আমার তুমি,পর্বঃ০৮[অন্তিম পর্ব]
লেখিকাঃ ফারজানা তাবাসসুম
দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করতেই চমকে উঠলো আদ্রি।চোখে তার বিস্ময়ের ছাপ সপষ্ট।চারদিকে নীল আর সাদা রঙের যেনো মেলা বইছে।নীল আর সাদা বরাবরই আমার পছন্দের দুটি রঙ।ফ্লোরে নীল, সাদা বেলুনের ছড়াছড়ি! এক ধাপ করে এগোচ্ছে আর চকিত হচ্ছে আদ্রি। চারদিকে ছোট ছোট নীল বাতি দিয়ে সাজানো।দেয়ালের একপাশ সাদা আর নীল সিল্কের কাপড় দিয়ে কতো সুন্দর করে সাজানো তার মাঝে এক গুচ্ছ কাঠগোলাপ যা আমাকে আরো বেশী মোহিত করেছে। এইভাবে প্রায় সারাঘর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলাম আমি। আমার পরোনেও সাদা জর্জেটের শাড়ি। যার কুচি সামলাতে বেশ হিমসিম খেতে হচ্ছে আমায়।
আয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে কুচি ঠিক করছি।পেটে কারো উষ্ণ ছোয়াতে কিছুটা হকচকিয়ে গেলাম আমি।
আ..আপনি আয়াশ!! এইসব তাহলে আপনারই কাজ।
কেনো পছন্দ হয়নি?
খুউউউব!!!
আয়াশ আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আমায়।ওনাকে ছাড়িয়ে নিলাম।পেছনে ঘুরে তাকালাম আমি।অনেক প্রশ্ন এসে জমা হয়েছে মনে। আয়াশ হয়তো আমার চাহুনি দেখেই তা বুঝে নিয়েছেন। পরম আয়েশে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।
আদ্রি আমি জানি তোমার মনে এখন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আমার এমন পরিবর্তন এর কারন কী জানো?? শুধুই তুমি।তোমার জন্যই এমনটা সম্ভব হয়েছে। আমি চাইনি নিজেকে কারো সাথে বাধতে কিন্তু তুমি আমাকে তোমার মায়ায় বাধতে বাধ্য করেছো।আমি না চাইতেও তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি আদ্রি। খুব ভালোবাসি তোমায়। আই লাভ ইউ সো মাচ!!! আজকের এই সাজসজ্জা সব শুধু তোমার জন্য। আয়াশ আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার সামনে হাটু গেড়ে বসলেন।একটা রিং আমার দিকে বারিয়ে দিলেন
উইল ইউ বি মাইন?? আদ্রি!!
আমার চোখে পানি এসে ভরে গেছে।আমি যে বিশ্বাস ই করতে পারছি না। আয়াশ সত্যিই আমাকে ভালোবাসি কথাটা বলেছেন?? ভাঙা গলায় বললাম,,,
ই..ইয়েস!! বাম হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।আয়াশ হাসোজ্জল মুখে রিংটা পরাতে যাবে তখনি তার মুখটা মলিন হয়ে যায়, আদ্রিইই বলে চিৎকার দিয়ে আদ্রিকে ধরে ফেলে আয়াশ।রিংটা ছিটকে পড়ে মেঝেতে।আদ্রি অজ্ঞান হয়ে গেছে। নাকে হাল্কা রক্ত এসে পড়েছে।
………
আদ্রি হস্পিটালের বেডে শুয়ে আছে। তার হাতে মুখে ছোট ছোট নলের মতো কিছু লাগনো।মুখে অক্সিজেন মাস্ক। বাইরে আদ্রির মা,বাবা এসেছেন লায়লার এই অবস্থায় তাকে এখানে নিয়ে আসেনি আদ্রির বাবা মা, আদ্রির ভাইকে লায়লার দেখাশোনার জন্য রেখে এসেছেন তারা।
আদ্রির মা অনবরত কেদেই যাচ্ছেন।
এক মুহুর্তেই কি হয়ে গেলো মেয়েটার। এমন কেনো হলো? আল্লাহ্ আম্র মেয়েটাকে এমন শাস্তি কেনো দিচ্ছেন। ওতো কখনো কারো ক্ষতি করেনি। কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলে যাচ্ছে আদ্রির মা। এইদিকে আদ্রির বাবা তাকে সামলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
আয়াশ এলোমেলো হয়ে বসে আছে বেঞ্চের কোনায়। চোখগুলো লাল হয়ে গেছে। কাল রাতের পোশাক এখনো তার গায়ে। হাতে সেই রিংটা ধরে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কতো স্বপ্নই না দেখেছিলো মেয়েটা। কাল তার স্বপ্ন পুরনের প্রথম ধাপ ছিলো।কিন্তু তা আর হলো কই??এইসব ভেবেই বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে আয়াশের।চোখের কোনের পানি হাত দিয়ে মুছে নিলো।
একটা নার্স এসে আয়াশকে ডেকে নিয়ে গেলো।ডক্টর ডাকছে তাকে। আয়াশ ডক্টরের কেবিনে গেলো।
আয়াশ! আপনার স্ত্রীর অপারেশন করতে হবে।
কথাটা কর্নপাত হওয়ার সাথে সাথেই আয়াশের বুক ধক করে উঠলো। তার মানে সেই সময় এসেই পড়লো!! আয়াশ ভাঙা গলায় বললোঃ
কখন ডক্টর?
আমরা আপনার স্ত্রীর অপারেশন দুইদিন পর করতে চাই। আর অপারেশন এরপর……
অপারেশন এর পর আদ্রির স্মৃতি হারাতে পারে!!আবার নাও হারাতে পারে! এই তোহ্?
জ্বী!!মিঃআয়াশ। এই দুইদিন আদ্রিকে সেলাইন দিয়ে রাখতে হবে। দুইদিন পর আমাদের হসপিটালের বেষ্ট ব্রেইন সার্জন দিয়েই আপনার স্ত্রীর অপারেশন হবে। শুধু ধৈর্য ধরুন আর আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।
!!
!!
দুইদিন প্রায় পার হতে চললো। কালকেই আদ্রির অপারেশন হবে। আয়াশ এই কয়দিন নাওয়া খাওয়া ভুলে শুধু আদ্রির দোয়া করেছে। নফল ইবাদত ও করেছে যাতে আল্লাহ্ তার দোয়া কবুল করেন। কোনো একটা ম্যাজিক করে দেন। আদ্রি যেনো তার স্মৃতি না হারায়। আদ্রি যেনো সুস্থ হয়ে আয়াশকে আবার ভালোবাসে।আদ্রি ঠিক হয়ে গেলে আর কোনোপ্রকার কষ্ট তাকে পেতে দিবে না মনে মনে শপথ করে নিয়েছে আয়াশ।
……
আজ আদ্রির অপারেশন। আয়াশ একবার আদ্রির কেবিনে গিয়েছে তাকে দেখতে। কিন্তু আদ্রি ঘুমিয়ে ছিলো । ঘুমন্ত আদ্রিকে বুকে জড়িয়ে চোখে মুখে নিজের ভালোবাসার পরশ ছুইয়ে দিয়েছে আয়াশ।নার্স এসে পড়েছে আদ্রিকে নিতে। আয়াশ উঠে দাড়ালো। নার্সরা তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলো।
.……
ভেতরে আদ্রির অপারেশন হচ্ছে। বাইরে সবাই অস্থির হয়ে আছে। আয়াশ চোখ বন্ধ করে এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে।মনে মনে আল্লাহর নাম নিচ্ছে সে। আদ্রি যেনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।
!!
ডক্টর অপারেশন থিয়েটার থেকে বাইরে আসলেন। সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ
পেসেন্ট এর জ্ঞান ফিরতে ২৪ ঘন্টা সময় লাগবে। তার জ্ঞান ফেরার পর আপনারা তার সাথে দেখা করতে পারেন। আরেকটা করা, পেসেন্ট যদি কাওকে চিনতে না পারে তাহলে তাকে জোর করবেন না এতে তার ব্রেনে চাপ পড়বে হিতে বীপরিত হতে পারে
আ…আপনি চিন্তা করবেন না ডক্টর। আমরা আছি। আদ্রিকে প্রেসার দিবো না আমরা।(আদ্রির মা ব্যাস্ত হয়ে বললেন)
আয়াশ এখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ডক্টরের সব কথা শুনেছে সে।এখন শুধু অপেক্ষা আদ্রির জ্ঞান ফেরার।
!!
!!
একদিন পর আদ্রির জ্ঞান ফিরেছে। সবাই এক এক করে তার সাথে দেখা করেছে শুধু আয়াশ যায়নি। সবার পর আয়াশ কেবিনে আসে যেখানে আদ্রিকে রাখা হয়েছে। কেবিনে আর কেউ নেই। আদ্রি চোখ বন্ধ করে রেখেছে।পেট পর্যন্ত তার সাদা চাদর টানা। হাতে স্যালাইন।আয়াশ আদ্রির পাশে বসে ছোট্ট করে ডাক দিলো
আদ্রি!
আদ্রি পিট পিট করে চোখ মেলে তাকালো।আয়াশের গলা শুকিয়ে আসছে। বুকের ভেতর সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।আদ্রি কি তাকে চিনতে পারবে?
আদ্রি তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন আয়াশের দিকে।আয়াশ চুপ করে আছে।
আয়াশ!
এই একটা ডাক!!এই একটা ডাকেই আয়াশের ভেতরের তোলপাড় এক নিমিষেই শান্ত শীতল হয়ে গেলো। কোনোদিকে না তাকিয়েই সোজা আদ্রিকে নিজের বুকে নিয়ে এলোমেলোভাবে চোখে মুখে চুমু খেতে লাগলো আয়াশ।
আয়াশ কি করছেন কি? পাগল হয়ে গেছেন?
হ্যাঁ!! হ্যাঁ!! আমি পাগল হয়ে গেছি সম্পুর্ন পাগল হয়ে গেছি।শুধু তোমার জন্য। যদি হাড়িয়ে যেতে তুমি?কি হতো আমার?
আমিতো শুধু আপনার। শুধুই আপনার। কোত্থাও হারিয়ে যাবোনা আমি। আদ্রি আয়াশের কপালে চুমু দিয়ে বললো,,আপনি আছেন না?আমাকে খুজে নেওয়ার জন্য।
আয়াশ আদ্রিকে বসিয়ে দেয় ভালোভাবে। তারপর বলে ,
সেই অসম্পুর্ন কাজটা সেরে নেওয়া যাক!!রিংটা বের করে আয়াশ। আদ্রির হাতে পড়িয়ে দেয়।হাতে চুমু খেয়ে বলে
আমার তুমি!!শুধুই আমার আদ্রি। বুকে টেনে নেয় আদ্রিকে। আদ্রিও পরম আয়েশে নিজেকে এলিয়ে দেয় আয়াশের বুকে।খুজে পায় তার নতুন ঠিকানা……….
সমাপ্ত❤️❤️