আমার গল্পে তুমি,পর্বঃ ৪

0
709

আমার গল্পে তুমি,পর্বঃ ৪
খাদিজা আরুশি আরু

১৩

ছাদে একা দাঁড়িয়ে আছে প্রলয়, ইন্দুর সঙ্গে তার দেখাটা না হলে আজ হয়তো এতো কষ্ট পেতে হতো না তাকে! ভাবতে ভাবতেই পুরোনো স্মৃতিতে হারিয়ে যায় সে…

সেদিন ধুম বৃষ্টি হচ্ছিলো, প্রলয়ের মা খুব অসুস্থ ছিলো। গ্রাম থেকে একা ঢাকা নিয়ে এসেছিলো সে তার মাকে, কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি নিচ্ছিলো না।হাসপাতালের বারান্দায় মা কে পড়ে থাকতে দেখে অসহায়ের মতো এর ওর কাছে সাহায্য চাইছিলো ছেলেটা। ঠিক তখনই কোথা থেকে রায়হান সাহেব এসে ছেলেটার মাথায় হাত রাখেন, তখন হয়তো আল্লাহই প্রলয়ের জন্য রায়হান সাহেবকে উছিলা করে পাঠিয়েছিলেন। রায়হান সাহেব প্রলয়ের মা কে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন, প্রলয় আসতে চাইছিলো না তবুও জোর করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানেই প্রথম দেখে ইন্দুকে প্রলয়!

যে বয়সে মেয়েরা দুই কাঁধে ছোট ছোট দুই জুটি জুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় সেখানে ইন্দুর অবাধ্য চুলগুলো বাতাসে উড়ছিলো, পুরো বাড়ির সবাইকে একা দৌঁড় করাচ্ছিলো মেয়েটা। সেদিন প্রলয় হয়তো ভালোবাসার মানে বুঝতো না, তবে ফেসে তো ও সেদিনই গেছে। সে মনে মনে এটা ঠিক করেছিলো যে এই মিষ্টি পাঁজি মেয়েটার বন্ধু হবে সে, খুব ভালো বন্ধু! সে প্রয়াসই করে গেছে শুরু থেকে।
সময় তার নিজ গতিতে চলতে থাকে, দেখতে দেখতে প্রলয়ের বন্ধুত্ব ভালোবাসায় রূপ নেয়। সেটা কেউ না বুঝলেও ইরফান ঠিকই বুঝে যায়।ইরফান প্রলয়কে অনেক বার বলতে বলার পরও কখনো ইন্দুকে ভালোবাসি কথাটা বলা হয়ে ওঠেনি তার বা কখনো বলতেই চায় নি সে।

একদিকে প্রলয় ইন্দুর স্বপ্নে বিভোর আর অন্যদিকে ইন্দু তার গানের দুনিয়ায় মত্ত।তবে বরাবরই ইন্দুর সে দুনিয়ার সঙ্গী ছিলো তির্থ, সেই তির্থ যে আজও ইন্দুর সবটা জুড়ে আছে তা অন্য কেউ না বুঝলেও প্রলয় ঠিকই বুঝে। অবশ্য প্রিয়সীর মনের কথা বুঝতে না পারলে সফল প্রেমিক হওয়া যায়না, তবে তির্থ চলে যাবার পর ইন্দুর পাশে এই প্রলয়ই ছিলো। পুরো দশটা বছর মেয়েটাকে চোখে চোখে রেখেছে, ছায়ার মতো থেকেছে সঙ্গে সঙ্গে।

আজ ইন্দুর ব্যবহারে প্রলয়ের মনের কষ্টগুলো আবার মাথা নাড়া দিয়ে উঠেছে। সত্যিইতো, ও যে আশ্রিতো! ও যে বাড়িটায় থাকে তাও তো রায়হান সাহেবের। ওর মতো মানুষ তো দয়া পেতে পারে, ভালোবাসা না। তবে প্রলয়তো ভালোবাসা চায় নি, চেয়েছিলো বন্ধুত্ব। তার মতো হতভাগার কপালে যে তাও নেই, আর যাই হোক ভালোবাসার মানুষের করুনার মতো অসহ্যকর জিনিস হয়তো পৃথিবীতে কিছু হতে পারে না! এসব আকাশ পাতাল ভাবছিলো প্রলয় সঙ্গে বিচরণ করছিলো অতীত আর বর্তমানের মাঝে… আমেনা বেগমের ডাকে ঘোর কাটে তার।

–প্রলয়!
–মা তুমি এই শরীরে ছাঁদে এলে কেনো? চলো ঘরে যাবে।
–তুই এতো রাতে ছাদে কেনো বাবা? এখনো ইন্দুর কথা ভাবছিস? ওকে ভুলে যা বাবা, ওদের সঙ্গে আমাদের যায় না। কোথায় গায়িকা ইন্দুবতী চৌধুরি আর কোথায় সাধারন প্রকাশনীতে চাকরিরত তুই। ঐ আকাশ আর সমুদ্র যেমন এক হবার নয় তেমনি তোদের পথও এক হবার নয়।

প্রলয় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,

–জানি মা, আমি সেসব ভাবছি না। আমি ইন্দুর জন্য যা করেছি সবটা মামার জন্য করেছি, তাছাড়া ইন্দুতো ইফুর বোন। ইফুর প্রান ও… ইফুর জন্য এটুক করতে পারবো না আমি? শোনো মা, তোমার ছেলে জানে তার ভালোবাসা এক তরফা। তবে এতেও আনন্দ আছে, কেউ জানলোও না আর অপমানও করতে পারলো না। আর জানোতো মা, তানিয়া আমার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছে আজকে। ও ভাবেনি আমার ভালোবাসাকে ইন্দু টাকা দিয়ে পরিমাপ করবে, তবে যাই হোক আমার কোনো আফসোস নেই। আমিতো আমার জায়গায় ঠিক, আমার মনেতো কোনো প্যাঁচ নেই।
–হুম, তানিয়া মা তোকে খুব ভালোবাসে।সারাদিন এমনভাবে ভাই ভাই করে যেনো তুই ওর নিজের মায়ের পেটের ভাই!আগেতো প্রতি সপ্তাহেই আসতো, এখন অসুস্থ তাই আসতে পারে না। তুই তো প্রতিদিনই যাস, বলনা কেমন আছে ও?
–ভালোই আছে, আচ্ছা এক মায়ের গর্ভে না জন্মালে কি ভাই-বোন হওয়া যায় না মা? রক্তের সম্পর্কই কি সব?

আমেনা বেগম প্রলয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

–না বাবা, রক্তের সম্পর্কই সব না। যদি তাই হতো তাহলে রায়হান ভাই অমন বিপদের দিনে কেনো আমাদের পাশে দাঁড়াতেন! মানুষটা খুব ভালো রে, তাই তুই তার খুশির কথা ভাববি। সে কষ্ট পায় এমন কিছু করবি না, তুই আজ যেখানে সবটা তার জন্য কথাটা ভুলবি না কখনো।

প্রলয় মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে মৃদুস্বরে বলে,

–সেটা তোমার ছেলে জানে মা, মামা যখন যা বলবে তাই করবো আমি। তাতে যদি আমি নিজে কষ্টও পাই তাও করবো, ওই পরিবারটাকে আমি জীবন দিয়ে ভালোবাসবো। নিজের সবটা দিয়ে ভালোবেসেছি, ভালোবাসি, ভালোবাসবো।
এবার নিচে চলোতো দেখি, পরে তো জ্বর হলে আমাকেই দেখতে হবে।

১৪

–হ্যালো,কাজ হয়েছে? উফফ… এতো সময় কেনো লাগে!

ফোনের ওপাশের মানুষটার কথায় বিরক্ত হয়ে ইন্দু চেঁচিয়ে বললো,

–সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না, আমি বুঝবো।

ইন্দুর ভ্রু জুগল কুঁচকে গেছে, কপাএ বেয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম পড়ছে… গলার স্বর খাদে নামিয়ে সে বলে,

–তোমার টাকা তুমি সময় মতো পেয়ে যাবে, আগে কাজটা তো শেষ করো!

–ইন্দু…

দরজার বাহিরে তানিয়ার গলার স্বর পেয়ে ফোন রাখার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে ইন্দু। ক্ষীণস্বরে বলে,

–পরে কথা হবে, রাখছি।

ইন্দুর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে কৌতুহলি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে তানিয়া জিজ্ঞেস করলো,

–কার সঙ্গে কথা বলছিলি ইন্দু?
–দরকারি ফোন, তুই বুঝবি না তানি। কি দরকারে এসেছিস সেটা বল।
–দরকারি ফোন তো রেখে দিলি কেনো? আমার সামনে কথা বলা যেতো না? এতোটা ব্যক্তিগত? কে রে, স্পেশাল কেউ? বলনা, বাই এনি চান্স ইজ ইট ভাই?

সেদিন প্রলয়ের সঙ্গে করা ব্যবহারের কথা মনে পড়তেই ইন্দু কিছুটা ইতস্তত করে প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললো,

–তানি, অহেতুক কৌতুহল ভালো নয়।তাছাড়া আমাকে দিনে রাতে অনেক ফোন কল নিতে হয়, সবকটার জন্য আমি জনে জনে কৈফিয়ত দিবো না নিশ্চয়ই! তুই কি কাজে এসেছিলি সেটা বল তারপর যা প্লিজ।

তানিয়া নিজের কৌতুহল দমিয়ে শান্তস্বরে বললো,

–বুঝলাম, বলবি না তাহলে। খেতে চল, বাবা-মা তোর জন্য অপেক্ষা করছে। কখন থেকে সবাই না খেয়ে বসে আছে।
–তুই যা, আর সবাইকে শুরু করতে বল।আমি কি কাউকে আমার জন্য অপেক্ষা করতে বলেছি নাকি? বলে দে আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।
–আচ্ছা, জলদি আয়।
–বললামতো পাঁচ মিনিট, এতো বাড়াবাড়ি করিস কেনো সব ব্যাপারে?
–সরি!

মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায় তানিয়া, ও বের হবার সঙ্গে সঙ্গেই ফোন হাতে নিয়ে কল লিস্টের প্রথম নাম্বারটাতে কল বেক করে ইন্দু। তারপর গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলে,

–হ্যালো, শোনো… আধ ঘন্টার মধ্যে প্রলয় বাড়ির ভেতরে চলে আসবে, তৈরি থেকো। প্রলয় বাড়িতে ঢোকার পরই তোমাকে ভেতরে আসতে হবে, কারন আমি চাই সবাই সবটা শুনুক আর সবাই’ই যাক।

ইন্দু ফোনের ওপাশের মানুষটাকে তাড়া দিয়ে বলে,

–কোনো ভুল যেন না হয়, ভুল হলে কিন্তু টাকা দেবো না।

ইন্দুর মনে মনে ভয় হচ্ছে ফোনের ওপাশের মানুষটা সব আধও ঠিকঠাক করতে পারবে কি না। তবুও তার কথায় আশ্বস্ত হয়ে মিনমিন করে বলে,

–ভেরি গুড, রাখছি।

১৫

খাবার টেবিলের সামনে যেতেই রায়হান সাহেব তানিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,

–বউমা, ইন্দু এলো না?
–পাঁচ মিনিটে আসছে বাবা।
–আরে ওইতো ইন্দু চলে এসেছে, আয় ইন্দু আমার পাশে বোস।

ইরফানের কথায় টেবিলে বসা সবাই ইন্দুর দিকে একবার তাকায়। ইন্দু সৌজন্যের হাসি হেসে বলে,

–না, আজ আমি বাবার পাশ বসবো ভাই।

ইরফান ব্যতিব্যস্ত হয়ে মনিরা চৌধুরিকে জিজ্ঞেস করলো,

–মা, কি বানিয়েছো আজকে? বোন খেতে পারবে তো?
–ওর পছন্দের পুরি আর গরু মাংস ভুনা, খেতে পারবে কি বাকিরা ভাগে পায় কি না দেখ আগে।

মনিরা চৌধুরি হাসতে হাসতে কথাটা বললেও তার হাসিটা বেশিক্ষণ স্থায়ি হলো না। ইন্দু টেবিলে রাখা খাবারগুলোর দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে শান্তস্বরে বললো,

–আমি এখন এসব খাই না, প্রলয়কে জিজ্ঞেস করতে আমি কি খাই না খাই। শুধু শুধু না জেনে এগুলো কেনো করতে গেলে? ধুর, সকালটাই নষ্ট।

মনিরা চৌধুরি ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলো,

–আচ্ছা বল কি খাবি আমি বানিয়ে দিচ্ছি।
–না থাক, আমি আপেল খেয়ে নিচ্ছি।
–ইন্দু জুস খাবি?
–তানি, ধন্যবাদ। তুই সবসময় আমার দরকারটা বুঝে যাস, জুস দে।
–এক্ষুণি দিচ্ছি।
–ভাই এবার বল, সকাল সকাল গানের রেয়াজ করে কেমন লাগলো?
–খুব ভালো লেগেছে রে, মনে হচ্ছে পুরনো দিন ফিরে এসেছে। তুই এসে গেছিস দেখবি সব ঠিক হবে।
–বাবা,আজকে কি কি খবর পড়লে?
–সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বলবো, এখন বলতে গেলে দেরি হয়ে যাবে।
–ভাই, তুই এসেছিস! আয় খাবি আয়।

প্রলয়কে বসার ঘরের দিকে আসতে দেখে খাবার টেবিল থেকে তানিয়া চেঁচিয়ে কথাটা বললো। ইন্দুকে দেখে কিছুটা বিব্রতবোধ করছে প্রলয়, তাই শান্তস্বরে বললো,

–না তানিয়া, আমি মায়ের সঙ্গে খেয়ে এসেছি।

আপেলে কামড় বসাতে বসাতে একবার আড়চোখে প্রলয়কে দেখলো ইন্দু তারপর তানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,

–ওকে জুস দে তানি, আমি যে জুসটা খাই ওটাই ওর পছন্দের। আমার জন্যতো বানাচ্ছিসই তো বেশি করে বানা, ওকেও দে।
–দিচ্ছি, ভাই ইন্দু বলে দিয়েছে এবার কিন্তু না বলতে পারবি না।

তানিয়ার কথায় প্রতিত্তরে কিছু বলে না প্রলয় কেবল মুচকি হাসে। পরমুহূর্তে কি ভেবে বলে,

–ইন্দু আমি…

প্রলয়কে কথা শেষ না করতে দিয়ে ইন্দু বলে,

–থামো প্রলয়, আমি জানি তুমি কি খাও না খাও। জুস আসছে, তর্ক না করে চুপচাপ খেয়ে নাও।
–হুম।

বাড়ির দারওয়ান করিম খাবার টেবিল থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রায়হান সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–বড়বাবু, একটা চিঠি এসেছে।
–কিসের চিঠি করিম?
–জানি না বাবু, বললো ইন্দু মামনি আর ইরফান বাবার জন্য নাকি। অবশ্যি বউমা আর প্রলয় বাবার জন্যিও আছে।
–আমাকে দাও করিম কাকা, তুমি যাও।

করিম কাকার হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে তা খুলতে খুলতে ইরফান, প্রলয় আর তানিয়াকে আড়চোখে একবার দেখে নেয় সে। কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে ইরফান জিজ্ঞেস করে,

–কিসের চিঠি ইন্দু?
–আর বলিস না ভাই, আমাদের স্কুল থেকে এসেছে। পুণঃমিলনী অনুষ্ঠান আছে আগামী রবিবার, সব পুরোনো শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রন করেছে।

ইন্দুর কথা শুনে তানিয়ে গম্ভীরস্বরে বলে,

–ফেলে দে ইন্দু, এই শরীর নিয়ে আমি যাবো না। আর আমি না গেলে তোর ভাইও যাবে না।
–আমিও যাবো না ইন্দুবতী।

প্রলয়ের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে রাগীস্বরে ইন্দু বলে,

–প্রলয়… নট ইন্দুবতী, অনলি ইন্দু।

তারপর নিজের রাগ সংবরণ করে জিজ্ঞেস করে,

–কেনো যাবে না তোমরা? কতোদিন পর স্কুলে যাবো বলোতো, স্যারের সঙ্গেও দেখা হবে। ধুর, তোমরা কি বলতো!
–কেনে বোন কি করলাম আমরা, আমাদের যাবার ইচ্ছে নেই তাই যাবো না।
–কোনো কথা শুনতে চাই না আমি, আমরা সবাই যাচ্ছি। কারও একটাও কথা শুনবো না আমি, তোমরা না গেলে আমি একা যাবো ব্যাস।
–ইন্দু মা…

রায়হান সাহেবের ডাকে সাড়া না দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো ইন্দু। তানিয়া মন খারাপ করে স্বগতোক্তি করলো,

–কি হলো এটা, এ শরীর নিয়ে যাবো!

তানিয়ার মলিন মুখটা দেখে ইরফান মজা করে বলে,

–কি সমস্যা তানিয়া? মা হচ্ছো কোনো দোষতো করোনি যে লজ্জা পাচ্ছো… তাছাড়া বিয়ের পরইতো মা হচ্ছো।এমনতো না যে বিয়ের আগে…
–কি বললে, বাবা শুনলেন আপনি…

তানিয়ার আর ইরফানের কান্ডে না হেসে পারলেন না রায়হান সাহেব। মুচকি হেসে বললেন,

–থাক বউমা, যাও ঘুরে আসো।
–তানিয়া, তোমার কিছু কিনা লাগলে এখনই বলো। শেষ মুহুর্তে মার্কেটে দৌঁড়াতে পারবো না আমি বলে দিলাম।
–চলো ঘরে তোমার দৌঁড় আমি ছুটাচ্ছি।

কথাটা বলেই নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো তানিয়া, ইরফানের দিকে তাকিয়ে প্রলয় হাসতে হাসতে বললো,

–যা ভাই ইফু তোর ডাক পড়েছে, আমি বাবা বেঁচে গেছি। একা মানুষ কোনো চিন্তা নেই।
–প্রলয় বাবা, কয়টা পুরি দেই? তুই কিন্তু কথা দিয়েছিলি একদিন এসে খাবি!

মনিরা চৌধুরির এমন স্নেহভরা আবদার ফেলতে পারে না প্রলয়। মুচকি হেসে বলে,

–দাও, তোমার মেয়ে তো খেলো না তা আমাকে দিয়ে শোধ করছো মামী? দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছো?
–বাবা, কি যে বলিস না তুই। তোকে কি আমি কম ভালোবাসি নাকি? আচ্ছা ইন্দু কি আগের মতো এসব খায় না? আগেতো দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়তো।

খেতে খেতেই প্রলয় বললো,

–না মামী, ও ডায়েট করে তো তাই অনেক নিয়ম মেনে খায়। বুঝোইতো তোমার মেয়ে এখন বড় মাপের মানুষ, কতো বড় বড় লোকের সাথে ওর ওঠা বসা। সুতরাং একটু তো বদল আসবেই, তুমি এসব নিয়ে মনে কষ্ট পেও না। তোমার মেয়ে তুমিতো চিনোই। ওর জন্য বেশি ঝামেলা করার প্রয়োজন নেই, তুমি ওকে প্রতিদিন সকালে কিছু ফল, ডিম সেদ্ধ আর জুস দিও। দুপরে বাহিরে খায়, রাতে সুপ দিয়ে দিও। ও এসবই খায় এখন…
–তোর মামীকে এসব কেনো বলছিস বাবা? এ তো এখন আবার এ বয়সে রান্নার স্কুলে দৌঁড়ানো শুরু করবে।

রায়হান সাহেবের বলা কথায় স্পষ্ট মনিরার প্রতি বিদ্রুপ টের পাচ্ছে প্রলয়। তাই হাসতে হাসতে বলে,

–তুমিও না মামা, হাহাহা… গেলে যাবে, ঘরে বসে থাকলে মোটা হবে দিন দিন। তার থেকে তো এটা ভালো।
–হাহাহা…

মামা ভাগ্নের হাসি দেখে মনিরা তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে, মুখ বাঁকিয়ে বলে,

–করো, করো… মামা ভাগ্নে মিলে যতো
পারো আমাকে নিয়ে মশকরা করো। আমি তো এখন সবার মশকরার বস্তু হয়ে গেছি,নআমি থাকলেও যা না থাকলেও তা…
–আরে মামী…
–থাক, ও কে যেতে দে… তুই বল!
–কি!
–তোর মা কেমন আছে?
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে মামা।
–তা বাবা বিয়েটা কবে করবি বলতো?
–ইন্দুর বিয়েটা হয়ে যাক তারপর। আসলে দশ বছর আগে তুমি আমাকে ওর দায়িত্ব দিয়েছিলে তো, তাই যে দায়িত্ব একবার নিজের কাঁধে নিয়েছি তা যতোদিন না সম্পূর্ণভাবে পালন করতে পারছি ততোদিন এসব নিয়ে ভাবছি না। যতোদিনে ওকে সঠিক মানুষের হাতে তুলে দিতে না পারি ততোদিন নিজেকে নিয়ে ভাবছি না মামা, বিয়ে তো বহু দূরে।

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রায়হান সাহেব, প্রলয়ের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন,

–ইন্দুটাকে খুব ভালোবাসিস তাই না বাবা?
–থাক সেসব কথা মামা, তির্থের কোনো খোঁজ পেয়েছো?
–না, কোথায় আছে জানি না। তবে আমার মনে হয় ইন্দুটা আজো ছেলেটাকে ভালোবাসে। ছেলেটাকে খুঁজে ওদের ভুল বোঝাবুঝিটা ভাঙ্গাতে পারলে হয়তো মেয়েটার জীবনের গতি ফিরে আসতো!আর তোর বুড়ো মামাও জীবনে শান্তিটা পেতো।
–চিন্তা করো না মামা, তির্থকে ফিরতেই হবে। অন্যকারো জন্য নয়, তোমার পাগলী মেয়েটার জন্য! আজকে আসছি মামা।

টেবিল থেকে উঠে রায়হান সাহেবের পা ছুঁয়ে সালাম করে প্রলয়, রায়হান সাহেব তার মাথায় হাত রেখে বলে,

–বেঁচে থাক বাবা, সময় করে আবার আসিস।
–ও হ্যাঁ, এটা ইন্দুকে দিয়ে দিও মামা। ওর এ মাসের সিডিউল, আমার প্রকাশনীতে যেতে হবে আজকে। তাই তুমি একটু কষ্ট করে দিয়ে দিও।
–বাবা তুই নিজেই দিয়ে যা… আমিতো বের হচ্ছি। তাছাড়া বয়স হচ্ছে পরে দেখা যাবে ভুলে যাবো।

প্রলয় ভেবেছিলো ইন্দুর মুখোমুখি হবে না কিন্তু তা আর হলো না। হতাশ স্বরে বললো,

–আচ্ছা।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here