আমার তুমি,পর্বঃ০৭
লেখিকাঃ ফারজানা তাবাসসুম
–কী করছো তুমি আদ্রি?(ভ্রুকুচকে বললো আয়াশ)
–ক্…. কই!!কিছু নাতো!! কিছুটা ঘাবরে গিয়ে উত্তর দিলাম।
–দেখি, পেছনে কি লুকাচ্ছো??
–এ্……এই কি করছেন! ছাড়ুন।
আদ্রি সরতে নিলে তাকে ক্ষপ করে কোমর আকড়ে ধরে ফেলে আয়াশ।পেছন থেকে আদ্রির হাত সামনে নিয়ে আসে। আদ্রি কাচুমাচু হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
–তা,,ম্যাম!! আপনি আমার শার্ট নিয়ে কি করছিলেন? ভ্রু উচু করে প্রশ্নাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়াশ।
আদ্রি চোখ খিচে বন্ধ করে নিচের দিকে মুখ করে আছে। আয়াশের প্রশ্নের উত্তর সে কি দিবে ভেবে পাচ্ছে না। আয়াশ ত তাকে আয়াশের জিনিসপত্র ধরতে বারন করেছিলো।তাহলে এখন কী তাকে বকা দিবে?নাকি অন্য কোনো শাস্তি।
–″আমি আপনার জিনিস ধরতে চাইনি। বিশ্বাস করুন।সোফায় পড়েছিলো তাই ভাবলাম, তুলে কাবার্ডে রেখে দেই। প্লিজ আমাকে কোনো শাস্তি দিবেন না এর জন্য!! ″একদমে কথাগুলো শেষ করে আদ্রি।
আয়াশ আদ্রিকে ছেড়ে দিলো।আদ্রির শেষে বলা কথাটায় কেনো জানি খারাপ লাগলো তার।আদ্রি এখনও ভাবে,″ আমি আদ্রিকে এইসব ছোট ছোট বিষয়ের কারনে শাস্তি দিবো!!″ ভাববে নাই বা কেনো?এতোদিন ধরে ত আয়াশ ঠিক ঐরকমটাই করে এসেছে।আয়াশ আদ্রির মুখপানে তাকালো। ″মেয়েটি কি নিষ্পাপ চাহুনিতেই না তাকায়!″কি করে পারলাম এতোদিন তাকে কষ্ট দিতে!″
আয়াশকে এমন চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা লজ্জা পেলাম আমি। আঙুলে শাড়ির আঁচল পেচাতে পেচাতে ধীর সরে বললামঃ
আপনি এইভাবে তাকিয়ে থাকবেন না প্লিজ। আমার কেমন যেনো লাগে।
আদ্রির কথায় হাসলো আয়াশ। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছে সে।না কোনো শাস্তি আর নাই কোনো কষ্ট পেতে দিবে আদ্রিকে।এখন থেকে শুধু ভালোবাসা, ভালোবাসা আর ভালোবাসা।
………
রাত ১ টা…….
আয়াশ বেলকনির দরজাটার কাছে হেলান দিয়ে আছে। বাইরের জ্যোৎস্নার আলো এসে পড়ছে অন্ধকার ঘরটায়। সেই আলোয় আদ্রির মুখটা কোনো অপ্সরা থেকে কম মনে হচ্ছে না আয়াশের কাছে। তাকিয়ে আছে সে, সেই মুখপানে। চোখের কোনে চিক চিক করছে পানি কণা। ভয়গুলো এসে আয়াশের মনটিকে গ্রাস করছে। ঠিক এই কারনেই আয়াশ কারো মায়ায় পরতে চায়নি। আর না কারো কাছে যেতে চেয়েছে। ছোটবেলা তার মা তাকে আর তার বাবাকে ফেলে চলেগেছিলো, শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে।তারপর থেকে আয়াশ আর কোনো মেয়ের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারেনি।নিজেকে আটকে রাখার শত চেষ্টা করেও সে পারেনি,ঐ ঘুমিয়ে থাকা পরীটার মায়ায় পড়তে। এখন যখন তাকে ভালোবাসতে চাইছে, তখনি সামনে দেয়াল তৈরী হয়ে গেলো তার। কী করবে এখন সে?
চোখের কোন থেকে পানি মুছে দাঁড়িয়ে পড়লো আয়াশ।″আমি খুব ভালোবাসবো আদ্রিকে খুব।এতো পরিমান ভালবাসবো যে,আদ্রি তার এই ভালোবাসার কথা কখনো ভুলতেই পারবে না।″
আদ্রির কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়লো আয়াশ। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো সেই মায়াবী মুখের দিকে। অজান্তেই নিজের ওষ্ঠদ্বয় ছুইয়ে দিলো আদ্রির কপালে।পাশে গিয়ে ঘুমন্ত আদ্রিকে নিজের বুকের সাথে লেপ্টে নিলো আয়াশ।
………
পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙলো আমার।চোখ বুজা অবস্থাতেই নিজেকে কারোর বাহুডোরে আবিষ্কার করলাম। চোখ খুলে খেলাম এক শকড।
আ…আয়াশ!! আমাকে তার বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো?? হ্যাঁ…. হ্যাঁ!! তাইত্!! আমি স্বপ্ন না সত্যিই দেখছি। যেই মানুষ আমার দিকে ছোয়া ত দূরে থাক ভালোভাবে তাকাতো পর্যন্ত না!! সে কিনা আমাকে আজ জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। তাও কি শান্তিমতো বাচ্চাদের ভাবে ঘুমিয়ে আছে দেখো।
আয়াশ মনে হয় ভুলে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।তারাতাড়ি নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে হবে।যদি আবার ঘুম থেকে উঠে বলে বসে,,আমি তাকে ইচ্ছা করে ধরেছি, সে ধরেনি। আরেক ঝামেলায় পড়বো।
নিজেকে ছাড়ানোর জন্য নড়াচড়া করছে আদ্রি। এইদিকে আয়াশ যেনো আরো বেশী শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে আদ্রিকে। এখন আদ্রির হাসফাস লাগছে।
″বাবারে!!! এইভাবে কে জড়িয়ে ধরে। আমার হাড্ডি-গুড্ডি গুলা সব ভেঙেই যাবে!!″
আদ্রির এমন নড়াচড়ায় ঘুম ভেঙে যায় আয়াশের।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আদ্রি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি শুরু করে দিয়েছে।
আদ্রি!!
আয়াশের ডাক শুনে সাথে সাথে থেমে গেলাম আমি। ভীত চোখে তার দিকে তাকালাম।
আ…আমি ক্….. কিছু…..
আদ্রির ঠোঁটজোড়া দখল করে নিলো আয়াশ।বেশ কিছুক্ষন পর ছাড়লো আয়াশ।
এইদিকে আদ্রির পরানপাখি যায় যায় অবস্থা। নিজের মুখ চেপে ধরে বলা শুরু করে,,
ছিঃ…আপনি বাসিমুখে আমায় কিস কেন করলেন?(কাদো কাদো ফেস করে)
আয়াশ আদ্রির মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে নিলো।তারপর বললোঃ
–আমি রাতে ব্রাশ করেই ঘুমাই। তোমার মতো না। আমার মুখে কোনো গন্ধ নাই।সব বাজে গন্ধ তোমার মুখেই।
–কিহহ্!!! এত্তো বড়ো কথা। আমার মুখে গন্ধ??তাহলে কিস করলেন কেন আপনি??(মুখ ফুলিয়ে বললো আদ্রি)
আয়াশ আদ্রির ঠোঁটে নিজের এক আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললোঃ
কী করবো বলো??সকাল সকাল মিষ্টি খেতে ইচ্ছা হলো যে।বলেই একটু বাকা হাসি হাসলো আয়াশ।
এই মুহুর্তে আদ্রির কি হচ্ছে তা আদ্রির মাথায় ঢুকছে না।আয়াশকে সরিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আদ্রি।
বেসিঙের আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের ঠোঁট আলতোভাবে ছুলো আদ্রি। এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো তার।আয়াশ ও তাহলে চাইছেন?আমাকে আপন করে নিতে?
……
আয়াশ মেডিকেল চলে গেছে। আদ্রি, মালতির সাথে কাজে সাহাজ্য করছে। আজ আদ্রির মুখে এক আলাদাই চমক লক্ষ্য করছে মালতি।যা এতোদিন তার মুখে ছিলো না। নিজের কৌতূহলকে দমিয়ে রাখতে পারলোনা মালতি। জিজ্ঞেসই করে ফেললো আদ্রিকে।
ম্যাডাম!! আইজকা আপনারে একটু বেশী খুশি খুশি লাগতাছে? ব্যাপার কী?
মালতিরেএএ!!!!(মালতিকে জড়িয়ে ধরে আদ্রি এক আবেগি চিৎকার দিলো)
হায়! হায়! আল্লাহ্! ম্যাডাম কি করেন? কি করেন? এমন করতাছেন কেন??(হকচকিয়ে বলে মালতি)
আমি আজ খুব খুশি মালতি। (মালতিকে ছেড়ে মুখে চাকচিক্যময় হাসিটা দিয়ে বললো আদ্রি)
তা বুজতাছি!! কিন্তু কারন কী ম্যাডাম? (ভ্রুকুচকে)
বুঝবা না তুমি!!(লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে কথাটা বলে উপরে চলে যায় আদ্রি)
এইদিকে মালতি সত্যিই কিছু বুঝলো না। খামোখা সাত পাচ না ভেবে নিজের কাজে লেগে পড়লো মালতি
………
আজকে আয়াশ তারাতাড়ি বাসায় ফিরছে।ভেবে নিয়েছে সে,,আদ্রিকে আজ তার সকল মনের কথা বলে দিবে। তাকে যে ভালোবাসতে শুরু করেছে।আপন করে নিতে চায় তাকে। স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চায়। আজ সব বলবে সব।
আমি জানি আদ্রি তুমিও আমায় ভালোবাসো।আমার ভালোবাসাকে তুমি নিশ্চই গ্রহণ করবে।শুধু আর কয়েক মুহুর্তের অপেক্ষা…….
চলবে