আবার_দেখা_হবে,পর্বঃ ০৩

0
1963

আবার_দেখা_হবে,পর্বঃ ০৩
জাহান আরা

আমি যেনো আমি না,আমি লীলাবতী হয়ে গেছি।
উন্মাদিনীর মতো প্রলয় নৃত্য করে যাচ্ছি।এই প্রলয়ের যেনো শেষ নেই।

রাফিদ ঘুম থেকে জেগে গেছে পরীর প্রলাপ শুনে,তাকিয়ে দেখে পরী ঘুমের ঘোরে কি কি যেনো বলতেছে,উঠে গিয়ে পরীর পাশে গিয়ে বসে রাফিদ,খেয়াল করতেই শুনে পরী বলতেছে,”তোকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না,আমি আবার এসেছি আমার প্রতিশোধ নিতে,এবার তোর রেহাই নেই,তোকে বলেছিলাম না অশ্রুমালা আবার দেখা হবে,লীলাবতী তোকে কথা দিয়েছিলো,লীলাবতী তার কথা রেখেছে,সময় হয়েছে আবার দেখা হওয়ার,তুই প্রস্তুত হ,আগামী পুর্নিমা তে #আবার #দেখা #হবে”

রাফিদ কথার আগামাথা খুঁজে পাচ্ছে না তবে এটুকু বুঝছে যে পরী স্বাভাবিক নেই,পরীর সাথে অস্বাভাবিক কিছু হচ্ছে যে রাফিদ পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যায়,পরীর কপালে হাত দিতেই রাফিদ চমকে উঠে,জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে পরীর, প্রলাপ বকা ও বন্ধ হয়ে যায় রাফিদ কপালে হাত দেয়ার সাথে সাথে,রাফিদ পরীকে ঘুম থেকে তুলে দেয়।

রাফিদের ডাকে আমার ঘুম ভাঙে,তাকাতেই দেখি রাফিদ গভীরভাবে আমাকে দেখছে।আমার নিজেকে খুব দুর্বল লাগছে।।
রাফিদঃ উঠো এখান থেকে,তোমার জ্বর আসছে ওষুধ খেয়ে নাও।
ফ্লোর থেকে উঠার সেই শক্তি আমার ছিলো না,আমি কিছু না বলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম রাফিদের দিকে,রাফিদ কি বুঝছে জানি না,আমাকে কোলে করে তুলে সোফায় বসিয়ে দিলো,তারপর রুম থেকে বের হয়ে গেলো।কিছুক্ষণ পরে ফিরে এলো,খাবার প্লেট হাতে নিয়ে।
আমার পাশে বসে আমাকে খাইয়ে দেয়ার জন্য মুখের কাছে হাত নিলো।
হঠাৎ করেই কেনো যেনো আমার প্রচন্ড অভিমান হলো,এই লোকটা আমার স্বামী তার উপর আমার সবচেয়ে বেশী অধিকার অথচ সে এখন আমার সাথে ডাক্তার সুলভ ব্যবহার করছে,যেনো রোগীর সেবা করছে।
আমি তো ওর ভালোবাসা চাই,এরকম ডাক্তার সুলভ আচরণ তো বাহিরের রোগীদের সাথে করবে,নিজের বৌয়ের সাথে কেনো।
ও তো দেখেছে রাতে আমি খেতে পারি নি,কই তখন তো আমাকে খাইয়ে দিতে চেষ্টা করে নি একবার, নিজে খেয়ে নিছে আর এখন আমি অসুস্থ দেখে আসছে সেবা করতে।

রাগে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।

রাফিদঃ হা করছো না কেনো?
আমিঃ প্লেট রেখে যান আমার খাবার আমি খেয়ে নিতে পারবো।
রাফিদঃ হাত কেটে তো অবস্থা খারাপ করে রেখেছো,কিভাবে খাবে??
আমিঃ এতো পাগল হই নি যে আপনার মতো একজন নিচু মানসিকতার মানুষের জন্য নিজের হাত কাটবো।আমি কাটি নি।

বলেই রাফিদের হাত থেকে খাবার প্লেট নিলাম,খুব কষ্ট হচ্ছিলো তাও রাফিদকে দেখিয়ে দেখিয়ে নিজে খেয়ে নিলাম কিছুটা।রাফিদ প্যারাসিটামল দিলো আমাকে খাওয়ার জন্য,আমি বিছানার নিচে ছুড়ে ফেলে দিলাম।খাবো না ওর দেওয়া ঔষধ।
রাফিদ চিন্তিত ভঙ্গিতে কি যেনো ভাবছে,তাই দেখে নি।
আমি জানি ও পদ্মার কথা ভাবছে,কেনো জানি আমার খুব রাগ হলো।

আমি খেয়ে ফ্লোরে শুতে যাবো,রাফিদ তখন আমাকে ডাক দেয় বিছানায় শোয়ার জন্য,ও ফ্লোরে শুবে।

আমিঃ আপনার বাড়ি,আপনি কেনো ফ্লোরে শুবেন,আমি শুতে পারবো,সমস্যা হবে না।

রাফিদঃ পরী কথা বাড়িয়ো না,যা বলছি শুনো।

আমিঃ আমি এখানেই ঘুমাবো।

রাফিদঃ পরী,আমাকে একটা সত্যি কথা বলবে??

আমিঃ হ্যাঁ,বলেন।

রাফিদঃ তুমি বলছো তোমার হাত তুমি কাটো নি,তাহলে কিভাবে কাটা গেছে তোমার হাত,তুমি ছাদে ছিলা কেনো অজ্ঞান হয়ে?

আমিঃ আমি ছাদে ছিলাম??
কি বলেন,আমি তো একটা রুমে ছিলাম আপনাদের।

রাফিদঃ মানে কি,কোন রুমে??

আমিঃ আমি আপনাদের পুরো বাড়িটা দেখতে বের হয়েছিলাম,রুম গুলো দেখে এক জানালায় দাড়াতেই দেখি লীলাবতীর ছবি, কাল রাতে আপনাকে বলেছিলাম না ছাদে একটা মেয়ের সাথে দেখা হয়েছে,সেই মেয়েটা।
আমার কেনো জানি ভিতরে যেতে ইচ্ছে হলো,আমি দরজায় হাত দিতেই দরজা খুলে গেলো,তারপর দেখি ভিতরে অনেক জিনিসপত্র নাচের সব।
নিচে অনেক মানুষের কথা শুনে আমি ভেবেছিলাম আমাদের বাড়ি থেকে মেহমান এসেছে তাই আমি বের হয়ে আসতে নিলাম কিন্তু দেখি দরজা লাগানো,কোনোভাবে খুলতে পারছি না,আপনাকে কল দিতে যাবো কিন্তু ফোনে নেটওয়ার্ক নাই।লীলাবতীর ছবিটি কেমন যেনো জীবন্ত লাগছিলো আমার কাছে,আমি তখন কেমন ঘোরের মাঝে চলে যাই,আমার মনে হতে লাগলো আমি অনবরত নৃত্য করে যাচ্ছি,আর কেউ একজন আমার হাত কেটে দিচ্ছে।
তারপর আর কিছু মনে নেই আমার।

রাফিদঃ তোমার ফোন কই এখন?

আমিঃ কি জানি,মনে হচ্ছে ওই রুমে।

রাফিদঃ আমাকে নিয়ে চলো ওই রুমে।

আমিঃ আমার ভয় করছে।

রাফিদঃ ভয় পেও না আমি আছি,চলো আমার সাথে।

রাফিদ টর্চ হাতে নিলো,কয়েকটি চাবি,তার নিলো,আমাকে একটা টর্চ দিলো হাতে।

ওই রুমের সামনে এসেই আমি বল্লাম,এই রুমটা।

দরজায় তালা দেওয়া,রাফিদ সবগুলো চাবি দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করলো কিন্তু খুলতে পারছে না,শেষে তার দিয়ে খুঁচিয়ে খুলতে চেষ্টা করলো তাও খুলছে না।

রাফিদঃ দেখছো দরজা খুলছে না,তাহলে তুমি কিভাবে প্রবেশ করলে?

আমিঃ আমি হাত দিতেই তখন খুলে গেছে।

রাফিদঃ আবার হাত দাও এসো।

আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম,দরজার উপর হাত রাখতেই আবার দরজা খুলে গেলো।আমি ভয় পেয়ে গেলাম।

রাফিদঃ ভিতরে ঢুকো। বলেই রাফিদ আর হাত চেপে ধরলো।আমার ভয় কেটে গেছে রাফিদ আমাকে ধরতেই।
আনন্দে আমার কান্না এসে গেছে,মনে মনে আল্লাহ কে বল্লাম,সারাজীবন যেনো এভাবে আমার হাত ধরে রাখে সে।
ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখি আমার ফোন ফ্লোরে পড়ে আছে,ফ্লোর জুড়ে অনেক রক্ত।

রাফিদ কিছুক্ষণ দেখে আমাকে বললো যা দেখার দেখে নিয়েছি।
মা বাবা ছাড়া তুমি কাউকে এসব কথা বলবে না,তোমাদের বাড়ির কাউকে না এবং আগামী পূর্নিমার আগে তুমি এ বাড়ি থেকে যাবে না।

আমিঃ কেনো??
রাফিদঃ পরে বলবো।

রুমে এসে রাফিদ বাকি রাত বারান্দায় দাড়িয়ে কাটিয়ে দিলো আমি সোফায় বসে।
ফজরের আজানের সময় রাফিদ চলে গেলো মসজিদে আমি নামাজ পড়ে নিচে গেলাম।
মার সাথে টুকটাক কথা কাজ করছি আর কথা বলছি।

নামাজ পড়ে রাফিদ বাসায় আসলো না,দুপুরে বাসায় ফিরলো।সাথে একজন ওঝা কে নিয়ে।

বাবা সাথে ওঝা দেখেই রাফিদকে জিজ্ঞেস করলো,কি ব্যাপার, কি হয়েছে??
রাফিদ মা বাবা কে সব খুলে বললো।
শুনে ওনারা ভয় পেয়ে গেলেন।

আমি কিছুই বুঝতেছি না আমাকে কেউ কিছু বলছে না।

ওঝা কিছুক্ষণ পরে আমাকে একটা তারা এঁকে তার মাঝখানে বসতে বললো।
সামনে ৭টা মোমবাতি জ্বালালো,৭টা লাল রক্তজবা,গোলাপজল,ধূপ,কাঠি,মড়ার খুলি,একটা পিতলের প্লেট,চামচ।

আমার দুই হাতের দুই কড়ে আঙুল থেকে রক্ত বের করে সবগুলো জবা ফুলে দিলেন।মড়ার খুলিতে সিঁদুর দিয়ে দিলেন আমার রক্ত দিয়ে।

তারপরে রাফিদকে রেখে সবাইকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বললেন।

আমার কেনো জানি ভয় লাগতে লাগলো,ওঝা পিতলের প্লেটে একটা পিতলের চামচ দিয়ে বাড়ি দিচ্ছে আর মন্ত্র জপছে,আমি তাকিয়া আছি সামনের মোমবাতির দিকে।
মনে হচ্ছিলো আমি একযুগ ধরে এভাবে বসে আছি।
সবগুলো মোমবাতি হঠাৎ করে নিভে গেলো।

তারপর আর আমার কিছুই মনে নেই।




মোমবাতি নিভে যেতেই পরী কেমন যেনো হয়ে গেলো,বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে গেলো।
ওঝা কে বললো,”আমাকে কেনো ডেকেছিস,পরীকে কেনো বসিয়েছিস তোর আসনে??”
ওঝাঃ তুই কে??
পরীঃ তুই কাকে বলছিস তুই??
আমি রানী লীলাবতী,সম্মান দিয়ে কথা বল।
এ কথা শুনেই ওঝা চমকে গেলো।

ওঝাঃ মাফ করবেন মহারানী,আপনি এই মেয়েটাকে কেনো কষ্ট দিচ্ছেন??
পরীঃ আমি রানী লীলাবতী,আমি এতো বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলাম এই দিনের।
পরীর সাথে অনেক হিসেব বাকী আমার।
১০০ বছর আমি অপেক্ষায় ছিলাম,আমার এতো দিনের অপেক্ষা সার্থক হয়েছে।

ওঝাঃ আপনি দয়া করে আমাদের কে একটু ভেঙে বলেন,কাল রাতে তাহলে পরীর হাত কেটে দিয়েছেন কেনো???

পরীঃ আরো নিবো আমি,ওর রক্তে তো আমার শক্তি।
যতোদিন ও কুমারী থাকবে ততোদিন ওর রক্তে আমার শক্তি বাড়বে,পদ্মাকে আমি এই জন্য এই বাড়ির বৌ হতে দিই নি কারন পদ্মা কুমারী ছিলো না।পদ্মা তারপরেও এই বিয়ে করতে রাজী ছিলো,কিন্তু আমি ওই ছেলেকে ভয় দেখিয়েছি তাই ওই ছেলে সব ফাঁস করে দেয়ার চাপ দেয়াতে পদ্মা পালিয়ে যায়।

একথা শুনেই রাফিদ চমকে উঠে, কাকে বিশ্বাস করলো সে,কাকে ভালোবাসলো,যে তাকে ঠকাতে চেয়েছে তাকে??
তার জন্য পরীকে সে কষ্ট দিচ্ছে??

ওঝাঃ মহারানী, আপনি পরীকে ছেড়ে যাবেন কবে??

পরীঃ পরীকে আমি ছাড়বো না আমার পুরোনো হিসেব বাকী আছে এখনো।আগামী পূর্নিমাতে,আমার আত্মা মুক্তি পাবে আমার প্রতিশোধ নেয়ার পর।

ওঝাঃ মহারানী কে আপনার সেই শত্রু??

পরীঃ বলবো না (হা হা হা হা)

তারপরেই পরী লুটিয়ে পড়ে গেলো।

চোখ মেলতেই দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আছি,মা বাবা পাশে বসে আছে,রাফিদ নেই ঘরে।

আমিঃ মা কি হয়েছিলো আমার??
মাঃ কিছু হয় নি মা,তুই যে ভয় পেয়েছিস একা ওই রুমে তাই রাফিদ ওঝাকে নিয়ে এসেছে,তুই চিন্তা করিস না,এই পুর্নিমা তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমিঃ তোমরা সবাই পূর্নিমা পূর্নিমা করছো কেনো,কি হবে সেদিন??
বাবাঃ দূর পাগলী,আমাদের বাড়ির নিয়ম হলো বাড়ির বৌ রা পূর্নিমার পরে বাবার বাড়ি যায়। তাই বলছি।
ভাবিস না এতো।

আমার কাছে সব কেমন যেনো গোলমাল লাগছে,কিছু একটা হয়েছে কেউ আমাকে জানতে দিচ্ছে না।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে আমি শুয়ে আছি বিছানায়,রাফিদ বাড়ি নেই,মা বাবা নিচে, আমার কেনো যেনো বার বার ওই রুমে যেতে ইচ্ছে করছে।
ওই রুমের সাথে আমার কিসের টান আমি জানি না,শুধু এটুকু বুঝতে পারি যে আমাকে ওই রুমে যেতে হবে,এখনি যদি আমি নৃত্য করতে না পারি তাহলে আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাবো।

আর থাকতে না পেরে উঠে দাড়ালাম,ওই রুমে আমাকে যেতেই হবে,কিন্তু দরজা খুলতে গিয়ে থমকে গেলাম,দরজায় তালা দেওয়া বাহির থেকে, প্রচন্ড রাগে আমি ফুসতেছি।
আমার মনে হচ্ছিলো আমি আবার লীলাবতীতে রূপ নিচ্ছি।
এমন সময় দরজা খুলে গেলো,রাফিদ রুমে আসলো।

রাফিদকে দেখে আমার রাগ বেড়ে গেলো।রাফিদ আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমার মনে হচ্ছিলো আমার চোখ মুখ দিয়ে আগুনের হলকা বের হচ্ছে।

রাফিদ আমাকে হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে রাখলো।বাহির থেকে কে যেনো আবার দরজায় তালা দিয়ে গেছে।

রাফিদ আমার হাত ধরতেই আমি কেমন যেনো নিস্তেজ হয়ে গেলাম,একটু আগের সেই অনুভূতি আমার নেই,মনে হচ্ছিলো আমি আবার পরী হয়ে গেছি।

রাফিদঃ পরী আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আমিঃ কি বলছেন আপনি।
রাফিদঃ আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি,যা হওয়ার তা হয়ে গেছে আমার উচিৎ ছিলো মেনে নেওয়া,পদ্মাকে ভুলে তোমাকে আপন করার চেষ্টা করা,আমার মাথায় এটা আসে নি যে পদ্মা যদি আমাকে ভালোবাসতো তাহলে
আমাকে ধোঁকা দিতো না।
আমিঃ আমি ওসব মনে রাখি নি,বাদ দেন,আমার ওসব ভাল্লাগেনা।
রাফিদঃ আগে বলো আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিয়েছো??
আমিঃ আপনি কোনো ভুল করেন নি,ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন আসে না।
আমাকে এটা বলেন,দরজায় তালা কেনো,আমার রুমে থাকতে ইচ্ছে করছে না।

আমার এই কথা শুনে রাফিদ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আর দিকে তাকিয়ে রইলো,কিছুক্ষণ পরে বললো,আজ আমাদের ফুলসজ্জা হবে তাই এই কড়া ব্যবস্থা।
বলেই হাসতে লাগলো।
ও শার্ট চেঞ্জ করার জন্য আমার থেকে সরে আলমারির সামনে দাড়ালো।

হঠাৎ করেই ফুলসজ্জার কথা শুনে আমার রাগ হতে লাগলো,কেনো জানি আর ইচ্ছে করছে রাফিদের থেকে দূরে থাকতে।আমি উঠে গিয়ে বারান্দায় দাড়ালাম,আস্তে আস্তে আমার আবার আগের অনুভূতি ফিরে এলো,পায়ের দিকে তাকাতেই দেখি পায়েল আছে,এই পায়েলের ধ্বনি তুলেই আমি নাচবো।

কখন যেনো রাফিদ আমার পিছনে এসে দাঁড়ালো
রাফিদ হঠাৎ করেই আমার পা থেকে পায়েল টা টান দিয়ে ছিড়ে ফেললো,আমার কাঁধে হাত রাখতেই আমি স্বাভাবিক হয়ে গেলাম।

আমিঃ আপনি এটা ছিড়লেন কেনো?

রাফিদঃ তোমার পায়েল থাকলে রাতে আমার অসুবিধা হবে তাই।আর এটা আমি পদ্মাকে ভেবে কিনেছি।
তোমার পায়ে পায়েল থাকলে আমার পদ্মাকে মনে পড়তে পারে তাই এই ব্যবস্থা।
বলেই একটা হার আমার গলায় পড়িয়ে দিলো।

কিছুক্ষণ পরেই বাহিরে থেকে দরজায় কেউ নক করে,রাফিদ আসতে বলে,একজন এসে খাবার টিফিন ক্যারিয়ার প্লেট রেখে যায়।
আবার বাহিরে থেকে তালা দিয়ে চলে যায়

আমিঃ কি হচ্ছে এসব,আমি বাহিরে যাবো আপনি আমাকে বাহিরে যেতে দেন।

রাফিদঃ যাবে তো বাহিরে,তবে কাল সকালে।

আমিঃআমি এখুনি যাবো।
আমার ভাল্লাগেনা খুব অশান্তি লাগে খুব।

রাফিদঃ শান্তি করার জন্য তো আমি আছি।

লাইট অফ করে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, আমার ভিতর থেকে কেউ যেনো বলছে বার বার রাফিদের থেকে দূরে যেতে।

একসময় আমি রাফিদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।

আমিঃ ছাড়ুন আমাকে,ছুবেন না।

রাফিদঃ তুমি আমার বৌ,আমার পুরো অধিকার আছে তোমাকে ধরার।

আমিঃ আমার আপনাকে সহ্য হচ্ছে না।

রাফিদঃ তোমাকে ছাড়া যে আমার অসহ্য লাগে বৌ।

বলেই আমাকে বিছানায় চেপে ধরে আদর করতে লাগলো।
ওর প্রতিটি স্পর্শ আমার কাছে যন্ত্রণাদায়ক মনে হচ্ছে।
আমি কিছুতেই ওকে আমার উপর থেকে সরাতে পারছি না।
রাফিদ আস্তে আস্তে আমার সব খুলে নিচ্ছে।পুরো শরীরে আদর মাখিয়ে দিচ্ছে,এই আদর আমার কাছে স্বর্গীয় আনন্দ হতে পারতো কিন্তু তবু কেনো জানি আমি মুক্তি পেতে চাই ওর থেকে।

আস্তে আস্তে রাফিদ আমার মাঝে ডুবে গেলো, আমার সেই অসহ্য ভাব টা চলে গিয়েছিলো।
একটু পর আমি নিজেই রাফিদকে জড়িয়ে ধরলাম।
রাফিদ আমাকে আরো গভীরভাবে আদর করছে।

বাহির থেকে কারো অস্পষ্ট কান্নার আওয়াজ আসছে,আমি রাফিদকে জিজ্ঞেস করলাম কে কান্না করে??
রাফিদঃ যে কান্না করার করুক,আমার এই সুখের সময় অন্যকিছু শুনতে চাই না।
রাফিদ শক্ত করে আমাকে বুকের সাথে চেপে ধরলো।
বাহিরে কান্নার শব্দ আরো স্পষ্ট হচ্ছে,কি আশ্চর্য আমার ও বুকের ভিতর কেমন যেনো ব্যথা অনুভব হচ্ছে মনে হচ্ছে যে কান্না করছে সে আমার খুব আপন কেউ,তার ব্যথাটা যেনো আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
রাফিদকে বলতেই রাফিদ বললো,বুকে আদর একটু বেশী হয়ে গেছে যে তাই তোমার এমন লাগছে,আরেকটু দিবো আদর ওখানে??
বলেই ও হাসতে লাগলো।

কিন্তু আমি বুঝতেছি যে কান্না করছে বাহিরে তার ব্যথা টা আমিও পাচ্ছি,ওর সাথে আমার কিসের টান,কে সে,আচমকা আমার মনে হলো বাহিরে যে কান্না করছে সে লীলাবতী!!!

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here