আমার একটাই যে তুই❤️পর্ব-৫
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
গাড়ি চলছে দ্রুত গতিতে।গাড়ির খোলা জালানা দিয়ে প্রবশে করছে মৃদুল বাতাস।যার ফলে আমার খোলা চুল গুলো দোল খাচ্ছে বার বার। আমার পাশেই বসে ইউসুফ ভাই ড্রাইভ করছেন। যার গভীর দৃষ্টি আপাদত সুরু রাস্তার দিক।আর আমার পছন্দের মানুষটির সাথে আমি পাশে বসে! সবাই কিছু মিলিয়ে একটি রোমাঞ্চকর মুহূর্ত।
আমাদের গাড়িতে ঠিক আমার পিছনের সিটে বসে আছে লিয়া আপু। যে এ-ই মুহুর্তে মুখ চুপসে বসে। কারণ একটাই সে আমার সিটে ইউসুফ ভাইয়ার পাশাপাশি বসতে চেয়েছিলেন। তখনি ইউসুফ এক ধমক দিয়ে পিছনে পাঠিয়ে আমাকে তার পাশে বসিয়ে দিলেন।তখন থেকেই তার মুড ওফ।
কিন্তু আমার মনে গভীর প্রশ্ন সাথে গভীর চিন্তা! আচ্ছা লিয়াপুকে কেন দিল না বসতে? সে কি কোনো বিষয়ের উপর রেগে তার উপর?নাকি অন্য কারণ? বিয়ের দিন থেকে দেখছি তিনি লিয়াকে এরিয়ে চলছেন? কিন্তু কেন? তিনি চাইলে তো তিথি, বুশরা, নুশরাকে তার পাশে বসাতে পারতেন! তাহলে আমি কেন? তাহলে কি সে আমায় পছন্দ করে?
গাড়িতে চলছে পিনপতন নিরবতা। বিরক্তি লাগছে খুব।তখনি তিথি বলে উঠে,,
–” ভাইয়া আমরা কি শোক পালন করতে যাচ্ছি? সবাই এতে চুপ কেন? অতন্ত্য গানটাতো ছাড়তেই পারো?”
তিথির কথার সাথে তাল দিয়ে বলল নুশরা,,
–” আমার এখন ঘুম পাচ্ছে। আমার সাজের বারটা থেকে তেরোটা বেজে যাচ্ছে!”
নুশরার এমন কথা ফিক করে হেসে দিল সবাই। তখনি ইউসুফ ভাইয়া সামনের দিক দৃষ্টি রেখেই বললেন,,
–” এতে যে গান গান করিস তোরা মরলে কানে শিষা ভরবে আল্লাহ। তখন কি করবি?”
সাথে সাথে সবাই চুপ হয়ে গেল। সবাই মুখ গুমরে বসে। তখন আমার বলতে ইচ্ছে করলো,,
–” তাই নাকি ইউসুফ ভাইয়া? তাহলে আপনার সাথে মেয়েরা যখন ঢলাঢলি করে তখন কি গুনাহ হয়ে না? সোওয়াব হয়ে নাকি? জানেন না? এটা যে ঘোর পাপ। মহাপাপ? ”
কিন্তু মুখ ফুঁটে কিছু বলতে পারলাম না আমি। জানি বললেই আশি মনের বস্তার মতো ধমক দিবেন তিনি।
কিছু সময় পরে পৌঁছে গেলাম মিশুপির বাড়ি। বৌভাত উপলক্ষে সাজানো হয়েছে পুরো বাড়িকে বউ-জামাইয়ের মতো।বাড়ির পাশটায় খোলা মেলা। নানান গাছগাছালীতে ভরা। পাশেই মস্ত বড়ো পাক্কা ঘাট ওয়ালা পুকুর। কি সুন্দর তাতে শাপলা ফুল ফুঁটেছে । সুযোগ পেলে ঘুরে আসবো সেখান থেকে।
ভিতরে যেতেই মিশুপিকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু আমার। কষ্ট যে বহুত হচ্ছে একদিনেই বুঝে গেছি তাকে ছাড়া জীবন অনেক কষ্টের হবে আমার অভস্ত্য তাতে আমি।মিশুপিও কান্না করছে। আরও আমাকে থামাতে ট্রাই করছে। কিন্তু ব্যর্থ সে। তখনি হুট করে এসে কোথা থেকে হাজির হলো ইউসুফ ভাই। আরও আমাকে ধমকে বলে উঠলো,,
–” ও-ই ছিচ্চকাদুনীদের মতো শুরু করে দিলি? তুই কাঁদা ছাড়া বুঝিস না কিছু বেদ্দপ।কান্না থামা! একদম চুপ!”
বরাবরের মতোই! তার ধমকে কান্না থেমে গেছে আমার এ-ই লোকটি এমন কেন? কেন এমন করেন আমার সাথে? খালি ধমকায়? হুহ্।তখনি মিশুপি বলল,,
–” ভাই এটা কি! সবাই সময় ওরে এতো বক কেন? এটা মোটেও ঠিক না! একদম না। আরও বকবে না। তাহলে তোমার সাথে কথা বন্ধ! ”
তখনি রসিকতার সাথে বললে ইউসুফ ভাই,,
–” তাই না কিরে? ভাল হয়েছে বলিস না কথা। খরচ কমবে আমার!”
মিশুপি তখনি কপাট রাগ দেখিয়ে বলল,,
–“ভাইয়া..!”
তখন ইউসুফ ভাইয়া হাসতে হাসতে বলল,,
–” এ-ই তুই না কথা বলবি না আমার সাথে? তাহলে ডাকাচ্ছিস কেন? তুই দেখি দুই কথার মানুষরে!”
তখনি মিশুপি ভ্রূ কুঁচকে বলে,,
–” দুই কথার মানুষ মানে?”
–” দুই কথার মানুষ মানে এখন একটা বলছে পর মুহুর্তে অন্য কথা বলছে। আমার তো আয়ানের জন্য্ কষ্ট হচ্ছেরে ও-ই সংসার কেম্নে করবে তোর সাথে?
বলতেই চটে গেল মিশুপি। সঙ্গে সঙ্গে দিল দৌড়ানী।ইউসুফ ভাইয়াও দৌড়। তার পিছনে মিশুপিও।তাদের ভাই বোনদের কান্ডে হেসে দিল উপস্থিত সবাই।আর আমি দেখে যাচ্ছি ইউসুফ ভাইয়াকে। যে এই মুহূর্ত দাঁত বের করে মন খোলা হাসি হাসচ্ছে। তার এই হাসির প্রেমে পরে যাচ্ছি আমি।তার হাসিটা মাতার করা সুরের মতো গুঞ্জন হচ্ছে! আচ্ছা তার হাসি দিয়ে কি গানের সুর বানানো যেত? বানালে হয়তো আমার মতো সকলেই সেই হাসির গানের সুরে পরে যেত!
অনুষ্ঠান প্রায় শেষ। বিকেল সন্ধ্যার মাঝামাঝি সময়টা যাকে বলে থাকি আমারা গোধূলি বেলা। দাড়িয়ে আছি সেই পাক্কা ঘাটের পুকুরে, যেখানে ফুটে আছে হাজারো শাপলা ফুল। দেখতেই ধরতে ইচ্ছে করছে ফুল গুলো। কি সুন্দর গোলাপি তার পাপড়ি। সাথে করে সবুজ আবরণ ঢাকা। মনে হচ্ছে সবুজ আবরণটা না থাকলে কি হতো? নিশ্চয় ফিকে লাগতো?এসব ভাবতে ভাবতে ঘাটের শেষ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে। সাথেই বাঁধা ডিঙ্গে নৌকা। তখনি মনের মাঝে আশা জাগ্রত হলো নৌকা চালিয়ে শাপলা ফুল গুলোর আশপাশটা ঘুরতে।যা ভািা তাই কাজ উঠে বসে পড়লাম নৌকায়। বিপত্তি ঘটলো তখন যখন মনে হলো আমিতো সাতারই জানি না। মুখ কালো করে বসে রইলাম নৌকার মাঝে।
–” চালাতে পারিস? নাকি ঢং করতে উঠেছিস?”
যখন আমি আমার ভাবনান্তরে হারিয়ে তখনি উপর থেকে কথা গুলো বললেন তিনি। তার দিক তাকিয়ে মাথাটা আবার নিচু করো বসে রইল আমি।তখনি আড়াআড়ি ভাবে হাত ভাঁজ করে বলে উঠলেন তিনি,,
–” কি হলো কথা বলছিস না কেন?”
আমি মাথা নাড়িয়ে মিন মিন করে বললাম,
–“জানি না”
তখনি ঘটলো একটি তাজ্জব ঘটনা। যা ছিল আমার ধারণার বাহিরে। ইউসুফ ভাইয়া হুট করে চরে বসলেন নৌকাতে। আর বৈঠা হাত চালাতে লাগলেন তিনি। তার এমন কাজের অবাক হয়ে গেলাম আমি। রীতিমত মুখ আমার হা হয়ে।তখনি বলল,,
–“হা করে আমায় না দেখে শাপলা দেখ। আর হে মুখ বন্ধ কর মশা ঢুকবে! আর এমনিতেও দু চারটা মশা ঢুকলে ঢুকবে চট করে গিলে ফেলবি!”
তার কথায় বলি পেল বহুত লোকটা বড়ই বজ্জাত। তার দিক খেয়েল বাদ দিলাম আপাদত।ইঞ্জয় করতে লাগি শাপলা বিলাস। তখনি ইউসুফ ভাই জিগ্যেস করলেন,,
–“শাপলা কি তোর প্রিয় ফুল?”
আমি মিষ্টি হেসে বললাম,,
–“হে”
তখন তিনি চেয়েছিলেন আমার দিক পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে। তার সেই গভীর বিলাই চোখের চাহনিতে শীতল হয়ে গেল আমার দেহ! আচ্ছা সে এমন ভাবে তাকাচ্ছে কেন? তার এই চাহনিতে না আমার প্রাণ হারায়।
ইউসুফ ভাই আমাকে পুরো চারটা রাউন্ড ঘুড়ালেন।তার সাথে কাঁটানো মুহূর্ত গুলো যেন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। ঘাটে নৌকা ভিড়াইলেন তিনি আর নামতেই ধরিয়ে দিলেন এক গুচ্ছো শাপলা ফুল।আমি আবারও অবাকের শেষ চুড়ায়।তখন তিনি বলে উঠেন,,
–” তোর ভাল লাগে তাই তুলে নিলাম।”
বলে তিনি এগিয়ে যেতে লাগলেন। তার যাওয়ার দিক তাকিয়ে আমি এখনো শক্ড। সাথে মনের মাঝে ভাল লাগার কিছু অনুভতি প্রজাপতির মতো ডানা মেলচ্ছে আর বলছে,,
–“হি লাইক’স ইউ কুহু! হি লাইক’স ইউ! নয়তো কি তোর জন্য পছন্দের ফুল তুলতো বল? নিশ্চয় তোর জন্য তার মনেও কিছু আচ্ছে!”
এসব ভাবতে ভাবতে শুনতে পেলাম লিয়ার কথা।সে ইউসুফ ভাইয়ার ডান হাত জড়িয়ে ধরে বলছে,,
–” আমিও চড়বো নৌকা। তুমি বৈঠা বায়বে। আর আমি মুগ্ধ নয়নে তোমায় দেখবো কতটা রোমান্টিক তাই না চল, চল আরে বাবা চলো না..!
লিয়া নেকা ভাবে এবস বলতে লাগলো। ইউসুফ ভাইয়ার হাত ধরে টানতে লাগলো। তাদের এই কাহিনী দেখে জ্বলে যাচ্ছে আমার মন, প্রান।কষ্ট লাগচ্ছে খুব।কিন্তু কেন লাগচ্ছে? আমি ও কি ভালবাসি? পছন্দ তো ১০০ বার করি! বাট উনি কি শুধু আমার ভাললাগা,আমার আবেগ? নাকি সত্যি আমর ভালবাসা! ভালবাসায় নাকি মানুষের অন্তর পুরে, আর এখন আমার পুরছে! তাহলে কি সত্যি!!!
–” হাত ছাড়ো!”
হঠাৎ বাজখাঁই ধমকে ভাবনা থেকে বের হয়ে আসলাম। সমানে তাকাতেই দেখি কাঁদ কাঁদ মুখে দাঁড়িয়ে লিয়া।রাঙ্গানিত চোখে তাকিয়ে তার দিক ইউসুফ! কি হলো ঠিক বুঝতে অক্ষম আমি! তখনি চেঁচিয়ে বলে উঠলো ইউসুফ ভাই,,
–“তোমার মন চাইলে তুমি চড় গিয়ে। আমাকে টানবে না খবরদার।”
লিয়া কাঁদ কাঁদ হয়ে বলল,,
–” কেন করছো ইউসুফ আমার সাথে এমন! তুমিতো এমন ছিলা না তাহলে? এখন আমার সাথে এমন করছো কেন? ”
তখনি ইউসুফ লিয়ার দু বাহুতে হাত রেখে ঝাকিয় দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল,,
–” নেকা কান্না করবা না আমার সামনে খবরদার। জানো কেন করছি? হুম! বোঝোনা না ফিডার খাও তুমি! যত সব আজাইরা মানুষ। আর আসবানা আমার সামনে! দেখলিই গা জ্বলে..!”
বলে ধপাধপ পায়ে চলে গেলেন তিনি। তখনি লিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আমার দিক। তারপর চোখের জল মুছতে মুছতে চলে গেল সে।আমি সেখানে হামলার মতো এখনো দাঁড়িয়ে। কি হলো কিছুই মাথায় ঢুকলো না আমার? আচ্ছা তারা কি রিলেশনে আছে? কোনো কিছু নিয়ে কি ঝগড়া বেঁধে? যদি সত্যি এমন হয়? তাহলে কিছুক্ষণ আগের কাটানো সময়গুলো ইউসুফ ভাইয়ের সাথে সব কিছু মিথ্যে ছিল? সেকি লিয়াকে জেলাস ফিল করার জন্যে আমাকে নৌকা চড়ালো? এসব ভেবেই বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব করতে লাগে আমার। সাথে যোগ হয় চোখের কোনে নোনা জল! সত্যি লাইফে সব কিছু নিয়ে বেশী স্বপ্ন দেখতে নেই! পরে তা যখন ভাঙ্গে তখন শব্দ হয় না ঠিকি! ভিতরে ভিতরে দুমড়ে মুচড়ে যায় সব!
চলবে,
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]