ মেয়ে,২ জমজ ছেলের মা।
রাফিদ পরীর সংসার এখন সুখেই যাচ্ছে,মাঝে মাঝে যখনই কোনো সমস্যা হয়,রানী অশ্রুমালা এসে সামনে দাঁড়ায় পরীর।
মাঝে মাঝে পরীর মেয়ে রিমঝিম ২টা মা দেখে বলে দাবী করে।আবার মাঝে মাঝে বলে তার মা রূপকথার রানী হয়ে যায় কিভাবে হঠাৎ করে।
রাফিদ তখন হেসে জবাব দেয়,তুমি যে আমার রাজকন্যা মা,তাই তোমার মা রাজরানী হয় তোমার জন্য।

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here