আমার তুমি❤️,পর্বঃ০৩
লেখিকাঃ ফারজানা তাবাসসুম
আদ্রিইইইইই!!!!!
″ক্ কি?? কানের পর্দা ফাটিয়ে দিবেনতো। এইভাবে কে চেচায়??″ কানে দুই হাত দিয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে বললাম। জানি এখন আমার হাল বেহাল করে ছাড়বে আয়াশ। চুপচাপ কোনো কথা না বলে এইভাবেই চোখ বন্ধ করে বসে আছি। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আয়াশের কোনোপ্রকার প্রতিক্রিয়ার আভাস না পেয়ে পিটপিট করে তাকালাম আমি। সারাঘরে চোখ বুলিয়ে দেখলাম উনি নেই। পাশে তাকিয়ে দেখি লেপটপটাও আগের জায়গাতেই আছে।তারাতাড়ি করে লেপটপের নিচ থেকে ছবিটা সরিয়ে নিলাম।আফ ছাড়লাম আমি।
″কিন্তু! আয়াশ কোথায় গেলেন?″
″বেলকনিতে আসো আদ্রি″
আয়াশ বেলকনি থেকে ডাকছেন আমায় কিন্তু কেনো? আবার কি করবেন উনি? এতো রাতে আমার সাথে আকাশের চন্দ্রবিলাশ করতে নিশ্চই ডাকছেন না উনি। তাহলে কেনো ডাকলেন?? নিজের নক কামড়াতে কামড়াতে ভাবছি আমি।এরই মাঝে আবার ডাক পড়লো আমার।
″কি হলো আদ্রি। আসতে এতো সময় লাগছে কেনো? নাকি চাও আমি তোমায় কোলে করে এখানে নিয়ে আসি।″
এই না,,,না। আমি আসছি। একটু চেচিয়ে বললাম আমি। শুকনো এক ঢোক গিলে বেলকনির দিকে অগ্রসর হলাম।
..
আমায় ডাকছিলেন?
আয়াশ পেছনে ঘুরলো। আদ্রিকে এইভাবে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাসি পেলো আয়াশের। আজকাল আদ্রিকে এইভাবে ভয় পেতে দেখে ভালোই লাগে তার। নিজের মুখকে যতটাসম্ভব কঠিন করলো আয়াশ।
″হুম ডেকেছি।আজকের রাত তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে।″
কিইইইহহ????
এইভাবে রিয়েক্ট করার কিছু নেই আদ্রি। তুমি যেইসব উদ্ভট কাজ করো(নিজের ঠোঁটে হাত বুলিয়ে) তাতে তোমার এইরকম শাস্তিই প্রাপ্য।
একটু লজ্জা লাগলো আমার। বুঝতে পারলাম তখন ঐরকম করার জন্যই এই শাস্তি দিচ্ছেন আয়াশ আমাকে।নিজের বউয়ের থেকেই তো চুমু পেলি তাতে আবার শাস্তি দেওয়া লাগে। রসকস বলতে কিচ্ছু নাই এই বেটার। করুন দৃষ্টিতে তাকালাম আয়াশের দিকে।
″আমি এখানে দাঁড়িয়ে কিভাবে থাকবো? আমার পায়ে তো ব্যাথা। বেশিক্ষন দাড়াতেই পারছি না। এখনো ব্যাথা করছে।″
–আদ্রি তুমি কি আমাকে এতোটাই নির্মম মনে করতে পারলে?
উজ্জ্বল মুখে তাকালাম আয়াশের দিকে। মনে মনে ভাবছি″ তার মানে আয়াশ মাফ করে দিলো আমায়″ মুখে প্রকান্ড বড় একটা হাসি ঝুলাতে নিবো তখনি আয়াশের কটাক্ষ এক কথায় নুইয়ে গেলো আমার সেই হাসি।
—-″তুমি দাড়াতে না পাড়ো। বসতে ত আর কোনো সমস্যা নেই?″ বাকা হাসলো আয়াশ। আয়াশ ভাবছে,″ আদ্রি আমি জানি তুমি আমায় ভালোবাসো কিন্তু আমি চাইনা তুমি তোমার ভালোবাসার মায়ায় আমায় ফেলো। এই দুনিয়া বড্ড বেশী স্বার্থপর। আমাকে নিজের মায়ায় ফেলে যদি তুমিও পারি দাও অন্য কারো হাত ধরে?এর থেকে ভালো তুমি আমায় ঘৃনা করো। আমার প্রতি তোমার অনুভুতি গুলোকে আর বাড়তে দিও না। তাহলেই সব ভালো হবে।
তুমি নিজে থেকে যেদিন মুক্তি চাইবে সেইদিন মুক্তি দিয়ে দিবো আমি তোমায়।নিজে থেকে চাইলেও তোমায় ছাড়তে পারছি না এখন আমি।বাবাকে কথা দিয়ে তোমার দায়িত্ব নিয়েছি আমি।বাবার কথা আমি ভঙ করতে পারবো না। কিন্তু তুমি যদি বাবাকে বলো আমার সাথে আর থাকতে চাও না তাহলে বাবা তা মেনে নিবেন। আমাদের বিয়ের ৩ মাস হতে চললো কিন্তু তোমাকে কতোভাবে আঘাত করলাম আমি কিন্তু তাও তুমি আঠার মতো আমার সাথে লেগেই আছো। এতো কষ্ট সহ্য করেও বাবাকে আমার নামে নালিশ পর্যন্ত করছো না।″
…
আয়াশ আদ্রিকে বেলকোনিতে থাকা দোলনাটায় বসিয়ে দিলো। আদ্রির দিকে খানিকটা ঝুকে দোলনার দুইপাশে হাত রাখলো আয়াশ। আদ্রির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো:″ইনজয় দ্যা নাইট মিসেস:আয়াশ। বলেই এক চোখ টিপ মেরে বাকা হেসে চলে গেলো আয়াশ আর বেলকোনির দরজাটাও ঘরের ভেতর থেকে আটকিয়ে দিলো।
আমি হতভম্বের মতো তাকিয়ে আয়াশের কান্ড দেখলাম,, নাক টেনে বললাম:″হুহ্,,পচা লোক একটা। তুই যতো কষ্টই দে আমায়। এই আদ্রিতাও ছেড়ে যাওয়ার পাত্রি নয়। বলে আবারও নাক টানলো আদ্রি।
আয়াশ দরজার পাশে হেলান দিয়ে চুলগুলো সেট করে বললো:
—-কিন্তু আমিও দেখবো মিসেস: আয়াশ কতোদিন তুমি আমার এই টর্চার সহ্য করতে পারো।
.
এক লম্বা হাই তুলে, ঘরের লাইট অফ করে দিলো আয়াশ। বেডে গিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো। আর সাত পাচ না ভেবে ঘুমের দেশে পারি দিলো সে।
.
( দেখলেন পাঠক/পাঠিকারা এই ব্যাটা কতো বড় শয়তান। নিজের মাছুম বউটাকে একা ফেলে নিজে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে?।রাতে তোরে বোবায় ধরুক)
.
বসে বসে মশা তাড়াচ্ছি আমি।আশেপাশে দূর থেকে রাস্তার লেম্পপোস্টের ক্ষিন আলো আর তার সাথে কুকুরের ডাক ভেসে আসছে। তাও ঠিক ছিলো কিন্তু রাতে এক ধরনের ডাক পাখির আওয়াজও কানে আসছে আমার। ছোটোবেলা থেকে এই পাখির আওয়াজ খুব অসহ্য আর ভয়ানক লাগে আমার কাছে। আকাশের অবস্থাও ভালো টের পাচ্ছি না। চাঁদটা ঢেকে গেছে ঘন কালো মেঘে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আমি অবশ্য এইসবে ভয় পাচ্ছি না। কিন্তু তাও কেনো যানি আজ ভয় লাগছে প্রচুর।
চোখ বন্ধ করে আল্লাহ্ নাম নিচ্ছি। হঠাৎ ঝপ করে বৃষ্টি নামা শুরু করলো। আয়াশ কি ভেতর থেকে একটুও বুঝতে পারছে না। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আমি একা একটা মেয়ে ভয় পাবো না??
…
বৃষ্টি তার আপন গতিতে বর্ষে যাচ্ছে ত যাচ্ছেই। ভেবেছিলাম আয়াশ আসবে কিন্তু আসলেন না। মনে একটু একটু করে অভিমানের মেঘ জমা হতে থাকলো।কিন্তু আমার এই অভিমান কার জন্য? এক অনুভুতিহীন মানুষের জন্য।
″তার উপর অভিমান করে আদেও কি লাভ আছে…??″ আমার বিবেক আমায় প্রশ্ন ছুড়লো।
নাহ্ কোনো লাভ নেই। চোখের পানি মুছে নিলাম আমি।
……
আয়াশের ঘুম সেই কখন ভেঙে গিয়েছে। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে সেটাও সে টের পাচ্ছে। তার ইচ্ছা করছে বেলকনিতে গিয়ে আদ্রিকে ঘরে নিয়ে আসতে। কিন্তু তা করছে না সে,,এখন সাথে সাথে গেলে আদ্রি ধরে নিবে আয়াশের মনে আদ্রির জন্য কিছু আছে। কিন্তু এইটা সে হতে দিতে চায় না।সে চায় আদ্রি তাকে ঘৃনা করুক প্রচুর ঘৃনা করুক। যেনো আদ্রি আয়শকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
…………
অনেক্ষন হয়ে গেলো। বাইরে বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমেছে। আয়াশ ধীর পায়ে বেলকনির দরজায় কাছে গেলো। দরজা ঠেলে সেখানে যেতেই আয়াশ থমকে গেলো এক অজানা ভয়ে। আদ্রি মেঝেতে পড়ে আছে। তার ঘারে রক্ত ……
চলবে