আমার গল্পে তুমি,পর্বঃ৫
খাদিজা আরুশি আরু
–ইন্দু, তোমার সিডিউলগুলো দেখে নাও।রেখে গেলাম, আমার একটু তাড়া আছে।
ইন্দু্র ঘরের দরজায় কড়া নেড়ে দরজার পাশের ওয়ারড্রবটার উপরে খামটা রাখতে রাখতে কথাটা বলেই বের হয়ে যাচ্ছিলো প্রলয়, ইন্দুর ডাকে ফিরে তাকালো…
–প্রলয়… দাঁড়াও, কোথায় যাচ্ছো? তুমি তো দেখে নিয়েছো, তাতেই হবে। আমার দেখার কোনো প্রয়োজন নেই।
–তবুও তুমি একটু দেখে নাও।
–না প্রলয়, তার প্রয়োজন নেই। তুমি আমার সঙ্গে ফরমা…
–প্রলয় বাবা, তোমারে বড়মা তার ঘরে ডাকছেন।
রামুর ডাকে থেমে যায় ইন্দু, প্রলয় ইতস্তত করে বলে,
–রামু কাকা, মামিকে বলো আমি আসছি।
বের হবার সময় ইন্দুর দিকে ফিরে আবার জিজ্ঞেস করে,
–ইন্দু তুমি কি সত্যিই দেখবে না?
–না দেখবো না, তুমি যাও। মা ডাকছেতো, নাকি শুনতে পাওনি?
–যাচ্ছি, কিন্তু পরে বলতে এসোনা যে কেনো তোমাকে জিজ্ঞেস করি নি!
–বলবো না, যাও তো। যত্তোসব, মেজাজ দেখাচ্ছে আমাকে হুহ…
রাগে ইন্দুর মাথার ব্যাথা করছে। প্রলয়ের এমন ব্যবহার সে চেয়েও সহ্য করতে পারছে না… ইন্দু গালদুটো রাগে ফুলছে, পেছন ফিরে একবার তাকালো প্রলয় তারপর মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
১৬
মনিরা চৌধুরি আর রায়হান সাহেব বসে আছে তাদের ঘরে, প্রলয় ঘরে ডুকতেই উঠে তার কাছে এগিয়ে যান মনিরা চৌধুরি। প্রলয় ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করে,
–মামা-মামী, কেনো ডেকেছো আমায়?
–আয়তো বাবা, বোস আমার কাছে। আর কতোদিন অপেক্ষা করবি বলতো, এবার ইন্দুটাকে সবটা বলে বিয়ে করে নে।
–না মানে মামী, ইন্দু আর আমি…
–তোর মামীকে আমি অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু তিনি বুঝতে নারাজ, এবার তুই তোর মামীকে বুঝা।
রায়হান সাহেবের কথায় রেগে যান মনিরা, চেঁচিয়ে বলেন,
–তোমার খালি বেশি কথা, কি নেই ইন্দুর!প্রলয়টাও চেনা জানা, আমাদের মেয়ে ওর সঙ্গে ভালোই থাকবে। তাছাড়া এখনতো প্রলয় ভালো চাকরিও করে, বউকে খাওয়াতেতো পারবে।
প্রলয়ের ঠিক কি বলা উচিত বা আধৌ কিছু বলা উচিত কি না ভেবে পায় না নে। তবুও ইতস্তত করে বলে,
–মামী তবুও ইন্দুর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এসব ঠিক হবে না।
মনিরা ধমকে বলে,
–তোরা বেশি বেশি করছিস, ইন্দুর মতকে এতো প্রাধান্য কেনো দিচ্ছিস? মেয়ে মানুষ, বিয়ে হলে এমনেই সব মেনে নেবে।আমাদের সময়তো তাই হতো, তোদের সবকিছুতে বাড়াবাড়ি।
রায়হান সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
–আমাদের সময় আর এ সময় এক না মনিরা, তুমি বুঝার চেষ্টা করো ব্যপারটা।
–মামা, মামীতো একজন মা…বকো না এভাবে।
–তোর মামাতো খালি আমার দোষই দেখে, মেয়ের দোষতো তার চোখেই পড়ে না। জন্ম দিয়েছিই তো এমন ঢিড মেয়েকে, কতো সখ ছিলো মেয়েকে বিয়ে দেবো। কিন্তু না, সে তো ওই ছেলের অপেক্ষায় বৈরাগী হবেন। আমি বলে দিচ্ছি এই মেয়ে একদিন আমাদের…
কিছু একটা পড়ার শব্দে থেমে গেলো মনিরা, দরজার দিকে তাকিয়ে বললো,
—কি একটা পড়লো নাম কে বাইরে? এই কে আমাদের কথা শুনছে, নিশ্চয়ই এই চাকরগুলো! আজই সবকটাতে বিদায় করবো।
মনিরা, রায়হান সাহেব আর প্রলয় একত্রে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। দরজার সামনে ইন্দুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রায়হান সাহেব বললেন,
–ইন্দু মা, তুই! চুপ করে আছিস কেনো?কথা বল…
ইন্দু রাগে কাঁপছে, কোনো কথা না বলেই সে নিজের ঘরের দিকে হাঁটতে শুরু করলো। পিছু ডাকলো রায়হান সাহেব তবে কোনো কাজ হলো না…
–ইন্দু মা…
–মামা, তুমি যেও না। আমি দেখছি, ও এখন তোমাদের কথা শুনবে বলে মনে হয় না।
প্রলয় ইন্দুর পিছে যেতেই রায়হান সাহেব রাগী স্বরে বললেন,
–সব তোমার জন্য হয়েছে মনিরা, বলেছিলাম মেয়েটাকে জোর না করতে।সবেতো বাড়ি ফিরেছিলো…
–আমি ওর মা, মেয়ের ভালোই চাই আমি।ও সংসারি হলে আমার পড়ান জুড়াবে সেটা বুঝো না কেনো? সবসময় খালি দোষ ধরা।
১৭
–ইন্দু… কি করছো কি তুমি? পাগল হয়েছো…
ইন্দু আলমারি থেকে সব জিনিস বের করে ঘরের মধ্যে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছে, নিজের প্রশ্নের কোনো উত্তর না পেয়ে প্রলয় রাগীস্বরে বললো,
–ইন্দু আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে!
–আহ…
বেকায়দায় একটা কাঁচের টুকরোতে হাত কেটে যায় ইন্দুর, সম্ভবত কসমেটিকস এর সঙ্গে রাখা ছোট আয়নাটা কোনোভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলো… ইন্দুর আর্তনাদ শুনে প্রলয় এগিয়ে এসে ওর হাতটা ধরে বিছানায় বসায়। শান্তস্বরে বলে,
–ইন্দু, তুমি কি বলো তো! চুপ করে বসো এখানে…। কেনো করছো এমন, আচ্ছা কতোদিন এভাবে পালিয়ে বেড়াবে বলো তো? তুমি যা চাও সবসময় সেটা হবে তা তো নয়, তাই বলে পরিস্থিতিকে মোকাবেলা না করে পালিয়ে যাবে? এই তুমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছো, এই তুমি সাহসী? এই তুমি নিজেকে সামলাতে শিখেছো?
ইন্দু চোখের কোনে জমা জল লুকাবার ব্যার্থ চেষ্টা করে বললো,
–তুমিতো জানো আমি এ বাড়ি ছেড়েছি সেটা তির্থের জন্য নয় বরং মায়ের জন্য।কারন মা জোর করে ওই বয়সে আমার বিয়ে ঠিক করেছিলো, আজ এতো বছর পর বাড়ি ফিরলাম তাও মা সেখানেই আটকে আছে!
–কতোদিন এভাবে পালিয়ে বেড়াবে ইন্দু?
–তুমি বলোতো মা কেনো এমন করে আমার সঙ্গে?
–তোমার কি মনে হয়, তোমার মা বললেই আমি বিয়ে করবো তোমাকে?
–না, আমি জানি তুমি আমাকে বিয়ে করবে না।
–তাহলে চলে যাচ্ছিলে কেনো?
–তুমি না করো অন্য কেউতো করবে।
–করবে না, আমি বলছি।
–কথা দিচ্ছো?
–দিচ্ছি।
–তাহলে আমার জিনিসগুলো একটু আলমারিতে রেখে দেবে? আমার হাতে অনেক ব্যাথা।
এ মুহূর্তে ইন্দুকে দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে প্রলয়ের, সামান্য হাত কেটে যাওয়ায় যে এমন কাহিল হয়ে পড়ে তার কি রাগ করা সাজে!
–দিচ্ছি, শুনো…
–বলো…
–তানিয়াকে বলবে তোমাকে খায়িয়ে দিতে, ব্যাগতো গোছাচ্ছিলে না মনে হচ্ছিলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ করছো!
–সেরকম কি হয়েছে, সামান্য হাতইতো কেটেছে।
–হ্যাঁ, সামান্য হাতই তো। ফ্লোরে রক্ত ছিটিয়ে আছে, তার জন্য সামান্য হাতকাটা। ইন্দু তুমি একটা যা তা…
–আমি কিছুনা, তোমার কাজ শেষ করে তুমি যাও।
–যাচ্ছি বাবা, যাচ্ছি।
–আমি তোমার কোন জন্মের বাবা!
প্রলয় মুচকি হাসলো তারপর বললো,
–ভেবে বলবো, নিজের খেয়াল রেখো… আসছি।
–ভেবে বলবে মানে! প্রলয় আমি তোমাকে…
ইন্দু রেগে ঘরের বাইরে পা রাখতেই তানিয়ার সঙ্গে ধাক্কা খেলো, প্রলয় ততোক্ষণে বেরিয়ে গেছে। তানিয়া মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
–তোমাকে কিরে ইন্দু?
–তানি তুই! কিছু না, সেটা আমার আর প্রলয়ের ব্যাপার। পারসেনাল মেটার…
–পারসোনাল! তাও তোর আর ভাইয়ের!হাসালি, ও তো তোর অধীনস্ত কর্মচারী।কর্মচারীর সঙ্গে মালিকের ব্যক্তিগত কথা থাকতে নেই, জানিস না?
ইন্দু বিরক্তি নিয়ে বলে,
–জ্ঞান দিচ্ছিস? তাহলে শোন, তোর জ্ঞান শুনবার সময় আমার নেই।
–হাত কেটেছিস দেখছি, তা কে ব্যান্ডেজ করলো? ভাই?
–হুম।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো তানিয়া, মৃদুস্বরে বললো,
–যে মানুষটা তোর এতো যত্ন করে কষ্ট হয়না তাকে কাঁদাতে?
–না হয় না।
–তোর সঙ্গে কথা বলাটাই বেকার!
–তো বলছিস কেনো? চলে যা।
–হ্যাঁ, হ্যাঁ যাচ্ছি।
–যা না যা, ধরে রেখছি নাকি!
–তা রাখবি কেনো, আমি তো পর!
–শুরু হয়ে গেলো, চিঁচকাঁদুনীর নেকা কান্না উফফফ…
–এই একদম আমাকে চিঁচকাঁদুনি বলবি না!
–কি হচ্ছেটা কি?তোরা চিৎকার করছিস কেনো?
ইরফান নিজের ঘরে বসে কাজ করছিলো, ইন্দু আর তানিয়ার চিৎকার শুনে কাজ ফেলে আসতে হলো তার। ইরফারকে দেখে তানিয়া অভিযোগের সুরে বলে,
–এই তুমি দেখো না ইন্দু আমাকে চিঁচকাঁদুনি বলছে।
–ভাই, ও আমাকে ঝগরুটে বলেছে, কু… কু… কুটনি বলেছে, রোগা পটকা বলেছে…
ইন্দুর কথা শুনে তানিয়া চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। রেগে বললো,
— এই কখন বললাম আমি এসব?
–তাহলে আমি কখন তোকে চিঁচকাঁদুনি বলেছি হুম?
–ওগো স্বামী, তুমি ওর কথা বিশ্বাস করঁ না। ও মিথ্যে বলছে…
নাটকীয় সুরে বললো তানিয়া। ইন্দু জোর দিয়ে বললো,
–না ভাই, তানি মিথ্যে বলছে…
ইরফান বিরক্ত হয়ে চেচিয়ে বলে,
–না, না তোরা না… আমি মিথ্যে বলছি।উফফ… এই তানিয়া চলো তো!
–না, এর বিহিত না করে আমি যাবো না।
–ভালোয় ভালোয় যাবে নাকি পাঁজাকোলা করে নিয়ে যাবো?
–না থাক, আমি যাচ্ছি চলো।
–যাবিই তো, হেরে গেছিস যে…হুহ।
ইন্দু্ ফোঁড়ন কাটতেই পিছন ফিরে তাকালো তানিয়া, দাঁত কটমট করে বললো,
–ইন্দু তুই…
–তানিয়া, চলো…
–তুমি… তুমি আমাকে বকলে? আমি এক্ষুণি মাকে বলবো, ও মা…
তানিয়াকে এ বাড়িতে কেউ কিছু বললেই সে মনিরার কাছে বিচার দেয় আর মনিরা সামনের মানুষটার কোনো কথা না শুনেই তাকে বকে। তানিয়ার ন্যাকা কান্না দেখে ইরফান পিছু ডাকে…
–আরে তানিয়া…
তানিয়া আর ইরফানের কান্ড দেখে ইন্দু হাসতে হাসতে শেষ। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
–উফ, কতোদিন পর নিজেকে ফ্রেশ লাগছে! যাই একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি…
১৮
রাস্তার একপাশ দিয়ে চুপচাপ হেঁটে চলেছে ইন্দুবতী, হঠাৎ কিছু একটা দেখে থমকে যায় সে! সামনেই তির্থ দাঁড়িয়ে আছে, তবে সে একা নয় সঙ্গে নিশিতাও আছে। নিশিতা ওই মেয়ে যাকে স্কুল জীবনে সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করতো ইন্দু, তার কারন অবশ্য তির্থই ছিলো।আজ এতো বছর পর তির্থের পাশে নিশিতাকে দেখে ইন্দুর যেনো কথা বলার ইচ্ছেটাই চলে গেলো, উল্টো দিকে ঘুরে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো তারপর জোরে হাঁটা শুরু করলো। তবে শেষ অবদি আর পার পেলো না, নিশিতা চিৎকার করে ওকে ডাকতে লাগলো। সঙ্গে তির্থকেও নিয়ে এলো!
–ইন্দুবতী… এই ইন্দুবতী দাঁড়াও…
না চাইতেও দাঁড়িয়ে পড়লো ইন্দু। নিশিতা তির্থর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
–তির্থ তুমি ইন্দুর সঙ্গে কথা বলবেনা?
তির্থ ইতস্তত করে বললো,
–হাই ইন্দুবতী, কেমন আছো?
–ভালো, তুমি কেমন আছো?
ওদের দায়সারা ককথোপকথন দেখে নিশিতা বিরক্ত হয়ে বলে,
–উফফ…ইন্দু! তোমরা কি বলোতো? এতো বছর পর দেখা বলে তুই থেকে তুমি!
–না মানে…
–কোনো মানে টানে নেই… শোনো, স্কুলের পুণঃমিলনী তে আসছো তো?
–হুম…
–আমরাও আসছি… আচ্ছা চলোনা কোথাও বসে কফি খাই আর আড্ডা দেই।কি তির্থ, যাবে না?
–হুম, চলো।
–চলো ইন্দুবতী…
কি ভালো মন নিয়ে বেরিয়েছিলো ইন্দুবতী, অথচ আজই এটা হতে হলো!তির্থের পাশে মেয়েটাকে সহ্য হচ্ছে না ইন্দুর, আগে হলে এতোক্ষনে সব চুল ছিঁড়ে নিতো নিশিতার। তবে এখন এরকম কিছুই করবে না ইন্দু, কারন তার যে তির্থের উপর আগের মতো আর কোনো অধিকার নেই। তবে হ্যাঁ, তার দিক থেকে অধিকারবোধটা আজো সেরকমই আছে!
১৯
–তানিয়া, তানিয়া…
সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গেই ইরফানের গলার আওয়াজ শুনে অবাক হয় তানিয়া। এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
–তুমি দুপরে খেয়ে গেলে আবার এখনই ফিরে এলে যে?
–ইন্দু কি বলেছে মনে নেই? জলদি বাড়ি ফিরতে হবে… টাকাই সব নয়, পরিবার সবার আগে। তাই পরিবারকে সময় দিতে চলে এলাম, তা কোথায় আমার ডানপিটে বোনটা?
–জানি না, দাঁড়াও ডাকছি।ইন্দু… কইরে…
–বউদিদি, মা জননীতো বাড়ি নেই গো।বাইরে গেছে।
–বাইরে, কখন বেরোলো?
–এইতো দুপরের পর পর।
–ফিরবে কখন কিছু বলেছে? বা কোথায় গেছে?
–না গো বউদিদি, কিছু বইলা যায় নাই।
–আচ্ছা রামু কাকা, তুমি তোমার কাজে যাও।
–চিন্তা করো না, দেখো বোন সময়মতো চলে আসবে।
–মা জানতে পারলে খুব রাগ করবে বুঝলে।
–করলে আমি বুঝবো, এখন ঘরে চলো।
কফিশপে বসে নিশিতা ইন্দুকে জিজ্ঞেস করে,
–তা ইন্দুবতী… তুমি কবে ফিরলে?
–এইতো দু’দিন হলো।
–একটা অটোগ্রাফ দাওনা প্লিজ। জানো তো তির্থ তোমার সব গান শোনে। তুমি যেখানে যেখানে গান করতে যাও সেখানে লাইভে তোমাকে দেখতে যায়, আসলে তোমাকে খুব ভালোবাসেতো। কি তির্থ ভুল বললাম?
তির্থ প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললো,
–আমি গান ভালোবাসি তাই শুনতে যাই।তাছাড়া আমি আরো অনেক গায়ক গায়িকার গানই শুনতে যাই, এমন না যে শুধু ইন্দুর গান শুনি।
–আমার হয়ে গেছে নিশিতা, আমি তাহলে উঠি আজকে।
তির্থর ব্যবহারটা ইন্দুর মনে কাঁটার মতো বিধছে। এখান থেকে পালাতে পারলেই সে বাঁচে…
–কি যে বলো, এক সঙ্গে যাবো সবাই।বসো না আরেকটু…
–না গো, আমার কাজ আছে। আজ আসি, আর এই যে কফির বিলটা!
–দাঁড়া ইন্দু!
কথাটা শুনে কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলো ইন্দুবতী, কতো বছর পর এই ডাক শুনলো সে। মনের গহীনে জমে থাকা অভিমানের পাহাড় গলে চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল, চোখ মুছে ফিরে তাকালো ইন্দু। নিঃষ্পলক তাকিয়ে আছে তির্থের চেহারার দিকে, চেহারাটা আগের মতো নেই। খোঁচা খোঁচা চাপ দাঁড়ি, চেহারায় প্রাপ্তবয়স্কের মতো ভাব আছে একটা। তবে তাকে দেখে আজ আবারো প্রেমে পড়ে গেলো ইন্দুবতী!
–তোর কি মনে হয়, আমি ফকির? তোর মতো কাড়ি কাড়ি টাকা কামাই না বলে তিন কাপ কফির দাম দিতে পারবো না?এতোটা নিকর্মা ভাবিস এখনো আমাকে?
কিংকর্তব্যবিমূঢ় ইন্দুর মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো,
–যা বাবাহ! আমি কখন বললাম যে তুই নিকর্মা?
–তাহলে টাকা দিয়ে এমন হুড়মুড় করে চলে যাচ্ছিলি কেনো? আমি যে এসেছি একবারো দেখেছিস ঠিক করে আমাকে?
–শোন তুই যেমন অনেক বছর পর এসেছিস তেমন আমিও এসেছি, সুতরাং তোকে আলাদা করে দেখতে হবে কেনো? তুই কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী হুম?
ইন্দুর কথায় তেড়ে আসে তির্থ, চেঁচিয়ে বলে,
–কিহ, এতো বড় কথা! তুই শুনিস নি আমি তোর সব অনুষ্ঠানে গিয়েছি?
–তো? তা করে কি আমাকে উদ্ধার করেছিস? অনুষ্ঠান দেখে কি হবে, আমার সঙ্গে দেখাতো আর করিস নি।
–তুই মনে হয় অনেক করেছিস, জেদি মেয়ে একটা!
–হ্যা করিনি, তো? দেখা করতে চাই নি বলেইতো দশ বছর পর ঢাকা ফিরেছি, স্কুলে গিয়ে লোকজনকে ঘুষ দিয়ে পুণঃমিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করিয়েছি!
–কিহ, তুই ঘুষ দিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজ করিয়েছিস!
মাথায় হাত দিয়ে মিনমিন করে তির্থ বললো,
—এখনো মাথায় কুবুদ্ধি ঘুরে তোর…
–হ্যাঁ ঘুরে, আর ভবিষ্যতেও ঘুরবে।
দুজনের ঝগড়া দেখে নিশিতা অধৈর্য্য হয়ে বলে,
–কি করছো কি তোমরা? থামবে প্লিজ, তির্থ চলো তো…
নিশিতার কথায় ইন্দু চেঁচিয়ে বলে,
–তির্থ চলো মানে! তুমি যাও, তির্থ যাবে না। নাস্তা কোথাকার…
–খবরদার ইন্দু, নাস্তা নয় নিশিতা। এই তুমি বড় গাইকা, এই তোমার ব্যবহার!
–নিকুচি করেছে ব্যবহারের, আমার তির্থের সঙ্গে তোর কি হুম! তোকে তো আজ আমি…
–কি করছিস কি ইন্দু, এখানে চুলোচুলি করবি নাকি!
ইন্দুকে কোনো মতে আটকালো তির্থ, সে এখনো রাগে ফুঁসছে। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতেই বললো,
–দরকার পড়লে তাই করবো, কতো বড় সাহস… আমার আর তোর মাঝে আসে!
–লিসেন ইন্দুবতী, আমি তির্থকে ভালোবাসি!
–কিহ, আজকে আমি তোকে! তির্থ ছাড় বলছি, নামা আমাকে…
–তির্থ চলে যাচ্ছো যে, আমি কি করবো?
–তুমি এখন বাসায় যাও নিশিতা, প্লিজ…
–তির্থ…!
চলবে…