আমার গল্পে তুমি,পর্বঃ৮ (অন্তিম পর্ব)

0
1015

আমার গল্পে তুমি,পর্বঃ৮ (অন্তিম পর্ব)
খাদিজা আরুশি আরু

৩২

দেশের সব বড় বড় লেখকদের আমন্ত্রন করা হয়েছে, প্রেস মিডিয়াতে চারদিক ছেয়ে আছে। একটাই আকর্ষন! লেখক মাহমুদুল হাসান!

–আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, এখানে সবাই ভিড় করে ফেরেছে। এ যেন এক মিলন মেলা! লেখক, কবি, সাহিত্যিক এবং ভক্তদের মিলনস্থল। সবার আগ্রহ একটাই, কেমন দেখতে হবে লেখক মাহমুদুল হাসান! আজ দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত তিনি ছদ্মনামে লিখে গেছেন, তবে কি এমন বিশেষ কারনে তিনি তার নতুন বইটির শেষ অংশে তার পরিচয় দিলেন! তবে কি এ উপন্যাস তার জীবনে কোনো বিশেষ মানুষকে নিয়ে লেখা! শুরু থেকে শেষ অবদি সবটা জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমি মিরাজ, আছি লেখক মাহমুদুল হাসান ও তার “আমার গল্পে তুমি” বইয়ের সঙ্গে, বিচিত্রা সংবাদ।

স্টেজে উপস্থাপনার জন্য একজন এলেন।সবার দৃষ্টি তার দিকে স্থির। লোকটি স্টেজের ডানদিকে রাখা মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বলা শুরু করলেন,

–অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, লেখক মাহমুদুল হাসান আমাদের মধ্যে চলে এসেছেন। যেহেতু এই অনুষ্ঠানটা ওনাকে কেন্দ্র করে তাই আমি ওনাকে স্টেজে আমন্ত্রন জানাচ্ছি। স্যার, আপনি দয়া করে স্টেজে এসে আমাদের নিজের এবং আপনার “আমার গল্পে তুমি” বইটার সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন। এখানে উপস্থিত সবাই আপনার কথা শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।

ভিড়ের মধ্য থেকে নীল পাঞ্জাবী পরা এক সুদর্শন যুবক স্টেজে উঠে এলেন, সবার দৃষ্টি তার দিকে স্থির। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, নির্লিপ্ত হাসি, চোখে চশমা, চেহারায় কাঠিন্য। এ যেনো এক সুদর্শন মানব রূপ!
স্টেজে উঠার আগে তিনি বয়োজেষ্ঠ্য লেখকদের পা ছুঁয়ে সালাম করেন। তারপর স্টেজে উঠে সবার উদ্দেশ্যে কথা বলা শুরু করেন,

–আসসালামুআলাইকুম, উপস্থিত সবাইকে এ অনুষ্ঠানে আসার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা সবাই আমার সফলতার পথের সঙ্গী হয়েছেন, আমাকে প্রতিনিয়ত উৎসাহিত করেছেন তার জন্য আমি আপনাদের নিকট চির কৃতজ্ঞ থাকবো। উপস্থিত সবার মাঝে অনেকেই আছেন যারা আমার নিয়মিত পাঠক।আপনাদের উদ্দেশ্যে আমি এটাই বলবো যে, পাঠক ব্যতীত লেখকের লেখা মূল্যহীন। আপনারা আছেন বলেই আজ আমার মতো সামান্য লেখক এমন একটা মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছে। আপনারা আছেন বলেই আমি প্রতিনিয়ত লেখার অনুপ্রেরনা পাচ্ছি, আপনাদের মনে জায়গা করে নিতে পেরে আমার নিজেকে স্বার্থক মনে হচ্ছে… ধন্যবাদ।

স্টেজ থেকে নেমে যাচ্ছিলো মাহমুদুল হাসান, কিন্তু বাধ সাধলো সাংবাদিক মিরাজ। প্রশ্ন করলো,

–স্যার, এখনই নামবেন না। আপনাকে কিছু প্রশ্ন করার আছে…
–জ্বী অবশ্যই। বলুন, আমি উত্তর দেবার চেষ্টা করবো।
–আপনি বিগত পাঁচ বছরে অনেক গল্প উপন্যাস লিখেছেন, তবে কোনোটাই প্রেম সম্বন্ধীয় নয়। তাহলে হঠাৎ প্রেম নিয়ে কেনো লিখলেন?
–দেখুন, আমিতো পণ করিনি যে প্রেম নিয়ে লিখবো না। আর হ্যাঁ, “আমার গল্পে তুমি” কিন্তু প্রেমঘটিত উপন্যাস নয়। এখানে একজন প্রেমিক পুরুষ তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে যতো কল্পনা জল্পনা করেছে তার সামান্য প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে। এক তরফা অনুভূতি বলা যেতে পারে…
–আপনি আগে যতো বই লিখেছেন সেখানে ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন, কিন্তু কেনো? আর যদি ছদ্মনামই ব্যবহার করবেন তবে এ বইয়ে কেনো নিজের পরিচয় দিলেন?
–মানুষ ধরেই নামকরা লেখক হয়ে যায় না, সময় লাগে। আমি ছদ্মনামে সুনাম অর্জন করতে চেয়েছি তাই এতোদিন সবার সামনে আসিনি। কিন্তু আমার মনে হয়েছে এবার আমার সবার সামনে আসা উচিত, তাই এসেছি। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত সিদ্বান্ত।
–এতো বড় একটা অনুষ্ঠানে এমন সাধারন একটা নীল পাঞ্জাবী কেনো পরে এসেছেন?
–পোশাক কখনো মানুষের পরিচয় হতে পারে না, আমি স্যুট পরে আসলেও যে সম্মানটা পেতাম এ সামান্য পাঞ্জাবীতেও আমাকে সমানভাবেই সম্মানিত করা হবে। তাছাড়া এ পাঞ্জাবীটা আমাকে আমার প্রিয় মানুষ দিয়েছিলো, তার প্রিয় রং নীল। আমার কাছে ভালোবাসার রং লাল নয় বরং নীল, গাঢ় নীল!
–আপনার এ উপন্যাস কি বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে?
–হ্যাঁ।
–ঘটনাটা কার জীবনের? আপনার?
–সেটা নাহয় অজানাই থাকলো।
–আপনার উপন্যাসের নায়িকা ইন্দুবতী আর গায়িকা ইন্দুবতী কি কোনোভাবে সংযুক্ত? এমন নয়তো যে আপনার গল্পের এই তুমি আর কেউ নয় সয়ং গায়িকা ইন্দুবতী!

সাংবাদিক মিরাজের প্রশ্নের বিপরীতে কোনো উত্তর না পেয়ে সে আবার জিজ্ঞেস করলো,

–কি হলো চুপ করে আছেন কেনো? উত্তর দিন!

লেখক সাহেব মুচকি হেসে বললেন,

–আপনি আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন, আমি তো উত্তর দিতে বাধ্য নই সাংবাদিক সাহেব।

ভিড়ের মধ্যে থেকেই একটা গলার স্বরে ভেসে এলো, গলার স্বরে অনুসরন করে উপস্থিত সবাই সেদিকে তাকালো,

–এটা বললেতো চলবে না মি.হাসান। আমাকে নিয়ে এতো বড় একটা উপন্যাস লিখে ফেললেন আর সত্যটা স্বীকার করতে ভয় পাচ্ছেন! ভেরী বেড…
–ইন্দুবতী তুমি!

স্টেজে উঠে আসতে আসতে ইন্দু বললো,

–তো কি বলে ডাকবো? মি.হাসান নাকি প্রলয়?

প্রলয়ের ঠিক কি বলা উচিত বুঝতে পারছে না সে, তাকে মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিটিমিটি হাসছে ইন্দু। কাছে এসে ক্ষীণস্বরে জিজ্ঞেস করলো,

–ভুত দেখছো?
–মানে!
–তাহলে এমন হা করে আছো কেনো? চলোতো…
–কোথায়?
–কোথায় আবার, চৌধুরি নিবাস। ইক্সকিউজ আস অডিয়েন্স, আজকে আর আপনাদের প্রিয় লেখক আপনাদের সময় দিতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, উনি নিশ্চয়ই আপনাদের সঙ্গে কথা বলবেন, দেখা করবেন। তবে সেটা আজ নয়, অন্য কোনো দিন। আজকে উনি ওনার উপন্যাসের নায়িকাকে সময় দেবেন। আপনারা এখানে এসেছেন, মূল্যবান সময় দিয়েছেন,তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। চলো প্রলয়…

প্রলয় ইন্দুকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

–আমি যাবো না।
–তুমি যাবে, তোমার ঘাড় যাবে।

জোর করে প্রলয়কে গাড়িতে উঠালো ইন্দু, ড্রাইভার গাড়ী চালাচ্ছে। পেছনের সিটে ইন্দু আর প্রলয় বসা। ঠিক এ ভয়েই প্রলয় এতোদিন সবার সামনে আসে নি। যেই এলো ওমনি ইন্দুর কাছে ধরা খেয়ে গেলো, ইন্দুটা গায়িকা না হয়ে গোয়েন্দা হলে আরো ভালো নাম কামাতো নিঃশ্চই।

–ড্রাইভার, পৃহার স্কুলের সামনে গাড়ীটা রাখবেন। ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরবো।

গাড়ী একটা স্কুলের সামনে এসে দাঁড়ালো।মিষ্টি একটা বাচ্চা মেয়ে দৌঁড়ে এসে গাড়ীর গেট খুললো। তারপর ইন্দু-প্রলয়ের মধ্যখানে বসে পড়লো। প্রলয় বেশ কিছুক্ষণ যাবত পৃহাকে পর্যবেক্ষণ করে জিজ্ঞেস করলো,

–ও কে?
–ও পৃহা, ভাইয়ের মেয়ে। পৃহা মামনি, এটা হলো তোমার প্রলয় আংকেল।
–ও… এবার বুঝেছি পিন্নি। এটা ওই আংকেলটা, যার জন্য তুমি…
–চুপ, একদম চুপ!
–ইন্দু, বাচ্চাটাকে এভাবে বকছো কেনো? থাক পৃহা মামনি, তুমি কেঁদো না। আংকেল তোমাকে অনেক অনেক চকলেট দিবো।
–সত্যি! তুমি খুব ভালো আংকেল। পিন্নি পঁচা।

পৃহার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে ইন্দু রাগীস্বরে বললো,

–তবেরে! আংকেলকে পেয়ে পিন্নি পঁচা হয়ে গেলো!তোকে না আজকে…
–পিন্নি প্লিজ কাতুকুতু দিও না, যাও তুমি ভালো। পিন্নি…

পুরোটা পথ পৃহা আর ইন্দুর দুষ্টুমি দেখে কাটিয়ে দিলো প্রলয়, ইন্দুকে আজ আগের থেকেও বেশি সুন্দর আর প্রানচঞ্চল লাগছে তার কাছে। প্রতিবার যেনো প্রলয় এক নতুন ইন্দুকে আবিষ্কার করে!

৩৩

চৌধুরি নিবাসের সামনে গাড়ী থামলো। শহরটা বদলেছে, সময় বদলেছে। তবে চৌধুরি নিবাসের বাহির আর ভেতর সবটাই আগের মতো করে সাজানো। যেমনটা সেদিন প্রলয় দেখে গিয়েছিলো! অবাক হয়ে প্রলয় জিজ্ঞেস করলো,

–আজ কি কারো বিয়ে ইন্দু?
–এতো প্রশ্ন কেনো করো বলোতো, ভতরে চলো। গেলেই সবটা জানতে পারবে।

ভেতরে যেতেই তির্থের মুখোমুখি হয় প্রলয়, তার কোলো দু-তিনমাসের ছোট্ট একটা বাচ্চা। তবে কি বাচ্চাটা ইন্দুর!ব্যথাগুলো যেনো আবার দলা পাকিয়ে প্রলয়কে চেপে ধরছে, তবে কি ইন্দুবতী নামক ব্যধি থেকে তার মুক্তি নেই! ইন্দুকে দেখেই এগিয়ে এসে তির্থ বলে,

–উফ… ইন্দু তুই এসেছিস! বাঁচালি রে… নে না এই ট্যাও ট্যাও টা কে কোলে!
–দে আমাকে। দেখলি, আমার কোলে আসতেই শান্ত হয়ে গেছে। ওলে আমার সোনা বাবাটা! কি কাঁদছিলে কেনো? বাবাকে জ্বালানো হচ্ছে? ওরে পাঁজি!এখন মুচকি মুচকি হাসা হচ্ছে তাই না?
–ইন্দু! ও তোমার আর তির্থের সন্তান?
–নাশতা! এই নাশতা…
–চেঁচাচ্ছ কেনো ইন্দু! আর এটা নাশতা নয় নিশিতা।

মুচকি হাসে ইন্দু তারপর গম্ভীরস্বরে বলে,

–সে যাই হোক, আমি অনেক চটে গেছি।
–কেনোরে ইন্দু!

তানিয়াকে দেখে অবাক হয় প্রলয়, প্রশ্ন করে,

–তানিয়া তুই আজো এ বাড়িতে!
–বারে, আমার সংসার ফেলে কই যাবো আমি! কি হলো কি বলবিতো ইন্দু?

অভিমানী সুরে ন্যাকা কান্না কাঁদতে কাঁদতে ইন্দু বলে,

–শোনো তবে তোমরা! আমার হবু বর আমাকে তির্থের বউ আর তার বাচ্চার মা বানিয়ে দিচ্ছে। তুমি বলো নাশতা, আমাকে তির্থের বউ মনে হয়? নাকি তোমার কিউটু টাকে আমার বেবি মনে হয়? তোমার বর আমার ঘাড়ে চাপানোর ষড়যন্ত্র করছে প্রলয়, ভেরী বেড!
–তাইতো! প্রলয় সাহেব, এতো ভারী অন্যায়।ক্ষমা চান…

নিশিতা প্রলয়ের সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে কথাটা বলে, তার কথা শেষ হতেই তানিয়া বলে,

–হ্যাঁ ভাই ক্ষমা চেয়ে নে। হবু বউয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ায় লজ্জার কিছু নেই।
–কি হচ্ছে কি এসব! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কিসের হবু বর, কার বর! আর কে কার বউ, কে কার বর কিছুই তো বুঝতে পারছি না।

উপস্থিত সবাই ঠোঁট টিপে হাসছে, ইন্দু রাগে গজগজ করতে করতে বললো,

–মাথা মোটা হলে এমনই হবে, যত্তোসব।
–আরে ইন্দু! চলোতো নিশিতা ইন্দুর কাছে যাই!
–তাই চলো তানিয়া, যা জেদ মেয়েটার!

ওরা চলে যেতেই তির্থ প্রলয়কে বলে,

–প্রলয়, তুমি এসে বসোতো। আমি তোমাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি।

প্রলয় অধৈর্য্য হয়ে বললো,

–দয়া করে বলো, আমি আর এ মানসিক চাপ নিতে পারছি না তির্থ!
–সেদিন তুমি যা দেখেছো সবটা মিথ্যে ছিলো। সেদিন ইন্দু আমার জন্য নয়, তোমার জন্য বউ সেজেছিল। সেদিন যদি একবার বলতে যে তুমি ওকে ভালোবাসো তবে এ পাঁচ বছরের দুরত্ব তোমাদের মাঝে আসতো না। ইরফান ভাইয়া বিয়েতে রাজি হয়েছিলো ইন্দুর কথায়। কারন ও জানতো তানি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ভাইয়ার বিয়ে দেখতে পারবে না, শেষ মুহুর্তে তাই হলো। ওদের সংসারটা বেঁচে গেলো। বাকি রয়ে গেলাম আমি আর নিশিতা, মেয়েটা বরাবরই আমাকে ভালোবাসতো। তাই অবশেষে ওকে বিয়ে করে নিলাম। সবটা আমি, ইন্দু, ইরফান ভাই, নিশিতা জানতাম… কেবল তুমি আর তানি জানতে না।
–তাহলে পৃহা!
–মিরাক্কেল হয় শুনেছোতো, তাই হলো।ওদের বিয়ের পরে দু’মাসের মাথায় সুসংবাদটা পেলাম। তানির বাচ্চাটা পৃথিবীতে এলো, চার বছরের হলে কি হবে, স্কুল যাব বলে বায়না ধরলো। তাই ইন্দু ওকে কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে ভর্তি করে দিলো।
–যাক আলহামদুলিল্লাহ।
–প্রলয়, আজ এবাড়ি সাজানো হয়েছে তোমার আর ইন্দুর বিয়ের জন্য। মেয়োটা তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করে গেছে। আর তুমি ওকে কখনো কিছু বলোনি। তাই বলছি, বিয়েটা করে নাও। তারপর নাহয় বলে দিও, কতোটা ভালোবাসো তুমি তোমার ইন্দুবতীকে!
–ইন্দুতো তোমাকে ভালোবাসতো তির্থ!
–যার কাছে প্রলয়ের মতো মানুষের সীমাহীন ভালোবাসা আছে তার কাছে তির্থের ভালোবাসা মূল্যহীন। তুমিই বলো ভাই, গভীর সমুদ্রে ডুব দেয়ার সুযোগ পেলে কেউ পুকুরে ডুব দেয়! তুমি হলে ভাই সেই গভীর সমুদ্র। তৈরি হয়ে নাও, গেস্ট রুমে তোমার পোশাক রাখা আছে। চেনোতো গেস্ট রুম?
–এবাড়ির প্রতিটা কোনা আমার নখদর্পনে।
–তাহলেতো হয়েই গেলো, যাও তৈরি হয়ে নাও।

তির্থ চলে যেতে নিলে পিছু ডাকে প্রলয়,

–তির্থ!
–কিছু বলবে?
–আসার পর থেকে মামা-মামীকে দেখছি না যে! আর ইফু…
–ওনারা এখানে থাকেন না, তানিয়ার প্রতি আন্টির ব্যবহারের কারনে আংকেল যথেষ্ট লজ্জিত ছিলেন। তাই সবটা ঠিক হবার পর আন্টিকে নিয়ে গ্রামে চলে যান। তারপর আর ফিরেন নি, তিনি চান না আন্টির জন্য তার সন্তানদের জীবনে আর কোনো প্রকার জটিলতা বাড়ুক। তবে প্রতি মাসে দু’বার করে ভাইয়া আর ইন্দু ওনাদের দেখে আসেন। যত যা’ই হোক বাবা মা তো! ভাইয়া কিছু কাজে বাইরে আছেন, ফিরতে দেরী হবে… আছোই তো, দেখা হয়ে যাবে। এখন তুমি যাও, তৈরি হয়ে নাও। রেজিস্টার এবং কাজী সাহেব এলেন বলে।
–ধন্যবাদ তির্থ।

৩৪

আজ ইন্দুকে ঠিক সেদিনের মতো করেই সাজানো হয়েছে, প্রলয়ের যেনো চোখই সরছে না। তবে সে চোখ সরানোর ব্যর্থ চেষ্টাও করছে না। কারন আজ যে তার কোনো বাধা নেই ইন্দুকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখতে।

অবশেষে সব ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে ওদের বিয়েটা হয়ে গেলো, সাড়ে বারোটার দিকে ঘরে গিয়ে ইন্দুকে কোথাও দেখতে পেলো না প্রলয়। তাই দরজা আটকে বারান্দায় উঁকি দিলো সে, যা ভেবেছিলো তাই। ইন্দু বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, কাছে গিয়ে পেছন থেকে ইন্দুকে জড়িয়ে ধরে প্রলয়।প্রলয়ের স্পর্শে কেঁপে ওঠে ইন্দু, যেনো তার সারা শরীরে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ বয়ে গেলো। ইন্দুর কানের খুব কাছে মুখ নিয়ে প্রলয় বলে,

–ভালোবাসি।
–কাকে?
–ইন্দুবতীকে!
–উফফফফ… প্রলয়! কল মি ইন্দু, নট ইন্দুবতী।
–আমিতো ইন্দুবতীই ডাকবো,”আমার ইন্দুবতী”।

পরম আবেশে নিজেকে প্রলয়ের বুকে সঁপে দেয় ইন্দু। পরম যত্ন ও ভালোবাসায় তার ইন্দুবতীকে নিজের ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নেয় প্রলয়।

“সমাপ্ত”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here