আবার_দেখা_হবে সিজন 2,পর্বঃ ০২

0
1992

আবার_দেখা_হবে সিজন 2,পর্বঃ ০২
জাহান আরা

সিড়ি বেয়ে কারো উঠে আসার শব্দ পাচ্ছি,তক্ষুনি দমকা হাওয়ার মতো রানী অশ্রুমালা এসে আমার শরীরে প্রবেশ করে,আমি সেখানেই জ্ঞান হারাই।




রাফিদ ছাদে গিয়ে দেখে পরী অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে,রাফিদ পরীকে তুলে নিয়ে বিছানায় এনে শুইয়ে দিলো,পরীর হাতে-পায়ে গরম তেল এনে মালিশ করতে লাগলো।ওর ২ চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে।

কিছুক্ষণ পর আমার জ্ঞান ফিরে,চোখ খুলতেই দেখি রাফিদ আমার পায়ে তেল মালিশ করছে, কান্না করছে আর বলছে,”পরী কেনো এরকম ভুল বুঝছো তুমি আমাকে,আমার কথাটা একবার শুনো।তারপর বুঝবে কি হয়েছে।কেনো ভাগ্য আমার এতো বিরোধিতা করছে,আমি আসল বিষয় টা তোমাকে বুঝাতে পারি না বার বার চেয়েও”

আমি আবার চোখ বন্ধ করে রাখলাম।
করুক কান্না কিছুক্ষণ,আমি চোখ খুলবো না।

অনেকক্ষণ কান্না করার পর রাফিদ গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো।পরীর এভাবে জ্ঞান হারানোর কারণ কি রাফিদ দাঁড়িয়ে সেটা ভাবছে।হঠাৎ করেই রাফিদের মনে পড়লো পরী প্রেগন্যান্ট নয়তো,পরীর তো লাস্ট বারের পিরিয়ড হয় নি।
রাফিদ খুব খুশি হয়ে উঠে,মনে মনে আল্লাহকে ডেকে বলে যাতে এই সুখবর টা পায় এবার।তাহলে পরীর আর তার মাঝের দূরত্ব আবার কমে যাবে।
রাফিদের খুব আনন্দ হতে থাকে।রাফিদ বাবা হবে।




আমার খুব মায়া হচ্ছিলো,আমি রাফিদের থেকে শুনতে চাই নি ও কি বলতে চেয়েছে।
মনে হচ্ছে ওর কথাটা শুনা উচিৎ।

পা টিপে টিপে আস্তে আস্তে গিয়ে রাফিদকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।
কিন্তু রাফিদ কেমন যেনো রেগে গেলো আমি ওকে জড়িয়ে ধরাতে।আমার দিকে না ফিরেই বললো,

রাফিদঃ তোর মতো নির্লজ্জ মেয়ে আমি জীবনে ২য় টি দেখি নি,আমাদের ভালোবাসা দেখেও কি তুই বুঝিস না যে তোকে আমি ঘৃণা করি,তুই একটা নর্দমার কীট,আই হেট ইউ।লজ্জা থাকলে জীবনে আমার সামনে আসবি না।তোর জন্য আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে,সামনে আমার খুশির দিন আসছে,তোর ছায়া আমাদের উপর পড়ুক আমি তা চাই না।
বলেই থাপ্পড় দেয়ার জন্য হাত তুলে পিছনে ফিরে রাফিদ।

কি জানি কি দেখে রাফিদ ভূত দেখার মতো চমকে উঠে।

রাফিদঃ তু-তু-তুমি এখানে???

রাফিদের কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
তারমানে আমি যা ভেবেছি,যা দেখিছি,যা বুঝেছি সবই ঠিক। রাফিদ এখনো পদ্মাকে ভালোবাসে।
আমি ওদের মধ্যে তাহলে বাঁধা হয়ে আছি এখন???
আমার দু’চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে।

আমি আর কোনো কথা বলতে পারছি না আর।কথা বলার মতো সিচুয়েশনে নাই আমি।
রাফিদ হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে,যেনো কি বলবে বুঝতে পারছে না।
আমিঃ আমার যা বুঝার,তা বুঝা হয়ে গেছে এবার।




রাফিদ বুঝতে পারছে না তার সাথে বারবার কেনো এরকম এক্সিডেন্ট হয়???
পরী পিছন থেকে জড়িয়ে ধরাতে রাফিদ ভেবেছিলো পদ্মা এসেছে আবার,পরী তো বিছানায় অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে।
পদ্মাকে ভেবেই রাফিদ এসব বলে,কিন্তু কে জানতো পরী যে উঠে আসবে।নিজের বৌ’য়ের স্পর্শ নিজেই বুঝতে পারে নি।
নিজের মাথার চুল নিজেরই টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে রাফিদের তখন।

বারবার এতো গুলো ভুল করে পরী কে কিছু বুঝানোর সাহস,ইচ্ছে,ক্ষমতা কোনোটাই ছিলো না রাফিদের আর।

পরী রুম থেকে বের হয়ে যায়।

দুপুরে খেতে বসে ও পরী খেতে পারে না,উঠে গিয়ে বমি করে দেয়, কেউ না লক্ষ্য করলেও রাফিদের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি দেখা দেয়,রাফিদ জানে যদি ওর ধারণা সত্যি হয় তাহলে তাদের মধ্যের বাঁধা দূর হয়ে যাবে,২ জন ২ জনের কাছে চলে আসবে।

খাবার রেখেই রাফিদ ভাবতে থাকে তাদের একটা মেয়ে হবে,সারাক্ষণ রাফিদ চোখে চোখে রাখবে,নিজেই মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাবে,মেয়ের জন্য অনেকগুলো ড্রেস কিনবে রাফিদ,তার মেয়ে হবে রাজকন্যা,মেয়ের নাম কি রাখবে সেটা ও রাফিদ ভাবতে থাকে,মেয়ের নাম হবে????
কতো নাম মনে পড়ে, উফফ রাফিদ ভাবতে পারে না, আনন্দে রাফিদের চোখে জল এসে যায়।

রাফিদ ঠিক করে পরীকে বলবে না প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার কথা,আগে টেস্ট করবে পজিটিভ হলে তারপর বলবে।

পরীর বাবাঃ কি ব্যাপার রাফিদ,তুমি খাচ্ছো না যে??
রাফিদঃ ক্ষিধে নেই বাবা।

পরী রুমে গিয়ে বসে থাকে।
রাফিদ কিছুক্ষন পর রুমে গিয়ে একটা ছোট শিশি পরীকে দেয়।

রাফিদঃ ধরো এটা।
পরী কিছু না বলে নেয় হাতে।

রাফিদঃ তোমার শরীর অসুস্থ,একটা টেস্ট করার জন্য ইউরিন টেস্ট করা লাগবে,টয়লেটে গিয়ে এনে দাও আমাকে।

পরী কোনো কথা না বলে উঠে যায়।
রাফিদ বুঝতে পারে পরী কি রকম কষ্ট পেয়েছে।কিন্তু যা ঘটে গেছে তাতে রাফিদের হাত ছিলো না,রাফিদ ইচ্ছে করে এরকম করে নি সেটা সে কিভাবে বুঝাবে পরীকে।

পরী কিছুক্ষণ পরে ইউরিন এনে দেয় রাফিদকে।
রাফিদ তা নিয়ে চিলে যায় রুম থেকে,ছাদে গিয়ে টেস্ট করে দেখে পজিটিভ।

রাফিদের আনন্দের সীমা থাকে না।আনন্দে সে আত্মহারা হয়ে যায়। সে বাবা হবে,খুশীতে রাফিদের কান্না করে দেয়।
পরী কে কিভাবে বলবে সে বুঝতে পারে না । এতো খুশী রাফিদ এই জীবনে হয় নি।
বাবা হওয়ার মতো খুশীর সংবাদ এই দুনিয়াতে দ্বিতীয় কিছু নেই।
আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায় রাফিদ।

মনে মনে ঠিক করে,রাতে বলবে পরীকে।

পরী শুনলে সব অভিমান চলে যাবে পরীর রাফিদ জানে,তখন সে পরীকে বুকে টেনে নিয়ে বুঝিয়ে বলবে কি কি ঘটেছিলো।




পদ্মা ঘরে বসে রেগে আগুন হয়ে আছে,রাফিদ তাকে লাথি মেরেছে,এটা সে সহ্য করতে পারছে না।
রাফিদের আর পরীর সংসার ভেঙে দেয়ার জন্য পদ্মা উঠে পড়ে লেগেছে এবার।
মনে মনে পরিকল্পনা করে কিভাবে ওদের মধ্যে ভাঙন ধরাবে আরো জোরালো ভাবে।

অবশেষে একটা উপায় বের করে রাতে কাজে লাগানোর জন্য ,নিজেই হেসে উঠে পদ্মা আপন মনে।
আজ রাতে তার আরেকটা খেলা দেখাবে পরীকে।
যেখানে রাজরানী হবার কথা ছিলো পদ্মার,নিজের ভুলের কারণেই আজ সেখানে পরী গিয়ে রানীর আসনে বসেছে,কি নেই এখন পরীর???

একমাত্র বৌ পরী,রাফিদ ডাক্তার,পরীর কতো রকমের অলংকার,কতো রকমের বাহারি শাড়ি,অথচ এসব হবার কথা ছিলো পদ্মার।

অথচ কি পেলো সে??

অনিক একটা চাকরি করে,পরিবারের বড় ছেলে,ছোট ২ ভাই-বোন।
বাবা নেই,পুরো পরিবার অনিককে দেখা লাগে।
মাস শেষে সব টাকা অনিক তার মায়ের হাতে তুলে দেয় যা পদ্মার সহ্য হয় না,পদ্মা চায় অনিক বেতনের টাকা পদ্মার হাতে দিবে,পদ্মা সংসার পরিচালনা করবে,কিন্তু তা হয় না।

অথচ পরীর!!!

টাকা-পয়সার অভাব নাই।রাফিদের অগণিত টাকা-পয়সা সেটা পদ্মা আগে থেকেই জানে,আগেও অনেক রকম কথা বলে রাফিদের অনেক টাকা নিয়েছে পদ্মা,রাফিদ বুঝতেই পারে নি সেসব পদ্মার চালাকি ছিলো। অবশ্য রাফিদের জন্য সেসব কোনো বিষয় না,অজস্র টাকা সে খরচ করতে পারে ভালোবাসার জন্য।

কিন্তু এখন পদ্মা সেসব পাচ্ছে না, তাই লোভে,হিংসায় পদ্মা অন্ধ হয়ে যায়।

রাফিদকে ছাদে যেতে দেখে আরেকটা প্লান এসে যায় পদ্মার মাথায়।
উঠে গিয়ে পরীর রুমের সামনে যায়।দেখে রাফিদের ফোন বিছানার উপর পড়ে আছে, পরী অন্য দিকে ফিরে বসে আছে ।

পদ্মা তখনি রাফিদের ফোনে মেসেজ দেয়,
” আমাকে ছাদে আসতে বলে তুমি এখনো দেরি করছো কেনো,তাড়াতাড়ি আসো,তোমাকে ছাড়া একমুহূর্ত ভাল্লাগেনা আমার জান”

নিজেও ছাদের দিকে দৌড়ে যায়,পদ্মা জানে এই মেসেজ দেখলে পরী ছাদে আসবেই দেখতে,তাই আগেই গিয়ে ছাদে উঠে যায়।




রাফিদের ফোনে মেসেজ আসার শব্দ শুনে রাফিদের ফোন হাতে নিই।
নিয়েই দেখি পদ্মার মেসেজ।
আমার বুক ফেটে কান্না আসে,এসব কেনো করছে রাফিদ আমার সাথে।

আমিও উঠে যাই ছাদে,আড়ালে থেকে দেখতে।



পদ্মা ছাদে গিয়ে দেখে রাফিদ খুশিতে ডগমগ করছে।
পদ্মা গিয়ে জিজ্ঞেস করে,”কি ব্যাপার,এতো খুশী খুশী লাগছে যে??
রাফিদ পদ্মাকে দেখে খুব রেগে যায়,পদ্মার দিকে তেড়ে যায় রাফিদ।
পদ্মা পিছুতে থাকে,রাফিদ রেগে গিয়ে এগুতে থাকে পদ্মার দিকে,পরী ছাদে উঠে দেখে রাফিদ পদ্মার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,পদ্মা হাসতে হাসতে পিছনে যাচ্ছে।
একসময় পদ্মার পিঠ গিয়ে দেয়ালে ঠেকে,পরী বুঝতে পারে এবার কি হবে,রাফিদ পদ্মার গলায় এক হাত দেয়,পরী কিছু না ভেবেই এভাবে একটা ছবি তুলে নেয়,যাতে রাফিদ ছাদের এই ব্যাপার অস্বীকার করতে না পারে,ওদের অন্তরঙ্গতা দেখার ভয়ে আবার নেমে আসে পরী।

রাফিদ গিয়ে পদ্মার গলা টিপে ধরে,রাগে অন্ধ হয়ে পদ্মাকে মেরে ফেলতে নেয়,পদ্মার চোখ বড় হয়ে আসে,জিহবা বের হয়ে যায়,তখন রাফিদ পদ্মাকে ছেড়ে দেয়।

রাফিদঃ আমার আশেপাশে তোকে আবার দেখলে মেরেই ফেলবো আমি তোকে,মাথায় রাখিস তুই।



রুমে এসে দেখে পরী নেই রুমে।
রাফিদ জানতেও পারে না পরী যে তাদের ছাদে দেখে ফেলেছে।




রুমে থাকতে আর ইচ্ছে করে না বাবার রুমে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে কান্না করতে থাকি।বারবার মনে হয় আমি ওদের মাঝে বাঁধা হয়ে আছে।আমি না থাকলে ওরা একে অন্যকে পাবে।
সব ভেবে সিদ্ধান্ত নিই,না আর থাকবো না
চলে যাবো সব ছেড়ে, রাফিদ থাকুক তার ভালোবাসা নিয়ে।শেষ বারের মতো একটু বাবার আদর নিই।

বাবা বারবার জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে??
আমিঃ অনেক দিন পরে বাড়ি এসেছি যে বাবা,আবার তো চলে যেতে হবে তোমাদের ছেড়ে,তাই খুব কান্না পাচ্ছে।

বাবাঃ পাগল মেয়ে আমার,এরকম কান্না করে কেউ??

রাতে পরী রুমে যায়,রাফিদ অপেক্ষা করে থাকে পরী কখন রুমে আসবে।



পরীর ঘুমানোর আগে অযু করার অভ্যাস আছে পদ্মা জানে,পরীর রুমের বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে আড়ালে থেকে,কখন পরী ওয়াশরুমে যাবে।

পরী ওয়াশরুমে যেতেই পদ্মা রুমে গিয়ে মা’কে ডাকে।অনিক বাড়িতে গেছে আজকে।

মা আসতেই পরী বলে মা,আমার খুব শরীর খারাপ করছে,অনিক তো নেই যে বাহিরে যাবে ডাক্তার ডাকবে,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মা।

মাঃ দাঁড়া আমি রাফিদকে ডেকে দিচ্ছি,ও তো ডাক্তার,ও দেখে বলুক কি করা দরকার।

মা রুমে গিয়ে দেখে রাফিদ বসে আছে,উনি গিয়ে বলতেই রাফিদ স্টেথোস্কোপ নিয়ে উঠে আসে।
রাফিদকে রুমের দিকে আসতে দেখে পদ্মা আবার মেসেজ দেয় রাফিদের ফোনে,
“জান,তাড়াতাড়ি একটু রুমে আসো,একা একা ভালো লাগে না আমার,তোমাকে খুব মিস করছি”

রাফিদ গিয়ে স্টেথোস্কোপ দিয়ে পদ্মার বুকে লাগায়।

রাফিদঃ কাশি দিন তো

পদ্মাঃ মা আমি একটু পানি খাবো একগ্লাস পানি এনে দাও।

পদ্মার মা বের হয়ে যায় পানি আনার জন্য।



ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে দেখি রাফিদ রুমে নেই,রাফিদের ফোনের সিগনাল বাতিটা জ্বলছে।
আমার বুকের ভিতর কেঁপে উঠে,তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে দেখি পদ্মার মেসেজ।

কি ভেবে তখনি পদ্মার রুমে যাই,দেখি পদ্মা শুয়ে আছে,হাসছে পদ্মা,রাফিদ দরজার দিকে পিছ দিয়ে পদ্মার বিছানার পাশে বসে আছে,পদ্মার বুকে রাফিদের হাত।

চলবে…….???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here